মা'আরিফুল হাদীস

রিকাক অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৬
রিকাক অধ্যায়
আমি তোমাদের জন্য দারিদ্র্যের ভয় করি না
৩৬. হযরত আমর ইবন আউফ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ আল্লাহর শপথ, আমি তোমাদের জন্য দারিদ্র্যের ভয় করি না; বরং আমি তোমাদের ব্যাপারে ভয় করছি যে, দুনিয়া তোমাদের জন্য প্রশস্ত করে দেয়া হবে, যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য করে দেয়া হয়েছিল। তোমরা তার প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হবে যেভাবে তারা তার প্রতিযোগিতা করেছিল এবং তা তোমাদেরকে হালাক করবে যেভাবে তাদেরকে করেছিল। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الرقاق
عَنْ عَمْرِو بْنِ عَوْفٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : فَوَاللَّهِ مَا الفَقْرَ أَخْشَى عَلَيْكُمْ ، وَلَكِنِّي أَخْشَى أَنْ تُبْسَطَ عَلَيْكُمُ الدُّنْيَا كَمَا بُسِطَتْ عَلَى مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ ، فَتَنَافَسُوهَا كَمَا تَنَافَسُوهَا ، وَتُهْلِكَكُمْ كَمَا أَهْلَكَتْهُمْ » (رواه البخارى ومسلم)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

নবী করীম ﷺ আশঙ্কা করেন যে, দারিদ্র্য নয়, বরং প্রাচুর্য তাঁর উম্মতকে হালাক করবে। অভাব-অনটন ও দারিদ্র্য অবশ্যই কষ্টদায়ক কিন্তু তা মানুষের মন-মানসিকতা ও চরিত্রকে ধ্বংস সাধন করে না। অভাব-অনটন অলংঘনীয় বাধা সৃষ্টি করতে পারে না। নিরলস প্রচেষ্টা, অধ্যবসায় এবং চারিত্রিক শক্তির দ্বারা দারিদ্র্যের মোকাবিলা করে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। নবী করীম ﷺ এবং তাঁর আসহাবে কিরামের অর্থনৈতিক অবস্থা মোটেই সচ্ছল ছিল না। অপরদিকে মক্কার রাষ্ট্রশক্তি যাদের হাতে ছিল, তাদের প্রাচুর্য ও শান-শওকতের বিন্দুমাত্র অভাব ছিল না। তবু নবী করীম ﷺ তাঁর দীনহীন মুসলিম সৈন্যের দ্বারা আরবের প্রাচুর্যের অধিকারী নেতৃবর্গ এবং তাদের সৈন্য-সামন্তদের বারবার পরাজিত করেছেন। নবী করীম ﷺ-এর তিরোধানের পরও মদীনার গরীব রাষ্ট্রের গরীব সিপাহিগণ ঈমানী তেজে বলীয়ান হয়ে তৎকালীন বিশ্বের দুই পরাশক্তি ইরান ও রোমকে পরাজিত করেন। প্রাচুর্য ও ধন-দৌলত মানুষের আরাম-আয়েশ এবং ভোগ-বিলাসের বস্তু। তাই স্বাভাবিকভাবে মানুষ ধন-দৌলত কামনা করে থাকে। কিন্তু ধন-দৌলত যেভাবে মানুষের উপকার করে, ঠিক সেভাবে লোকসানও করে। মানুষ যখন ভোগ-বিলাস ও আরাম-আয়েশের মধ্যে নিজেকে লিপ্ত করে, তখন উৎসাহ-উদ্দীপনা, কর্মস্পৃহা, বিপদের ঝুঁকি গ্রহণ প্রভৃতি গুণাবলীর অভাব তার মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। দৌলতের নেশাগ্রস্ত বা দৌলত উপভোগে লিপ্ত ব্যক্তি কখনো চিন্তা করতে পারে না যে, আরাম-আয়েশের যে স্বর্গ সে দুনিয়াতে সৃষ্টি করতে চায়, তার উর্ধ্বে এক বৃহত্তর সমাজ রয়েছে এবং সে সমাজের মঙ্গল ও স্থায়িত্বের জন্য সমাজের সদস্য হিসেবে তারও কিছু করণীয় রয়েছে। এ ধরনের দুনিয়া-পরস্ত ব্যক্তিকে ভোগলিপ্সা সমাজ, জাতি এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নিকট থেকে অনেক দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। মুসলিম হিসেবে তার যে যিম্মাদারী রয়েছে, তা পালনে সে ব্যর্থ হয়। আশরফী ও দীনারের গোলাম কখনো নিজেকে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে চিন্তাও করতে পারবে না।

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের রাস্তা থেকে দূরে সরে গিয়ে যখন কোন জাতির প্রতিপত্তির অধিকারিগণ ফিসক-ফুজুরের ফিতনায় নিজেদেরকে লিপ্ত করে, তখন আল্লাহ সে জাতিকে ধধ্বংস করেন। বিভিন্ন কওমের উপর আল্লাহ বিভিন্ন ধরনের আযাব নাযিল করেন। কোন কওমের উপর প্রাকৃতিক দুর্যোগ নাযিল করেন, আবার কোন কওমকে তিনি আত্মঘাতী দ্বন্দ্বে লিপ্ত করেন, কোন কওমের উপর যালিম ব্যক্তিদেরকে শাসক হিসেবে বসিয়ে দেন কিংবা এ ধরনের আল্লাহদ্রোহী জাতির উপর অপর কোন যালিম কওমকে শাসক নিযুক্ত করেন। এ নীতি অলংঘনীয়। অতীতে এভাবে আল্লাহদ্রোহী জাতিদের ধ্বংস করা হয়েছে। তাই নবী করীম ﷺ আশঙ্কা করেছেন, প্রাচুর্যের মধ্যে তার উম্মতের লোকসান নিহিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান