মা'আরিফুল হাদীস

আখলাক অধ্যায়

হাদীস নং: ১০১
আখলাক অধ্যায়
ইসলাম ধর্মে আখলাক ও নৈতিকতার স্থান

রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজের শিক্ষা ও আদর্শে ঈমানের পর যেসব বিষয়ের উপর সবিশেষ জোর দিয়েছেন এবং মানুষের সাফল্য ও সৌভাগ্যকে যেগুলোর উপর নির্ভরশীল বলে উল্লেখ করেছেন, এগুলোর মধ্যে একটি বিষয় এও যে, মানুষ যেন উন্নত চরিত্র অবলম্বন করে এবং মন্দ চরিত্র থেকে নিজেকে হেফাযত করে। রাসূলুল্লাহ ﷺকে এ পৃথিবীতে নবী হিসাবে প্রেরণ করার যে সকল উদ্দেশ্যের কথা কুরআন মজীদে উল্লেখ করা হয়েছে, এগুলোর মধ্যে একটি উদ্দেশ্য এও বলা হয়েছে যে, তিনি মানুষের পরিশুদ্ধির কাজ করবেন। আর এ পরিশুদ্ধির মধ্যে চরিত্র সংশোধনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, আমি চরিত্র সংশোধনের জন্য প্রেরিত হয়েছি। অর্থাৎ, চরিত্র সংশোধনের কাজটি আমার প্রেরিত হওয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য ও আমার কর্মসূচীর বিশেষ অংশ। আর এটাই হওয়া উচিত ছিল। কেননা, মানুষের জীবন ও এর ফলাফল লাভে চরিত্র ও নৈতিকতার বিরাট গুরুত্ব রয়েছে। মানুষের চরিত্র যদি সুন্দর হয়, তাহলে তার নিজের জীবনও আন্তরিক প্রশান্তি ও আনন্দের সাথে কেটে যাবে এবং অন্যদের জন্যও তার জীবন রহমত ও স্বস্তির কারণ হবে। পক্ষান্তরে কোন মানুষের চরিত্র যদি মন্দ হয়, তাহলে সে নিজেও জীবনের স্বাদ ও আনন্দ থেকে বঞ্চিত থাকবে, আর যাদের সাথে তার সংশ্লিষ্টতা ও সম্পর্ক থাকবে, তাদের জীবনও বিস্বাদ ও তিক্ত হয়ে যাবে। এগুলো তো হল সচ্চরিত্রতা ও দুশ্চরিত্রতার নগদ ও পার্থিব ফলাফল, যা আমরা প্রতিদিন প্রত্যক্ষ করে যাচ্ছি। কিন্তু মরণের পর যে জীবন আসবে, সে জীবনে এ দু'টির ফলাফল এর চেয়ে অনেক গুণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ধরা পড়বে। আখেরাতের জীবনে উত্তম চরিত্রের ফল হবে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের সন্তোষ ও জান্নাত, আর মন্দ চরিত্রের ফল হবে আল্লাহ্ তা'আলার ক্রোধ ও জাহান্নামের আগুন। আল্লাহ্ আমাদেরকে হেফাযত করুন।
চরিত্র সংশোধন সম্পর্কীয় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যেসব বাণী হাদীসের কিতাবসমূহে সংরক্ষিত রয়েছে, সেগুলো দুই প্রকারঃ (১) ঐসব হাদীস, যেগুলোতে তিনি মৌলিকভাবে সচ্চরিত্রতার উপর জোর দিয়েছেন এবং এর গুরুত্ব, মর্যাদা ও এর অসাধারণ পরকালীন সওয়াবের কথা ঘোষণা করেছেন। (২) ঐসব হাদীস, যেগুলোতে তিনি বিশেষ বিশেষ উত্তম চরিত্র অবলম্বন করার অথবা অনুরূপভাবে বিশেষ বিশেষ মন্দ চরিত্র থেকে বেঁচে থাকার তাকীদ করেছেন। প্রথমে আমরা হুযুর ﷺ এর প্রথম প্রকারের কিছু বাণী এখানে লিপিবদ্ধ করব।

উত্তম আখলাকের অধিকারী উৎকৃষ্ট
১০১. হযরত আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেছেন: তোমাদের মধ্যে তারা উৎকৃষ্ট যারা উত্তম আখলাক বা চরিত্রের অধিকারী। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الاخلاق
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « إِنَّ مِنْ خِيَارِكُمْ أَحَاسِنَكُمْ أَخْلَاقًا » (رواه البخارى ومسلم)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

যারা উত্তম আখলাকের অধিকারী তারা মানুষের মধ্যে উত্তম। উত্তম আখলাকের মূল ভিত্তি হল আল্লাহর ভয়। যে আল্লাহকে ভয় করে জীবনের কর্মব্যবস্থা রচনা করে এবং তার উপর আমল করে, সে উত্তম মানুষ। আল্লাহ-ভীরু উত্তম মানুষ আল্লাহর নিকট সম্মানিত। যে আল্লাহর নিকট সম্মানিত, সে দুনিয়া ও আখিরাতে কামিয়াব।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান