মেরাজের ঘটনায় সাহাবাদের ঈমান নষ্ট হয়েছিলো! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৪৯
মেরাজের ঘটনায় সাহাবাদের ঈমান নষ্ট হয়েছিলো! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৪৯
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মোজেজার মধ্যে অন্যতম মোজেজা হলো, ‘মে’রাজ’। একই রজনীতে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা, আবার মসজিদে আকসা থেকে সপ্ত আসমান-জমিন ভ্রমণ করা। হেযবুত তওহীদ কী বলে? এ ঘটনার ব্যাপারে হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা পন্নীর বক্তব্য হলো- মেরাজের এই ঘটনা মো’মেনদের জন্য ছিল আল্লাহর পরীক্ষা-স্বরূপ।অনেক সাহাবী এই ঘটনা শুনে ঈমান হারিয়ে ফেলেছেন,অনেকে সন্দেহে পতিত হোয়েছেন। –আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৩৫ আমার ব্যক্তিগত অভিমত, সেদিন এক আবু বকর ছাড়া আর কেউ ছিল না যার মনে মেরাজের কথা শুনে সন্দেহ আসে নি। –আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৭৮ এমামুযযামানের নিজস্ব অভিমত হোচ্ছে, সেদিন আবু বকর (রা:) ছাড়া সম্ভবত আর কেউ ছিল না যারনে মে’রাজের কথা শুনে সন্দেহের ছায়াপাতও হয়নি। –আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৩৬ অর্থাৎ পন্নী সাহেবের দাবী হলো, মেরাজের ঘটনায় অনেক সাহাবীর ঈমান চলে গিয়েছিলো এবং আবু বকর রা. ছাড়া সবার ভেতরে সন্দেহ ঢুকেছিলো। ইসলাম কী বলে? মেরাজের ঘটনায় কোনও সাহাবী মুরতাদ হননি। এটাই সহিহ ও বিশুদ্ধ মত। কিন্তু হেযবুত তওহীদ তাদের এ মতবাদ প্রতিষ্ঠায় একটি হাদিস দিয়ে দলীল পেশ করতে পারে। হাদিসটি হলো–আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. বলেন, لمّا أسري بالنبي صلى الله عليه وسلم إلى المسجد الأقصى، أصبح يتحدث الناس بذلك، فارتدّ ناس ممن كانوا آمنوا به وصدّقوه নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে যেদিন (মেরাজের রাতে) মসজিদে আকসায় নেওয়া হলো, সেদিন সকালে লোকজন এ প্রসঙ্গে আলোচনা করছিলেন। কিন্তু যারা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওপর ঈমান এনেছিলো এবং নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সত্যায়িত করেছিলো, তাদের কিছু লোক মুরতাদ হয়ে গেলো, । –মুসতাদরাকে হাকেম, খ. ৩ পৃ. ৬২-৬৩ হাদিসের সদন উক্ত হাদিসের বিশুদ্ধতা জানতে আগে এর সনদ সম্পর্কে জানা উচিত, হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে, حدثنا محمد كثير الصنعاني ثنا معمر عن الزهري عن عروة عن عائشة মুহাম্মাদ ইবনে কাসীর সান’আনী বর্ণনা করেছেন মা'মার থেকে তিনি যুহরী থেকে। এ সনদের রাবী ‘মুহাম্মাদ ইবনে কাসীর সান’আনী’ তিনি দূর্বল রাবী। শুধু তাই নয়, বরং মুহাম্মাদ ইবনে কাসীর সান’আনী যখন মা’মার সূত্রে কোনো রেওয়ায়েত বর্ণনা করেন, তখন সেটা মুনকার পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এ ব্যাপারে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহি. এর মত উল্লেখ্য করা হলো। আব্দুল্লাহ ইবনে ইমাম আহমাদ রহি. বলেন, ذكر أبي محمد بن كثير فضعّفه جداً وضعّف حديثه عن معمر جداً وقال هو منكر الحديث আমার বাবা(আহমাদ ইবনে হাম্বল রহি.)-এর সামনে মুহাম্মাদ ইবনে কাসীর সানআনীর প্রসঙ্গে কথা উঠলে তিনি তাকে খুবই দূর্বল বলে অভিহিত করেন এবং মা’মার সূত্রে তার বর্ণিত হাদিসকে আরও দূর্বল বলেন এবং তিনি বলেন, সে (মুহাম্মাদ ইবনে কাসীর সানআনী) তো মুনকারুল হাদিস। –তাহযীবুল কামাল, খ. ২৬ পৃ. ৩৩১ সুতরাং মুসতাদরাকে হাকেমের বর্ণনাটি মুহাম্মাদ ইবনে কাসীর সান’আনী বর্ণনা করেছেন মা’মার সূত্রে। উক্ত হাদিসটি যদিও ইমাম হাকেম রহি. তাঁর মুসতাদরাকে এনেছেন, কিন্তু শাইখাইন রহি. এমন সনদে কোনও হাদিস বর্ণনা করেননি, সুতরাং হাদিসটি সহিহ নয়, বরং হাদিসটি মুনকার। অতএব উপরিউক্ত হাদিসের বর্ণনা দিয়ে এটা বলার কোনও সুযোগ রইলো না যে, সাহাবায়ে কেরাম রা.-এর একটা অংশ মেরাজের ঘটনায় মুরতাদ হয়ে গিয়েছিলেন। পাশাপাশি মেরাজ সংক্রান্ত আরও যেসব হাদিস বর্ণিত হয়েছে, সেসব হাদিস থেকে এ কথা প্রমাণিত হবে না যে, কোনও সাহাবী মুরতাদ হয়ে গিয়েছিলেন, বরং সকল বর্ণনা থেকে এটা প্রমাণিত হবে যে, কাফের-মুনাফিকরা তাদের কুফরীর দিকে প্রত্যাবর্তন করেছে, কোনও সাহাবী নয়। উপরন্তু মেরাজের আগ পর্যন্ত যেসব সাহাবারা রা. ঈমান আনয়ন করেছিলেন, তাঁদের নাম ও জীবনী ইসলামী ইতিহাসের পাতায় পাতায় লিপিবদ্ধ রয়েছে যুগ যুগ ধরে। কিন্তু এমন কোনও সাহাবীর নাম কী হেযবুত তওহীদ উল্লেখ্য করতে পারবে যে, অমুক সাহাবী মেরাজের ঘটনায় মুরতাদ হয়েছিলেন বা সন্দেহ পোষণ করেছিলেন? নিশ্চয় তারা পারবে না। দ্বিতীয় বিষয় হলো, বায়াজীদ খান পন্নী সাহেব আরও বলেছেন, আমার ব্যক্তিগত অভিমত, সেদিন এক আবু বকর ছাড়া আর কেউ ছিল না যার মনে মেরাজের কথা শুনে সন্দেহ আসে নি। –আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৭৮ উক্ত কথাটি যে ডাহা মিথ্যাচার তা বলার প্রয়োজন পড়ে না। কারণ সে সময় আবু বকর রা. ছাড়াও আম্মাজান খাদিজা রা. তখনও জিবিত ছিলেন। যিনি সর্বপ্রথম নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নবুওয়াতের বিষয়ে অবগত হয়ে মুসলমান হন, তিনিও কী সন্দেহ করতে পারেন? এটা কোনও সুস্থ মানুষের বিশ্বাস হতে পারে? পাশাপাশি বেশ কয়েকজন সাহাবী জিবিত ছিলেন, যাঁদের কারও ব্যাপারে এমন মন্তব্য পৃথিবীর ইতিহাসে আর কেউ করেনি। কিন্ত পন্নী এই ডাহা মিথ্যাচার করে সাহাবাদের রা. ঈমানের প্রতি এমন ধারণা জনমনে সৃষ্টি করতে কেন চেয়েছে, সেটাই হলো ভাবার বিষয়। আশা করি সচেতন মহল সেটা বুঝতে পেরেছেন।
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
ফিরিস্তা এবং দেবতা একই জিনিষ! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–১০
সমস্ত মুসলামানকে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আসমানী কিতাবের মতো ফেরেশতাদের অস্ত...
মুফতী রিজওয়ান রফিকী
৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
১০৫১
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন