প্রবন্ধ
বাউল ধর্মের মৌলিক আকিদা
বাউল ধর্মটা মানবিক, আধ্যাত্মিক ও সুফিবাদের লেবাসে একটি জঘন্য নাস্তিক্যবাদী ধর্ম। যার মূল ভিত্তি যৌনতা ও ইসলাম বিদ্বেষ। নিন্মে তাদের মৌলিক কিছু আকিদা পেশ করা হলো—
বাউল ধর্মের মৌলিক দর্শন :
মানুষের দেহেই আল্লাহর অস্তিত্ব বিরাজমান। তাই মানুষকে পুঁজা করতে হবে। —(বাউলসাধনা, পৃ. ৩০)
আল্লাহ নিরাকার নন, তাঁর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আছে। — (বাউলসাধনা, পৃ. ৩০)
আদমই আল্লাহ। —(অখণ্ড লালনসঙ্গীত, পৃ. ৯২)
মুহাম্মাদ সা.-ই আল্লাহ। —(অখণ্ড লালনসঙ্গীত, পৃ. ১২৩)
যিনি পীর, তিনি খোদা, তিনিই রাসুল। —(অখণ্ড লালনসঙ্গীত, পৃ. ৬৩)
লালনই আল্লাহ। —(লালনদর্শন, পৃ. ১০৩)
লালনই জগতবাসীর উদ্ধারকর্তা। —(অখণ্ড লালনসঙ্গীত, পৃ. ৬২)
লালন সৃষ্টির মহারাজা এবং নিয়ন্ত্রণকারী। — (লালনদর্শন, পৃ. ১২৯)
কাগুজে কোনো গ্ৰন্থ কুরআন নয়। —(লালনদর্শন, পৃ. ১২৯)
বরং লালনের বাণীই কুরআন। —(অখণ্ড লালনসঙ্গীত, পৃ. ৩৯)
বাউল ধর্মে গুরু ভজনাই মূল সাধনা। —(মহাত্মা লালন, পৃ. ৩৩)
আল্লাহ, গড, ঈশ্বর একই। —(লালনভাষা অনুসন্ধান, খ. ১, পৃ. ৭)
আল্লাহ ভক্তরা আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখতে পায়। —(অখণ্ড লালনসঙ্গীত, পৃ. ৬৫)
শিষ্যরা গুরুর মনের খবর পায়। —(মহাত্মা লালন, পৃ. ৮২)
গুরু না মানলে কোনো ইবাদত কবুল হবে না। —( অখণ্ড লালনসঙ্গীত, পৃ. ৫৭)
মোর্শেদরূপে আল্লাহ যার জন্য যে সাধনপদ্ধতি দান করেন সেটাই তার জন্য পালনীয় অপরিহার্য ধর্মবিধান বা শরীয়ত। —(অখণ্ড লালনসঙ্গীত, পৃ. ৫৭; বাউলসাধনা, পৃ. ৩১)
সবার জন্য আজীবন একই ধাঁচের নামাজ বা ধ্যান কখনো সঠিক হতে পারে না। —(অখণ্ড লালনসঙ্গীত, পৃ. ৫৭)
সিজদার সময় মুর্শিদরূপ ধ্যান করতে হবে। সেই ধ্যান করতে পারলে চোখের সামনে আল্লারূপী মুর্শিদ উপস্থিত হন। আর সেই আল্লাকেই হাজির-নাজির রেখে সেজদা করতে হবে। —(বাউলসাধনা, পৃ. ৬৫)
কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত এগুলো ইসলামের পাঁচ স্তম্ভ নয়। —(অখণ্ড লালনসঙ্গীত, পৃ. ৬২)
রাসুল (সা.) স্বয়ং আল্লাহর নূরের অংশ। আর রাসুল সা.-র নূরে সারা জগতময় পয়দা করা হয়েছে। —(মহাত্মা লালন, পৃ. ৯৯)
আলী রা. নবী ও রাসুল ছিলেন। কিন্তু ওমর, আবু বকর, ওসমান, আয়েশা, আবু সুফিয়ান, মাবিয়া রা.-এর গোত্রীয় চক্রান্তে নস্যাৎ করা হয়েছে। —(অখণ্ড লালনসঙ্গীত, পৃ. ৯৩)
বাউল সাধকরা ৫ ওয়াক্ত নয়, বরং দায়েমী সালাতের প্রবক্তা। —(লালনভাষা অনুসন্ধান, খ. ১, পৃ. ১৫৭)
আজীবন একই ধাঁচের নামাজ সঠিক নয়। —(অখণ্ড লালনসঙ্গীত, পৃ. ৫৭)
হজ্ব করতে কাবায় যাওয়া অনর্থক। —(মহাত্মা লালন, পৃ. ১৯)
লালনের মাজারই তাদের তীর্থভূমি। —(বাংলাদেশের বাউল, পৃ. ২২-২৩ (পিডিএফ)
সাধকদেরকে মৃত্যু স্পর্শ করতে পারে না, মৃত্যুবরণের ক্ষমতা তাদের নিজের হাতেই থাকে। —(লালনভাষা অনুসন্ধান, খ. ১, পৃ. ১৫৭)
যৌনাচার এই বাউল সাধনার অপরিহার্য অঙ্গ। —(বাংলাদেশের বাউল, পৃ. ৩৯০ (পিডিএফ)
বাউল সাধনায় নারীকে সাধনসঙ্গিনী এবং সেবাদাসী হিসেবেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। — (বাংলাদেশের বাউল, পৃ. ৩৭২ (পিডিএফ)
কুমারী নারীর ঋতুকালীন অবস্থা শেষ হবার পর যে রস নিঃসৃত হয়, তাকে বাউলেরা ‘শাম্ভু রস’ বলে গণ্য করে। তারা এটাকে সাধনার অংশ ও রোগমুক্তির অংশ হিসেবে পান করে। —(বাংলাদেশের বাউল, পৃ. ৩৭৫) (পিডিএফ)
বাউল সাধকরা নিজেদের পেশাব, কুমারী নারীর রজঃ এবং নারী শিষ্যদের দুধও পান করে থাকে। —(বাংলাদেশের বাউল, পৃ. ৪০৮) (পিডিএফ)
চারিচন্দ্র অর্থাৎ মল, মূত্র, রজঃ, বীর্য—এই সব মিশ্রণে একপ্রকার পদার্থ তৈরি করে তা ‘প্রেম ভাজা’ নামে ভক্ষণের রীতি বাউলসমাজে প্রচলিত। সমগ্র শরীরে, কপালে, বুকে, পিঠে, মাথায় মর্দন করাও হয়ে থাকে। —(বাংলাদেশের বাউল, পৃ. ৪০৮ (পিডিএফ)
গাজা খেলে বীর্যস্খলন সহজে হয় না এবং সাধক-সাধিকা দীর্ঘক্ষণ রতি ক্রিয়ায় নিবিষ্ট থাকতে পারে। —(বাংলাদেশের বাউল, পৃ. ৪০৯ (পিডিএফ)
সমগ্র মানবজাতি একজাতি। সবার একধর্ম, দ্বীনে ইসলাম তথা মানবধর্ম। —(অখণ্ড লালনসঙ্গীত, পৃ. ৫৯)
অধার্মিকতা বা ধর্ম নিরপেক্ষতাই মানবের বন্ধনমুক্তির একক উপায়। —(লালনদর্শন, পৃ. ১০৪)
ফকির লালন শাহ'র ইসলাম তথা দ্বীনে এলাহি প্রতিষ্ঠিত না হলে সাধুগুরুগণের ‘অখণ্ড ভারতপংথ' নবপ্রাণশক্তিকে উদ্ভাসিত হবে না বিশ্বমানচিত্রে। —(অখণ্ড লালনসঙ্গীত, পৃ. ৮১)
ফকির লালনের মত-পথ ও পদ এমনই এক মানবিক, দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক গুরুবাদী মত-পথ—যেখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জাত-পাত-গোত্র ও বর্ণের সামান্যতম ভেদাভেদ নেই। এই মতে শুধু প্রেম, ভালোবাসা এবং গুরু ভজনাই মূল সাধনা। —(মহাত্মা লালন, পৃ. ৩৩)
লালন কয় জাত হাতে পেলে, পুড়াতাম আগুন দিয়ে। —(মহাত্মা লালন, পৃ. ১১৮)
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কুষ্টিয়া কোর্ট লালনভক্তদের মূখপাত্র হয়ে জনৈক মন্টু শাহ যা বলেন, তা এই রূপ:
আমরা বাউল। আমাদের ধর্ম আলাদা। আমরা না-মুসলমান, না-হিন্দু। আমাদের নবী সাঁইজি লালন শাহ। তাঁর গান আমাদের ধর্মীয় শ্লোক। সাঁইজির মাজার আমাদের তীর্থভূমি। আমরা যারা তাঁর ভক্ত, আমরা সকলেই এক বিশেষ নিয়মে ভেক গ্রহণ করি। আমাদের সৃষ্টি নেই মানে বিবাহ নেই—সন্তান জন্ম নেই। আমাদের গুরুই আমাদের রাসুল। আমরা আলাদা একটি জাতি, আমাদের কালেমাও আলাদা। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু লালন রাসুলুল্লাহ। —(বাংলাদেশের বাউল, পৃ. ২২-২৩ (পিডিএফ)
উপসংহার:
লালন শাহ ও বাউল সাধনা ইসলামের নিয়ম-নীতি, ধর্মীয় বিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাদের মূল লক্ষ্য—ধর্মীয় মোড়কে ইসলামকে ধ্বংস করে নাস্তিকতা ও যৌনাচার প্রতিষ্ঠা করা। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই ফিতনা থেকে হিফাযত করেন। আমীন!
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআ : পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
...
ইলমে দীন ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয় ভাবনা
[প্রদত্ত বয়ান থেকে সংগৃহীত] আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন,اليوم أكملت لكم دينكم وأتممت عليكم نعم...
ঈমানের মূল ভিত্তি ইসলামী আকায়েদ
...
হক ও বাতিল : বুঝার মানদণ্ড কী?
[গত ৭ শাবান ১৪৪০ হি. মোতাবেক ১৪ এপ্রিল ২০১৯ ঈ. রবিবার সন্ধ্যায় গাজীপুর তাবলীগ জামাতের মারকাযে হযরত ম...
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন