মা'আরিফুল হাদীস

معارف الحديث

আখলাক অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস ১৬২ টি

হাদীস নং: ১০১
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ইসলাম ধর্মে আখলাক ও নৈতিকতার স্থান

রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজের শিক্ষা ও আদর্শে ঈমানের পর যেসব বিষয়ের উপর সবিশেষ জোর দিয়েছেন এবং মানুষের সাফল্য ও সৌভাগ্যকে যেগুলোর উপর নির্ভরশীল বলে উল্লেখ করেছেন, এগুলোর মধ্যে একটি বিষয় এও যে, মানুষ যেন উন্নত চরিত্র অবলম্বন করে এবং মন্দ চরিত্র থেকে নিজেকে হেফাযত করে। রাসূলুল্লাহ ﷺকে এ পৃথিবীতে নবী হিসাবে প্রেরণ করার যে সকল উদ্দেশ্যের কথা কুরআন মজীদে উল্লেখ করা হয়েছে, এগুলোর মধ্যে একটি উদ্দেশ্য এও বলা হয়েছে যে, তিনি মানুষের পরিশুদ্ধির কাজ করবেন। আর এ পরিশুদ্ধির মধ্যে চরিত্র সংশোধনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, আমি চরিত্র সংশোধনের জন্য প্রেরিত হয়েছি। অর্থাৎ, চরিত্র সংশোধনের কাজটি আমার প্রেরিত হওয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য ও আমার কর্মসূচীর বিশেষ অংশ। আর এটাই হওয়া উচিত ছিল। কেননা, মানুষের জীবন ও এর ফলাফল লাভে চরিত্র ও নৈতিকতার বিরাট গুরুত্ব রয়েছে। মানুষের চরিত্র যদি সুন্দর হয়, তাহলে তার নিজের জীবনও আন্তরিক প্রশান্তি ও আনন্দের সাথে কেটে যাবে এবং অন্যদের জন্যও তার জীবন রহমত ও স্বস্তির কারণ হবে। পক্ষান্তরে কোন মানুষের চরিত্র যদি মন্দ হয়, তাহলে সে নিজেও জীবনের স্বাদ ও আনন্দ থেকে বঞ্চিত থাকবে, আর যাদের সাথে তার সংশ্লিষ্টতা ও সম্পর্ক থাকবে, তাদের জীবনও বিস্বাদ ও তিক্ত হয়ে যাবে। এগুলো তো হল সচ্চরিত্রতা ও দুশ্চরিত্রতার নগদ ও পার্থিব ফলাফল, যা আমরা প্রতিদিন প্রত্যক্ষ করে যাচ্ছি। কিন্তু মরণের পর যে জীবন আসবে, সে জীবনে এ দু'টির ফলাফল এর চেয়ে অনেক গুণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ধরা পড়বে। আখেরাতের জীবনে উত্তম চরিত্রের ফল হবে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের সন্তোষ ও জান্নাত, আর মন্দ চরিত্রের ফল হবে আল্লাহ্ তা'আলার ক্রোধ ও জাহান্নামের আগুন। আল্লাহ্ আমাদেরকে হেফাযত করুন।
চরিত্র সংশোধন সম্পর্কীয় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যেসব বাণী হাদীসের কিতাবসমূহে সংরক্ষিত রয়েছে, সেগুলো দুই প্রকারঃ (১) ঐসব হাদীস, যেগুলোতে তিনি মৌলিকভাবে সচ্চরিত্রতার উপর জোর দিয়েছেন এবং এর গুরুত্ব, মর্যাদা ও এর অসাধারণ পরকালীন সওয়াবের কথা ঘোষণা করেছেন। (২) ঐসব হাদীস, যেগুলোতে তিনি বিশেষ বিশেষ উত্তম চরিত্র অবলম্বন করার অথবা অনুরূপভাবে বিশেষ বিশেষ মন্দ চরিত্র থেকে বেঁচে থাকার তাকীদ করেছেন। প্রথমে আমরা হুযুর ﷺ এর প্রথম প্রকারের কিছু বাণী এখানে লিপিবদ্ধ করব।

উত্তম আখলাকের অধিকারী উৎকৃষ্ট
১০১. হযরত আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেছেন: তোমাদের মধ্যে তারা উৎকৃষ্ট যারা উত্তম আখলাক বা চরিত্রের অধিকারী। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الاخلاق
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « إِنَّ مِنْ خِيَارِكُمْ أَحَاسِنَكُمْ أَخْلَاقًا » (رواه البخارى ومسلم)
হাদীস নং: ১০২
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ উত্তম আখলাকের অধিকারী কামিল ঈমানদার
১০২. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেছেনঃ ঈমানদারদের মধ্যে সবচেয়ে কামিল ঈমানদার হলো যারা উত্তম আখলাকের অধিকারী। (আবু দাউদ ও দারেমী)
کتاب الاخلاق
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا » (رواه ابو داؤد والدارمى)
হাদীস নং: ১০৩
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মীযানে সবচেয়ে ভারী বস্তু হবে উত্তম আখলাক
১০৩. হযরত আবুদ্দারদা (রা) থেকে বর্ণিত, নবী ﷺ বলেছেন: কিয়ামতের দিন মু'মিন ব্যক্তির মীযানে (পাল্লায়) সবচেয়ে ভারী যে বস্তু রাখা হবে তা হল উত্তম আখলাক। (আবু দাউদ ও তিরমিযী)
کتاب الاخلاق
عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : « أَثْقَلُ شَيْءٍ فِي الْمِيزَانِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ خُلُقٌ حَسَنٌ » (رواه ابو داؤد والترمذى)
হাদীস নং: ১০৪
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মানুষকে আল্লাহর দানকৃত উত্তম জিনিস হল উত্তম আখলাক
১০৪. মুযায়না গোত্রের এক ব্যক্তি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাহাবায়ে কিরাম (রা) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! মানুষকে যা দান করা হয়েছে তার মধ্যে উত্তম জিনিস কোনটি? আল্লাহর রাসুল বললেনঃ উত্তম আখলাক। (বায়হাকী: শুয়াবুল ঈমান, বাগাবী: শরহুস সুন্নাহ।)
کتاب الاخلاق
عَنْ رَجُلٍ مِنْ مُزَيْنَةَ قَالَ قَالُوْا يَارَسُوْلَ اللهِ مَا خَيْرُ مَا اُعْطِىَ الْاِنْسَانُ؟ قَالَ : " الْخُلُقُ الْحَسَنُ " (رواه البيهقى فى شعب الايمان والبغوى فى شرح السنة عن اسامة بن شريك)
হাদীস নং: ১০৫
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ উত্তম আখলাকের অধিকারীর মর্যাদা
১০৫. হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল ﷺ-কে বলতে শুনেছিঃ ঈমানদার ব্যক্তি উত্তম আখলাকের দ্বারা রাতের ইবাদতকারী এবং দিনের বেলা রোযা পালনকারীর অনুরূপ মর্যাদা লাভ করে। (আবূ দাউদ)
کتاب الاخلاق
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : " إِنَّ الْمُؤْمِنَ يُدْرِكُ بِحُسْنِ خُلُقِهِ دَرَجَاتِ قَائِمِ اللَّيْلِ ، صَائِمِ النَّهَارِ " (رواه ابو داؤد)
হাদীস নং: ১০৬
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ হযরত মু'আয (রা)-এর প্রতি সর্বশেষ নসীহত
১০৬. হযরত মু'আয (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বাহনের রিকাবে আমার পা রাখার পর আল্লাহর রাসুল ﷺ আমাকে সর্বশেষ নসীহত করে বলেছিলেনঃ হে মু'আয, মানুষের প্রতি তোমার আখলাক সুন্দর করবে। (মুয়াত্তা ইমাম মালিক)
کتاب الاخلاق
عَنْ مُعَاذٍ قَالَ : كَانَ آخِرُ مَا وَصَّانِىْ بِهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ وَضَعْتُ رِجْلِي فِي الْغَرْزِ ، اَنْ قَالَ : يَامُعَاذُ " أَحْسِنْ خُلُقَكَ لِلنَّاسِ (رواه مالك)
হাদীস নং: ১০৭
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ উত্তম আখলাক পরিপূর্ণ করার জন্য আমি প্রেরিত
১০৭. ইমাম মালিক (রহ.) থেকে বর্ণিত, তাঁর কাছে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর বাণী পৌঁছেছে যে, তিনি বলেছেন: আখলাকের সৌন্দর্যকে নিখুঁত ও পরিপূর্ণ করার জন্য আমাকে পাঠান হয়েছে। (মুয়াত্তা)
کتاب الاخلاق
عَنْ مَالِكٍ بَلَغَهُ اَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " بُعِثْتُ لِأُتَمِّمَ حُسْنَ الْأَخْلَاقِ " (رواه فى المؤطا ورواه احمد عن ابى هريرة)
হাদীস নং: ১০৮
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ উত্তম আখলাকের অধিকারী আমার প্রিয়তম
১০৮. হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেছেন: তোমাদের মধ্যে যার আখলাক উত্তম সে আমার প্রিয়তম। (বুখারী)

এই হাদীসটি তিরমিযী শরীফের এক রিওয়ায়াতে হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে। সেখানে একটু বাড়িয়ে বলা হয়েছে: "তোমাদের মধ্যে যার আখলাক সুন্দরতম সে আমার প্রিয়তম এবং কিয়ামতের দিন তোমাদের চেয়ে তার আসন আমার নিকটতম থাকবে।"
کتاب الاخلاق
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنُ عَمْرٍوقَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ « إِنَّ مِنْ أَحَبِّكُمْ إِلَيَّ أَحْسَنَكُمْ أَخْلاَقًا » (رواه البخارى)
হাদীস নং: ১০৯
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ উত্তম আখলাকের জন্য রাসূল ﷺ-এর দু'আ
১০৯. হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: হে আমার আল্লাহ! আপনি আমার শিকল-সুরত সুন্দর করেছেন, আমার আখলাকও সুন্দর করুন। (মুসনাদে আহমদ)
کتاب الاخلاق
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : " اللهُمَّ أَحْسَنْتَ خَلْقِي ، فَأَحْسِنْ خُلُقِي " (رواه احمد)
হাদীস নং: ১১০
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মানুষের প্রতি রহমকারীকে আল্লাহ রহম করেন
১১০: হযরত জারীর ইবন আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল ﷺ বলেছেন: যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি সদয় নয়, আল্লাহও তার প্রতি সদয় নন। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الاخلاق
عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « لاَ يَرْحَمُ اللَّهُ مَنْ لاَ يَرْحَمُ النَّاسَ » (رواه البخارى)
হাদীস নং: ১১১
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ রহমকারীদের প্রতি সুখবর
১১১. হযরত আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেছেন: রহমকারীদের প্রতি পরম রহমশীল (আল্লাহ রহম করেন। তোমরা দুনিয়াবাসীর প্রতি রহম কর, আসমানে অবস্থানকারী তোমাদেরকে রহম করবেন। (আবু দাউদ ও তিরমিযী)
کتاب الاخلاق
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : الرَّاحِمُونَ يَرْحَمُهُمُ الرَّحْمَنُ ، ارْحَمُوا مَنْ فِي الأَرْضِ يَرْحَمْكُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ . (رواه ابو داؤد والترمذى)
হাদীস নং: ১১২
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ কুকুরকে পানি পান করানোয় আল্লাহর স্বীকৃতি
১১২. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেছেন: এক ব্যক্তি রাস্তা চলাকালে খুব পিপাসা বোধ করল। অতঃপর একটা কুয়া পেল, সে তাতে নামল এবং পানি পান করল। অতঃপর কুয়া থেকে বের হয়ে দেখল, একটা কুকুর তৃষ্ণায় জিহ্ববা বের করে রয়েছে এবং ভেজা মাটি চাটছে। লোকটি নিজে নিজে বলল, কুকুরটির সেরূপ পিপাসার যন্ত্রণা পেয়েছে, আমার যেরূপ পেয়েছিল। অতঃপর সে কুয়ায় নামল এবং মোজায় পানি ভরল। মুখের দ্বারা ধরে তা উপরে নিয়ে এল এবং কুকুরকে পানি পান করাল। আল্লাহ তার কাজের স্বীকৃতি দিলেন এবং তাকে মাফ করে দিলেন। সাহাবায়ে কিরাম (রা) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! জন্তু-জানোয়ারের ব্যাপারেও কি আমাদের জন্য সওয়াব রয়েছে? তিনি বললেন : হ্যাঁ প্রত্যেক জীবন্ত প্রাণীতে সওয়াব রয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الاخلاق
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " بَيْنَمَا رَجُلٌ يَمْشِي بِطَرِيقٍ ، اشْتَدَّ عَلَيْهِ العَطَشُ ، فَوَجَدَ بِئْرًا فَنَزَلَ فِيهَا ، فَشَرِبَ ثُمَّ خَرَجَ ، فَإِذَا كَلْبٌ يَلْهَثُ ، يَأْكُلُ الثَّرَى مِنَ العَطَشِ ، فَقَالَ الرَّجُلُ : لَقَدْ بَلَغَ هَذَا الكَلْبَ مِنَ العَطَشِ مِثْلُ الَّذِي كَانَ بَلَغَ بِي ، فَنَزَلَ البِئْرَ فَمَلَأَ خُفَّهُ ثُمَّ أَمْسَكَهُ بِفِيهِ ، فَسَقَى الكَلْبَ فَشَكَرَ اللَّهُ لَهُ فَغَفَرَ لَهُ " قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، وَإِنَّ لَنَا فِي البَهَائِمِ أَجْرًا؟ فَقَالَ : « نَعَمْ ، فِي كُلِّ ذَاتِ كَبِدٍ رَطْبَةٍ أَجْرٌ » (رواه البخارى ومسلم)
হাদীস নং: ১১৩
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ নবী করীম ﷺ-এর সংগে উটের আচরণ
১১৩. হযরত আবদুল্লাহ ইবন জাফর (রা) থেকে বর্ণিত, নবী ﷺ জনৈক আনসারের প্রাচীরের কাছে যান। সেখানে একটা উট ছিল। নবী ﷺ-কে দেখার পর উটটি করুণ আওয়াজ করল এবং তার চোখ থেকে পানি ফেলতে লাগল। নবী ﷺ নিকটে এসে তার শরীরে হাত বুলালেন। অতঃপর উটটি চুপ করল। নবী ﷺ জিজ্ঞেস করলেন, এ উটের মালিক কে? কার এ উট? এক আনসার যুবক এসে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এটা আমার। নবী ﷺ তাকে বললেন: এ জানোয়ারের ব্যাপারে কি তুমি আল্লাহকে ভয় কর না, যিনি তোমাকে তার মালিক বানিয়েছেন? উটটি আমার কাছে নালিশ করেছে তুমি তাকে অভুক্ত রাখ এবং তার কাছ থেকে কঠিন কাজ আদায় কর। আবু দাউদ
کتاب الاخلاق
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ جَعْفَرٍ ، قَالَ : دَخَلَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَائِطًا لِرَجُلٍ مِنْ الْأَنْصَارِ فَإِذَا فِيْهِ جَمَلٌ ، فَلَمَّا رَأَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَنَّ وَذَرَفَتْ عَيْنَاهُ ، فَأَتَاهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَمَسَحَ ذِفْرَاهُ فَسَكَتَ ، فَقَالَ : « مَنْ رَبُّ هَذَا الْجَمَلِ ، لِمَنْ هَذَا الْجَمَلُ؟ » ، فَجَاءَ فَتًى مِنَ الْأَنْصَارِ فَقَالَ : لِي يَا رَسُولَ اللَّهِ . فَقَالَ : « أَفَلَا تَتَّقِي اللَّهَ فِي هَذِهِ الْبَهِيمَةِ الَّتِي مَلَّكَكَ اللَّهُ إِيَّاهَا؟ ، فَإِنَّهُ شَكَا إِلَيَّ أَنَّكَ تُجِيعُهُ وَتُدْئِبُهُ » (رواه ابو داؤد)
হাদীস নং: ১১৪
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ কোন প্রাণীকে আগুনের শাস্তি দেয়া যাবে না
১১৪. হযরত আবদুর রহমান ইবন আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা এক সফরে আল্লাহর রাসুলের সাথে ছিলাম। তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজন পুরণ করতে গেলে আমরা দুটো বাচ্চাসহ একটা লাল পাখি দেখলাম। আমরা তার বাচ্চা দুটো ধরে ফেললাম। পাখিটি আসল এবং (আমাদের মাথার উপর) উড়তে লাগল। অতঃপর নবী ﷺ এসে বললেন: তার বাচ্চা ছিনিয়ে নিয়ে কে তাকে কষ্ট দিয়েছে? তার বাচ্চাকে তার কাছে ফিরিয়ে দাও।
তিনি আরো দেখলেন, পিঁপড়ার বাসস্থান যা আমরা জ্বালিয়ে দিয়েছি। তিনি বললেনঃ কে এটা জ্বালিয়ে দিয়েছে? বললাম, আমরা। তিনি বললেন: আগুনের মালিক ছাড়া আগুন দ্বারা কোন প্রাণীকে শাস্তি দান করা কারো উচিত নয়। (আবু দাউদ)
کتاب الاخلاق
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ ، عَنْ أَبِيهِ ، قَالَ : كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ ، فَانْطَلَقَ لِحَاجَتِهِ فَرَأَيْنَا حُمَّرَةً مَعَهَا فَرْخَانِ فَأَخَذْنَا فَرْخَيْهَا ، فَجَاءَتِ الْحُمَّرَةُ فَجَعَلَتْ تَفْرِشُ ، فَجَاءَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ : « مَنْ فَجَعَ هَذِهِ بِوَلَدِهَا؟ رُدُّوا وَلَدَهَا إِلَيْهَا » . وَرَأَى قَرْيَةَ نَمْلٍ قَدْ حَرَّقْنَاهَا فَقَالَ : « مَنْ حَرَّقَ هَذِهِ؟ » قُلْنَا : نَحْنُ . قَالَ : « إِنَّهُ لَا يَنْبَغِي أَنْ يُعَذِّبَ بِالنَّارِ إِلَّا رَبُّ النَّارِ » (رواه ابو داؤد)
হাদীস নং: ১১৫
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ বিড়াল বেঁধে রাখায় এক মহিলার শাস্তি
১১৫. হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল ﷺ বলেছেন: এক মহিলা এজন্য জাহান্নামে গেছে যে, সে একটা মাদী বিড়ালকে বেঁধে রেখেছিল। সে নিজে তাকে খাবার দেয়নি এবং যমীনের পোকা-মাকড় খাওয়ার জন্যও তাকে ছেড়ে দেয়নি। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الاخلاق
عَنِ عَبْدِ اللهِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، : « دَخَلَتِ امْرَأَةٌ النَّارَ فِي هِرَّةٍ رَبَطَتْهَا ، فَلَمْ تُطْعِمْهَا ، وَلَمْ تَدَعْهَا تَأْكُلُ مِنْ خَشَاشِ الأَرْضِ » (رواه البخارى ومسلم)
হাদীস নং: ১১৬
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ নির্দয় মানুষ দুর্ভাগ্যবান
১১৬. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) বর্ণিত, তিনি বলেন, সাদেক আল-মাসদুক আবুল কাসিম ﷺ-কে বলতে শুনেছিঃ দুর্ভাগ্যবান ব্যক্তি ছাড়া কারো অন্তর থেকে রহমত দূরীভূত হয় না। (মুসনাদে আহমদ ও তিরমিযী)
کتاب الاخلاق
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : سَمِعْتُ أَبَا الْقَاسِمِ الصَّادِقَ الْمَصْدُوقَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : " لَا تُنْزَعُ الرَّحْمَةُ إِلَّا مِنْ شَقِيٍّ " (رواه احمد والترمذى)
হাদীস নং: ১১৭
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ হৃদয়ের কঠোরতা দূরীকরণের উপায়
১১৭. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি তার নিজের হৃদয়ের কঠোরতা সম্পর্কে আল্লাহর নবী ﷺ-এর কাছে অভিযোগ করলে তিনি বললেন: ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলাও এবং মিসকীনদের খাবার দাও। (মুসনাদে আহমদ)
کتاب الاخلاق
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، أَنَّ رَجُلًا شَكَا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَسْوَةَ قَلْبِهِ ، فَقَالَ : " امْسَحْ رَأْسَ الْيَتِيمِ ، وَأَطْعِمِ الْمِسْكِينَ " (رواه احمد)
হাদীস নং: ১১৮
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ দান ও কৃপণতা: বখিল আবিদের চেয়ে মূর্খ দানশীলের মরতবা বেশি
১১৮. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেছেন: দানশীল ব্যক্তি আল্লাহর নিকটবর্তী, মানুষের নিকটবর্তী, জান্নাতের নিকটবর্তী এবং দোযখ থেকে দূরবর্তী। বখিল ব্যক্তি আল্লাহ থেকে দূরে, মানুষ থেকে দূরে, জান্নাত থেকে দূরে এবং দোযখের নিকটে। একজন বখিল আবিদের চেয়ে একজন মূর্খ দানশীল ব্যক্তি আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। (তিরমিযী)
کتاب الاخلاق
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « السَّخِيُّ قَرِيبٌ مِنَ اللَّهِ قَرِيبٌ مِنَ الجَنَّةِ قَرِيبٌ مِنَ النَّاسِ بَعِيدٌ مِنَ النَّارِ ، وَالبَخِيلُ بَعِيدٌ مِنَ اللَّهِ بَعِيدٌ مِنَ الجَنَّةِ بَعِيدٌ مِنَ النَّاسِ قَرِيبٌ مِنَ النَّارِ ، وَالْجَاهِلُ السَّخِيُّ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ عَابِدٍ بَخِيلٍ » (رواه الترمذى)
হাদীস নং: ১১৯
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ যে খরচ করে, আল্লাহ তার জন্য খরচ করেন।
১১৯. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন : আল্লাহ তা'আলা বলেন, খরচ কর, আল্লাহ তোমার জন্য খরচ করবেন। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الاخلاق
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " قَالَ اللَّهُ تَعَالَى : أَنْفِقْ أُنْفِقْ عَلَيْكَ . (رواه البخارى ومسلم)
হাদীস নং: ১২০
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহর রাসূল ﷺ কাউকে 'না' বলেননি
১২০. হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, এমন কখনো হয়নি যে, কোন জিনিস সম্পর্কে আল্লাহর রাসূলকে সওয়াল করা হয়েছে এবং তিনি 'না’ বলেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الاخلاق
عَنْ جَابِرٍ قَالَ : " مَا سُئِلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ شَيْءٍ قَطُّ فَقَالَ : لاَ" . (رواه البخارى ومسلم)