হজ্ব কোনো আধ্যাত্মিক বিষয় নয়! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৮৬
হজ্ব কোনো আধ্যাত্মিক বিষয় নয়! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৮৬
নফসকে পরিশুদ্ধ করতে হজ্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বান্দার যাবতীয় গুনাহ মাফ করে বিশুদ্ধ অন্তর গঠনে হজ্বের ভূমিকা অনস্বীকার্য। হেযবুত তওহীদ কী বলে? তাদের আনেকটা জঘণ্য দাবী হলো–হজ্ব কোনো আধ্যাতিক সফর নয়। দেখুন, তারা লিখেছে– ইসলামের অন্য সব কাজের মতোই আজ হজ্ব সম্বন্ধেও এই জাতির আকীদা বিকৃত হয়ে গেছে। এই বিকৃত আকীদায় হজ্ব আজ সম্পূর্ণরূপে একটি আধ্যাত্মিক ব্যাপার, আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করার পথ। প্রথম প্রশ্ন হোচ্ছে- আল্লাহ সর্বত্র আছেন, সৃষ্টির প্রতি অনু-পরামাণুতে আছেন, তবে তাঁকে ডাকতে, তাঁর সান্নিধ্যের জন্য এত কষ্ট কোরে দূরে যেতে হবে কেন’? –হেযবুত তাওহীদের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত ‘মোসলেম উম্মাহর বার্ষিক মহাসম্মেলন’ প্রবন্ধ-১ম প্যারা। অর্থাৎ তারা বলতে চায়–হজ্ব কোনো আধ্যাত্মিক ব্যাপার নয়! ইসলাম কী বলে? হজ্বের বিধান পুরোটাই আল্লাহপাকের সাথে বান্দার ভালোবাসার এক গভীর মূহুর্ত। কেমন যেন বান্দা তার সকল ভালোবাসা ছেড়ে এক আল্লাহ'র ভালোবাসায় ডুব দিতে খালি পায়ে, মুসাফির বেশে রওনা হলেন। প্রেমিক যেমন সবাইকে ফেলে প্রেমিকাকে নিয়ে হঠাৎ কোথাও রওনা হয়ে যায়, ঠিক বান্দা তেমনি আল্লাহ পাকের ভালোবাসার প্রেম সাগরে ডুব দিতে রওনা হয়ে যান। এজন্য হজ্বের সফরে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ বাক্য পড়তে হয়৷ হজ্ব আধ্যাত্মিক সফর হিশাবে প্রমাণে এরচেয়ে জলন্ত প্রমাণ আর কী হতে পারে? তাছাড়া হজ্ব আধ্যাত্মিক সফর বলেই এর জন্য সীমাহীন সওয়াব বা প্রতিদানের কথা হাদিস শরীফ থেকে পাওয়া যায়। নিন্মে কয়েকটা হাদিস পেশ করছি– এক. হযরত আমর ইবনুল আস রা. হতে বর্ণিত নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, أَنَّ الإِسْلاَمَ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ وَأَنَّ الْهِجْرَةَ تَهَدَّمُ مَا كَانَ قَبْلَهَا وَأَنَّ الْحَجَّ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ ইসলাম (গ্রহণ) তার পূর্বেকার সকল পাপ বিদূরিত করে দেয় এবং হিজরত তার পূর্বেকার সকল কিছুকে বিনাশ করে দেয়। একইভাবে হজ্ব তার পূর্বের সবগুনাহকে বিনষ্ট করে দেয়। –সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ১২১ দুই. হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, مَنْ حَجَّ لِلَّهِ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَمَا وَلَدَتْهُ أُمُّهُ যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্ব করেছে। যার মধ্যে সে অশ্লীল কথা বলেনি বা অশ্লীল কার্য করেনি, সে হজ্ব হতে ফিরবে সেদিনের ন্যায় (নিষ্পাপ অবস্থায়) যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিলেন। –সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ১৫২১ অর্থাৎ সে কাবীরা-ছাগীরা, প্রকাশ্য-গোপনীয় সকল গুনাহ থেকে ঐরূপ মুক্ত হয়ে ফিরে আসে। যেরূপ একজন শিশু গুনাহ মুক্ত হয়ে জন্মগ্রহণ করে। তিন. হযরত আবু হুরায়রাহ রা. হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, الْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا وَالْحَجُّ الْمَبْرُوْرُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ এক ওমরাহ অপর ওমরাহ পর্যন্ত সময়ের (ছগীরা গুনাহের) কাফফারা স্বরূপ। আর জান্নাতই হ’ল কবুল হজ্জের একমাত্র প্রতিদান। –সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ১৭৭৩ এ সকল হাদিসগুলো কী বুঝাতে চায়, হজ্ব কোনো আধ্যাত্মিক বিষয় নয়? যদি আধ্যাত্মিক বিষয় না হবে, তাহলে এ সকল ফযিলতের কথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেন বললেন? হেযবুত তওহীদ কী কোনো জবাব দিতে পারবে? সুতরাং প্রমাণ হলো, হজ্বের পুরো বিষয়টিই আল্লাহ পাকের মহব্বতের এক গভীর সফর। এটাকে ইবাদত বলে স্বীকার না করা, আধ্যাত্মিক বিষয় বলে না মানা, মুসলিমদের বার্ষিক মহাসম্মেলন বলে আখ্যায়িত করা চরম অন্যায় ও ইসলামের চুড়ান্ত বিকৃতি।
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
জেনারেল শিক্ষিতরা কীভাবে দীনের খেদমত করবেন?
দীনের খিদমত কী জিনিস? ধরেন, আমি ডাক্তার। এক হচ্ছে, আমি হালালভাবে ইনকাম করছি, যথাসাধ্য রোগীদের ফ্রী-ড...
ডাঃ শামসুল আরেফীন শক্তি
৬ নভেম্বর, ২০২৪
৩২৫০
কুরআনের চেয়ে মুমিন দামী! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–১৬
পবিত্র কুরআন সরাসরি আল্লাহপাকের কালাম। পৃথিবীর সব কিছু মাখলুক হলেও আল্লাহ-র কালাম মাখলুক নয়। সুতরাং ...
মুফতী রিজওয়ান রফিকী
৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
১৬৪৬
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন