আর্মি ট্রেনিং স্টাইলে নামাজ পড়তে হবে। হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৭৫
আর্মি ট্রেনিং স্টাইলে নামাজ পড়তে হবে। হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৭৫
নামাজ সেভাবেই পড়তে হবে যেভাবে রাসুলুল্লাহ সাঃ শিখিয়ে গেছেন। কিন্তু হেযবুত তওহীদ আবিস্কার করেছে এক বিদ'আতী নামাজ।
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, জামাতে নামাজ আদায় করার সময় ইমামের সাথে সাথেই সব করতে হবে। তারা লিখেছে,
সালাতের দৃশ্য পৃথিবীতে আর একটি মাত্র দৃশ্যের সঙ্গে মিলে, আর কিছুর সাথেই মিলে না, আর সেটা হচ্ছে পৃথিবীর যে কোনো সামরিক বাহিনীর কুচকাওয়াজের সঙ্গে। –ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ২১
যে কারণে একটি সামরিক বাহিনীর প্যারেড, কুচকাওয়াজ করার সময় তাদের পোষাক পরিচ্ছদ অর্থাৎ ইউনিফর্ম একই রকম, ইস্ত্রি করা পরিস্কার হওয়া বাধ্যতামূলক, ঠিক সেই কারণেই মসজিদে সালাতের সময় জাক-জমকপূর্ণ পোষাক পরার জন্য আল্লাহর এই হুকুম। –ইসলামের প্রকৃত সালাহ-৩৮
ইসলামের প্রকৃত সালাহর নিয়ম হচ্ছে, এমামের তকবিরের জন্য সতর্ক, তৎপর হয়ে থাকা ও তকবিরের সঙ্গে সঙ্গে জামাতের সকলের সঙ্গে একত্রিতভাবে, একসাথে রুকুতে যাওয়া, এ’তেদাল করা,সাজদায় যাওয়া, সালাম ফেরানো ইত্যাদি করা; ঠিক যেমনভাবে প্যারেড,কুচকাওয়াজের সময় সামরিক বাহিনীর সৈনিকেরা সার্জেন্ট মেজরের(Sergeant-major) আদেশের সঙ্গে সঙ্গে সকলে একত্রিত ভাবে মার্চ করে,ডাইনে বামে ঘুরে দাঁড়ায়, বসে,দৌঁড়ায়। –ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ২৬
যেহেতু মূলত সালাহ সামরিক প্রশিক্ষণ সেহেতু এর চলন (Muvenent) দ্রুত হতে বাধ্য। –ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ২৫
অর্থাৎ তারা বুঝাতে চায়, সামরিক প্রশিক্ষণের মত ইমামের সাথে সাথেই মুক্তাদিও আদায় করবে, দেরি করতে পারবে না।
ইসলাম কী বলে?
হাদীসে বর্ণিত পদ্ধতি হলো, ইমামের সাথে সাথে নয়, বরং ইমামের পরে মুক্তাদী রুকু-সিজদা করবে। হাদিস শরীফে লম্বা এক বর্ণনা রয়েছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إِذَا صَلَّيْتُمْ فَأَقِيمُوا صُفُوفَكُمْ ثُمَّ لْيَؤُمَّكُمْ أَحَدُكُمْ فَإِذَا كَبَّرَ فَكَبِّرُوا وَإِذَا قَالَ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ فَقُولُوا آمِينَ . يُجِبْكُمُ اللَّهُ فَإِذَا كَبَّرَ وَرَكَعَ فَكَبِّرُوا وَارْكَعُوا فَإِنَّ الإِمَامَ يَرْكَعُ قَبْلَكُمْ وَيَرْفَعُ قَبْلَكُمْ " . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " فَتِلْكَ بِتِلْكَ وَإِذَا قَالَ سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ . فَقُولُوا اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ . يَسْمَعُ اللَّهُ لَكُمْ فَإِنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى قَالَ عَلَى لِسَانِ نَبِيِّهِ صلى الله عليه وسلم سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ . وَإِذَا كَبَّرَ وَسَجَدَ فَكَبِّرُوا وَاسْجُدُوا فَإِنَّ الإِمَامَ يَسْجُدُ قَبْلَكُمْ وَيَرْفَعُ قَبْلَكُمْ " . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " فَتِلْكَ بِتِلْكَ
তোমরা যখন সালাত আদায় করবে, তোমাদের লাইনগুলো ঠিক করে নিবে। অতঃপর তোমাদের কেউ তোমাদের ইমামতি করবে। সে যখন তাকবীর বলবে, তোমরাও তাকবীর বলবে। সে যখন “গাইরিল মাগযুবি ’আলাইহিম ওয়ালায যোল্লীন" বলবে তোমরা তখন আমীন বলবে। আল্লাহ তোমাদের ডাকে সাড়া দিবেন। সে যখন তাকবীর বলে রুকু’তে যাবে, তোমরাও তাকবীর বলে রুকু’তে যাবে। কেননা, ইমাম তোমাদের আগে রুকু’তে যাবে এবং তোমাদের আগে রুকু থেকে উঠবে। রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, এটা ওটার বিনিময়ে, তথা ইমাম যেমন রুকু সাজদার আগে যাবে, তেমনি আগে উঠবে। সে যখন "সামি’আল্লাহু লিমান হামিদাহ" বলবে, তোমরা তখন "আল্লাহুম্মা রব্বানা- লাকাল হামদ" বলবে, আল্লাহ তোমাদের এ কথা শুনবেন। কেননা আল্লাহ তাআলা তার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ভাষায় বলছেন, "সামি’আল্লাহু লিমান হামিদাহ" (আল্লাহ তার প্রশংসাকারীর প্রশংসা শুনেন)। সে যখন তাকবীর বলবে এবং সাজদায় যাবে, তোমরাও তার পরপর তাকবীর বলে সাজদায় যাবে। কেননা, ইমাম তোমাদের আগে সাজদায় যাবে এবং তোমাদের আগে সিজদা থেকে উঠবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের তাকবীর ও সিজদা ইমামের পরে হবে। –সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ৪০৪
উক্ত হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, তাকবীর, রুকু, সিজদাসহ সব কিছু আগে ইমাম করবে, পরে মুক্তাদি করবে। অথচ, হেযবুত তওহীদের দাবী হলো, সামরিক প্রশিক্ষণের মত ইমামের সাথে সাথেই মুক্তাদিও করবে। এটা কী ১৪০০ বছরের চলে আসা নামাজের বিকৃতি নয়? সুতরাং প্রমাণ হলো, নামাজ কোনো সামরিক প্রশিক্ষণ নয়।
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
জেনারেল শিক্ষিতরা কীভাবে দীনের খেদমত করবেন?
দীনের খিদমত কী জিনিস? ধরেন, আমি ডাক্তার। এক হচ্ছে, আমি হালালভাবে ইনকাম করছি, যথাসাধ্য রোগীদের ফ্রী-ড...
ডাঃ শামসুল আরেফীন শক্তি
৭ নভেম্বর, ২০২৪
৩৬৬৪
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন