নামাজে আল্লাহর ধ্যান করা যাবে না! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৭০
নামাজে আল্লাহর ধ্যান করা যাবে না! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৭০
আল্লাহকে স্বরণ করতেই নামাজ আদায় করতে হয়। যা পবিত্র কুরআন-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু নামাজে খুশুখুজু বা ধ্যান করার বিপক্ষে পরিস্কার অবস্থান নিয়েছে হেযবুত তওহীদ নামক এ কুফরী দল।
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবী হলো, নামাজে কোনো ধরণের ধ্যান করা যাবে না, বরং প্রশিক্ষণের মতো সবকিছুই হতে হবে দ্রুতগতিতে। দেখুন, তারা লিখেছে-
এই মরা প্রাণহীন সালাতের পক্ষে বলা হয়–খুশু-খুজুর সাথে নামাজ পড়া উচিত। এই খুশু-খুজু কি? বর্তমানে বলা হয় সমস্ত কিছু থেকে মন সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন করে আল্লাহর প্রতি মন নিবিষ্ট করা হচ্ছে খুশু-খুজু; অর্থাৎ এক কথায় ধ্যান করা। –ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ৩২
এমাম যদি রুকু বা সাজদায় যেয়ে একঘন্টা থাকেন তবে প্রত্যেক মোকতাদীকে তাই থাকতে হবে, নইলে তার সালাহ হবে না। এটা কী শেখায়? এটি কি ধ্যান করা শেখায়? অবশ্যই নয়। এটা শেখায় শর্তহীন আনুগত্য, আদেশ পালন। –ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ২৮
সালাতে আল্লাহকে ধ্যান করাই যদি উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তবে আল্লাহ সালাতের যে প্রক্রিয়া, নিয়ম,কানুন এমন করে দিলেন কেন যাতে ধ্যান করা অসম্ভব। খুশু-খুজু অর্থাৎ ধ্যান করাই আল্লাহর উদ্দেশ্য হলে সালাতের নিয়ম হতো পাহাড়-পর্বতের গুহায়, কিম্বা খানকা বা হুজরায় অথবা অন্ততপক্ষে কোনো নির্জন স্থানে ধীর-স্থীরভাবে একাকী বসে চোখ বন্ধ করে মন নিবিষ্ট করে আল্লাহর ধ্যান করা। সালাহ কি তাই? অবশ্যই নয়। সালাহ এর ঠিক উল্টো। –ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ৩২
যদি কাউকে বলা হয় তুমি জনাকীর্ণ রাজপথে দৌঁড়াবে আর সেই সঙ্গে ধ্যান করবে তাহলে ব্যাপারটা কী রকম হবে? এটি যেমন হাস্যকর তেমনি হাস্যকর কাউকে বলা যে তুমি সালাহ কায়েম করবে এবং সেই সঙ্গে ধ্যানও করবে। –ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ৩৫
পূর্ণভাবে সালাহ কায়েম করতে গেলে ১০০ টিরও বেশি ছোট বড় নিয়ম পদ্ধতি পালন করতে হয়। সব গুলো না করলেও অন্তত চৌদ্দটি ফরদ, চৌদ্দটি ওয়াজেব, সাতাশটি সুন্নত আর বারটি মুস্তাহাব খেয়াল রেখে, সেগুলো সঠিক ও পূর্ণভাবে পালন করে সালাহ কায়েম করতে গেলে বর্তমানে সালাতে যে ধ্যানের কথা বলা হয় তা কতখানি সম্ভব? –ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ২৬-২৭
সালাতের প্রায় ১১৪ টি নিয়ম-পদ্ধতির প্রতি লক্ষ্য রেখে, সেগুলো যথাযথভাবে পালন করে ঐ খুশু-খুজুর সাথে অর্থাৎ ধ্যানের সাথে সালাহ সম্পাদন করা যে অসম্ভব তা সাধারণ জ্ঞানেই (Common sense) বোঝা যায়। –ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ৩৩
দৌঁড়ানোর সময় যেমন চোখ কান খোলা রেখে, কোথায়য় পা ফেলছে তা দেখে দেখে, রাস্তায় গাড়ি ঘোড়া দেখে দৌঁড়াতে হবে, তখন ধ্যান অসম্ভব, তেমনি সালাতের সময়ও সালাতের ১১৪ টি নিয়ম কানুন মনে রেখে, রাকাতের হিসাব রেখে সেগুলো পালন করার সাথে ধ্যান করাও অসম্ভব। সুতরাং সালাহ ও ধ্যান বিপরীতমুখী দুটি কাজ যা একত্রে অসম্ভব। –ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ৩৫
অর্থাৎ তাদের দাবী হলো, আল্লাহর ধ্যানসহ নামাজ আদায় করা সম্ভব নয়।
ইসলাম কী বলে?
নামাজ হলো মূলত আল্লাহকে স্বরণ করার জন্যই। মহান আল্লাহ হযরত মুসা আ.-কে নির্দেশ দিয়েছিলেন, হে মুসা,
إِنَّنِي أَنَا اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدْنِي وَأَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي
নিশ্চয় আমিই আল্লাহ। আমি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। সুতরাং আমার ইবাদত করো এবং আমার স্মরণার্থে নামায কায়েম করো। –সুরা ত্ব-হা : ১৪
উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা নামাজে তাঁকে তাঁকে স্বরণ বা ধ্যান করতে হুকুম দিয়েছেন। এছাড়াও হাদিসে জিবরাঈলে এসেছে, হযরত জিবরাঈল আ. নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে ইহসান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার পর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ
আপনি এমনভাবে আল্লাহর ‘ইবাদত করবেন, যেন আপনি তাঁকে দেখছেন, আর যদি আপনি তাঁকে দেখতে না পান তবে (মনে করবেন) তিনি আপনাকে দেখছেন। –সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ৫০
উক্ত হাদিসে সুস্পষ্টভাবে সকল ইবাদতে আল্লাহকে ধ্যান করার কথা বলেছেন খোদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই। অন্য হাদিসে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
إِذَا قَامَ أَحَدُكُمْ إِلَى الصَّلاَةِ فَلاَ يَبْصُقْ أَمَامَهُ فَإِنَّمَا يُنَاجِي اللهَ مَا دَامَ فِي مُصَلاَّهُ وَلاَ عَنْ يَمِينِهِ فَإِنَّ عَنْ يَمِينِهِ مَلَكًا وَلْيَبْصُقْ عَنْ يَسَارِهِ أَوْ تَحْتَ قَدَمِهِ فَيَدْفِنُهَا
তোমাদের কেউ সালাতে দাঁড়ালে, সে তার সামনের দিকে থুথু ফেলবে না। কেননা সে যতক্ষণ তার মুসল্লায় থাকে, ততক্ষণ মহান আল্লাহর সাথে চুপে চুপে কথা বলে। আর ডান দিকেও ফেলবে না। তার ডান দিকে থাকেন ফেরেশতা। সে যেন তার বাম দিকে অথবা পায়ের নীচে থুথু ফেলে এবং পরে তা দাবিয়ে দেয়। –সহীহ বুখারী, হাদীস নং : ৪১৬
উক্ত হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, নামাজ হলো, আল্লাহর সাথে গোপনে কথোপকথন। এটাও তো ধ্যান। সুতরাং খুশুখুজুর সাথে নামাজ আদায় করার অর্থ হলো, আল্লাহর স্বরণ করা, ভয় করা, বিনয় ও নম্রতার সাথে, প্রতিটি শব্দের অর্থের দিকে খেয়াল রাখা, এদিক সেদিক না তাকানো, ফরজ-ওয়াজীব-সুন্নাহ’র দিকে খেয়াল করে নামাজ আদায় করা। সুতরাং নামাজে আল্লাহর ধ্যান করা যাবে না বলে হেযবুত তওহীদ যে দাবী করেছে, তা নিতান্তই কুরআন-হাদিস বিরোধী। দেখুন, তারা আরও বলেছে,
সালাতের প্রায় ১১৪ টি নিয়ম-পদ্ধতির প্রতি লক্ষ্য রেখে, সেগুলো যথাযথভাবে পালন করে ঐ খুশু-খুজুর সাথে অর্থাৎ ধ্যানের সাথে সালাহ সম্পাদন করা যে অসম্ভব তা সাধারণ জ্ঞানেই (Common sense) বোঝা যায়। –ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ৩৩
সাধারণ জ্ঞানেই (Commo sense) বোঝা যায় যে, সালাতের এতগুলো নিয়ম কানুন পালন করে যে ধ্যান বর্তমানের ইসলাম দাবি করে তা সম্পূর্ণ অসম্ভব।আমার একথায় যিনি একমত হবেন না তিনি মেহেরবানী করে ঐ নিবিষ্টতা অর্থাৎ ধ্যান নিয়ে চার রাকাত সালাহ পড়তে চেষ্টা করে দেখতে পারেন- দেখবেন সালাতে ভুল হয়ে যাবে। –ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ২৭
অথচ প্রকৃত মুসলিমরা ১৪০০ বছর যাবৎ এ অসম্ভব কাজটি সহজেই করে আসছেন। আলহামদুলিল্লাহ। মুসলিমদের জন্য এটা মোটেই কষ্টকর বিষয় নয়। এজন্য আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وَاسْتَعِينُواْ بِالصَّبْرِ وَالصَّلاَةِ وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ إِلاَّ عَلَى الْخَاشِعِينَ
এবং সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য লাভ করো। সালাতকে অবশ্যই কঠিন মনে হয়, কিন্তু তাদের পক্ষে (কঠিন) নয়, যারা খুশু (অর্থাৎ ধ্যান ও বিনয়)-এর সাথে পড়ে। –সুরা বাকারা : ৪৫
সুতরাং যাঁদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে, শয়তানি রয়েছে, ইসলাম ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছে, তাদের পক্ষে খুশুখুজুর সাথে নামাজ আসলেই অসম্ভব। আল্লাহপাক আমাদেরকে তাঁর স্বরণ ও ভয় রেখে ধীরস্থীরভাবে নামাজ আদায় করার তাওফীক দান করুন। আমীন!
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
ফিরিস্তা এবং দেবতা একই জিনিষ! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–১০
সমস্ত মুসলামানকে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আসমানী কিতাবের মতো ফেরেশতাদের অস্ত...
মুফতী রিজওয়ান রফিকী
৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
১৭৬২
কুরআনের চেয়ে মুমিন দামী! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–১৬
পবিত্র কুরআন সরাসরি আল্লাহপাকের কালাম। পৃথিবীর সব কিছু মাখলুক হলেও আল্লাহ-র কালাম মাখলুক নয়। সুতরাং ...
মুফতী রিজওয়ান রফিকী
৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
২১২৫
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন