কোনও ধর্মগ্রন্থ বিকৃত হয়নি! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–২০
কোনও ধর্মগ্রন্থ বিকৃত হয়নি! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–২০
প্রিয় পাঠক, আমরা জানি পবিত্র কুরআন ছাড়া বাকি সকল আসমানী কিতাব বিকৃত হয়ে গেছে, যা প্রমাণিত সত্য। কিন্তু হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, আসমানি সকল কিতাব এখনও মানুষের কাছে আছে। হেযবুত তওহীদ কী বলে? তাদের দাবী হলো, অতীত ধর্মগুলোতে এখনও সত্য আছে। দেখুন, তারা কী লিখেছে, আল্লাহর নাজেলকৃত ধর্মগ্রন্থগুলো এখনো মানুষের কাছে আছে যেগুলো স্রষ্টার অস্তিত্বের স্বাক্ষর বহন করছে। মানুষ সেগুলো ভক্তির সঙ্গে পড়ছে, জানছে, বিচার-বিশ্লেষণ করছে। সেগুলোর মধ্যে সত্য খুঁজে পাচ্ছে। –আক্রান্ত দেশ আক্রান্ত ইসলাম, পৃ. ১৯ অর্থাৎ তারা বোঝাতে চাচ্ছে, অতীতের ধর্মগ্রন্থগুলো এখনও সত্য প্রকাশ করছে। এর অর্থ দাঁড়ালো, অতীতের ধর্মগ্রন্থ এখনও অবিকৃত রয়েছে, কারণ, অবিকৃত না থাকলে তো আর সত্য প্রকাশ করতে পারতো না। ইসলাম কী বলে? অতীত ধর্মগ্রন্থের অনুসারীরা তাদের আসমানী কিতাবের বিভিন্ন বিধানকে পরিবর্তন করে ফেলেছে, সেগুলো এখন আর অবিকৃত নেই। পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা সেই কথা বলে দিয়েছেন। ফলে সেসব ধর্ম আর অক্ষত থাকেনি। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন, وَإِنَّ مِنْهُمْ لَفَرِيقًا يَلْوُونَ أَلْسِنَتَهُم بِالْكِتَابِ لِتَحْسَبُوهُ مِنَ الْكِتَابِ وَمَا هُوَ مِنَ الْكِتَابِ وَيَقُولُونَ هُوَ مِنْ عِندِ اللَّهِ وَمَا هُوَ مِنْ عِندِ اللَّهِ وَيَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ وَهُمْ يَعْلَمُونَ তাদেরই মধ্যে একদল লোক এমন আছে, যারা কিতাব (তাওরাত) পড়ার সময় নিজেদের জিহ্বাকে পেঁচায়, যাতে তোমরা (তাদের পেঁচিয়ে তৈরি করা) সে কথাকে কিতাবের অংশ মনে করো, অথচ তা কিতাবের অংশ নয় এবং তারা বলে, এটা আল্লাহর নিকট থেকে অবতীর্ণ, অথচ তা আল্লাহর নিকট থেকে অবতীর্ণ নয় এবং (এভাবে) তারা জেনে শুনে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে। –সুরা আলে ইমরান : ৭৮ أَفَتَطْمَعُونَ أَنْ يُؤْمِنُوا لَكُمْ وَقَدْ كَانَ فَرِيقٌ مِنْهُمْ يَسْمَعُونَ كَلَامَ اللَّهِ ثُمَّ يُحَرِّفُونَهُ مِنْ بَعْدِ مَا عَقَلُوهُ وَهُمْ يَعْلَمُونَ (হে মুসলিমগণ,) এখনও কী তোমরা এই আশা করো যে, তোমাদের কথায় তারা ঈমান আনবে? অথচ তাদের মধ্যে একটি দল এমন ছিলো, যারা আল্লাহর কালাম শুনতো। অতঃপর তা ভালোভাবে বোঝার পরও জেনে-শুনে তাতে বিকৃতি ঘটাত। –সুরা বাকারা : ৭৫ َوَيْلٌ لِلَّذِينَ يَكْتُبُونَ الْكِتَابَ بِأَيْدِيهِمْ ثُمَّ يَقُولُونَ هَذَا مِنْ عِنْدِ اللَّهِ لِيَشْتَرُوا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا فَوَيْلٌ لَهُمْ مِمَّا كَتَبَتْ أَيْدِيهِمْ وَوَيْلٌ لَهُمْ مِمَّا يَكْسِبُونَ সুতরাং ধ্বংস সেই সকল লোকের জন্য, যারা নিজ হাতে কিতাব লেখে, তারপর (মানুষকে) বলে এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে, যাতে তার মাধ্যমে কিঞ্চিত আয়-রোজগার করতে পারে। সুতরাং তাদের হাত যা রচনা করেছে সে কারণেও তাদের জন্য ধ্বংস এবং তারা যা উপার্জন করেছে, সে কারণেও তাদের জন্য ধ্বংস। –সুরা বাকারা : ৭৯ উপরন্তু হাদিসে পাকে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, يا معشر المسلمين، كيف تسألون أهل الكتاب، وكتابكم الذي أنزل على نبيه صلى الله عليه وسلم أحدث الأخبار بالله، تقرءونه لم يشب، وقد حدثكم الله أن أهل الكتاب بدلوا ما كتب الله وغيروا بأيديهم الكتاب، فقالوا: هو من عند الله ليشتروا به ثمنا قليلا، أفلا ينهاكم ما جاءكم من العلم عن مساءلتهم، ولا والله ما رأينا منهم رجلا قط يسألكم عن الذي أنزل عليكم হে মুসলিম সমাজ, কি করে তোমরা আহলে কিতাবদের নিকট জিজ্ঞাসা কর? অথচ আল্লাহ তাঁর নবীর উপর যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, তা আল্লাহ সম্পর্কিত নবতর তথ্য সম্বলিত, যা তোমরা তিলাওয়াত করছ এবং যার মধ্যে মিথ্যার কোন সংমিশ্রণ নেই। তদুপরি আল্লাহ তোমাদের জানিয়ে দিয়েছেন যে, আহলে কিতাবরা আল্লাহ যা লিখে দিয়েছেন, তা পরিবর্তন করে ফেলেছে এবং নিজ হাতেসেইে কিতাবের বিকৃতি সাধন করে তা দিয়ে তুচ্ছ মূল্যের উদ্দেশ্যে প্রচার করেছে যে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকেই অবতীর্ণ। তোমাদেরকে প্রদত্ত মহাজ্ঞান কি তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করার ব্যাপারে তোমাদের বাঁধা দিয়ে রাখতে পারে না? আল্লাহর শপথ! তাদের একজনকেও আমি কখনো তোমাদের উপর যা নাযিল হয়েছে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে দেখিনি। –সহীহ বুখারী, হাদিস নং- ২৬৮৫ সুতরাং বোঝা গেলো, ইসলাম ইসলাম পূর্ব অন্য কোন ধর্ম অবিকৃত থাকেনি। এ কথা খোদ হেযবুত তওহীদও বলে থাকে। সকল ধর্মের বিরোধীতা করতে গিয়ে তারা লিখেছে, পূর্ববর্তী কেতাবগুলো ধর্মব্যবসায়ীদের দ্বারা বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। –ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে. পৃ. ৬ ভারত অঞ্চলে আল্লাহ জীবন-বিধান দিয়ে যে সকল নবী রসুল (আঃ) পাঠিয়েছেন, আমরা বিশ্বাস কোরি সেগুলি আল্লাহর পক্ষ থেকেই এসেছে, কিন্তু কাল পরিক্রমায় সেগুলোর ব্যবহার ও বইগুলি বিকৃত কোরে ফেলা হোয়েছে। একই কাজ অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের বেলাতেও করা হোয়েছে। এজন্য সকল প্রাচীন, আঞ্চলিক দীনগুলিকে অনুপযুক্ত ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ ১৪০০ বছর আগে শেষ দীন এসলামের মহাগ্রন্থ আল কোর'আন নাযেল কোরলেন। –এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৫৬ সুতরাং বুঝা গেলো, হেযবুত তওহীদও জানে যে, পূর্ববর্তী সকল ধর্মই বিকৃত হয়ে গিয়েছিলো, কিন্তু এরপরও সেগুলো মানুষ পড়ে স্রষ্টার অস্তিত্ব ও সত্য খুঁজে পাচ্ছে এমন দাবী করে অতীত কিতাবগুলোকে অবিকৃত বলে প্রমাণ করার চেষ্টা ব্যার্থতায় পর্যবসিত হবে। ইনশাআল্লাহ।
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
কুরআনের চেয়ে মুমিন দামী! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–১৬
পবিত্র কুরআন সরাসরি আল্লাহপাকের কালাম। পৃথিবীর সব কিছু মাখলুক হলেও আল্লাহ-র কালাম মাখলুক নয়। সুতরাং ...
মুফতী রিজওয়ান রফিকী
৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
১০৭৮
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন