আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনে কাবায় যাওয়া অনর্থক! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৮৭
আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনে কাবায় যাওয়া অনর্থক! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৮৭
কাবা শরীফ মহান রব্বের ঘর এবং শিয়ারে ইসলাম। কাবার দৃষ্টিপাত করা ইবাদত। কাবায় এক রাকাত নামাজ অন্যত্র এক লাখ নামাজের চেয়েও দামী। এছাড়াও কাবায় যাওয়া মহান রব্বের নির্দেশ। হেযবুত তওহীদ কী বলে? তারা নিজেরা তো হজ্ব করেই না, বরং অন্যরাও যেন হজ্বে না যায়, সেজন্য বিভিন্নভাবে মানুষকে প্রভাবিত করে থাকে। তারা লিখেছে– ইসলামের অন্য সব কাজের মতোই আজ হজ্ব সম্বন্ধেও এই জাতির আকীদা বিকৃত হয়ে গেছে। এই বিকৃত আকীদায় হজ্ব আজ সম্পূর্ণরূপে একটি আধ্যাত্মিক ব্যাপার, আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করার পথ। প্রথম প্রশ্ন হোচ্ছে- আল্লাহ সর্বত্র আছেন, সৃষ্টির প্রতি অনু-পরামাণুতে আছেন, তবে তাঁকে ডাকতে, তাঁর সান্নিধ্যের জন্য এত কষ্ট কোরে দূরে যেতে হবে কেন’? –হেযবুত তাওহীদের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত ‘মোসলেম উম্মাহর বার্ষিক মহাসম্মেলন’ প্রবন্ধ-১ম প্যারা। উক্ত বক্তব্য থেকে বুঝা গেলো, তাদের দাবী হচ্ছে–আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের জন্য এত দূরে কষ্ট করে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ইসলাম কী বলে? হজ্বের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে বাইতুল্লাহ যেতে মহান আল্লাহ নির্দেশ দিয়ে বলেন, وَأَذِّنْ فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوكَ رِجَالاً وَعَلَى كُلِّ ضَامِرٍ يَأْتِينَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍ، لِيَشْهَدُوا مَنَافِعَ لَهُمْ وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللهِ فِي أَيَّامٍ مَعْلُومَاتٍ عَلَى مَا رَزَقَهُمْ مِنْ بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ এবং মানুষের মধ্যে হজ্জের ঘোষণা দাও। তারা তোমার কাছে আসবে পদযোগে এবং দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রমকারী উটের পিঠে সওয়ার হয়ে যেগুলো (দীর্ঘ সফরের কারণে) রোগা হয়ে গেছে। যাতে তারা তাদের জন্য স্থাপিত কল্যাণসমূহ প্রত্যক্ষ করে এবং নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে সেই সকল পশুতে যা তিনি তাদেরকে দিয়েছেন। –সুরা হজ্ব : ২৭ উক্ত আয়াতে হজ্ব করতে দূরদেশ থেকে মক্কায় হাজির হতে খোদ আল্লাহ তাআলা-ই নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি একটি বিশেষ আমল কুরবানীর দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, হজ্ব পালনকারীরা আল্লাহ'র নামে পশু যবাহ করবে। এখন যদি হেযবুত তওহীদের যুক্তির আলোকে আমিও পাল্টা প্রশ্ন তুলি যে, আল্লাহ তো সবখানের কথা শোনেন, তাহলে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে এত দূর কষ্ট করে যেতে হবে কেন? হেযবুত তওহীদের কাছে এ প্রশ্নের জবাব আছে কী? নিশ্চয় নির্বাক থাকবেন তারা। সুতরাং আসল কথা হলো, আল্লাহ পাক যে বিধান দিয়েছেন, সে বিধান পালনে কোনো ‘কারণ’ তালাশ করা শয়তানের কর্মপন্থা। যেমন ইবলিসকে আল্লাহপাক যখন আদমকে আ. সিজদা দেওয়ার হুকুম দিলেন, তখন ইবলিস প্রশ্ন তুলেছিলো ‘কেন আদমকে সিজদা করবো’? ফলে আল্লাহ পাক তাকে বিতাড়িত করে দিয়েছিলেন। সুতরাং আল্লাহর দেওয়া কোনো হুকুমে প্রশ্ন তোলা চরম বিয়াদবীর ও শয়তানের অনুকরণ। তাছাড়া কাবার দিকে নজর করাও ইবাদতের অন্তর্ভূক্ত। হযরত আবু সায়িব আল-মাদানী রহি. বলেন, من نظر إلى الكعبة إيمانا وتصديقا تحاتت ذنوبه كما يتحات الورق من الشجر . قال : والجالس في المسجد ينظر إلى البيت لا يطوف به ولا يصلي أفضل من المصلي في بيته لا ينظر যে ব্যক্তি ঈমান ও বিশ্বাসের সাথে কাবার দিকে তাকাবে, তার পাপগুলো এমনভাবে ঝরে পড়বে যেমন গাছ থেকে পাতা ঝরে পড়ে। তিনি বলেছেন: যে ব্যক্তি মসজিদে হারামে বসে কাবার দিকে শুধু তাকিয়ে থাকে, তাওয়াফও করে না বা নামাজও পড়ে না, সে ঐ ব্যক্তির চেয়ে উত্তম যে তার ঘরে না তাকিয়ে নামাজ পড়ে। –দুররে মানসুর, খ. ১ পৃ. ২৫০ হযরত আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, إنَّ الصَّلاةَ في المسجدِ الحرامِ بمائةِ ألفِ صلاةٍ মসজিদে হারামে এক নামায এক লাখ সালাতের সমান। –তরহুত তাসরীব, খ. ৬ পৃ. ৫১ সুতরাং আল্লাহকে ডাকতে মসজিদে হারামে যাওয়া কুরআন-সুন্নাহ-য় উৎসাহিত করা হয়েছে৷ এরপরও যারা বলে ‘আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের জন্য কাবায় যাওয়া অনর্থক’ তারা কাবার দুশমন।
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন