মা'আরিফুল হাদীস

ঈমান অধ্যায়

হাদীস নং: ১২৬
ঈমান অধ্যায়
জান্নাতে আল্লাহর দর্শন লাভ

আল্লাহ তা'আলার দর্শন জান্নাতবাসীদের জন্য সবচেয়ে বড় নি'আমত। আল্লাহ যাদেরকে সঠিক বুদ্ধি বিবেচনা প্রদান করেছেন তারা যদি একটু চিন্তাভাবনা করে তাহলে তাদের অন্তরে এ খায়েশ আকাক্ষা তারা অনুভব করবে। যে বান্দাহ তার প্রভুর বেশুমার নি'আমত দুনিয়ায় লাভ করছে এবং জান্নাতে পৌছার পর লক্ষগুণ বেশী নিয়ামতের অধিকারী হবে সে বান্দাহর অন্তরে অবশ্য এ আকাক্ষা সৃষ্টি হবে।
সে আকাক্ষা করবে যে আল্লাহ আমাকে অস্তিত্ব প্রদান করেছেন, আমাকে নি'আমতের বারিবর্ষণ করেছেন, তার দর্শন লাভ থেকে যদি আমি বঞ্চিত হই তাহলে অবশ্যই বিরাট সুখ সন্তোষ ও আনন্দ ও আরাম থেকে বঞ্চিত থাকব। আল্লাহ যে বান্দাহর উপর সন্তুষ্ট হয়ে জান্নাতে স্থান দান করবেন তাকে অবশ্যই তার দর্শন থেকে বঞ্চিত রাখবেন না।

কুরআন শরীফেও এ শ্রেষ্ঠ নি'আমতের সুসংবাদ বিশ্বাসীদেরকে দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বিভিন্ন ইরশাদের মধ্যে এ সুসংবাদ সুস্পষ্টভাবে প্রদান করেছেন। তামাম ঈমানদারগণ নিঃসন্দেহে তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছেন। কিন্তু এমন লোকও রয়েছে যারা দুনিয়ার মাপকাঠিতে আখিরাতের বিষয় বিচার করে এবং নিজেদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে চরম জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা মনে করে তারা আল্লাহর দর্শন সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করে। তারা মনে করে যার শরীর রয়েছে এবং কোন না কোন রং রয়েছে তাকে চোখের সামনে দেখা যেতে পারে কিন্তু আল্লাহর তো কোন শরীর নেই এবং তাঁর কোন রং নেই এবং তাঁর কোন সম্মুখ বা পশ্চাৎ নেই-তাহলে তাঁকে কি করে দেখা যেতে পারে? এটা তাদের সুস্পষ্ট ভ্রান্তি। যদি আহলে হকের এ আকিদা হতো যে আখিরাতের যিন্দেগীতে আল্লাহর দর্শন আমাদের দুনিয়ার চোখের দ্বারা হবে যা শুধু শরীর, রং বা যার দর্শন শক্তি শুধু সম্মুখের জিনিসকেই দেখতে সক্ষম তাহলে এসব সত্য অস্বীকারকারীদের এ ধরনের ধারণা কিঞ্চিৎ সঠিক হতো কিন্তু কুরআন এবং হাদীস একথা বলেনি আহলে হকেরও এ আকিদা নয়।

আহলে হক, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আত কুরআন এবং হাদীসের অনুসরণের ক্ষেত্রে এ ধারণায় বিশ্বাসী যে যারা জান্নাত লাভ করবে তারা আল্লাহকে দর্শন করার সৌভাগ্য লাভ করবে। এবং আল্লাহ্ তা'আলা জান্নাতীদেরকে এমন শক্তি দান করবেন যা তিনি পৃথিবীতে কাউকে দেন নি। তিনি জান্নাতীদেরকে এমন দৃষ্টিদান করবেন, যা দুনিয়ার দৃষ্টিশক্তির মত দুর্বল এবং সীমাবদ্ধ হবে না। এবং এই দৃষ্টিশক্তির দ্বারাই জান্নাতীগণ রব্বে কুদ্দুসকে দেখতে পাবেন, যার কোন শরীর হবে না এবং কোন রং হবে না, এবং যার কোন সম্মুখ পশ্চাত হবে না। বরং তিনি এসব কিছুর আড়ালে একটি আলো হবেন এবং সব আলোরই উৎস তিনিই।
এ বিশ্লেষণের পর রাব্বুল আলামীনের দর্শন সম্পর্কে বুদ্ধি বিভ্রাটের কারণে যাদের ওয়াসওয়াসা হয় কিছুক্ষণের জন্য তাদের এই চিন্তা করা উচিত যে, আল্লাহ তা'আলা কি তাঁর সৃষ্টিকে দেখেন না দেখেন না? যদি দর্শন এসব উপায় উপকরণ এবং শর্তের সাথে সম্পর্কিত হয় যার দ্বারা আমরা দেখে থাকি তাহলে তো আল্লাহ তা'আলা কাউকে দেখতে পাবেন না-কেননা তার কোন চোখ নেই এবং না কোন সৃষ্টির সম্মুখে তিনি আছেন। তাই যারা এ বিশ্বাস পোষণ করে যে, আল্লাহ তা'আলা চোখ ছাড়াই দেখেন, এবং আমাদের চোখ যে সব দেখতে সক্ষম নয় তাও তিনি দেখেন। তিনি বিনা মুকাবিলাও দেখেন। তাই আল্লাহ তা'আলা দর্শনের ব্যাপারে কোনরূপ ওয়াসওয়াসা থাকা উচিত নয়। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সুসংবাদের উপর বিশ্বাস করে আমাদের বুঝা উচিত যে, আখিরাতের যিন্দিগীতে আল্লাহ তা'আলা তাঁর কুদরতের দ্বারা তিনি আমাদেরকে এমন চোখ দান করবেন, যার দ্বারা আমরা আল্লাহ তা'আলার সৌন্দর্যের দর্শন লাভ করতে পারব। কুরআনে কারীমে ঈমানদারদের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে যে

وُجُوۡہٌ یَّوۡمَئِذٍ نَّاضِرَۃٌ ۙ . اِلٰی رَبِّہَا نَاظِرَۃٌ ۚ

এবং তাঁর বিপরীতে মিথ্যাবাদী এবং সত্য অস্বীকারকারীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে

اِنَّہُمۡ عَنۡ رَّبِّہِمۡ یَوۡمَئِذٍ لَّمَحۡجُوۡبُوۡنَ

জান্নাতে আল্লাহর দর্শন লাভ
১২৬. হযরত সুহাইব (রা) নবী করীম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেনঃ তোমরা কি চাও যে, আমি তোমাদেরকে আরও দান করি? তারা বলবে, আপনি কি আমাদের চেহারা উজ্জল করেন নি? আপনি কি আমাদের জান্নাতে দাখিল করেন নি এবং দোযখ থেকে রক্ষা করেন নি? নবী (ﷺ) বলেন: অতঃপর পর্দা সরিয়ে দেয়া হবে এবং তারা মহান আল্লাহর চেহারা ও সৌন্দর্য দর্শন করবে। তারা অনুভব করবে তাদের যা কিছু দান করা হয়েছে, তার চেয়ে তাদের কাছে অধিক প্রিয়-তাদের প্রভুর দর্শন। অতঃপর নবী করীম (ﷺ) তিলাওয়াত করলেনঃ "যারা দুনিয়ার জীবনে উত্তম কাজ করে তাদের জন্য উত্তম (পারিশ্রমিক বা জান্নাত) এবং তার চেয়েও বেশী এক নি'আমত (অর্থাৎ আল্লাহর দীদার)। (সূরা ইউনুস-২৬) -মুসলিম
کتاب الایمان
عَنْ صُهَيْبٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " إِذَا دَخَلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ: يَقُولُ اللهُ تَعَالَى: أَتُرِيدُونَ شَيْئًا أَزِيدُكُمْ؟ فَيَقُولُونَ: أَلَمْ تُبَيِّضْ وُجُوهَنَا؟ أَلَمْ تُدْخِلْنَا الْجَنَّةَ، وَتُنَجِّنَا مِنَ النَّارِ؟ قَالَ: فَيَرْفَعُ الْحِجَابُ فَيَنْظُرُوْنَ اِلَى وَجْهِ اللهِ، فَمَا أُعْطُوا شَيْئًا أَحَبَّ إِلَيْهِمْ مِنَ النَّظَرِ إِلَى رَبِّهِمْ ثُمَّ تَلَا "لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا الْحُسْنَى وَزِيَادَةٌ ". (رواه مسلم)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

পর্দা সরানের অর্থ হল দৃষ্টিকে এত শক্তিশালী করা যাতে অনায়াসে মহান প্রভুকে দর্শন করা যায়। কুরআনের আয়াতে উল্লিখিত ..زیارة.. শব্দের দ্বারা জান্নাত এবং জান্নাতের নি'আমত ছাড়াও মহান আল্লাহর দর্শনের নি'আমতের কথা বলা হয়েছে।
বিঃ-দ্রঃ আল্লাহ তাঁর সৎকর্মশীল বান্দাদেরকে আখিরাতে সাক্ষাৎ দেবেন।
দুনিয়াতে আমরা চর্ম চোখে আল্লাহকে দেখতে পাই না। হযরত মূসা (আ) তাঁকে দেখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু দেখতে পারেন নি। জ্যোতির ঝলক দেখে তিনি বেহুশ হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু আখিরাতের অবস্থা হবে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। তার কারণ সেই জগতের স্বভাব প্রকৃতি, ধারণ ক্ষমতা ও সহ্য শক্তিও হবে ব্যতিক্রমধর্মী। মানুষকে আল্লাহ্ রাব্বুর আলামীন আখিরাতের জীবনের সম্পূর্ণ উপযোগী করে দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করবেন। তাই জান্নাতের মধ্যে আল্লাহর দর্শনে কোনরূপ অসুবিধা হবে না। বরং জ্যোতির্ময় আল্লাহর জ্যোতি দর্শন করার জন্য জান্নাতীদের চোখ সম্পূর্ণ উপযোগী হবে। আল্লাহকে দর্শন করে তারা বেহুশ হবে না এবং তাদের চোখ ক্লান্ত ও অসুস্থ হবেনা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান