ইসলাম কী বিধর্মীদের মতোই একটি ধর্ম! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৩৫
ইসলাম কী বিধর্মীদের মতোই একটি ধর্ম! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৩৫
প্রিয় পাঠক! ইতিপূর্বে হেযবুত তওহীদের দাবি দিয়েই প্রমাণ করেছি যে, যুগ যুগ ধরে আল্লাহর মনোনিত ধর্ম ইসলাম তার নিজস্ব স্বকীয়তায় অবিকৃত অবস্থায় আমাদের মাঝে আজও বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই যে, এ চিরসত্যকে মিথ্যা সাব্যস্ত করতে হেযবুত তওহীদ আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে।
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তারা ইসলাম ধর্মকে অন্য ধর্মের মত একটি ধর্ম বলে প্রচার করতে বদ্ধপরিকর। চলুন কি বলছেন তারা দেখা যাক-
ক. প্রচলিত ইসলাম নবি স. এর বিপরীত ইসলাম : তারা লিখেছে,
যাত্রাদলের বন্দুকের সঙ্গে আসল বন্দুকের যতটা পার্থক্য, প্রকৃত এসলামের সঙ্গে বর্তমান এসলামের ততটাই পার্থক্য। এ দু’টির চলার পথ সম্পূর্ণ বিপরীত। -এসলাম শুধু নাম থাকবে : পৃ. ৯
আমাদের এমাম বোলছেন বর্তমানে সারা দুনিয়ায় এসলাম হিসাবে যে ধর্মটি চালু আছে সেটি আল্লাহর দেয়া প্রকৃত এসলাম নয়, বরং প্রকৃত এসলামের সম্পূর্ণ বিপরীত। প্রকৃত এসলামটা কি তাও তিনি মানব জাতির সামনে পেশ কোরেছেন। -আল্লাহর মো'জেজা : পৃ. ৯
আল্লাহ নবী-রাসূলদের মাধ্যমে যে তাওহীদ ভিত্তিক দ্বীন মানব জাতির জন্য দান কোরেছেন এবং শেষ নবীও যেটা মানুষকে শেখালেন সেটা আজ আর আমাদের মধ্যে নেই, ওটার শুধু খোলসটা আছে, আজ মোসলেম বোলে পরিচিত জাতিটি যেটাকে দ্বীনুল এসলাম বলে তাদের জীবনে পালন কোরছে, সেটা নবীর শেখানো এসলামের সম্পূর্ণ বিপরীত। -এসলামের প্রকৃত সালাহ : পৃ. ১০
খ. প্রচলিত ইসলাম বিধর্মীদের মতই একটি ধর্ম : তারা লিখেছে,
এই সামরিক দীন পৃথিবীর অন্যান্য অসামরিক দীনের পর্যায়ে পর্যবসিত হলো অর্থাৎ খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, হিন্দু, ইহুদি, জৈন ইত্যাদি বহু দীনের(ধর্মের) মতো আরেকটি ধর্মে পরিণত হলো যেটার উদ্দেশ্য এবাদত,পূজা,উপাসনা করে আত্মার চর্চা করা। -ইসলামের প্রকৃত সালাহ : পৃ. ২০
গ. অন্য ধর্মের মত মুসলিমরাও নবীর সা. পথ থেকে বিচ্যুত : তারা লিখেছে,
পৃথিবীতে এসলাম ধর্ম ছাড়া অন্যান্য যে ধর্মগুলি রয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশই কোন না কোন নবীর (আ:) অনুসারী। তারা তাদের নবীর দেখানো পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে। মোসলেম নামধারী এ জাতিও তাদের নবীর দেখানো, রেখে যাওয়া পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে। যতখানি পথভ্রষ্টতা বিবৃতি আসলে পূর্বে আল্লাহ নতুন নবী পাঠিয়েছেন, এই জাতিতে ততখানি বিকৃত বহু পূর্বেই এসে গেছে। এরপরও নতুন নবী আসেননি, কারণ নবুয়াত শেষ হয়ে গেছে এবং শেষ রসূলের (দ:) প্রতিষ্ঠিত পথে প্রকৃত এসলামে আবার ফিরে যাওয়ার জন্য অবিকৃত কোর’আন ও রাসুলের হাদিস আছে যা অন্যান্য ধর্মে নেই। -শোষণের হাতিয়ার : পৃ. ৮৫
ঘ. প্রচলিত ইসলাম, খ্রিস্টান ইসলাম : তারা লিখেছে,
এই জাতি যাতে আর মাথা উঁচু কোরে দাঁড়াতে না পারে সে জন্য খ্রীস্টান মনিবরা এক শয়তানি ফন্দি আঁটলো। তারা তাদের গোলাম মোসলেমদের প্রকৃত এসলাম থেকে বিচ্যুত করে তাদের পছন্দমত একটি এসলাম শিক্ষা দেবার জন্য তাদের অধিকৃত সমস্ত মুসলিম দুনিয়ায় মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা কোরল। তারা অনেক গবেষণা করে একটি বিকৃত এসলাম তৈরি কোরল। যেটা বাহ্যিকভাবে দেখতে প্রকৃত এসলামের মতই কিন্তু আসলে ভেতরে, আকীদায়, আত্মায়, চরিত্রে আল্লাহ-রাসুলের প্রকৃত এসলামের একেবারে বিপরীত। –মহাসত্যের আহ্বান (প্রচারপত্র) পৃ. ৪
আমরা আহবান করছি- বর্তমানের চালু এই ইসলামটা আসলে আল্লাহ রসুলের ইসলামই নয়, খ্রিস্টান ইসলাম, এই খ্রিস্টান ইসলাম পরিত্যাগ করে প্রত্যাখ্যান করে আবার আল্লাহ রসুলের প্রকৃত ইসলামে প্রবেশ করতে। –এসলামের প্রকৃত রুপরেখা, পৃ. ২২
আজ আমাদের রাজনৈতিক আর্থ-সামাজিক জীবন পরিচালিত হোচ্ছে পাশ্চাত্যের খ্রিষ্টানদের তৈরি করা নানা রকম তন্ত্র-মন্ত্র দিয়ে আর ব্যক্তিগত ধর্মীয় জীবন পরিচালিত হোচ্ছে খ্রিষ্টান পণ্ডিতদের তৈরি করা বিকৃত ও বিপরীতমুখী "এসলাম" দিয়ে, আল্লাহ রসুলের এসলাম দিয়ে নয়। –এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ১৩
তারা এই বিকৃত এবং অনেকাংশে মনগড়া এসলামগুলি শিক্ষা কোরেছেন ব্রিটিশ খ্রিস্টানদের প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাগুলি থেকে। –আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই, পৃ. ১৮
যা কিছু প্রাণ অবশিষ্ট ছিলো খ্রীস্টানদের তৈরি এই এসলামে তা শেষ হোয়ে গেল। –যামানার এমামের পত্রাবলী, পৃ. ১২
আমরা আজ এসলাম বোলতে সেই এসলামই বুঝি যে “এসলাম” খ্রীস্টান পণ্ডিতরা তৈরি কোরে ১৪৬ বছর ধরে আমাদের শিক্ষা দিয়েছে। –যুগসন্ধিক্ষণে আমরা, পৃ. ১৯
উপরোক্ত কথাগুলো দ্বারা তারা বুঝাতে চাচ্ছে যে, ইসলাম ধর্মটি এখন আর আল্লাহ ও তাঁর রসুল সাঃ-এর ধর্ম নেই, বরং এটা অন্য ধর্মের মত একটি ধর্মে রুপান্তরিত হয়ে গেছে এবং প্রচলিত ইসলামটা খ্রীষ্টানদের আবিস্কার করা।
ঙ. প্রচলিত ইসলাম অগ্নীপূজকদের রঙ-এ রঙিন : তারা লিখেছে,
আরবের ইসলাম পারস্য দেশের ভেতর দিয়ে ভারতে, এই উপমহাদেশে আসার পথে পার্শি ধর্ম, কৃষ্টি ও ভাষার রং-এ রং বদলিয়ে রঙিন হয়ে এল। -ইসলামের প্রকৃত সালাহ : পৃ. ৭
কোর'আনে কোথাও নামাজ শব্দটি নেই কারণ কোর'আন আরবি ভাষায় আর নামাজ পার্শি অর্থাৎ ইরানী ভাষা। শুধু ঐ নামাজ নয় আরও অনেক শব্দ আমরা ব্যবহার করি যা কোরানে নেই । যেমন খোদা, রোযা, বেহেশত, দোযখ, ফেরেশতা, জায়নামাজ, মুসলমান, পয়গম্বর ইত্যাদি। এই ব্যবহার মুসলিম দুনিয়ায় শুধু ইরানে এবং আমাদের এই উপমহাদেশে ছাড়া আর কোথাও নেই। এর কারণ আছে। কারণটি হলো- ইরান দেশটি সমস্তটাই অগ্নি-উপাসক ছিল। –ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ৫-৬; -সওমের উদ্দেশ্য, পৃ. ২
ইসলাম কি বলে?
এক. ইতিপূর্বে আপনারা দেখেছেন, হেযবুত তওহীদের দাবি ছিলো, 'প্রচলিত এ ধর্মটি বিকৃত হয়েছে ১৩০০ বছর আগে'। আবার এখানে দাবি করেছে, 'প্রচলিত ইসলাম বিকৃত হয়েছে খ্রীষ্টানদের তৈরি মাদরাসাগুলো থেকে'। আর একথা সূর্যের ন্যায় স্পষ্ট যে, খ্রীষ্টানরা উপমহাদেশে মাদরাসা তৈরির সূচনা করেছে ১৭৮১ সালে কলিকাতা আলিয়া মাদরাসা তৈরির মাধ্যমে। তাহলে এই লেখার মাধ্যমে তারা বুঝাতে চায় যে, ইসলাম বিকৃত হয়েছে মাত্র গত দুইশত বছরের আগ থেকে। আর আগের বক্তব্যগুলো দ্বারা তারা দাবি করেছিলো, ইসলাম বিকৃত করেছে ১৩০০ বছর আগেই। তাহলে আমরা হেযবুত তওহীদের কোন কথাটা সত্য হিসাবে মানবো? আগের কথা নাকি পরের কথা? দু'টোর যেকোনো একটা যদি সত্য বলে মেনে নিই, তাহলে আরেকটা তো নিশ্চয় মিথ্যা। তার অর্থ দাঁড়াল, হেযবুত তওহীদের দাবি মিথ্যায় ভরা। আর মিথ্যুকদের কথা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
দুই. পাশাপাশি আমরা জানি ১৭৮১ সালে খ্রীষ্টান গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিংস এর মাধ্যমে কলিকাতা আলিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং সেখানে পরবর্তি ২৭ জন প্রিন্সিপাল ছিলেন খ্রিষ্টান। আর এ কারণেই হেযবুত তওহীদের দাবী হলো- বর্তমানের এ ইসলাম খ্রীষ্টানদের শিখানো।
তাহলে যদি তাদেরকে পাল্টা প্রশ্ন করা হয় যে, তর্ক এড়াতে যদি ধরেও নেওয়া হয় যে, কলিকাতা আলিয়া মাদরাসা থেকে পড়ালেখা করা সকলেই খ্রিষ্টানদের ইসলাম শিখেছেন এবং সেটাই আলেমরা প্রচার করে যাচ্ছেন। কিন্তু এ কথা তো সত্য যে, কওমী মাদরাসা ইংরেজ-বেনিয়ারা তৈরি করে নি, বরং যারা ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনের মূল নায়ক ছিলেন, বিশেষ করে; কাসেম নানুতুবী র: মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী র: হুসাইন আহমাদ মাদনী র: তাদের মাধ্যমেই এ মাদরাসার পথ চলা। তাহলে দেওবন্দী উলামায়ে কেরামের কাছে যে ইসলাম রয়েছে, সেটা কী করে খ্রিষ্টানদের ইসলাম হয়? যেহেতু দেওবন্দী উলামায়ে কেরাম ইংরেজদের থেকে কোনো জ্ঞান অর্জন করেননি, বরং তাদেকে বিতাড়িত করেছেন উলামায়ে দেওবন্দ। সুতরাং কওমী উলামাদের কাছে যে ইসলাম রয়েছে সেটা নিঃসন্দেহে আল্লাহ ও তাঁর রসুলে সাঃ-এর প্রকৃত ইসলাম, খ্রিস্টানদের ইসলাম নয়।
তিন. তাছাড়া তারা বলে থাকে, প্রচলিত ইসলাম অমুসলিমদের ধর্মের মতই একটি ধর্ম। অথচ মহান রব্ব বলেন,
وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ
এবং সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করো না। –সুরা বাকার : ৪২
উল্লেখিত আয়াতের ব্যাপারে বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত কাতাদাহ রহি. বলেন-
وَلا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِل وَلَا تَلْبِسُوا الْيَهُودِيَّةَ وَالنَّصْرَانِيَّةَ بِالْإِسْلَامِ إِنَّ دِينَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ وَالْيَهُودِيَّةَ وَالنَّصْرَانِيَّةَ بِدْعَةٌ لَيْسَتْ مِنَ اللَّهِ
ইয়াহুদী,খ্রীষ্টানদের সাথে ইসলামকে মিশ্রিত করো না। নিশ্চয় আল্লাহর ধর্ম হলো ইসলাম। (কারণ বর্তমানের) ইয়াহুদী, খ্রীষ্টান ধর্ম আল্লাহর দ্বীন নয়, বরং মানবরচিত নব্য আবিস্কৃত ধর্ম। –তাফসীরে ইবসে কাসীর, খ. ১ পৃ. ৩৭৯
সুতরাং পবিত্র ইসলাম ধর্মকে ইহুদী-খ্রীস্টান, হিন্দু, বৈদ্ধ, জৈন ও অগ্নীপুজকদের ধর্মের সাথে মিলানো এ আয়াতের প্রকাশ্য বিরোধী নয় কী? উপরন্তু হেযবুত তওহীদ নিজেরাই লিখেছে, নবিজি সাঃ সত্য মিথ্যা একসাথে মিশ্রণ করতেন না। তারা লিখেছে,
আল্লাহর রসুল কোনোদিন প্রতিপক্ষের সঙ্গে কোয়ালিশন করে, ভাগাভাগি করে ক্ষমতায় যান নি । তিনি যুদ্ধ করেছেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি করেছেন, সন্ধি করেছেন। এই সবই তিনি করেছেন কাফেরদের সঙ্গে। কিন্তু সত্য ও মিথ্যাকে, ঈমান ও কুফরকে, দীন ও তাগুতকে তিনি কোনোদিন মিশ্রিত হতে দেন নি। তার নীতি ছিল, মিথ্যার সাথে কোনো আপস হবে না। -ধর্মব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ১৬২; (pdf) পৃ. ১৯৫
এই জাতি যেন কোথাও থামতে না পারে সেজন্য আল্লাহ কাফেরদের প্রতি সন্ধির প্রস্তাব করাকেও নিষেধ করে দিয়েছেন (সূরা মুহাম্মদ-৩৫)। -বর্তমানের বিকৃত সুফিবাদ পৃষ্ঠা-৩৫
তাহলে সত্য ধর্ম ইসলামকে মিথ্যা ধর্মগুলোর সাথে তুলনা করে তারা নিজেরাই নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আমলের বিপরীত আমল করলেন না? অথচ তারাই আবার বলেছে,
রসূলুল্লাহ স: যা করেননি, করতে বলেননি তা কোনোদিনও হেজবুত তওহীদ করবে না। –সবার উর্ধ্বে মানবতা, পৃ. ১৪
তাহলে ভাবুন তো ওরা কোনো লেভেলের মিথ্যুক!
চার. উপরন্তু পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন,
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَىٰ وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ
তিনিই তো নিজ রাসূলকে হেদায়াত ও সত্য দীনসহ প্রেরণ করেছেন, তাকে সকল দীনের উপর বিজয়ী করার জন্য, তা মুশরিকদের জন্য যতই অপ্রীতিকর হোক। –সুরা সফ : ৯
প্রিয় পাঠক, যে ইসলাম ধর্মটি এসেছে সকল ধর্মকে ধুলিস্যাৎ করতে, সে ইসলামের ব্যপারে যদি কেউ বলে যে, 'বিশ্বব্যপী চলমান ইসলাম খ্রীষ্টানরা বিকৃত করে ফেলেছে' তাহলে এ কথাটির অর্থ কি এই দাঁড়ালো না যে, মহান আল্লাহ ইসলাম পাঠিয়েছিলেন সব ধর্ম ধ্বংস করে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করতে। কিন্তু সেটা হলো না, বরং অন্য ধর্ম ইসলামকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এ বিষয়টা কি অত্র আয়াতের প্রকাশ্য বিরোধী নয়?
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন