মা'আরিফুল হাদীস

معارف الحديث

ঈমান অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস ১৪০ টি

হাদীস নং: ১২১
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ জান্নাতের গাছের ছায়া একশ' বছরেও অতিক্রম করা যাবে না
১২১. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, বেহেশতের মধ্যে এমন এক গাছ রয়েছে যার ছায়া একজন সওয়ার একশ' বছরেও অতিক্রম করতে পারবে না এবং জান্নাতের মধ্যে তোমাদের কারো একটি ধনুকের পরিমাণ স্থানও বিশ্বজগৎ থেকে উৎকৃষ্ট যেখানে সূর্য উদিত ও অস্তমিত হয়।-বুখারী
کتاب الایمان
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: " إِنَّ فِي الجَنَّةِ لَشَجَرَةً يَسِيرُ الرَّاكِبُ فِي ظِلِّهَا مِائَةَ سَنَةٍ، وَلَقَابُ قَوْسِ أَحَدِكُمْ فِي الجَنَّةِ ، خَيْرٌ مِمَّا طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ أَوْ تَغْرُبُ " (رواه البخارى ومسلم)
হাদীস নং: ১২২
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ জান্নাতবাসীর পেশাব পায়খানা হবে না
১২২. হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ জান্নাতবাসীগণ সেখানে পানাহার করবে। কিন্তু তারা থু-থু ফেলবে না, পেশাব-পায়খানা করবে না এবং নাক ঝাড়বেন না। সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন, তাহলে খাদ্যের অবস্থা কি হবে? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন : ঢেকুর এবং মিশকের ঘামের ন্যায় ঘাম হবে এবং তোমরা যেভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস কর সেভাবে জান্নাতবাসীগণ আল্লাহর তাসবীহ্ ও তাহমীদ করবে। মুসলিম
کتاب الایمان
عَنْ جَابِرٍ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «إِنَّ أَهْلَ الْجَنَّةِ يَأْكُلُونَ فِيهَا وَيَشْرَبُونَ، وَلَا يَتْفُلُونَ وَلَا يَبُولُونَ وَلَا يَتَغَوَّطُونَ وَلَا يَمْتَخِطُونَ» قَالُوا: فَمَا بَالُ الطَّعَامِ؟ قَالَ: «جُشَاءٌ وَرَشْحٌ كَرَشْحِ الْمِسْكِ، يُلْهَمُونَ التَّسْبِيحَ وَالتَّحْمِيدَ، كَمَا تُلْهَمُونَ النَّفَسَ» (رواه مسلم)
হাদীস নং: ১২৩
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ জান্নাতীর অফুরন্ত প্রাচুর্য, যৌবন ও সুস্থতা চিরস্থায়ী
১২৩. হযরত আবু সায়ীদ (রা) ও আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন ঘোষক জান্নাতবাসীদের সম্বোধন করে বলবে, এখানে সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতাই তোমাদের অধিকার তোমরা কখনো অসুস্থ হবে না, জীবিত থাকাই তোমাদের অধিকার, তোমরা কখনো মৃত্যুবরণ করবে না, তোমরা যৌবনের অধিকারী, কখনো তোমাদের বার্ধক্য আসবে না এবং তোমাদের জীবন প্রাচুর্যময়, কখনো তোমাদের অভাব-অনটন হবে না। -মুসলিম
کتاب الایمان
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، وَأَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " يُنَادِي مُنَادٍ: إِنَّ لَكُمْ أَنْ تَصِحُّوا فَلَا تَسْقَمُوا أَبَدًا، وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَحْيَوْا فَلَا تَمُوتُوا أَبَدًا، وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَشِبُّوا فَلَا تَهْرَمُوا أَبَدًا، وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَنْعَمُوا فَلَا تَبْأَسُوا أَبَدًا " (رواه مسلم)
tahqiq

তাহকীক:

হাদীস নং: ১২৪
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সৃষ্ট জীব ও জান্নাতের সৃষ্টির উপকরণ
১২৪. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! সৃষ্টকুলকে কিসের দ্বারা তৈরী করা হয়েছে? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন: পানির দ্বারা। আমরা বললামঃ জান্নাত কিসের দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে? তিনি বললেন: এক একটি করে সোনার এবং রূপার ইটের দ্বারা এবং তার মিশ্রণ মিশক আযফারের; তার কঙ্কল মণি-মুক্তা ও ইয়াকুতের এবং তার মাটি যাফরানের। যারা তাতে প্রবেশ করবে তারা প্রাচুর্যের মধ্যে থাকবে, তাদের কোন অভাব-অনটন থাকবে না, তাতে অনন্তকাল থাকবে, (কখনো) মরবে না, তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ পুরান হবে না এবং তাদের যৌবন নিঃশেষ হবে না -মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযী ও দারিমী
کتاب الایمان
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ مِمَّ خُلِقَ الخَلْقُ؟ قَالَ: مِنَ الْمَاءِ، قُلْتُ: الْجَنَّةُ مَا بِنَاؤُهَا؟ قَالَ: لِبْنَةُ مِنْ ذَهَبٍ وَلِبْنَةُ مِنْ فِضَّةٍ ، وَمِلاَطُهَا الْمِسْكُ الأَذْفَرُ، وَحَصْبَاؤُهَا اللُّؤْلُؤُ وَاليَاقُوتُ، وَتُرْبَتُهَا الزَّعْفَرَانُ مَنْ يَدْخُلُهَا يَنْعَمُ وَلاَ يَبْأَسُ، وَيَخْلُدُ وَلاَ يَمُوتُ، لاَ يَبْلَى ثِيَابُهُمْ، وَلاَ يَفْنَى شَبَابُهُمْ . (رواه احمد والترمذى والدارمى)
হাদীস নং: ১২৫
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ জান্নাতবাসীদের প্রতি আল্লাহর চিরস্থায়ী সন্তোষ
১২৫. হযরত আবু সায়ীদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা'আলা জান্নাতবাসীদেরকে বলবেন: হে জান্নাতবাসীগণ! তাঁরা জবাব দেবে, হে আমাদের রব! আমরা হাযির, আমরা হাযির আপনার পবিত্র দরবারে। যাবতীয় কল্যাণ আপনার হাতে। আল্লাহ্ বলবেন: তোমরা কি সন্তুষ্ট? তারা বলবে, হে আমাদের রব! কেন আমরা সন্তুষ্ট হব না? আপনি আপনার কোন সৃষ্টিকে যা দেননি তা আমাদের দিয়েছেন। আল্লাহ বলবেন: আমি কি তোমাদের এর চেয়েও উত্তম জিনিস দান করব না? তারা বলবে, হে আমাদের রব! হে আমাদের রব! সে কি জিনিস যা জান্নাত থেকে উত্তম? আল্লাহ্ বলবেন: আমি তোমাদেরকে আমার সন্তুষ্টি দান করছি। অতঃপর আমি কখনো তোমাদের উপর অসন্তুষ্ট হব না। -বুখারী, মুসলিম
کتاب الایمان
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى يَقُولُ لِأَهْلِ الجَنَّةِ: يَا أَهْلَ الجَنَّةِ؟ فَيَقُولُونَ: لَبَّيْكَ رَبَّنَا وَسَعْدَيْكَ، فَيَقُولُ: هَلْ رَضِيتُمْ؟ فَيَقُولُونَ: وَمَا لَنَا لاَ نَرْضَى وَقَدْ أَعْطَيْتَنَا مَا لَمْ تُعْطِ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ، فَيَقُولُ: أَنَا أُعْطِيكُمْ أَفْضَلَ مِنْ ذَلِكَ، قَالُوا: يَا رَبِّ، وَأَيُّ شَيْءٍ أَفْضَلُ مِنْ ذَلِكَ؟ فَيَقُولُ: أُحِلُّ عَلَيْكُمْ رِضْوَانِي، فَلاَ أَسْخَطُ عَلَيْكُمْ بَعْدَهُ أَبَدًا " (رواه البخارى ومسلم)
হাদীস নং: ১২৬
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ জান্নাতে আল্লাহর দর্শন লাভ

আল্লাহ তা'আলার দর্শন জান্নাতবাসীদের জন্য সবচেয়ে বড় নি'আমত। আল্লাহ যাদেরকে সঠিক বুদ্ধি বিবেচনা প্রদান করেছেন তারা যদি একটু চিন্তাভাবনা করে তাহলে তাদের অন্তরে এ খায়েশ আকাক্ষা তারা অনুভব করবে। যে বান্দাহ তার প্রভুর বেশুমার নি'আমত দুনিয়ায় লাভ করছে এবং জান্নাতে পৌছার পর লক্ষগুণ বেশী নিয়ামতের অধিকারী হবে সে বান্দাহর অন্তরে অবশ্য এ আকাক্ষা সৃষ্টি হবে।
সে আকাক্ষা করবে যে আল্লাহ আমাকে অস্তিত্ব প্রদান করেছেন, আমাকে নি'আমতের বারিবর্ষণ করেছেন, তার দর্শন লাভ থেকে যদি আমি বঞ্চিত হই তাহলে অবশ্যই বিরাট সুখ সন্তোষ ও আনন্দ ও আরাম থেকে বঞ্চিত থাকব। আল্লাহ যে বান্দাহর উপর সন্তুষ্ট হয়ে জান্নাতে স্থান দান করবেন তাকে অবশ্যই তার দর্শন থেকে বঞ্চিত রাখবেন না।

কুরআন শরীফেও এ শ্রেষ্ঠ নি'আমতের সুসংবাদ বিশ্বাসীদেরকে দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বিভিন্ন ইরশাদের মধ্যে এ সুসংবাদ সুস্পষ্টভাবে প্রদান করেছেন। তামাম ঈমানদারগণ নিঃসন্দেহে তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছেন। কিন্তু এমন লোকও রয়েছে যারা দুনিয়ার মাপকাঠিতে আখিরাতের বিষয় বিচার করে এবং নিজেদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে চরম জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা মনে করে তারা আল্লাহর দর্শন সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করে। তারা মনে করে যার শরীর রয়েছে এবং কোন না কোন রং রয়েছে তাকে চোখের সামনে দেখা যেতে পারে কিন্তু আল্লাহর তো কোন শরীর নেই এবং তাঁর কোন রং নেই এবং তাঁর কোন সম্মুখ বা পশ্চাৎ নেই-তাহলে তাঁকে কি করে দেখা যেতে পারে? এটা তাদের সুস্পষ্ট ভ্রান্তি। যদি আহলে হকের এ আকিদা হতো যে আখিরাতের যিন্দেগীতে আল্লাহর দর্শন আমাদের দুনিয়ার চোখের দ্বারা হবে যা শুধু শরীর, রং বা যার দর্শন শক্তি শুধু সম্মুখের জিনিসকেই দেখতে সক্ষম তাহলে এসব সত্য অস্বীকারকারীদের এ ধরনের ধারণা কিঞ্চিৎ সঠিক হতো কিন্তু কুরআন এবং হাদীস একথা বলেনি আহলে হকেরও এ আকিদা নয়।

আহলে হক, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আত কুরআন এবং হাদীসের অনুসরণের ক্ষেত্রে এ ধারণায় বিশ্বাসী যে যারা জান্নাত লাভ করবে তারা আল্লাহকে দর্শন করার সৌভাগ্য লাভ করবে। এবং আল্লাহ্ তা'আলা জান্নাতীদেরকে এমন শক্তি দান করবেন যা তিনি পৃথিবীতে কাউকে দেন নি। তিনি জান্নাতীদেরকে এমন দৃষ্টিদান করবেন, যা দুনিয়ার দৃষ্টিশক্তির মত দুর্বল এবং সীমাবদ্ধ হবে না। এবং এই দৃষ্টিশক্তির দ্বারাই জান্নাতীগণ রব্বে কুদ্দুসকে দেখতে পাবেন, যার কোন শরীর হবে না এবং কোন রং হবে না, এবং যার কোন সম্মুখ পশ্চাত হবে না। বরং তিনি এসব কিছুর আড়ালে একটি আলো হবেন এবং সব আলোরই উৎস তিনিই।
এ বিশ্লেষণের পর রাব্বুল আলামীনের দর্শন সম্পর্কে বুদ্ধি বিভ্রাটের কারণে যাদের ওয়াসওয়াসা হয় কিছুক্ষণের জন্য তাদের এই চিন্তা করা উচিত যে, আল্লাহ তা'আলা কি তাঁর সৃষ্টিকে দেখেন না দেখেন না? যদি দর্শন এসব উপায় উপকরণ এবং শর্তের সাথে সম্পর্কিত হয় যার দ্বারা আমরা দেখে থাকি তাহলে তো আল্লাহ তা'আলা কাউকে দেখতে পাবেন না-কেননা তার কোন চোখ নেই এবং না কোন সৃষ্টির সম্মুখে তিনি আছেন। তাই যারা এ বিশ্বাস পোষণ করে যে, আল্লাহ তা'আলা চোখ ছাড়াই দেখেন, এবং আমাদের চোখ যে সব দেখতে সক্ষম নয় তাও তিনি দেখেন। তিনি বিনা মুকাবিলাও দেখেন। তাই আল্লাহ তা'আলা দর্শনের ব্যাপারে কোনরূপ ওয়াসওয়াসা থাকা উচিত নয়। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সুসংবাদের উপর বিশ্বাস করে আমাদের বুঝা উচিত যে, আখিরাতের যিন্দিগীতে আল্লাহ তা'আলা তাঁর কুদরতের দ্বারা তিনি আমাদেরকে এমন চোখ দান করবেন, যার দ্বারা আমরা আল্লাহ তা'আলার সৌন্দর্যের দর্শন লাভ করতে পারব। কুরআনে কারীমে ঈমানদারদের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে যে

وُجُوۡہٌ یَّوۡمَئِذٍ نَّاضِرَۃٌ ۙ . اِلٰی رَبِّہَا نَاظِرَۃٌ ۚ

এবং তাঁর বিপরীতে মিথ্যাবাদী এবং সত্য অস্বীকারকারীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে

اِنَّہُمۡ عَنۡ رَّبِّہِمۡ یَوۡمَئِذٍ لَّمَحۡجُوۡبُوۡنَ

জান্নাতে আল্লাহর দর্শন লাভ
১২৬. হযরত সুহাইব (রা) নবী করীম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেনঃ তোমরা কি চাও যে, আমি তোমাদেরকে আরও দান করি? তারা বলবে, আপনি কি আমাদের চেহারা উজ্জল করেন নি? আপনি কি আমাদের জান্নাতে দাখিল করেন নি এবং দোযখ থেকে রক্ষা করেন নি? নবী (ﷺ) বলেন: অতঃপর পর্দা সরিয়ে দেয়া হবে এবং তারা মহান আল্লাহর চেহারা ও সৌন্দর্য দর্শন করবে। তারা অনুভব করবে তাদের যা কিছু দান করা হয়েছে, তার চেয়ে তাদের কাছে অধিক প্রিয়-তাদের প্রভুর দর্শন। অতঃপর নবী করীম (ﷺ) তিলাওয়াত করলেনঃ "যারা দুনিয়ার জীবনে উত্তম কাজ করে তাদের জন্য উত্তম (পারিশ্রমিক বা জান্নাত) এবং তার চেয়েও বেশী এক নি'আমত (অর্থাৎ আল্লাহর দীদার)। (সূরা ইউনুস-২৬) -মুসলিম
کتاب الایمان
عَنْ صُهَيْبٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " إِذَا دَخَلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ: يَقُولُ اللهُ تَعَالَى: أَتُرِيدُونَ شَيْئًا أَزِيدُكُمْ؟ فَيَقُولُونَ: أَلَمْ تُبَيِّضْ وُجُوهَنَا؟ أَلَمْ تُدْخِلْنَا الْجَنَّةَ، وَتُنَجِّنَا مِنَ النَّارِ؟ قَالَ: فَيَرْفَعُ الْحِجَابُ فَيَنْظُرُوْنَ اِلَى وَجْهِ اللهِ، فَمَا أُعْطُوا شَيْئًا أَحَبَّ إِلَيْهِمْ مِنَ النَّظَرِ إِلَى رَبِّهِمْ ثُمَّ تَلَا "لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا الْحُسْنَى وَزِيَادَةٌ ". (رواه مسلم)
হাদীস নং: ১২৭
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সরাসরি আল্লাহকে দেখতে ফজর ও আসরের প্রতি সতর্কতা
১২৭. হযরত জারীর ইবনে আবদিল্লাহ্ আল-বাজালী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট বসাছিলাম। তিনি পূর্ণিমার চাঁদের দিকে তাকালেন এবং বললেনঃ তোমরা যেভাবে এই চাঁদ দেখছ সেভাবে অচিরেই তোমাদের প্রভুকেও দেখতে পাবে। তাঁর দর্শনে তোমাদের কোনরূপ কষ্ট বা অসুবিধা হবে না। সূর্য উদয় ও অস্ত যাওয়ার পূর্বের নামাযের ব্যাপারে কোন জিনিস যেন তোমাদের উপর জয়ী না হয়। অবশ্যই তোমরা তা আদায় কর। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করলেন, "এবং সূর্য উদয় ও অস্তমিত হওয়ার পূর্বে তোমাদের প্রভুর প্রশংসা ও তসবীহ পাঠ কর। -বুখারী, মসিলম
کتاب الایمان
عَنْ جَرِيرٍ، قَالَ: كُنَّا جُلُوسًا عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَنَظَرَ إِلَى القَمَرِ لَيْلَةَ البَدْرِ قَالَ: «إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ كَمَا تَرَوْنَ هَذَا القَمَرَ، لاَ تُضَامُونَ فِي رُؤْيَتِهِ، فَإِنِ اسْتَطَعْتُمْ أَنْ لاَ تُغْلَبُوا عَلَى صَلاَةٍ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ، وَصَلاَةٍ قَبْلَ غُرُوبِ الشَّمْسِ، فَافْعَلُوا ثُمَّ قَرَأَ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا ». (رواه البخارى ومسلم)
হাদীস নং: ১২৮
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ প্রত্যেকে স্বতন্ত্রভাবে আল্লাহকে দেখবে
১২৮. আবু রাযীন আল-উকাইলী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বল্লাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) কিয়ামতের দিন আমাদের প্রত্যেক ব্যক্তি কি স্বতন্ত্রভাবে তার প্রভুকে দেখতে পাবে? তিনি বললেন, হাঁ। আমি বলালাম, তার কি কোন নিদর্শন আছে? তিনি বললেনঃ হে আবু রাযীন। তোমাদের প্রত্যেকে কি পূর্ণিমার চাঁদ স্বতন্ত্রভাবে দেখে না? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেন: চাঁদ আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে একটি এবং আল্লাহর সর্বাধিক মহিমা ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। -আবু দাউদ

(বিঃদ্রঃ চাঁদকে যেরূপ একযোগে মানুষ দেখতে পাবে অনুরূপ আল্লাহকেও প্রত্যেক মানুষ দেখতে পাবে।)
کتاب الایمان
عَنْ أَبِي رَزِينٍ الْعُقَيْلِيِّ قَالَ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَكُلُّنَا يَرَى رَبَّهُ مُخْلِيًا بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، قَالَ بَلَى قُلْتُ وَمَا آيَةُ ذَالِكَ ؟ قَالَ: يَا أَبَا رَزِينٍ، أَلَيْسَ كُلُّكُمْ يَرَى الْقَمَرَ لَيْلَةَ الْبَدْرِ مُخْلِيًا بِهِ قَالَ: بَلَى، قَالَ: «فَإِنَّمَا هُوَ خَلْقٌ مِنْ خَلْقِ اللَّهِ وَاللَّهُ أَجَلُّ وَأَعْظَمُ» (رواه ابو داؤد)
tahqiq

তাহকীক:

হাদীস নং: ১২৯
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ দোযখ ও তার শাস্তি

যেরূপ জান্নাত সম্পর্কে কুরআনের আয়াত ও রাসুল (ﷺ)-এর হাদীস থেকে জানা যায় যে, জান্নাতের মধ্যে এমন উন্নতমানের আরাম আয়েশ রয়েছে যার সাথে দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ আরাম-আয়েশের সাথেও তুলনা করা যায় না এবং যা অমর ও চিরস্থায়ী। সেরূপ কুরআন ও হাদীসে দোযখ সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা থেকে জানা যায় যে, দোযখের দুঃখ-কষ্ট দুনিয়ার সবচেয়ে বড় মুসীবতের সঙ্গেও তুলনা চলে না।

বরং ঘটনা হলো যে, কুরআন ও হাদীসের বর্ণনার থেকে জান্নাতের আরাম আয়েশ এবং দোযখের দুঃখ কষ্টের যে ধারণা আমরা লাভ করি তা জান্নাত এবং জাহান্নামের বাস্তব অবস্থা থেকে অনেক কম। কেননা, আমাদের দুনিয়ার ভাষা-শব্দাবলী দুনিয়ার জিনিসকে বুঝানোর জন্যই ব্যবহার করা হয়। যেমন আপেল বা আঙ্গুর দ্বারা আমাদের দৃষ্টি এমন আপেল বা আঙ্গুরের দিকে ধাবিত হয় যে আপেল বা আঙ্গুর আমরা দেখেছি বা খেয়েছি। কিন্তু আমরা জান্নাতের আপেল বা আঙ্গুরের ধারণা কি করে করতে পারি যার মান এবং গুণ আমাদের পৃথিবীর ফল থেকে শত সহস্রগুণ বেশী হবে যার কোন নমুনা পৃথিবীতে নেই। অনুরূপভাবে সাপ এবং বিচ্ছু শব্দের দ্বারা আমাদের মন ঐ ধরনের সাপ বিচ্ছুর দিকে ধাবিত হয় যা আমরা দুনিয়াতে দেখেছি। কিন্তু দুনিয়ার সাপ-বিচ্ছুর চেয়ে হাজার গুণ ভয়ঙ্কর দোযখের সাপ-বিচ্ছু সম্পর্কে আমরা কি করে আন্দাজ করতে পারি যার কোন নমুনা আমরা দেখিনি।

বস্তুতঃ কুরআন এবং হাদীসের শব্দে জান্নাত ও জাহান্নামের জিনিসের আসল হাকীকত এবং অবস্থা পরিপূর্ণভাবে বুঝতে সক্ষম হই। সেখানে পৌছার পরেই আমরা জানতে পারবো যে, জান্নাতে আরাম আয়েশ সম্পর্কে আমরা দুনিয়াতে যা জেনেছিলাম তার চেয়েও হাজার গুণ বেশী আরাম আয়েশ জান্নাতে রয়েছে। দোযখের দুঃখ-কষ্ট সম্পর্কে আমরা যা জেনেছিলাম তা থেকে বাস্তব অবস্থা আরও ভয়ঙ্কর।

যেরূপ পূর্বে আমরা আলোচনা করেছি যে জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসে যে বর্ণনা প্রদান করা হয়েছে তার দ্বারা জান্নাতে ও জাহান্নামের বিস্তারিত চিত্র অঙ্কন করাটার উদ্দেশ্য নয় বরং আল্লাহর বান্দাহদের মনে জান্নাতের লোভ এবং দোযখের ভয় সৃষ্টি করে মানুষকে জান্নাতের দিকে ধাবিত করা এবং দোযখ থেকে দূরে রাখাই উদ্দেশ্য। তাই জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কে হাদীস পাঠকালে এ উদ্দেশ্য সামনে রাখা বাঞ্ছনীয়।

দুনিয়ার আগুন দোযখের আগুনের সত্তর অংশের এক অংশ
১২৯. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ তোমাদের (এই দুনিয়ার) আগুন দোযখের আগুনের সত্তর ভাগের এক ভাগ। বলা হল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! ইহা (দুনিয়ার আগুন) কি যথেষ্ট ছিলনা? তিনি বললেন, দোযখের উপর ৬৯ ভাগ আগুন ঢালা হয়েছে এবং তার প্রত্যেক অংশের তাপ দুনিয়ার তাপের সমান। -বুখারী, মুসলিম
کتاب الایمان
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «نَارُكُمْ جُزْءٌ مِنْ سَبْعِينَ جُزْءًا مِنْ نَارِ جَهَنَّمَ»، قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنْ كَانَتْ لَكَافِيَةً قَالَ: «فُضِّلَتْ عَلَيْهِنَّ بِتِسْعَةٍ وَسِتِّينَ جُزْءًا كُلُّهُنَّ مِثْلُ حَرِّهَا» (رواه البخارى ومسلم واللفظ البخارى)
হাদীস নং: ১৩০
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ আগুনের জুতা ও ফিতা দোযখের সবচেয়ে হালকা আযাব
১৩০. হযরত নু'মান ইবেন বাশীর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ দোযখবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে হালকা আযাব ভোগকারী হবে সেই ব্যক্তি-যার জুতা ও জুতার ফিতা আগুনের হবে। তাতে তার মগজ এমনভাবে ফুটতে থাকবে যেমন, (চুলার উপর) কড়াই ফুটতে থাকে। তার চেয়ে বেশী আযাব অন্য কেউ আছে তা সে ভাবতেও পারবে না। অথচ তাদের সকলের মধ্যে তার আযাব হবে সবচেয়ে হালকা। -বুখারী, মুসলিম
کتاب الایمان
عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ أَهْوَنَ أَهْلِ النَّارِ عَذَابًا مَنْ لَهُ نَعْلَانِ وَشِرَاكَانِ مِنْ نَارٍ، يَغْلِي مِنْهُمَا دِمَاغُهُ كَمَا يَغْلِ الْمِرْجَلُ، مَا يَرَى أَنَّ أَحَدًا أَشَدُّ مِنْهُ عَذَابًا وَإِنَّهُ لَأَهْوَنُهُمْ عَذَابًا» (رواه البخارى ومسلم)
tahqiq

তাহকীক:

হাদীস নং: ১৩১
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ জাহান্নামীকে দুনিয়ার জীবনে আরাম ও জান্নাতিকে দুনিয়ার জীবনে কষ্ট সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ
১৩১. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন এক জাহান্নামীকে (জাহান্নামে নিক্ষেপ করার পূর্বে) হাযির করা হবে, যে দুনিয়ার মধ্যে আরাম-আয়েশে ছিল। অতঃপর তাকে একবার আগুনে চুবানি দেয়ার পর বলা হবে, হে আদম সন্তান! তুমি কি কখনও ভাল অবস্থা দেখেছ? আরাম-আয়েশ কি কখনো তোমার কাছে পৌঁছেছে? সে বলবে, হে রব! আল্লাহর কসম। কখনো না। অতঃপর এমন এক জান্নাতীকে হাজির করা হবে, যে দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশী দুঃখ-কষ্টে ছিল। তাকে একবার জান্নাতে ডুবানোর পর জিজ্ঞাসা করা হবে: হে আদম সন্তান! তমি কখনো কি দুঃখ-কষ্ট দেখেছ? কখনো কি কঠিন অবস্থা তোমার উপর এসেছে? সে বলবে, হে প্রভু। আল্লাহর শপথ! কখনো দুঃখ-কষ্ট আমার উপর আসেনি এবং কখনো কঠিন অবস্থা দেখিনি। মুসলিম
کتاب الایمان
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " يُؤْتَى بِأَنْعَمِ أَهْلِ الدُّنْيَا مِنْ أَهْلِ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، فَيُصْبَغُ فِي النَّارِ صَبْغَةً، ثُمَّ يُقَالُ: يَا ابْنَ آدَمَ هَلْ رَأَيْتَ خَيْرًا قَطُّ؟ هَلْ مَرَّ بِكَ نَعِيمٌ قَطُّ؟ فَيَقُولُ: لَا، وَاللهِ يَا رَبِّ وَيُؤْتَى بِأَشَدِّ النَّاسِ بُؤْسًا فِي الدُّنْيَا، مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ، فَيُصْبَغُ صَبْغَةً فِي الْجَنَّةِ، فَيُقَالُ لَهُ: يَا ابْنَ آدَمَ هَلْ رَأَيْتَ بُؤْسًا قَطُّ؟ هَلْ مَرَّ بِكَ شِدَّةٌ قَطُّ؟ فَيَقُولُ: لَا، وَاللهِ يَا رَبِّ مَا مَرَّ بِي بُؤْسٌ قَطُّ، وَلَا رَأَيْتُ شِدَّةً قَطُّ " (رواه مسلم)
হাদীস নং: ১৩২
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ শাস্তির তারতম্য অনুযায়ী দোযখীদের শ্রেণীবিভাগ
১৩২. হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব (রা) থেকে বর্ণিত। নবী (ﷺ) বলেনঃ তাদের (দোযখীদের) মধ্যে কতেকের পায়ের গোছা পর্যন্ত আগুন স্পর্শ করবে, কতেকের হাটু পর্যন্ত আগুন স্পর্শ করবে, কতেকের কোমড় পর্যন্ত আগুন স্পর্শ করবে এবং কতেকের কণ্ঠনালী পর্যন্ত আগুন স্পর্শ করবে। -মুসলিম
کتاب الایمان
عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدَبٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «مِنْهُمْ مَنْ تَأْخُذُهُ النَّارُ إِلَى كَعْبَيْهِ، وَمِنْهُمْ مَنْ تَأْخُذُهُ النَّارُ إِلَى رُكْبَتَيْهِ، وَمِنْهُمْ مَنْ تَأْخُذُهُ النَّارُ إِلَى حُجْزَتِهِ، وَمِنْهُمْ مَنْ تَأْخُذُهُ النَّارُ إِلَى تَرْقُوَتِهِ» (رواه مسلم)
হাদীস নং: ১৩৩
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ জাহান্নামের সাপ ও পোকা-মাকড়ের বিষক্রিয়া চল্লিশ বছর স্থায়ী হবে
১৩৩. হযরত আবদুল্লাহ ইবনুল-হারিস ইবনে জাযই (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: জাহান্নামের মধ্যে সাপ রয়েছে যা বুখতী উটের মত বৃহদাকার। এগুলোর বিষ এত ভয়ংকর যে, এর একটি কোন জাহান্নামীকে ছোবল মারলে সে তার বিষক্রিয়া ৪০ বছর পর্যন্ত ভুগতে থাকবে। অনন্তর জাহান্নামের মধ্যে এমন বিষাক্ত বিছা রয়েছে যা পিঠে গদি আঁটা খচ্চরের ন্যায় বৃহদাকার। এর কোন একটি কোন জাহান্নামীকে কামড় দিলে সে তার বিষক্রিয়া ৪০ বছর পর্যন্ত ভোগ করবে। -মুসনাদে আহমাদ
کتاب الایمان
عَنْ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ الْحَارِثِ بْنِ جَزْءٍ ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ فِي النَّارِ حَيَّاتٍ كَأَمْثَالِ الْبُخْتِ، تَلْسَعُ إِحْدَاهُنَّ اللَّسْعَةَ فَيَجِدُ حَمْوَتَهَا أَرْبَعِينَ خَرِيفًا، وَإِنَّ فِي النَّارِ عَقَارِبَ كَأَمْثَالِ الْبِغَالِ الْمُوكَفَةِ، تَلْسَعُ إِحْدَاهُنَّ اللَّسْعَةَ، فَيَجِدُ حَمْوَتَهَا أَرْبَعِينَ خَرِيْفًا» (رواه احمد)
tahqiq

তাহকীক:

হাদীস নং: ১৩৪
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ এক মশক গাস্সাক সারা পৃথিবীকে দুর্গন্ধময় করতে সক্ষম
১৩৪. হযরত আবু সায়ীদ আল-খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: চামড়ার এক মশক গাস্সাক (দোযখীদের ক্ষত থেকে নির্গত পুঁজ) দুনিয়াতে ছড়িয়ে দেয়া হয় তাহলে তা সারা দুনিয়াকে দুর্গন্ধময় করে ফেলবে। তিরমিযী
کتاب الایمان
عَنْ اَبِىْ سَعِيْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَوْ أَنَّ دَلْوًا مِنْ غَسَّاقٍ يُهْرَاقُ فِي الدُّنْيَا لأَنْتَنَ أَهْلَ الدُّنْيَا. (رواه الترمذى)
tahqiq

তাহকীক:

হাদীস নং: ১৩৫
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ এক বিন্দু যাক্কুম সারা দুনিয়ার উপায় উপকরণ বিনষ্ট করতে সক্ষম
১৩৫. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তিলাওয়াত করলেন: "আল্লাহকে ভয় কর, যতটা ভয় তাঁকে করা উচিত এবং মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ কর না" (সূরা আলে-ইমরানঃ ১০২)। রাসূল (ﷺ) বললেন, এক বিন্দু যাক্কুম দুনিয়াতে পতিত হলে সারা দুনিয়াবাসীর জীবন ধারণের উপায় উপকরণ বিনষ্ট করে দিত, এটা যার খাদ্য হবে তার অবস্থা কি হবে? -তিরমিযী
کتاب الایمان
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَرَأَ هَذِهِ الآيَةَ: {اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلاَ تَمُوتُنَّ إِلاَّ وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ} قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَوْ أَنَّ قَطْرَةً مِنَ الزَّقُّومِ قُطِرَتْ فِي دَارِ الدُّنْيَا لأَفْسَدَتْ عَلَى أَهْلِ الدُّنْيَا مَعَايِشَهُمْ، فَكَيْفَ بِمَنْ يَكُونُ طَعَامَهُ؟. (رواه الترمذى)
হাদীস নং: ১৩৬
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ জাহান্নামীরা কাঁদবে
১৩৬. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। নবী (ﷺ) বলেছেন: হে মানুষ! তোমরা কাঁদ, যদি কাঁতে না পার তাহলে কাঁদার ভাব কর। জাহান্নামীরা জাহান্নামে এত কাঁদবে যে, তাদের চেহারার উপর অশ্রুর ধারা ঝর্ণার ন্যায় প্রবাহিত হবে, অশ্রু নিঃশেষিত হয়ে গেলে রক্তের ধারা প্রবাহিত হবে এবং তার চোখ জখম হবে। যদি তাতে (রক্ত ও পানিতে) নৌকা চালান হত তাহলে খুব চলত। -বাগাবীর: শারহুস-সুন্নাহ
کتاب الایمان
عَنْ أَنَسِ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَا أَيُّهَا النَّاسُ، ابْكُوا، فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِيْعُوْا فَتَبَاكَوْا؛ فَإِنَّ أَهْلَ النَّارِ يَبْكُونَ فِى النَّارِ حَتَّى تَسِيلَ دُمُوعُهُمْ فِي وُجُوهِهِمْ كَأَنَّهَا جَدَاوِلُ حَتَّى تَنْقَطِعَ الدُّمُوعُ فَتَسِيلَ الدِّمَاءُ، فَتَقْرَحَ الْعُيُونَ، فَلَوْ أَنَّ سُفُنًا أُجْرِيَتْ فِيهِ لَجَرَتْ» (رواه البغوى فى شرح السنة)
হাদীস নং: ১৩৭
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ জাহান্নাম সম্পর্কে উম্মতের প্রতি নবী করীম (ﷺ)-এর সতর্কবাণী
১৩৭. হযরত নো'মান ইবনে বশীর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছিঃ "আমি তোমাদেরকে জাহান্নামের ব্যাপারে সতর্ক করে দিচ্ছি, আমি তোমাদের জাহান্নামের ব্যাপারে সতর্ক করে দিচ্ছি।" তিনি কথাটি বার বার বলতে থাকলেন। আমি (রাবী) যে স্থানে দাঁড়ায়ে রয়েছি, তিনি যতি সে স্থানে দাঁড়িয়ে তা বলতেন, তবে বাজারের লোকজন তা শুনতে পেত। এমনকি (তার অবস্থা এমন ছিল যে,) তার গায়ে যে কম্বল ছিল তা খসে তার পায়ের নিচে পড়ে গিয়েছিল।
کتاب الایمان
عَنْ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ: «أَنْذَرْتُكُمُ النَّارَ، أَنْذَرْتُكُمُ النَّارَ، » فَمَا زَالَ يَقُولُهَا حَتَّى لَوْ قَامَ فِي مَقَامِي هَذَا، سَمِعَهُ أَهْلُ السُّوقِ، وَحَتَّى سَقَطَتْ خَمِيصَةٌ كَانَتْ عَلَيْهِ عِنْدَ رِجْلَيْهِ. (رواه الدارمى)
হাদীস নং: ১৩৮
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ বেহেশত ও দোযখ সম্পর্কে একটি বিশেষ সতর্কবাণী
১৩৮. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ জাহান্নামকে লালসা ও কুপ্রবৃত্তির দ্বারা এবং জান্নাতকে কষ্ট ক্লেশের দ্বারা ঢেকে বেষ্টন করা হয়েছে। -বুখারী, মুসলিম
کتاب الایمان
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «حُفَّتِ النَّارُ بِالشَّهَوَاتِ وَحُفَّتِ الْجَنَّةُ بِالْمَكَارِهِِ» (رواه البخارى ومسلم)
হাদীস নং: ১৩৯
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ হযরত জিবরাঈল (আ)-এর জান্নাত ও জাহান্নাম পরিদর্শন ও রিপোর্ট দান
১৩৯. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: যখন আল্লাহ তা'আলা জান্নাত তৈরী করলেন, তখন জিবরাঈল (আ)-কে বললেনঃ যাও এবং তা দেখ (তা আমি কিভাবে বানিয়েছি এবং কোন কোন নি'আমত তাতে রেখেছি)। জিবরাঈল (আ) গেলেন এবং জান্নাত ও তার মধ্যে জান্নাতীদের জন্য আল্লাহ পাক যা তৈরী করে রেখেছেন তা দর্শন করলেন। অতঃপর তিনি আল্লাহর কাছে ফিরে এসে বললেন: হে রব! আপনার ইযযতের শপথ! আপনি জান্নাতকে এত সুন্দরভাবে বানিয়েছেন এর আরাম আয়েশের এত উপায় উপকরণ রেখেছেন যা দেখে মনে হয় যে ব্যক্তি জান্নাতের কথা শুনবে সে তাতে প্রবেশ করবে। (অর্থাৎ, এর অবস্থার কথা শুনে সে মনেপ্রাণে এর প্রত্যাশী হয়ে যাবে এবং সেখানে পৌছার জন্য যেসব নেক আমল করা উচিত, সে অত্যন্ত তৎপরতার সাথে সেসব আমল করে যাবে এবং যেসব বদ আমল থেকে বিরত থাকা উচিত, সেগুলো থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকবে। আর এভাবে সে সেখানে পৌঁছেই যাবে।) অতঃপর আল্লাহ্ তা'আলা জান্নাতকে পরিশ্রম কষ্ট ক্লেশের দ্বারা বেষ্টন করে রেখে দিলেন এবং বললেন: যাও (অর্থাৎ জান্নাতের জন্য শরীয়াতের দুর্গম পথ অতিক্রম করার শর্ত লাগান হয়েছে যা নফসের জন্য খুব কঠিন) এবং তা দেখে (শরীয়াতের আনুগত্যের কঠিন বেষ্টনী দেখ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ জিবরাঈল (আ) গেলেন এবং তা দেখলেন। অতঃপর ফিরে এসে বললেনঃ হে রব! আপনার ইযযতের কসম! আমি ভয় করছি কেউ তাতে প্রবেশ করবে না। (অর্থাৎ জান্নাতে যাওয়ার জন্য শরীয়ার হুকুমের আনুগত্য করার যে শর্ত আপনি আরোপ করেছেন তা নফস এবং খায়েসে নফসের অধিকারী মানুষের জন্য খুবই কঠিন বিধায় আশঙ্কা করছি যে তাদের কেহ তা পূরণ করে জান্নাতে যেতে পারবে না।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন: অতঃপর যখন আল্লাহ তা'আলা জাহান্নাম তৈরী করলেন, তখন বললেনঃ হে জিবরাঈল! যাও এবং তা (অর্থাৎ বিভিন্ন ধরনের আযাব এবং তার উপায় উপকরণ যা সৃষ্টি করা হয়েছে তা) দেখ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ জিবরাঈল (আ) গেলেন এবং তা দেখলেন। অতঃপর ফিরে এসে বললেনঃ হে প্রভু! আপনার ইযযতের শপথ! (আপনি দোযখকে যেভাবে বানিয়েছেন তাতে মনে হয় দোযখের নিক্ষেপকারী কোন কাফের নিকটবর্তী কোন লোক হবে না।) যে ব্যক্তি জাহান্নামের কথা শুনবে সে তাতে প্রবেশ করবে না। অতঃপর আল্লাহ্ তা'আলা জাহান্নামকে লোভ-লালসা ও প্রবৃত্তির দ্বারা বেষ্টন করে দিলেন। অতঃপর বললেন: হে জিবরাঈল। যাও এবং তা দেখ। (প্রবৃত্তির জন্য যা লোভনীয় তা দোযখের চারদিকে বেষ্টন করে দেয়ার কারণে দোযখের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হয়েছে।) নবী (ﷺ) বলেন: জিবরাঈল (আ) গিয়ে তা দর্শন করলেন: অতঃপর বললেন, হে প্রভু! আপনার সম্মানের কসম। আমি আশঙ্কা করছি এমন কোন মানুষ থাকবে না যে তাতে প্রবেশ করবে না। (যে খাহেশ এবং ভোগ সম্ভোগের দ্বারা আপনি জাহান্নামকে বেষ্টিত করেছেন তাতে প্রবৃত্তির অধিকারী মানুষের জন্য এমন আকর্ষণ সৃষ্টি হয়েছে যা দেখে তারা নিজেদেরকে দূরে রাখতে পারবে না। তিরিমিযী, আবু দাউদ ও নাসাঈ
کتاب الایمان
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " لَمَّا خَلَقَ اللَّهُ الْجَنَّةَ قَالَ لِجِبْرِيلَ: اذْهَبْ فَانْظُرْ إِلَيْهَا، فَذَهَبَ فَنَظَرَ إِلَيْهَا، ثُمَّ جَاءَ، فَقَالَ: أَيْ رَبِّ وَعِزَّتِكَ لَا يَسْمَعُ بِهَا أَحَدٌ إِلَّا دَخَلَهَا، ثُمَّ حَفَّهَا بِالْمَكَارِهِ، ثُمَّ قَالَ: يَا جِبْرِيلُ اذْهَبْ فَانْظُرْ إِلَيْهَا، فَذَهَبَ فَنَظَرَ إِلَيْهَا، ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ: أَيْ رَبِّ وَعِزَّتِكَ لَقَدْ خَشِيتُ أَنْ لَا يَدْخُلَهَا أَحَدٌ " قَالَ: " فَلَمَّا خَلَقَ اللَّهُ النَّارَ قَالَ: يَا جِبْرِيلُ اذْهَبْ فَانْظُرْ إِلَيْهَا، فَذَهَبَ فَنَظَرَ إِلَيْهَا، ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ: أَيْ رَبِّ وَعِزَّتِكَ لَا يَسْمَعُ بِهَا أَحَدٌ فَيَدْخُلُهَا، فَحَفَّهَا بِالشَّهَوَاتِ ثُمَّ قَالَ: يَا جِبْرِيلُ اذْهَبْ فَانْظُرْ إِلَيْهَا، قَالَ فَذَهَبَ فَنَظَرَ إِلَيْهَا، ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ: أَيْ رَبِّ وَعِزَّتِكَ لَقَدْ خَشِيتُ أَنْ لَا يَبْقَى أَحَدٌ إِلَّا دَخَلَهَا " (رواه الترمذى وابوداؤد والنسائى)
হাদীস নং: ১৪০
ঈমান অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ দোযখ থেকে পালানোর ইচ্ছা পোষণকারী ও বেহেশতের সাথী ঘুমিয়ে আছে
১৪০. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেনঃ আমি জাহান্নামের মত (ভয়ঙ্কর) কোন কিছু দেখিনি যা থেকে পলায়নকারী ঘুমিয়ে রয়েছে এবং জান্নাতের মত (প্রিয় ও আনন্দদায়ক) কিছু দেখিনি যার প্রার্থী ঘুমিয়ে রয়েছে। তিরমিযী
کتاب الایمان
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا رَأَيْتُ مِثْلَ النَّارِ نَامَ هَارِبُهَا، وَلاَ مِثْلَ الجَنَّةِ نَامَ طَالِبُهَا. (رواه الترمذى)