মা'আরিফুল হাদীস

আখলাক অধ্যায়

হাদীস নং: ১৭৪
আখলাক অধ্যায়
কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে নিকৃষ্ট ব্যক্তি
১৭৪. হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী ﷺ-এর সাথে মুলাকাত করার অনুমতি প্রার্থনা করে। নবী করীম ﷺ বললেন: লোকটি তার গোত্রের মন্দ সন্তান বা গোত্রের মন্দ ব্যক্তি। অতঃপর বললেন: তাকে আসতে দাও। যখন সে আসল, নবী করীম ﷺ তার সাথে খুব বিনম্রভাবে আলাপ করলেন। লোকটি (চলে যাওয়ার পর) হযরত আয়েশা (রা) বললেন: আপনি তার সাথে খুব নরমভাবে কথাবার্তা বললেন। অথচ তার সম্পর্কে আপনি বলেছিলেন (সে তার গোত্রের মন্দ ব্যক্তি)! নবী ﷺ বললেন: কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে নিকৃষ্টতম ব্যক্তি সে হবে যাকে মানুষ তার কঠোর ও মন্দ কথার ভয়ে পরিত্যাগ করে। (বুখারী, মুসলিম ও আবূ দাউদ; বাক্য আবূ দাউদের)
کتاب الاخلاق
عَنِ عَائِشَةَ قَالَتْ اسْتَأْذَنَ رَجُلٌ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ : « بِئْسَ ابْنُ العَشِيرَةِ - أَوْ بِئْسَ رَجُلُ العَشِيرَةِ » قَالَ : ائْذَنُوا لَهُ ، فَلَمَّا دَخَلَ أَلاَنَ لَهُ القَوْلَ ، فَقَالَتْ عَائِشَةَ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَلَنْتَ لَهُ القَوْلَ؟ وَقَدْ قُلْتَ لَهُ مَا قُلْتَ قَالَ « إِنَّ شَرَّ النَّاسِ مَنْزِلَةً عِنْدَ اللَّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ وَدَعَهُ أَوْ تَرَكَهُ النَّاسُ لِاِتِّقَاءَ فُحْشِهِ » (رواه البخارى ومسلم وابو داؤد واللفظ له)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এখানে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর উত্তরের সারমর্ম এই যে, কোন মানুষ যদি মন্দ ও দুষ্টও হয়, তবুও তার সাথে কথা নম্রতা ও ভদ্রতার সাথেই বলতে হবে। অন্যথায় মন্দভাষা ও কটুকথার প্রতিক্রিয়া এই হয় যে, এমন ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত করতে ও কথা বলতে মানুষ পলায়নপর হয়ে যায়। আর যে ব্যক্তির অবস্থা এই হয়, সে আল্লাহর নিকট খুবই মন্দ এবং কেয়ামতের দিন তার অবস্থা হবে খুবই খারাপ। এ হাদীসটি সম্পর্কে কয়েকটি কথা বুঝে নেওয়া উচিতঃ-
(১) রাসূলুল্লাহ ﷺ এ ব্যক্তির আগমনের পূর্বেই উপস্থিত লোকদেরকে তার মন্দ হওয়ার অবগতি সম্ভবতঃ এজন্য দিয়েছিলেন, যাতে তারা তার সামনে সতর্ক হয়ে কথা বলে এবং এমন কোন কথা যেন না বলে ফেলে, যা কোন দুষ্ট ও খারাপ মানুষের সামনে বলা যায় না। এমন কোন পরিণামদর্শিতার কারণে কারো কোন দোষের ব্যাপারে অন্যদেরকে সতর্ক করা গীবত ও পরনিন্দার মধ্যে গণ্য নয়; বরং এমন করার নির্দেশ রয়েছে। যেমন, এক হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: পাপাচারী ও খারাপ মানুষের মধ্যে যে দোষ থাকে, তা লোকদেরকে বলে দাও, যাতে আল্লাহর বান্দারা তার অনিষ্ট থেকে বাঁচতে পারে। কানযুল উম্মাল
(২) এ হাদীস থেকে একথাও জানা গেল যে, কোন ব্যক্তি মন্দ ও দুষ্ট হলেও তার সাথে নরমভাবেই কথা বলতে হবে। এ ঘটনা সম্পর্কেই বুখারী শরীফের এক বর্ণনায় এ শব্দমালা এসেছে: রাসূলুল্লাহ ﷺ লোকটির সাথে হাসিমুখে সাক্ষাত করলেন ও কথাবার্তা বললেন। এর দ্বারা বুঝা গেল যে, যারা এ ধারণা পোষণ করে যে, পাপাচারী ও মন্দ স্বভাবের লোকদের সাথে ভালভাবে সাক্ষাত করাও উচিত নয়, এ ধারণা ঠিক নয়।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আবুদ্দারদা (রা) থেকে ইমাম বুখারী উদ্ধৃত করেছেন যে, তিনি বলতেন: আমরা অনেক এমন মানুষের সাথেও হাসিমুখে সাক্ষাত করি এবং কথা বলি, যাদের অবস্থা ও কর্মের কারণে আমাদের অন্তর তাদেরকে অভিসম্পাত করে। তবে বিশেষ কোন ক্ষেত্রে কঠোর আচরণ ও অসন্তুষ্টি প্রকাশের মধ্যেই যদি কল্যাণ নিহিত থাকে, তাহলে সেখানে এমন পন্থা অবলম্বন করাও ঠিক হবে।
(৩) এ হাদীসেরই আবু দাউদের এক বর্ণনায় রয়েছে যে, হযরত আয়েশা (রা) যখন রাসূলুল্লাহ ﷺকে জিজ্ঞাসা করলেন, যে ব্যক্তি সম্পর্কে আপনি নিজেই বলেছিলেন যে, লোকটি খুবই খারাপ, তার সাথে আপনি আবার কেমন করে হাসিমুখে কথা বললেন? রাসূলুল্লাহ ﷺ তখন উত্তর দিলেন: হে আয়েশা! আল্লাহ্ তা'আলা কটুভাষী ব্যক্তিকে পছন্দ করেন না। মর্ম এই যে, কটুকথা বলার অভ্যাস মানুষকে আল্লাহর ভালবাসা থেকে বঞ্চিত করে দেয়। তাই আমি কেমন করে এ দোষে লিপ্ত হতে পারি।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান