যাকাত শান্তি প্রতিষ্ঠার ট্রেণিং! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৯২
যাকাত শান্তি প্রতিষ্ঠার ট্রেণিং! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৯২
ইসলামের যাকাতের অবস্থান একটি স্বতন্ত্র আমল হিশাবে। অন্য কোনো আমলের ট্রেণিং হিশাবে ইসলামের ইতিহাসে কোনো আয়াতে বা হাদিসে অথবা গ্রহণযোগ উলামায়ে কেরাম বলেননি। হেযবুত তওহীদ কী বলে? তাদের দাবী হলো, যাকাত ইসলামে মৌলিক কোনো বিষয় নয়, বরং এটা পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার একটা ট্রেণিং মাত্র। দেখুন, তারা কী বলে– প্রকৃত ইসলামের জীবনব্যবস্থার উদ্দেশ্য মানব জীবনের নিরাপত্তা সুখ-শান্তি প্রকৃত এসলামের, জীবনব্যবস্থার উদ্দেশ্য মানব জীবনের নিরাপত্তা, সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি, আর বর্তমান এসলামের উদ্দেশ্য ওসব কিছুই নয় বরং সময়মত নামাজ পড়া, যাকাত দেওয়া, হজ্ব করা, রোজা রাখা, দাড়ি রাখা, লম্বা পোশাক ও খাটো পায়জামা পরা ইত্যাদি। –হেযবুত তওহীদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পৃ. ৭ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মানেই হচ্ছে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। যারা এই অঙ্গীকার করবে তাদের চরিত্র অর্জনের জন্য আল্লাহ নামাজ রোজা হজ্ব যাকাত এর হুকুম দিয়েছেন। –মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ১০৯ সেই সত্য দীনকে প্রতিষ্ঠিত করার সর্ব উপায়ে প্রচেষ্টা চালানো প্রত্যেক মো'মিনের অবশ্য কর্তব্য, ফরদ। এই দীন প্রতিষ্ঠা করতে হলে মো'মেনের অবশ্যই কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গুন লাগবে। সেই চারিত্রিক, মানসিক আত্মিক গুণ বৈশিষ্ট্য (Attributes) এটা যে সে অর্জন করবে কোথেকে অর্জন করবে? সেটার জন্য আল্লাহ তার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রেখেছেন। সেটা হলো সালাহ সওম,হজ্ব,যাকাত এগুলো। এগুলোর মাধ্যমে তার চরিত্রে কিছু গুন অর্জিত হবে। তারপর সে আল্লাহর সত্যদীন পৃথিবীময় প্রতিষ্ঠা করে মানবসমাজ থেকে অন্যায় অশান্তি দূর করতে পারবে যেটা উম্মতে মুহাম্মদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য। –সওমের উদ্দেশ্য, পৃ. ৫ অর্থাৎ তারা বুঝাতে চায়–যাকাত দীনের মূল কাজ নয়, বরং পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার একটা ট্রেণিং মাত্র। ইসলাম কী বলে? যাকাতকে জিহাদের ট্রেনিং বলা পবিত্র কুরআনের আয়াতের অপব্যাখ্যার শামিল। কারণ, আল্লাহপাক ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোথাও বলেননি যে, যাকাত জিহাদের ট্রেণিং। আল্লাহ তাআলা বলেন, وَأَقِيمُواْ الصَّلاَةَ وَآتُواْ الزَّكَاةَ এবং সালাত কায়েম করো ও যাকাত আদায় করো। –সুরা বাকারা : ১১০ উক্ত আয়াতসহ অসংখ্য আয়াতে মহান রব্ব বলেছেন, যাকাত আদায় করতে বা যাকাত ফরজ করা হয়েছে। কিন্তু কোনো আয়াত বা হাদিসে যাকাতকে জিহাদের ট্রেণিং বলা হয়নি। সুতরাং কুরআনের مطلق (শর্তহীন) আয়াতকে مقيد (শর্তযুক্ত) করা সুস্পষ্ট অপব্যাখ্যার শামিল। অতএব, কোনো আয়াতের মনগড়া উক্তি করা এক জঘন্যতম অন্যায়। যার কারণে হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত জুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, مَنْ قَالَ فِي الْقُرْآنِ بِرَأْيِهِ فَأَصَابَ فَقَدْ أَخْطَأَ যে ব্যক্তি নিজের মত অনুযায়ী কুরআন প্রসঙ্গে কথা বলে, সে সঠিক বললেও অপরাধ করলো (এবং সঠিক ব্যাখ্যা করলো-সেও ভুল করলো)। –জামে তিরমিযি, হাদিস নং : ২৯৫২ যাকাত কীসের জন্য? যাকাত মানুষের গুনাহমুক্তি ও আত্মশুদ্ধির অন্যতম একটি মাধ্যম। আল্লাহ তা'আলা বলেন- خُذْ مِنْ اَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَ تُزَكِّیْهِمْ بِهَا وَصَلِّ عَلَیْهِمْ ؕ اِنَّ صَلٰوتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ ؕ وَ اللّٰهُ سَمِیْعٌ عَلِیْمٌ (হে নবী,) তাদের সম্পদ থেকে সদকা গ্রহণ করো, যার মাধ্যমে তুমি তাদেরকে পবিত্র ও বরকতপূর্ণ করবে এবং তাদের জন্য দোয়া কর। নিশ্চয়ই তোমার দুআ তাদের পক্ষে প্রশান্তিদায়ক। আল্লাহ সব কথা শোনেন, সবকিছু জানেন। –সুরা তাওবা : ১০৩ উক্ত আয়াতে যাকাতের দু’টি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ্য করা হয়েছে– এক. যাকাতের মাধ্যমে মন্দচরিত্র ও পাপ-পঙ্কিলতা থেকে পবিত্রতা অর্জনের পক্ষে সহায়ক হয়। দুই. সৎকাজে বরকত ও উন্নতি লাভ হয়। সুতরাং জানা গেলো, যাকাত কোনো ট্রেণিং নয়, বরং আত্মশুদ্ধির জন্য যাকাতের আইন। শুধু তাই নয়, বরং সম্পদেরও পবিত্র করে যাকাত, সাদাকা। এছাড়াও হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত কায়িস ইবনে আবু গারাযাহ রা. সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, يَا مَعْشَرَ التُّجَّارِ، إِنَّ الْبَيْعَ يَحْضُرُهُ اللَّغْوُ وَالْحَلْفُ، فَشُوبُوهُ بِالصَّدَقَةِ হে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, ব্যবসায়িক জাজে বেহুদা কথাবার্তা এবং অপ্রয়োজনীয় শপথ হয়ে থাকে। সুতরাং তোমরা ব্যবসার পাশাপাশি সাদাকাহ করে তাকে ত্রুটিমুক্ত পবিত্র করো। –সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং : ৩৩২৬ অথচ হেযবুত তওহীদের দাবী হলো, 'যাকাত সমাজে শান্তি ও ন্যায়বিচারক প্রতিষ্ঠার একটা ট্রেণিং' এখন আপনারাই বলুন হেযবুত তওহীদ কী আয়াত ও হাদিসের অপব্যাখ্যা করেনি?
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন