কালেমার প্রচলিত অর্থ খ্রীস্টানদের বানানো! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৫৭
কালেমার প্রচলিত অর্থ খ্রীস্টানদের বানানো! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৫৭
প্রথমত জেনে নেয়া উচিত যে, কালিমায়ে তওহীদ তথা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর অর্থ হচ্ছে ‘আল্লাহ ব্যতীত ইবাদাতের উপযুক্ত আর কেউ নেই।’ এ অর্থটাই ১৪০০ বছর ধরে উম্মাহ-র মাঝে চলে আসছে। হেযবুত তওহীদ কী বলে? হেযবুত তওহীদের দাবী হলো–'পৃথিবীর ১৫০ কোটি মুসলমান কাফের। এর কারণ হিশাবে তারা বলে থাকে–যে কালেমা পড়ে মুসলিম হতে হয়, এদের সেই কালেমাই তো ঠিক নেই। কারণ, কালেমার সঠিক অর্থ খ্রীস্টানরা বিকৃত করে দিয়েছে অনেক আগেই। আর, বর্তমানের নামধারী মুসলিমরা সেই খ্রীস্টানদের করা অর্থ গ্রহণ করে নিয়েছে। ফলে বর্তমানের মুসলিমরা বাস্তবে মুসলিম হতে পারেনি। দেখুন, তারা কী বলে– লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ, বিধানদাতা নেই, উপাস্য নেই, প্রভু নেই। আজ আর কোনো আদেশ নিষেধ না মানা জীবনের কোন ক্ষেত্রে আর কারো আইন-কানুন না মানা অর্থাৎ প্রকৃত তওহীদ। –তাকওয়া ও হেদায়াহ, পৃ. ৫ (ইংরেজদের থেকে কালেমার অর্থ) বদলিয়ে করা হোল আল্লাহ ছাড়া উপাস্য নেই। যেটাকে আরবিতে ভাষান্তর কোরলে হয়-লা মা’বুদ এল্লাল্লাহ। এটা করা হোল এই জন্য যে, আল্লাহকে একমাত্র আদেশদাতা হিসাবে নিলে এ জাতিতো ব্রিটিশদের আদেশ মানবে না, মুসলিম থাকতে হোলে আল্লাহর আদেশ মানতে হবে। আর কালেমার মধ্যে “এলাহ” শব্দের অর্থ বদলিয়ে যদি উপাস্য বা মাবুদ শেখানো যায়, তবে এ জাতির লোকজন ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহর উপাসনা, নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, দান-খয়রাত ইত্যাদি নানা উপাসনা কোরতে থাকবে এবং জাতীয় জীবনে ব্রিটিশ প্রভুদের আদেশ পালন কোরতে থাকবে; তাদের অধিকার ও শাসন দৃঢ় ও স্থায়ী হবে। এই উদ্দেশ্যে ঐ বিকৃত এসলামে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, আত্মার পরিচ্ছন্নতার জন্য নানারকম ঘষামাজা, আধ্যাত্মিক উন্নতির ওপর গুরুত্ব ও প্রাধান্য দেয়া হোল। কারণ এরা ঐ এবাদত, উপসনা নিয়ে যত বেশী ব্যস্ত থাকবে ব্রিটিশরা তত নিরাপদ হবে। –যামানার এমামের পত্রাবলী, পৃ. ১০ খ্রীস্টানদের তৈরি আলিয়া মাদরাসা থেকে) প্রথমেই এতে কলেমার অর্থ বিকৃতি করা হলো; লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-র প্রকৃত অর্থ— ‘আল্লাহ ছাড়া আদেশদাতা নেই' কে বদলিয়ে করা হলো— ‘আল্লাহ ছাড়া উপাস্য নেই'। –ধর্মব্যবসার ফাঁদে, পৃ. ৫৮ তাদের উক্ত বক্তব্যগুলো থেকে জানতে পারলাম যে, হেযবুত তওহীদের দাবী হলো, ১. 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ'এর অর্থ হলো, আল্লাহ ছাড়া কোনো বিধানদাতা নেই। ২. 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ' অর্থাৎ 'আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই' এটা খ্রিস্টানদের বানানো ভুল অর্থ। ইসলাম কী বলে? হেযবুত তওহীদের উপরিউক্ত দাবী হলো, 'ইলাহ' শব্দের অর্থ ‘মা'বুদ বা উপাস্য’ বলে প্রচার করেছে বৃটিশরা উপমহাদেশে এসে। অথচ এ দাবীটা হাস্যকর ও সর্বৈব মিথ্যাচার। কারণ, আমরা জানি বৃটিশরা উপমহাদেশে 'ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী'র মাধ্যমে এসেছিলো। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি" ১৬০০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের তৎকালীন রাণী প্রথম এলিজাবেথ এই কোম্পানিকে ভারতীয় উপমহাদেশে বাণিজ্য করার রাজকীয় সনদ প্রদান করেছিলেন। –উইকিপিডিয়া। অর্থাৎ ১৭০০ সালের শুরুতে ব্রিটিশরা উপমহাদেশে আগমন করে। অথচ যারা 'ইলাহ' শব্দের অর্থ করেছেন 'মা'বুদ বা উপাস্য', তাঁরা উপমাহাদেশে ব্রিটিশরা আসার কয়েক'শ বছর পূর্বেই ইন্তেকাল করেছিলেন। নিন্মে কয়েকজনের নাম উল্লেখ্য করা হলো। ইমাম কুরতুবী রহি. ব্রিটিশরা উপমাহাদেশে আসে ১৭০০ সালে। অথচ ইমাম কুরতুবী রহি. ইন্তেকাল করেন ৬৭১ হিজরী তথা ১২৭৩ সালে। অর্থাৎ ব্রিটিশরা উপমহাদেশে আসার ৪২৯ বছর আগে ইমাম কুরতুবী রহি. ইন্তেকাল করেন। এখনে জানার বিষয় হলো, ইমাম কুরতুবী রহি. ব্রিটিশদের ইন্ডিয়া আগমনের ৪২৯ বছর আগে 'ইলাহ' শব্দের অর্থ কী করে গেছেন। এটা দেখার জন্য নিন্মের আয়াতের তাফসীর দেখুন। মহান রব্ব বলেন, وَإِلَٰهُكُمْ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ ۖ لَّا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَٰنُ الرَّحِيمُ তোমাদের মাবুদ একই মাবুদ, তিনি ছাড়া অন্য কোনও মাবুদ নেই। তিনি সকলের প্রতি দয়াবান, পরম দয়ালু। –সুরা বাকারা : ১৬৩ উক্ত আয়াতের তাফসীরে ইমাম কুরতুবী রহি. বলেন, وَمَعْنَاهُ لَا مَعْبُودَ إِلَّا اللَّهُ এ আয়াতের অর্থ হলো, আল্লাহ ছাড়া কোনো মা'বুদ বা উপাস্য নেই। -তাফসীরে কুরতুবী খ. ২ পৃ. ১৮০ তাহলে হেযবুত তওহীদের দাবী 'ব্রিটিশরা 'ইলাহ' শব্দের অর্থ পরিবর্তন করেছে' এ দাবীটা কি চুড়ান্ত মিথ্যাচার নয়? ইমাম তাবারী রহি. এ ছাড়াও আরও আগের কোনো মুফাসসীরের করা অর্থ যদি দেখতে হয়, তাহলে ইমাম তাবারী রহি.-এর তাফসীর দেখা যাক। ইমাম তাবারী রহি. ইন্তেকাল করেছেন, সোমবার, ২৮ শাওয়াল ৩১০ হিজরি বা ১৭ ফেব্রুয়ারি ৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে। আর উপমহাদেশে ব্রিটিশদের আগমন ছিলো ১৭০০ সালে। তাহলে ব্রিটিশদের ইন্ডিয়া আগমনের ৭৭৭ বছর আগে ইমাম তাবারী রহি. ইন্তেকাল করেছেন। অথচ তিনিও উপরিউক্ত আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে লেখেন, معبودٌ واحدٌ وربٌّ واحد فلا تعبدوا غيرَه ولا تشركوا معه سواه অর্থাৎ (لاَّ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ এর অর্থ হলো) এক উপাস্য, এক পালনকর্তা। সুতরাং আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত বা উপাসনা করো না এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না। –তাফসীরে তাবারী, খ. ২ পৃ. ৭৪ সুতরাং উপমাহাদেশে খ্রিস্টানদের আগমনেরও ৭৭৭ বছর আগে ইন্তেকাল করা ইমাম তাবারী রহি.-এর ‘ইলাহ’ শব্দের অর্থ ‘মাবুদ’ হিশাবে বর্ণনা করাটাই প্রমাণ করে বৃটিশরা 'ইলাহ' শব্দের অর্থ পরিবর্তন করেছে' এ দাবীটা চুড়ান্ত মিথ্যাচার। ‘ইলাহ' শব্দের অর্থ এখন দেখা দরকার তাহলে 'ইলাহ' শব্দের অর্থ প্রসঙ্গে আরবী অভিধান, কুরআন ও হাদিস কী বলে। আরবী অভিধানে 'ইলাহ' শব্দের অর্থ প্রিয় পাঠক, ‘ইলাহ’ إله এর ধাতুমূল أ-ل-ه (আলিফ-লাম-হা)। পৃথিবীর সমস্ত আরবী ও বাংলা অভিধানে ‘ইলাহ’ শব্দের অর্থ করা হয়েছে ‘মাবুদ’ তথা ইবাদতের উপযুক্ত বা উপাস্য। এ প্রসঙ্গে আরবী সাহিত্যিক ও ভাষাবিদ আল্লামা রাগিব ইস্পাহানি রহি. যিনি ৫০২ হিজরী বা ১১০৮ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তেকাল করেছেন, তিনি 'ইলাহ' শব্দের অর্থ করেছেন, মা'বুদ বা উপাস্য। দেখুন, তিনি লিছেন, وإله جعلوه اسما لكل معبود لهم وكذا اللات وسمّوا الشمس إِلَاهَة لاتخاذهم إياها معبودا তারা (কাফেররা) তাদের সব 'উপাস্যকে 'ইলাহ' নামকরণ করেছে। আর এমনিভাবে লাতকে (দেবতা)। সূর্যকেও তারা ‘ইলাহ’ নামকরণ করেছিল। কারণ, তারা সেটাকেও উপাস্য বানিয়ে নিয়েছিল। –আল মুফরাদাত, পৃ. ৮২ এছাড়াও আরবী ভাষাবিদ ইবনে মানযুর আফ্রিকী মিসরী রহি. (যিনি ৭১১ হিজরী তথা ১৩১২ সালে ইন্তেকাল করেন) তিনি লেখেন, الإله الله عز وجل وكل ما اتخذ من دونه معبودا 'ইলাহ' হলেন 'আল্লাহ' এবং আল্লাহ ছাড়া মানুষ যাঁদেরকে উপাসনা করে থাকে। –লিসানুল আরব, খ. ১ পৃ. ১৪৯ সুতরাং উপরিউক্ত দুটি রেফারেন্স থেকে এ কথা ক্লিয়ার যে, আরবী অভিধানে 'ইলাহ' শব্দের অর্থ করা হয়েছে 'মা'বুদ' বা উপাস্য। কুরআন কী বলে? চলুন, এবার দেখি, এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও হাদিস কি বলে। হযরত মুসা আ.-কে আল্লাহ তাআলা বললেন, إِنَّنِي أَنَا اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدْنِي وَأَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي নিশ্চয় আমিই আল্লাহ। আমি ছাড়া কোন ’মাবুদ’ নেই। সুতরাং আমার ইবাদত করো এবং আমার স্মরণার্থে নামায কায়েম কর। –সুরা ত্ব-হা : ১৪ প্রিয় পাঠক, এখানে একটু সুক্ষ্মভাকে চিন্তা করলে বুঝতে পারবেন যে, মুসা আ. কে আল্লাহ বলেছেন, 'আমিই ইলাহ সুতরাং আমার ইবাদত করো'। এখানে আল্লাহ তাআলা তাঁর ইবাদত করার কারণ বর্ণনা করেছেন যে, তিনিই ইলাহ তথা মা'বুদ বা উপাস্য। অর্থাৎ আমি যেহেতু ইলাহ বা উপাস্য সুতরাং আমারই ইবাদত করো। যদি 'ইলাহ' শব্দের অর্থ 'হুকুমদাতা' হতো, তাহলে আল্লাহপাক এভাবে বলতেন, 'আমি যেহেতু 'ইলাহ বা হুকুমদাতা' সুতরাং আমার হুকুম মানো। কিন্তু তিনি বলেছেন, আমার ইবাদত করো। বোঝা গেলো, 'ইলাহ অর্থ মাবুদ বা উপাস্য'। এটা যে-কোনো সুস্থ মানুষই বুঝবেন। উপরন্তু আমরা জানি, সমস্ত নবী-রাসুলদের দাওয়াতের কালিমা ছিলো একটাই তথা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। এ দাওয়াত দিয়েই সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরাম আ.-কে আল্লাহ তাআলা পাঠিয়েছিলেন। কালেমার ভেতরে থাকা এই 'ইলাহ' শব্দের অর্থ আল্লাহ কি বুঝিয়েছেন একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন। এ বিষয়টি বুঝতে আমাদেরকে একটু পেছনে ফিরে যেতে হবে। সকলের জানা কথা যে, আগের যুগে ঢালাওভাবে লোকজন মূর্তি পুজা করতো যেমন আজও করে। তবে যারা মূর্তি পুজা করে, তারা কিন্তু মূর্তিকে শুধুমাত্র পুজাই করে থাকে, মূর্তির হুকুম বা বিধান কিন্তু তারা কেউ মানে না। কারণ, তারাও জানে মূর্তি কোনো কথা বলতে পারে না বা মূর্তির নিজস্ব কোনো শক্তি নেই। মহান আল্লাহ বলেন, وَاتَّخَذُوا مِن دُونِهِ آلِهَةً لَّا يَخْلُقُونَ شَيْئًا وَهُمْ يُخْلَقُونَ وَلَا يَمْلِكُونَ لِأَنفُسِهِمْ ضَرًّا وَلَا نَفْعًا وَلَا يَمْلِكُونَ مَوْتًا وَلَا حَيَاةً وَلَا نُشُورًا আর মানুষ তাকে ছেড়ে এমন সব মাবুদ গ্রহণ করে নিয়েছে, যারা কোনো কিছু সৃষ্টি করতে পারে না; বরং খোদ তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়। তাদের নেই খোদ নিজেদেরও কোন ক্ষতি বা উপকার করার ক্ষমতা। আর না আছে কারও মৃত্যু ও জীবন দান কিংবা কাউকে পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষমতা। –সুরা ফুরক্বান : ৩ সুতরাং যে মূর্তি কথাই বলতে পারে না, সে অবলা মূর্তি বিধান জারি করবে কিভাবে? ঐ সকল কাফেররা যে মূর্তির উপাসনা করতো, তাদের বিথান মানতো না, এটা হেযবুত তওহীদও বিশ্বাস করে। দেখুন তারা লিখেছে, আল্লাহর রাসুল যখন নবুওয়াত লাভ করলেন তখন আরবের অবস্থা ছিল এই যে, জাহেলিয়াতে নিমজ্জিত পশ্চাদপদ একটি জনসংখ্যা, যারা সর্বদা নিজেরা নিজেরা অনৈক্য-সংঘাতে লিপ্ত থাকত, কাঠ পাথরের মূর্তি বানিয়ে পূজা করত,আর হুকুম মান্য করত ঐসব দেব-দেবীর পুরোহিত তথা ধর্মব্যবসায়ী কোরাইশ নেতাদের। –প্রিয় দেশবাসী, পৃ. ১১০ খনকার দিনের রাজা-বাদশাহরা ছিলেন সর্বেসর্বা, তাদের হুকুমই ছিলো আইন। মানুষের প্রাণের মালিক ছিলেন রাজা-বাদশাহরা। –এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ৬০ আরবের মোশরেক অধিবাসীরা আল্লাহকে খুবই বিশ্বাস করত, আজ যেমন আমরা করি, কিন্তু আল্লাহর দেয়া দীন জীবন-বিধান মোতাবেক তাদের সমষ্ঠিগত জাতীয় জীবন পরিচালনা করত না। তাদের সামাজিক, জাতীয়, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, দন্ডবিধি এ সমস্তই পরিচালিত হতো হাবল, লা'ত মানাত ওজ্জা কোরায়েশ পুরোহিতদের তৈরি করা আইন-কানুন ও নিয়ম দিয়ে। তারা বুঝত না যে আল্লাহকে যতই বিশ্বাস করা হোক, ব্যক্তিগতভাবে যতই কঠিন এবাদত করা হোক, যতই তাক্ওয়া করা হোক, জাতীয় জীবন আল্লাহর দেওয়া দীন আইন-কানুন, দন্ডবিধি অর্থনীতি দিয়ে পরিচালিত না হলে সেটা আল্লাহর তওহীদ হবে না, সেটা হবে শেরক ও কুফর। –এসলামের প্রকৃত রুপরেখা, পৃ. ৫৭ সুতরাং প্রমাণ হলো, কাফেররা মূর্তির পূজা বা উপাসনা করতো, কিন্তু বিধান মানতো তাদের নেতাদের। সেই মূর্তির পুজা থেকেই উম্মতকে ফিরিয়ে আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহ্বান করার জন্যই মূলত সমস্ত নবীগণ আ. আল্লাহর তরফ থেকে দুনিয়ায় এসেছিলেন। সে কথা খোদ আল্লাহ তাআলাই বলেছেন- وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ নিশ্চয়ই আমি প্রত্যেক উম্মতের ভেতর কোনো না কোনো রাসুল পাঠিয়েছি এই পথনির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগূতকে পরিহার করো। –সুরা নাহাল : ৩৬ উক্ত আয়াত দ্বারা বোঝা যাচ্ছে, সমস্ত নবীগণ আ. স্বীয় গোত্রকে মূর্তির ইবাদত থেকে বিরত থাকতে বলতেন। প্রশ্ন হলো, কি বলে দাওয়াত দিতেন তাঁরা? সে জবাবও আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন– وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ আমি তোমার পূর্বে এমন কোন রাসুল পাঠাইনি, যার প্রতি আমি এই ওহী নাযিল করিনি যে, ‘আমি ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই। সুতরাং আমারই ইবাদত করো। –সুরা আম্বিয়া : ২৫ প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত আয়াত থেকে আমরা সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারলাম যে, সমস্ত নবীগণ আ. মূর্তি পূজায় নিমজ্জিত উম্মাতকে মূর্তির ইবাদত থেকে ফিরাতে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র দাওয়াত দিয়েছেন। কারণ, প্রত্যেক নবী আ.-এর উম্মাত মূর্তির বিধান মানতো না, বরং মূর্তির উপাসনা করতো। এখানে ‘ইলাহ’ এর অর্থ যদি করা হয়, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো বিধানদাতা নেই’ তাহলে এটা কি কোন সঠিক অর্থ হবে? নিশ্চয় না। কারণ, তারা তো করতো মূর্তির ইবাদত, তারা তো মুর্তির বিধান মানতো না। যেহেতু তারা মূর্তি ইবাদত করতো,সেহেতু ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র অর্থ তখনও করা হতো আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ বা উপাস্য নাই। পক্ষান্তরে যদি তখনকার কাফেররা মূর্তির হুকুম মানতো তাহলে, “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র অর্থ “আল্লাহ ছাড়া কোন বিধানদাতা নেই” করা যুক্তিসঙ্গত ছিল। আরও ক্লিয়ার করে যদি দেখেন যে, হযরত মুসা আ. যখন আল্লাহর সাথে কথা বলার জন্য ত্বুর পাহাড়ে গেলেন, তখন তাঁর উম্মতের সাথে তাঁর ভাই হযরত হারুণ আ. কে রেখে গেলেন। কিন্তু ফিরে এসে দেখলেন যে, মুসা আ.-এর উম্মত গো-বৎসের পূজা করছে। যেটা সামেরী নামক এক ব্যক্তি বিশেষ পদ্ধিতে বানিয়েছিলি। তখন মুসা আ. সামেরীকে বললেন, وَانظُرْ إِلَى إِلَهِكَ الَّذِي ظَلْتَ عَلَيْهِ عَاكِفًا لَّنُحَرِّقَنَّهُ ثُمَّ لَنَنسِفَنَّهُ فِي الْيَمِّ نَسْفًا তুমি তোমার এই (অলীক) মাবুদকে দেখ, যার পূজায় তুমি জমে বসেছিলে, আমরা একে জ্বালিয়ে দেব। তারপর একে গুঁড়ো করে সাগরে ছিটিয়ে দেবো। –সুরা ত্ব-হা : ৯৭ এখানে তো এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, উম্মতরা তখন গো-বৎসের পুজা বা ইবাদত করছিলো, গো-বৎসের হুকুম মানছিলো না। সেটাকে হযরত মুসা আ. 'ইলাহ' বলে সম্বোধন করলেন। সুতরাং এ আয়াত থেকেও প্রমাণ হলো যে, 'ইলাহ' শব্দের অর্থ আগের যুগেও 'মা'বুদ' বা উপাস্য করা হতো। উপরন্তু হযরত ইবরাহীম আ. এর যুগে সকল মুশরিকরা মূর্তিকে পূজা করতো। একদিন সবাই মেলায় চলে গেলে ইবরাহীম আ. মূর্তিগুলো ভেঙ্গে ফেললেন। তারা এসে মূর্তিগুলোর করুণ দশা দেখে বললো, قَالُوا مَن فَعَلَ هَذَا بِآلِهَتِنَا إِنَّهُ لَمِنَ الظَّالِمِينَ তারা বলল, আমাদের উপাস্যদের সাথে এরূপ আচরণ কে করল? নিশ্চয়ই সে ঘোর জালেম। –সুরা আম্বিয়া : ৫৯ এক পর্যায়ে হযরত ইবরাহীম আ.-কে ডেকে এনে প্রশ্ন করা হলো, قَالُوا أَأَنتَ فَعَلْتَ هَذَا بِآلِهَتِنَا يَا إِبْرَاهِيمُ (তারপর যখন ইবরাহীমকে নিয়ে আসা হল, তখন) তারা বলল, হে ইবরাহীম–আমাদের উপাস্যদের সাথে এটা কি তুমিই করেছ? –সুরা আম্বিয়া : ৬২ এ আয়াত দু'টিতে মুশরিকরা তাদের মূর্তিকে 'ইলাহ' বলে সম্বোধন করেছিলো। অথচ তারা তাদের মূর্তিকে শুধু উপাসনা করতো, মূর্তির আইন মানতো না। সুতরাং এ আয়াত থেকেও বুঝা গেলো 'ইলাহ' অর্থ সে যুগেও করা হতো 'মা'বুদ' বা 'উপাস্য'। যখন হযরত ইয়াকুব আ.-ইন্তেকালের সময় তাঁর সন্তানদেরকে বললেন, إِذْ قَالَ لِبَنِيهِ مَا تَعْبُدُونَ مِن بَعْدِي قَالُواْ نَعْبُدُ إِلَـهَكَ وَإِلَـهَ آبَائِكَ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَقَ إِلَـهًا وَاحِدًا وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ যখন সে তার পুত্রদের বলেছিল, আমার পর তোমরা কার ইবাদত করবে? তারা সকলে বলেছিল, আমরা সেই এক আল্লাহরই ইবাদত করব, যিনি আপনার মাবুদ এবং আপনার বাপ-দাদা ইবরাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকেরও মাবুদ। আমরা কেবল তাঁরই অনুগত। –সুরা বাকারা : ১৩৩ উপরিউক্ত চারটি আয়াত থেকে এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রতিয়মান যে, 'ইলাহ' শব্দের অর্থ 'মাবুদ' বা 'উপাস্য' এটাই ঠিক। তাফসীরে 'ইলাহ' শব্দের অর্থ কী? সকল তাফসীরেও 'ইলাহ' শব্দের অর্থ করা হয়েছে 'মা'বুদ' বা উপাস্য। নিন্মে কয়েকটি তাফসীরের প্রমাণ দিচ্ছি। তাফসীরে তাবারী আল্লামা ইবনে জারীর তাবারী রহি. উক্ত আয়াতের তাফসীর করেছেন এভাবে যে, হযরত ইয়াকুব আ. যখন স্বীয় সন্তানদেরকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা আমার মৃত্যুর পর কার ইবাদত করবে? قالوا نعبد إلهك يعني به قال بنوه له نعبد معبودك الذي تعبده ومعبود آبائك إبراهيم وإسماعيل وإسحاق، إلها واحدا তখন তাঁরা উত্তর দিল, আমরা আপনার উপাস্য, আপনার পিতা-পিতামহ ইবরাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাক আ. এর উপাস্যের ইবাদত করব। যিনি একমাত্র ইলাহ। –তাফসীরে তাবারী খ. ৩ পৃ. ৯৯ আল্লামা ইবনে জারীর তবারী রহি. এখানে ইলাহের অর্থ উপাস্য করেছেন। ইবনে তাইমিয়া রহি. এর অভিমত শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহি. বলেন, الإله هو المعبود المطاع 'ইলাহ' সেই উপাস্য, যার অনুসরণ করা হয়। –ফাতহুল মাজীদ, পৃ. ৪৬ হাদীস শরীফে 'ইলাহ' এর অর্থ: পবিত্র কুরআনের ন্যায় হাদীস শরীফেও ‘ইলাহ’ শব্দটি 'মা'বুদ' বা 'উপাস্য' অর্থে বুঝানো হয়ে থাকে। হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, يُنَادِي مُنَادٍ: لِيَذْهَبْ كُلُّ قَوْمٍ إلى ما كَانُوا يَعْبُدُونَ، فَيَذْهَبُ أصْحَابُ الصَّلِيبِ مع صَلِيبِهِمْ، وأَصْحَابُ الأوْثَانِ مع أوْثَانِهِمْ، وأَصْحَابُ كُلِّ آلِهَةٍ مع آلِهَتِهِمْ، حتَّى يَبْقَى مَن كانَ يَعْبُدُ اللَّهَ، مِن بَرٍّ أوْ فَاجِرٍ সেদিন (কিয়ামতে) একজন ঘোষক ঘোষণা করবেন, যারা যে জিনিসের ইবাদাত করতে, তারা সে জিনিসের কাছে গমন করো। এরপর যারা ক্রুশপুজারী ছিল, তারা যাবে তাদের ক্রুশের কাছে। মূর্তিপুজারীরা যাবে তাদের মূর্তির সঙ্গে। সকলেই তাদের উপাস্যের সঙ্গে যাবে। বাকী থাকবে একমাত্র আল্লাহর ইবাদাতকারীরা। –সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ৭৪৩৯ সুতরাং কুরআন, হাদিস, তাফসীর এবং উম্মতের উলামায়ে কেরামের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুসারে বুঝা গেলো, ‘ইলাহ’ শব্দের অর্থ ’মাবুদ’ তথা উপাস্য। তবে এটাও ঠিক যে, আমাদের কালেমার অর্থের দাবী এটাও রয়েছে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো বিধানদাতা নেই। কিন্তু মূল অর্থ হলো, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। এটা আরবীতে নিরক্ষর যারা তারা কিন্তু বুঝবে না। জেনে রাখা ভালো পন্নী কিন্তু আরবীতে নিরক্ষর ছিল। এটা আমার কথা নয়, বরং পন্নী নিজেই দাবী করে লিখেছে, আমি বাংলা জানি,যেটুকু জানা দরকার মানুষের, ইংলিশ জানি, যতটুকু মানুষের জানা দরকার, আমি আরবী জানি না, আরবীতে আমি নিরক্ষর। ঠিক আক্ষরিকভাবে নয়, কিন্তু আমি আরবী জানি না। আর যে এসলাম নিয়ে কথা সেই এসলাম রোয়েছে কোর'আন-হাদীসে আর সেটার ভাষা আরবী। ওখানে আমি বাস্তবিক অর্থে নিরক্ষর। –আল্লাহর মো'জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৫৫ সুতরাং পন্নী আরবীতে মুর্খতার চরমসীমায় উপনীত হয়েই 'কালেমার অর্থ বদলে গেছে' এসব কথা বলে জাতির কাছে নিজেকে হাসির পাত্র বানিয়ে ফেলেছে। কালেমার দ্বিতীয় বিকৃতি কুফরী মতবাদ এই হেযবুত তওহীদ কালেমার অর্থকে বিকৃত করে 'আল্লাহ ছাড়া উপাস্য নাই' কথাটির তীব্র সমালোচনা করে তারা মূলত মানুষকে সুকৌশলে বেঈমান বানানোর গভীর ষড়যন্ত্রের ছক একেছে। তাদের মূল টার্গেট হলো–সব ধর্মের লোকদের জান্নাতি সার্টিফিকেট দেয়া। কারণ, তাদের কথা হলো, কে কিসের পূজা করছে, সেটা ঈমানের মূল বিষয় নয়, বরং আল্লাহকে বিধানদতা মানলেই সে মুমিন। এক্ষেত্রে ইবাদত মূখ্য বিষয় নয়। অবশেষে এ বিকৃতি কোন পর্যন্ত নিয়ে এসেছে, তাদের নিচের লেখাটা দেখলে আরো সুস্পষ্টভাবে অনুধাবন করা যায়। দেখঁন, তারা কালেমার অর্থ বিকৃত করতে করতে অবশেষে এটাও লিখছে, আমরা নামাজ পড়ছি, মসজিদ নির্মাণ করছি। আমরা হজ্ব করছি, যাকাত দিচ্ছি। এগুলি সব আমল। আমলে পূর্ব শর্ত হচ্ছে। ঈমান কি? লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলাল্লাহ আল্লাহর হুকুম ছাড়া কারো হুকুম মানবো না। এর অর্থ কি? এর অর্থ হচ্ছে, যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হবো, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের পক্ষে যারা ঐক্যবদ্ধ হবেন, তারা হবেন মোমেন। এই মোমেনের নামায-রোযা হজ্ব-যাকাত আল্লাহর কাছে কবুল হবে। –সূত্রাপুরে এমামের ভাষণ, পৃ. ৯ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মানেই হচ্ছে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। যারা এই অঙ্গীকার করবে তাদের চরিত্র অর্জনের জন্য আল্লাহ নামাজ রোজা হজ্ব যাকাত এর হুকুম দিয়েছেন। –মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ১০৯ প্রিয় পাঠক, কালেমার অর্থ যদি করা হয়, ‘যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ন্যায়ের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়া’ তাহলে যেসব নাস্তিকরা ন্যায়ের পক্ষে সারা জিবন সংগ্রাম করে গেছে, তারাও কী তাহলে মুমিন? তারাও কী তওহীদে বিশ্বাসী? তারাও কী ধার্মিক? তারাও কী মুত্তাকি? আজব হলেও গুজব নয়, এক্ষেত্রে হেযবুত তওহীদের দাবী হলো, হ্যাঁ! মানবতাবাদী নাস্তিকরাও ধার্মিক ও মুত্তাকি! তারা লিখেছে- অন্যান্য ধর্মে, এমন কি আল্লাহকে অবিশ্বাসকারী নাস্তিক কমিউনিস্টদের মধ্যেও বহু মানুষ আছেন যারা ন্যায়-অন্যায়, ঠিক-অঠিক দেখে জীবনের পথ চলতে চেষ্টা করেন। তারা মিথ্যা বলেন না, মানুষকে ঠকান না, অন্যের ক্ষতি করেন না, যতটুকু পারেন অন্যের ভালো করেন, গরিবকে সাহায্য করেন ইত্যাদি। তারা মুত্তাকী কিন্তু তারা হেদায়েতে নেই। –তাকওয়া ও হেদায়াহ, পৃ. ৭ তাদেরকে যে যা-ই বলুক, আমরা তাদেরকে ধর্মহীন মনে করি না। কারণ মানুষের পরম ধর্ম ‘মানবতা’ তাদের মধ্যে পুরোমাত্রায়ই আছে। -শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ১১ প্রিয় পাঠক, একটু গভীরভাবে খেয়াল করুন, তাদের দাবী হচ্ছে, যেসব নাস্তিকরা ন্যায়-অন্যায় খেয়াল করে চলে, তারাও নাকি ধার্মিক ও মুত্তাকি! অথচ নাস্তিকদের ধার্মিক ও মুত্তাকি বলা এই হেযবুত বিশ্বের সকল মুসলমানকে কাফের-মুশরিক বলে আখ্যায়িত করে থাকে। তারা লিখেছে, আল্লাহর সর্বব্যাপী সার্বভৌমত্ব অর্থাৎ তওহীদ থেকে বিচ্যূত হোয়ে পুরো মানবজাতি কাৰ্য্যত কাফের এবং মোশরেকে পরিণত হোয়েছে। বিশেষ কোরে মোসলেম হিসাবে পরিচিত জনগোষ্ঠীটি পরিণত হোয়েছে মানবজাতির সর্বনিকৃষ্ট সমপ্রদায়ে। –আল্লাহর মো’জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা পৃ. ২৩ এখন আমার প্রশ্ন হলো, কালেমার অর্থ বিকৃত হওয়ার কারণে যদি সকল মুসলমান কাফের-মুশরিক হয়, তাহলে যে কালেমার কোনো অংশের বিশ্বাসই নাস্তিকদের নেই, তারা ধার্মিক এবং মুত্তাকি হলো কিভাবে? এবং মানবতার পাশে থাকলেই যদি সে মুত্তাকি হয়, তাহলে মুসলিমদের মধ্যে যারা আত্মমানবতার কাজ করে থাকেন, তারাও কাফের-মুশরিক হয় কিভাবে? আসলে, হেযবুত তওহীদসহ পৃথিবীর সকল বাতিল সম্প্রদায় কখন কী বলে, তারা নিজেরাও বোঝে না। যারা কালেমার বিকৃতির কারণে পৃথিবীর সকল মুসলিমদের কাফের বলে, সেই হেযবুত তওহীদই আবার লিখেছে, ইসলামের অনেক কিছু নিয়ে মতভেদ থাকলেও ১৬০ কোটি মুসলিম আজও এক কলেমার উপরে বিশ্বাসী। এই কলেমার ভিত্তিতেই জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। –সম্মানিত আলেমদের প্রতি : পৃ. ১৫ সুতরাং আমরা বুঝতে পারলাম, হেযবুত তওহীদ মূলত জানে যে, পৃথিবীর মুসলিমদের কালেমা বিকৃত হয়নি এবং কেউ কাফেরও হয়নি, এরপরও তারা জোর করে মুসলিমদের উপর কুফরী চাপিয়ে দিতে বিদেশী প্রভূদের এজেন্ডা হাতে নিয়ে চলছে। যদিও তারা সফলকাম হবে না। ইনশাআল্লাহ।
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
কুরআনের তাফসীর পড়া যাবে না! হেযবুত তওহীদ পর্ব–১৭
যদি কেউ বড় শিক্ষিত হয়, তবে তার বক্তব্য বুঝতে হলে নিশ্চয় জ্ঞানী হতে হয়, অথবা জ্ঞানীদের থেকে বুঝে নিতে...
মুফতী রিজওয়ান রফিকী
৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
১৯৩০
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন