মাক্কী জীবনে সাহাবায়ে কেরাম রা. কোনও আমল পাননি! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৫০
মাক্কী জীবনে সাহাবায়ে কেরাম রা. কোনও আমল পাননি! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৫০
সাহাবায়ে কেরাম রা. যখনই কোনও নতুন বিথান পেতেন, সাথে সাথেই আমল শুরু করে দিতেন। সেটা হোক মাক্কী জিবনে বা মাদানী জিবনে। হেযবুত তওহীদ কী বলে? তাদের দাবী হলো, এই সময়ে (মক্কী জিবনে) যেসব সাহাবী ইন্তেকাল করেন তারা ইসলাম বলতে কি পেয়েছিলেন? তারা নামায-রোযা হজ্ব-যাকাত ঈদ কোরবানি কিছুই পেয়েছিলেন কি? তারা পেয়েছেন শুধুমাত্র তাওহীদ এবং বলার অপেক্ষা রাখে না তাওহীদই তাদের সফলকাম হয়ে জান্নাতে প্রবেশের জন্য যথেষ্ট ছিল। –তওহীদ জান্নাতের চাবি, পৃ. ১০ অর্থাৎ হেযবুত তওহীদের বক্তব্য হলো, সাহাবায়ে কেরাম রা. মাক্কী জিবনে শুধু মাত্র তাওহীদ পেয়েছিলেন, অন্য কোনও আমল পাননি। ইসলাম কী বলে? আসতাগফিরুল্লাহ! কতবড় জাহালাত! নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবুওয়াতপ্রাপ্তির পঞ্চম বছর মেরাজ হয়। মেরাজেই তিনি ফরজ নামাযের নির্দেশ পান। এর পর ইহধাম ত্যাগ করার আগ অবদি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবারা নামায আদায় করেছেন। তাছাড়া মেরাজের পূর্বেও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম রা. নামায আদায় করতেন। তবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয় মেরাজের রজনীতে। আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. বলেন, فُرِضتِ الصَّلاةُ على النَّبيِّ ﷺ بمَكَّةَ رَكْعتينِ رَكْعتينِ فلمّا خَرجَ إلى المدينةِ فُرِضَت أربعًا وأقرَّت صَلاةُ السَّفرِ رَكْعتينِ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওপর নামাজ ফরজ করা হয়েছিলো মক্কায় থাকাবস্থায় দুই দুই রাকাত করে। অতঃপর যখন তিনি মাদীনার দিকে হিজরত করেন, তখন চার চার রাকাত করে ফরজ করা হয়। তবে সফরের হালতে দুই রাকাত ঠিক রাখা হয়। –সুনানে কুবরা লিল বাইহাকী, হাদিস নং : ১৭৬৫ আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, হযরত সা’দ ইবনে হিশাম ইবনে আমির বলেছেন, আমি উম্মুল মুমিনিন আয়েশা রা.-কে প্রশ্ন করলাম, أَنْبِئِينِي عَنْ قِيَامِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم . فَقَالَتْ أَلَسْتَ تَقْرَأُ ( يَا أَيُّهَا الْمُزَّمِّلُ) قُلْتُ بَلَى . قَالَتْ فَإِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ افْتَرَضَ قِيَامَ اللَّيْلِ فِي أَوَّلِ هَذِهِ السُّورَةِ فَقَامَ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابُهُ حَوْلاً وَأَمْسَكَ اللَّهُ خَاتِمَتَهَا اثْنَىْ عَشَرَ شَهْرًا فِي السَّمَاءِ حَتَّى أَنْزَلَ اللَّهُ فِي آخِرِ هَذِهِ السُّورَةِ التَّخْفِيفَ فَصَارَ قِيَامُ اللَّيْلِ تَطَوُّعًا بَعْدَ فَرِيضَةٍ আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রাতের ইবাদাত (কিয়ামুল লাইল) সম্পর্কে কিছু অবহিত করুন। তিনি এবার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি সুরা “ইয়া আইইয়্যুহাল মুয্যাম্মিল” পড়ো না? আমি বললাম- হ্যাঁ পড়ি। তিনি বললেন, মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ এ সূরার প্রথমভাগে “কিয়ামুল লাইল” বা রাতের ইবাদাত বন্দেগী ফরজ করে দিয়েছেন। তাই এক বছর পর্যন্ত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীগণ রাতের বেলা ইবাদাত করেছেন। মহান আল্লাহ বারো মাস পর্যন্ত এ সুরার শেষাংশ আসমানে ঠেকিয়ে রেখেছিলেন (অর্থাৎ বারো মাস পর্যন্ত এ সুরার শেষাংশ অবতীর্ণ করেননি)। অবশেষে (বারো মাস পরে) এ সুরার শেষে আল্লাহ তাআলা রাতের ইবাদাতের হুকুম লঘু করে আয়াত অবতীর্ণ করলেন। আর এ কারণে রাত জেগে ইবাদাত যেখানে ফরয ছিলো, সেখানে তা নাফল বা ঐচ্ছিক হয়ে গেলো। –সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ৭৪৬ বোঝা গেলো, নামাজ ফরজ হওয়ার আগেও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতের কিয়ামুল্লাইল আদায় করতেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সালাত আদায় করতেন, কিন্তু সাহাবারা করতেন না, এমন ধারণা মুর্খতা। সুতরাং ‘মাদীনায় হিজরতের আগে সাহাবারা তাওহীদ ব্যতিত কোনও আমল পাননি’ এটা নিছক মুর্খতা। সুতরাং বোঝা গেলো, মাক্কী জিবনে সাহাবায়ে কেরাম রা. নামাজের বিধান পেয়েছিলেন। এটা ছাড়াও মাক্কী জিবনে অসংখ্য বিধান প্রদান করা হয়েছিলো। কিন্তু হেযবুত তওহীদ মূর্খতার কারণে সেসব বিষয়ে জ্ঞান রাখে না।
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন