হযরত উসমান রা.-এর পরেই সাহাবাদের মাঝে বিভাজন তৈরি হয়েছিলো! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৪৫
হযরত উসমান রা.-এর পরেই সাহাবাদের মাঝে বিভাজন তৈরি হয়েছিলো! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৪৫
সাহাবায়ে কেরাম রা. ছিলেন শান্তি ও আদর্শে ইস্পাত কঠিন। তাঁরা নিজেদের ভেতর ছিলেন দয়ার্দ্র। নিজেদের ভেতর ঝগড়া, ফিতনা-ফাসাদ তাঁদের জিবনে অন্যতম শত্রু বলে বিবেচিত ছিলো। কুরআনে কারীমে মহান রব্ব বলেন, مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ اللَّهِ ۚ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসুল। তাঁর সঙ্গে যারা আছে, তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর এবং আপসের মধ্যে একে অন্যের প্রতি দয়ার্দ্র। –সুরা ফাত্হ : ২৯ হেযবুত তওহীদ কী বলে? হযরত উসমান রা.-এর সময়কালে সাহাবায়ে কেরাম রা.-এর ব্যাপারে তারা লিখেছে, এরপর আসলেন ওসমান (রা:)। এই পর্যন্ত জাতির মধ্যে কোনরকম মত-পথ বা বিভেদ তৈরি হয় নি অর্থাৎ প্রায় অর্ধ পৃথিবী জুড়ে প্রতিষ্ঠিত ছিল একজন নেতার নেতৃত্বে একটি অখণ্ড মহাশক্তিশালী জাতি, তদানীন্তন বিশ্বের একক পরাশক্তি- উম্মতে মোহাম্মদী। এরপর থেকে জাতির মধ্যে শুরু হোল দুঃখজনক বিভাজন যে ইতিহাস সকলেরই জানা। কিন্তু এটা ঘটা উচিত হয় নি। রসুলাল্লাহর আদর্শ ও শিক্ষা মোতাবেক উচিত ছিল, তাঁর নিজের হাতে গড়া একটি জাতি উম্মতে মোহাম্মদী ঐক্যবদ্ধ হোয়ে সংগ্রামের (জেহাদ) মাধ্যমে সমস্ত পৃথিবীকে আল্লাহর সত্যদীনের অধীনে নিয়ে আসা, তাহোলে রসুলের উপর আল্লাহর দেওয়া দায়িত্ব পূর্ণ হোত, উম্মতে মোহাম্মদী সৃষ্টির উদ্দেশ্য স্বার্থক হোত। –এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ১০০ অর্থাৎ তারা বোঝাতে চায়–হযরত উসমান রা.-এর সময়কালে সাহাবায়ে কেরাম রা. নিজেদের মধ্যে ফিতনা সৃষ্টি করে ইসলামের গতি নষ্ট করেছেন। ইসলাম কী বলে? উক্ত বক্তব্য দিয়ে হেযবুত তওহীদ মূলত হযরত উসমান রা. এর পরবর্তি জঙ্গে জামাল ও জঙ্গে সিফফিনকে উদ্দ্যেশ্য করে মুসলমানদের মাঝে বিভাজনের টোটাল দায়টা চাপানোর চেষ্টা করেছে সাহাবাদের ওপর। অথচ এই শিক্ষিত অসাধুরা এতটুকু পড়াশোনা করেনি যে, সেই যুদ্ধের পেছনে মূল ভূমিকা ছিলো ইহুদীদের সাবায়ী চক্রের। উসমান রা.-এর বিরুদ্ধে জনগনকে ক্ষিপ্ত করা বা হযরত উসমান রা.-কে শহীদ করা থেকে নিয়ে সমঝোতার সকল রাস্তায় ওৎ পেতে বসে থাকতো এই ইহুদীবাদী চক্রটা। যখনি বিবাদমান দুই দলের মাঝে সন্ধি চুক্তির কোনও কথা চলতো, তখনি মুনাফিক সাবায়ীরা রাতের আঁধারে পরস্পরের ওপর হামলা করে বসতো। আর হযরত আলী রা.-কে বুঝাতো যে, আয়েশা রা. এবং মুয়াবিয়া রা.-এর বাহিনী হামলা করেছে। আর আয়েশা রা. ও মুয়াবিয়া রা.-কে বুঝাতো যে, ওয়াদা ভঙ্গ করে আলী রা.-এর বাহিনী হামলা করেছে। এমনভাবে বিষয়গুলো ভজঘট পাকিয়ে যায় যে, তাহকীক করার ফুরসতও পাওয়া যায় না। বরং যুদ্ধ বেঁধে যায়। এভাবেই সাবায়ীরা মুসলমানদের পরস্পর বিবাদে লিপ্ত রেখে শক্তি ক্ষয় করে নিজেদের ওপর উসমান রা.-এন হত্যার কিসাস থেকে বাঁচিয়ে রাখে। উক্ত বিষয়ে লিখতে গেলে অনেক বড় আর্টিকেল লিখতে হবে। তবে সংক্ষেপে এতটুকু জেনে নেওয়া উচিৎ ‘উক্ত বিষয়টার জন্য টোটালটাই দায়ী ইহুদীরা। সাহাবা রা.-এর উভয়গ্রুপ ছিলেন সত্যের উপর অবিচল এবং তাঁরা উভয়ে দ্বীনের ফিকিরেই যুদ্ধ করেছেন। কিন্তু যা ঘটার ঘটেছে সাবায়ী চক্রের ষড়যন্ত্রের কারণে। বিস্তারিত জানতে ইযালাতুল খাফা খ. ৪ পৃ. ৪২৮; মিনহাজুস সুন্নাতিন নাবাবিয়্যাহ, খ. ৪ পৃ. ৭৫; তারীখে তাবারী, উর্দু খ. ২ পৃ. ৪৭-৪৮; ইত্যাদী কিতাবগুলো দেখা যেতে পারে। সুতরাং ইহুদিদের অপরাধ সাহাবায়ে কেরাম রা.-এর ওপর চাপিয়ে দেওয়া কতবড় অন্যায় ভেবে দেখেছেন কী? হেযবুত তওহীদ সেই অন্যায় চরমভাবে করেছে।
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
ফিরিস্তা এবং দেবতা একই জিনিষ! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–১০
সমস্ত মুসলামানকে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আসমানী কিতাবের মতো ফেরেশতাদের অস্ত...
মুফতী রিজওয়ান রফিকী
৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
১০৫১
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন