মুফতী রিজওয়ান রফিকী

মুফতী রিজওয়ান রফিকী
জন্ম ও পারিবারিক পরিচয়:
১৯৯১ সালের ২৭ জানুয়ারি, ১৩ মাঘ ১৩৯৭ বঙ্গাব্দ, রোজ রবিবার রাত দুইটা। যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রাম তখন নিস্তব্ধ নিদ্রায় আচ্ছন্ন। সেই নীরব রাতেই সম্ভ্রান্ত গাজী পরিবারে জন্ম নেন মুফতি রিজওয়ান রফিকী হাফি.।
তার পিতা মুহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম গাজী, পেশায় একজন সাধারণ ব্যবসায়ী হলেও ছিলেন তাবলীগ জামাআতের নিবেদিত প্রাণ সাথী, দ্বীনের পথে অবিচল এক পথিক। আর দাদা মুহাম্মাদ মোন্তাজ আলী গাজী ছিলেন সৎ-নিষ্ঠা ও নৈতিকতার এক উজ্জ্বল প্রতীক, যিনি পরিবারকে শেকড় থেকে ধর্মীয় মূল্যবোধে দৃঢ় করে গড়ে তুলেছিলেন।
শিক্ষাজীবন:
প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন শ্রীরামপুর প্রাইমারি স্কুলে। ৫ম শ্রেণী শেষ করে ভর্তি হন মাদানীনগর মাদরাসায় (মনিরামপুর, যশোর), যা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মুফতি ওয়াক্কাস রহি.। সেখানে জামাআতে মিযান পর্যন্ত পড়াশোনা করে ভর্তি হন খুলনা দারূল উলূম মাদরাসায়, যেখানে নাহবেমীর জামাআত সমাপ্ত করেন।
পরবর্তীতে পড়াশোনা করেন জামিয়া ইমদাদিয়া মুসলিম বাজার (মিরপুর-১২, ঢাকা)-এ, জালালাইন পর্যন্ত। এক বছর অধ্যায়ন করেন জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া সাত মসজিদ মাদরাসায়, জামাআতে মিশকাত পর্যন্ত।
এরপর উস্তায মুফতি আব্দুল ওয়াহিদ কাসেমী হাফি.-এর নির্দেশে পুনরায় মুসলিম বাজার মাদরাসায় ফিরে এসে ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেন। পরবর্তীতে জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া, লালবাগ শাহী মসজিদ সংলগ্ন মাদরাসা থেকে ২০১১–১২ শিক্ষাবর্ষে ইফতা সমাপ্ত করেন।
পাশাপাশি মুসলিম বাজার মাদরাসার মুহাদ্দিস মুফতি নূরুজ্জামান হাফি.-এর নিকট ইলমে ফারায়েজ বিষয়ে বিশেষ কোর্স সম্পন্ন করেন।
উল্লেখ্যযোগ্য যেসব বিশিষ্ট উস্তায থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন:
১. শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহি.
২. মুফতি মুহাম্মাদ ওয়াক্কাস রহি.
৩. মুফতী ফজলুল হক আমিনী রহি.
৪. মুফতি হিফজুর রহমান হাফি.
৫. মাওলানা মামুনুল হক হাফি.
৬. মুফতি আব্দুল ওয়াহিদ কাসেমী হাফি.
৭. মুফতি সাখাওয়াত হুসাইন রাযী হাফি.
কর্মজীবন:
১. ইফতা সমাপ্তির পর স্বীয় উস্তাযের নির্দেশে দক্ষিণ মুগদা মাদরাসা-মসজিদে ইমাম-খতীব হিশাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। একইসাথে দারূল উলূম মাদরাসার তালিমাতের দায়িত্বও পালন করেন। কিন্তু ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচীতে শাহবাগী আন্দোলনের বিরুদ্ধে ভাষণ দেওয়ার কারণে সরকারি চাপে ৬ মাসের মাথায় পদত্যাগ করতে হয়।
২. ২০১৩ সালের শেষ দিকে বোর্ডবাজার মৃধাবাড়ী কেন্দ্রীম মসজিদে ইমামতি শুরু করেন এবং বছর খানিক পরে প্রতিষ্ঠা করেন মাদরাসা মারকাযুন নূর, যার ইহ্তিমামের দায়িত্ব এখনো পালন করছেন। এছাড়া ফরিদপুর ভাঙ্গার মিয়াপাড়া মাদরাসায় বুখারীর দরস প্রদান করেন।
৩. দাওয়াত ও বক্তৃতা (২০১৪–বর্তমান)
দেশ-বিদেশের মাহফিল ও সেমিনারে নিয়মিত বক্তব্য প্রদান করেন। বিশেষভাবে হেযবুত তওহীদ ও ভ্রান্ত ফিরক্বার বিরুদ্ধে আলোচনায় খ্যাতি অর্জন করেন। হেযবুত তওহীদ কর্তৃক তার বিরুদ্ধে ৫টি মামলা করা হয় এবং একবার নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে তাকে হত্যার চেষ্টাও করা হয়।
কারাজীবন:
অক্টোবর ২০১৯: সরকারের সমালোচনার কারণে তাকে ডিবি পরিচয়ে অপহরণ করে দুই দিন গুম করে রাখা হয়, পরে মুক্তি পান।
সেপ্টেম্বর ২০২১: মুগদা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়ে ৩ দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে প্রেরিত হন। প্রায় আড়াই মাস কারাবাসের পর জামিনে মুক্তি পান।
লেখালেখি:
২০১৯ সাল থেকে www.rijwanrafiqi.com -এ নিয়মিত প্রবন্ধ লিখে যাচ্ছেন।
এছাড়া রচনা করেছেন একাধিক গ্রন্থ, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
১. পন্নীর এসলাম
২. হেযবুত তওহীদ : নাস্তিকতার নতুন রূপ
৩. কুরবানীর মাসায়েল
৪. মাহে রমাযানের মাসায়েল
ইসলাহী সম্পর্ক:
মুসলিম বাজার মাদরাসার মুহ্তামিম মুফতি আব্দুল ওয়াহিদ কাসেমী দা.বা.-এর সাথে ঘনিষ্ঠ ইসলাহী সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। তাছাড়া কায়েদে মিল্লাত আল্লামা জুনাঈদ বাবুনগরী রহি. ও মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী দা.বা.-এর নিকট থেকেও ইজাযাতপ্রাপ্ত হয়েছেন।
খিদমতের বিস্তৃতি:
উম্মাহর মাঝে হেদায়াত পৌঁছাতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দাওয়াতি সফর করেন। নিয়মিত প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা করেন এবং বিভিন্ন ভ্রান্ত মতবাদ যেমন—হেযবুত তওহীদ, কাদিয়ানী, শিয়া, বেরলবী সুন্নী, মাজারপূজারী, আহলে কুরআন, লা-মাযহাবী প্রভৃতির বিরুদ্ধে লিখন ও বক্তৃতা প্রদান করেন।