মা'আরিফুল হাদীস
রিকাক অধ্যায়
হাদীস নং: ২৩
রিকাক অধ্যায়
হযরত হানযালা কেন বললেন তিনি মুনাফিক হয়ে গেছেন
২৩. হযরত হানযালা ইবন রাবী আল-উসাইদী (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ বকর (রা) আমার সাথে মুলাকাত করলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন: হে হানযালা! কেমন আছ? আমি বললাম, হানযালা মুনাফিক হয়ে গেছে। তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ্। তুমি কি বলছ? আমি বললাম, যখন আমরা নবী ﷺ-এর নিকট উপস্থিত থাকি, তিনি দোযখ-বেহেশত সম্পর্কে আমাদের উপদেশ দেন, তখন মনে হয় তা যেন আমাদের চোখের সামনে। যখন আমরা তাঁর কাছ থেকে বের হই, তখন পরিবার, সন্তান ও ক্ষেত-খামার আমাদেরকে মশগুল রাখে। আর আমরা অনেক কিছুই ভুলে যাই। আবু বকর (রা) বললেন, আল্লাহর কসম! আমিও এ ধরনের অবস্থার সম্মুখীন হই।
অতঃপর আমি ও আবু বকর (রা) রওনা হলাম এবং রাসূলুল্লাহর নিকট উপস্থিত হলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! হানযালা মুনাফিক হয়ে গেছে। তিনি বললেন: তোমার কি হয়েছে? আমি বললাম, আপনার কাছে থাকলে আপনি যখন জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কে আমাদেরকে নসীহত করেন, তখন মনে হয় যেন তা আমাদের চোখের সামনে। যখন আমরা আপনার নিকট থেকে বের হয়ে যাই, তখন পরিবারবর্গ, সন্তানাদি এবং বিষয়-সম্পত্তি আমাদেরকে মশগুল করে ফেলে। তাতে আমরা অনেক কিছুই ভুলে যাই। আল্লাহর রাসূল ﷺ বললেন: আমার জীবন যাঁর হাতে তাঁর শপথ! তোমরা যদি সর্বদা যিকির করতে এবং আমার কাছে যে অবস্থায় থাক সে অবস্থায় থাকতে, তাহলে ফেরেশতা তোমাদের বিছানায় ও রাস্তায় তোমাদের সাথে মুসাফাহা করতেন। কিন্তু হে হানযালা, (সব সময় এমন অবস্থায় থাকার জন্য আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দেননি, বরং) কোন কোন সময় হলেই যথেষ্ট। তিনবার তিনি এ কথা বললেন। (মুসলিম)
অতঃপর আমি ও আবু বকর (রা) রওনা হলাম এবং রাসূলুল্লাহর নিকট উপস্থিত হলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! হানযালা মুনাফিক হয়ে গেছে। তিনি বললেন: তোমার কি হয়েছে? আমি বললাম, আপনার কাছে থাকলে আপনি যখন জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কে আমাদেরকে নসীহত করেন, তখন মনে হয় যেন তা আমাদের চোখের সামনে। যখন আমরা আপনার নিকট থেকে বের হয়ে যাই, তখন পরিবারবর্গ, সন্তানাদি এবং বিষয়-সম্পত্তি আমাদেরকে মশগুল করে ফেলে। তাতে আমরা অনেক কিছুই ভুলে যাই। আল্লাহর রাসূল ﷺ বললেন: আমার জীবন যাঁর হাতে তাঁর শপথ! তোমরা যদি সর্বদা যিকির করতে এবং আমার কাছে যে অবস্থায় থাক সে অবস্থায় থাকতে, তাহলে ফেরেশতা তোমাদের বিছানায় ও রাস্তায় তোমাদের সাথে মুসাফাহা করতেন। কিন্তু হে হানযালা, (সব সময় এমন অবস্থায় থাকার জন্য আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দেননি, বরং) কোন কোন সময় হলেই যথেষ্ট। তিনবার তিনি এ কথা বললেন। (মুসলিম)
کتاب الرقاق
عَنْ حَنْظَلَةَ بْنِ الرَّبِيْع الْأُسَيِّدِيِّ قَالَ : لَقِيَنِي أَبُو بَكْرٍ ، فَقَالَ : كَيْفَ أَنْتَ؟ يَا حَنْظَلَةُ قَالَ : قُلْتُ : نَافَقَ حَنْظَلَةُ ، قَالَ : سُبْحَانَ اللهِ مَا تَقُولُ؟ قَالَ : قُلْتُ : نَكُونُ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، يُذَكِّرُنَا بِالنَّارِ وَالْجَنَّةِ ، حَتَّى كَأَنَّا رَأْيُ عَيْنٍ ، فَإِذَا خَرَجْنَا مِنْ عِنْدِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، عَافَسْنَا الْأَزْوَاجَ وَالْأَوْلَادَ وَالضَّيْعَاتِ ، فَنَسِينَا كَثِيرًا ، قَالَ أَبُو بَكْرٍ : فَوَاللهِ إِنَّا لَنَلْقَى مِثْلَ هَذَا ، فَانْطَلَقْتُ أَنَا وَأَبُو بَكْرٍ ، حَتَّى دَخَلْنَا عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قُلْتُ : نَافَقَ حَنْظَلَةُ ، يَا رَسُولَ اللهِ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ « وَمَا ذَاكَ؟ » قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ نَكُونُ عِنْدَكَ ، تُذَكِّرُنَا بِالنَّارِ وَالْجَنَّةِ ، حَتَّى كَأَنَّا رَأْيُ عَيْنٍ ، فَإِذَا خَرَجْنَا مِنْ عِنْدِكَ ، عَافَسْنَا الْأَزْوَاجَ وَالْأَوْلَادَ وَالضَّيْعَاتِ ، نَسِينَا كَثِيرًا فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنْ لَوْ تَدُومُونَ عَلَى مَا تَكُونُونَ عِنْدِي ، وَفِي الذِّكْرِ ، لَصَافَحَتْكُمُ الْمَلَائِكَةُ عَلَى فُرُشِكُمْ وَفِي طُرُقِكُمْ ، وَلَكِنْ يَا حَنْظَلَةُ سَاعَةً وَسَاعَةً » ثَلَاثَ مَرَّاتٍ . (رواه مسلم)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
জান্নাত ও জাহান্নামকে জিন্ন ও মানুষের চোখের অন্তরালে রাখা হয়েছে জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনাকালে মানুষের মনে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়, তা সর্বদা বর্তমান থাকলে মানুষ আধ্যাত্মিক উন্নতির এমন এক পর্যায়ে পৌছত ফেরেশতারা তাদের সাথে মুলাকাত করার জন্য দুনিয়ায় নেমে আসতেন। কিন্তু আশরাফুল মাখলুকাত মানুষের উপর আল্লাহ তা'আলা দুনিয়ার খিলাফতের যে যিম্মাদারী অর্পণ করেছেন, তা পুরোপুরি পালন করা সম্ভব হতো না যদি মানুষ দিন-রাত জান্নাত ও জাহান্নামের বয়ান বা যিকির-আযকারে মশগুল থাকত। সঠিক তরীকা হলো, যিকির-আযকার ও দুনিয়ার কাজ-কর্মের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে চলা। আল্লাহর আহকাম মুতাবিক দুনিয়ার কাজ-কর্ম পরিচালনা করা ইবাদতের অন্তর্গত। খিলাফতের যিম্মাদারী পালনে যতসব কাজ-কর্ম করা হোক না কেন, আর তা আপাতদৃষ্টিতে যত পার্থিব মনে করা হোক না কেন, তা ইবাদতের মধ্যে শামিল। এ যিম্মাদারী পালনের জন্য আম্বিয়ায়ে কিরাম (আ) দুনিয়াতে আগমন করেছেন এবং দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে তাঁরা তা করেছেন। আমাদের প্রিয় নবী ﷺ দিনের বেলা ইসলামের প্রচার, ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা কায়েম, ইসলামী সমাজের হিফাযত, যুদ্ধ যাত্রার প্রস্তুতি, প্রভৃতি কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন, আর রাতের বেলা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে আল্লাহর ইবাদত করতেন। অধিকন্তু তিনি পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণ ও দেখাশুনা করতেন। তিনি হাট-বাজারে যাতায়াত করতেন, সাহাবায়ে কিরাম (রা) ও অন্যান্য সাক্ষাতপ্রার্থীদের সাথে মুলাকাত করতেন, দুঃস্থজনের সাহায্য করতেন, ছোটদের সাথে হাসি-তামাশা করতেন। এসব কিছুই তাঁর ইবাদতের মধ্যে শামিল ছিল।
'কোন কোন সময়' বলে নবী ﷺ এদিকে ইঙ্গিত করেছেন যে, মানুষ পার্থিব ব্যাপার পরিত্যাগ করে সব সময় পরকালের চিন্তায় নিমগ্ন থাকবে না, বরং কোন সময় যিকির-আযকার করবে, আবার কোন কোন সময় পার্থিব যিম্মাদারী পালন করবে। এতেই যথেষ্ট হবে।
'কোন কোন সময়' বলে নবী ﷺ এদিকে ইঙ্গিত করেছেন যে, মানুষ পার্থিব ব্যাপার পরিত্যাগ করে সব সময় পরকালের চিন্তায় নিমগ্ন থাকবে না, বরং কোন সময় যিকির-আযকার করবে, আবার কোন কোন সময় পার্থিব যিম্মাদারী পালন করবে। এতেই যথেষ্ট হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)