মা'আরিফুল হাদীস
معارف الحديث
রিকাক অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ১০০ টি
হাদীস নং: ২১
রিকাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ রাসূলুল্লাহর যুগে গুনাহ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা
২১. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি (তাঁর যুগের লোকদের) বলেন, তোমরা অনেক কাজ কর, যা তোমাদের দৃষ্টিতে চুলের চেয়েও সরু (অতি সাধারণ ও নগণ্য) কিন্তু রাসূলুল্লাহর যুগে আমরা সে সবকে বড় অপরাধ অর্থাৎ ধ্বংসকারী জিনিস গণ্য করতাম। (বুখারী)
کتاب الرقاق
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، قَالَ : « إِنَّكُمْ لَتَعْمَلُونَ أَعْمَالًا ، هِيَ أَدَقُّ فِي أَعْيُنِكُمْ مِنَ الشَّعَرِ ، إِنْ كُنَّا لَنَعُدُّهَا عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ المُوبِقَاتِ » قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ : « يَعْنِي بِذَلِكَ المُهْلِكَاتِ » (رواه البخارى)
তাহকীক:
হাদীস নং: ২২
রিকাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সামান্য তীব্র বাতাসে সাহাবাগণ কিয়ামতের ভয়ে মসজিদে দৌড়াতেন
২২. নযর তাবিঈ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনাস (রা)-এর একবার অন্ধকারময় ধূলি-ঝড় এসেছিল। আমি তাঁর নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম আবু হামযা! রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সময়ে কি আপনাদের উপর এরূপ ধূলি-ঝড় প্রবাহিত হয়েছিল? তিনি বলেন: আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি, তখন বাতাস সামান্য তীব্র হলে কিয়ামতের ভয়ে আমরা মসজিদের দিকে দৌড়ে যেতাম। (আবু দাউদ)
کتاب الرقاق
عَنِ النَّضْرِ قَالَ : كَانَتْ ظُلْمَةٌ عَلَى عَهْدِ أَنَسٍ فَأَتَيْتُهُ ، فَقُلْتُ : يَا أَبَا حَمْزَةَ هَلْ كَانَ هَذَا يُصِيبُكُمْ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ : « مَعَاذَ اللَّهِ ، إِنْ كَانَتِ الرِّيحُ لَتَشْتَدُّ فَنُبَادِرُ الْمَسْجِدَ مَخَافَةَ اَنْ تَكُوْنَ الْقِيَامَةِ » (رواه ابو داؤد)
তাহকীক:
হাদীস নং: ২৩
রিকাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ হযরত হানযালা কেন বললেন তিনি মুনাফিক হয়ে গেছেন
২৩. হযরত হানযালা ইবন রাবী আল-উসাইদী (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ বকর (রা) আমার সাথে মুলাকাত করলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন: হে হানযালা! কেমন আছ? আমি বললাম, হানযালা মুনাফিক হয়ে গেছে। তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ্। তুমি কি বলছ? আমি বললাম, যখন আমরা নবী ﷺ-এর নিকট উপস্থিত থাকি, তিনি দোযখ-বেহেশত সম্পর্কে আমাদের উপদেশ দেন, তখন মনে হয় তা যেন আমাদের চোখের সামনে। যখন আমরা তাঁর কাছ থেকে বের হই, তখন পরিবার, সন্তান ও ক্ষেত-খামার আমাদেরকে মশগুল রাখে। আর আমরা অনেক কিছুই ভুলে যাই। আবু বকর (রা) বললেন, আল্লাহর কসম! আমিও এ ধরনের অবস্থার সম্মুখীন হই।
অতঃপর আমি ও আবু বকর (রা) রওনা হলাম এবং রাসূলুল্লাহর নিকট উপস্থিত হলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! হানযালা মুনাফিক হয়ে গেছে। তিনি বললেন: তোমার কি হয়েছে? আমি বললাম, আপনার কাছে থাকলে আপনি যখন জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কে আমাদেরকে নসীহত করেন, তখন মনে হয় যেন তা আমাদের চোখের সামনে। যখন আমরা আপনার নিকট থেকে বের হয়ে যাই, তখন পরিবারবর্গ, সন্তানাদি এবং বিষয়-সম্পত্তি আমাদেরকে মশগুল করে ফেলে। তাতে আমরা অনেক কিছুই ভুলে যাই। আল্লাহর রাসূল ﷺ বললেন: আমার জীবন যাঁর হাতে তাঁর শপথ! তোমরা যদি সর্বদা যিকির করতে এবং আমার কাছে যে অবস্থায় থাক সে অবস্থায় থাকতে, তাহলে ফেরেশতা তোমাদের বিছানায় ও রাস্তায় তোমাদের সাথে মুসাফাহা করতেন। কিন্তু হে হানযালা, (সব সময় এমন অবস্থায় থাকার জন্য আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দেননি, বরং) কোন কোন সময় হলেই যথেষ্ট। তিনবার তিনি এ কথা বললেন। (মুসলিম)
অতঃপর আমি ও আবু বকর (রা) রওনা হলাম এবং রাসূলুল্লাহর নিকট উপস্থিত হলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! হানযালা মুনাফিক হয়ে গেছে। তিনি বললেন: তোমার কি হয়েছে? আমি বললাম, আপনার কাছে থাকলে আপনি যখন জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কে আমাদেরকে নসীহত করেন, তখন মনে হয় যেন তা আমাদের চোখের সামনে। যখন আমরা আপনার নিকট থেকে বের হয়ে যাই, তখন পরিবারবর্গ, সন্তানাদি এবং বিষয়-সম্পত্তি আমাদেরকে মশগুল করে ফেলে। তাতে আমরা অনেক কিছুই ভুলে যাই। আল্লাহর রাসূল ﷺ বললেন: আমার জীবন যাঁর হাতে তাঁর শপথ! তোমরা যদি সর্বদা যিকির করতে এবং আমার কাছে যে অবস্থায় থাক সে অবস্থায় থাকতে, তাহলে ফেরেশতা তোমাদের বিছানায় ও রাস্তায় তোমাদের সাথে মুসাফাহা করতেন। কিন্তু হে হানযালা, (সব সময় এমন অবস্থায় থাকার জন্য আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দেননি, বরং) কোন কোন সময় হলেই যথেষ্ট। তিনবার তিনি এ কথা বললেন। (মুসলিম)
کتاب الرقاق
عَنْ حَنْظَلَةَ بْنِ الرَّبِيْع الْأُسَيِّدِيِّ قَالَ : لَقِيَنِي أَبُو بَكْرٍ ، فَقَالَ : كَيْفَ أَنْتَ؟ يَا حَنْظَلَةُ قَالَ : قُلْتُ : نَافَقَ حَنْظَلَةُ ، قَالَ : سُبْحَانَ اللهِ مَا تَقُولُ؟ قَالَ : قُلْتُ : نَكُونُ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، يُذَكِّرُنَا بِالنَّارِ وَالْجَنَّةِ ، حَتَّى كَأَنَّا رَأْيُ عَيْنٍ ، فَإِذَا خَرَجْنَا مِنْ عِنْدِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، عَافَسْنَا الْأَزْوَاجَ وَالْأَوْلَادَ وَالضَّيْعَاتِ ، فَنَسِينَا كَثِيرًا ، قَالَ أَبُو بَكْرٍ : فَوَاللهِ إِنَّا لَنَلْقَى مِثْلَ هَذَا ، فَانْطَلَقْتُ أَنَا وَأَبُو بَكْرٍ ، حَتَّى دَخَلْنَا عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قُلْتُ : نَافَقَ حَنْظَلَةُ ، يَا رَسُولَ اللهِ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ « وَمَا ذَاكَ؟ » قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ نَكُونُ عِنْدَكَ ، تُذَكِّرُنَا بِالنَّارِ وَالْجَنَّةِ ، حَتَّى كَأَنَّا رَأْيُ عَيْنٍ ، فَإِذَا خَرَجْنَا مِنْ عِنْدِكَ ، عَافَسْنَا الْأَزْوَاجَ وَالْأَوْلَادَ وَالضَّيْعَاتِ ، نَسِينَا كَثِيرًا فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنْ لَوْ تَدُومُونَ عَلَى مَا تَكُونُونَ عِنْدِي ، وَفِي الذِّكْرِ ، لَصَافَحَتْكُمُ الْمَلَائِكَةُ عَلَى فُرُشِكُمْ وَفِي طُرُقِكُمْ ، وَلَكِنْ يَا حَنْظَلَةُ سَاعَةً وَسَاعَةً » ثَلَاثَ مَرَّاتٍ . (رواه مسلم)
তাহকীক:
হাদীস নং: ২৪
রিকাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ উমর (রা) রাসূল ﷺ-এর ইন্তিকালের পর কৃত তামাম আমল থেকে রেহাই পেতে চান
২৪. হযরত আবূ বুরদা ইবন আবূ মূসা আশআরী (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা) আমাকে বলেছেন, তুমি কি জান আমার বাবা তোমার বাবাকে কি বলেছিলেন? তিনি বলেন, আমি (বর্ণনাকারী) বললাম, না। ইবন উমর (রা) বলেন, আমার পিতা তোমার পিতাকে বলেছিলেন, হে আবু মুসা! তুমি কি তাতে সন্তুষ্ট হবে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর হাতে আমাদের ইসলাম কবুল, তাঁর সাথে আমাদের হিজরত ও জিহাদ এবং প্রত্যেকটি কাজ যা আমরা তাঁর সাথে করেছি, সেগুলো আমাদের জন্য সংরক্ষিত হোক এবং তাঁর মৃত্যুর পর আমরা যত সব ভাল ও মন্দ আমল করেছি, তা থেকে সমান সমানভাবে নিস্তার পেয়ে যাই? তোমার পিতা আমার পিতাকে বললেন: না, আল্লাহর কসম, আল্লাহর রাসূলের পরও আমরা জিহাদ করেছি, নামায আদায় করেছি, রোযা রেখেছি, অনেক ভাল কাজ করেছি এবং আমাদের হাতে অনেক মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছে, আমরা তার প্রতিদানের প্রত্যাশী। আমার পিতা উমর (রা) বললেন: যাঁর হাতে উমরের প্রাণ রয়েছে তাঁর কসম! আমি রাসূল (রা)-এর আমলে কৃত আমাদের আমলের হিফাযত কামনা করি এবং তাঁর ইন্তিকালের পর কৃত ভাল-মন্দ আমল থেকে সমানভাবে পরিত্রাণ চাই। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আপনার পিতা আমাদের পিতার চেয়ে উত্তম ছিলেন। (বুখারী)
کتاب الرقاق
عَنْ أَبِىْ بُرْدَةَ بْنُ أَبِي مُوسَى قَالَ : قَالَ لِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ : هَلْ تَدْرِي مَا قَالَ أَبِي لِأَبِيكَ؟ قَالَ : قُلْتُ : لاَ ، قَالَ : فَإِنَّ أَبِي قَالَ لِأَبِيكَ : " يَا أَبَا مُوسَى ، هَلْ يَسُرُّكَ إِسْلاَمُنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، وَهِجْرَتُنَا مَعَهُ ، وَجِهَادُنَا مَعَهُ ، وَعَمَلُنَا كُلُّهُ مَعَهُ ، بَرَدَ لَنَا ، وَأَنَّ كُلَّ عَمَلٍ عَمِلْنَاهُ بَعْدَهُ نَجَوْنَا مِنْهُ ، كَفَافًا رَأْسًا بِرَأْسٍ؟ فَقَالَ أَبِي : لاَ وَاللَّهِ ، قَدْ جَاهَدْنَا بَعْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، وَصَلَّيْنَا ، وَصُمْنَا ، وَعَمِلْنَا خَيْرًا كَثِيرًا ، وَأَسْلَمَ عَلَى أَيْدِينَا بَشَرٌ كَثِيرٌ ، وَإِنَّا لَنَرْجُو ذَلِكَ ، فَقَالَ أَبِي : لَكِنِّي أَنَا ، وَالَّذِي نَفْسُ عُمَرَ بِيَدِهِ ، لَوَدِدْتُ أَنَّ ذَلِكَ بَرَدَ لَنَا ، وَأَنَّ كُلَّ شَيْءٍ عَمِلْنَاهُ بَعْدُ نَجَوْنَا مِنْهُ كَفَافًا رَأْسًا بِرَأْسٍ ، فَقُلْتُ : إِنَّ أَبَاكَ وَاللَّهِ كَانَ خَيْرٌ مِنْ أَبِي " (رواه البخارى)
তাহকীক:
হাদীস নং: ২৫
রিকাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ দুনিয়ার তুচ্ছতা ও এর নিন্দাবাদ
"রেকাক” সংক্রান্ত যেসব হাদীস সামনে আসবে, এগুলোতে রাসূলুল্লাহ ﷺ দুনিয়ার অসারতা ও এর নিন্দাবাদ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলে দিয়েছেন যে, আখেরাতের তুলনায় আল্লাহর নিকট এ দুনিয়া কত তুচ্ছ ও মূল্যহীন।
যেহেতু আমাদের এ যুগে দুনিয়ার সাথে মানুষের সম্পর্ক ও এর প্রতি তাদের আসক্তি সীমা অতিক্রম করে গিয়েছে এবং নিছক পার্থিব ও বৈষয়িক উন্নতির ব্যাপারকে এত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে যে, সম্ভবতঃ ইতঃপূর্বে কখনো এটা এত গুরুত্ব লাভ করেনি। তাই বর্তমানে অবস্থা এই যে, দুনিয়ার তুচ্ছতা ও এর নিন্দাবাদের বিষয়টি অনেক মুসলমানের অন্তরেও সহজে আসতে চায় না; বরং অবস্থা এ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে যে, অনেক এমন লোক, যাদেরকে মুসলমানদের পথপ্রদর্শক ও সংস্কারক মনে করা হয়, তারাও দুনিয়ার অসারতা ও এর স্থায়িত্বহীনতার আলোচনা শুনলে অবলীলায় মন্তব্য করে বসে যে, “এটা হচ্ছে বৈরাগ্যবাদ ও ভ্রান্ত তাসাওউফের প্রচার।" তারপর যখন তাদের সামনে এ প্রসঙ্গের হাদীসসমূহ উল্লেখ করা হয়, তখন হাদীস অস্বীকারকারীদের মত তারাও এসব হাদীসের ব্যাপারে সন্দেহ-সংশয় প্রকাশ করতে শুরু করে। এ জন্য এ প্রসঙ্গের হাদীসসমূহ সংকলন করার পূর্বে আমরা ভূমিকা হিসাবে ঈমানের স্বীকৃত বিষয়াদি এবং কুরআন মজীদের আলোকে এ বিষয়টির উপর কিছু মৌলিক আলোচনার প্রয়াস পাব। আর আল্লাহই হচ্ছেন তওফীকদাতা।
দুনিয়া ও আখেরাত
(১) এই যে দুনিয়া যেখানে আমরা নিজেদের জীবন অতিবাহিত করছি, আর যেটা নিজেদের চোখ, কান ইত্যাদি অনুভূতি শক্তি দ্বারা অনুভব করছি, এটা যেমন এক বাস্তব সত্য, তেমনিভাবে আখেরাত- যার সংবাদ আল্লাহর সকল নবীরাই দিয়েছেন সেটাও এক নিশ্চিত ও বাস্তব সত্য। আমরা যে দুনিয়ায় থাকাবস্থায় সেটা দেখতে পাচ্ছি না এবং অনুভব করতে পারছি না, এটা ঠিক তেমনই, যেমন মাতৃগর্ভে থাকাকালীন আমরা এ দুনিয়াকে দেখতে পাইনি এবং এর কোন কিছুই অনুভব করতে পারিনি। তারপর যেভাবে আমরা এখানে এসে দুনিয়াকে দেখে নিয়েছি এবং আসমান যমীনের ঐসব লক্ষ লক্ষ জিনিস আমাদের চোখের সামনে এসে গিয়েছে, যেগুলোর কল্পনাও আমরা মাতৃগর্ভে থাকার সময় করতে পারতাম না। ঠিক তেমনিভাবে মৃত্যুর পর আখেরাত জগতে গিয়ে আমরা জান্নাত ও জাহান্নাম এবং ঐ জগতের সকল বস্তু দেখে নিতে পারব, যেগুলোর সংবাদ আল্লাহর নবীগণ এবং আল্লাহর কিতাবসমূহ দিয়েছে। সারকথা, আমাদের এ দুনিয়া যেমন এক বাস্তব সত্য, তদ্রূপ মৃত্যুর পর আখেরাতও আসন্ন এক বাস্তব জগত। আমাদের এর উপর ঈমান রয়েছে এবং কুরআন-হাদীস ও যুক্তির আলোকে এ ব্যাপারে আমাদের পূর্ণ আস্থা ও দ্বিধাহীন বিশ্বাস রয়েছে।
(২) দুনিয়ার ব্যাপারে আমাদের বিশ্বাস যে, এটা এবং এর সমুদয় জিনিস অস্থায়ী ও ধ্বংসশীল। কিন্তু আখেরাত এর ব্যতিক্রম। কেননা, আখেরাত অবিনশ্বর ও চিরস্থায়ী। সেখানে পৌঁছার পর মানুষও চিরন্তন জীবনের অধিকারী হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে সেখানে আল্লাহর ভাগ্যবান ও পুণ্যবান বান্দাদেরকে যেসব নেয়ামত দান করা হবে, এগুলোর ধারাও চিরকাল অব্যাহত থাকবে, কখনো বন্ধ হবে না। এটাকেই কুরআন মজীদে বলা হয়েছে "এ দানের ধারাবাহিকতা কখনো ছিন্ন হওয়ার নয়।"
অনুরূপভাবে যেসব হতভাগাদের উপর- তাদের অবাধ্যতা, কুফর ও অহংকারের কারণে আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও ক্রোধ পড়বে, তাদের দুঃখ-কষ্ট ও আযাবের ধারাও কখনো বন্ধ হবে না। যেমন, জাহান্নামীদের সম্পর্কে কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছে: "তারা জাহান্নামে চিরকাল থাকবে।” “তারা জাহান্নাম থেকে বের হয়ে আসতে পারবে না।” “জাহান্নামীদের মৃত্যুও আসবে না যে, মরে গিয়েও আযাব থেকে বেঁচে যাবে, আর তাদের শাস্তি হ্রাসও করা হবে না।"
আমরা আল্লাহর কিতাব ও নবীগণ কর্তৃক বর্ণিত এ বাস্তবতার উপরও বিশ্বাস রাখি যে, দুনিয়ার নেয়ামত ও আনন্দ-উপভোগের তুলনায় আখেরাতের আনন্দ ও নেয়ামতসমূহ অনেকগুণে উৎকৃষ্ট; বরং আখেরাতের সুখ ও নেয়ামতই প্রকৃত সুখ ও নেয়ামত। এর সাথে দুনিয়ার জিনিসের তুলনাই হয় না। তদ্রূপভাবে দুনিয়ার কোন কঠিনতর কষ্ট এবং বিরাট দুঃখেরও জাহান্নামের লঘুতর কোন শাস্তির সাথেও তুলনা হয় না।
একথা স্পষ্ট যে, এসব বিষয়ের দাবী এটাই হওয়া উচিত, মানুষের চিন্তা ও চেষ্টা-সাধনার কেন্দ্রবিন্দু হবে আখেরাত। দুনিয়ার সাথে তার সম্পর্ক কেবল এতটুকুই থাকবে, যতটুকু না হলেই নয়।
(৩) কিন্তু মানুষের সাধারণ অবস্থা এই যে, দুনিয়া যেহেতু সর্বদা তাদের চোখের সামনে, আর আখেরাত সম্পূর্ণ অদৃশ্য ও চোখের অন্তরালে, এ জন্য এসব বাস্তবতায় বিশ্বাসী মানুষের উপরও অনেক সময় দুনিয়ার চিন্তা ও এর সন্ধান প্রবল হয়ে থাকে। এটা যেন মানুষের এক ধরনের সহজাত দুর্বলতা। এ ক্ষেত্রে তাদের অবস্থা ঐ ছোট্ট শিশুদের মত, যারা বাল্যকালে তাদের খেলাধুলা ও খেলার সামগ্রী নিয়েই ব্যস্ত থাকে, ভবিষ্যত জীবনকে সুন্দর ও উন্নত করতে সহায়ক শিক্ষা ও জীবন গঠনের কর্মসূচী তাদের জন্য সবচেয়ে অনাকর্ষণীয়; বরং চরম
কঠিন মনে হয়। যাদের পিতা-মাতা তাদেরকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ঐ জীবন উন্নতকারী বিষয়সমূহের দিকে তাদেরকে আকৃষ্ট করে তুলতে পারে, তারাই সুন্দর জীবনের অধিকারী হয়ে আদর্শ মানুষ হতে পারে এবং সম্মান ও সুখের জীবন লাভ করতে পারে।
(৪) আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত নবী-রাসূল এবং তাঁর অবর্তীর্ণ কিতাবসমূহের দ্বারা সর্বযুগেই মানুষের এ ভ্রান্তি ও দুর্বলতার সংশোধনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে ও আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার যে অবস্থান এবং দুনিয়ার তুলনায় আখেরাতের যে মর্যাদা তা স্পষ্টভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু মানুষের মধ্যে এ ক্ষেত্রে ঐ শিশুসুলভ ভুলই পরিলক্ষিত হয়েছে। আল্লাহ্ তা'আলা এরশাদ করেন: তোমাদের অবস্থা এই যে, তোমরা (আখেরাতের তুলনায়) দুনিয়ার জীবনকেই প্রাধান্য দিয়ে যাচ্ছ, অথচ আখেরাত (দুনিয়ার তুলনায় বহুগুণ) উত্তম ও স্থায়ী। এ কথাটি পূর্ববর্তী কিতাবসমূহেও বলা হয়েছে, অর্থাৎ ইবরাহীম ও মূসা (আঃ)-এর সহীফাসমূহে।
(৫) কুরআন পাক যেহেতু পৃথিবীর জন্য সর্বশেষ হেদায়াতনামা, এ জন্য এর মধ্যে আরো সবিশেষ জোর দিয়ে এবং অধিক গুরুত্বের সাথে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন শিরোনামে এ দুনিয়ার অসারতা ও অস্থায়িত্বকে এবং আখেরাতের গুরুত্ব ও মর্যাদাকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। যেমন, কোথাও বলা হয়েছে: "আপনি বলে দিন যে, দুনিয়ার উপকরণ তো খুবই সামান্য। আর পরকালই হচ্ছে উত্তম, পরহেযগারদের জন্য।" (সূরা নিসা) অন্যত্র এরশাদ হয়েছে: "দুনিয়ার এ জীবন তো কেবল (কয়েক দিনের) ক্রীড়া-কৌতুক। আর পরকালের আবাসই হচ্ছে উত্তম, পরহেযগারদের জন্য। তোমরা কি এ বিষয়টি বুঝ না?" (সূরা আন'আম) অন্যত্র এরশাদ হয়েছে: "এ দুনিয়ার জীবন (এবং এখানকার উপকরণ) তো কেবল কয়েক দিনের ভোগের বস্তু। আর আখেরাতই হচ্ছে স্থায়ী আবাস।" (সূরা মু'মিন)
আরেক জায়গায় বলা হয়েছে: "আখেরাতে (অপরাধীদের জন্য) রয়েছে কঠিন শাস্তি। আর (যারা ক্ষমার যোগ্য, তাদের জন্য) রয়েছে ক্ষমা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর এ দুনিয়ার জীবন তো হচ্ছে কেবল প্রতারণার সামগ্রী।" (সূরা হাদীদ)
(৬) সারকথা, আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত নবী-রাসূলগণ এবং তাঁর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ কিতাবসমূহ মানুষের হেদায়াত ও পথপ্রদর্শনের জন্য এবং আখেরাতের অনন্ত অসীমকালের জীবনে তাদেরকে চরম সাফল্যের স্তরে পৌঁছানোর জন্য যে কয়টি বিষয়ের উপর বেশী জোর দিয়েছে, এগুলোর মধ্যে একটি বিষয় এও যে, মানুষ যেন দুনিয়াকে খুবই তুচ্ছ ও মূল্যহীন মনে করে, তারা যেন এর প্রতি মন না লাগায় এবং এটাকে নিজেদের উদ্দেশ্য ও কাঙ্ক্ষিত বস্তু মনে না করে; বরং তারা যেন আখেরাতকে নিজেদের মনযিলে মকসুদ এবং স্থায়ী আবাস বলে বিশ্বাস করে সেখানের সফলতা অর্জনের চিন্তাকে নিজেদের পার্থিব সকল চিন্তার উপর প্রাধান্য দেয়। অতএব, মানুষের সৌভাগ্য এবং আখেরাতে তার সফলতা লাভের জন্য এটা যেন শর্ত যে, দুনিয়া তার দৃষ্টিতে তুচ্ছ ও মূল্যহীন হবে এবং তার মনোযোগ আখেরাতের দিকে থাকবে, আর তার অন্তরের ধ্বনি হবে এইঃ হে আল্লাহ! জীবন তো কেবল আখেরাতের জীবনই। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজের ভাষণ-বক্তৃতা এবং মজলিসী আলোচনাসমূহ দ্বারাও এর শিক্ষাদান করতেন এবং ঈমানদারদের অন্তরে নিজের বাস্তব আমল ও অবস্থা দ্বারাও এরই চিত্র অংকন করতেন। সারকথা, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যেসব হাদীস এখানে আনা হবে- যেগুলোর মধ্যে দুনিয়ার তুচ্ছতা ও এর নিন্দাবাদ বর্ণনা করা হয়েছে, এগুলোর মর্ম ও উদ্দেশ্য এ আলোকেই বুঝতে হবে।
(৭) এ কথাটিও স্মরণ রাখতে হবে যে, কুরআন হাদীসে যে দুনিয়াদারীর নিন্দাবাদ করা হয়েছে, সেটা হচ্ছে আখেরাতের বিপরীত দুনিয়া। তাই দুনিয়ার কাজের যে ব্যস্ততা এবং দুনিয়া থেকে যে উপকার লাভ আখেরাত-চিন্তার অধীনে হবে এবং আখেরাতের পথ যার দ্বারা বিঘ্নিত না হবে, সেটা নিন্দনীয় ও নিষিদ্ধ নয়; বরং সেটা তো হবে জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছার সোপান।
এ ভূমিকামূলক বিষয়টি মনের কোণে উপস্থিত রেখে এখন এ সংক্রান্ত হাদীসগুলো পাঠ করুন:
আখিরাতের তুলনায় দুনিয়া
"রেকাক” সংক্রান্ত যেসব হাদীস সামনে আসবে, এগুলোতে রাসূলুল্লাহ ﷺ দুনিয়ার অসারতা ও এর নিন্দাবাদ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলে দিয়েছেন যে, আখেরাতের তুলনায় আল্লাহর নিকট এ দুনিয়া কত তুচ্ছ ও মূল্যহীন।
যেহেতু আমাদের এ যুগে দুনিয়ার সাথে মানুষের সম্পর্ক ও এর প্রতি তাদের আসক্তি সীমা অতিক্রম করে গিয়েছে এবং নিছক পার্থিব ও বৈষয়িক উন্নতির ব্যাপারকে এত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে যে, সম্ভবতঃ ইতঃপূর্বে কখনো এটা এত গুরুত্ব লাভ করেনি। তাই বর্তমানে অবস্থা এই যে, দুনিয়ার তুচ্ছতা ও এর নিন্দাবাদের বিষয়টি অনেক মুসলমানের অন্তরেও সহজে আসতে চায় না; বরং অবস্থা এ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে যে, অনেক এমন লোক, যাদেরকে মুসলমানদের পথপ্রদর্শক ও সংস্কারক মনে করা হয়, তারাও দুনিয়ার অসারতা ও এর স্থায়িত্বহীনতার আলোচনা শুনলে অবলীলায় মন্তব্য করে বসে যে, “এটা হচ্ছে বৈরাগ্যবাদ ও ভ্রান্ত তাসাওউফের প্রচার।" তারপর যখন তাদের সামনে এ প্রসঙ্গের হাদীসসমূহ উল্লেখ করা হয়, তখন হাদীস অস্বীকারকারীদের মত তারাও এসব হাদীসের ব্যাপারে সন্দেহ-সংশয় প্রকাশ করতে শুরু করে। এ জন্য এ প্রসঙ্গের হাদীসসমূহ সংকলন করার পূর্বে আমরা ভূমিকা হিসাবে ঈমানের স্বীকৃত বিষয়াদি এবং কুরআন মজীদের আলোকে এ বিষয়টির উপর কিছু মৌলিক আলোচনার প্রয়াস পাব। আর আল্লাহই হচ্ছেন তওফীকদাতা।
দুনিয়া ও আখেরাত
(১) এই যে দুনিয়া যেখানে আমরা নিজেদের জীবন অতিবাহিত করছি, আর যেটা নিজেদের চোখ, কান ইত্যাদি অনুভূতি শক্তি দ্বারা অনুভব করছি, এটা যেমন এক বাস্তব সত্য, তেমনিভাবে আখেরাত- যার সংবাদ আল্লাহর সকল নবীরাই দিয়েছেন সেটাও এক নিশ্চিত ও বাস্তব সত্য। আমরা যে দুনিয়ায় থাকাবস্থায় সেটা দেখতে পাচ্ছি না এবং অনুভব করতে পারছি না, এটা ঠিক তেমনই, যেমন মাতৃগর্ভে থাকাকালীন আমরা এ দুনিয়াকে দেখতে পাইনি এবং এর কোন কিছুই অনুভব করতে পারিনি। তারপর যেভাবে আমরা এখানে এসে দুনিয়াকে দেখে নিয়েছি এবং আসমান যমীনের ঐসব লক্ষ লক্ষ জিনিস আমাদের চোখের সামনে এসে গিয়েছে, যেগুলোর কল্পনাও আমরা মাতৃগর্ভে থাকার সময় করতে পারতাম না। ঠিক তেমনিভাবে মৃত্যুর পর আখেরাত জগতে গিয়ে আমরা জান্নাত ও জাহান্নাম এবং ঐ জগতের সকল বস্তু দেখে নিতে পারব, যেগুলোর সংবাদ আল্লাহর নবীগণ এবং আল্লাহর কিতাবসমূহ দিয়েছে। সারকথা, আমাদের এ দুনিয়া যেমন এক বাস্তব সত্য, তদ্রূপ মৃত্যুর পর আখেরাতও আসন্ন এক বাস্তব জগত। আমাদের এর উপর ঈমান রয়েছে এবং কুরআন-হাদীস ও যুক্তির আলোকে এ ব্যাপারে আমাদের পূর্ণ আস্থা ও দ্বিধাহীন বিশ্বাস রয়েছে।
(২) দুনিয়ার ব্যাপারে আমাদের বিশ্বাস যে, এটা এবং এর সমুদয় জিনিস অস্থায়ী ও ধ্বংসশীল। কিন্তু আখেরাত এর ব্যতিক্রম। কেননা, আখেরাত অবিনশ্বর ও চিরস্থায়ী। সেখানে পৌঁছার পর মানুষও চিরন্তন জীবনের অধিকারী হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে সেখানে আল্লাহর ভাগ্যবান ও পুণ্যবান বান্দাদেরকে যেসব নেয়ামত দান করা হবে, এগুলোর ধারাও চিরকাল অব্যাহত থাকবে, কখনো বন্ধ হবে না। এটাকেই কুরআন মজীদে বলা হয়েছে "এ দানের ধারাবাহিকতা কখনো ছিন্ন হওয়ার নয়।"
অনুরূপভাবে যেসব হতভাগাদের উপর- তাদের অবাধ্যতা, কুফর ও অহংকারের কারণে আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও ক্রোধ পড়বে, তাদের দুঃখ-কষ্ট ও আযাবের ধারাও কখনো বন্ধ হবে না। যেমন, জাহান্নামীদের সম্পর্কে কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছে: "তারা জাহান্নামে চিরকাল থাকবে।” “তারা জাহান্নাম থেকে বের হয়ে আসতে পারবে না।” “জাহান্নামীদের মৃত্যুও আসবে না যে, মরে গিয়েও আযাব থেকে বেঁচে যাবে, আর তাদের শাস্তি হ্রাসও করা হবে না।"
আমরা আল্লাহর কিতাব ও নবীগণ কর্তৃক বর্ণিত এ বাস্তবতার উপরও বিশ্বাস রাখি যে, দুনিয়ার নেয়ামত ও আনন্দ-উপভোগের তুলনায় আখেরাতের আনন্দ ও নেয়ামতসমূহ অনেকগুণে উৎকৃষ্ট; বরং আখেরাতের সুখ ও নেয়ামতই প্রকৃত সুখ ও নেয়ামত। এর সাথে দুনিয়ার জিনিসের তুলনাই হয় না। তদ্রূপভাবে দুনিয়ার কোন কঠিনতর কষ্ট এবং বিরাট দুঃখেরও জাহান্নামের লঘুতর কোন শাস্তির সাথেও তুলনা হয় না।
একথা স্পষ্ট যে, এসব বিষয়ের দাবী এটাই হওয়া উচিত, মানুষের চিন্তা ও চেষ্টা-সাধনার কেন্দ্রবিন্দু হবে আখেরাত। দুনিয়ার সাথে তার সম্পর্ক কেবল এতটুকুই থাকবে, যতটুকু না হলেই নয়।
(৩) কিন্তু মানুষের সাধারণ অবস্থা এই যে, দুনিয়া যেহেতু সর্বদা তাদের চোখের সামনে, আর আখেরাত সম্পূর্ণ অদৃশ্য ও চোখের অন্তরালে, এ জন্য এসব বাস্তবতায় বিশ্বাসী মানুষের উপরও অনেক সময় দুনিয়ার চিন্তা ও এর সন্ধান প্রবল হয়ে থাকে। এটা যেন মানুষের এক ধরনের সহজাত দুর্বলতা। এ ক্ষেত্রে তাদের অবস্থা ঐ ছোট্ট শিশুদের মত, যারা বাল্যকালে তাদের খেলাধুলা ও খেলার সামগ্রী নিয়েই ব্যস্ত থাকে, ভবিষ্যত জীবনকে সুন্দর ও উন্নত করতে সহায়ক শিক্ষা ও জীবন গঠনের কর্মসূচী তাদের জন্য সবচেয়ে অনাকর্ষণীয়; বরং চরম
কঠিন মনে হয়। যাদের পিতা-মাতা তাদেরকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ঐ জীবন উন্নতকারী বিষয়সমূহের দিকে তাদেরকে আকৃষ্ট করে তুলতে পারে, তারাই সুন্দর জীবনের অধিকারী হয়ে আদর্শ মানুষ হতে পারে এবং সম্মান ও সুখের জীবন লাভ করতে পারে।
(৪) আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত নবী-রাসূল এবং তাঁর অবর্তীর্ণ কিতাবসমূহের দ্বারা সর্বযুগেই মানুষের এ ভ্রান্তি ও দুর্বলতার সংশোধনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে ও আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার যে অবস্থান এবং দুনিয়ার তুলনায় আখেরাতের যে মর্যাদা তা স্পষ্টভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু মানুষের মধ্যে এ ক্ষেত্রে ঐ শিশুসুলভ ভুলই পরিলক্ষিত হয়েছে। আল্লাহ্ তা'আলা এরশাদ করেন: তোমাদের অবস্থা এই যে, তোমরা (আখেরাতের তুলনায়) দুনিয়ার জীবনকেই প্রাধান্য দিয়ে যাচ্ছ, অথচ আখেরাত (দুনিয়ার তুলনায় বহুগুণ) উত্তম ও স্থায়ী। এ কথাটি পূর্ববর্তী কিতাবসমূহেও বলা হয়েছে, অর্থাৎ ইবরাহীম ও মূসা (আঃ)-এর সহীফাসমূহে।
(৫) কুরআন পাক যেহেতু পৃথিবীর জন্য সর্বশেষ হেদায়াতনামা, এ জন্য এর মধ্যে আরো সবিশেষ জোর দিয়ে এবং অধিক গুরুত্বের সাথে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন শিরোনামে এ দুনিয়ার অসারতা ও অস্থায়িত্বকে এবং আখেরাতের গুরুত্ব ও মর্যাদাকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। যেমন, কোথাও বলা হয়েছে: "আপনি বলে দিন যে, দুনিয়ার উপকরণ তো খুবই সামান্য। আর পরকালই হচ্ছে উত্তম, পরহেযগারদের জন্য।" (সূরা নিসা) অন্যত্র এরশাদ হয়েছে: "দুনিয়ার এ জীবন তো কেবল (কয়েক দিনের) ক্রীড়া-কৌতুক। আর পরকালের আবাসই হচ্ছে উত্তম, পরহেযগারদের জন্য। তোমরা কি এ বিষয়টি বুঝ না?" (সূরা আন'আম) অন্যত্র এরশাদ হয়েছে: "এ দুনিয়ার জীবন (এবং এখানকার উপকরণ) তো কেবল কয়েক দিনের ভোগের বস্তু। আর আখেরাতই হচ্ছে স্থায়ী আবাস।" (সূরা মু'মিন)
আরেক জায়গায় বলা হয়েছে: "আখেরাতে (অপরাধীদের জন্য) রয়েছে কঠিন শাস্তি। আর (যারা ক্ষমার যোগ্য, তাদের জন্য) রয়েছে ক্ষমা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর এ দুনিয়ার জীবন তো হচ্ছে কেবল প্রতারণার সামগ্রী।" (সূরা হাদীদ)
(৬) সারকথা, আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত নবী-রাসূলগণ এবং তাঁর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ কিতাবসমূহ মানুষের হেদায়াত ও পথপ্রদর্শনের জন্য এবং আখেরাতের অনন্ত অসীমকালের জীবনে তাদেরকে চরম সাফল্যের স্তরে পৌঁছানোর জন্য যে কয়টি বিষয়ের উপর বেশী জোর দিয়েছে, এগুলোর মধ্যে একটি বিষয় এও যে, মানুষ যেন দুনিয়াকে খুবই তুচ্ছ ও মূল্যহীন মনে করে, তারা যেন এর প্রতি মন না লাগায় এবং এটাকে নিজেদের উদ্দেশ্য ও কাঙ্ক্ষিত বস্তু মনে না করে; বরং তারা যেন আখেরাতকে নিজেদের মনযিলে মকসুদ এবং স্থায়ী আবাস বলে বিশ্বাস করে সেখানের সফলতা অর্জনের চিন্তাকে নিজেদের পার্থিব সকল চিন্তার উপর প্রাধান্য দেয়। অতএব, মানুষের সৌভাগ্য এবং আখেরাতে তার সফলতা লাভের জন্য এটা যেন শর্ত যে, দুনিয়া তার দৃষ্টিতে তুচ্ছ ও মূল্যহীন হবে এবং তার মনোযোগ আখেরাতের দিকে থাকবে, আর তার অন্তরের ধ্বনি হবে এইঃ হে আল্লাহ! জীবন তো কেবল আখেরাতের জীবনই। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজের ভাষণ-বক্তৃতা এবং মজলিসী আলোচনাসমূহ দ্বারাও এর শিক্ষাদান করতেন এবং ঈমানদারদের অন্তরে নিজের বাস্তব আমল ও অবস্থা দ্বারাও এরই চিত্র অংকন করতেন। সারকথা, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যেসব হাদীস এখানে আনা হবে- যেগুলোর মধ্যে দুনিয়ার তুচ্ছতা ও এর নিন্দাবাদ বর্ণনা করা হয়েছে, এগুলোর মর্ম ও উদ্দেশ্য এ আলোকেই বুঝতে হবে।
(৭) এ কথাটিও স্মরণ রাখতে হবে যে, কুরআন হাদীসে যে দুনিয়াদারীর নিন্দাবাদ করা হয়েছে, সেটা হচ্ছে আখেরাতের বিপরীত দুনিয়া। তাই দুনিয়ার কাজের যে ব্যস্ততা এবং দুনিয়া থেকে যে উপকার লাভ আখেরাত-চিন্তার অধীনে হবে এবং আখেরাতের পথ যার দ্বারা বিঘ্নিত না হবে, সেটা নিন্দনীয় ও নিষিদ্ধ নয়; বরং সেটা তো হবে জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছার সোপান।
এ ভূমিকামূলক বিষয়টি মনের কোণে উপস্থিত রেখে এখন এ সংক্রান্ত হাদীসগুলো পাঠ করুন:
আখিরাতের তুলনায় দুনিয়া
২৫. হযরত মুসতাওরিদ ইবন শাদ্দাদ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল ﷺ-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর কসম! আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার দৃষ্টান্ত হল, তোমাদের কোন ব্যক্তি সমুদ্রের মধ্যে তার আঙ্গুল ডুবিয়ে দেখল যে, তাতে কত পানি লেগে এসেছে। (মুসলিম)
کتاب الرقاق
عَنْ مُسْتَوْرِدِ بْنِ شَدَّادٍ قَالَ ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُولُ : « وَاللهِ مَا الدُّنْيَا فِي الْآخِرَةِ إِلَّا مِثْلُ مَا يَجْعَلُ أَحَدُكُمْ إِصْبَعَهُ فِي الْيَمِّ ، فَلْيَنْظُرْ بِمَ يَرْجِعُ؟ » (رواه مسلم)
তাহকীক:
হাদীস নং: ২৬
রিকাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ দুনিয়ার প্রতি ঘৃণা: দুনিয়া আল্লাহর কাছে ছোট কানওয়ালা মৃত ছাগলছানার চেয়েও নগণ্য
২৬. হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ একটি ছোট মৃত ছাগলছানার নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় (তাঁর সঙ্গীদেরকে) বললেনঃ তোমাদের কে এটাকে এক দিরহামে পেতে চাও? তারা বলল, আমরা তা কোন কিছু দিয়ে খরিদ করতে ইচ্ছুক নই। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! তোমাদের কাছে এটা যতটুকু নগণ্য, দুনিয়া আল্লাহর কাছে তার চেয়ে আরও বেশি নগণ্য। (মুসলিম)
کتاب الرقاق
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ بِجَدْيٍ أَسَكَّ مَيِّتٍ ، فَقَالَ : « أَيُّكُمْ يُحِبُّ أَنَّ هَذَا لَهُ بِدِرْهَمٍ؟ » فَقَالُوا : مَا نُحِبُّ أَنَّهُ لَنَا بِشَيْءٍ ، قَالُوا : « فَوَاللهِ لَلدُّنْيَا أَهْوَنُ عَلَى اللهِ ، مِنْ هَذَا عَلَيْكُمْ » (رواه مسلم)
তাহকীক:
হাদীস নং: ২৭
রিকাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ দুনিয়া মাছির পাখার সমতুল্য মূল্যবান হলে কাফিরদের এক ফোঁটা পানিও পান করতে দেওয়া হতো না
২৭. হযরত সাহল ইবন সা'আদ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: দুনিয়া যদি মাছির পাখার সমতুল্য মূল্যবানও হতো, তাহলে কাফিরদেরকে তা থেকে এক ফোঁটা পানিও পান করতে দেয়া হতো না। (মুসনাদে আহমদ, তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ)
کتاب الرقاق
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَوْ كَانَتِ الدُّنْيَا تَزِنُ عِنْدَ اللَّهِ جَنَاحَ بَعُوضَةٍ ، مَا سَقَى كَافِرًا مِنْهَا شَرْبَةً » (رواه احمد والترمذى وابن ماجه)
তাহকীক:
হাদীস নং: ২৮
রিকাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ দুনিয়া মু'মিনের বন্দীশালা এবং কাফিরের জান্নাত
২৮. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, দুনিয়া মু'মিনের বন্দীশালা এবং কাফিরের জান্নাত। (মুসলিম)
کتاب الرقاق
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « الدُّنْيَا سِجْنُ الْمُؤْمِنِ ، وَجَنَّةُ الْكَافِرِ » (رواه مسلم)
তাহকীক:
হাদীস নং: ২৯
রিকাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ দুনিয়াকে ভালবাসলে আখিরাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়
২৯. হযরত আবু মূসা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেছেনঃ যে দুনিয়াকে ভালবাসে, সে তার আখিরাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আর যে আখিরাতকে ভালবাসে, সে নিজের দুনিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই ক্ষণস্থায়ীর পরিবর্তে চিরস্থায়ীকে গ্রহণ কর। (মুসনাদে আহমদ ও বায়হাকী শুয়াবুল ঈমান)
کتاب الرقاق
عَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ " مَنْ أَحَبَّ دُنْيَاهُ أَضَرَّ بِآخِرَتِهِ ، وَمَنْ أَحَبَّ آخِرَتَهُ أَضَرَّ بِدُنْيَاهُ ، فَآثِرُوا مَا يَبْقَى عَلَى مَا يَفْنَى " (رواه احمد والبيهقى فى شعب الايمان)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৩০
রিকাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহর যিকির ও দাওয়াত ছাড়া দুনিয়া অভিশপ্ত
৩০. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: সাবধান আল্লাহর যিকির, তাঁর বন্ধুত্ব ও সম্পর্কিত বিষয় এবং দীনি জ্ঞানের শিক্ষক ও শিক্ষা গ্রহণকারী ব্যতীত দুনিয়া ও তার যাবতীয় বস্তু অভিশপ্ত ও আল্লাহর রহমত বঞ্চিত। (তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ)
کتاب الرقاق
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، اَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : أَلاَ إِنَّ الدُّنْيَا مَلْعُونَةٌ مَلْعُونٌ مَا فِيهَا إِلاَّ ذِكْرُ اللهِ وَمَا وَالاَهُ وَعَالِمٌ أَوْ مُتَعَلِّمٌ . (رواه الترمذى وابن ماجه)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৩১
রিকাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ দুনিয়াদার ব্যক্তি গুনাহ্ থেকে বাঁচতে পারে না
৩১. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: এমন কেউ আছে কি, যে পানিতে হাঁটল অথচ পানিতে তার পা সিক্ত হল না? তারা (সাহাবায়ে কিরাম) বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! এ হতে পারে না। তিনি বললেন, এভাবে দুনিয়াদার ব্যক্তি গুনাহ থেকে বাঁচতে পারে না। (বায়হাকী: শুয়াবুল ঈমান)
کتاب الرقاق
عَنْ أَنَسٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " هَلْ مِنْ أَحَدٍ مَشَى عَلَى الْمَاءِ إِلَّا ابْتَلَّتْ قَدَمَاهُ؟ " قَالُوا : لَا يَا رَسُولَ اللهِ , قَالَ : " كَذَلِكَ صَاحِبُ الدُّنْيَا لَا يَسْلَمُ مِنَ الذُّنُوبِ " (رواه البيهقى فى شعب الايمان)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৩২
রিকাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহ তাঁর মাহবুব বান্দাদেরকে দুনিয়ার অমঙ্গল থেকে রক্ষা করেন
৩২. হযরত কাতাদা ইবন নুমান (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: যাকে আল্লাহ ভালবাসেন তাকে তিনি এমনভাবে দুনিয়া থেকে রক্ষা করেন যেভাবে তোমাদের কোন ব্যক্তি রোগীকে পানি থেকে হিফাযত করে থাকে। (মুসনাদে আহমদ ও তিরমিযী)
کتاب الرقاق
عَنْ قَتَادَةَ بْنِ النُّعْمَانِ ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : إِذَا أَحَبَّ اللَّهُ عَبْدًا حَمَاهُ الدُّنْيَا كَمَا يَظَلُّ أَحَدُكُمْ يَحْمِي سَقِيمَهُ الْمَاءَ . (رواه احمد والترمذى)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৩
রিকাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ দুনিয়ায় পথিকের মত অবস্থান কর
৩৩. হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ আমার উভয় কাঁধ ধরে বললেন: দুনিয়াতে ভিনদেশী বা পথিকজনের ন্যায় অবস্থান কর। (বুখারী)
کتاب الرقاق
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ، قَالَ : أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَنْكِبِي ، فَقَالَ : « كُنْ فِي الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيبٌ أَوْ عَابِرُ سَبِيلٍ » (رواه البخارى)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৪
রিকাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ দুনিয়া উপস্থিত সামগ্রী যা নেককার ও বদকার উপভোগ করে
৩৪. হযরত আমর ইবন আস (রা) থেকে বর্ণিত, একদিন নবী ﷺ ভাষণ দান করলেন। তিনি তাঁর ভাষণে বললেনঃ সাবধান, দুনিয়া এক উপস্থিত সামগ্রী যা নেককার ও বদকার উপভোগ করে থাকে, আর মনে রাখ, আখিরাত সুনির্দিষ্ট ও সত্য এবং তাতে সর্বশক্তিমান বাদশাহ ফয়সালা করবেন। (আরো) মনে রাখ। যাবতীয় মঙ্গল জান্নাতের মধ্যে এবং যাবতীয় অমঙ্গল দোযখের মধ্যে রয়েছে। (তাই) সাবধান, আল্লাহকে ভয় করে তোমরা আমল কর এবং মনে রাখ, তোমাদেরকে তোমাদের আমলসহ (আল্লাহর কাছে) পেশ করা হবে। অতঃপর "অণু পরিমাণ মঙ্গল যে করেছে, সে তা দেখতে পাবে এবং অণু পরিমাণ অমঙ্গল যে করেছে, তাও সে দেখতে পাবে।" (শাফিঈ)
کتاب الرقاق
عَنْ عَمْروٍ ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَطَبَ يَوْمًا فَقَالَ فِي خُطْبَتِهِ : " أَلَا إِنَّ الدُّنْيَا عَرَضٌ حَاضِرٌ يَأْكُلُ مِنْهَا الْبَرُّ وَالْفَاجِرُ ، أَلَا وَإِنَّ الْآخِرَةَ أَجَلٌ صَادِقٌ يَقْضِي فِيهَا مَلِكٌ قَادِرٌ ، أَلَا وَإِنَّ الْخَيْرَ كُلَّهُ بِحَذَافِيرِهِ فِي الْجَنَّةِ ، أَلَا وَإِنَّ الشَّرَّ كُلَّهُ بِحَذَافِيرِهِ فِي النَّارِ ، أَلَا فَاعْمَلُوا وَأَنْتُمْ مِنَ اللَّهِ عَلَى حَذَرٍ ، وَاعْلَمُوا أَنَّكُمْ مَعْرُوضُونَ عَلَى أَعْمَالِكُمْ ، {فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ ، وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ} (رواه الشافعى)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৫
রিকাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ উন্মতের 'খাহেশ' ও 'সুদীর্ঘ আশা' সম্পর্কে নবী করীম ﷺ-এর ভয়
৩৫. হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমি আমার উম্মতের ব্যাপারে যা ভয় করি, তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হলো, 'খাহেশ' ও 'সুদীর্ঘ আশা'। কেননা খাহেশ (মানুষকে) হক থেকে ফিরিয়ে রাখে আর দীর্ঘ আশা আখিরাতকে ভুলিয়ে দেয়। এ দুনিয়া দ্রুত গমনকারী এবং আখিরাত দ্রুত আগমনকারী। আর তাদের উভয়ের সন্তান রয়েছে। তোমাদের ক্ষমতা থাকলে তোমরা যেন দুনিয়ার সন্তান না হও। আমল কর, কেননা বর্তমানে তোমরা দারুল আমলে (কর্মস্থলে) অবস্থান করছ, এখানে হিসাব নেয়া হবে না। আগামীকাল তোমরা থাকবে দারুল আখিরাতে (আখিরাতের গৃহে), সেখানে আমল করার কিছু থাকবে না। (বায়হাকী: শুয়াবুল ঈমান)
کتاب الرقاق
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَتَخَوَّفُ عَلَى أُمَّتِي الْهَوَى ، وَطُولُ الْأَمَلِ ، فَأَمَّا الْهَوَى فَيَصُدُّ عَنِ الْحَقِّ ، وَأَمَّا طُولُ الْأَمَلِ فَيُنْسِي الْآخِرَةَ ، وَهَذِهِ الدُّنْيَا مُرْتَحِلَةٌ ذَاهِبَةٌ ، وَهَذِهِ الْآخِرَةُ مُرْتَحِلَةٌ قَادِمَةٌ ، وَلِكُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا بَنُونَ ، فَإِنِ اسْتَطَعْتُمْ أَنْ لَا تَكُونُوا مِنْ بَنِي الدُّنْيَا فَافْعَلُوا ، فَإِنَّكُمُ الْيَوْمَ فِي دَارِ الْعَمَلِ وَلَا حِسَابَ ، وَأَنْتُمْ غَدًا فِي دَارِ الْحِسَابِ وَلَا عَمَلَ " . (رواه البيهقى فى شعب الايمان)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৬
রিকাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ আমি তোমাদের জন্য দারিদ্র্যের ভয় করি না
৩৬. হযরত আমর ইবন আউফ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ আল্লাহর শপথ, আমি তোমাদের জন্য দারিদ্র্যের ভয় করি না; বরং আমি তোমাদের ব্যাপারে ভয় করছি যে, দুনিয়া তোমাদের জন্য প্রশস্ত করে দেয়া হবে, যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য করে দেয়া হয়েছিল। তোমরা তার প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হবে যেভাবে তারা তার প্রতিযোগিতা করেছিল এবং তা তোমাদেরকে হালাক করবে যেভাবে তাদেরকে করেছিল। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الرقاق
عَنْ عَمْرِو بْنِ عَوْفٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : فَوَاللَّهِ مَا الفَقْرَ أَخْشَى عَلَيْكُمْ ، وَلَكِنِّي أَخْشَى أَنْ تُبْسَطَ عَلَيْكُمُ الدُّنْيَا كَمَا بُسِطَتْ عَلَى مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ ، فَتَنَافَسُوهَا كَمَا تَنَافَسُوهَا ، وَتُهْلِكَكُمْ كَمَا أَهْلَكَتْهُمْ » (رواه البخارى ومسلم)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৭
রিকাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ প্রত্যেক উম্মতের এক ফিতনা রয়েছে, আমার উম্মতের ফিতনা সম্পদ
৩৭. হযরত কা'ব ইবন ইয়ায (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল ﷺ-কে বলতে শুনেছি: প্রত্যেক উম্মতের এক ফিতনা রয়েছে, আমার উম্মতের ফিতনা হল মাল বা সম্পদ। (তিরমিযী)
کتاب الرقاق
عَنْ كَعْبِ بْنِ عِيَاضٍ ، قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : « إِنَّ لكُلِّ أُمَّةٍ فِتْنَةً ، وَفِتْنَةُ أُمَّتِي الْمَالُ » (رواه الترمذى)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৮
রিকাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সম্পদ ও মর্যাদার লোভ দীনের জন্য ক্ষতিকর
৩৮. হযরত কা'ব ইবন মালিক (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ দুটো ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘ ছাগলের পালে ছেড়ে দেয়া হলে তারা যা ধ্বংস করতে পারে না, তার চেয়ে বেশি মানুষের দীনের লোকসান করে তার সম্পদ ও শরাফতের লোভ। (তিরমিযী ও দারিমী)
کتاب الرقاق
عَنِ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « مَا ذِئْبَانِ جَائِعَانِ أُرْسِلَا فِي غَنَمٍ بِأَفْسَدَ لَهَا مِنْ حِرْصِ المَرْءِ عَلَى المَالِ وَالشَّرَفِ لِدِينِهِ » (رواه الترمذى والدارمى)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৯
রিকাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ বৃদ্ধ বয়সেও সম্পদ ও জীবনের লোভের যৌবন থাকে
৩৯. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: আদম সন্তান বুড়ো হয় কিন্তু তার দুটো জিনিস-মালের লোভ ও জীবনের লোভের যৌবন থাকে। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الرقاق
عَنْ أَنَسٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " يَهْرَمُ ابْنُ آدَمَ وَتَشِبُّ مِنْهُ اثْنَتَانِ : الْحِرْصُ عَلَى الْمَالِ ، وَالْحِرْصُ عَلَى الْعُمُرِ " (رواه البخارى ومسلم)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৪০
রিকাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ দুনিয়ার মহব্বত ও সুদীর্ঘ কামনা যৌবন লাভ করে
৪০. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ বৃদ্ধ মানুষের হৃদয়ে দুটো জিনিস-দুনিয়ার মহব্বত ও সুদীর্ঘ কামনার যৌবন থাকে। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الرقاق
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " لاَ يَزَالُ قَلْبُ الكَبِيرِ شَابًّا فِي اثْنَتَيْنِ : فِي حُبِّ الدُّنْيَا وَطُولِ الأَمَلِ " (رواه البخارى ومسلم)
তাহকীক: