সাহাবাদের থেকেও সাধারণ মুসলমানের মর্যাদা বেশি!! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৫৫
সাহাবাদের থেকেও সাধারণ মুসলমানের মর্যাদা বেশি!! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৫৫
সাহাবায়ে কেরাম হলেন ইসলামে সর্বশ্রেষ্ট মর্যাদায় আসীন এবং সর্বোত্তম নেকির অধিকারী। তাদের সমতূল্য কোনও বড়পীর বা বড় ওলীও হতে পারে না। হেযবুত তওহীদ কী বলে? হেযবুত তওহীদ লিখেছে, একদিন বিশিষ্ট সাহাবা আবু ওবায়দা (রা.) আল্লাহর রসুলকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসুলাল্লাহ! আমরা যারা আপনার সঙ্গে থেকে কঠিন জেহাদ কোরলাম, আমাদের চেয়ে ভালো লোক কি আর হবে? আল্লাহর রসুল জবাব দিলেন- আখেরী যামানায় এমন লোক আবির্ভূত হবে যাদের অবস্থান (দরজা) তোমাদের চেয়েও বহুগুণ ঊর্ধে হবে। –দাজ্জাল, পৃ. ৮১ ইসলাম কী বলে? এমন ডাহা মিথ্যা কথা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোথাও বলেননি, বরং এ কথাটা পন্নী হয়তো নেশাগ্রস্ত অবস্থায় লিখেছে। কারণ, সাহাবায়ে কেরাম রা. হলেন উম্মতের শ্রেষ্ট মানুষ। যাঁদের থেকে অধিক মর্যাদা সম্পন্ন হওয়া তো দূরের কথা তাঁদের সমপর্যায়েরও হওয়া সম্ভব না। খোদ আল্লাহ তাআলা বলেছেন, لَا يَسْتَوِي مِنكُم مَّنْ أَنفَقَ مِن قَبْلِ الْفَتْحِ وَقَاتَلَ أُوْلَئِكَ أَعْظَمُ دَرَجَةً مِّنَ الَّذِينَ أَنفَقُوا مِن بَعْدُ وَقَاتَلُوا وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَى وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ তোমাদের মধ্যে যে মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে ও জেহাদ করেছে, সে সমান নয়। এরূপ লোকদের মর্যাদা বড় তাদের অপেক্ষা, যারা পরে ব্যয় করেছে ও জেহাদ করেছে। তবে আল্লাহ উভয়কে কল্যাণের ওয়াদা দিয়েছেন। তোমরা যা করো, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত। –সুরা হাদিদ আয়াত : ১০ হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত রিয়াহ ইবনুল হারিস রা. সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, كُنْتُ قَاعِدًا عِنْدَ فُلَانٍ فِي مَسْجِدِ الْكُوفَةِ وَعِنْدَهُ أَهْلُ الْكُوفَةِ فَجَاءَ سَعِيدُ بْنُ زَيْدِ بْنِ عَمْرِو بْنِ نُفَيْلٍ فَرَحَّبَ بِهِ وَحَيَّاهُ وَأَقْعَدَهُ عِنْدَ رِجْلِهِ عَلَى السَّرِيرِ فَجَاءَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْكُوفَةِ يُقَالُ لَهُ قَيْسُ بْنُ عَلْقَمَةَ فَاسْتَقْبَلَهُ فَسَبَّ وَسَبَّ فَقَالَ سَعِيدٌ مَنْ يَسُبُّ هَذَا الرَّجُلُ قَالَ يَسُبُّ عَلِيًّا، قَالَ أَلَا أَرَى أَصْحَابَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُسَبُّونَ عِنْدَكَ ثُمَّ لَا تُنْكِرُ وَلَا تُغَيِّرُ أَنَا سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ وَإِنِّي لَغَنِيٌّ أَنْ أَقُولَ عَلَيْهِ مَا لَمْ يَقُلْ فَيَسْأَلَنِي عَنْهُ غَدًا إِذَا لَقِيتُه أَبُو بَكْرٍ فِي الْجَنَّةِ وَعُمَرُ فِي الْجَنَّةِ وَسَاقَ مَعْنَاهُ ثُمَّ قَالَ لَمَشْهَدُ رَجُلٍ مِنْهُمْ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَغْبَرُّ فِيهِ وَجْهُهُ خَيْرٌ مِنْ عَمَلِ أَحَدِكُمْ عُمُرَهُ وَلَوْ عُمِّرَ عُمُرَ نُوحٍ একদা আমি জনৈক লোকের নিকট কুফার মাসজিদে বসা ছিলাম এবং তার নিকট কুফার লোকজনও উপস্থিত ছিলো। এ সময় সাঈদ ইবনু যায়িদ আমর ইবনু নুফাইল রা. এলে তিনি তাকে সাদর সম্ভাষণ ও সালাম জানিয়ে খাটের উপর নিজের পায়ের কাছে বসালেন। অতঃপর কায়িস ইবনু আলকামাহ নামক জনৈক কুফাবাসী এলে তাকেও অভ্যর্থনা জানালেন। তারপর সে গালাগালি করতে লাগলো। সাঈদ রা. বললেন, এ ব্যক্তি কাকে গালি দিচ্ছে? তিনি বললেন, সে আলী রা. কে গালি দিচ্ছে। তিনি বললেন, আমি দেখতে পাচ্ছি, সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীকে আপনার সম্মুখে গালি দিচ্ছে অথচ আপনি তাকে নিষেধ করছেন না আর থামাচ্ছেনও না! আমি রাসুলুল্লাহ সাঃ-কে বলতে শুনেছি, আমি তাঁর সম্পর্কে এমন উক্তি করা থেকে মুক্ত যা তিনি বলেননি। অতঃপর কিয়ামাতের দিন যখন তার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হবে তখন এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। আবু বাকর রা. জান্নাতী, উমার রা. জান্নাতী। বর্ণনাকারী অতঃপর অনুরূপ অর্থের বর্ণনা করলেন এবং তিনি বললেন, তাদের কোনও একজনের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহচর্য লাভ, যে সাহচর্যে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না তাও তোমাদের কোনো ব্যক্তির সারা জীবনের আমলের চেয়ে উত্তম, যদিও সে নূহ আ. এর মতো দীর্ঘ আয়ু পায়। –সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪৬৫০ অন্য হাদিসে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, لا تسبُّوا أصحابَ محمَّدٍ صلّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ فلَمُقامُ أحدِهِم ساعةً خيرٌ مِن عمَلِ أحدِكُم عُمرَهُ তোমরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবাগণের মন্দ বলো না, তাদের এক মুহুর্তের সৎকাজ তোমাদের সারা জীবনের সৎকাজের চেয়ে উত্তম। –সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৬২ হযরত ইমরান বিন হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, خَيْرُ أُمَّتي قَرْنِي ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ আমার উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম তারা যারা আমার যুগে রয়েছে (অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম)। অতঃপর তাদের পরবর্তী যুগের উম্মাত (তথা তাবেয়ীগণ)। অতঃপর তাদের পরবর্তী যুগের উম্মাত। (অর্থাৎ, তাবয়ে তাবেয়ীণ)। –সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ৩৬৫০ হযরত উমর রাঃ থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, أكرموا أصحابِي فإنهم خيارُكم তোমরা আমার সাহাবীগণকে সম্মান করো। কেননা, তাঁহারা তোমাদের মধ্যকার উত্তম মানব। –মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং: ৬০১২ হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, إن اللهَ اختار أصحابِي على العالمينَ سوى النبيينَ والمرسلينَ واختار لي من أصحابِي أربعةً يعني أبا بكرٍ وعمرَ وعثمانَ وعليًّا رحمهم اللهُ فجعلهم أصحابِي وقال في أصحابِي كلِّهم خيرٌ واختار أمتي على الأممِ আল্লাহ তাআলা আমার সাহাবীকে মনোনীত করেছেন বিশ্ববাসীর উপর। কেবল নবী-রাসুলগণ ব্যতীত, আমার সাহাবীগণ থেকে চারজনকে আমার জন্য মনোনীত করেছেন, তারা হলেন হযরত আবু বকর, রা. হযরত ওমর রা. হযরত ওসমান রা. ও হযরত আলী রা.। তাঁরা আমার শ্রেষ্ঠ সাহাবী। তবে আমার সকল সাহাবী উত্তম। সকল উম্মত থেকে আমার উম্মতকে মনোনীত করেছেন। –মাজমাউয যাওয়ায়েদ, খ. ১০ পৃ. ১৮ হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, لا تسبوا أصحابي فوالذي نفسي بيده لو أن أحدكم أنفق مثل أحد ذهباً ما أدرك مد أحدهم ولا نصيفه তোমরা আমার কোন সাহাবীকে মন্দ বলো না। তোমাদের কেউ যদি উহুদ পর্বততূল্য স্বর্ণও দান করে, তবুও তাঁদের সোয়া সের যব সদাকা করার সমানও হতে পারে না, বরং এর অর্ধেকেরও বরাবর হতে পারে না। –সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ৩৬৭৩ উপরিউক্ত আয়াত ও হাদিসসমূহ থেকে প্রমাণ হলো–এই উম্মতের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিত্বরা হলে একমাত্র সাহাবায়ে কেরাম রা.। তাঁদের চেয়ে উত্তম বলে কাউকে স্বীকৃতি দেওয়া চরম পর্যায়ের মূর্খতা ও সাহাবা বিদ্বেষের শামিল।
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন