মা'আরিফুল হাদীস
আখলাক অধ্যায়
হাদীস নং: ১৭৬
আখলাক অধ্যায়
কথা কম বলা এবং খারাপ ও অহেতুক কথা থেকে রসনার হেফাযত করা
দুনিয়াতে যেসব ঝগড়া-বিবাদ ও গন্ডগোল হয়ে থাকে, এগুলোর অধিকাংশই অসংযত কথা-বার্তার কারণে হয়ে থাকে, তাছাড়া মানুষের পক্ষ থেকে যেসব বড় বড় গুনাহ্ প্রকাশ পায়, এগুলোর সম্পর্কও অধিকাংশ ক্ষেত্রে রসনার সাথেই থাকে। এ জন্যই রাসূলুল্লাহ ﷺ এ বিষয়টির প্রতি সবিশেষ তাকীদ করতেন যে, রসনাকে যেন নিয়ন্ত্রণে রাখা হয় এবং সর্বপ্রকার মন্দ কথা; বরং অপ্রয়োজনীয় এবং অর্থহীন কথা থেকেও যেন রসনাকে বিরত রাখা হয়। কথা বলার যখন বিশেষ কোন প্রয়োজন দেখা না দেয় এবং এ কথার দ্বারা কোন কল্যাণ ও লাভের আশা না থাকে, তখন যেন নীরবতাই অবলম্বন করা হয়। এ শিক্ষাটি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ঐসব গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত, যেগুলোর উপর মানুষের কল্যাণ ও মুক্তি নির্ভরশীল। কোন কোন হাদীস থেকে জানা যায় যে, নামায, রোযা, হজ্জ এবং জেহাদের মত এবাদতসমূহের দীপ্তি ও সাদর গ্রহণযোগ্যতাও রসনার এ সতর্ক ব্যবহারের উপর নির্ভর করে।
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কিছু হাদীস "কিতাবুর রিকাকে” ইতঃপূর্বেই এসে গিয়েছে। নিম্নে আরো কিছু হাদীস উল্লেখ করা হচ্ছে:
কল্যাণের দরজার খবর লও
দুনিয়াতে যেসব ঝগড়া-বিবাদ ও গন্ডগোল হয়ে থাকে, এগুলোর অধিকাংশই অসংযত কথা-বার্তার কারণে হয়ে থাকে, তাছাড়া মানুষের পক্ষ থেকে যেসব বড় বড় গুনাহ্ প্রকাশ পায়, এগুলোর সম্পর্কও অধিকাংশ ক্ষেত্রে রসনার সাথেই থাকে। এ জন্যই রাসূলুল্লাহ ﷺ এ বিষয়টির প্রতি সবিশেষ তাকীদ করতেন যে, রসনাকে যেন নিয়ন্ত্রণে রাখা হয় এবং সর্বপ্রকার মন্দ কথা; বরং অপ্রয়োজনীয় এবং অর্থহীন কথা থেকেও যেন রসনাকে বিরত রাখা হয়। কথা বলার যখন বিশেষ কোন প্রয়োজন দেখা না দেয় এবং এ কথার দ্বারা কোন কল্যাণ ও লাভের আশা না থাকে, তখন যেন নীরবতাই অবলম্বন করা হয়। এ শিক্ষাটি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ঐসব গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত, যেগুলোর উপর মানুষের কল্যাণ ও মুক্তি নির্ভরশীল। কোন কোন হাদীস থেকে জানা যায় যে, নামায, রোযা, হজ্জ এবং জেহাদের মত এবাদতসমূহের দীপ্তি ও সাদর গ্রহণযোগ্যতাও রসনার এ সতর্ক ব্যবহারের উপর নির্ভর করে।
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কিছু হাদীস "কিতাবুর রিকাকে” ইতঃপূর্বেই এসে গিয়েছে। নিম্নে আরো কিছু হাদীস উল্লেখ করা হচ্ছে:
কল্যাণের দরজার খবর লও
১৭৬. মু'আয (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল ﷺ আমাকে এমন এক আমল বলুন যা আমাকে জান্নাতে দাখিল করবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। নবী আকরাম ﷺ বললেন: তুমি বিরাট প্রশ্ন করেছ; কিন্তু যার জন্য আল্লাহ তা সহজ করে দেবেন, তা তার জন্য সহজ হবে। আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না, নামায কায়েম কর, যাকাত দান কর, রমযানের রোযা রাখ, কাবা শরীফের হজ্জ কর। অতঃপর তিনি বললেন: আমি কি তোমাকে কল্যাণের দরজার খবর, দিব না? রোযা ঢালস্বরূপ, সদকা পাপকে নির্বাপিত করে যেমনভাবে পানি আগুন নির্বাপিত করে এবং বান্দার মধ্যরাতের নামাযও। অতঃপর নবী আকরাম ﷺ তিলাওয়াত করলেন।
تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَطَمَعًا وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
-"তাদের পিঠ বিছানা থেকে পৃথক থাকে। তারা তাদের রব্বকে আশা ও ভীতির সাথে আহ্বান করে এবং যে রিযক আমরা তাদেরকে দিয়েছি তা থেকে তারা খরচ করে। তাদের আমলের প্রতিদান হিসেবে তাদের জন্য চোখ শীতলকারী যা কিছু লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তা কোন প্রাণীর জানা নেই।"
অতঃপর নবী করীম ﷺ বললেন: আমি কি তোমাকে বিষয়টির প্রধান অংশ, তার স্তম্ভ এবং তার বুলন্দ চূড়া সম্পর্কে বলব না? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল ﷺ! অবশ্যই। নবী ﷺ বললেন: প্রধান বিষয়টি হল ইসলাম, তার স্তম্ভ নামায এবং তার বুলন্দ শীর্ষ জিহাদ। অতঃপর তিনি বললেন: আমি কি তোমাকে এসবের প্রত্যেকটি কিসের উপর নির্ভর করে, তা বলব না? আমি বললামঃ হে আল্লাহর নবী ﷺ! অবশ্যই। তিনি তাঁর জিহবাকে ধরলেন এবং বললেন: তা সংযত রাখা তোমার কর্তব্য। আমি বললাম, আমরা যেসব কথাবার্তা বলি তার জন্য কি আমাদের হিসাব নেয়া হবে? নবী করীম ﷺ বললেনঃ হে মু'আয। তোমার মা তোমার জন্য ক্রন্দন করুক (মহব্বত প্রকাশের জন্য বলা হয়), মানুষের জিহ্বার ফসলই মানুষকে অধোমুখে কিংবা তাদের নাকের উপর করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। (আহমদ, তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ)
تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَطَمَعًا وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
-"তাদের পিঠ বিছানা থেকে পৃথক থাকে। তারা তাদের রব্বকে আশা ও ভীতির সাথে আহ্বান করে এবং যে রিযক আমরা তাদেরকে দিয়েছি তা থেকে তারা খরচ করে। তাদের আমলের প্রতিদান হিসেবে তাদের জন্য চোখ শীতলকারী যা কিছু লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তা কোন প্রাণীর জানা নেই।"
অতঃপর নবী করীম ﷺ বললেন: আমি কি তোমাকে বিষয়টির প্রধান অংশ, তার স্তম্ভ এবং তার বুলন্দ চূড়া সম্পর্কে বলব না? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল ﷺ! অবশ্যই। নবী ﷺ বললেন: প্রধান বিষয়টি হল ইসলাম, তার স্তম্ভ নামায এবং তার বুলন্দ শীর্ষ জিহাদ। অতঃপর তিনি বললেন: আমি কি তোমাকে এসবের প্রত্যেকটি কিসের উপর নির্ভর করে, তা বলব না? আমি বললামঃ হে আল্লাহর নবী ﷺ! অবশ্যই। তিনি তাঁর জিহবাকে ধরলেন এবং বললেন: তা সংযত রাখা তোমার কর্তব্য। আমি বললাম, আমরা যেসব কথাবার্তা বলি তার জন্য কি আমাদের হিসাব নেয়া হবে? নবী করীম ﷺ বললেনঃ হে মু'আয। তোমার মা তোমার জন্য ক্রন্দন করুক (মহব্বত প্রকাশের জন্য বলা হয়), মানুষের জিহ্বার ফসলই মানুষকে অধোমুখে কিংবা তাদের নাকের উপর করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। (আহমদ, তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ)
کتاب الاخلاق
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ ، قَالَ : قُلْتُ يَارَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخْبِرْنِي بِعَمَلٍ يُدْخِلُنِي الْجَنَّةَ ، وَيُبَاعِدُنِي مِنَ النَّارِ ، قَالَ : « لَقَدْ سَأَلْتَ عَنْ اَمْرٍ عَظِيمٍ ، وَإِنَّهُ لَيَسِيرٌ عَلَى مَنْ يَسَّرَهُ اللَّهُ عَلَيْهِ ، تَعْبُدُ اللَّهَ وَلَا تُشْرِكْ بِهِ شَيْئًا ، وَتُقِيمُ الصَّلَاةَ ، وَتُؤْتِي الزَّكَاةَ ، وَتَصُومُ رَمَضَانَ ، وَتَحُجَّ الْبَيْتَ » ثُمَّ قَالَ : " أَلَا أَدُلُّكَ عَلَى أَبْوَابِ الْخَيْرِ؟ الصَّوْمُ جُنَّةٌ ، وَالصَّدَقَةُ تُطْفِئُ الْخَطِيئَةَ كَمَا يُطْفِئُ الْمَاءُ النَّارَ ، وَصَلَاةُ الرَّجُلِ فِىْ جَوْفِ اللَّيْلِ ، ثُمَّ تَلَا {تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ} حَتَّى بَلَغَ {يَعْمَلُونَ} " ثُمَّ قَالَ : « أَلَا أَدُلُّكَ بِرَأْسِ الْأَمْرِ ، وَعَمُودِهِ ، وَذُرْوَةِ سَنَامِهِ؟ قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : رَأْسُ الأَمْرِ الإِسْلاَمُ ، وَعَمُودُهُ الصَّلاَةُ ، وَذِرْوَةُ سَنَامِهِ الْجِهَادُ » ثُمَّ قَالَ : « أَلَا أُخْبِرُكَ بِمِلَاكِ ذَلِكَ كُلِّهِ؟ » قُلْتُ : بَلَى يَا نَبِيَّ اللهِ ، فَأَخَذَ بِلِسَانِهِ ، فَقَالَ : « كُفَّ عَلَيْكَ هَذَا » فَقُلْتُ : يَا نَبِيَّ اللهِ وَإِنَّا لَمُؤَاخَذُونَ بِمَا نَتَكَلَّمُ بِهِ؟ قَالَ : « ثَكِلَتْكَ أُمُّكَ يَا مُعَاذُ وَهَلْ يَكُبُّ النَّاسَ فِي النَّارِ عَلَى وُجُوهِهِمْ أَوْ عَلَى مَنَاخِرِهِمْ إِلاَّ حَصَائِدُ أَلْسِنَتِهِمْ؟ » (رواه احمد والترمذى وابن ماجه)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
জান্নাতে যাওয়ার জন্য যেসব অবশ্য পালনীয় আমলের উল্লেখ নবী করীম ﷺ করেছেন, তার মধ্যে নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাতের সাথে আল্লাহর ইবাদত করা এবং শিরক থেকে দূরে থাকার কথা রয়েছে। নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাতের উল্লেখ করার পূর্বে পৃথকভাবে আল্লাহর ইবাদত করা এবং শিরক থেকে দূরে থাকার বর্ণনা করা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তাতে বুঝা যাচ্ছে, বর্ণিত চারটি ইবাদত ছাড়াও আরো ইবাদত রয়েছে, যা জান্নাতের জন্য সম্পাদন করা অপরিহার্য। আল্লাহর ইবাদত করা ও তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করা খুবই ব্যাপক বিষয়। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এবং জীবনের সকল পর্যায়ে, মসজিদ থেকে রণাঙ্গন পর্যন্ত যার মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, লেন-দেন, অফিস-আদালত, পার্লামেন্ট শামিল রয়েছে। আল্লাহর ইবাদত করা এবং তাঁর সাথে বা তাঁর গুণ ও এখতিয়ারের সাথে কাউকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শরীক না করা। কোন ব্যক্তি নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাত সম্পাদন করা সত্ত্বেও জীবনের বৃহত্তম এবং বাস্তব কর্মক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আল্লাহর গুণ ও এখতিয়ারের সাথে যদি কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা আদর্শকে শরীক করে, তাহলে সে শিরকের দোষে দোষী সাব্যস্ত হবে। তাকে আখিরাতের আদালতে অপমানের বোঝা বহন করতে হবে। অনেক নামধারী মুসলমান আল্লাহর সত্তার সাথে শিরক করাকে অপসন্দ করলেও আল্লাহ জাল্লা-জালালুহুর সিফাত ও এখতিয়ারের সাথে শিরক করার অর্থ মোটেই বুঝে না বা বুঝবার চেষ্টা করে না। আলেম সমাজের উচিত, এ ধরনের লোকের অজ্ঞতা দূর করা। অন্যথায় এসব লোকের অজ্ঞতার অপরাধের জন্য আখিরাতের আদালতে তাদের সাথে আলেমদেরকেও আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
সদকা, রোযা এবং মধ্যরাতের নামায অর্থাৎ তাহাজ্জুদ ও অন্যান্য নফল ইবাদতকে কল্যাণের দরজা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সদকা পাপকে নির্বাপিত করে। সদকার মাধ্যমে আল্লাহ মানুষের পাপ দূর করে দেন এবং সদকাকারীকে পাক-সাফ থাকার তওফিক দান করেন। রোযা বান্দাকে পাপ থেকে রক্ষা করে। মধ্যরাতের নামাযের খুব ফযীলত রয়েছে। তাহাজ্জুদ গুযার এবং দাতা ব্যক্তির জন্য জান্নাতের মধ্যে এমন সব নিয়ামত রাখা হয়েছে যা দুনিয়ার কোন প্রাণী কখনো দেখেনি।
অতঃপর নবী করীম ﷺ দীনের একটা নক্সা পেশ করেছেন। তাতে ইসলামকে راس الامر বা দীনের প্রধান অংশ বা দীনের মাথা বলা হয়েছে। শরীরের সাথে মাথার যে সম্পর্ক, দীনের সাথে ইসলামেরও সে সম্পর্ক। এখানে ইসলাম বলতে শুধু কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু পড়ে ইসলাম কবুল করা নয়, বরং ইসলামকে দীন হিসেবে অর্থাৎ জীবনের যাবতীয় দিক ও বিভাগের এবং জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত গোটা জীবনের জন্য একক এবং একমাত্র ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করা বুঝানো হয়েছে। নামাযকে দীনের স্তম্ভ বলা হয়েছে। অপর একটি মশহুর হাদীসে নামাযসহ পাঁচটি জিনিস, যথা: কালেমা শাহাদাত, নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাতকে দীনের স্তম্ভ বলা হয়েছে। যেরূপ স্তম্ভ ছাড়া ইমারত দাঁড়াতে পারে না, সেরূপ বর্ণিত বিষয়সমূহ ছাড়া দীনের কল্পনা করা যায় না। যেরূপ স্তম্ভের নাম ইমারত নয়, সেরূপ নামাযসহ পাঁচটি জিনিসের সমষ্টিও পরিপূর্ণ দীন নয়। যেরূপ ইমারতকে বসবাস উপযোগী করার জন্য দরজা-জানালা, ছাদ, প্রাচীর প্রভৃতির প্রয়োজন হয়, সেরূপ দীনকে পরিপূর্ণ রূপ দান করার জন্য আরো বহু জিনিসের প্রয়োজন হয়। জিহাদকে দীনের বুলন্দ শীর্ষ হিসেবে আখ্যায়িত করে নবী করীম ﷺ দীনের পরিপূর্ণ রূপের উপর আলোকসম্পাত করেছেন। অর্থাৎ দীনকে পরিপূর্ণ রূপ দান করতে হলে, দীনকে অন্য দীনের উপর বিজয়ী করতে হলে জিহাদ অপরিহার্য। দীন ইসলামকে অপর দীনের উপর বিজয়ী করার উদ্দেশ্যে জিহাদ পরিচালনা করা বা জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য খিলাফত আলা মিনহাজিন নবুওয়ত বা নবুওয়তের পদ্ধতিতে রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করা অপরিহার্য। এ জন্য যে সংগ্রাম ও সাধনা করা হয়, তা জিহাদের অন্তর্ভুক্ত।
কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের ফল থেকে বান্দা যাতে বঞ্চিত না হয় তার জন্য নবী করীম ﷺ জিহ্বার হিফাযতের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। জিহ্বাকে সংযত না রাখলে বান্দা জীবনব্যাপী বহু সংখ্যক ইবাদত করা সত্ত্বেও কিয়ামতের দিন বিপদের সম্মুখীন হতে পারে। জিহ্বার অপপ্রয়োগ বা অন্যায় প্রয়োগের কারণে মানুষ দোষখে নিক্ষিপ্ত হবে।
সদকা, রোযা এবং মধ্যরাতের নামায অর্থাৎ তাহাজ্জুদ ও অন্যান্য নফল ইবাদতকে কল্যাণের দরজা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সদকা পাপকে নির্বাপিত করে। সদকার মাধ্যমে আল্লাহ মানুষের পাপ দূর করে দেন এবং সদকাকারীকে পাক-সাফ থাকার তওফিক দান করেন। রোযা বান্দাকে পাপ থেকে রক্ষা করে। মধ্যরাতের নামাযের খুব ফযীলত রয়েছে। তাহাজ্জুদ গুযার এবং দাতা ব্যক্তির জন্য জান্নাতের মধ্যে এমন সব নিয়ামত রাখা হয়েছে যা দুনিয়ার কোন প্রাণী কখনো দেখেনি।
অতঃপর নবী করীম ﷺ দীনের একটা নক্সা পেশ করেছেন। তাতে ইসলামকে راس الامر বা দীনের প্রধান অংশ বা দীনের মাথা বলা হয়েছে। শরীরের সাথে মাথার যে সম্পর্ক, দীনের সাথে ইসলামেরও সে সম্পর্ক। এখানে ইসলাম বলতে শুধু কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু পড়ে ইসলাম কবুল করা নয়, বরং ইসলামকে দীন হিসেবে অর্থাৎ জীবনের যাবতীয় দিক ও বিভাগের এবং জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত গোটা জীবনের জন্য একক এবং একমাত্র ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করা বুঝানো হয়েছে। নামাযকে দীনের স্তম্ভ বলা হয়েছে। অপর একটি মশহুর হাদীসে নামাযসহ পাঁচটি জিনিস, যথা: কালেমা শাহাদাত, নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাতকে দীনের স্তম্ভ বলা হয়েছে। যেরূপ স্তম্ভ ছাড়া ইমারত দাঁড়াতে পারে না, সেরূপ বর্ণিত বিষয়সমূহ ছাড়া দীনের কল্পনা করা যায় না। যেরূপ স্তম্ভের নাম ইমারত নয়, সেরূপ নামাযসহ পাঁচটি জিনিসের সমষ্টিও পরিপূর্ণ দীন নয়। যেরূপ ইমারতকে বসবাস উপযোগী করার জন্য দরজা-জানালা, ছাদ, প্রাচীর প্রভৃতির প্রয়োজন হয়, সেরূপ দীনকে পরিপূর্ণ রূপ দান করার জন্য আরো বহু জিনিসের প্রয়োজন হয়। জিহাদকে দীনের বুলন্দ শীর্ষ হিসেবে আখ্যায়িত করে নবী করীম ﷺ দীনের পরিপূর্ণ রূপের উপর আলোকসম্পাত করেছেন। অর্থাৎ দীনকে পরিপূর্ণ রূপ দান করতে হলে, দীনকে অন্য দীনের উপর বিজয়ী করতে হলে জিহাদ অপরিহার্য। দীন ইসলামকে অপর দীনের উপর বিজয়ী করার উদ্দেশ্যে জিহাদ পরিচালনা করা বা জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য খিলাফত আলা মিনহাজিন নবুওয়ত বা নবুওয়তের পদ্ধতিতে রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করা অপরিহার্য। এ জন্য যে সংগ্রাম ও সাধনা করা হয়, তা জিহাদের অন্তর্ভুক্ত।
কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের ফল থেকে বান্দা যাতে বঞ্চিত না হয় তার জন্য নবী করীম ﷺ জিহ্বার হিফাযতের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। জিহ্বাকে সংযত না রাখলে বান্দা জীবনব্যাপী বহু সংখ্যক ইবাদত করা সত্ত্বেও কিয়ামতের দিন বিপদের সম্মুখীন হতে পারে। জিহ্বার অপপ্রয়োগ বা অন্যায় প্রয়োগের কারণে মানুষ দোষখে নিক্ষিপ্ত হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)