হযরত মুয়াবিয়া রা. খুনি ছিলেন! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৫৬
হযরত মুয়াবিয়া রা. খুনি ছিলেন! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৫৬
হযরত মুয়াবিয়া রা. ইতিহাসের পাতায় সবচে মাযলুম এক সাহাবী। যাঁকে ঘিরে সর্বপ্রথম ইহুদী সাবায়ী চক্র গভীরতম ষড়যন্ত্র করে। তাঁকে উম্মাহর সামনে জঘন্য মানুষ হিসাবে প্রমাণিত করতে চায়। হেযবুত তওহীদ কী বলে? ঠিক তাদের পেতাত্মারা আজও সে পথ বন্ধ করেনি। হেযবুত তওহীদও সে পথের অনুসারী হিসাবে লিখেছে, রসুলাল্লাহর একজন নৈকট্যপ্রাপ্ত সাহাবী হুজর বিন আদী (রা:)। আলী (রা:) এর খেলাফতের সময় মাবিয়া (রা:) এর নেতৃত্বে যখন জাতির মধ্যে চরম বিভক্তি ও গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, তখনও হুজর বিন আদী আলীর (রা:) থেকে তাঁর আনুগত্যের শপথ প্রত্যাহার কোরে নেন নি। এই কারণে মাবিয়া (রা:) হুজর বিন আদীকে (রা:) মৃত্যুদণ্ড দেন।তার কবর হয় সিরিয়ার দামেস্কে। এই দুঃখজনক নাটকের শেষ অংক অনুষ্ঠিত হয় গত ২ মে ২০১৩ তারিখে। ...ওহাবীরা তার কবর ভাঙ্গার পর সেখানে হুজর বিন আদীর (রা:) অক্ষত দেহ মোবারক উদ্ধার করা হয় যা তাঁর শাহাদাত বরণের প্রমান বহন করে। –শোষণের হাতিয়ার, পৃ. ৮৮ উক্ত বক্তব্য দিয়ে হেযবুত তওহীদ কয়েকটা দাবী করেছে– ১. হুজর বিন আদী সাহাবী ছিলেন। ২. আলী রা. এর বায়আতে থাকার অপরাধে হুজর বিন আদীকে মুয়াবিয়া রা. হত্যা করেন। ইসলাম কী বলে? হেযবুত তওহীদের উপরিউক্ত দু’টি বিষয়ের দাবী চরম ভ্রান্ত ও সাহাবী মুআবিয়া রা.-এর প্রতি চরম ধৃষ্টতার শামিল। চলুন, একেক করে দু’টি বিষয়েই আলোচনা করা যাক। এক. হুজর বিন আদী কী সাহাবী ছিলেন? এ বিষয়ে বেশ মতপার্থক্য দেখা যায়। তবে সাহাবী ও তাবেয়ীদের জীবনীর উপর রচিত বইগুলির মধ্যে প্রাচীনতম বইটি হল ‘ইবনে সা’দ রহি.-এর রচিত ‘আত-তাকাবাত আল-কুবরা’। পরবর্তী শতাব্দীতে এ বিষয়ে আরও অনেক বই লেখা হয়েছিলো, কিন্তু সবই ইবনে সা’দ রহি.-এর বইয়ের উপর ভিত্তি করে। অতএব, সঠিক উপায় হলে, যদি আমরা জানতে চাই যে, ‘কে ব্যক্তি সাহাবী আর কে সাহাবী না’ এ বিষয়ে দেখতে হলে তাবাকাতে ইবনে সা’দ দেখা। তো চলুন দেখা যাক, হুজর বিন আদি রহি. সাহাবী ছিলেন কী না? এ ব্যাপারে ইবনে হাজার আসকালারী রহি. লিখেছেন, أما البخاري وابن أبي حاتم عن أبيه وخليفة بن خياط وابن حبان فذكروه في التابعين وكذا ذكره ابن سعد في الطبقة الأولى من أهل الكوفة ইমাম বুখারী, আবু হাতেম রাযী, খলিফা বিন খয়্যাত, ইবনে হিব্বান রহি. তাকে তাবেয়ীদেরকে অন্তুর্ভূক্ত করেছেন। এমনিভাবে ইবনে সা’দ রহি. তাঁর তাবাকাতে কুফাবাসী (প্রথম সারির তাবেয়ীনদের) অন্তর্ভূক্ত করেছেন। –আল ইসাবাহ (আসকালানী) খ. ১ পৃ. ৩২৯ আবু আহমাদ আল-আসকারী রহি. বলেন, أكثر المحدثين لا يصححون له صحبة অধিকাংশ মুহাদ্দিসদের নিকট তিনি সাহাবী হওয়ার বিষয়টি সঠিক বলে প্রমাণিত নয়। –তারিখে দিমাশক, খ. ১২ পৃ. ২২৮ সুতরাং বোঝা গেলো, হেযবুত তওহীদের প্রথম দাবী হুজর বিন আদীকে সাহাবী বানানোর বিষয়টি অকাট্যভাবে প্রমাণিত নয়। হুজর বিন আদীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া কারণ কী? হেযবুত তওহীদের দাবী ছিলো–হুজর বিন আদী আলী রা.-এর বায়’আত থেকে সরে না আসার কারণে হযরত মু’আবিয়া রা. তাঁকে হত্যা করেন। নাউযুবিল্লাহ। এমন মন্তব্য কোনও ঐতিহাসিক আজ অবদি লেখেননি। এটা নিছক হেযবুত তওহীদের মিথ্যাচারের নমুনা। প্রথমত জেনে রাখুন, হুজর বিন আদীকে হত্যা করা হয়, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদিসের উপর আমল করতেই। চলুন, আগে হুজর বিন আদীর কর্মকান্ড সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। মূলত হুজর বিন আদী ছিলেন ঐ সকল লোকদের মতাদর্শী, যারা হযরত উসমান রা. ও মুয়াবিয়া রা. এর বিরোধী শক্তি ছিলো। এ ব্যাপারে ইবনে আসাকীর রহি. সে সময়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাক্ষ্য নকল করে বলেন, ان حجرا جمع اليه الجموع واظهر شتم الخليفة ودعا الى حرب أمير المؤمنين وزعم ان هذا الامر لا يصلح الا فى آل ابى طالب و وئب المصر وأخرج عامل امير المؤمنين হুজর ইবনে আদী তার কাছে জনগণকে জড়ো করতে থাকে ও খলীফাকে গালিগালাজ করতো এবং আমীরুল মুমিনিনের (হযরত মুয়াবিয়ার রা.) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আহ্বান করতে থাকে। আর তার দাবী ছিলো, আলী ইবনে আবু তালাবের রা. পরিবার ছাড়া খিলাফতের যোগ্য অন্য কেউ হতে পারে না এবং তিনি বিদ্রোহ করে আমিরুল মুমিনীনের গভর্ণরকে শহর থেকে বের করে দেন। –তারীখে ইবনে আসাকীর, খ. ২ পৃ. ৩৭৫ ইবনে কাসীর রহি. ইবনে জারীর সূত্রে বলেন, وقد ذكر ابن جرير وغيره عن حجر بن عدي وأصحابه أنهم كانوا ينالون من عثمان ويقولون فيه مقالة الجور وينتقدون على الأمراء ويسارعون في الإنكار عليهم ويبالغون في ذلك ويتولون شيعة علي ويتشددون في الدين হুজর বিন আদী ও তার সহযোগীরা উসমান রা.-এর ব্যাপারেও অভিযোগ তুলেছিলো এবং তাঁর ব্যাপারে জুলুম-অত্যাচারের অভিযোগ তুলেছিলো এবং সে উচ্চপদস্থ ব্যক্তি, বিচারক ও শাসক কর্মকর্তাদের কঠিন সমালোচনা করতো, তাঁদেরকে অস্বীকার করতে ত্বরান্বিত করছিলো, এবং এ ব্যাপারে অনেক বাড়াবাড়ি করেছিলো এবং ধর্মের ব্যাপারেও অনেক বাড়াবাড়ি করতো। –আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, খ. ১১ পৃ. ২৩৯ কুফায় যখন মুগীরা ইবনে শু’বাবা রা. ৫০ হিজরীতে ইন্তিকাল করেন। তখন হযরত মুয়াবিয়া রা. তার স্থলে যিয়াদকে কুফার গভর্ণর নিযুক্ত করেন। হুজুর বিন আদী এ নিয়োগের চরম বিরোধী ছিলো। এ কারণে হযরত আলী রা.-এর অনুসারী দাবীদার ব্যক্তিরা একে একে হুজুর বিন আদী এর দলে শামিল হতে থাকে। তখন তারা সকলে و يسبون معاوية ويتبرون من তারা খলীফা হযরত মুয়াবিয়া রা. কে গালমন্দ করতো, এবং চরম বিরোধীতা করতো। –আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, খ. ৮ পৃ. ৫০ ইবনে কাসীর রহি. বলেন, وجعل زياد يقول في خطبته إن من حق أمير المؤمنين يعني كذا وكذا فأخذ حجر كفا من حصباء فحصبه وقال كذبت عليك لعنة الله একদিন যিয়াদ ইবনে আবিহি কুফায় খুৎবা দিচ্ছিলেন আমিরুল মুমিনীনের হক সম্পর্কে। এমন সময় হুজর বিন আদী তার উপর পাথর নিক্ষেপ করে বলেলো, তুমি মিথ্যা বলছো, তোমার উপর আল্লাহর লা’নত। –আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, খ. ৭ পৃ. ৫৪ এরপর যিয়াদ বড় বড় বেশ কয়েকজন সাহাবীসহ ৭০ জন সাক্ষি সম্বলিত একটি চিঠি তৎকালিন সময়ের আমিরুল মুমিনিন হযরত মুয়াবিয়া রা.-এর কাছে পাঠান। ফলে মুয়াবিয়া রা. তাকে গ্রেফতার করান। কিন্তু নিজের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথমেই তিনি তাকে হত্যা করেননি, বরং সর্বপ্রথম তিনি পরামর্শ বৈঠকের আহ্বান করেন। যার বিস্তারিত বিবরণ তারিখে দিমাশকের মধ্যে এসেছে, إنما استشار الناس في قتل حجر ومن معه فكان منهم المشير, ومنهم الساكت মুয়াবিয়া রা. হুজর বিন আদী ও তার সহযোগীদের মৃত্যুদণ্ডের ব্যাপারে পরামর্শ চান। কেউ কেউ পরামর্শ দেন, আবার কেউ নিরাবতা পালন করেন। তবে কেউ কেউ বলেন, ومنهم من قال إن تعاقبهم فقد أصبت وإن تعفو فقد أحسنت যদি আপনি শাস্তি দেন, তাহলে সঠিক কাজ হবে। আর যদি মাফ করে দেন তাহলে দয়া হবে। –তারিখে দিমাশক, খ. পৃ. ২২৩ তাহলে বোঝা গেলো, হুজর বিন আদী তার কৃতকর্মের জন্য সে ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী শাস্তি পাওয়ার যোগ্য ছিলান। উপরন্তু হযরত মুয়াবিয়া রা. ও হাসান রা.-এর সন্ধিচুক্তির ভিত্তিতে সকল যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যায় এবং পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে যায়। কিন্তু কুফার যেই গ্রুপের কারণে হযরত উসমান রা.-কে শহীদ করা হয়েছিলো, সেই গ্রুপ দ্বারাই প্রভাবিত ছিলো হুজর বিন আদী। যার কারণে মুয়াবিয়া রা. ভয়ে ছিলেন যে, তার কারণে উম্মতের মধ্যে আবার গৃহ যুদ্ধ লেগে যায় কী না? সেজন্য উম্মতের মধ্যে ফাটল সৃষ্টির অভিযোগে অসংখ্য সাহাবী ও তাবেয়ীনদের পরামর্শে তাকে হত্যা করা হয়। মুয়াবিয়া রা. কী অপরাধ করেছিলেন? ইসলামে ঐক্যের গুরুত্ব সীমাহিন। এই ঐক্য বিনাশী চিন্তা লালন করে মুসলিম মিল্লাতের মধ্যে যারা ফাটল সৃষ্টি করে, তারা ইসলামী শরীয়াহ’র বিধান অনুযায়ী শান্তি পাওয়ার যোগ্য। এ ব্যাপারে দুটো হাদিস দেখুন। হযরত আরফাজাহ্ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে আমি বলতে শুনেছি, إِنَّهُ سَتَكُونُ هَنَاتٌ وَهَنَاتٌ ، فَمَنْ أَرَادَ أَنْ يُفَرِّقَ أَمْرَ هَذِهِ الْأُمَّةِ وَهِيَ جَمِيعٌ ، فَاضْرِبُوهُ بِالسَّيْفِ كَائِنًا مَنْ كَانَ অচিরেই নানা প্রকার ফিৎনা-ফাসাদের উদ্ভব হবে। যে ব্যক্তি ঐক্যবদ্ধ উম্মাতের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রয়াস চালাবে, তোমরা তরবারি দিয়ে তার গর্দান উড়িয়ে দেবে, সে যে কেউ হোক না কেন। –সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৮৫২ হযরত আরফাজা রা. হতে বর্ণিত, তিনি আরও বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, مَنْ أَتَاكُمْ وَأَمْرُكُمْ جَمِيعٌ عَلَى رَجُلٍ وَاحِدٍ يُرِيدُ أَنْ يَشُقَّ عَصَاكُمْ أَوْ يُفَرِّقَ جَمَاعَتَكُمْ فَاقْتُلُوهُ তোমাদের এক নেতার অধীনে একতাবদ্ধ থাকা অবস্থায় যে ব্যক্তি এসে তোমাদের শক্তি খর্ব করতে উদ্যত হয় অথবা তোমাদের ঐক্য বিনষ্ট করতে চায়, তাকে তোমরা হত্যা করবে। –সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৮৫২ সুতরাং এ হাদিস দু’টো থেকে বুঝা গেলো, হযরত মুয়াবিয়া রা. যা করেছেন, সেটা হাদিস অনুযায়ী করেছেন। কারণ হুজর বিন আদীর ভেতরে এই ঐক্য বিনাশী কর্মকাণ্ডের সম্পৃক্ততা চরম পর্যায়ে বিদ্যমান ছিলো। আম্মাজান আয়েশা রা.-এর সাথে মুয়াবিয়ার রা. মুলাকাত হযরত মুয়াবিয়া রা. একবার মাদীনায় আগমণ করলেন, অতপর আম্মাজান আয়েশা রা.-এর সাথে সাক্ষাৎ করতে চাইলে তিনি অনুমতি দিলেন না। বারবার পীড়াপীড়ির পর আয়েশা রা. অনুমতি দিলেন। অতঃপর আম্মাজান আয়েশা রা. তাঁকে প্রশ্ন করলেন, انت الذي قتلت حجرا قال لم يكن عندي احد ينهاني তুমি কী সেই লোক যে হুজরকে হত্যা করেছে? তখন তিনি বললেন, আমাকে তো কেউ নিষেধ করেনি। (কারণ তিনি হত্যার উপযুক্ত অন্যায় করেছেন।) –তারিখে দিমাশক খ. ১২ পৃ. ২২৬ তিনি আরও বলেছিলেন, يا ام المؤمنين اني رأيت قتلهم صلاحا لامة হে উম্মুল মুমিনিন, আমি তাকে উম্মতের জন্য মঙ্গলজনক মনে করেই হত্যা করেছি। –তারিখে দিমাশক খ. ১২ পৃ. ২২৬ আব্দুল্লাহ ইবনে আবু মুলাইকাসহ অন্যান্যরা বলেন, হযরত আয়েশা রা. মুআবিয়া রা.-কে হুজর বিন আদীর হত্যা সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনব জবাবে বলেন, : يا أم المؤمنين إني وجدت قتل رجل في صلاح الناس خير من استحيائه في فسادهم বিশৃংখলার জন্য একজন মানুষ বাঁচিয়ে রাখার চেয়ে মানুষের কল্যাণের জন্য তাকে হত্যা করা আমি মঙ্গলজনক মনে করেছি। –আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ খ. ৭ পৃ. ৫৮ সুতরাং বুঝা গেলো, নিজস্ব শত্রুতার কারণে মুয়াবিয়া রা. হুজর বিন আদী ও তার সহযোগীদেরকে কে হত্যা করেননি। এরপরও যদি ধরে নেওয়া হয় যে, মুয়াবিয়া রা. সিদ্ধান্তটা সঠিক ছিলো না, তবুও মুয়াবিয়া রা. এ ক্ষেত্রে গুনাহগার হবেন না। কারণ তিনি এ কাজটি করেছিলেন মুসলমানদের মধ্যে পূনরায় যুদ্ধের সম্ভাবনার বিষয়টি বন্ধ করার জন্য। এটি ছিলো তাঁর ইজতিহাদ। মূলত এ কাজটি করে তিনি ফিতনার মূলউৎপাটন করে দিয়েছেন। এটা যদি তাঁর ভুলও হয়, তবুও এটার জন্য তিনি পুরস্কৃত হবেন। কারণ, হাদিসে এসেছে, হযরত আমর ইবনু ’আস রা. হতে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে এ কথা বলতে শুনেছেন, إِذَا حَكَمَ الْحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَصَابَ فَلَهُ أَجْرَانِ وَإِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَخْطَأَ فَلَهُ أَجْرٌ কোনও বিচারক ইজতিহাদে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছলে, তার জন্য আছে দু’টি পুরস্কার। আর বিচারক ইজতিহাদে ভুল করলে, তার জন্যও রয়েছে একটি পুরস্কার। –সহিহ বুখারী, হাদিস : ৭৩৫২ সর্বোপরি কথা হলো, হুজর বিন আদীর হত্যাকে কেন্দ্র করে মুআবিয়া রা.-কে নিয়ে যে সমালোচনা করা হয়, এটা নিছক তাঁর প্রতি বিদ্বেষ রাখার কারণেই। আল্লাহপাক উভয়কে জান্নাতুল ফিরদাউসের সুউচ্চ আসনে আসীন করেন। আমীন! হযরত মুয়াবিয়া রা.-এর সম্মান হযরত মুয়াবিয়া রা. ছিলেন কাতিবে ওহী। অর্থাৎ যখন রাসুলুল্লাহ সা.-এর ওপর পবিত্র কুরআনের আয়াত নাযিল করা হতো, তখন যারা এ আয়াতগুলো লিপিবদ্ধ করতেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হযরত মুয়াবিয়া রা.। একই সাথে তিনি ছিলেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আপন শ্যালক। উম্মুল মুমিনিন আম্মাজান উম্মে হাবিবা রা.-এর ভাই। সাহাবী হিশাবে যে সম্মান সকল সাহাবার ক্ষেত্রে বর্ণিক, ঠিক সে সম্মান ও মর্যাদার পূর্ণ মালিক তিনিও। তাঁর শানে কথা বলার সময় এটা মনে রাখা উচিৎ যে, তিনি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খুব কাছের সাহাবী। ইমাম আজুররী নিজ সনদে জাররাহ আল-মু’সিলী থেকে বর্ণনা করে বলেন, سمعت رجلاً يسأل المعافى بن عمران فقال يا أبا مسعود أين عمر بن عبد العزيز من معاوية بن أبي سفيان فرأيته غضب غضباً شديداً و قال لا يقاس بأصحاب محمد صلى الله عليه وسلم أحد আমি এক ব্যক্তিকে মুয়াফী ইবনে ইমরা রহ.-কে প্রশ্ন করতে শুনলাম, সে জিজ্ঞাসা করলো, হে আবু মাসউদ, উমর ইবনে আব্দুল আজিজ উত্তম না কি মুয়াবিয়া রা.? আমি তাকে দেখলাম, তিনি খুবই রাগান্বিত হয়ে গেলেন। অতঃপর বললেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাহাবীদের সাথে কাউকে তুলনা করা যাবে না। –কিতাবুশ শরীআহ, বর্ণনা নং : ২০১৩ ইমাম আজুররী নিজ সনদে ইমাম আবু উসামা রহ. থেকে বর্ণনা করেছেন, তাকে একদা প্রশ্ন করা হলো, أيهما أفضل معاوية أو عمر بن عبد العزيز فقال أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يقاس بهم أحد হযরত মুয়াবিয়া ও উমর ইবনে আব্দুল আজির এর মধ্যে কে উত্তম? তিনি বললেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাহাবীদের সাথে অন্য কারও তুলনা করা চলে না। –কিতাবুশ শরীআহ, বর্ণনা নং : ২০১১ উপরন্তু হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক রহি. কে হযরত মুয়াবিয়া রা. সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, أيهما أفضل معاوية بن أبي سفيان أم عمر بن عبد العزيز فقال و الله إن الغبار الذي دخل في أنف معاوية مع رسول الله صلى الله عليه وسلم أفضل من عمر بألف مرة একদা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক রা.-কে প্রশ্ন করা হলো, কে উত্তম? হযরত মুয়াবিয়া রা. না কি উমর ইবনে আব্দুল আজিজ রহ.? তিনি উত্তর দিলেন, আল্লাহর শপথ, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে চলার সময় হযরত মুয়াবিয়া রা.-এর নাকে যেই ধুলো প্রবেশ করেছে, সেটি হযরত উমর ইবনে আব্দুল আজিজ থেকে হাজারগুণ উত্তম। –ওফায়াতুল আইয়ান, (ইবনে খল্লিকান) খ. ৩ পৃ. ৩৩ সুতরাং এমন একজন গুরুত্বপূর্ণ সাহাবীর রা. শানে কথা বলার সময় সাবধান হয়ে কথা বলা। যাঁদের উপর আল্লাহ খুশি হওয়ার সু-সংবাদ খোদ কুরআনে মাজীদে বর্ণিত হয়েছে, তাঁদের উপর প্রশ্ন তোলা নিছক ইসলামদ্রোহীতার শামিল।
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন