ইয়া আল্লাহ! আপনার কাছে আশ্রয় নিচ্ছি কল্যাণহীন জীবন থেকে ও অন্তরের ফিতনা থেকে এবং আপনার প্রতাপের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছি - নেই কোনো মাবুদ আপনি ছাড়া - আমাকে পথভ্রষ্ট কোরেন না। (আশ্রয় চাই) কঠিন বিপদ থেকে, দুর্ভাগ্যের শিকার হওয়া থেকে, মন্দ ভাগ্য থেকে, শত্রুকুলের তৃপ্তির হাসি থেকে, আমার কৃত ও অকৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে, আমার জানা-অজানা বিষয়াদির অনিষ্ট থেকে, আপনার নেয়ামত উঠে যাওয়া থেকে, আপনার সুরক্ষা ঘুরে যাওয়া থেকে, আপনার অতর্কিত শাস্তি থেকে এবং আপনার সকল অসন্তুষ্টি থেকে। (আমি পানাহ চাই) আমার শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তির অনিষ্ট থেকে, আমার জিহ্বা ও অন্তঃকরণের অনিষ্ট থেকে এবং আমার বীর্যের অনিষ্ট থেকে। (অর্থাৎ অবৈধ যৌনাচার থেকে।) (আমি পানাহ চাই) অনাহার থেকে, জালিম বা মজলুম হওয়া থেকে, চাপা পড়া, উপর থেকে পড়ে যাওয়া, ডুবে যাওয়া ও অগ্নিদগ্ধ হওয়া থেকে। (আমি পানাহ চাই) মৃত্যুর সময় শয়তানের দ্বারা বিভ্রান্ত হওয়া থেকে, জিহাদ থেকে পলায়নরত অবস্থায় মরণ থেকে এবং দংশিত হয়ে মৃত্যুবরণ থেকে।৮৮

-নাসায়ী, মুসলিম, মুসতাদরাক

৮৮. মোটকথা, প্রাকৃতিক বা আদর্শগত, আত্মিক ও বস্তুগত, নৈতিক বা স্বভাবগত যত প্রকারের বিপদ হতে পারে সবকিছু থেকে বান্দা নিরাপদ থাকতে চায়। আর তা চায় প্রকৃত নিরাপত্তাদানকারীর আশ্রয় গ্রহণের মাধ্যমে। এ-ই তার সকাতর প্রার্থনা। مِنْ شَرِّ مَاعَلِمْتُ (আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে)। অর্থাৎ ঐ সকল গুনাহের অশুভ পরিণাম থেকে, যা আমি করেছি। مِنْ شَرِّ مَا لَمْ اَعْمَلْ (অকৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে) অর্থাৎ যে ফরজ-ওয়াজিব আমার করণীয় ছিল; কিন্তু করিনি, তার অনিষ্ট থেকে। مِنْ زَوَالِ نِعْمَتِكَ (আপনার নেয়ামত উঠে যাওয়া থেকে) এতে দৈহিক-আত্মিক, ইহলৌকিক-পারলৌকিক সব ধরনের নেয়ামত শামিল। مِنْ شَرِّ سَمْعِىْ অর্থাৎ অনুচিৎ শ্রবণ থেকে। مِنْ شَرِّ بَصَرِىْ অর্থাৎ অনুচিৎ দর্শন থেকে। مِنْ شَرِّ لِسَانِىْ অর্থাৎ অনুচিৎ কথা বলা থেকে। مِنْ شَرِّ قَلْبِىْ অর্থাৎ অনুচিৎ চিন্তা ও অনুচিত কিছু স্মৃতিতে লালন করা থেকে। مِنْ شَرِّ مَنِيِّىْ অর্থাৎ অবৈধ যৌনাচার থেকে। শুধু এ দু‘আগুলোই হতে পারে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নবুয়ত ও সত্যবাদিতার শক্তিশালী নিদর্শন। উম্মতের দুর্বলতম ব্যক্তির হৃদয়েও; বরং সে হৃদয়ের গভীরতম প্রদেশেও যে আকুতি বিরাজ করে, তারও এত স্পষ্ট ও বিস্তৃত বর্ণনা সত্য নবী ছাড়া আর কারো পক্ষে সম্ভব নয়। أَنْ تُضِلَّنِىْ (আমাকে পথভ্রষ্ট কোরেন না) এখানে পথভ্রষ্ট করার সম্বন্ধ আল্লাহর সাথে এ জন্য করা হয়েছে যে, তিনিই সৃষ্টিজগতের সবকিছুর, সকল কার্য ও কারণের ঘটয়িতা। যেমনটি কুরআন মজীদে বারবার বলা হয়েছে। এ অর্থ নয় যে, আল্লাহর তা‘আলা নিজে থেকে কোনো বান্দাকে পথভ্রষ্ট করেন। أَنْ يَتَخَبَّطَنِىَ الشَّيْطَانُ عِنْدَ الْمَوْتِ (মৃত্যুর সময় শয়তানের দ্বারা বিভ্রান্ত হওয়া থেকে) নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা মুমিনের সারা জীবনের অর্জন ব্যর্থ হতে দিবেন না। কিন্তু বান্দার আবদিয়্যাতের দাবি, এই অতি নাজুক সময়ের জন্য প্রার্থনা জারি রাখা।