মা'আরিফুল হাদীস

ঈমান অধ্যায়

হাদীস নং: ৬৩
ঈমান অধ্যায়
তাকদীরের প্রতি ঈমান ছাড়া সৎকর্ম গৃহীত হয় না

[হাদীসে জিবরাঈলসহ বিভিন্ন হাদীসে তকদীর সম্পর্কে যে আলোচন করা হয়েছে তা থেকে আমরা সাধারণভাবে অবগত হয়েছি যে, তকদীরের প্রসঙ্গে ঈমান আনা ঈমানের শর্তসমূহের অন্তর্ভুক্ত। এ পরিচ্ছেদে আরও কতিপয় হাদীস ধারাবাহিকভাবে সন্নিবেশিত করা হল যা থেকে এ সম্পর্কিত আরও তথ্য লাভ করা যাবে এবং তার সাথে সাথে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আরও ভালভাবে অনুধাবন করা যাবে।]
৬৩. হযরত ইবনুদ দাইলামী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত উবাই ইবনে কা'ব (রা)-এর নিকট এসে তাঁকে বললাম, তাকদীর সম্পর্কে আমার অন্তরে পেরেশানির সৃষ্টি হয়েছে। আমাকে কিছু বলুন, আশা করি আল্লাহ্ আমার অন্তর থেকে তা দূর করে দেবেন (এবং আমি প্রশান্তি অনুভব করব)। হযরত উবাই ইবনে কা'ব (রা) বললেনঃ আল্লাহ আসমান যমীনের তামাম মখলুককে আযাব দান করলেও তিনি তার এই কাজে যালিম হবেন না। আর তিনি তাদের সবাইকে রহম করলেও তার এই রহম তাদের আমলের চেয়ে কল্যাণকর হবে। আর ওহোদ পাহাড়ের সম-পরিমাণ স্বর্ণ আল্লাহর পথে ব্যয় করলেও আল্লাহ্ তোমার কাছ থেকে তা কবুল করবেন না যদি তুমি তকদীরের প্রতি বিশ্বাসী না হও। এ ব্যাপারে তোমার দৃঢ় বিশ্বাস থাকতে হবে যে, তোমার উপর যা পতিত হয়েছে তা থেকে তুমি বাঁচতে পারবে না এবং যা থেকে তুমি রক্ষা পেয়েছ তা তোমার উপর কোনভাবেই আসত না (অর্থাৎ যা কিছু ঘটে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে সুনির্ধারিত, তাতে অনু পরিমাণ রদবদলও সম্ভব নয়) যদি তুমি এর বিপরীত ধারণা নিয়ে মৃত্যুবরণ কর তবে অবশ্যই দোযখে যাবে।

ইবনুদ দাইলামী বলেন, অতঃপর আমি হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রা)-এর নিকট এলাম। তিনিও অনুরূপ কথা বললেন, অতঃপর আমি হযরত হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা)-এর নিকট এলাম। তিনিও অনুরূপ বললেন, অতঃপর আমি হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত (রা)-এর নিকট এলাম। তিনিও নবী করীম (ﷺ)-এর সূত্রে অনুরূপ কথা বললেন। -আহমদ, আবু দাউদ, ইবনে মাজা
کتاب الایمان
عَنِ ابْنِ الدَّيْلَمِيِّ، قَالَ: أَتَيْتُ أُبَيَّ بْنَ كَعْبٍ، فَقُلْتُ: لَهُ قَدْ وَقَعَ فِي نَفْسِي شَيْءٌ مِنَ الْقَدَرِ، فَحَدِّثْنِي لَعَلَّ اللَّهَ أَنْ يُذْهِبَهُ مِنْ قَلْبِي، فَقَالَ: «لَوْ أَنَّ اللَّهَ عَذَّبَ أَهْلَ سَمَاوَاتِهِ وَأَهْلَ أَرْضِهِ عَذَّبَهُمْ وَهُوَ غَيْرُ ظَالِمٍ لَهُمْ، وَلَوْ رَحِمَهُمْ كَانَتْ رَحْمَتُهُ خَيْرًا لَهُمْ مِنْ أَعْمَالِهِمْ، وَلَوْ أَنْفَقْتَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ مَا قَبِلَهُ اللَّهُ مِنْكَ حَتَّى تُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ، وَتَعْلَمَ أَنَّ مَا أَصَابَكَ لَمْ يَكُنْ لِيُخْطِئَكَ، وَأَنَّ مَا أَخْطَأَكَ لَمْ يَكُنْ لِيُصِيبَكَ، وَلَوْ مُتَّ عَلَى غَيْرِ هَذَا لَدَخَلْتَ النَّارَ»، قَالَ: ثُمَّ أَتَيْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ مَسْعُودٍ فَقَالَ مِثْلَ ذَلِكَ، قَالَ: ثُمَّ أَتَيْتُ حُذَيْفَةَ بْنَ الْيَمَانِ، فَقَالَ مِثْلَ ذَلِكَ، قَالَ: ثُمَّ أَتَيْتُ زَيْدَ بْنَ ثَابِتٍ فَحَدَّثَنِي عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِثْلَ ذَلِكَ (رواه احمد وابو داؤد وابن ماجة)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

শয়তান কোন কোন ঈমানদার ব্যক্তির অন্তরের মধ্যে সাধারণতঃ যে ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি করে তা হল, যখন সব কিছু আল্লাহর নির্ধারিত তাকদীর মোতাবিক হচ্ছে, তাহলে কেন দুনিয়ার যিন্দেগীতে কোন কোন মানুষ ভাল অবস্থার মধ্যে রয়েছে, আবার কোন কোন মানুষ মন্দ অবস্থার মধ্যে রয়েছে এবং কেন আখিরাতের যিন্দেগীতে কোন কোন লোককে জান্নাত প্রদান করা হবে আবার কোন কোন লোককে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে? যদি কখনও কোন ঈমানদার ব্যক্তির মনে এ ধরনের ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি হয় তা দূর করার সহজ পদ্ধতি হল আল্লাহ সুবহানাহু যে তামাম মখলুকের খালিক ও মালিক হিসেবে সকল বান্দাহ এবং যাবতীয় সৃষ্টির উপর কামিল এখতিয়ারের অধিকারী তা পুনরায় মনের মধ্যে তাজা করা উচিত। এবং তার সাথে সাথে আরও চিন্তা করা উচিত, “লা শরীক মালিকুল মুলক” এবং অস্তিত্বহীন থেকে অস্তিত্বদানকারী খালিক যার সাথে যে আচরণ করবেন তা সঠিক এবং তা করার অধিকার তার রয়েছে। তিনি যদি সকলকে আযাব দান করেন, তাহলে কোন আইন দ্বারা তাকে যালিম বলা যায় না। তিনি যদি সকলকে রহমত দান করেন, তাহলে তা তার দান এবং বদান্যতা হবে। কারণ নেক ব্যক্তিগণ যে নেক আমল করেন। তার তাওফিক দানকারী সত্তাও তিনি। মোটকথা সৃষ্টি এবং সৃষ্টজীব সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলার এ মর্যাদা এবং ক্ষমতা কারও মনে ভালভাবে অঙ্কিত করা যায়, তাহলে তার মন থেকে খুব সহজে এ সন্দেহ দূর হতে থাকবে এবং দৃঢ়তা ও প্রশান্তি লাভ করবেন।

আল্লাহর তামাম প্রশংসা। ইবনুদ দাইলামী উঁচুদরের একজন সাচ্চা মুমিন। আল্লাহ তা'আলার এ শান ও মর্যাদার উপর তার পূর্ণ ঈমান ও আকিদা ছিল। তাঁর স্মরণের জন্য হযরত উবাই ইবনে কা'ব (রা) ওয়াসওয়াসার এলাজ হিসেবে এ কথা স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, তাকদিরের উপর ঈমান ও ই'তেকাদ এত বেশী প্রয়োজনীয় যে, যদি কোন ব্যক্তি তকদিরের উপর ঈমান ও ই'তেকাদ ছাড়া পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, তাহলে তা আল্লাহ কবুল করবেন না।

প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, উপরে বর্ণিত তরিকার দ্বারা একমাত্র মুমিন ব্যক্তিদের সন্দেহ দূর করা যেতে পারে। অমুসলমানদের সন্দেহ দূর করার এবং তাদের প্রশ্নের জবাব প্রদান করার তরীকা ভিন্ন এবং তা জানবার জন্য ইলমে কালামের সাহায্য নেয়া যেতে পারে। ইনশাআল্লাহ সংক্ষিপ্তভাবে কিঞ্চিত আলোকপাত পরবর্তী হাদীসের আলোচনা প্রসঙ্গে করব।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান