মা'আরিফুল হাদীস
ঈমান অধ্যায়
হাদীস নং: ৬৫
ঈমান অধ্যায়
দোযখ ও বেহেশতে প্রত্যেকের স্থান নির্ধারিত
৬৫. হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: এমন কোন লোক নেই যার স্থান দোযখে এবং বেহেশতে লেখা হয়নি (অর্থাৎ কোন ব্যক্তি বেহেশতে অথবা দোযখে যেখানেই থাক-তা পূর্ব নির্ধারিত)। সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) তাহলে আমরা কি ভাগ্যলিপির উপর তাওয়াক্কুল করে বসে থাকব এবং আমল ছেড়ে দেব? (অর্থাৎ সবকিছু যখন পূর্ব-নির্ধারিত ও লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে-তখন চেষ্টা-সাধনা করে আর কি লাভ)? তিনি বললেন, না, আমল করতে থাক, কারণ প্রত্যেক ব্যক্তি সেই কাজেরই সুযোগ পায় যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। অতএব যে ব্যক্তি সৌভাগ্যবান সে সৎকর্মের সুযোগ পায় এবং যে দুর্ভাগা সে মন্দ আমলের সুযোগ পেয়ে থাকে। অতঃপর তিনি এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন। "যে ব্যক্তি দান করল, তাকওয়ার পথ অবলম্বন করল এবং সত্য সুন্দর (ইসলাম)-কে গ্রহণ করল, আমরা তাকে জান্নাতে দিব। আর যে ব্যক্তি কৃপণতা করল, অহঙ্কার করল এবং সত্য সুন্দর (ইসলাম)-কে কবুল করল না, আমরা তার জন্য কঠিন পথ (দোযখ) সহজ করে দেব।" -সূরা লাইলঃ ৫-১০
کتاب الایمان
عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا وَقَدْ كُتِبَ مَقْعَدُهُ مِنَ النَّارِ، وَمَقْعَدُهُ مِنَ الجَنَّةِ» قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَفَلاَ نَتَّكِلُ عَلَى كِتَابِنَا، وَنَدَعُ العَمَلَ؟ قَالَ: «اعْمَلُوا فَكُلٌّ مُيَسَّرٌ لِمَا خُلِقَ لَهُ، أَمَّا مَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ السَّعَادَةِ فَيُيَسَّرُ لِعَمَلِ أَهْلِ السَّعَادَةِ، وَأَمَّا مَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الشَّقَاءِ فَيُيَسَّرُ لِعَمَلِ أَهْلِ الشَّقَاوَةِ»، ثُمَّ قَرَأَ: {فَأَمَّا مَنْ أَعْطَى وَاتَّقَى وَصَدَّقَ بِالحُسْنَى فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْيُسْرَى، وَأَمَّا مَنْ بَخِلَ وَاسْتَغْنَى، وَكَذَّبَ بِالْحُسْنَى فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَى} (رواه البخارى و مسلم)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
যদিও প্রত্যেক ব্যক্তির সর্বশেষ বাসস্থান জান্নাত বা দোযখ পূর্ব নির্ধারিত তবু সৎকর্ম বা মন্দ কর্মের দ্বারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নির্ধারিত স্থানে পৌছবে তাও পূর্ব নির্ধারিত। ভাগ্যলিপিতে এটাও উল্লেখিত রয়েছে যে, অমুক অমুক কর্মের মাধ্যমে আল্লাহর বান্দাহ জান্নাত বা জাহান্নামে যাবে। অতএব, জান্নাতীদের জন্য সৎকর্ম এবং জাহান্নামীদের জন্য মন্দ কর্ম নির্ধারিত রয়েছে। আলোচ্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বান্দাহর কর্মের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
বিঃ দ্রঃ আল্লাহ্ মানুষের মাঝে ভাল ও মন্দ শক্তির সৃষ্টি করেছেন। তাদেরকে ভাল রাস্তা ও মন্দ রাস্তার পার্থক্য ও পরিণামও বলে দিয়েছেন। তিনি তাঁর কোন বান্দাহকে ভাল বা মন্দ রাস্তা অবলম্বন করতে কোনরূপ বাধ্য করেন না। এরূপভাবে বাধ্য করলে আখিরাতের ময়দানে মানুষের পাপ পূণ্যের কোনরূপ বিচার করা ন্যায় সঙ্গত হত না। যে পাপীকে শাস্তি প্রদান করা হবে সে বলবে পাপ কর্ম করার ক্ষেত্রে তার কোন হাত ছিল না, ভাগ্যের লিখন তাকে পাপ কাজ করতে বাধ্য করেছে, তাই তাকে শাস্তি প্রদান করা অন্যায় হবে। শুধু তাই নয়, সে আরও একধাপ অগ্রসর হয়ে প্রশ্ন করতে পারে, সৎকর্মশীল ব্যক্তির কি কৃতিত্ব রয়েছে সে জান্নাত লাভ করবে? বস্তুতঃ রাব্বুল আলামীনের কোন কাজই অন্যায় অসঙ্গত নয়, তার প্রত্যেক কাজের বুনিয়াদ হক ও ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত। ইনসাফের দাবী অনুযায়ী আল্লাহ তা'আলা মানুষকে কর্মের আযাদী এবং ক্ষমতা প্রদান করেছেন। এখন প্রশ্ন হল ভাগ্যের লিখনটি কি এবং প্রত্যেকের জন্য বেহেশত দোযখ পূর্ব নির্ধারিত কথার অর্থ কি? তার অর্থ হল, আল্লাহ তা'আলা জ্ঞাত রয়েছেন মানুষ ভবিষ্যতে কি কাজ করবে এবং তার ফল দুনিয়া ও আখিরাতে কি হবে? তিনি আরও জ্ঞাত রয়েছেন যে, তার কোন বান্দাহ "কর্মের আযাদীর ক্ষমতা" ভাল না মন্দ কাজের জন্য ব্যবহার করবে। তকদীর পরিপূর্ণভাবে অদৃশ্য এবং একমাত্র আল্লাহ তা'আলাই সে সম্পর্কে ওয়াকেফহাল, দুনিয়ার কোন শক্তি-আওলিয়া, দরবেশ, কুতুব প্রমুখ তকদিরের ভাল-মন্দ বা তার পরিবর্তনের সামান্যতম অধিকার রাখে না।
বিঃ দ্রঃ আল্লাহ্ মানুষের মাঝে ভাল ও মন্দ শক্তির সৃষ্টি করেছেন। তাদেরকে ভাল রাস্তা ও মন্দ রাস্তার পার্থক্য ও পরিণামও বলে দিয়েছেন। তিনি তাঁর কোন বান্দাহকে ভাল বা মন্দ রাস্তা অবলম্বন করতে কোনরূপ বাধ্য করেন না। এরূপভাবে বাধ্য করলে আখিরাতের ময়দানে মানুষের পাপ পূণ্যের কোনরূপ বিচার করা ন্যায় সঙ্গত হত না। যে পাপীকে শাস্তি প্রদান করা হবে সে বলবে পাপ কর্ম করার ক্ষেত্রে তার কোন হাত ছিল না, ভাগ্যের লিখন তাকে পাপ কাজ করতে বাধ্য করেছে, তাই তাকে শাস্তি প্রদান করা অন্যায় হবে। শুধু তাই নয়, সে আরও একধাপ অগ্রসর হয়ে প্রশ্ন করতে পারে, সৎকর্মশীল ব্যক্তির কি কৃতিত্ব রয়েছে সে জান্নাত লাভ করবে? বস্তুতঃ রাব্বুল আলামীনের কোন কাজই অন্যায় অসঙ্গত নয়, তার প্রত্যেক কাজের বুনিয়াদ হক ও ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত। ইনসাফের দাবী অনুযায়ী আল্লাহ তা'আলা মানুষকে কর্মের আযাদী এবং ক্ষমতা প্রদান করেছেন। এখন প্রশ্ন হল ভাগ্যের লিখনটি কি এবং প্রত্যেকের জন্য বেহেশত দোযখ পূর্ব নির্ধারিত কথার অর্থ কি? তার অর্থ হল, আল্লাহ তা'আলা জ্ঞাত রয়েছেন মানুষ ভবিষ্যতে কি কাজ করবে এবং তার ফল দুনিয়া ও আখিরাতে কি হবে? তিনি আরও জ্ঞাত রয়েছেন যে, তার কোন বান্দাহ "কর্মের আযাদীর ক্ষমতা" ভাল না মন্দ কাজের জন্য ব্যবহার করবে। তকদীর পরিপূর্ণভাবে অদৃশ্য এবং একমাত্র আল্লাহ তা'আলাই সে সম্পর্কে ওয়াকেফহাল, দুনিয়ার কোন শক্তি-আওলিয়া, দরবেশ, কুতুব প্রমুখ তকদিরের ভাল-মন্দ বা তার পরিবর্তনের সামান্যতম অধিকার রাখে না।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)