মা'আরিফুল হাদীস

معارف الحديث

ঈমান অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস ১৪০ টি

হাদীস নং: ৬১
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ঈমান ও ইসলামের সারমর্ম আল্লাহর উপর ঈমান আনয়ন ও তাতে অবিচল থাকা
৬১. হযরত সুফিয়ান ইবনে আবদুল্লাহ আসসাকাকী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! ইসলাম সম্পর্কে আমাকে এমন কোন কথা বলুন যাতে আপনার পর (কোন কোন রেওয়ায়েতে 'আপনি ছাড়া অন্য কাউকে' উল্লিখিত হয়েছে) অন্য কাউকে জিজ্ঞাসা না করি। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বললেন, বল আল্লাহর উপর ঈমান এনেছি। অতঃপর তাতে অবিচল থাক। -মুসলিম
کتاب الایمان
عَنْ سُفْيَانَ بْنِ عَبْدِ اللهِ الثَّقَفِيِّ، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، قُلْ لِي فِي الْإِسْلَامِ قَوْلًا لَا أَسْأَلُ عَنْهُ أَحَدًا بَعْدَكَ - وَفِي حَدِيثِ أَبِي أُسَامَةَ غَيْرَكَ - قَالَ: " قُلْ: آمَنْتُ بِاللهِ، ثُمَّ اسْتَقِمْ " (رواه مسلم)
হাদীস নং: ৬২
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ দীন হল আন্তরিকতা: আল্লাহ্, কিতাব, রাসূল, নেতা ও মুসলমানদের প্রতি আন্তরিকতা
৬২. হযরত তামীমুদ্দারী (রা) থেকে বর্ণিত। নবী (ﷺ) বলেছেন: দীন হল আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার নাম। আমরা বললাম, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা কার প্রতি? তিনি বললেন, আল্লাহর প্রতি, তাঁর কিতাবের প্রতি, তাঁর রাসূলের প্রতি, মুসলমানদের নেতাদের প্রতি এবং মুসলিম সর্বসাধারণের প্রতি। -মুসলিম
کتاب الایمان
عَنْ تَمِيمٍ الدَّارِيِّ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «الدِّينُ النَّصِيحَةُ» قُلْنَا: لِمَنْ؟ قَالَ: «لِلَّهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُولِهِ وَلِأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ وَعَامَّتِهِمْ» (رواه مسلم)
হাদীস নং: ৬৩
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ তাকদীরের প্রতি ঈমান ছাড়া সৎকর্ম গৃহীত হয় না

[হাদীসে জিবরাঈলসহ বিভিন্ন হাদীসে তকদীর সম্পর্কে যে আলোচন করা হয়েছে তা থেকে আমরা সাধারণভাবে অবগত হয়েছি যে, তকদীরের প্রসঙ্গে ঈমান আনা ঈমানের শর্তসমূহের অন্তর্ভুক্ত। এ পরিচ্ছেদে আরও কতিপয় হাদীস ধারাবাহিকভাবে সন্নিবেশিত করা হল যা থেকে এ সম্পর্কিত আরও তথ্য লাভ করা যাবে এবং তার সাথে সাথে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আরও ভালভাবে অনুধাবন করা যাবে।]
৬৩. হযরত ইবনুদ দাইলামী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত উবাই ইবনে কা'ব (রা)-এর নিকট এসে তাঁকে বললাম, তাকদীর সম্পর্কে আমার অন্তরে পেরেশানির সৃষ্টি হয়েছে। আমাকে কিছু বলুন, আশা করি আল্লাহ্ আমার অন্তর থেকে তা দূর করে দেবেন (এবং আমি প্রশান্তি অনুভব করব)। হযরত উবাই ইবনে কা'ব (রা) বললেনঃ আল্লাহ আসমান যমীনের তামাম মখলুককে আযাব দান করলেও তিনি তার এই কাজে যালিম হবেন না। আর তিনি তাদের সবাইকে রহম করলেও তার এই রহম তাদের আমলের চেয়ে কল্যাণকর হবে। আর ওহোদ পাহাড়ের সম-পরিমাণ স্বর্ণ আল্লাহর পথে ব্যয় করলেও আল্লাহ্ তোমার কাছ থেকে তা কবুল করবেন না যদি তুমি তকদীরের প্রতি বিশ্বাসী না হও। এ ব্যাপারে তোমার দৃঢ় বিশ্বাস থাকতে হবে যে, তোমার উপর যা পতিত হয়েছে তা থেকে তুমি বাঁচতে পারবে না এবং যা থেকে তুমি রক্ষা পেয়েছ তা তোমার উপর কোনভাবেই আসত না (অর্থাৎ যা কিছু ঘটে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে সুনির্ধারিত, তাতে অনু পরিমাণ রদবদলও সম্ভব নয়) যদি তুমি এর বিপরীত ধারণা নিয়ে মৃত্যুবরণ কর তবে অবশ্যই দোযখে যাবে।

ইবনুদ দাইলামী বলেন, অতঃপর আমি হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রা)-এর নিকট এলাম। তিনিও অনুরূপ কথা বললেন, অতঃপর আমি হযরত হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা)-এর নিকট এলাম। তিনিও অনুরূপ বললেন, অতঃপর আমি হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত (রা)-এর নিকট এলাম। তিনিও নবী করীম (ﷺ)-এর সূত্রে অনুরূপ কথা বললেন। -আহমদ, আবু দাউদ, ইবনে মাজা
کتاب الایمان
عَنِ ابْنِ الدَّيْلَمِيِّ، قَالَ: أَتَيْتُ أُبَيَّ بْنَ كَعْبٍ، فَقُلْتُ: لَهُ قَدْ وَقَعَ فِي نَفْسِي شَيْءٌ مِنَ الْقَدَرِ، فَحَدِّثْنِي لَعَلَّ اللَّهَ أَنْ يُذْهِبَهُ مِنْ قَلْبِي، فَقَالَ: «لَوْ أَنَّ اللَّهَ عَذَّبَ أَهْلَ سَمَاوَاتِهِ وَأَهْلَ أَرْضِهِ عَذَّبَهُمْ وَهُوَ غَيْرُ ظَالِمٍ لَهُمْ، وَلَوْ رَحِمَهُمْ كَانَتْ رَحْمَتُهُ خَيْرًا لَهُمْ مِنْ أَعْمَالِهِمْ، وَلَوْ أَنْفَقْتَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ مَا قَبِلَهُ اللَّهُ مِنْكَ حَتَّى تُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ، وَتَعْلَمَ أَنَّ مَا أَصَابَكَ لَمْ يَكُنْ لِيُخْطِئَكَ، وَأَنَّ مَا أَخْطَأَكَ لَمْ يَكُنْ لِيُصِيبَكَ، وَلَوْ مُتَّ عَلَى غَيْرِ هَذَا لَدَخَلْتَ النَّارَ»، قَالَ: ثُمَّ أَتَيْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ مَسْعُودٍ فَقَالَ مِثْلَ ذَلِكَ، قَالَ: ثُمَّ أَتَيْتُ حُذَيْفَةَ بْنَ الْيَمَانِ، فَقَالَ مِثْلَ ذَلِكَ، قَالَ: ثُمَّ أَتَيْتُ زَيْدَ بْنَ ثَابِتٍ فَحَدَّثَنِي عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِثْلَ ذَلِكَ (رواه احمد وابو داؤد وابن ماجة)
হাদীস নং: ৬৪
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ তদবীর তকদীরের অন্তর্ভুক্ত
৬৪. হযরত আবু খিযামা থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি কি মত পোষণ করেন, ঝাড়-ফুকের (ব্যাথা-বেদনা দূর করার জন্য) যে তরীকা আমরা অবলম্বন করি এবং চিকিৎসার জন্য যে ঔষধ ব্যবহার করি এবং বিপদাপদ থেকে বাঁচার জন্য যে তদবীর করি তা কি তাকদীরের কোন কিছু রদ করতে পারে? আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেনঃ এসবও আল্লাহর (নির্ধারিত) তাকদীরের অধীন। -মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযী, ইবনে মাজা
کتاب الایمان
عَنْ ابْنِ أَبِي خُزَامَةَ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ رَجُلًا أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَرَأَيْتَ رُقًى نَسْتَرْقِيهَا وَدَوَاءً نَتَدَاوَى بِهِ وَتُقَاةً نَتَّقِيهَا هَلْ تَرُدُّ مِنْ قَدَرِ اللَّهِ شَيْئًا؟ فَقَالَ: «هِيَ مِنْ قَدَرِ اللَّهِ» (رواه احمد والترمذى وابن ماجه)
হাদীস নং: ৬৫
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ দোযখ ও বেহেশতে প্রত্যেকের স্থান নির্ধারিত
৬৫. হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: এমন কোন লোক নেই যার স্থান দোযখে এবং বেহেশতে লেখা হয়নি (অর্থাৎ কোন ব্যক্তি বেহেশতে অথবা দোযখে যেখানেই থাক-তা পূর্ব নির্ধারিত)। সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) তাহলে আমরা কি ভাগ্যলিপির উপর তাওয়াক্কুল করে বসে থাকব এবং আমল ছেড়ে দেব? (অর্থাৎ সবকিছু যখন পূর্ব-নির্ধারিত ও লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে-তখন চেষ্টা-সাধনা করে আর কি লাভ)? তিনি বললেন, না, আমল করতে থাক, কারণ প্রত্যেক ব্যক্তি সেই কাজেরই সুযোগ পায় যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। অতএব যে ব্যক্তি সৌভাগ্যবান সে সৎকর্মের সুযোগ পায় এবং যে দুর্ভাগা সে মন্দ আমলের সুযোগ পেয়ে থাকে। অতঃপর তিনি এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন। "যে ব্যক্তি দান করল, তাকওয়ার পথ অবলম্বন করল এবং সত্য সুন্দর (ইসলাম)-কে গ্রহণ করল, আমরা তাকে জান্নাতে দিব। আর যে ব্যক্তি কৃপণতা করল, অহঙ্কার করল এবং সত্য সুন্দর (ইসলাম)-কে কবুল করল না, আমরা তার জন্য কঠিন পথ (দোযখ) সহজ করে দেব।" -সূরা লাইলঃ ৫-১০
کتاب الایمان
عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا وَقَدْ كُتِبَ مَقْعَدُهُ مِنَ النَّارِ، وَمَقْعَدُهُ مِنَ الجَنَّةِ» قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَفَلاَ نَتَّكِلُ عَلَى كِتَابِنَا، وَنَدَعُ العَمَلَ؟ قَالَ: «اعْمَلُوا فَكُلٌّ مُيَسَّرٌ لِمَا خُلِقَ لَهُ، أَمَّا مَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ السَّعَادَةِ فَيُيَسَّرُ لِعَمَلِ أَهْلِ السَّعَادَةِ، وَأَمَّا مَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الشَّقَاءِ فَيُيَسَّرُ لِعَمَلِ أَهْلِ الشَّقَاوَةِ»، ثُمَّ قَرَأَ: {فَأَمَّا مَنْ أَعْطَى وَاتَّقَى وَصَدَّقَ بِالحُسْنَى فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْيُسْرَى، وَأَمَّا مَنْ بَخِلَ وَاسْتَغْنَى، وَكَذَّبَ بِالْحُسْنَى فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَى} (رواه البخارى و مسلم)
হাদীস নং: ৬৬
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ প্রত্যেক জিনিস তাকদীরে পূর্বনির্ধারিত
৬৬. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ প্রত্যেক জিনিস তকদীর থেকে (পূর্ব নির্ধারিত), এমন কি মানুষের যোগ্যতা অযোগ্যতাও। -মুসলিম
کتاب الایمان
عَنِ بْنَ عُمَرَ قال قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كُلُّ شَيْءٍ بِقَدَرٍ، حَتَّى الْعَجْزِ وَالْكَيْسِ، أَوِ الْكَيْسِ وَالْعَجْزِ» (رواه مسلم)
হাদীস নং: ৬৭
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ তকদীর সম্পর্কিত তর্ক-বিতর্কে নবী করীম (ﷺ)-এর রাগ
৬৭. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা তাকদীর সম্পর্কে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত ছিলাম, এই অবস্থায় নবী করীম (ﷺ) বের হয়ে আমাদের নিকট এলেন। এতে তিনি চরম রাগান্বিত হলেন। তাঁর চেহারা এমন লালবর্ণ ধারণ করল যে, মনে হতে লাগল তাঁর গণ্ডদেশে আনারের দানা ছড়ানো হয়েছে। অতঃপর তিনি বললেন : তোমাদের কি এ সম্পর্কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমাকে কি তমাদের কাছে এই পয়গাম দিয়ে পাঠানো হয়েছে (যে তাকদীরের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ নাজুক বিষয় নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হব)। তোমাদের পূর্বের উম্মতগণ যখন এ সম্পবে পর্কে তর্ক-বিতর্ক করেছে, তখন তারা হালাক হয়েছে। আমি তোমাদেরকে কসম দিয়ে বলছি, আমি তোমাদেরকে কসম দিয়ে বলছি, তোমরা এ ব্যাপারে তর্ক-বিতর্ক করো না। -তিরমিযী
کتاب الایمان
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ نَتَنَازَعُ فِي القَدَرِ فَغَضِبَ حَتَّى احْمَرَّ وَجْهُهُ، حَتَّى كَأَنَّمَا فُقِئَ فِي وَجْنَتَيْهِ حُبُّ الرُّمَّانِ، فَقَالَ: أَبِهَذَا أُمِرْتُمْ أَمْ بِهَذَا أُرْسِلْتُ إِلَيْكُمْ؟ إِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حِينَ تَنَازَعُوا فِي هَذَا الأَمْرِ، عَزَمْتُ عَلَيْكُمْ أَلاَّ تَنَازَعُوا فِيهِ. (رواه الترمذى)
হাদীস নং: ৬৮
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ আসমান-যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে মখলুকের তকদীর সৃষ্টি ও আল্লাহর আরশ পানির উপর ছিল
৬৮. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা আসমান ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে সমস্ত মখলুকের তাকদীর লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন: আল্লাহর আরশ ছিল
کتاب الایمان
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ " كَتَبَ اللهُ مَقَادِيرَ الْخَلَائِقِ قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِخَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ، قَالَ: وَعَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ " (رواه مسلم)
হাদীস নং: ৬৯
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মাতৃগর্ভে সন্তানের বিভিন্ন পর্যায় এবং তাকদীরের লিখন
৬৯. হযরত ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর সত্যবাদী ও সত্যবাদীরূপে স্বীকৃত রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে বলেছেন: তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টির উপাদান তার মায়ের গর্ভে চল্লিশ দিন পর্যন্ত বীর্য আকারে সঞ্চিত থাকে, অতঃপর চল্লিশ দিনে জমাট রক্তে পরিণত হয়, অতঃপর চল্লিশ দিনে তা মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়। অতঃপর আল্লাহ্ তা'আলা চারটি বিষয়সহ তার কাছে ফিরিশেতা পাঠান। ফিরিশেতা তার আমল, তার আযল (মৃত্যু), তার রিযিক এবং সে দুর্ভাগা না সৌভাগ্যবান হবে তা লিখেন। অতঃপর ফিরিশেতা তার মধ্যে রূহ ফুঁকে দেন। যে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই তাঁর শপথ করে বলছি, তোমাদের কেউ জান্নাতবাসীর আমল করে এবং যখন তার ও জান্নাতের মাঝে একহাত মাত্র ব্যবধান থাকে তখন ভাগ্যলিপি তাকে অতিক্রম করে ও সে জাহান্নামবাসীর কাজ করে এবং জাহান্নামে প্রবেশ করে। আবার তোমাদের মধ্যে কেউ জাহান্নামবাসীর কাজ করে যখন তার ও জাহান্নামের মাঝে একহাত মাত্র ব্যবধান থাকে তখন ভাগ্যলিপি তাকে অতিক্রম করে ও সে জান্নাতবাসীর কাজ করে এবং জান্নাতে প্রবেশ করে। -বুখারী, মুসলিম
کتاب الایمان
عَنِ ابْنَ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، حَدَّثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ الصَّادِقُ المَصْدُوقُ: " أَنَّ خَلْقَ أَحَدِكُمْ يُجْمَعُ فِي بَطْنِ أُمِّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا أَوْ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً، ثُمَّ يَكُونُ عَلَقَةً مِثْلَهُ، ثُمَّ يَكُونُ مُضْغَةً مِثْلَهُ، ثُمَّ يُبْعَثُ إِلَيْهِ المَلَكُ فَيُؤْذَنُ بِأَرْبَعِ كَلِمَاتٍ، فَيَكْتُبُ: رِزْقَهُ، وَأَجَلَهُ، وَعَمَلَهُ، وَشَقِيٌّ أَمْ سَعِيدٌ، ثُمَّ يَنْفُخُ فِيهِ الرُّوحَ، فَإِنَّ أَحَدَكُمْ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ الجَنَّةِ حَتَّى لاَ يَكُونُ بَيْنَهَا وَبَيْنَهُ إِلَّا ذِرَاعٌ، فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الكِتَابُ، فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ فَيَدْخُلُ النَّارَ، وَإِنَّ أَحَدَكُمْ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ، حَتَّى مَا يَكُونُ بَيْنَهَا وَبَيْنَهُ إِلَّا ذِرَاعٌ، فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الكِتَابُ، فَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ الجَنَّةِ فَيَدْخُلُهَا " (رواه البخارى ومسلم)
হাদীস নং: ৭০
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মানুষের হৃদয় আল্লাহ যেভাবে ইচ্ছা পরিবর্তন করেন
৭০. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: আদম সন্তানদের অন্তরসমূহ একটি অন্তরের ন্যায় দয়ালু আল্লাহর আঙ্গুল সমূহের মধ্যে দুটো আঙ্গুলের মাঝখানে। তিনি যেটা যেভাবে চান তা পরিবর্তন করেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ হে হৃদয়ের পরিবর্তনকারী! আমাদের হৃদয়কে আপনার আনুগত্যের দিকে পরিবর্তন করুন। -মুসলিম
کتاب الایمان
عَنْ عَبْدَ اللهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ ، قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:«إِنَّ قُلُوبَ بَنِي آدَمَ كُلَّهَا بَيْنَ إِصْبَعَيْنِ مِنْ أَصَابِعِ الرَّحْمَنِ، كَقَلْبٍ وَاحِدٍ، يُصَرِّفُهُ كَيْفَ يَشَاءُ» ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اللهُمَّ مُصَرِّفَ الْقُلُوبِ صَرِّفْ قُلُوبَنَا عَلَى طَاعَتِكَ» (رواه مسلم)
হাদীস নং: ৭১
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মৃত্যুর পর আলমে বারযাখ, কিয়ামত

কয়েকটি নীতিগত কথা:
মৃত্যুর পরবর্তী অবস্থা সংক্রান্ত হাদীস অধ্যয়ন এবং তার অর্থ অনুধাবন করার জন্য কয়েকটি নীতিগত কথা স্মরণ রাখার প্রয়োজন রয়েছে। এসব কথা ভালভাবে উপলব্ধি করা হলে মরণোত্তর অবস্থা সংক্রান্ত হাদীসের বিষয়বস্তু সম্পর্কে এমন কোন সন্দেহ ও ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি হবে না যা বর্তমান কালে অজ্ঞতার কারণে অনেকের অন্তরে সৃষ্ট হয়ে থাকে।

(১) আম্বিয়া আলাইহিমুসসালাম যে বিশেষ দায়িত্ব সম্পাদন করার জন্য দুনিয়ায় প্রেরিত হয়েছেন সে সম্পর্কে আমাদেরকে অবহিত করা একান্ত আবশ্যক। এসব বিষয় আমাদের জন্য খুব জরুরী হলেও আমরা তা আমাদের বুদ্ধি এবং জ্ঞানের দ্বারা অবগত হতে পারি না। অর্থাৎ আমাদের বুদ্ধি এবং জ্ঞান বহির্ভূত।

(২) আম্বিয়ায়ে কিরামের জন্য নির্ভুল এবং অকাট্য জ্ঞানের এমন এক উৎস রয়েছে যা সাধারণ মানুষের নিকট নেই। ওহীর মারফত তাঁরা এমন জ্ঞান হাসিল করে থাকেন যা আমরা আমাদের দৃষ্টি, শ্রুতি, বুদ্ধি এবং চেতনার দ্বারা লাভ করতে পারি না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, দূরবিক্ষণযন্ত্রের দ্বারা যা দেখা যায় খালি চোখে তা দেখা যায় না।

(৩) কোন নবীকে নবী হিসেবে মেনে নেয়া এবং তাঁর উপর ঈমান আনার অর্থ হল, আমরা পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে একথা কবুল করে নিয়েছি যে, তিনি ওহীর মারফত আমাদেরকে যে জিনিস জ্ঞাত করেন এবং যার কোন জ্ঞান আমাদের নেই তার প্রতিটি অক্ষর সত্য এবং তাতে সামান্যতম সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।

(৪) আম্বিয়ায়ে কিরাম এমন কোন কথা বলেন না যা বুদ্ধির দিক থেকে অসম্ভব। অবশ্য কোন কোন বিষয় কোন কোন ব্যক্তির বোধগম্য নাও হতে পারে। এ ধরনের হওয়াটাই স্বাভাবিক। যদি আম্বিয়ায়ে কিরাম শুধু এমন সব কথা বলবেন যা আমরা নিজেরা চিন্তাভাবনা করে সহজে খুঁজে নিতে পারি, তাহলে তাদের প্রয়োজনীয়তা কোথায় বাকী থাকে।

(৫) আম্বিয়ায়ে কিরাম মরণোত্তর জীবন-আলমে বরযখ এবং আলমে আখিরাত সম্পর্কে যা বলেছেন তা আমাদের বুদ্ধি বিবেচনার নিকট অসম্ভব অনুমিত হয় না। অবশ্য আমরা নিজেরা বুদ্ধি-বিবেচনা করে তা জ্ঞাত হতে সক্ষম নই এবং পার্থিব দুনিয়াতে সে সব জিনিসের অস্তিত্ব বিদ্যমান না থাকার কারণে আমরা তা এমনভাবে জানতে পারি না যেভাবে অস্তিত্ব বিদ্যমান জিনিস সম্পর্কে জানতে পারি।

(৬) চোখ, কান, নাক, বুদ্ধি, অনুভূতি প্রভৃতি জ্ঞান অর্জন করার প্রত্যক্ষ মাধ্যম হলেও এসবের শক্তি সীমিত এবং ক্ষেত্রও সীমাবদ্ধ। আধুনিক যন্ত্রপাতির বাহ্যিক প্রয়োগের মাধ্যমে এসবের শক্তি বৃদ্ধি করা যায়। যেমন পানি বা রক্তের মধ্যে যে জীবাণু রয়েছে তা অনুবিক্ষণ যন্ত্রের দ্বারা আমরা দেখতে পারি, অথচ খালি চোখে তা আমরা দেখতে পারি না। বেতারের মাধ্যমে সহস্র মাইল দূরবর্তী শব্দ আমাদের কান শুনতে পায়। অনুরূপভাবে চোখ কানের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানের দ্বারা যতটুকু চিন্তা করা যায় তার চেয়ে ঢের বেশী একজন শিক্ষিত লোক পুথিগত তথ্যের সাহায্যে চিন্তাভাবনা করতে সক্ষম। এসব উপমা থেকে আমরা একথা বুঝতে পারলাম যে, আমরা দেখতে পাইনি বা আমরা শুনতে পাইনি, বা আমরা বুঝতে অক্ষম বিধায় কোন জিনিসের অস্তিত্ব এবং হাকীকত অস্বীকার করা চরম মূর্খতা।

আল্লাহ সুবহানাহু বলেন,

وَمَاۤ اُوۡتِيۡتُمۡ مِّنَ الۡعِلۡمِ اِلَّا قَلِيۡلًا

"আমি তোমাদেরকে অতি অল্প জ্ঞানই দান করেছি।" (সূরা বনী ইসরাঈল - ৮৫)

(৭) দুটো জিনিসের সমন্বয় রয়েছে মানুষের মধ্যে অর্থাৎ শরীর এবং রূহ। আমরা চোখের দ্বারা শরীরের অস্তিত্ব দেখতে পাই। কিন্তু চোখের দ্বারা রূহ না দেখতে পেলেও তার অস্তিত্ব সম্পর্কে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে। মানুষের দেহ এবং রূহের পারস্পরিক সম্পর্ক এরূপ যে, দুনিয়ার যাবতীয় বিপদ-মুসিবত, আরাম-আয়েশ, স্বাদ প্রভৃতি সরাসরি শরীরের উপর প্রভাব বিস্তার করে কিন্তু রূহ প্রভাবিত হতে বাধ্য হয়। শরীর আঘাতের দ্বারা আহত বা আগুনের দ্বারা দগ্ধ হলে শরীর প্রত্যক্ষভাবে আক্রান্ত এবং ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাতে রূহও কষ্ট পেয়ে থাকে। অনুরূপভাবে খানাপিনার মাধ্যমে দেহ সরাসরি স্বাদ গ্রহণ করে থাকলে রূহ তারও আস্বাদন পেয়ে থাকে।

মোটকথা আমাদের এ পৃথিবীতে দেহ যেন কার্যসম্পাদনকারী এবং রুহ তার অধীন। কিন্তু আলমে বারযাখ সম্পর্কে কুরআন এবং হাদীসে যা বর্ণনা পাওয়া যায় তা সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করলে এটা অনুমিত হয় যে সেখানে ব্যাপারটি সম্পূর্ণ বিপরীত। আলমে বারযাখে যা ঘটবে তা রূহের উপর ঘটবে এবং শরীর তা সহ্য করতে বাধ্য হবে। সম্ভবতঃ এ বিষয়টি সহজে উপলব্ধি করানোর জন্য আল্লাহ আমাদের জন্য স্বপ্নের ব্যবস্থা করেছেন। বুদ্ধি বিবেচনা সম্পন্ন মানুষ এ ধরনের স্বপ্ন জীবনে অনেক বার দেখে থাকে যাতে সে আরাম বোধ করে বা কষ্ট পেয়ে থাকে। কিন্তু এ কষ্ট বা আরাম প্রত্যক্ষভাবে রূহ লাভ করে থাকে। শরীরের উপর শুধুমাত্র প্রভাব পড়ে থাকে। যখন কোন ব্যক্তি স্বপ্ন দেখে যে কোন আহার্যবস্তু খাচ্ছে তখন সে এরূপ দেখে না যে খাদ্য তার রূহ খাচ্ছে বরং সে দেখে যে মুখের দ্বারা সর্বদা খানাপিনা করে থাকে সেইমুখের দ্বারাই খাদ্য গ্রহণ করছে অনুরূপ ভাবে সে যদি দেখে যে তাকে আঘাত করা হয়েছে, তাহলে সে এরূপ অনুভব করে না যে তার রূহের উপর আঘাত করা হয়েছে বরং সে অনুভব করে যে তার শরীরের উপর আঘাত করা হয়েছে। অথচ স্বপ্নে যা ঘটে তা শরীরের উপর ঘটেনা বরং কহের উপর ঘটে থাকে। শরীরের উপর প্রভাব পড়ে থাকে।

অবশ্য কোন কোন সময় স্বপ্নে দৃষ্ট ঘটনা শরীরের উপর এমন প্রভাব ও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে যে, স্বপ্ন দর্শনকারী ব্যক্তি জাগ্রত হওয়ার পরও শরীরের উপর তার প্রভাব অনুভব করে থাকে। স্বপ্ন দর্শনকারীর উপর যা ঘটে থাকে তা তার পাশের লোকও টের পায় না। কারণ সরাসরি নিজের শরীরের উপর যা ঘটে থাকে তাই মানুষ টের পেতে পারে। মোটকথা মৃত্যুর পর কিয়ামত পর্যন্ত মানুষের উপর যা ঘটবে তা রূহের উপর সংঘটিত হবে এবং শরীর বাধ্য হয়ে তাতে শরীক থাকবে। স্বপ্নের উদাহরণের দ্বারা 'আলমে বারযাখ' সম্পর্কে ধারণা করা কোন জ্ঞানী ব্যক্তির পক্ষে মোটেই কঠিন নয়।

আশা করা যায় যে, দুনিয়া এবং আলমে বারযাখের এ পার্থক্য অনুধাবন করার পর কবরের সাওয়াল-জাওয়াব এবং আযাব সম্পর্কিত হাদীস দুর্বল ঈমানদার এবং অল্প জ্ঞানের অধিকারীদের মনে যে ধরনের সন্দেহ ও ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি করে থাকে তা সৃষ্ট হবে না।

মৃত্যুর পর আলমে বারযাখ: কবরে মৃত ব্যক্তির সওয়াল-জওয়াব
৭১. হযরত বারাআ ইবনে আযিব (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ দু'জন ফিরিশেতা তার (মৃত ব্যক্তির) কাছে আসেন এবং তাকে উপবেশন করান, অতঃপর তাকে সাওয়াল করেন। তোমার রব কে? সে (মুমিন ব্যক্তি) জবাব দেয়, আল্লাহ আমার রব। তাঁরা তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমার দীন কি? সে জবাব দান করে: আমার দীন ইসলাম। অতঃপর তাঁরা তাকে প্রশ্ন করেন: তোমাদের মধ্যে যাকে প্রেরণ করা হয়েছিল তাঁর সম্পর্কে তোমার ধারণা কি? সে জবাব দেয়। তিনি আল্লাহর রাসূল। তাঁরা তাকে জিজ্ঞাসা করেন। কে তোমাকে বলেছে? সে জবাব দেয়: আল্লাহর কিতাব পড়েছি, অতঃপর ঈমান এনেছি এবং তার সত্যতা স্বীকার করেছি। আল্লাহর রাসূল বলেনঃ ইহা মুমিন ব্যক্তির বক্তব্য। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন, "আল্লাহ মুমিন ব্যক্তিদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে সত্য কথার উপর অবিচল রাখবেন।" -সূরা ইবরাহীম - ২৭

রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেন: অতঃপর আসমান থেকে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করেন: আমার বান্দাহ সত্য বলেছে, তার জন্য জান্নাতের ফরাশ বিছিয়ে দাও, জান্নাতের বস্ত্রে তাকে আচ্ছাদিত কর এবং জান্নাতের একটি দরজা তার দিকে খুলে দাও। অতঃপর তার জন্য দরজা খুলে দেয়া হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ তাতে তার কাছে (জান্নাত থেকে) হাওয়া ও সুগন্ধি আসে এবং জান্নাতের দিকে তার দৃষ্টিশক্তি সম্প্রসারিত করা হয়।

অতঃপর কাফেরের মৃত্যুর উল্লেখ করে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেন: তার রূহ তার শরীরে ফিরিয়ে দেয়া হয়। দু'জন ফিরিশতা তার কাছে আসেন এবং তাকে বসান। অতঃপর তাঁরা তাকে প্রশ্ন করেন: তোমার রব কে? সে জবাব দেয়: হায়! হায়! আমি কিছু জানি না। ফিরিশেতা জিজ্ঞাসা করেন, তোমার দীন কি? সে জবাব দেয়, হায়! হায়! আমি কিছু জানি না। অতঃপর তাঁরা তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমাদের মধ্যে যাকে প্রেরণ করা হয়েছিল তাঁর সম্পর্কে তোমার ধারণা কি? সে বলে, হায়! হায়! আমি কিছু জানি না। অতঃপর আসমান থেকে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করেন: সে মিথ্যা বলছে। তার জন্য দোযখের ফরাশ বিছাও, তাকে দোযখের বস্ত্রে আচ্ছাদিত কর এবং তার জন্য দোযখের দিকে দরজা খুলে দাও। অতঃপর তার কাছে দোযখের গরম হাওয়া আসতে থাকে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন: তার জন্য করব এমন সংকীর্ণ করা হবে যে, বুকের এক পাঁজর অপর পাঁজরের সাথে মিশে যাবে। আর তার জন্য এমন এক ফিরিশতা নিয়োগ করা হবে, যে কিছু দেখবেনা ও শুনবেনা এবং তার কাছে লোহার এমন এক মুগুর থাকবে যা দিয়ে পাহাড়ে আঘাত করলে তা বিচূর্ণ হয়ে যাবে। ফিরিশতা তাকে লোহার মুগুর দিয়ে আঘাত করবেন এবং সে এমন চিৎকার করবে যে, মানুষ ও জিন ব্যতীত পূর্ব পশ্চিমের মধ্যবর্তী সকল প্রাণী তা শুনতে পাবে। সে মাটি হয়ে যাবে অতঃপর তাতে রূহ ফিরিয়ে দেয়া হবে। -মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ
کتاب الایمان
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: يَأْتِيهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِهِ فَيَقُولَانِ لَهُ: مَنْ رَبُّكَ؟ فَيَقُولُ: رَبِّيَ اللَّهُ، فَيَقُولَانِ لَهُ: مَا دِينُكَ؟ فَيَقُولُ: دِينِيَ الْإِسْلَامُ، فَيَقُولَانِ لَهُ: مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ؟ " قَالَ: " فَيَقُولُ: هُوَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَقُولَانِ: وَمَا يُدْرِيكَ؟ فَيَقُولُ: قَرَأْتُ كِتَابَ اللَّهِ فَآمَنْتُ بِهِ وَصَدَّقْتُ «زَادَ فِي حَدِيثِ جَرِيرٍ» فَذَلِكَ قَوْلُ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ {يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا} الْآيَةُ قَالَ: " فَيُنَادِي مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ: أَنْ قَدْ صَدَقَ عَبْدِي، فَأَفْرِشُوهُ مِنَ الْجَنَّةِ، وَافْتَحُوا لَهُ بَابًا إِلَى الْجَنَّةِ، وَأَلْبِسُوهُ مِنَ الْجَنَّةِ " قَالَ: «فَيَأْتِيهِ مِنْ رَوْحِهَا وَطِيبِهَا» قَالَ: «وَيُفْتَحُ لَهُ فِيهَا مَدَّ بَصَرِهِ» قَالَ: «وَإِنَّ الْكَافِرَ» فَذَكَرَ مَوْتَهُ قَالَ: " وَتُعَادُ رُوحُهُ فِي جَسَدِهِ، وَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِهِ فَيَقُولَانِ: لَهُ مَنْ رَبُّكَ؟ فَيَقُولُ: هَاهْ هَاهْ هَاهْ، لَا أَدْرِي، فَيَقُولَانِ لَهُ: مَا دِينُكَ؟ فَيَقُولُ: هَاهْ هَاهْ، لَا أَدْرِي، فَيَقُولَانِ: مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ؟ فَيَقُولُ: هَاهْ هَاهْ، لَا أَدْرِي، فَيُنَادِي مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ: أَنْ كَذَبَ، فَأَفْرِشُوهُ مِنَ النَّارِ، وَأَلْبِسُوهُ مِنَ النَّارِ، وَافْتَحُوا لَهُ بَابًا إِلَى النَّارِ " قَالَ: «فَيَأْتِيهِ مِنْ حَرِّهَا وَسَمُومِهَا» قَالَ: «وَيُضَيَّقُ عَلَيْهِ قَبْرُهُ حَتَّى تَخْتَلِفَ فِيهِ أَضْلَاعُهُ» زَادَ فِي حَدِيثِ جَرِيرٍ قَالَ: «ثُمَّ يُقَيَّضُ لَهُ أَعْمَى أَبْكَمُ مَعَهُ مِرْزَبَّةٌ مِنْ حَدِيدٍ لَوْ ضُرِبَ بِهَا جَبَلٌ لَصَارَ تُرَابًا» قَالَ: «فَيَضْرِبُهُ بِهَا ضَرْبَةً يَسْمَعُهَا مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ إِلَّا الثَّقَلَيْنِ فَيَصِيرُ تُرَابًا» قَالَ: «ثُمَّ يُعَادُ فِيهِ الرُّوحُ» (رواه احمد وابو داؤد)
হাদীস নং: ৭২
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ জান্নাতী ব্যক্তি জান্নাত ও দোযখী দোযখ দেখবে এবং কাফের ও মুনাফিক কঠিন আযাব ভোগ করে
৭২. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ বান্দাকে যখন তার কবরে রাখা হয়, তার সঙ্গীগণ তার কাছ থেকে প্রত্যাবর্তন করে এবং সে তাদের পায়ের জুতার শব্দ শুনতে থাকে তখন তার কাছে দু'জন ফিরিশেতা এসে তাকে উঠিয়ে বসান এবং বলেন, তুমি এ ব্যক্তি মুহাম্মদ (ﷺ) সম্পর্কে কি বলতে? অতএব মুমিন ব্যক্তি জবাব দেয়, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। অতঃপর তারা তাকে বলেন: দোযখের মধ্যে তোমার যে স্থান ছিল তা দেখ। আল্লাহ তার পরিবর্তে তোমার জন্য জান্নাতের বাসস্থান দিয়েছেন। অতঃপর সে উভয় স্থান একসঙ্গে দেখে। মুনাফিক ও কাফের ব্যক্তিকে যখন প্রশ্ন করা হয়; তুমি এ ব্যক্তি সম্পর্কে কি বলতে? সে জবাব দেয়, আমি জানি না। অন্যলোক বলত আমিও তাই বলতাম। তখন তাকে বলা হয়, তুমি না জেনেছিলে আর না অনুসরণ করেছিলে। এবং তখন তাকে লোহার মুগুর দিয়ে আঘাত করা হয়। তাতে সে এমন চিৎকার করে যা জীন ও মানুষ ছাড়া আশে-পাশের সবাই শুনতে পায়। -বুখারী ও মুসলিম
کتاب الایمان
عَنْ أَنَس قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ العَبْدَ إِذَا وُضِعَ فِي قَبْرِهِ وَتَوَلَّى عَنْهُ أَصْحَابُهُ، وَإِنَّهُ لَيَسْمَعُ قَرْعَ نِعَالِهِمْ، أَتَاهُ مَلَكَانِ فَيُقْعِدَانِهِ، فَيَقُولاَنِ: مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ لِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَمَّا المُؤْمِنُ، فَيَقُولُ: أَشْهَدُ أَنَّهُ عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ، فَيُقَالُ لَهُ: انْظُرْ إِلَى مَقْعَدِكَ مِنَ النَّارِ قَدْ أَبْدَلَكَ اللَّهُ بِهِ مَقْعَدًا مِنَ الجَنَّةِ، فَيَرَاهُمَا جَمِيعًا - قَالَ قَتَادَةُ: وَذُكِرَ لَنَا: أَنَّهُ يُفْسَحُ لَهُ فِي قَبْرِهِ، ثُمَّ رَجَعَ إِلَى حَدِيثِ أَنَسٍ - قَالَ: وَأَمَّا المُنَافِقُ وَالكَافِرُ فَيُقَالُ لَهُ: مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ؟ فَيَقُولُ: لاَ أَدْرِي كُنْتُ أَقُولُ مَا يَقُولُ النَّاسُ، فَيُقَالُ: لاَ دَرَيْتَ وَلاَ تَلَيْتَ، وَيُضْرَبُ بِمَطَارِقَ مِنْ حَدِيدٍ ضَرْبَةً، فَيَصِيحُ صَيْحَةً يَسْمَعُهَا مَنْ يَلِيهِ غَيْرَ الثَّقَلَيْنِ " (رواه البخارى ومسلم واللفظ البخارى)
হাদীস নং: ৭৩
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সকল-সন্ধ্যায় জান্নাতীকে জান্নাত এবং দোযখীকে দোযখে তার স্থান দেখান হয়
৭৩. হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: তোমাদের কারও মৃত্যু হলে সে যদি জান্নাতী হয়, তবে প্রত্যেক দিন সকাল-সন্ধ্যায় তাকে তার জান্নাতের স্থান দেখানো হয়। সে যদি জাহান্নামী হয়, তাকে জাহান্নামের স্থান দেখান হয়। আর তাকে বলা হয়, কিয়ামতের দিন আল্লাহ যখন তোমাকে তার দিকে উঠিয়ে আনবেন তখন এটা হবে তোমার বাসস্থান। -বুখারী ও মুসলিম
کتاب الایمان
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا مَاتَ عُرِضَ عَلَيْهِ مَقْعَدُهُ بِالْغَدَاةِ وَالعَشِيِّ، إِنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ فَمِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ، وَإِنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ فَمِنْ أَهْلِ النَّارِ، فَيُقَالُ: هَذَا مَقْعَدُكَ حَتَّى يَبْعَثَكَ اللَّهُ يَوْمَ القِيَامَةِ " (رواه البخارى ومسلم)
হাদীস নং: ৭৪
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ কবর আখেরাতের যিন্দেগীর প্রথম মনজিল
৭৪. হযরত উসমান (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি কবরের নিকট দাঁড়ালে এত কাঁদতেন, এমন কি তার দাঁড়ি চোখের পানিতে ভিজে যেত। তাঁকে বলা হল, আপনি জান্নাত ও দোযখের কথা স্মরণ করেন অথচ কাঁদেন না। কিন্তু কবরের সামনে দাঁড়ালে এত কাঁদেন? তিনি জবাব দিলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: কবর আখিরাতের মনযিল সমূহের প্রথম মনযিল, বান্দা তা থেকে নাজাত পেলে তার পরবর্তী মনযিল তা আরও সহজ হবে। আর যে তা থেকে নাজাত পেল না তার পরবর্তী মনযিল তা থেকে আরও কঠিন হবে। উসমান (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: আমি কবরের দৃশ্যের চেয়ে ভয়ঙ্কর কোন দৃশ্য কখনও দেখিনি। -তিরমিযী, ইবনে মাজা
کتاب الایمان
عَنْ عُثْمَانَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ اَنَّهُ كَانَ إِذَا وَقَفَ عَلَى قَبْرٍ يَبْكِي حَتَّى يَبُلَّ لِحْيَتَهُ، فَقِيلَ لَهُ: تَذْكُرُ الْجَنَّةَ وَالنَّارَ، وَلَا تَبْكِي، وَتَبْكِي مِنْ هَذَا؟ قَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «إِنَّ الْقَبْرَ أَوَّلُ مَنَازِلِ الْآخِرَةِ، فَإِنْ نَجَا مِنْهُ، فَمَا بَعْدَهُ أَيْسَرُ مِنْهُ، وَإِنْ لَمْ يَنْجُ مِنْهُ، فَمَا بَعْدَهُ أَشَدُّ مِنْهُ» قَالَ: وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا رَأَيْتُ مَنْظَرًا قَطُّ إِلَّا وَالْقَبْرُ أَفْظَعُ مِنْهُ» (رواه الترمذى وابن ماجه)
হাদীস নং: ৭৫
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ দাফনের পর মৃতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা এবং সাওয়াল জাওয়াবের সময় দৃঢ়পদ থাকার দু‘আ করার জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নির্দেশ
৭৫. হযরত উসমান (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মৃত ব্যক্তির দাফনের কাজ শেষ করে কবরের কাছে দাঁড়াতেন এবং বলতেনঃ তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কর যাতে সে প্রশ্নের জবাব দানে দৃঢ়পদ থাকে। এখনোই তাকে সাওয়াল করা হবে। -আবু দাউদ
کتاب الایمان
عَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِذَا فَرَغَ مِنْ دَفْنِ الْمَيِّتِ وَقَفَ عَلَيْهِ، فَقَالَ: «اسْتَغْفِرُوا لِأَخِيكُمْ، وَسَلُوا لَهُ بِالتَّثْبِيتِ، فَإِنَّهُ الْآنَ يُسْأَلُ» (رواه ابو داؤد)
হাদীস নং: ৭৬
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ দাফনের পর মৃতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা এবং সাওয়াল জাওয়াবের সময় দৃঢ়পদ থাকার দু‘আ করার জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নির্দেশ
৭৬. হযরত জাবের (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সা'দ বিন মু'আয (রা) ইন্তেকাল করলে আমরা রসুলুল্লাহ (সা)-এর সাথে তাঁর জানাযায় গেলাম। নবী (সা) যখন তাঁর জানাযা পড়লেন অতঃপর তাঁকে কবরে রাখা হল এবং কবরকে সমান করা হল, তখন তিনি দীর্ঘক্ষণ সুবহানাল্লাহ পড়লেন এবং আমরাও সুবহানাল্লাহ পড়লাম। অতঃপর তিনি আল্লাহু আকবার বললেন এবং আমরাও আল্লাহু আকবার বললাম। বলা হল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কেন তাসবীহ অতঃপর তাকবীর পাঠ করলেন? তিনি বললেন : আল্লাহর এই নেকবান্দার জন্য তার কবর সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল, অতঃপর আল্লাহ এই সংকীর্ণতা দূর করে তা প্রশস্ত করে দিয়েছেন। -মুসনাদে আহমদ
کتاب الایمان
عَنْ جَابِرِ ، قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا إِلَى سَعْدِ بْنِ مُعَاذٍ حِينَ تُوُفِّيَ، قَالَ: فَلَمَّا صَلَّى عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَوُضِعَ فِي قَبْرِهِ وَسُوِّيَ عَلَيْهِ، سَبَّحَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَسَبَّحْنَا طَوِيلًا، ثُمَّ كَبَّرَ فَكَبَّرْنَا، فَقِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، لِمَ سَبَّحْتَ؟ ثُمَّ كَبَّرْتَ؟ قَالَ: «لَقَدْ تَضَايَقَ عَلَى هَذَا الْعَبْدِ الصَّالِحِ قَبْرُهُ حَتَّى فَرَّجَهُ اللَّهُ عَنْهُ» (رواه احمد)
হাদীস নং: ৭৭
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ)-এর এক ভাষণে কবরের আযাবের কথা শুনে সাহাবাগণ চিৎকার দিয়ে উঠলেন
৭৭. হযরত আসমা বিনতে আবী বকর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ভাষণ দিতে দাঁড়ালেন। এতে তিনি ঐ ভীষণ পরীক্ষার কথা উল্লেখ করলেন, মৃত ব্যক্তি কবরে যে পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। তিনি যখন এর উল্লেখ করলেন, তখন মুসলমানগণ (ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে) চীৎকার করতে লাগলেন। -বুখারী
کتاب الایمان
عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتَ أَبِي بَكْرٍ قَالَتْ : «قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَطِيبًا فَذَكَرَ فِتْنَةَ القَبْرِ الَّتِي يَفْتَنُ فِيهَا المَرْءُ، فَلَمَّا ذَكَرَ ذَلِكَ ضَجَّ المُسْلِمُونَ ضَجَّةً» (رواه البخارى)
tahqiq

তাহকীক:

হাদীস নং: ৭৮
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সকল ধরনের বিপর্যয় ও দাজ্জালের ফেতনা থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করার উপদেশ
৭৮. হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর মাদী খচ্চরে সওয়ার হয়ে বনু নাজ্জারের বাগান দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং আমরাও তাঁর সাথে ছিলাম। অকস্মাৎ তাঁর বাহন মোড় ঘুড়ালো এবং তাঁকে প্রায় ফেলে দেয়ার উপক্রম করল। সেখানে পাঁচ বা ছয়টা কবর ছিল। নবী করীম (সা) জিজ্ঞাসা করলেনঃ কে এই কবরবাসীদেরকে চিনে? একব্যক্তি বলল, আমি।

তিনি বললেন : কখন তারা মারা গেছে? সে বলল: শিরকের অবস্থায়। তিনি বললেন: কবরে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। যদি এ আশঙ্কা না হত যে, তোমরা মৃতকে দাফন করবে না, তাহলে আমি যে কবরের আযাব শুনছি তা তোমাদের শুনার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম। অতঃপর আমাদের দিকে তিনি মুখ ফিরিয়ে বললেন: দোযখের আগুন থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা কর। আমরা বললাম, দোযখের আগুন থেকে আমরা আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তিনি বললেনঃ কবরের আযাব থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর। আমরা বললাম, কবরের আযাব থেকে আমরা আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তিনি বললেনঃ প্রকাশ্য ও গোপন সকল ধরনের বিপর্যয় থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর। আমরা বললাম, প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল ফেৎনা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তিনি বললেন: দাজ্জালের ফেৎনা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা কর। আমরা বললাম, দাজ্জালের ফেৎনা থেকে আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। -মুসলিম
کتاب الایمان
عَنْ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ، قَالَ: بَيْنَا رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حَائِطٍ لِبَنِي النَّجَّارِ، عَلَى بَغْلَةٍ لَهُ وَنَحْنُ مَعَهُ، إِذْ حَادَتْ بِهِ فَكَادَتْ تُلْقِيهِ، وَإِذَا أَقْبُرٌ سِتَّةٌ أَوْ خَمْسَةٌ فَقَالَ: «مَنْ يَعْرِفُ أَصْحَابَ هَذِهِ الْأَقْبُرِ؟» فَقَالَ رَجُلٌ: أَنَا، قَالَ: فَمَتَى مَاتَ هَؤُلَاءِ؟ " قَالَ: مَاتُوا فِي الْإِشْرَاكِ، فَقَالَ: «إِنَّ هَذِهِ الْأُمَّةَ تُبْتَلَى فِي قُبُورِهَا، فَلَوْلَا أَنْ لَا تَدَافَنُوا، لَدَعَوْتُ اللهَ أَنْ يُسْمِعَكُمْ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ الَّذِي أَسْمَعُ مِنْهُ» ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَيْنَا بِوَجْهِهِ، فَقَالَ: «تَعَوَّذُوا بِاللهِ مِنْ عَذَابِ النَّارِ» قَالُوا: نَعُوذُ بِاللهِ مِنْ عَذَابِ النَّارِ، فَقَالَ: «تَعَوَّذُوا بِاللهِ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ» قَالُوا: نَعُوذُ بِاللهِ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، قَالَ: «تَعَوَّذُوا بِاللهِ مِنَ الْفِتَنِ، مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ» قَالُوا: نَعُوذُ بِاللهِ مِنَ الْفِتَنِ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ، قَالَ: «تَعَوَّذُوا بِاللهِ مِنْ فِتْنَةِ الدَّجَّالِ» قَالُوا: نَعُوذُ بِاللهِ مِنْ فِتْنَةِ الدَّجَّالِ (رواه مسلم)
হাদীস নং: ৭৯
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ কিয়ামত

নবী (ﷺ)-এর আগমন ও কিয়ামত পাশাপাশি দু'টো আঙ্গুলের ন্যায়
৭৯. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ আমি এবং কিয়ামত এই দুই আঙ্গুলের ন্যায়। -বুখারী, মুসলিম
کتاب الایمان
عَنْ أَنَسٍ، قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بُعِثْتُ أَنَا وَالسَّاعَةَ كَهَاتَيْنِ» (رواه البخارى ومسلم)
হাদীস নং: ৮০
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ কিয়ামত এক বিদির্ণ কাপড় সদৃশ যার শেষ সূতাটিও ছিড়ে বিচ্ছিন্ন হতে চায়
৮০. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ দুনিয়া এমন এক কাপড় সাদৃশ্য যা একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্ত পর্যন্ত ফেড়ে ফেলা হয়েছে। কেবল শেষ প্রান্তে একটা সেলাই অবশিষ্ট আছে এবং এই শেষ সেলাইটুকুও অচিরেই ছিড়ে বিচ্ছিন্ন হতে চায়। -বায়হাকী শু'আবুল ঈমান
کتاب الایمان
عَنْ أَنَسٍ، قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَثَلُ هَذِةِ الدُّنْيَا مِثْلُ ثَوْبٍ شُقَّ مِنْ اَوَّلِهِ اِلىٰ اٰخِرِهِ فَبَقِىَ مُتَعَلِّقًا بِخَيْطٍ فِىْ اٰخِرِهِ فَيُوْشَكُ ذَالِكَ الْخَيْطُ اَنْ يَّنْقَطِعَ (رواه البيهقى فى شعب الايمان)