সূরা আল-ফালাক

قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ مِن شَرِّ مَا خَلَقَ وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ وَمِن شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ
উচ্চারণঃ কুল আ‘ঊযুবিরাব্বিল ফালাক মিন শাররি মা-খালাক। ওয়া মিন শাররি গা-ছিকিন ইযা-ওয়াকাব। ওয়া মিন শাররিন নাফফা-ছা-তি ফিল ‘উকাদ। ওয়া মিন শাররি হা-ছিদিন ইযা-হাছাদ।
অর্থঃ null
উৎসঃ null
উপকারিতাঃ
قُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ قُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ قُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ فلق قُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ--এর فَالِقُ الإِصْبَاحِ
১. হযরত ওকবা ইবনে আমের (রাযি) বলেন, রাসূলুল্লাহ আমাকে বললেন, হে ওকবা ইবনে আমির, তুমি আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট অপেক্ষা অধিক প্রিয় এবং অধিক দ্রুত কবূল হওয়ার মত আর কোন সূরা পড়তে পার না। অতএব তুমি নামাযে এই সূরা পড়া ছাড়িও না। ২. সূরা ফালাক ও সূরা নাস এর ফজিলত: প্রত্যেক মু’মিনের বিশ্বাস এই যে, ইহকাল ও পরকালের সমস্ত লাভ-লোকসান আল্লাহ্ তা’আলার করায়ত্ত। তাঁর ইচ্ছা ব্যতিরেকে কেউ কারও অণু পরিমাণ লাভ অথবা লোকসান করতে পারে না। অতএব, ইহকাল ও পরকালের সমস্ত বিপদাপদ থেকে নিরাপদ থাকার একমাত্র উপায় হচ্ছে নিজেকে আল্লাহর আশ্রয়ে দিয়ে দেওয়া এবং কাজেকর্মে নিজেকে তাঁর আশ্রয়ে যাওয়ার যোগ্য করতে সচেষ্ট হওয়া। সূরা ফালাকে ইহলৌকিক বিপদাপদ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার শিক্ষা আছে এবং সূরা নাসে পারলৌকিক বিপদাপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়েছে। নির্ভরযোগ্য হাদীসসমূহে উভয় সূরার অনেক ফযীলত ও বরকত বর্ণিত আছে। সহীহ মুসলিমে ওকবা ইবনে আমের (রাযি)-এর বর্ণিত হাদীসে রসূলূল্লাহ বলেন, তোমরা লক্ষ্য করেছ কি. অদ্য রাত্রিতে আল্লাহ্ তা’আলা আমার প্রতি এমন আয়াত নাযিল করেছেন, যার সমতুল্য আয়াত দেখা যায় না অর্থাৎ ও আয়াতসমূহ। অন্য এক বর্ণনায় আছে তাওরাত, ইঞ্জীল, যবুর এবং কুরআনেও অনুরূপ কোন সূরা নেই। এক সফরে রাসূলুল্লাহ ওকবা ইবনে আমের (রাযি)-কে সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করালেন, অতঃপর মাগরিবের নামাযে এ সূরাদ্বয়ই তিলাওয়াত করে বললেন, এই সূরাদ্বয় নিদ্রা যাওয়ার সময় এবং নিদ্রা থেকে গাত্রোত্থানের সময়ও পাঠ কর। অন্য হাদীসে তিনি প্রত্যেক নামাযের পর সূরাদ্বয় পাঠ করার আদেশ করেছেন। ৩. হযরত আয়েশা (রাযি) বলেন, রাসূলুল্লাহ কোন রোগে আক্রান্ত হলে এই সূরাদ্বয় পাঠ করে হাতে ফুঁ দিয়ে সর্বাঙ্গে বুলিয়ে দিতেন। ইন্তেকালের পূর্বে যখন তাঁর রোগযন্ত্রণা বৃদ্ধি পায়, তখন আমি এই সূরাদ্বয় পাঠ করে তাঁর হাতে ফুক দিতাম। অতঃপর তিনি নিজে তা সর্বাঙ্গে বুলিয়ে নিতেন। আমার হাত তাঁর পবিত্র হাতের বিকল্প থেকে পারত না। তাই আমি এরূপ করতাম। ৪. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হাবীব (রাযি) বর্ণনা করেন, এক রাত্রিতে বৃষ্টি ও ভীষণ অন্ধকার ছিল। আমরা রাসূলুল্লাহ কে খুঁজতে বের হলাম। যখন তাঁকে পেলাম, তখন প্রথমেই তিনি বললেন: বল। আমি আরয করলাম, কি বলব? তিনি বললেন, সূরা ইখলাছ ও কুল আউজু সূরাদ্বয়। সকাল-সন্ধ্যায় এগুলো তিনবার পাঠ করলে তুমি প্রত্যেক কষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবে। সারকথা এই যে, যাবতীয় বিপদাপদ থেকে নিরাপদ থাকার জন্য রাসূলুল্লাহ ও সাহাবায়ে কিরাম এই সূরাদ্বয়ের আমল করতেন। অতঃপর আয়াতসমূহের তাফসীর দেখুনঃ الْفَلَقِ--এর শাব্দিক অর্থ বিদীর্ণ হওয়া। এখানে উদ্দেশ্য নিশি শেষে ভোর হওয়া। অন্য এক আয়াতে আল্লাহর গুণ বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে আল্লাহর সমস্ত গুণের মধ্য থেকে একে অবলম্বন করার রহস্য এই থেকে পারে যে, রাত্রির অন্ধকার প্রায়ই অনিষ্ট ও বিপদাপদের কারণ হয়ে থাকে এবং ভোরের আলো সেই বিপদাপদের আশংকা দূর করে দেয়। এতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, যে তাঁর কাছে আশ্রয় চাইবে, তিনি তার সকল মুসীবত দূর করে দেবেন।
উৎসঃ আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব, হাদীস নং: ২২৯৩ সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং: ১৫২৩; সহীহ মুসলীম, হাদীস নং: ৮১৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং: ১৬৮১২ তাফসীরে ইবনে কাসীর তাফসীরে মাযহারী মাযহারী, তাফসীরে মারেফুল কুরআন