মা'আরিফুল হাদীস

معارف الحديث

আখলাক অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস ১৩৯ টি

হাদীস নং: ১৫১
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ঈর্ষা ও ঘৃণা হামাগুড়ি দিয়ে আসছে
১৫১. হযরত যুবায়র (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেছেনঃ তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিসমূহের মুন্ডনকারী রোগ-ঈর্ষা ও ঘৃণা তোমাদের দিকে হামাগুড়ি দিয়ে আসছে। আমি চুল মুন্ডনের কথা বলছি না, বরং তা হলো দীনের মুন্ডনকারী। (মুসনাদে আহমদ ও তিরমিযী)
کتاب الاخلاق
عَنِ الزُّبَيْر قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " دَبَّ إِلَيْكُمْ دَاءُ الْأُمَمِ قَبْلَكُمْ : الْحَسَدُ ، وَالْبَغْضَاءُ ، وَالْبَغْضَاءُ هِيَ : الْحَالِقَةُ ، لَا أَقُولُ تَحْلِقُ الشَّعْرَ ، وَلَكِنْ تَحْلِقُ الدِّينَ ، (رواه احمد والترمذى)
হাদীস নং: ১৬৫
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ রাগান্বিত হলে উযূ কর
১৬৫. হযরত আতিয়া ইবন উরওয়া সা'দী (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: ক্রোধ শয়তান থেকে সৃষ্ট, শয়তান আগুনের দ্বারা সৃষ্ট এবং আগুন পানির দ্বারা নির্বাপিত করা হয়। তাই তোমাদের মধ্যে কেউ রাগান্বিত হলে সে যেন উযূ করে। (আবূ দাউদ)
کتاب الاخلاق
عَنْ عَطِيَّةَ بْنِ عُرْوَةَ السَّعْدِىِّ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « إِنَّ الْغَضَبَ مِنَ الشَّيْطَانِ ، وَإِنَّ الشَّيْطَانَ خُلِقَ مِنَ النَّارِ ، وَإِنَّمَا تُطْفَأُ النَّارُ بِالْمَاءِ ، فَإِذَا غَضِبَ أَحَدُكُمْ فَلْيَتَوَضَّأْ » (رواه ابو داؤد)
হাদীস নং: ১৬৬
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহর কাছে সর্বোৎকৃষ্ট পানীয়
১৬৬. হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেছেন: আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য যে রাগ পান (হজম) করা হয়, মহাসম্মান ও জালালের অধিকারী আল্লাহর কাছে তার চেয়ে উত্তম কোন পানীয় নেই যা বান্দা পান করে। (মুসনাদে আহমদ)
کتاب الاخلاق
عَنِ عَبْدِاللهِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " مَا تَجَرَّعَ عَبْدٌ أَفْضَلَ عِنْدَ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ جُرْعَةِ غَيْظٍ ، يَكْظِمُهَا ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللهِ تَعَالَى " (رواه احمد)
হাদীস নং: ১৬৭
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ক্রোধ দমনকারীর জন্য বেহেশতী হর
১৬৭. হযরত সাহল ইবন মু'আয (র) তাঁর পিতা মু'আয (রা) থেকে বর্ণনা করেন, নবী ﷺ বলেছেন: কোনরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করার শক্তি থাকা সত্ত্বেও যে ক্রোধ পান করে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে তামাম মাখলুকের আহ্বান করবেন এবং জান্নাতের হূরদের মধ্য থেকে যে কোন হূর পসন্দ করার অধিকার দিবেন।(তিরমিযী ও আবু দাউদ)
کتاب الاخلاق
عَنْ سَهْلِ بْنِ مُعَاذٍ ، عَنْ أَبِيهِ ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : « مَنْ كَظَمَ غَيْظًا وَهُوَ يَقْدِرُ عَلَى أَنْ يُنْفِذَهُ ، دَعَاهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى رُءُوسِ الْخَلَائِقِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُخَيِّرَهُ اللَّهُ مِنَ الْحُورِ الْعِينِ مَا شَاءَ » (رواه الترمذى وابو داؤد)
হাদীস নং: ১৬৮
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ যার ওযর আল্লাহ কবুল করেন
১৬৮. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: যে তার জিহবার হিফাযত করে, আল্লাহ তার ত্রুটি আবৃত রাখবেন, যে নিজের রাগ দমন করে, আল্লাহ তার উপর থেকে আযাব দূর করবেন এবং যে আল্লাহর কাছে ত্রুটির মার্জনা চাইবে, আল্লাহ তার ওযর কবুল করবেন। (বায়হাকীঃ শুয়াবুল ঈমান)
کتاب الاخلاق
عَنْ أَنَسِ ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " مَنْ خَزَنَ لِسَانَهُ سَتَرَ اللهُ عَوْرَتَهُ ، وَمَنْ كَفَّ غَضَبِهِ كَفَّ اللهُ عَنْهُ عَذَابَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، وَمَنِ اعْتَذَرَ إِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ قَبِلَ عُذْرَهُ " (رواه البيهقى فى شعب الايمان)
হাদীস নং: ১৬৯
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ধৈর্য ও ধীর-স্থিরতা: ধৈর্য ও ধীর-স্থিরতা আল্লাহর পসন্দ করেন
১৬৯. হযরত আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী ﷺ আবদুল কায়স গোত্রের সরদার আসাজ্জকে বলেছেন: তোমার দুটো অভ্যাস-হিলম এবং আনাহ বা ধৈর্য ও ধীর-স্থিরতা আল্লাহ পসন্দ করেন। (মুসলিম)
کتاب الاخلاق
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لأَشَجِّ عَبْدِ القَيْسِ : إِنَّ فِيكَ خَصْلَتَيْنِ يُحِبُّهُمُ اللَّهُ : الحِلْمُ ، وَالأَنَاةُ . (رواه مسلم)
হাদীস নং: ১৭০
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ধীর-স্থিরতা আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং তাড়াহুড়ো শয়তানের প্রভাব
১৭০. হযরত সাহল ইবন সা'আদ সায়িদী (রা) থেকে বর্ণিত, নবী ﷺ বলেছেন: ধীর-স্থিরতা আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং তাড়াহুড়ো শয়তানের তরফ থেকে। (তিরমিযী)
کتاب الاخلاق
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيُّ ، اَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : الأَنَاةُ مِنَ اللهِ وَالعَجَلَةُ مِنَ الشَّيْطَانِ . (رواه الترمذى)
হাদীস নং: ১৭১
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ যা নবুওয়তের এক-চব্বিশাংশ
১৭১. হযরত আবদুল্লাহ ইবন সারজিস (রা) থেকে বর্ণিত, নবী ﷺ বলেছেন: উত্তম আচরণ, ধীর-স্থির স্বভাব এবং মধ্যম পন্থা নবুওয়তের চব্বিশ ভাগের এক ভাগ। (তিরমিযী)
کتاب الاخلاق
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ سَرْجِسَ الْمُزَنِيِّ ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : السَّمْتُ الحَسَنُ ، وَالتُّؤَدَةُ وَالاِقْتِصَادُ جُزْءٌ مِنْ أَرْبَعَةٍ وَعِشْرِينَ جُزْءًا مِنَ النُّبُوَّةِ . (رواه الترمذى)
হাদীস নং: ১৭২
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মিষ্ট কথা ও কটূ কথা

মানুষের নৈতিক জীবনের যেসব দিক দিয়ে তার সমজাতির সাথে সর্বাধিক পালা পড়ে এবং যেগুলোর প্রভাব ও ফলাফল খুবই সুদূরপ্রসারী হয়ে থাকে, এগুলোর মধ্যে তার ভাষার মিষ্টতা ও তিক্ততা এবং বাক্যালাপে নম্রতা ও কঠোরতা অন্যতম। এ জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর অনুসারী ও ভক্তদেরকে মিষ্টি কথা ও মধুর ভাষা ব্যবহার করতে খুব তাকীদ করতেন এবং খারাপ ও কঠোর ভাষা প্রয়োগ করতে নিষেধ করতেন। এমনকি মন্দ কথার উত্তরেও মন্দ কথা বলতে তিনি পছন্দ করতেন না। নিম্নে এ সংক্রান্ত কয়েকটি হাদীস পাঠ করে নিন।

কয়েকজন ইয়াহুদীর সাথে নবীজীর ব্যবহার
১৭২. হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, কয়েকজন ইয়াহূদী নবী করীম ﷺ-এর নিকট আসল। তারা বলল: 'আসসামু আলাইকুম'। হযরত আয়েশা (রা) জবাব দিলেন: তোমাদের উপর তা বর্ষিত হোক, তোমাদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত, তোমাদের উপর আল্লাহর ক্রোধ। নবী ﷺ বললেনঃ হে আয়েশাঃ বিরত হও, তোমার উচিত বিনম্রতা অবলম্বন করা এবং কর্কশ ও মন্দ বাক্য থেকে সাবধান থাকা। (বুখারী)
کتاب الاخلاق
عَنْ عَائِشَةَ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا : أَنَّ يَهُودَ أَتَوُا النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالُوا : السَّامُ عَلَيْكُمْ ، فَقَالَتْ عَائِشَةُ : عَلَيْكُمْ ، وَلَعَنَكُمُ اللَّهُ ، وَغَضِبَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ . قَالَ : « مَهْلًا يَا عَائِشَةُ ، عَلَيْكِ بِالرِّفْقِ ، وَإِيَّاكِ وَالعُنْفَ وَالفُحْشَ » (رواه البخارى)
হাদীস নং: ১৭৩
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মু'মিনের বৈশিষ্ট্য
১৭৩. হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: মু'মিন কথায় আক্রমণকারী, অভিসম্পাতকারী, মন্দ বাক্য ব্যবহারকারী এবং গালি প্রদানকারী নয়। (তিরমিধী)
کتاب الاخلاق
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " لَيْسَ الْمُؤْمِنُ بِطَعَّانٍ ، وَلَا لَعَّانٍ ، وَلَا فَاحِشٍ وَلَا بَذِىٍ " (رواه الترمذى)
হাদীস নং: ১৭৪
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে নিকৃষ্ট ব্যক্তি
১৭৪. হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী ﷺ-এর সাথে মুলাকাত করার অনুমতি প্রার্থনা করে। নবী করীম ﷺ বললেন: লোকটি তার গোত্রের মন্দ সন্তান বা গোত্রের মন্দ ব্যক্তি। অতঃপর বললেন: তাকে আসতে দাও। যখন সে আসল, নবী করীম ﷺ তার সাথে খুব বিনম্রভাবে আলাপ করলেন। লোকটি (চলে যাওয়ার পর) হযরত আয়েশা (রা) বললেন: আপনি তার সাথে খুব নরমভাবে কথাবার্তা বললেন। অথচ তার সম্পর্কে আপনি বলেছিলেন (সে তার গোত্রের মন্দ ব্যক্তি)! নবী ﷺ বললেন: কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে নিকৃষ্টতম ব্যক্তি সে হবে যাকে মানুষ তার কঠোর ও মন্দ কথার ভয়ে পরিত্যাগ করে। (বুখারী, মুসলিম ও আবূ দাউদ; বাক্য আবূ দাউদের)
کتاب الاخلاق
عَنِ عَائِشَةَ قَالَتْ اسْتَأْذَنَ رَجُلٌ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ : « بِئْسَ ابْنُ العَشِيرَةِ - أَوْ بِئْسَ رَجُلُ العَشِيرَةِ » قَالَ : ائْذَنُوا لَهُ ، فَلَمَّا دَخَلَ أَلاَنَ لَهُ القَوْلَ ، فَقَالَتْ عَائِشَةَ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَلَنْتَ لَهُ القَوْلَ؟ وَقَدْ قُلْتَ لَهُ مَا قُلْتَ قَالَ « إِنَّ شَرَّ النَّاسِ مَنْزِلَةً عِنْدَ اللَّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ وَدَعَهُ أَوْ تَرَكَهُ النَّاسُ لِاِتِّقَاءَ فُحْشِهِ » (رواه البخارى ومسلم وابو داؤد واللفظ له)
হাদীস নং: ১৭৫
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ উত্তম কথাবার্তা এক প্রকার সদকা
১৭৫. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী করীম ﷺ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি ﷺ বলেছেন: উত্তম কথাবার্তা এক প্রকার সদকা। (বুখারী)
کتاب الاخلاق
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « الكَلِمَةُ الطَّيِّبَةُ صَدَقَةٌ . (رواه البخارى)
হাদীস নং: ১৭৬
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ কথা কম বলা এবং খারাপ ও অহেতুক কথা থেকে রসনার হেফাযত করা

দুনিয়াতে যেসব ঝগড়া-বিবাদ ও গন্ডগোল হয়ে থাকে, এগুলোর অধিকাংশই অসংযত কথা-বার্তার কারণে হয়ে থাকে, তাছাড়া মানুষের পক্ষ থেকে যেসব বড় বড় গুনাহ্ প্রকাশ পায়, এগুলোর সম্পর্কও অধিকাংশ ক্ষেত্রে রসনার সাথেই থাকে। এ জন্যই রাসূলুল্লাহ ﷺ এ বিষয়টির প্রতি সবিশেষ তাকীদ করতেন যে, রসনাকে যেন নিয়ন্ত্রণে রাখা হয় এবং সর্বপ্রকার মন্দ কথা; বরং অপ্রয়োজনীয় এবং অর্থহীন কথা থেকেও যেন রসনাকে বিরত রাখা হয়। কথা বলার যখন বিশেষ কোন প্রয়োজন দেখা না দেয় এবং এ কথার দ্বারা কোন কল্যাণ ও লাভের আশা না থাকে, তখন যেন নীরবতাই অবলম্বন করা হয়। এ শিক্ষাটি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ঐসব গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত, যেগুলোর উপর মানুষের কল্যাণ ও মুক্তি নির্ভরশীল। কোন কোন হাদীস থেকে জানা যায় যে, নামায, রোযা, হজ্জ এবং জেহাদের মত এবাদতসমূহের দীপ্তি ও সাদর গ্রহণযোগ্যতাও রসনার এ সতর্ক ব্যবহারের উপর নির্ভর করে।
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কিছু হাদীস "কিতাবুর রিকাকে” ইতঃপূর্বেই এসে গিয়েছে। নিম্নে আরো কিছু হাদীস উল্লেখ করা হচ্ছে:

কল্যাণের দরজার খবর লও
১৭৬. মু'আয (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল ﷺ আমাকে এমন এক আমল বলুন যা আমাকে জান্নাতে দাখিল করবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। নবী আকরাম ﷺ বললেন: তুমি বিরাট প্রশ্ন করেছ; কিন্তু যার জন্য আল্লাহ তা সহজ করে দেবেন, তা তার জন্য সহজ হবে। আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না, নামায কায়েম কর, যাকাত দান কর, রমযানের রোযা রাখ, কাবা শরীফের হজ্জ কর। অতঃপর তিনি বললেন: আমি কি তোমাকে কল্যাণের দরজার খবর, দিব না? রোযা ঢালস্বরূপ, সদকা পাপকে নির্বাপিত করে যেমনভাবে পানি আগুন নির্বাপিত করে এবং বান্দার মধ্যরাতের নামাযও। অতঃপর নবী আকরাম ﷺ তিলাওয়াত করলেন।
تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَطَمَعًا وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
-"তাদের পিঠ বিছানা থেকে পৃথক থাকে। তারা তাদের রব্বকে আশা ও ভীতির সাথে আহ্বান করে এবং যে রিযক আমরা তাদেরকে দিয়েছি তা থেকে তারা খরচ করে। তাদের আমলের প্রতিদান হিসেবে তাদের জন্য চোখ শীতলকারী যা কিছু লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তা কোন প্রাণীর জানা নেই।"

অতঃপর নবী করীম ﷺ বললেন: আমি কি তোমাকে বিষয়টির প্রধান অংশ, তার স্তম্ভ এবং তার বুলন্দ চূড়া সম্পর্কে বলব না? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল ﷺ! অবশ্যই। নবী ﷺ বললেন: প্রধান বিষয়টি হল ইসলাম, তার স্তম্ভ নামায এবং তার বুলন্দ শীর্ষ জিহাদ। অতঃপর তিনি বললেন: আমি কি তোমাকে এসবের প্রত্যেকটি কিসের উপর নির্ভর করে, তা বলব না? আমি বললামঃ হে আল্লাহর নবী ﷺ! অবশ্যই। তিনি তাঁর জিহবাকে ধরলেন এবং বললেন: তা সংযত রাখা তোমার কর্তব্য। আমি বললাম, আমরা যেসব কথাবার্তা বলি তার জন্য কি আমাদের হিসাব নেয়া হবে? নবী করীম ﷺ বললেনঃ হে মু'আয। তোমার মা তোমার জন্য ক্রন্দন করুক (মহব্বত প্রকাশের জন্য বলা হয়), মানুষের জিহ্বার ফসলই মানুষকে অধোমুখে কিংবা তাদের নাকের উপর করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। (আহমদ, তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ)
کتاب الاخلاق
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ ، قَالَ : قُلْتُ يَارَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخْبِرْنِي بِعَمَلٍ يُدْخِلُنِي الْجَنَّةَ ، وَيُبَاعِدُنِي مِنَ النَّارِ ، قَالَ : « لَقَدْ سَأَلْتَ عَنْ اَمْرٍ عَظِيمٍ ، وَإِنَّهُ لَيَسِيرٌ عَلَى مَنْ يَسَّرَهُ اللَّهُ عَلَيْهِ ، تَعْبُدُ اللَّهَ وَلَا تُشْرِكْ بِهِ شَيْئًا ، وَتُقِيمُ الصَّلَاةَ ، وَتُؤْتِي الزَّكَاةَ ، وَتَصُومُ رَمَضَانَ ، وَتَحُجَّ الْبَيْتَ » ثُمَّ قَالَ : " أَلَا أَدُلُّكَ عَلَى أَبْوَابِ الْخَيْرِ؟ الصَّوْمُ جُنَّةٌ ، وَالصَّدَقَةُ تُطْفِئُ الْخَطِيئَةَ كَمَا يُطْفِئُ الْمَاءُ النَّارَ ، وَصَلَاةُ الرَّجُلِ فِىْ جَوْفِ اللَّيْلِ ، ثُمَّ تَلَا {تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ} حَتَّى بَلَغَ {يَعْمَلُونَ} " ثُمَّ قَالَ : « أَلَا أَدُلُّكَ بِرَأْسِ الْأَمْرِ ، وَعَمُودِهِ ، وَذُرْوَةِ سَنَامِهِ؟ قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : رَأْسُ الأَمْرِ الإِسْلاَمُ ، وَعَمُودُهُ الصَّلاَةُ ، وَذِرْوَةُ سَنَامِهِ الْجِهَادُ » ثُمَّ قَالَ : « أَلَا أُخْبِرُكَ بِمِلَاكِ ذَلِكَ كُلِّهِ؟ » قُلْتُ : بَلَى يَا نَبِيَّ اللهِ ، فَأَخَذَ بِلِسَانِهِ ، فَقَالَ : « كُفَّ عَلَيْكَ هَذَا » فَقُلْتُ : يَا نَبِيَّ اللهِ وَإِنَّا لَمُؤَاخَذُونَ بِمَا نَتَكَلَّمُ بِهِ؟ قَالَ : « ثَكِلَتْكَ أُمُّكَ يَا مُعَاذُ وَهَلْ يَكُبُّ النَّاسَ فِي النَّارِ عَلَى وُجُوهِهِمْ أَوْ عَلَى مَنَاخِرِهِمْ إِلاَّ حَصَائِدُ أَلْسِنَتِهِمْ؟ » (رواه احمد والترمذى وابن ماجه)
হাদীস নং: ১৭৭
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ভোরবেলা জিহ্বার প্রতি শরীরের আবেদন
১৭৭. হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী ﷺ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি ﷺ বলেছেন: আদম সন্তান ভোরবেলা যখন ঘুম থেকে উঠে, তখন শরীরের প্রত্যেক অঙ্গ বিনীতভাবে জিহ্বাকে বলে, আমাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। আমরা তোমার সাথে রয়েছি। তুমি দৃঢ় থাকলে আমরাও দৃঢ়পদ থাকব এবং তুমি বিপথে পরিচালিত হলে আমরাও বিপথে পরিচালিত হব। (তিরমিযী)
کتاب الاخلاق
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ ، رَفَعَهُ قَالَ : إِذَا أَصْبَحَ ابْنُ آدَمَ فَإِنَّ الأَعْضَاءَ كُلَّهَا تُكَفِّرُ اللِّسَانَ فَتَقُولُ : اتَّقِ اللَّهَ فِينَا فَإِنَّا نَحْنُ بِكَ ، فَإِنْ اسْتَقَمْتَ اسْتَقَمْنَا وَإِنْ اعْوَجَجْتَ اعْوَجَجْنَا . (رواه الترمذى)
হাদীস নং: ১৭৮
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ দু'টি জিনিসের বিনিময়ে জান্নাতের নিশ্চয়তা
১৭৮. হযরত সাহল ইবন সা'আদ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেছেন: যে আমাকে তার জিহবা এবং লজ্জাস্থানের নিরাপত্তা দান করবে, আমি তাকে জান্নাতের নিরাপত্তা দান করব। (বুখারী)
کتاب الاخلاق
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « مَنْ يَضْمَنْ لِي مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الجَنَّةَ » (رواه البخارى)
হাদীস নং: ১৭৯
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সবচেয়ে মারাত্মক ভয়ের বস্তু
১৭৯. হযরত সুফিয়ান ইবন আবদুল্লাহ সাকাফী (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল ﷺ! আমার ব্যাপারে আপনি যা ভয় করেন তাতে সবচেয়ে মারাত্মক কোনটি? সুফিয়ান (রা) বলেন, নবী ﷺ তাঁর নিজের জিহ্বা ধরলেন এবং বললেন: 'এটা'। (তিরমিযী)
کتاب الاخلاق
عَنْ سُفْيَانَ بْنِ عَبْدِ اللهِ الثَّقَفِيِّ ، قَالَ : قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ مَا أَخْوَفُ مَا تَخَافُ عَلَيَّ ، فَأَخَذَ بِلِسَانِ نَفْسِهِ ، ثُمَّ قَالَ : هَذَا . (رواه الترمذى)
হাদীস নং: ১৮০
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ চুপ থাকলে বাঁচবে
১৮০. হযরত আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন 'আস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন: যে চুপ থেকেছে সে নিজেকে বাঁচিয়েছে। (মুসনাদে আহমদ, তিরমিযী, দারিমী ও বায়হাকী: শুয়াবুল ঈমান)
کتاب الاخلاق
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " مَنْ صَمَتَ نَجَا " (رواه احمد والدارمى والبيهقى فى شعب الايمان)
হাদীস নং: ১৮১
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ নাজাত কি
১৮১. হযরত উকবা ইবন আমের (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ-এর সাথে মুলাকাত করলাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম, নাজাত কি? তিনি বললেন, তোমার জিহবাকে নিয়ন্ত্রণ কর, তোমার জন্য তোমার গৃহ যেন প্রশস্ত থাকে এবং নিজের গুনাহের জন্য ক্রন্দন কর। (মুসনাদে আহমদ ও তিরমিযী)
کتاب الاخلاق
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ ، قَالَ : لَقِيتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَقُلْتُ : مَا النَّجَاةُ؟ قَالَ : امْلِكْ عَلَيْكَ لِسَانَكَ ، وَلْيَسَعْكَ بَيْتُكَ ، وَابْكِ عَلَى خَطِيئَتِكَ . (رواه احمد والترمذى)
হাদীস নং: ১৮২
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ দীর্ঘ নীরবতা ও উত্তম আচরণ দুনিয়াতে হালকা, আখিরাতে ভারী
১৮২. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি ﷺ বললেনঃ হে আবু যর! আমি কি তোমাকে এমন দুটো অভ্যাস বলব না যা দুনিয়ার বুকে হালকা এবং আখিরাতের মীযানে ভারী? আবু যর বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! অবশ্যই বলুন। নবী ﷺ বললেন: দীর্ঘ নীরবতা ও উত্তম আচরণ। যার হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ! মাখলূকের আমলের মধ্যে এ দুটো আমল বে-মিসাল বা অতুলনীয়। (বায়হাকীঃ শুয়াবুল ঈমান)
کتاب الاخلاق
عَنْ أَنَسٍ ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : " يَا أَبَا ذَرٍّ ، أَلَا أَدُلُّكَ عَلَى خَصْلَتَيْنِ هُمَا أَخَفُّ عَلَى الظَّهْرِ ، وَأَثْقَلُ فِي الْمِيزَانِ؟ " قُلْتُ : بَلَى ، قَالَ : " طُولُ الصَّمْتِ ، وَحُسْنُ الْخُلُقِ ، فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ مَا عَمِلَ الْخَلَائِقُ بِمِثْلِهِمَا " (رواه البيهقى فى شعب الايمان)
হাদীস নং: ১৮৩
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মন্দ সাথীর চেয়ে একাকিত্ব এবং একাকিত্ব থেকে ভাল সাথী উত্তম
১৮৩. হযরত ইমরান ইবন হিত্তান (রা) বলেন, আমি আবু যর (রা)-এর খিদমতে হাযির হলাম এবং তাঁকে কাল চাদর আবৃত অবস্থায় মসজিদে একাকী পেলাম। আমি তাঁকে বললাম, হে আবু যর! কেন এ একাকী? তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি, মন্দ সাথীর সাথে থাকার চেয়ে একাকিত্ব উত্তম, এবং ভাল সাথীর সঙ্গে বসা একাকিত্ব থেকে উত্তম, উত্তম বচন নীরবতা থেকে উত্তম এবং নীরবতা মন্দ বচন থেকে উত্তম। (বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান)
کتاب الاخلاق
عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حِطَّانَ قَالَ : لَقِيتُ أَبَا ذَرٍّ فَوَجَدْتُهُ فِي الْمَسْجِدِ مُخْتَبِئًا بِكِسَاءٍ أَسْوَدَ وَحْدَهُ ، فَقَالَ : يَا أَبَا ذَرٍّ ، مَا هَذِهِ الْوَحْدَةُ؟ فَقَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : " الْوَحْدَةُ خَيْرٌ مِنْ جَلِيسِ السَّوْءِ ، وَالْجَلِيسُ الصَّالِحُ خَيْرٌ مِنَ الْوَحْدَةِ ، وَإِمْلَاءُ الْخَيْرِ خَيْرٌ مِنَ السُّكُوتِ ، وَالسُّكُوتُ خَيْرٌ مِنْ إِمْلَاءِ الشَّرِّ " (رواه البيهقى فى شعب الايمان)