ইয়া রব! ইয়া রব! ইয়া রব!২১৩ ইয়া আল্লাহ! ইয়া কাবীর (বড়)! ইয়া সামী (সর্বশ্রোতা)! ইয়া বাসীর (সর্বদ্রষ্টা)! হে ঐ সত্তা, যাঁর কোনো শরীক নেই, কোনো পরামর্শদাতা নেই! হে আলোকিত সূর্য ও চন্দ্রের স্রষ্টা! হে ভীত-বিপদগ্রস্ত আশ্রয়প্রার্থীর আশ্রয়! হে ছোট শিশুর রিযিকদাতা।২১৪ হে বিচূর্ণ হাড়ে জোড়াদানকারী! আমি আপনার কাছে আবেদন করছি বিপদগ্রস্ত মুখাপেক্ষীর আবেদন, অস্থির বিপদগ্রস্তের নিবেদন! আপনার কাছে প্রার্থনা করছি আপনার আরশের উচ্চমর্যাদার গ্রন্থিসমূহের অসিলায় এবং আপনার কিতাবের রহমতের চাবিসমূহের অসিলায় প্রার্থনা করছি, কুরআনকে আমার হৃদয়ের বসন্ত ও বেদনাহারক বানিয়ে দিন।২১৫
হে আমাদের পরওয়ারদেগার! আমাদেরকে দুনিয়াতে অমুক অমুক বিষয় দান করুন। (অমুক-অমুক বিষয় স্থলে দু‘আ পাঠকারী যেকোনো জায়েয দুনিয়াবী মাকসাদ চিন্তা করবে।)২১৬ হে প্রত্যেক নির্জনের স্বজন; প্রত্যেক নিঃসঙ্গের সঙ্গী! হে নিকটবর্তী, যে দূরে নয়, হে উপস্থিত, যে অনুপস্থিত নয়! হে বিজয়ী, যে পরাজিত নয়!২১৭ হে চিরজীবী, হে রক্ষাকর্তা, হে মর্যাদা ও মাহাত্ম্যের মালিক! হে আকাশমণ্ডলী ও ভূমির জ্যোতি! হে আকাশমণ্ডলী ও ভূমির শোভা! হে আকাশমণ্ডলী ও ভূমির প্রতাপান্বিত প্রভু! হে আকাশমণ্ডলী ও ভূমি ধারণকারী! হে আকাশমণ্ডলী ও জমির অস্তিত্বদানকারী! হে আকাশমণ্ডলী ও ভূমির অস্তিত্ব রক্ষাকারী! হে মর্যাদা ও মাহাত্ম্যের অধিকারী! হে ফরিয়াদীদের ফরিয়াদস্থল! শরণার্থীর শেষ আশ্রয়, অস্থিরজনের শান্তিদাতা! চিন্তাগ্রস্তের প্রশান্তিদাতা ও অপারগের প্রার্থনা মঞ্জুরকারী! হে দুর্দশাগ্রস্তের দুর্দশা দূরকারী! হে সর্বজগতের মাবুদ! হে সকল দয়ালুর বড় দয়ালু! আপনারই সমীপে সকল প্রয়োজন।২১৮ (আপনিই তো ছোট-বড় সকল প্রয়োজন পূরণকারী)।
ইয়া আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি মহিমান্বিত স্রষ্টা। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। নিশ্চয়ই আপনি পরম ক্ষমাশীল, অতি মেহেরবান! মহান আরশের অধিপতি। ইয়া আল্লাহ! আপনি তো মহান, দয়ালু, দাতা, আমাকে ক্ষমা করুন, করুণা করুন। আমাকে ‘আফিয়াত’ (সুস্থতা ও বিপদমুক্তি) দিন, রুযী দিন, আমার দোষ ঢেকে রাখুন, আমার ত্রুটি দূর করুন, আমাকে উচ্চতা দিন, হেদায়েত দিন, আমাকে গোমরাহ কোরেন না। আর হে সকল দয়ালুর বড় দয়ালু! নিজ দয়ায় আমাকে জান্নাতে দাখেল করুন। পরওয়ারদেগার! আমাকে আপন করে নিন। আমার অন্তরে আপনার প্রতি আমাকে নত করুন আর মানুষের চোখে আমাকে আপনি সম্মানিত করুন। আর কুস্বভাব থেকে আমাকে দূরে রাখুন। ইয়া আল্লাহ! আপনি আমাদের কাছে ঐ সব আমল চেয়েছেন, যার কোনো সাধ্য আমাদের নেই আপনার তাওফীক ছাড়া। সুতরাং আপনিই আমাদের ঐ সকল কাজের তাওফীক দিন, যা আমাদের প্রতি আপনাকে সন্তুষ্ট করবে।২১৯
ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার কাছে চাই স্থায়ী ঈমান ও বিনয়ী হৃদয়। আপনার কাছে চাই উপকারী ইলম, আর আপনার কাছে প্রার্থনা করছি, সত্য ইয়াকীন (বিশ্বাস)। প্রার্থনা করছি সঠিক দ্বীনদারী। প্রার্থনা করছি সকল বিপদ থেকে মুক্তি। আপনার কাছে চাই সর্বদা সুস্থতা ও নিরাপত্তা। আপনার কাছে চাই সুস্থতা ও নিরাপত্তার উপর শোকরগোজারীর তাওফীক। আর আপনার কাছে চাই মাখলুক থেকে অমুখাপেক্ষিতা।২২০ ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ঐ গুনাহ থেকে ক্ষমা চাই, যা থেকে তাওবা করে পুনরায় তাতে লিপ্ত হয়েছি। ক্ষমা চাই ঐ অঙ্গীকার সম্পর্কে, যা আপনার সাথে করার পর ভঙ্গ করেছি।২২১ ক্ষমা চাই আপনার ঐ সকল নেয়ামতের, যা দ্বারা শক্তি অর্জন করে আপনার নাফরমানীতে লিপ্ত হয়েছি। আর আপনার কাছে ক্ষমা চাই ঐ সকল নেক কাজের বিষয়ে, যা শুধু আপনারই জন্য করতে চাওয়ার পর তাতে অন্যকিছু (যেমন, খ্যাতি ও মর্যাদার লোভ, লৌকিকতা ইত্যাদি।) মিশ্রিত করেছি।২২২ ইয়া আল্লাহ! আমাকে অপদস্থ কোরেন না, নিশ্চয়ই আপনি আমার সম্পর্কে অবগত। আমাকে আঘাত দিয়েন না, নিশ্চয়ই আপনি আমার উপর সর্বদিক থেকে ক্ষমতাবান।২২৩
ইয়া আল্লাহ! সাত আসমানের মালিক! আরশে আযীমের মালিক! ইয়া আল্লাহ, আমার সকল প্রয়োজনে আপনি যথেষ্ট হোন, যেভাবে আপনি চান, যেখান থেকে চান তা পূরণ করুন।২২৪ (আমি পুরোপুরি আপনারই ইচ্ছায় সমর্পিত।) আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট আমার দ্বীনের বিষয়ে। আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট আমার দুনিয়ার বিষয়ে। আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট আমার সকল মাথাব্যথায়। আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট ঐ লোকের ব্যাপারে, যে আমার প্রতি জুলুম করে। আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট ঐ লোকের ব্যাপারে যে আমাকে হিংসা করে। আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট ঐ লোকের ব্যাপারে, যে আমার অনিষ্ট সাধনের চক্রান্ত করে। আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট মৃত্যুর সময়। আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট কবরের সওয়ালের সময়। আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট মীযানের (পাল্লার) কাছে। আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট পুলসিরাতে।২২৫ আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট যিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তারই উপর আমার ভরসা। আর তিনিই মালিক মহান আরশের।২২৬
ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি শোকরগোজার (বান্দাদের) মতো ছওয়াব এবং নৈকট্যপ্রাপ্তদের মতো মেহমানদারী আর নবীগণের সাহচর্য। প্রার্থনা করছি সিদ্দীকগণের ইয়াকীন, মুত্তাকীদের বিনয় ও বিশ্বাসীদের নম্রতা। এরপর এ অবস্থায় আপনি আমাকে উঠিয়ে নিন হে সকল দয়ালুর বড় দয়ালু!২২৭
ইয়া আল্লাহ! আমাকে প্রদত্ত আপনার নেয়ামতের অসিলায়, (প্রত্যেক জীবিত মানবের প্রতিটি লোমকূপ জীবনের প্রতি মুহূর্তে যার সাক্ষ্য দেয়) আমার নিকট থেকে গৃহীত আপনার উত্তম পরীক্ষার অসিলায়২২৮ এবং আমার উপর কৃত আপনার অনুগ্রহের অসিলায় আপনার কাছে প্রার্থনা করছি, আপন দান ও করুণায় আমাকে আপনি জান্নাতে দাখিল করুন।২২৯
ইয়া আল্লাহ! আমার গুনাহ মাফ করুন, আমাকে প্রশস্ত আখলাকের অধিকারী করুন, আমাকে হালাল উপার্জন দান করুন, আপনার প্রদত্ত রুজিতে আমাকে সন্তুষ্ট রাখুন আর যা আমার কাছ থেকে সরিয়ে নিয়েছেন তার দিকে আমাকে আগ্রহী কোরেন না।২৩২
ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার আমান চাই আপনার সকল সৃষ্টি থেকে আর আপনারই সুরক্ষা গ্রহণ করি তাদের অনিষ্ট থেকে। আপনার কাছে যেন আমার স্থান হয় এবং আপনার কাছে যেন আমার নৈকট্য ও উত্তম প্রত্যাবর্তন হয়। আমাকে ঐ সকল মানুষের অন্তর্ভুক্ত করুন, যারা আপনার সামনে দাঁড়ানোকে ও আপনার হুঁশিয়ারীকে ভয় করে এবং আপনার সাক্ষাতের কামনা রাখে এবং ঐ সব মানুষের অন্তর্ভুক্ত করুন, যারা সত্যই আপনার অভিমুখী হয়। আপনার কাছে প্রার্থনা করি মাকবুল আমল, সঠিক ইলম ও ঐ চেষ্টা, যার প্রতিদান পাওয়া যায় এবং ঐ ব্যবসা, যা কখনো মন্দাগ্রস্ত হবে না।২৩৩
ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি, আমাকে দোযখ থেকে মুক্তি দিন। ইয়া আল্লাহ! মৃত্যুর সময়ের জ্ঞানহীনতা ও যন্ত্রণার মুহূর্তে আমার সাহায্য কোরেন।২৩৪
ইয়া আল্লাহ! জেনে-শুনে আপনার সাথে কিছুমাত্র শরীক করা থেকে আপনার আশ্রয় চাই আর নিজের অজান্তের শিরক থেকে আপনার কাছে ক্ষমা চাই।২৩৬ আমি আপনার শরণ নিচ্ছি কোনো আত্মীয়ের বদ দু‘আ থেকে, যার আমি হক নষ্ট করেছি।২৩৭ ইয়া আল্লাহ! আপনার আশ্রয় নিচ্ছি বুকের উপর ভর করে চলা প্রাণীর অনিষ্ট থেকে এবং দু’পেয়ে জীব ও চতুষ্পদ জন্তুর অনিষ্ট থেকে।২৩৮ ইয়া আল্লাহ! আপনার কাছে ঐ নারী থেকে আশ্রয় নিচ্ছি, যে আমাকে বার্ধক্যের আগেই বৃদ্ধ বানিয়ে দেয়, আশ্রয় নিচ্ছি ঐ সন্তান থেকে, যে আমার জন্য বিপদ হয়, আশ্রয় নিচ্ছি ঐ সম্পদ থেকে, যা আমার জন্য আযাব হয়।২৩৯ ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি সত্য বিষয়ে বিশ্বাসের পর সন্দেহ থেকে। আশ্রয় নিচ্ছি বিতাড়িত শয়তান থেকে, আশ্রয় নিচ্ছি প্রতিদান দিবসের কাঠিন্য থেকে। ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি অকস্মাৎ মৃত্যু থেকে, সর্পদংশিত হওয়া থেকে, হিংস্র প্রাণী থেকে, ডুবে যাওয়া থেকে, অগ্নিদগ্ধ হওয়া থেকে, কোনো কিছুর উপর পড়ে যাওয়া থেকে এবং যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নের সময় নিহত হওয়া থেকে।২৪০
এ সকল দু‘আ কবুল করুন। (হযরত মাওলানা) মুহাম্মদ আশরাফ আলী রাহ. (সংকলক), মৌলভী আবদুল ওয়াসি মরহুম (নাযিমে তরজমা), মৌলভী হাকীম মুহাম্মদ মুস্তফা মরহুম (প্রথম উর্দু অনুবাদক), মুহাম্মদ আলী মরহুম (তরজমা-সহযোগী), মাওলানা মুহাম্মদ শফী দেওবন্দী ও আবদুল মাজেদ দরিয়াবাদী (দ্বিতীয় উর্দু অনুবাদক) (এবং যাঁরা এর বাংলা অনুবাদ করেছেন এবং বর্তমান বাংলা তরজমাকার মুহাম্মদ যাকারিয়া আবদুল্লাহ) সম্পর্কেও। এবং কবুল করুন তাদের পিতা-মাতা ও সকল ঈমানদার নর-নারী সম্পর্কেও। আল্লাহ তা‘আলা কামিল রহমত নাযিল করুন সারোয়ারে কায়েনাত, সৃষ্টির সেরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর, এমন রহমত যার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই।
ইয়া আল্লাহ! আমাদের গুনাহ মাফ করুন, আমাদের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখুন, আমাদের সীনা খুলে দিন, আমাদের অন্তরের হেফাযত করুন, আমাদের হৃদয় আলোকিত করুন, আমাদের কাজকর্ম সহজ করুন, আমাদের ইচ্ছাসমূহ পূরণ করুন এবং আমাদের ত্রুটিসমূহের ক্ষতিপূরণ করুন। ইয়া আল্লাহ! আমাদেরকে ঐ সকল বিষয় থেকে নাজাত দিন, যাতে আমরা ভীতি অনুভব করি। হে ঐ সত্তা, যিনি দয়া ও করুণার জন্য সদা প্রস্তুত।২৪১
দু'আর বিষয়সমূহ
38টি বিষয় পাওয়া গেছে