রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
رياض الصالحين من كلام سيد المرسلين
ভূমিকা অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ৬৭৯ টি
হাদীস নং: ৫৪১
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায়: ৫৯ নিজ হাতে পরিশ্রম করে খাওয়া এবং অন্যের কাছে প্রার্থনা করা বা দান গ্রহণের জন্য নিজেকে সম্মুখবর্তী করা হতে সংযত রাখার প্রতি উৎসাহদান
হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালামের পেশা
হাদীছ নং: ৫৪১
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যাকারিয়া আলাইহিস-সালাম কাঠমিস্ত্রী ছিলেন। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ২৩৭৯; মুসনাদে আহমাদ: ৭৯৪৭; সুনানে ইবন মাজাহ: ২১৫১; সহীহ ইবন হিব্বান: ৫১৪১; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ৯৮১)
হাদীছ নং: ৫৪১
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যাকারিয়া আলাইহিস-সালাম কাঠমিস্ত্রী ছিলেন। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ২৩৭৯; মুসনাদে আহমাদ: ৭৯৪৭; সুনানে ইবন মাজাহ: ২১৫১; সহীহ ইবন হিব্বান: ৫১৪১; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ৯৮১)
مقدمة الامام النووي
59 - باب الحث عَلَى الأكل من عمل يده والتعفف به عن السؤال والتعرض للإعطاء
541 - وعنه: أنَّ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «كَانَ زَكرِيّا - عليه السلام - نَجَّارًا». رواه مسلم. (1)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৪২
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায়: ৫৯ নিজ হাতে পরিশ্রম করে খাওয়া এবং অন্যের কাছে প্রার্থনা করা বা দান গ্রহণের জন্য নিজেকে সম্মুখবর্তী করা হতে সংযত রাখার প্রতি উৎসাহদান
নিজ হাতে পরিশ্রম করা জীবিকা নির্বাহের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম
হাদীছ নং: ৫৪২
হযরত মিকদাম ইবন মা'দীকারিব রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনও ব্যক্তি নিজ হাতে পরিশ্রম করে খাওয়া অপেক্ষা উত্তম খাদ্য কখনও খায়নি। আল্লাহর নবী দাউদ আলাইহিস সালাম নিজ হাতে পরিশ্রম করে খেতেন। -বুখারী
(সহীহ বুখারী : ২০৭২; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ১১৭০; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ২০২৭)
হাদীছ নং: ৫৪২
হযরত মিকদাম ইবন মা'দীকারিব রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনও ব্যক্তি নিজ হাতে পরিশ্রম করে খাওয়া অপেক্ষা উত্তম খাদ্য কখনও খায়নি। আল্লাহর নবী দাউদ আলাইহিস সালাম নিজ হাতে পরিশ্রম করে খেতেন। -বুখারী
(সহীহ বুখারী : ২০৭২; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ১১৭০; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ২০২৭)
مقدمة الامام النووي
59 - باب الحث عَلَى الأكل من عمل يده والتعفف به عن السؤال والتعرض للإعطاء
542 - وعن المقدام بنِ مَعْدِ يكرِبَ - رضي الله عنه - عن النبي - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مَا أكَلَ أَحَدٌ طَعَامًا قَطُّ خَيْرًا مِنْ أَنْ يَأكُلَ مِنْ عَمَلِ يَدِه، وَإنَّ نَبيَّ الله دَاوُدَ - صلى الله عليه وسلم - كَانَ يَأكُلُ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ». رواه البخاري. (1)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৪৩
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ উদারতা ও দানশীলতা প্রসঙ্গ এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে কল্যাণকর খাতসমূহে অর্থব্যয় করার ফযীলত
الكرم অর্থ উদারতা, দানশীলতা। যেখানে যে পরিমাণ খরচ করা দরকার, সেখানে সেই পরিমাণ খরচ করাকে اَلْكَرَمُ বলা হয়। আরবীতে এ অর্থে আরও কয়েকটি শব্দ আছে। যেমন- اَلْجُوْدُ، اَلسَّخَاءُ، اَلسَّمَاحَةُ। ইমাম কাযী ইয়ায রহ.-এর মতে সবগুলো শব্দের অর্থ কাছাকাছি। কেউ কেউ এর মধ্যে কিছুটা পার্থক্যও করেছেন। তবে সাধারণভাবে সবগুলো দ্বারাই উদারতা ও দানশীলতা বোঝানো হয়ে থাকে।
উদারতা ও দানশীলতা ইসলামের নৈতিক শিক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ দিক। পুণ্যার্জন বা আখিরাতের মুক্তিলাভের পক্ষে এটা অনেক বড় উপায়। কুরআন ও হাদীছে বিভিন্নভাবে এর গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে এবং এর প্রতি উৎসাহ যোগানো হয়েছে। যেমন কুরআন মাজীদে ইরশাদ-
لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ شَيْءٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ (92)
‘তোমরা কিছুতেই পুণ্যের নাগাল পাবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু হতে (আল্লাহর জন্য) ব্যয় করবে। তোমরা যা-কিছুই ব্যয় কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণ অবগত।’(সূরা আলে-ইমরান (৩), আয়াত ৯২)
অপর এক আয়াতে পুণ্য ও ছাওয়াবের কাজের একটা তালিকা দেওয়া হয়েছে। তার অনেকগুলো ধারাই আল্লাহর পথে অর্থব্যয় সম্পর্কে। ইরশাদ হয়েছে-
وَلَكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَى حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّائِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ
‘বরং পুণ্য হল (সেই ব্যক্তির কার্যাবলি), যে ঈমান রাখে আল্লাহর, শেষ দিনের ও ফিরিশতাদের প্রতি এবং (আল্লাহর) কিতাব ও নবীগণের প্রতি। আর আল্লাহর ভালোবাসায় নিজ সম্পদ দান করে আত্মীয়-স্বজন, এতিম, মিসকীন, মুসাফির ও সওয়ালকারীদেরকে এবং দাসমুক্তিতে।(সূরা বাকারা (২), আয়াত ১৭৭)
এক হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
السَّخِيُّ قَرِيبٌ مِنَ اللهِ ، بَعِيدٌ مِنَ النَّارِ ، قَرِيبٌ مِنَ الْجَنَّةِ ، قَرِيبٌ مِنَ النَّاسِ
‘দানশীল ব্যক্তি আল্লাহর নিকটবর্তী, জাহান্নাম থেকে দূরবর্তী, জান্নাতের নিকটবর্তী এবং মানুষেরও নিকটবর্তী।(তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত: ২৩৬৩; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ১০৩৫২
قال الإمام أبو حاتم : هذا حديث باطل، وسعيد (بن مسلمة الراوي عن يحي بن سعيد) ضعيف الحديث، أخاف أن يكون أدخل له. (علل ابن أبي حاتم ٩٧/٦ (٣٢٥٢). وقال أيضا (٢٣٥٣): هذا حديث منكر فيه سعيد بن محمد الوراق (الراوي عن يحي بن سعيد) قال الدارقطني متروك. قال العقيلي : ليس لهذا الحديث أصل من حديث يحي ولا غيره)
অপর এক বর্ণনায় এসেছে-
الْجَنَّةُ دَارُ الْأَسْخِيَاءِ
‘জান্নাত দানশীলদের নিবাস।(খারাইতী, মাকারিমুল আখলাক: ৫৯৭; ইবন শাহীন, আত-তারগীব: ২৬৮
قال الدارقطني في العلل ۱۲٥/١٤ (٣٤٧٣) : لا يصح هذا الحديث. قال المحرر: فيه جَحْدَر، واسمه عبد الرحمن بن الحارث، قال ابن عدي : يسرق الحديث وهو بين الضعف جدا. قال الذهبي في ميزان الاعتدال: هذا حديث منكر، ما آفته سوى جحدر. قال عبد الله معروف: وما ذكر في الإحالة من رواية الترغيب لابن شاهين، فهو غير إسناد جحدر، لكن فيه عبد ربه بن سليم مجهول، كما قال ابن أبي حاتم في علله عن أبيه.)
মূলত ধন-সম্পদ দুনিয়ার জরুরত পূরণ ও আখিরাতের মুক্তিলাভের জন্যই। সম্পদ যদি সে উদ্দেশ্যে ব্যয় না করে বিলাসিতার পেছনে খরচ করা হয়, তবে তা কেবল ক্ষতিই বয়ে আনে। হযরত আবু যার্র রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পৌঁছলাম। তখন তিনি কা'বার ছায়ায় বসা ছিলেন। তিনি বলছিলেন, কা'বার রব্বের শপথ! তারাই সর্বাপেক্ষা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তিনি এ কথা তিনবার বলেছেন। আমি মনে মনে ভাবলাম, আমার কী হল? আমার ভেতর অপ্রীতিকর কিছু দেখা যাচ্ছে কি? আমি এগিয়ে গিয়ে তাঁর কাছে বসলাম। আমার পক্ষে চুপ থাকা সম্ভব হল না। শেষে আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার প্রতি আমার পিতা-মাতা উৎসর্গিত। তারা কারা? তিনি বললেন-
الْأَكْثَرُوْنَ أَمْوَالًا ، إِلَّا مَنْ قَالَ هكَذَا، وَهكَذَا، وَهكَذَا
‘যাদের ধন-সম্পদ বেশি। তবে যারা এরূপ, এরূপ ও এরূপ করে (অর্থাৎ ডানে, বামে, সামনে ও পেছনে সবদিকে খরচ করে) তারা ব্যতিক্রম।(সহীহ বুখারী : ৬৬৩৮; সহীহ মুসলিম: ৯৯০; জামে' তিরমিযী: ৬১৭; সুনানে নাসাঈ ২৪৪০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা: ৩৪৩৮৬; মুসনাদে আহমাদ: ২১৩৫১; সহীহ ইবন খুযায়মা ২২৫১)
আল্লাহর পথে খরচ করার দ্বারা পরকালীন ফায়দা তো আছেই, দুনিয়ায়ও এর উপকার বহুবিধ। সর্বাপেক্ষা বড় একটি উপকার হল দানশীল ব্যক্তির পক্ষে আল্লাহ তা'আলার সাহায্য উন্মুক্ত থাকে এবং দান-খয়রাতের বিনিময়ে তার গুনাহ মাফ করা হয়। এক হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
تَجَافُوْا عَنْ ذَنْبِ السَّخِيِّ، فَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى آخِذٌ بِيَدِهِ كُلَّمَا عَثَرَ
‘তোমরা দানশীল ব্যক্তির ত্রুটি-বিচ্যুতি উপেক্ষা করো। কেননা যখনই তার পদস্খলন ঘটে, আল্লাহ তা'আলা তার হাত ধরেন।(বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ১০৩৬৯; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৫৭১০
عده الصغاني من الموضوعات، وقال الذهبي في سير أعلام النبلاء ٢٦١/١٧ (ترجمة خلف ابن محمد الواسطي): هذا حديث منكر)
প্রকৃতপক্ষে আখিরাতের মুক্তিই মানবজীবনের পরম লক্ষ্য। তাই দুনিয়ায় আল্লাহ তা'আলা যা-কিছু দিয়েছেন, তা সে লক্ষ্য অর্জনের জন্যই ব্যয় করা উচিত। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
وَابْتَغِ فِيمَا آتَاكَ اللَّهُ الدَّارَ الْآخِرَةَ وَلَا تَنْسَ نَصِيبَكَ مِنَ الدُّنْيَا
‘আল্লাহ তোমাকে যা-কিছু দিয়েছেন তার মাধ্যমে আখিরাতের নিবাস লাভের চেষ্টা করো এবং দুনিয়া হতেও নিজ হিস্যা অগ্রাহ্য করো না।'(সূরা কাসাস (২৮), আয়াত ৭৭)
একবার হযরত মু'আবিয়া রাযি. হযরত আমর ইবনুল আস রাযি.-কে জিজ্ঞেস করেন, মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় দানশীল কে? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি তার দীন গড়ার লক্ষ্যে দুনিয়া ব্যয় করে।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে মহান গুণাবলির অধিকারী ছিলেন, দানশীলতা তার অন্যতম। তিনি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ দানবীর ছিলেন। তাঁকে উম্মতের জন্য আদর্শ করে বানানো হয়েছে। প্রত্যেকের কর্তব্য তাঁর অন্যান্য গুণের মতো দানশীলতার গুণটিও আয়ত্ত করা। কেননা এর রয়েছে বহুবিধ কল্যাণ। আল্লাহর পথে দান করার দ্বারা বিপুল ছাওয়াব অর্জন করা যায়। এতে আল্লাহ তা'আলা খুশি হন। এটা আখিরাতে মুক্তিলাভ করার পক্ষে সহায়ক। দুনিয়ায়ও এর নানা উপকার রয়েছে। এর ফলে সম্পদে বরকত হয়, মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায় এবং গায়েবীভাবে আল্লাহ তা'আলার সাহায্যও লাভ হয়। তাই মানুষের উচিত অভাবের ভয় করে কিংবা কমে যাবে এ আশঙ্কা করে দান-খয়রাত হতে পিছিয়ে না থাকা। বরং আল্লাহ তা'আলার ভাণ্ডার অফুরন্ত, বান্দা তাঁর পথে দান-খয়রাত করতে থাকলে তিনি তার জন্য নিজ অফুরন্ত ভাণ্ডারের দরজা খুলে দেবেন- এ বিশ্বাস ও আস্থার সঙ্গে আপন সামর্থ্য অনুযায়ী সৎকর্মের খাতসমূহে খরচ করতে থাকা চাই। মুমিন বান্দা যাতে সেই আস্থা ও তাওয়াক্কুলের সাথে আল্লাহর পথে অকুণ্ঠভাবে দান-খয়রাত করে, সে লক্ষ্যে কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াত ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বহু হাদীছে এর প্রতি উৎসাহদান করা হয়েছে। ইমাম নাওয়াবী রহ. এ অধ্যায়ে সেরকম কয়েকটি আয়াত ও হাদীছ উল্লেখ করেছেন। আমরা তার বঙ্গানুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করছি। আল্লাহ তা'আলা তাওফীক দান করুন।
‘উদারতা ও দানশীলতা…’ সম্পর্কিত কিছু আয়াত
এক নং আয়াত
وَمَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُهُ
অর্থ: ‘তোমরা যা-কিছুই ব্যয় কর, তিনি তদস্থলে অন্য জিনিস দিয়ে দেন।(সূরা সাবা' (৩৪), আয়াত ৩৯)
ব্যাখ্যা
অর্থাৎ আল্লাহর পথে ও নিজ প্রয়োজনে খরচ করতে থাকো। কৃপণতা করো না। ভয় করো না যে, খরচ করলে সম্পদ কমে যাবে বা অভাবে পড়ে যাবে। খরচ করলে রিযিক কমে না। আল্লাহ তা'আলা যার ভাগ্যে যা রেখেছেন তা সে পাবেই। বরং খরচ করলেই লাভ। আল্লাহর হুকুম মোতাবেক খরচ করার দ্বারা অর্থ-সম্পদে বরকত হয় এবং আখিরাতে ছাওয়াব পাওয়া যায়।
বলা হয়েছে- 'তদস্থলে অন্য জিনিস দিয়ে দেন', এ দেওয়াটা আখিরাতের ছাওয়াব আকারেও হতে পারে এবং দুনিয়াবী বদলাও হতে পারে। খরচ করার দ্বারা মনের ঐশ্বর্য তো লাভ হয়ই, যা কিনা প্রকৃত ঐশ্বর্য। সেইসঙ্গে লাভ হয় বরকতও। বরকত হওয়ার মানে অল্প খরচেই অনেক বড় প্রয়োজন মিটে যাওয়া, অহেতুক খরচ থেকে রক্ষা পাওয়া, যা খরচ হয় তা বৃথা না যাওয়া; বরং যে উদ্দেশ্যে খরচ করা হয় তা অর্জিত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এসব অর্জন খরচ করার দ্বারাই হয়। তাই তো নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত বিলাল রাযি.-কে লক্ষ্য করে বলেন-
أَنْفِقْ يَا بِلَالُ ، وَلَا تَخْشَ مِنْ ذِي الْعَرْشِ إِقْلَالًا
‘হে বিলাল! খরচ করো। আরশওয়ালার কাছ থেকে কমানোর ভয় করো না।(শুআবুল ঈমান : ১৩৯৩; তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর : ১০২৬)
আয়াতে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, খরচ করলে আল্লাহ তার বিনিময় দান করেন। এর দ্বারা বোঝা যায় খরচ করতে হবে বৈধ খাতে। কেননা বিনিময় দান করাটা আল্লাহর খুশির আলামত। অবৈধ খাতে খরচ করলে খুশি নয়; বরং তিনি নারাজ হন। সে ক্ষেত্রে বিনিময়লাভের আশা করা যায় না। এমনিভাবে খরচ করতে হবে পরিমিতভাবে। অপব্যয় বা অপচয় করা জায়েয নয়। কুরআন-হাদীছে তা নিষেধ করা হয়েছে।
আয়াতটির শিক্ষা
ক. আল্লাহপ্রদত্ত অর্থ-সম্পদ প্রয়োজনীয় খাতে অকৃপণভাবে খরচ করা চাই।
খ. খরচ যাতে বৈধ খাতে হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা জরুরি।
গ. শরী'আত মোতাবেক খরচ করলে দুনিয়া ও আখিরাতে বিনিময়লাভের আশা থাকে।
দুই নং আয়াত
وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ خَيْرٍ فَلِأَنْفُسِكُمْ وَمَا تُنْفِقُونَ إِلَّا ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللَّهِ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ خَيْرٍ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنْتُمْ لَا تُظْلَمُونَ (272)
অর্থ: ‘তোমরা যে সম্পদই ব্যয় কর, তা তোমাদের নিজেদেরই কল্যাণার্থে হয়ে থাকে। আর তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা ছাড়া অন্য কোনও উদ্দেশ্যে ব্যয় কর না। আর তোমরা যে সম্পদই ব্যয় করবে, তোমাদেরকে তা পরিপূর্ণরূপে দেওয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি বিন্দুমাত্র জুলুম করা হবে না।’(সূরা বাকারা (২), আয়াত ২৭২)
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে কয়েকটি বাক্য আছে। প্রথম বাক্য হল- وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ خَيْرٍ فَلِأَنْفُسِكُمْ (তোমরা যে সম্পদই ব্যয় কর, তা তোমাদের নিজেদেরই কল্যাণার্থে হয়ে থাকে)। خير শব্দের মূল অর্থ কল্যাণ। এখানে বোঝানো উদ্দেশ্য ধন-সম্পদ। অনেকে ব্যাপক অর্থে যে-কোনও কল্যাণকর বিষয়কেই এর অন্তর্ভুক্ত করেছেন। যেমন বিদ্যা, বুদ্ধি, কায়িক শ্রম ইত্যাদি। আয়াতে বলা হয়েছে, অর্থ-সম্পদ বা যে-কোনও কল্যাণকর বস্তু খরচ করলে তার ফায়দা ও সুফল খরচকারী ব্যক্তির নিজেরই লাভ হয়। কোথায় খরচ করা হবে, তা আয়াতে বলা হয়নি। তবে সাধারণত এর দ্বারা আল্লাহর পথে খরচ বোঝানো হয়। নিজ প্রাণ ও স্বাস্থ্যরক্ষায় খরচ করা, পারিবারিক প্রয়োজনে খরচ করা, আল্লাহর সৃষ্টির সেবায় খরচ করা, আল্লাহর দীন কায়েম ও প্রচারে খরচ করা, এ সবই আল্লাহর পথে খরচ করার অন্তর্ভুক্ত। তো এসব খাতে অর্থ-সম্পদ, বিদ্যা-বুদ্ধি ইত্যাদি যা-ই খরচ করা হোক, তাতে ব্যক্তির নিজেরই কল্যাণ সাধিত হয়। কেননা এর সুফল দুনিয়ায়ও পাওয়া যায় এবং আখিরাতেও পাওয়া যাবে। দুনিয়ায় পাওয়া যায় এভাবে যে, যাদের পেছনে খরচ করা হয় তারা খরচকর্তার শুভাকাঙ্ক্ষী ও তার সুহৃদ হয়ে যায়। আর সুনাম-সুখ্যাতি তো হয়ই। যদিও খরচ করার পেছনে এরকম নিয়ত রাখা ঠিক নয়।
আর আখিরাতের কল্যাণ লাভ হয় বিপুল ছাওয়াব অর্জনের মাধ্যমে। খাঁটি নিয়তে খরচ করলে আল্লাহ তা'আলা দশগুণ থেকে সাতশ'গুণ পর্যন্ত বেশি ছাওয়াব দান করেন। আল্লাহ চাইলে তার বেশিও দিতে পারেন। কুরআন-হাদীছে সেরকম দেওয়ার ওয়াদা রয়েছে। বলাবাহুল্য, ছাওয়াব যত বেশি অর্জন করা যায়, ততোই আখিরাতে নাজাতলাভের সম্ভাবনা বেশি থাকে। আখিরাতের নাজাত লাভই সর্বাপেক্ষা বড় কল্যাণ।
প্রকাশ থাকে যে, অর্থব্যয়ের উল্লিখিত লাভ কেবল তখনই অর্জিত হতে পারে, যখন সে ব্যয় হবে বৈধ উপার্জন থেকে। আয়াতের মধ্যেই সেদিকে ইঙ্গিত রয়েছে। বলা হয়েছে, তোমরা যে 'খায়র' ব্যয় কর। 'খায়র'-এর মূল অর্থ কল্যাণ ও উত্তম। দানের বস্তুকে 'খায়র' শব্দে ব্যক্ত করার মধ্যে ইশারা পাওয়া যায় যে, সে বস্তুটি উত্তম ও কল্যাণপূর্ণ হতে হবে। বলাবাহুল্য তা হতে পারে কেবল হালাল উপার্জনেই। হারাম উপায়ে অর্জিত সম্পদে কোনও কল্যাণ নেই; বরং তা নিকৃষ্ট মাল।
দান-খয়রাতের ফায়দা যখন ব্যক্তির নিজেরই হাসিল হয়, তখন যার প্রতি দান- খয়রাত করা হয়, তাকে খোঁটা দেওয়ার কোনও বৈধতা থাকে না। খোঁটা দিলে দান- খয়রাতের ছাওয়াব নষ্ট হয়। এ আয়াত ইঙ্গিত করছে, খরচ করার দ্বারা যেমন তুমি নিজেই লাভবান হচ্ছ, তখন অন্যকে খোঁটা দিবে কেন? অর্থাৎ কোনও অবস্থায়ই খোঁটা দিয়ো না।
আয়াতের দ্বিতীয় বাক্য হল- وَمَا تُنْفِقُونَ إِلَّا ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللَّهِ (আর তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা ছাড়া অন্য কোনও উদ্দেশ্যে ব্যয় কর না)। এটাই মুমিনদের বৈশিষ্ট্য। অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللَّهِ لَا نُرِيدُ مِنْكُمْ جَزَاءً وَلَا شُكُورًا (9)
‘আমরা তো তোমাদেরকে খাওয়াই কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে। আমরা তোমাদের কাছে কোনও প্রতিদান চাই না এবং কৃতজ্ঞতাও না।(সূরা দাহর (৭৬), আয়াত ৯)
উদ্দেশ্য যখন আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি, তখন যাকে দেওয়া হল তার কাছ থেকে কোনও প্রতিদান বা কৃতজ্ঞতা চাওয়ার কোনও প্রশ্ন আসে না। বরং নিজেরই তার কাছে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত, যেহেতু তাকে দিতে পারা ও তার পক্ষ থেকে গ্রহণ করার মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি লাভের সুযোগ হচ্ছে। যারা কাউকে কিছু দেওয়ার পর তার পক্ষ থেকে বিনিময় বা কৃতজ্ঞতা না পেলে খোঁটা দিয়ে ফেলে, তাদের জন্য এর মধ্যে সতর্কবার্তা রয়েছে। কেননা খোঁটা দেওয়ার দ্বারা ইঙ্গিত হয় যে, দান করার মধ্যে পুরোপুরি ইখলাস ছিল না এবং একান্তভাবে আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টিই লক্ষ্যবস্তু ছিল না। আয়াতটি বলছে, মুমিন ব্যক্তির দান হবে কেবলই আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি হাসিলের লক্ষ্যে। অন্যথায় সে দানের মাধ্যমে তাঁর কাছে কিছু পাওয়া যাবে না। তা হবে বৃথা দান এবং সম্পদের অপচয়। সম্পদের অপচয় করা নাজায়েয কাজ।
আয়াতে ইশারা রয়েছে, কারও পেছনে খরচ করলে কিংবা অন্য কোনওভাবে কাউকে সাহায্য-সহযোগিতা করলে সে লোকটি কেমন সেদিকে লক্ষ করার প্রয়োজন নেই। সাহায্য করার দ্বারা যদি দীনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা না থাকে, তবে সে লোকটি কাফের-ফাসেক যাই হোক না কেন, আল্লাহ তা'আলার কাছে অবশ্যই ছাওয়াব পাওয়া যাবে। উদ্দেশ্য যদি থাকে আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি লাভ করা, তবে অমুসলিম ব্যক্তির ক্ষুধা নিবারণ করলেও নেকী লাভ হবে। এমনকি পশু-পাখিকে খাওয়ালেও ছাওয়াব পাওয়া যাবে। অবশ্য এ কথা কেবল নফল দান-খয়রাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যাকাত- ফিতরা, মানত ইত্যাদি ফরয দান কেবল মুমিন-মুসলিমকেই দেওয়া যায়।
আয়াতের তৃতীয় বাক্য হল- وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ خَيْرٍ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنْتُمْ لَا تُظْلَمُونَ (আর তোমরা যে সম্পদই ব্যয় করবে, তোমাদেরকে তা পরিপূর্ণরূপে দেওয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি বিন্দুমাত্র জুলুম করা হবে না)। অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে ব্যয় করলে আল্লাহ তা'আলা তার প্রাপ্য ছাওয়াব ও পুরস্কার পরিপূর্ণরূপে দান করবেন। কম দেবেন না মোটেই; বরং নিজ মেহেরবানীতে প্রাপ্যের চেয়ে বেশিই দেবেন। যেমন এক আয়াতে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
مَثَلُ الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنْبُلَةٍ مِائَةُ حَبَّةٍ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ (261)
‘যারা আল্লাহর পথে নিজেদের অর্থ ব্যয় করে, তাদের দৃষ্টান্ত এ রকম, যেমন একটি শস্যদানা সাতটি শীষ উদ্গত করে (এবং) প্রতিটি শীষে একশ দানা জন্মায়। আর আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা করেন (ছাওয়াবে) কয়েক গুণ বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় (এবং) সর্বজ্ঞ।(সূরা বাকারা (২), আয়াত ২৬১)
আয়াতটির শিক্ষা
ক. এ আয়াতে দান-খয়রাত করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।
খ. অর্থ-সম্পদ খায়র বা কল্যাণকর বস্তু। তা বৈধ পথে উপার্জন করা ও তার সদ্ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়।
গ. আল্লাহর পথে ব্যয় বলতে কেবল মাল নয়, বিদ্যা-বুদ্ধি ও অন্যান্য কল্যাণকর বিষয়ের ব্যয়কেও বোঝায়।
ঘ. আল্লাহর পথে ব্যয় করতে হবে কেবলই তাঁর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে।
ঙ. দান-খয়রাত করার সুফল মূলত ব্যক্তির নিজেরই লাভ হয়ে থাকে।
চ. দান-খয়রাত করার পর খোঁটা দেওয়া জায়েয নয়।
ছ. আল্লাহর পথে খরচ করলে প্রাপ্য বিনিময় তো বটেই, বরং আল্লাহ তা'আলা বহুগুণ বেশিই দিয়ে থাকেন।
জ. নফল দান-খয়রাত অমুসলিমদের প্রতিও করা যায়।
তিন নং আয়াত
وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ خَيْرٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ (273)
অর্থ: ‘তোমরা যে সম্পদই ব্যয় কর, আল্লাহ তা ভালো করেই জানেন।’(সূরা বাকারা (২), আয়াত ২৭৩)
ব্যাখ্যা
অর্থাৎ তোমরা কৃপণতা করো না। আল্লাহর পথে অকুণ্ঠভাবে খরচ করো। তোমাদের খরচ বৃথা যাবে না। কেননা আল্লাহ তা'আলা জানেন তোমরা কোথায় কী খরচ করছ এবং কী নিয়তে খরচ করছ। আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে খরচ করে থাকলে তিনি তার পুরোপুরি বিনিময় তোমাদের দান করবেন। এভাবে আয়াতটিতে আল্লাহর পথে খরচ করতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।
‘খায়র’ শব্দটিকে ব্যাপক অর্থে গ্রহণ করলে এর অর্থ হবে- তোমরা তোমাদের ধন- সম্পদ, বিদ্যা-বুদ্ধি, প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রভৃতি কল্যাণকর যা-কিছু আছে, তা আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে আল্লাহর পথে খরচ করো। তা দ্বারা আল্লাহ তা'আলার দীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখো এবং তা দ্বারা আল্লাহর মাখলুকের সেবা করো। যদি তা কর, তবে তা বৃথা যাবে না; বরং আল্লাহ তা'আলা নিজ জ্ঞান অনুযায়ী তোমাদেরকে তার প্রতিদান দেবেন।
আয়াতটির শিক্ষা
ক. এ আয়াতের ভেতর আল্লাহর পথে ব্যয় করার অনুপ্রেরণা মেলে।
খ. আল্লাহর পথে ব্যয় করলে তা বৃথা যায় না।
গ. অর্থ-সম্পদ কল্যাণকর বস্তু। তা কল্যাণকর কাজেই ব্যবহার করা চাই।
ঘ. আল্লাহ তা'আলার জ্ঞান সর্বব্যাপী। যা-কিছু যে পরিমাণে খরচ করা হয়, যে খাতে খরচ করা হয় এবং যে উদ্দেশ্যে খরচ করা হয়, তার সবই তিনি জানেন।
ঙ. আল্লাহ তা'আলার নি'আমতের ব্যবহার ও খরচের বেলায় তাঁর সর্বব্যাপী জ্ঞান সম্পর্কে সচেতন থাকা চাই।
الكرم অর্থ উদারতা, দানশীলতা। যেখানে যে পরিমাণ খরচ করা দরকার, সেখানে সেই পরিমাণ খরচ করাকে اَلْكَرَمُ বলা হয়। আরবীতে এ অর্থে আরও কয়েকটি শব্দ আছে। যেমন- اَلْجُوْدُ، اَلسَّخَاءُ، اَلسَّمَاحَةُ। ইমাম কাযী ইয়ায রহ.-এর মতে সবগুলো শব্দের অর্থ কাছাকাছি। কেউ কেউ এর মধ্যে কিছুটা পার্থক্যও করেছেন। তবে সাধারণভাবে সবগুলো দ্বারাই উদারতা ও দানশীলতা বোঝানো হয়ে থাকে।
উদারতা ও দানশীলতা ইসলামের নৈতিক শিক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ দিক। পুণ্যার্জন বা আখিরাতের মুক্তিলাভের পক্ষে এটা অনেক বড় উপায়। কুরআন ও হাদীছে বিভিন্নভাবে এর গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে এবং এর প্রতি উৎসাহ যোগানো হয়েছে। যেমন কুরআন মাজীদে ইরশাদ-
لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ شَيْءٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ (92)
‘তোমরা কিছুতেই পুণ্যের নাগাল পাবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু হতে (আল্লাহর জন্য) ব্যয় করবে। তোমরা যা-কিছুই ব্যয় কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণ অবগত।’(সূরা আলে-ইমরান (৩), আয়াত ৯২)
অপর এক আয়াতে পুণ্য ও ছাওয়াবের কাজের একটা তালিকা দেওয়া হয়েছে। তার অনেকগুলো ধারাই আল্লাহর পথে অর্থব্যয় সম্পর্কে। ইরশাদ হয়েছে-
وَلَكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَى حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّائِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ
‘বরং পুণ্য হল (সেই ব্যক্তির কার্যাবলি), যে ঈমান রাখে আল্লাহর, শেষ দিনের ও ফিরিশতাদের প্রতি এবং (আল্লাহর) কিতাব ও নবীগণের প্রতি। আর আল্লাহর ভালোবাসায় নিজ সম্পদ দান করে আত্মীয়-স্বজন, এতিম, মিসকীন, মুসাফির ও সওয়ালকারীদেরকে এবং দাসমুক্তিতে।(সূরা বাকারা (২), আয়াত ১৭৭)
এক হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
السَّخِيُّ قَرِيبٌ مِنَ اللهِ ، بَعِيدٌ مِنَ النَّارِ ، قَرِيبٌ مِنَ الْجَنَّةِ ، قَرِيبٌ مِنَ النَّاسِ
‘দানশীল ব্যক্তি আল্লাহর নিকটবর্তী, জাহান্নাম থেকে দূরবর্তী, জান্নাতের নিকটবর্তী এবং মানুষেরও নিকটবর্তী।(তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত: ২৩৬৩; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ১০৩৫২
قال الإمام أبو حاتم : هذا حديث باطل، وسعيد (بن مسلمة الراوي عن يحي بن سعيد) ضعيف الحديث، أخاف أن يكون أدخل له. (علل ابن أبي حاتم ٩٧/٦ (٣٢٥٢). وقال أيضا (٢٣٥٣): هذا حديث منكر فيه سعيد بن محمد الوراق (الراوي عن يحي بن سعيد) قال الدارقطني متروك. قال العقيلي : ليس لهذا الحديث أصل من حديث يحي ولا غيره)
অপর এক বর্ণনায় এসেছে-
الْجَنَّةُ دَارُ الْأَسْخِيَاءِ
‘জান্নাত দানশীলদের নিবাস।(খারাইতী, মাকারিমুল আখলাক: ৫৯৭; ইবন শাহীন, আত-তারগীব: ২৬৮
قال الدارقطني في العلل ۱۲٥/١٤ (٣٤٧٣) : لا يصح هذا الحديث. قال المحرر: فيه جَحْدَر، واسمه عبد الرحمن بن الحارث، قال ابن عدي : يسرق الحديث وهو بين الضعف جدا. قال الذهبي في ميزان الاعتدال: هذا حديث منكر، ما آفته سوى جحدر. قال عبد الله معروف: وما ذكر في الإحالة من رواية الترغيب لابن شاهين، فهو غير إسناد جحدر، لكن فيه عبد ربه بن سليم مجهول، كما قال ابن أبي حاتم في علله عن أبيه.)
মূলত ধন-সম্পদ দুনিয়ার জরুরত পূরণ ও আখিরাতের মুক্তিলাভের জন্যই। সম্পদ যদি সে উদ্দেশ্যে ব্যয় না করে বিলাসিতার পেছনে খরচ করা হয়, তবে তা কেবল ক্ষতিই বয়ে আনে। হযরত আবু যার্র রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পৌঁছলাম। তখন তিনি কা'বার ছায়ায় বসা ছিলেন। তিনি বলছিলেন, কা'বার রব্বের শপথ! তারাই সর্বাপেক্ষা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তিনি এ কথা তিনবার বলেছেন। আমি মনে মনে ভাবলাম, আমার কী হল? আমার ভেতর অপ্রীতিকর কিছু দেখা যাচ্ছে কি? আমি এগিয়ে গিয়ে তাঁর কাছে বসলাম। আমার পক্ষে চুপ থাকা সম্ভব হল না। শেষে আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার প্রতি আমার পিতা-মাতা উৎসর্গিত। তারা কারা? তিনি বললেন-
الْأَكْثَرُوْنَ أَمْوَالًا ، إِلَّا مَنْ قَالَ هكَذَا، وَهكَذَا، وَهكَذَا
‘যাদের ধন-সম্পদ বেশি। তবে যারা এরূপ, এরূপ ও এরূপ করে (অর্থাৎ ডানে, বামে, সামনে ও পেছনে সবদিকে খরচ করে) তারা ব্যতিক্রম।(সহীহ বুখারী : ৬৬৩৮; সহীহ মুসলিম: ৯৯০; জামে' তিরমিযী: ৬১৭; সুনানে নাসাঈ ২৪৪০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা: ৩৪৩৮৬; মুসনাদে আহমাদ: ২১৩৫১; সহীহ ইবন খুযায়মা ২২৫১)
আল্লাহর পথে খরচ করার দ্বারা পরকালীন ফায়দা তো আছেই, দুনিয়ায়ও এর উপকার বহুবিধ। সর্বাপেক্ষা বড় একটি উপকার হল দানশীল ব্যক্তির পক্ষে আল্লাহ তা'আলার সাহায্য উন্মুক্ত থাকে এবং দান-খয়রাতের বিনিময়ে তার গুনাহ মাফ করা হয়। এক হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
تَجَافُوْا عَنْ ذَنْبِ السَّخِيِّ، فَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى آخِذٌ بِيَدِهِ كُلَّمَا عَثَرَ
‘তোমরা দানশীল ব্যক্তির ত্রুটি-বিচ্যুতি উপেক্ষা করো। কেননা যখনই তার পদস্খলন ঘটে, আল্লাহ তা'আলা তার হাত ধরেন।(বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ১০৩৬৯; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৫৭১০
عده الصغاني من الموضوعات، وقال الذهبي في سير أعلام النبلاء ٢٦١/١٧ (ترجمة خلف ابن محمد الواسطي): هذا حديث منكر)
প্রকৃতপক্ষে আখিরাতের মুক্তিই মানবজীবনের পরম লক্ষ্য। তাই দুনিয়ায় আল্লাহ তা'আলা যা-কিছু দিয়েছেন, তা সে লক্ষ্য অর্জনের জন্যই ব্যয় করা উচিত। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
وَابْتَغِ فِيمَا آتَاكَ اللَّهُ الدَّارَ الْآخِرَةَ وَلَا تَنْسَ نَصِيبَكَ مِنَ الدُّنْيَا
‘আল্লাহ তোমাকে যা-কিছু দিয়েছেন তার মাধ্যমে আখিরাতের নিবাস লাভের চেষ্টা করো এবং দুনিয়া হতেও নিজ হিস্যা অগ্রাহ্য করো না।'(সূরা কাসাস (২৮), আয়াত ৭৭)
একবার হযরত মু'আবিয়া রাযি. হযরত আমর ইবনুল আস রাযি.-কে জিজ্ঞেস করেন, মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় দানশীল কে? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি তার দীন গড়ার লক্ষ্যে দুনিয়া ব্যয় করে।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে মহান গুণাবলির অধিকারী ছিলেন, দানশীলতা তার অন্যতম। তিনি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ দানবীর ছিলেন। তাঁকে উম্মতের জন্য আদর্শ করে বানানো হয়েছে। প্রত্যেকের কর্তব্য তাঁর অন্যান্য গুণের মতো দানশীলতার গুণটিও আয়ত্ত করা। কেননা এর রয়েছে বহুবিধ কল্যাণ। আল্লাহর পথে দান করার দ্বারা বিপুল ছাওয়াব অর্জন করা যায়। এতে আল্লাহ তা'আলা খুশি হন। এটা আখিরাতে মুক্তিলাভ করার পক্ষে সহায়ক। দুনিয়ায়ও এর নানা উপকার রয়েছে। এর ফলে সম্পদে বরকত হয়, মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায় এবং গায়েবীভাবে আল্লাহ তা'আলার সাহায্যও লাভ হয়। তাই মানুষের উচিত অভাবের ভয় করে কিংবা কমে যাবে এ আশঙ্কা করে দান-খয়রাত হতে পিছিয়ে না থাকা। বরং আল্লাহ তা'আলার ভাণ্ডার অফুরন্ত, বান্দা তাঁর পথে দান-খয়রাত করতে থাকলে তিনি তার জন্য নিজ অফুরন্ত ভাণ্ডারের দরজা খুলে দেবেন- এ বিশ্বাস ও আস্থার সঙ্গে আপন সামর্থ্য অনুযায়ী সৎকর্মের খাতসমূহে খরচ করতে থাকা চাই। মুমিন বান্দা যাতে সেই আস্থা ও তাওয়াক্কুলের সাথে আল্লাহর পথে অকুণ্ঠভাবে দান-খয়রাত করে, সে লক্ষ্যে কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াত ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বহু হাদীছে এর প্রতি উৎসাহদান করা হয়েছে। ইমাম নাওয়াবী রহ. এ অধ্যায়ে সেরকম কয়েকটি আয়াত ও হাদীছ উল্লেখ করেছেন। আমরা তার বঙ্গানুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করছি। আল্লাহ তা'আলা তাওফীক দান করুন।
‘উদারতা ও দানশীলতা…’ সম্পর্কিত কিছু আয়াত
এক নং আয়াত
وَمَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُهُ
অর্থ: ‘তোমরা যা-কিছুই ব্যয় কর, তিনি তদস্থলে অন্য জিনিস দিয়ে দেন।(সূরা সাবা' (৩৪), আয়াত ৩৯)
ব্যাখ্যা
অর্থাৎ আল্লাহর পথে ও নিজ প্রয়োজনে খরচ করতে থাকো। কৃপণতা করো না। ভয় করো না যে, খরচ করলে সম্পদ কমে যাবে বা অভাবে পড়ে যাবে। খরচ করলে রিযিক কমে না। আল্লাহ তা'আলা যার ভাগ্যে যা রেখেছেন তা সে পাবেই। বরং খরচ করলেই লাভ। আল্লাহর হুকুম মোতাবেক খরচ করার দ্বারা অর্থ-সম্পদে বরকত হয় এবং আখিরাতে ছাওয়াব পাওয়া যায়।
বলা হয়েছে- 'তদস্থলে অন্য জিনিস দিয়ে দেন', এ দেওয়াটা আখিরাতের ছাওয়াব আকারেও হতে পারে এবং দুনিয়াবী বদলাও হতে পারে। খরচ করার দ্বারা মনের ঐশ্বর্য তো লাভ হয়ই, যা কিনা প্রকৃত ঐশ্বর্য। সেইসঙ্গে লাভ হয় বরকতও। বরকত হওয়ার মানে অল্প খরচেই অনেক বড় প্রয়োজন মিটে যাওয়া, অহেতুক খরচ থেকে রক্ষা পাওয়া, যা খরচ হয় তা বৃথা না যাওয়া; বরং যে উদ্দেশ্যে খরচ করা হয় তা অর্জিত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এসব অর্জন খরচ করার দ্বারাই হয়। তাই তো নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত বিলাল রাযি.-কে লক্ষ্য করে বলেন-
أَنْفِقْ يَا بِلَالُ ، وَلَا تَخْشَ مِنْ ذِي الْعَرْشِ إِقْلَالًا
‘হে বিলাল! খরচ করো। আরশওয়ালার কাছ থেকে কমানোর ভয় করো না।(শুআবুল ঈমান : ১৩৯৩; তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর : ১০২৬)
আয়াতে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, খরচ করলে আল্লাহ তার বিনিময় দান করেন। এর দ্বারা বোঝা যায় খরচ করতে হবে বৈধ খাতে। কেননা বিনিময় দান করাটা আল্লাহর খুশির আলামত। অবৈধ খাতে খরচ করলে খুশি নয়; বরং তিনি নারাজ হন। সে ক্ষেত্রে বিনিময়লাভের আশা করা যায় না। এমনিভাবে খরচ করতে হবে পরিমিতভাবে। অপব্যয় বা অপচয় করা জায়েয নয়। কুরআন-হাদীছে তা নিষেধ করা হয়েছে।
আয়াতটির শিক্ষা
ক. আল্লাহপ্রদত্ত অর্থ-সম্পদ প্রয়োজনীয় খাতে অকৃপণভাবে খরচ করা চাই।
খ. খরচ যাতে বৈধ খাতে হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা জরুরি।
গ. শরী'আত মোতাবেক খরচ করলে দুনিয়া ও আখিরাতে বিনিময়লাভের আশা থাকে।
দুই নং আয়াত
وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ خَيْرٍ فَلِأَنْفُسِكُمْ وَمَا تُنْفِقُونَ إِلَّا ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللَّهِ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ خَيْرٍ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنْتُمْ لَا تُظْلَمُونَ (272)
অর্থ: ‘তোমরা যে সম্পদই ব্যয় কর, তা তোমাদের নিজেদেরই কল্যাণার্থে হয়ে থাকে। আর তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা ছাড়া অন্য কোনও উদ্দেশ্যে ব্যয় কর না। আর তোমরা যে সম্পদই ব্যয় করবে, তোমাদেরকে তা পরিপূর্ণরূপে দেওয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি বিন্দুমাত্র জুলুম করা হবে না।’(সূরা বাকারা (২), আয়াত ২৭২)
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে কয়েকটি বাক্য আছে। প্রথম বাক্য হল- وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ خَيْرٍ فَلِأَنْفُسِكُمْ (তোমরা যে সম্পদই ব্যয় কর, তা তোমাদের নিজেদেরই কল্যাণার্থে হয়ে থাকে)। خير শব্দের মূল অর্থ কল্যাণ। এখানে বোঝানো উদ্দেশ্য ধন-সম্পদ। অনেকে ব্যাপক অর্থে যে-কোনও কল্যাণকর বিষয়কেই এর অন্তর্ভুক্ত করেছেন। যেমন বিদ্যা, বুদ্ধি, কায়িক শ্রম ইত্যাদি। আয়াতে বলা হয়েছে, অর্থ-সম্পদ বা যে-কোনও কল্যাণকর বস্তু খরচ করলে তার ফায়দা ও সুফল খরচকারী ব্যক্তির নিজেরই লাভ হয়। কোথায় খরচ করা হবে, তা আয়াতে বলা হয়নি। তবে সাধারণত এর দ্বারা আল্লাহর পথে খরচ বোঝানো হয়। নিজ প্রাণ ও স্বাস্থ্যরক্ষায় খরচ করা, পারিবারিক প্রয়োজনে খরচ করা, আল্লাহর সৃষ্টির সেবায় খরচ করা, আল্লাহর দীন কায়েম ও প্রচারে খরচ করা, এ সবই আল্লাহর পথে খরচ করার অন্তর্ভুক্ত। তো এসব খাতে অর্থ-সম্পদ, বিদ্যা-বুদ্ধি ইত্যাদি যা-ই খরচ করা হোক, তাতে ব্যক্তির নিজেরই কল্যাণ সাধিত হয়। কেননা এর সুফল দুনিয়ায়ও পাওয়া যায় এবং আখিরাতেও পাওয়া যাবে। দুনিয়ায় পাওয়া যায় এভাবে যে, যাদের পেছনে খরচ করা হয় তারা খরচকর্তার শুভাকাঙ্ক্ষী ও তার সুহৃদ হয়ে যায়। আর সুনাম-সুখ্যাতি তো হয়ই। যদিও খরচ করার পেছনে এরকম নিয়ত রাখা ঠিক নয়।
আর আখিরাতের কল্যাণ লাভ হয় বিপুল ছাওয়াব অর্জনের মাধ্যমে। খাঁটি নিয়তে খরচ করলে আল্লাহ তা'আলা দশগুণ থেকে সাতশ'গুণ পর্যন্ত বেশি ছাওয়াব দান করেন। আল্লাহ চাইলে তার বেশিও দিতে পারেন। কুরআন-হাদীছে সেরকম দেওয়ার ওয়াদা রয়েছে। বলাবাহুল্য, ছাওয়াব যত বেশি অর্জন করা যায়, ততোই আখিরাতে নাজাতলাভের সম্ভাবনা বেশি থাকে। আখিরাতের নাজাত লাভই সর্বাপেক্ষা বড় কল্যাণ।
প্রকাশ থাকে যে, অর্থব্যয়ের উল্লিখিত লাভ কেবল তখনই অর্জিত হতে পারে, যখন সে ব্যয় হবে বৈধ উপার্জন থেকে। আয়াতের মধ্যেই সেদিকে ইঙ্গিত রয়েছে। বলা হয়েছে, তোমরা যে 'খায়র' ব্যয় কর। 'খায়র'-এর মূল অর্থ কল্যাণ ও উত্তম। দানের বস্তুকে 'খায়র' শব্দে ব্যক্ত করার মধ্যে ইশারা পাওয়া যায় যে, সে বস্তুটি উত্তম ও কল্যাণপূর্ণ হতে হবে। বলাবাহুল্য তা হতে পারে কেবল হালাল উপার্জনেই। হারাম উপায়ে অর্জিত সম্পদে কোনও কল্যাণ নেই; বরং তা নিকৃষ্ট মাল।
দান-খয়রাতের ফায়দা যখন ব্যক্তির নিজেরই হাসিল হয়, তখন যার প্রতি দান- খয়রাত করা হয়, তাকে খোঁটা দেওয়ার কোনও বৈধতা থাকে না। খোঁটা দিলে দান- খয়রাতের ছাওয়াব নষ্ট হয়। এ আয়াত ইঙ্গিত করছে, খরচ করার দ্বারা যেমন তুমি নিজেই লাভবান হচ্ছ, তখন অন্যকে খোঁটা দিবে কেন? অর্থাৎ কোনও অবস্থায়ই খোঁটা দিয়ো না।
আয়াতের দ্বিতীয় বাক্য হল- وَمَا تُنْفِقُونَ إِلَّا ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللَّهِ (আর তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা ছাড়া অন্য কোনও উদ্দেশ্যে ব্যয় কর না)। এটাই মুমিনদের বৈশিষ্ট্য। অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللَّهِ لَا نُرِيدُ مِنْكُمْ جَزَاءً وَلَا شُكُورًا (9)
‘আমরা তো তোমাদেরকে খাওয়াই কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে। আমরা তোমাদের কাছে কোনও প্রতিদান চাই না এবং কৃতজ্ঞতাও না।(সূরা দাহর (৭৬), আয়াত ৯)
উদ্দেশ্য যখন আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি, তখন যাকে দেওয়া হল তার কাছ থেকে কোনও প্রতিদান বা কৃতজ্ঞতা চাওয়ার কোনও প্রশ্ন আসে না। বরং নিজেরই তার কাছে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত, যেহেতু তাকে দিতে পারা ও তার পক্ষ থেকে গ্রহণ করার মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি লাভের সুযোগ হচ্ছে। যারা কাউকে কিছু দেওয়ার পর তার পক্ষ থেকে বিনিময় বা কৃতজ্ঞতা না পেলে খোঁটা দিয়ে ফেলে, তাদের জন্য এর মধ্যে সতর্কবার্তা রয়েছে। কেননা খোঁটা দেওয়ার দ্বারা ইঙ্গিত হয় যে, দান করার মধ্যে পুরোপুরি ইখলাস ছিল না এবং একান্তভাবে আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টিই লক্ষ্যবস্তু ছিল না। আয়াতটি বলছে, মুমিন ব্যক্তির দান হবে কেবলই আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি হাসিলের লক্ষ্যে। অন্যথায় সে দানের মাধ্যমে তাঁর কাছে কিছু পাওয়া যাবে না। তা হবে বৃথা দান এবং সম্পদের অপচয়। সম্পদের অপচয় করা নাজায়েয কাজ।
আয়াতে ইশারা রয়েছে, কারও পেছনে খরচ করলে কিংবা অন্য কোনওভাবে কাউকে সাহায্য-সহযোগিতা করলে সে লোকটি কেমন সেদিকে লক্ষ করার প্রয়োজন নেই। সাহায্য করার দ্বারা যদি দীনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা না থাকে, তবে সে লোকটি কাফের-ফাসেক যাই হোক না কেন, আল্লাহ তা'আলার কাছে অবশ্যই ছাওয়াব পাওয়া যাবে। উদ্দেশ্য যদি থাকে আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি লাভ করা, তবে অমুসলিম ব্যক্তির ক্ষুধা নিবারণ করলেও নেকী লাভ হবে। এমনকি পশু-পাখিকে খাওয়ালেও ছাওয়াব পাওয়া যাবে। অবশ্য এ কথা কেবল নফল দান-খয়রাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যাকাত- ফিতরা, মানত ইত্যাদি ফরয দান কেবল মুমিন-মুসলিমকেই দেওয়া যায়।
আয়াতের তৃতীয় বাক্য হল- وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ خَيْرٍ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنْتُمْ لَا تُظْلَمُونَ (আর তোমরা যে সম্পদই ব্যয় করবে, তোমাদেরকে তা পরিপূর্ণরূপে দেওয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি বিন্দুমাত্র জুলুম করা হবে না)। অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে ব্যয় করলে আল্লাহ তা'আলা তার প্রাপ্য ছাওয়াব ও পুরস্কার পরিপূর্ণরূপে দান করবেন। কম দেবেন না মোটেই; বরং নিজ মেহেরবানীতে প্রাপ্যের চেয়ে বেশিই দেবেন। যেমন এক আয়াতে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
مَثَلُ الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنْبُلَةٍ مِائَةُ حَبَّةٍ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ (261)
‘যারা আল্লাহর পথে নিজেদের অর্থ ব্যয় করে, তাদের দৃষ্টান্ত এ রকম, যেমন একটি শস্যদানা সাতটি শীষ উদ্গত করে (এবং) প্রতিটি শীষে একশ দানা জন্মায়। আর আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা করেন (ছাওয়াবে) কয়েক গুণ বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় (এবং) সর্বজ্ঞ।(সূরা বাকারা (২), আয়াত ২৬১)
আয়াতটির শিক্ষা
ক. এ আয়াতে দান-খয়রাত করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।
খ. অর্থ-সম্পদ খায়র বা কল্যাণকর বস্তু। তা বৈধ পথে উপার্জন করা ও তার সদ্ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়।
গ. আল্লাহর পথে ব্যয় বলতে কেবল মাল নয়, বিদ্যা-বুদ্ধি ও অন্যান্য কল্যাণকর বিষয়ের ব্যয়কেও বোঝায়।
ঘ. আল্লাহর পথে ব্যয় করতে হবে কেবলই তাঁর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে।
ঙ. দান-খয়রাত করার সুফল মূলত ব্যক্তির নিজেরই লাভ হয়ে থাকে।
চ. দান-খয়রাত করার পর খোঁটা দেওয়া জায়েয নয়।
ছ. আল্লাহর পথে খরচ করলে প্রাপ্য বিনিময় তো বটেই, বরং আল্লাহ তা'আলা বহুগুণ বেশিই দিয়ে থাকেন।
জ. নফল দান-খয়রাত অমুসলিমদের প্রতিও করা যায়।
তিন নং আয়াত
وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ خَيْرٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ (273)
অর্থ: ‘তোমরা যে সম্পদই ব্যয় কর, আল্লাহ তা ভালো করেই জানেন।’(সূরা বাকারা (২), আয়াত ২৭৩)
ব্যাখ্যা
অর্থাৎ তোমরা কৃপণতা করো না। আল্লাহর পথে অকুণ্ঠভাবে খরচ করো। তোমাদের খরচ বৃথা যাবে না। কেননা আল্লাহ তা'আলা জানেন তোমরা কোথায় কী খরচ করছ এবং কী নিয়তে খরচ করছ। আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে খরচ করে থাকলে তিনি তার পুরোপুরি বিনিময় তোমাদের দান করবেন। এভাবে আয়াতটিতে আল্লাহর পথে খরচ করতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।
‘খায়র’ শব্দটিকে ব্যাপক অর্থে গ্রহণ করলে এর অর্থ হবে- তোমরা তোমাদের ধন- সম্পদ, বিদ্যা-বুদ্ধি, প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রভৃতি কল্যাণকর যা-কিছু আছে, তা আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে আল্লাহর পথে খরচ করো। তা দ্বারা আল্লাহ তা'আলার দীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখো এবং তা দ্বারা আল্লাহর মাখলুকের সেবা করো। যদি তা কর, তবে তা বৃথা যাবে না; বরং আল্লাহ তা'আলা নিজ জ্ঞান অনুযায়ী তোমাদেরকে তার প্রতিদান দেবেন।
আয়াতটির শিক্ষা
ক. এ আয়াতের ভেতর আল্লাহর পথে ব্যয় করার অনুপ্রেরণা মেলে।
খ. আল্লাহর পথে ব্যয় করলে তা বৃথা যায় না।
গ. অর্থ-সম্পদ কল্যাণকর বস্তু। তা কল্যাণকর কাজেই ব্যবহার করা চাই।
ঘ. আল্লাহ তা'আলার জ্ঞান সর্বব্যাপী। যা-কিছু যে পরিমাণে খরচ করা হয়, যে খাতে খরচ করা হয় এবং যে উদ্দেশ্যে খরচ করা হয়, তার সবই তিনি জানেন।
ঙ. আল্লাহ তা'আলার নি'আমতের ব্যবহার ও খরচের বেলায় তাঁর সর্বব্যাপী জ্ঞান সম্পর্কে সচেতন থাকা চাই।
ঈর্ষণীয় দু’টি বিষয়
হাদীছ নং: ৫৪৩
হযরত ইবন মাস'উদ রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, দুই অবস্থা ছাড়া অন্য কোনও অবস্থার প্রতি হাসাদ (ঈর্ষা পোষণ) করা যায় না। এক ওই ব্যক্তির অবস্থা, যাকে আল্লাহ অর্থ-সম্পদ দিয়েছেন এবং তাকে তা ন্যায় খাতে উজাড় করে দেওয়ার ক্ষমতাও দিয়েছেন। আর ওই ব্যক্তির অবস্থা, যাকে আল্লাহ জ্ঞান দিয়েছেন, তারপর সে তার সাহায্যে বিচার-আচার করে এবং তা অন্যকে শিক্ষা দেয়। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৭৩; সহীহ মুসলিম: ৮১৫; জামে তিরমিযী: ১৯৩৬; মুসনাদে আহমাদ : ৩৬৫১; সুনানে ইবন মাজাহ: ৪২০৮; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ৩০২৮১; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ১৩১৬২; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা: ৭৮২৬; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ১৩৮)
হাদীছ নং: ৫৪৩
হযরত ইবন মাস'উদ রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, দুই অবস্থা ছাড়া অন্য কোনও অবস্থার প্রতি হাসাদ (ঈর্ষা পোষণ) করা যায় না। এক ওই ব্যক্তির অবস্থা, যাকে আল্লাহ অর্থ-সম্পদ দিয়েছেন এবং তাকে তা ন্যায় খাতে উজাড় করে দেওয়ার ক্ষমতাও দিয়েছেন। আর ওই ব্যক্তির অবস্থা, যাকে আল্লাহ জ্ঞান দিয়েছেন, তারপর সে তার সাহায্যে বিচার-আচার করে এবং তা অন্যকে শিক্ষা দেয়। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৭৩; সহীহ মুসলিম: ৮১৫; জামে তিরমিযী: ১৯৩৬; মুসনাদে আহমাদ : ৩৬৫১; সুনানে ইবন মাজাহ: ৪২০৮; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ৩০২৮১; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ১৩১৬২; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা: ৭৮২৬; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ১৩৮)
مقدمة الامام النووي
60 - باب الكرم والجود والإنفاق في وجوه الخير ثقةً بالله تعالى
قَالَ الله تَعَالَى: {وَمَا أنْفَقْتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُهُ} [سبأ: 39]، وقال تَعَالَى: {وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ خَيْرٍ فَلأنْفُسِكُمْ وَمَا تُنْفِقُونَ إِلاَّ ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللهِ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ خَيْرٍ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأنْتُمْ لاَ تُظْلَمُونَ} [البقرة: 272]، وقال تَعَالَى: {وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ خَيْرٍ فإنَّ اللهَ بِهِ عَلِيمٌ} [البقرة: 273].
قَالَ الله تَعَالَى: {وَمَا أنْفَقْتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُهُ} [سبأ: 39]، وقال تَعَالَى: {وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ خَيْرٍ فَلأنْفُسِكُمْ وَمَا تُنْفِقُونَ إِلاَّ ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللهِ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ خَيْرٍ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأنْتُمْ لاَ تُظْلَمُونَ} [البقرة: 272]، وقال تَعَالَى: {وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ خَيْرٍ فإنَّ اللهَ بِهِ عَلِيمٌ} [البقرة: 273].
543 - وعن ابن مسعود - رضي الله عنه - عن النبيِّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «لا حَسَدَ إِلاَّ في اثْنَتَيْنِ: رَجُلٌ آتَاهُ اللهُ مَالًا، فَسَلَّطَهُ عَلَى هَلَكَتِهِ في الحَقّ، وَرَجُلٌ آتَاهُ اللهُ حِكْمَةً، فَهُوَ يَقْضِي بِهَا ويُعَلِّمُهَا». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
ومعناه: يَنْبَغي أَنْ لاَ يُغبَطَ أحَدٌ إِلاَّ عَلَى إحْدَى هَاتَيْنِ الخَصْلَتَيْنِ.
ومعناه: يَنْبَغي أَنْ لاَ يُغبَطَ أحَدٌ إِلاَّ عَلَى إحْدَى هَاتَيْنِ الخَصْلَتَيْنِ.
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৪৪
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৬০ উদারতা ও দানশীলতা প্রসঙ্গ এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে কল্যাণকর খাতসমূহে অর্থব্যয় করার ফযীলত
কোন সম্পদ নিজের, কোন সম্পদ ওয়ারিছের
হাদীছ নং: ৫৪৪
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস'উদ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যার কাছে তার নিজ সম্পদ অপেক্ষা তার ওয়ারিছের সম্পদ বেশি প্রিয়? সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের প্রত্যেকের কাছেই তো তার নিজ সম্পদই বেশি প্রিয়। তিনি বললেন, প্রকৃতপক্ষে তার সম্পদ তো তাই, যা সে (আখিরাতের জন্য) অগ্রীম পাঠিয়েছে। আর তার ওয়ারিছের সম্পদ হল তাই, যা সে পেছনে রেখে গেছে। -বুখারী
(সহীহ বুখারী : ৬৪৪২; সহীহ ইবন হিব্বান ৩৩৩০; মুসনাদে আবু ইয়া'লা: ৫১৬৩; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ১৬৫৩; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ৪০৫৮)
হাদীছ নং: ৫৪৪
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস'উদ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যার কাছে তার নিজ সম্পদ অপেক্ষা তার ওয়ারিছের সম্পদ বেশি প্রিয়? সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের প্রত্যেকের কাছেই তো তার নিজ সম্পদই বেশি প্রিয়। তিনি বললেন, প্রকৃতপক্ষে তার সম্পদ তো তাই, যা সে (আখিরাতের জন্য) অগ্রীম পাঠিয়েছে। আর তার ওয়ারিছের সম্পদ হল তাই, যা সে পেছনে রেখে গেছে। -বুখারী
(সহীহ বুখারী : ৬৪৪২; সহীহ ইবন হিব্বান ৩৩৩০; মুসনাদে আবু ইয়া'লা: ৫১৬৩; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ১৬৫৩; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ৪০৫৮)
مقدمة الامام النووي
60 - باب الكرم والجود والإنفاق في وجوه الخير ثقةً بالله تعالى
544 - وعنه، قَالَ: قَالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «أيُّكُم مَالُ وَارِثِهِ أَحبُّ إِلَيْهِ مِنْ مَالِهِ؟» قالوا: يَا رسول اللهِ، مَا مِنَّا أحَدٌ إِلاَّ مَالُهُ أحَبُّ إِلَيْهِ. قَالَ: «فإنَّ مَالَهُ مَا قَدَّمَ وَمَالَ وَارِثِهِ مَا أخَّرَ». رواه البخاري. (1)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৪৫
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৬০ উদারতা ও দানশীলতা প্রসঙ্গ এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে কল্যাণকর খাতসমূহে অর্থব্যয় করার ফযীলত
জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষার চেষ্টা করার গুরুত্ব
হাদীছ নং: ৫৪৫
হযরত ‘আদী ইবন হাতিম রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো, যদি তা খেজুরের একটি অংশ দিয়েও হয়। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী : ১৪১৭; সহীহ মুসলিম: ১০১৬; সুনানে নাসাঈ : ২৫৫২; মুসনাদে আবু দাউদ তয়ালিসী: ১১৩১; মুসনাদু ইবনিল জা'দ: ৪৫৬; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ৯৮০৩; সুনানে দারিমী: ১৬৯৮; মুসনাদুল বাযযার: ৬৬১৯; মুসনাদে আবু ইয়া'লা: ২৭০৭; সহীহ ইবন খুযায়মা: ২৪২৯)
হাদীছ নং: ৫৪৫
হযরত ‘আদী ইবন হাতিম রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো, যদি তা খেজুরের একটি অংশ দিয়েও হয়। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী : ১৪১৭; সহীহ মুসলিম: ১০১৬; সুনানে নাসাঈ : ২৫৫২; মুসনাদে আবু দাউদ তয়ালিসী: ১১৩১; মুসনাদু ইবনিল জা'দ: ৪৫৬; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ৯৮০৩; সুনানে দারিমী: ১৬৯৮; মুসনাদুল বাযযার: ৬৬১৯; মুসনাদে আবু ইয়া'লা: ২৭০৭; সহীহ ইবন খুযায়মা: ২৪২৯)
مقدمة الامام النووي
60 - باب الكرم والجود والإنفاق في وجوه الخير ثقةً بالله تعالى
545 - وعن عَدِيِّ بن حَاتِمٍ - رضي الله عنه: أنَّ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «اتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৪৬
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৬০ উদারতা ও দানশীলতা প্রসঙ্গ এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে কল্যাণকর খাতসমূহে অর্থব্যয় করার ফযীলত
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দানশীলতা
হাদীছ নং: ৫৪৬
হযরত জাবির রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এমন কখনও হয়নি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কোনও জিনিস চাওয়া হয়েছে আর তিনি না বলেছেন। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী : ৬০৩৪; সহীহ মুসলিম: ২৩১১; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ৩১৮১০; মুসনাদুল হুমায়দী: ১২৬৩; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৫৯২০; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ৩৬৮৫)
হাদীছ নং: ৫৪৬
হযরত জাবির রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এমন কখনও হয়নি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কোনও জিনিস চাওয়া হয়েছে আর তিনি না বলেছেন। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী : ৬০৩৪; সহীহ মুসলিম: ২৩১১; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ৩১৮১০; মুসনাদুল হুমায়দী: ১২৬৩; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৫৯২০; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ৩৬৮৫)
مقدمة الامام النووي
60 - باب الكرم والجود والإنفاق في وجوه الخير ثقةً بالله تعالى
546 - وعن جابرٍ - رضي الله عنه - قَالَ: مَا سُئِلَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - شَيْئًا قَطُّ، فقالَ: لاَ. متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৪৭
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৬০ উদারতা ও দানশীলতা প্রসঙ্গ এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে কল্যাণকর খাতসমূহে অর্থব্যয় করার ফযীলত
প্রতিদিন ভোরে দানশীল ও কৃপণের জন্য ফিরিশতাগণ যে দু'আ করেন
হাদীছ নং: ৫৪৭
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, প্রতিদিন আল্লাহর বান্দাগণের যখন ভোর হয়, তখন দু'জন ফিরিশতা নেমে আসেন। তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! খরচকারীকে উত্তম বদলা দিন। অন্যজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে দিন বিনাশ। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ১৪৪২; সহীহ মুসলিম: ১০১০; মুসনাদে আহমাদ: ৮৫৫২; সহীহ ইবন হিব্বান : ৩৩২৯, নাসাঈ, আস্সুনানুল কুবরা ৭৮১৬; বায়হাকী, আস্সুনানুল কুবরা: ৭৮১৬)
হাদীছ নং: ৫৪৭
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, প্রতিদিন আল্লাহর বান্দাগণের যখন ভোর হয়, তখন দু'জন ফিরিশতা নেমে আসেন। তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! খরচকারীকে উত্তম বদলা দিন। অন্যজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে দিন বিনাশ। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ১৪৪২; সহীহ মুসলিম: ১০১০; মুসনাদে আহমাদ: ৮৫৫২; সহীহ ইবন হিব্বান : ৩৩২৯, নাসাঈ, আস্সুনানুল কুবরা ৭৮১৬; বায়হাকী, আস্সুনানুল কুবরা: ৭৮১৬)
مقدمة الامام النووي
60 - باب الكرم والجود والإنفاق في وجوه الخير ثقةً بالله تعالى
547 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «مَا مِنْ يَوْمٍ يُصبحُ العِبَادُ فِيهِ إِلاَّ مَلَكَانِ يَنْزلانِ، فَيَقُولُ أحَدُهُمَا: اللَّهُمَّ أَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا، وَيَقُولُ الآخَرُ: اللَّهُمَّ أَعْطِ مُمْسِكًا تَلَفًا». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৪৮
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৬০ উদারতা ও দানশীলতা প্রসঙ্গ এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে কল্যাণকর খাতসমূহে অর্থব্যয় করার ফযীলত
কল্যাণকর খাতে অর্থব্যয় করলে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে বিনিময় দেওয়ার আশ্বাস
হাদীছ নং: ৫৪৮
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা'আলা বলেন, হে আদম সন্তান! খরচ করো, তোমার প্রতিও খরচ করা হবে। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৫৩৫২; সহীহ মুসলিম: ৯৯৩; মুসনাদুল হুমায়দী: ১০৯৮; শু'আবুল ঈমান : ৩১৩৭; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ১৬৫৬; সুনানে ইবন মাজাহ: ২১২৩; মুসনাদে আহমাদ: ৭২৯৮)
হাদীছ নং: ৫৪৮
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা'আলা বলেন, হে আদম সন্তান! খরচ করো, তোমার প্রতিও খরচ করা হবে। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৫৩৫২; সহীহ মুসলিম: ৯৯৩; মুসনাদুল হুমায়দী: ১০৯৮; শু'আবুল ঈমান : ৩১৩৭; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ১৬৫৬; সুনানে ইবন মাজাহ: ২১২৩; মুসনাদে আহমাদ: ৭২৯৮)
مقدمة الامام النووي
60 - باب الكرم والجود والإنفاق في وجوه الخير ثقةً بالله تعالى
548 - وعنه: أنَّ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «قَالَ الله تَعَالَى: أنفِق يَا ابْنَ آدَمَ يُنْفَقْ عَلَيْكَ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৪৯
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৬০ উদারতা ও দানশীলতা প্রসঙ্গ এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে কল্যাণকর খাতসমূহে অর্থব্যয় করার ফযীলত
ইসলামের কোন আমল শ্রেষ্ঠতম
হাদীছ নং: ৫৪৯
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, কোন ইসলাম উত্তম? তিনি বললেন, তুমি খাবার খাওয়াবে এবং পরিচিত ও অপরিচিত সকলকে সালাম দেবে।-বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ১২; সহীহ মুসলিম: ৩৯; সুনানে আবু দাউদ: ৫১৯৪; সুনানে নাসাঈ : ৫০০০; সুনানে ইবন মাজাহ : ৩২৫৩; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ১৪৯; সহীহ ইবন হিব্বান: ৫০৫)
হাদীছ নং: ৫৪৯
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, কোন ইসলাম উত্তম? তিনি বললেন, তুমি খাবার খাওয়াবে এবং পরিচিত ও অপরিচিত সকলকে সালাম দেবে।-বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ১২; সহীহ মুসলিম: ৩৯; সুনানে আবু দাউদ: ৫১৯৪; সুনানে নাসাঈ : ৫০০০; সুনানে ইবন মাজাহ : ৩২৫৩; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ১৪৯; সহীহ ইবন হিব্বান: ৫০৫)
مقدمة الامام النووي
60 - باب الكرم والجود والإنفاق في وجوه الخير ثقةً بالله تعالى
549 - وعن عبد اللهِ بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما: أنَّ رَجُلًا سَألَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: أيُّ الإسلامِ خَيْرٌ؟ قَالَ: «تُطْعِمُ الطَّعَامَ، وَتَقْرَأُ السَّلاَمَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৫০
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৬০ উদারতা ও দানশীলতা প্রসঙ্গ এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে কল্যাণকর খাতসমূহে অর্থব্যয় করার ফযীলত
দান-খয়রাত ও বিবিধ রকম সৎকর্ম
হাদীছ নং: ৫৫০
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, চল্লিশটি এমন কাজ আছে, যার সর্বোচ্চ হল দুধপানের জন্য বকরি দান। কোনও আমলকারী সেগুলোর যে-কোনও একটি যদি ছাওয়াবের আশায় করে এবং তাতে যে প্রতিদানের ওয়াদা আছে তাতে বিশ্বাস রাখে, তবে আল্লাহ তার বিনিময়ে তাকে অবশ্যই জান্নাতে দাখিল করবেন। -বুখারী
(সহীহ বুখারী: ২৬৩১; সুনানে আবূ দাউদ: ১৬৮৩; বায়হাকী : ৭৭৯৯)
হাদীছ নং: ৫৫০
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, চল্লিশটি এমন কাজ আছে, যার সর্বোচ্চ হল দুধপানের জন্য বকরি দান। কোনও আমলকারী সেগুলোর যে-কোনও একটি যদি ছাওয়াবের আশায় করে এবং তাতে যে প্রতিদানের ওয়াদা আছে তাতে বিশ্বাস রাখে, তবে আল্লাহ তার বিনিময়ে তাকে অবশ্যই জান্নাতে দাখিল করবেন। -বুখারী
(সহীহ বুখারী: ২৬৩১; সুনানে আবূ দাউদ: ১৬৮৩; বায়হাকী : ৭৭৯৯)
مقدمة الامام النووي
60 - باب الكرم والجود والإنفاق في وجوه الخير ثقةً بالله تعالى
550 - وعنه، قَالَ: قَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «أرْبَعُونَ خَصْلَةً: أعْلاهَا مَنِيحةُ العَنْزِ، مَا مِنْ عَامِلٍ يَعْمَلُ بخَصْلَةٍ مِنْهَا؛ رَجَاءَ ثَوَابهَا وَتَصْدِيقَ مَوْعُودِهَا، إِلاَّ أدْخَلَهُ الله تَعَالَى بِهَا الجَنَّةَ». رواه البخاري. (1) وقد سبق بيان هَذَا الحديث في باب بَيَانِ كَثْرَةِ طُرُقِ الخَيْرِ.
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৫১
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৬০ উদারতা ও দানশীলতা প্রসঙ্গ এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে কল্যাণকর খাতসমূহে অর্থব্যয় করার ফযীলত
ব্যয় ও সঞ্চয় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা
হাদীছ নং: ৫৫১
হযরত আবূ উমামা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, হে আদম সন্তান! তোমার অতিরিক্ত সম্পদ (সৎপথে) খরচ করাটা তোমার পক্ষে ভালো আর তা আটকে রাখা তোমার পক্ষে মন্দ। প্রয়োজন পরিমাণ সম্পদ রাখার কারণে তুমি নিন্দনীয় হবে না। তুমি যাদের ব্যয়ভার বহন কর, তাদের থেকে খরচের সূচনা করবে। উপরের হাত নিচের হাতের চেয়ে উত্তম। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ১০৩৬; জামে তিরমিযী: ২৩৪৩; মুসনাদে আহমাদ: ৮৭৪৩; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৭৬২৫; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা: ৭৭৮১; শু'আবুল ঈমান : ৩১১৪)
হাদীছ নং: ৫৫১
হযরত আবূ উমামা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, হে আদম সন্তান! তোমার অতিরিক্ত সম্পদ (সৎপথে) খরচ করাটা তোমার পক্ষে ভালো আর তা আটকে রাখা তোমার পক্ষে মন্দ। প্রয়োজন পরিমাণ সম্পদ রাখার কারণে তুমি নিন্দনীয় হবে না। তুমি যাদের ব্যয়ভার বহন কর, তাদের থেকে খরচের সূচনা করবে। উপরের হাত নিচের হাতের চেয়ে উত্তম। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ১০৩৬; জামে তিরমিযী: ২৩৪৩; মুসনাদে আহমাদ: ৮৭৪৩; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৭৬২৫; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা: ৭৭৮১; শু'আবুল ঈমান : ৩১১৪)
مقدمة الامام النووي
60 - باب الكرم والجود والإنفاق في وجوه الخير ثقةً بالله تعالى
551 - وعن أَبي أُمَامَة صُدّيِّ بن عَجْلانَ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «يَا ابْنَ آدَمَ، إنَّكَ أن تَبْذُلَ الفَضْلَ خَيْرٌ لَكَ، وَأَن تُمْسِكَه شَرٌّ لَكَ، وَلاَ تُلاَمُ عَلَى كَفَافٍ، وَابْدَأْ بِمَنْ تَعُولُ، وَاليَدُ الْعُلْيَا خَيْرٌ مِنَ الْيَدِ السُّفْلَى». رواه مسلم. (1)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৫২
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৬০ উদারতা ও দানশীলতা প্রসঙ্গ এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে কল্যাণকর খাতসমূহে অর্থব্যয় করার ফযীলত
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দানশীলতা ও তার প্রভাব
হাদীছ নং: ৫৫২
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ইসলাম গ্রহণের বিপরীতে যা-কিছুই চাওয়া হতো, তিনি তা অবশ্যই দিতেন। একবার এক ব্যক্তি তাঁর কাছে আসলে তিনি তাকে দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী উপত্যকা পরিমাণ বকরি দিলেন। লোকটি তার গোত্রে ফিরে বলল, হে আমার গোত্র! তোমরা ইসলাম গ্রহণ করো। কারণ মুহাম্মাদ এত পরিমাণ দান করেন যে, তিনি দারিদ্র্যের ভয় করেন না। কোনও কোনও ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করত কেবলই পার্থিব স্বার্থে। কিন্তু অল্পকাল যেতে না যেতেই ইসলাম তার কাছে দুনিয়া ও দুনিয়ার অন্তর্ভুক্ত যাবতীয় বিষয় অপেক্ষা বেশি প্রিয় হয়ে উঠত। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম : ২৩১২; মুসনাদে আহমাদ: ১২৭৯০; মুসনাদে আবূ ইয়া'লা : ৩৩০২; সহীহ ইবন হিব্বান : ৬৩৭২: বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা : ১৩১৮৮; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ : ৩৬৯০)
হাদীছ নং: ৫৫২
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ইসলাম গ্রহণের বিপরীতে যা-কিছুই চাওয়া হতো, তিনি তা অবশ্যই দিতেন। একবার এক ব্যক্তি তাঁর কাছে আসলে তিনি তাকে দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী উপত্যকা পরিমাণ বকরি দিলেন। লোকটি তার গোত্রে ফিরে বলল, হে আমার গোত্র! তোমরা ইসলাম গ্রহণ করো। কারণ মুহাম্মাদ এত পরিমাণ দান করেন যে, তিনি দারিদ্র্যের ভয় করেন না। কোনও কোনও ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করত কেবলই পার্থিব স্বার্থে। কিন্তু অল্পকাল যেতে না যেতেই ইসলাম তার কাছে দুনিয়া ও দুনিয়ার অন্তর্ভুক্ত যাবতীয় বিষয় অপেক্ষা বেশি প্রিয় হয়ে উঠত। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম : ২৩১২; মুসনাদে আহমাদ: ১২৭৯০; মুসনাদে আবূ ইয়া'লা : ৩৩০২; সহীহ ইবন হিব্বান : ৬৩৭২: বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা : ১৩১৮৮; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ : ৩৬৯০)
مقدمة الامام النووي
60 - باب الكرم والجود والإنفاق في وجوه الخير ثقةً بالله تعالى
552 - وعن أنسٍ - رضي الله عنه - قَالَ: مَا سُئِلَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - عَلَى الإسْلاَمِ شَيْئًا إِلاَّ أعْطَاهُ، وَلَقَدْ جَاءهُ رَجُلٌ، فَأعْطَاهُ غَنَمًا بَيْنَ جَبَلَيْنِ، فَرجَعَ إِلَى قَوْمِهِ، فَقَالَ: يَا قَوْمِ، أسْلِمُوا فإِنَّ مُحَمَّدًا يُعطِي عَطَاءَ مَن لاَ يَخْشَى الفَقْرَ، وَإنْ كَانَ الرَّجُلُ لَيُسْلِمُ مَا يُريدُ إِلاَّ الدُّنْيَا، فَمَا يَلْبَثُ إِلاَّ يَسِيرًا حَتَّى يَكُونَ الإسْلاَمُ أحَبَّ إِلَيْهِ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا. رواه مسلم. (1)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৫৩
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৬০ উদারতা ও দানশীলতা প্রসঙ্গ এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে কল্যাণকর খাতসমূহে অর্থব্যয় করার ফযীলত
অর্থ দিয়ে হলেও অন্যকে দীনের প্রতি আকৃষ্ট করা এবং আত্মসম্মান রক্ষা করার চেষ্টা
হাদীছ নং: ৫৫৩
হযরত উমর রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (কিছু লোকের মধ্যে) মাল বণ্টন করলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এদের চেয়ে তো অন্যরা এ মালের বেশি হকদার ছিল? তিনি বললেন, তারা আমাকে এখতিয়ার দিয়েছে যে, আমার কাছে পীড়াপীড়ি করে চাইতে থাকবে, ফলে আমি তাদেরকে (তারা যা চায়) তা দেব। অথবা আমাকে কৃপণ ঠাওরাবে। অথচ আমি কৃপণ নই। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম : ১০৫৬; মুসনাদে আহমাদ: ১২৭; খারাইতী, মাকারিমুল আখলাক : ৫৬৩)
হাদীছ নং: ৫৫৩
হযরত উমর রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (কিছু লোকের মধ্যে) মাল বণ্টন করলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এদের চেয়ে তো অন্যরা এ মালের বেশি হকদার ছিল? তিনি বললেন, তারা আমাকে এখতিয়ার দিয়েছে যে, আমার কাছে পীড়াপীড়ি করে চাইতে থাকবে, ফলে আমি তাদেরকে (তারা যা চায়) তা দেব। অথবা আমাকে কৃপণ ঠাওরাবে। অথচ আমি কৃপণ নই। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম : ১০৫৬; মুসনাদে আহমাদ: ১২৭; খারাইতী, মাকারিমুল আখলাক : ৫৬৩)
مقدمة الامام النووي
60 - باب الكرم والجود والإنفاق في وجوه الخير ثقةً بالله تعالى
553 - وعن عمر - رضي الله عنه - قَالَ: قسم رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قَسْمًا، فَقُلْتُ: يَا رسولَ الله، لَغَيْرُ هؤلاَءِ كَانُوا أحَقَّ بِهِ مِنْهُمْ؟ فَقَالَ: «إنَّهُمْ خَيرُونِي أنْ يَسألُوني بالفُحْشِ، أَوْ يُبَخِّلُونِي، وَلَسْتُ بِبَاخِلٍ». رواه مسلم. (1)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৫৪
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৬০ উদারতা ও দানশীলতা প্রসঙ্গ এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে কল্যাণকর খাতসমূহে অর্থব্যয় করার ফযীলত
হুনায়ন থেকে ফেরার পথে বেদুঈনদের আচরণ ও তাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহনশীলতা ও বদান্যতা
হাদীছ নং: ৫৫৪
হযরত জুবায়র ইবন মুত‘ইম রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুনায়নের যুদ্ধ থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রত্যাবর্তনকালে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলেন। এ সময় বেদুঈনেরা তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁর কাছে চাইতে থাকল। এমনকি তারা তাঁকে একটি বাবলা গাছের কাছে চাপিয়ে নিয়ে গেল। ফলে গাছটির কাঁটায় তাঁর চাদর আটকে গেল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি বললেন, তোমরা আমার চাদর দাও। যদি এই গাছের কাঁটা পরিমাণ উটও আমার কাছে থাকত, তবে আমি তা তোমাদের মধ্যে বণ্টন করে দিতাম। তারপরও তোমরা আমাকে বখিল, মিথ্যুক ও ভীরু পেতে না। -বুখারী
(সহীহ বুখারী : ২৮২১; মুসনাদে আহমাদ: ১৬৭৫৬; মুসনাদে আবু ইয়া'লা: ৭৪০৪; সহীহ ইবন হিব্বান : ৬৮২০; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ১৫৫১; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা : ১৩১৭৭; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ৩৬৮৯)
হাদীছ নং: ৫৫৪
হযরত জুবায়র ইবন মুত‘ইম রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুনায়নের যুদ্ধ থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রত্যাবর্তনকালে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলেন। এ সময় বেদুঈনেরা তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁর কাছে চাইতে থাকল। এমনকি তারা তাঁকে একটি বাবলা গাছের কাছে চাপিয়ে নিয়ে গেল। ফলে গাছটির কাঁটায় তাঁর চাদর আটকে গেল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি বললেন, তোমরা আমার চাদর দাও। যদি এই গাছের কাঁটা পরিমাণ উটও আমার কাছে থাকত, তবে আমি তা তোমাদের মধ্যে বণ্টন করে দিতাম। তারপরও তোমরা আমাকে বখিল, মিথ্যুক ও ভীরু পেতে না। -বুখারী
(সহীহ বুখারী : ২৮২১; মুসনাদে আহমাদ: ১৬৭৫৬; মুসনাদে আবু ইয়া'লা: ৭৪০৪; সহীহ ইবন হিব্বান : ৬৮২০; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ১৫৫১; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা : ১৩১৭৭; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ৩৬৮৯)
مقدمة الامام النووي
60 - باب الكرم والجود والإنفاق في وجوه الخير ثقةً بالله تعالى
554 - وعن جبير بن مطعم - رضي الله عنه - قَالَ: بَيْنَمَا هُوَ يَسِيرُ مَعَ النَّبيِّ - صلى الله عليه وسلم - مَقْفَلَهُ مِنْ حُنَيْن، فَعَلِقَهُ الأعْرَابُ يَسْألُونَهُ، حَتَّى اضْطَرُّوهُ إِلَى سَمُرَة، فَخَطِفَت رِدَاءهُ، فَوَقَفَ النَّبيُّ - صلى الله عليه وسلم - فقال: «أعْطُوني رِدَائي، فَلَوْ كَانَ لِي عَدَدُ هذِهِ العِضَاهِ نَعَمًا، لَقَسَمْتُهُ بَينَكُمْ، ثُمَّ لا تَجِدُونِي بَخِيلًا وَلاَ كَذّابًا وَلاَ جَبَانًا». رواه البخاري. (1)
«مَقْفَلَهُ» أيْ: حَال رُجُوعِه. وَ «السَّمُرَةُ»: شَجَرَةٌ. وَ «العِضَاهُ»: شَجَرٌ لَهُ شَوْكٌ.
«مَقْفَلَهُ» أيْ: حَال رُجُوعِه. وَ «السَّمُرَةُ»: شَجَرَةٌ. وَ «العِضَاهُ»: شَجَرٌ لَهُ شَوْكٌ.
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৫৫
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৬০ উদারতা ও দানশীলতা প্রসঙ্গ এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে কল্যাণকর খাতসমূহে অর্থব্যয় করার ফযীলত
তিনটি মহৎ গুণ ও তার সুফল
হাদীছ নং: ৫৫৫
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, দান-খয়রাত সম্পদ কমায় না। ক্ষমাশীলতা দ্বারা আল্লাহ তা'আলা বান্দার ইজ্জত-সম্মানই বৃদ্ধি করেন। যে-কেউ আল্লাহ তা'আলার জন্য বিনয় অবলম্বন করে, আল্লাহ তা'আলা তার মর্যাদা উঁচু করেন। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ২৫৮৮; জামে তিরমিযী: ৯০২৯; মুসনাদে আহমাদ: ৯০০৮; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ৯৮১৫; সহীহ ইবন হিব্বান: ৩২৪৮; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ১২১৫০; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা: ৭৮১৭; শুআবুল ঈমান : ৩১৩৮; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ১৬৩৪)
হাদীছ নং: ৫৫৫
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, দান-খয়রাত সম্পদ কমায় না। ক্ষমাশীলতা দ্বারা আল্লাহ তা'আলা বান্দার ইজ্জত-সম্মানই বৃদ্ধি করেন। যে-কেউ আল্লাহ তা'আলার জন্য বিনয় অবলম্বন করে, আল্লাহ তা'আলা তার মর্যাদা উঁচু করেন। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ২৫৮৮; জামে তিরমিযী: ৯০২৯; মুসনাদে আহমাদ: ৯০০৮; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ৯৮১৫; সহীহ ইবন হিব্বান: ৩২৪৮; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ১২১৫০; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা: ৭৮১৭; শুআবুল ঈমান : ৩১৩৮; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ১৬৩৪)
مقدمة الامام النووي
60 - باب الكرم والجود والإنفاق في وجوه الخير ثقةً بالله تعالى
555 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه: أنَّ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مَا نَقَصَتْ صَدَقَةٌ مِنْ مَال، وَمَا زَادَ اللهُ عَبْدًا بِعَفْوٍ إِلاَّ عِزًّا، وَمَا تَواضَعَ أحَدٌ لله إِلاَّ رَفَعَهُ اللهُ - عز وجل». رواه مسلم. (1)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৫৬
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৬০ উদারতা ও দানশীলতা প্রসঙ্গ এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে কল্যাণকর খাতসমূহে অর্থব্যয় করার ফযীলত
কয়েকটি নীতিবাক্য ও জরুরি উপদেশ
হাদীছ নং: ৫৫৬
হযরত আবু কাবশা উমর ইবন সা‘দ আল-আনমারী রাযি. থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, তিনটি বিষয়ে আমি কসম করছি এবং তোমাদেরকে (তা ছাড়াও) একটি কথা বলছি। তোমরা তা স্মরণ রেখো। দান-সদাকার কারণে কোনও বান্দার সম্পদ কমে না। যে বান্দার প্রতি কোনও জুলুম করা হয় আর সে তাতে ধৈর্যধারণ করে, আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই তার সম্মান বৃদ্ধি করেন। কোনও বান্দা (মানুষের কাছে) চাওয়ার দরজা খুললে আল্লাহ অবশ্যই তার জন্য দারিদ্র্যের দুয়ার খুলে দেন। (অথবা অনুরূপ কোনও কথা বলেছেন।) আমি তোমাদের কাছে একটি হাদীছ বর্ণনা করছি। তোমরা তা স্মরণ রেখো। দুনিয়া কেবল চার শ্রেণির লোকের জন্য-
ক. ওই বান্দা, যাকে আল্লাহ মাল ও 'ইলম দান করেছেন। সে এ বিষয়ে তার প্রতিপালককে ভয় করে, এর দ্বারা আত্মীয়তা রক্ষা করে এবং এর ভেতর সে আল্লাহর হক সম্পর্কে সচেতন থাকে। এটা হল সর্বশ্রেষ্ঠ স্তর।
খ. ওই বান্দা, যাকে আল্লাহ 'ইলম দিয়েছেন, কিন্তু মাল দেননি। সে খাঁটি নিয়তের অধিকারী। সে বলে, আমার যদি ধন-সম্পদ থাকত, তবে আমি অমুক ব্যক্তির আমলের মতো আমল করতাম। তাকে তার নিয়ত অনুযায়ী বিবেচনা করা হয়। এ দুই ব্যক্তির প্রতিদান সমান সমান।
গ. ওই ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ মাল দিয়েছেন, কিন্তু 'ইলম দেননি। সে 'ইলম ছাড়াই তার মালের ভেতর খেয়াল-খুশির আচরণ করে। এ বিষয়ে আল্লাহকে ভয় করে না, এর দ্বারা আত্মীয়তা রক্ষা করে না এবং এর ভেতর সে আল্লাহ তা'আলার কোনও হক জানে না। এটা হল সর্বনিকৃষ্ট স্তর।
ঘ. ওই ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ মালও দেননি, 'ইলমও না। সে বলে, আমার যদি মাল থাকত, তবে আমি তাতে অমুক ব্যক্তির মতো আমল করতাম। সেও তার নিয়ত অনুযায়ী বিবেচিত হয়। এদের দু'জনের পাপভার সমান সমান। -তিরমিযী
(জামে' তিরমিযী: ২৩২৫; মুসনাদে আহমাদ: ১৮০৩১; তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর: ৮৬৮; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ৪০৯৭)
হাদীছ নং: ৫৫৬
হযরত আবু কাবশা উমর ইবন সা‘দ আল-আনমারী রাযি. থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, তিনটি বিষয়ে আমি কসম করছি এবং তোমাদেরকে (তা ছাড়াও) একটি কথা বলছি। তোমরা তা স্মরণ রেখো। দান-সদাকার কারণে কোনও বান্দার সম্পদ কমে না। যে বান্দার প্রতি কোনও জুলুম করা হয় আর সে তাতে ধৈর্যধারণ করে, আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই তার সম্মান বৃদ্ধি করেন। কোনও বান্দা (মানুষের কাছে) চাওয়ার দরজা খুললে আল্লাহ অবশ্যই তার জন্য দারিদ্র্যের দুয়ার খুলে দেন। (অথবা অনুরূপ কোনও কথা বলেছেন।) আমি তোমাদের কাছে একটি হাদীছ বর্ণনা করছি। তোমরা তা স্মরণ রেখো। দুনিয়া কেবল চার শ্রেণির লোকের জন্য-
ক. ওই বান্দা, যাকে আল্লাহ মাল ও 'ইলম দান করেছেন। সে এ বিষয়ে তার প্রতিপালককে ভয় করে, এর দ্বারা আত্মীয়তা রক্ষা করে এবং এর ভেতর সে আল্লাহর হক সম্পর্কে সচেতন থাকে। এটা হল সর্বশ্রেষ্ঠ স্তর।
খ. ওই বান্দা, যাকে আল্লাহ 'ইলম দিয়েছেন, কিন্তু মাল দেননি। সে খাঁটি নিয়তের অধিকারী। সে বলে, আমার যদি ধন-সম্পদ থাকত, তবে আমি অমুক ব্যক্তির আমলের মতো আমল করতাম। তাকে তার নিয়ত অনুযায়ী বিবেচনা করা হয়। এ দুই ব্যক্তির প্রতিদান সমান সমান।
গ. ওই ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ মাল দিয়েছেন, কিন্তু 'ইলম দেননি। সে 'ইলম ছাড়াই তার মালের ভেতর খেয়াল-খুশির আচরণ করে। এ বিষয়ে আল্লাহকে ভয় করে না, এর দ্বারা আত্মীয়তা রক্ষা করে না এবং এর ভেতর সে আল্লাহ তা'আলার কোনও হক জানে না। এটা হল সর্বনিকৃষ্ট স্তর।
ঘ. ওই ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ মালও দেননি, 'ইলমও না। সে বলে, আমার যদি মাল থাকত, তবে আমি তাতে অমুক ব্যক্তির মতো আমল করতাম। সেও তার নিয়ত অনুযায়ী বিবেচিত হয়। এদের দু'জনের পাপভার সমান সমান। -তিরমিযী
(জামে' তিরমিযী: ২৩২৫; মুসনাদে আহমাদ: ১৮০৩১; তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর: ৮৬৮; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ৪০৯৭)
مقدمة الامام النووي
60 - باب الكرم والجود والإنفاق في وجوه الخير ثقةً بالله تعالى
556 - وعن أَبي كبشة عمرو بن سعد الأنماري - رضي الله عنه: أنّه سمع رسول الله - صلى الله عليه وسلم - يقول: «ثَلاَثَةٌ أُقْسِمُ عَلَيْهِنَّ، وَأُحَدِّثُكُمْ حَدِيثًا فَاحْفَظُوهُ: مَا نَقَصَ مَالُ عَبْدٍ مِنْ صَدَقَةٍ، وَلاَ ظُلِمَ عَبْدٌ مَظْلَمَةً صَبَرَ عَلَيْهَا إِلاَّ زَادَهُ اللهُ عِزًّا، وَلاَ فَتَحَ عَبْدٌ بَابَ مَسألَةٍ إِلاَّ فَتَحَ اللهُ عَلَيْهِ بَابَ فَقرٍ - أَوْ كَلِمَةً نَحْوَهَا - وَأُحَدِّثُكُمْ حَديثًا فَاحْفَظُوهُ»، قَالَ: «إنَّمَا الدُّنْيَا لأرْبَعَةِ نَفَرٍ: عَبْدٍ رَزَقَهُ اللهُ مَالًا وَعِلمًا، فَهُوَ يَتَّقِي فِيهِ رَبَّهُ، وَيَصِلُ فِيهِ رَحِمَهُ، وَيَعْلَمُ للهِ فِيهِ حَقًّا، فَهذا بأفضَلِ المَنَازِلِ. وَعَبْدٍ رَزَقهُ اللهُ عِلْمًا، وَلَمْ يَرْزُقْهُ مَالًا، فَهُوَ صَادِقُ النِّيَّةِ، يَقُولُ: لَوْ أنَّ لِي مَالًا لَعَمِلتُ بِعَمَلِ فُلانٍ، فَهُوَ بنيَّتِهِ، فأجْرُهُمَا سَوَاءٌ. وَعَبْدٍ رَزَقَهُ الله مَالًا، وَلَمَ يَرْزُقْهُ عِلْمًا، فَهُوَ يَخبطُ في مَالِهِ بغَيرِ عِلْمٍ، لاَ يَتَّقِي فِيهِ رَبَّهُ، وَلاَ يَصِلُ فِيهِ رَحِمَهُ، وَلاَ يَعْلَمُ للهِ فِيهِ حَقًّا، فَهذَا بأَخْبَثِ المَنَازِلِ. وَعَبْدٍ لَمْ يَرْزُقْهُ اللهُ مَالًا وَلاَ عِلْمًا، فَهُوَ يَقُولُ: لَوْ أنَّ لِي مَالًا لَعَمِلْتُ فِيهِ بعَمَلِ فُلاَنٍ، فَهُوَ بنِيَّتِهِ، فَوِزْرُهُمَا سَوَاءٌ». رواه الترمذي، (1) وقال: «حديث حسن صحيح».
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৫৭
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৬০ উদারতা ও দানশীলতা প্রসঙ্গ এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে কল্যাণকর খাতসমূহে অর্থব্যয় করার ফযীলত
নিজে ভোগ করা অপেক্ষা দান-খয়রাতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতি উৎসাহদান
হাদীছ নং: ৫৫৭
উন্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত যে, তাঁরা একটি বকরি জবাই করেছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তা থেকে কী অবশিষ্ট আছে? আয়েশা রাযি. বললেন, সেটির কাঁধ ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বরং সেটির কাঁধ ছাড়া সবই অবশিষ্ট আছে।-তিরমিযী
(জামে' তিরমিযী : ২৪৭০; মুসনাদে আহমাদ : ২৪২৪০; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ১৬৩৭)
হাদীছ নং: ৫৫৭
উন্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত যে, তাঁরা একটি বকরি জবাই করেছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তা থেকে কী অবশিষ্ট আছে? আয়েশা রাযি. বললেন, সেটির কাঁধ ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বরং সেটির কাঁধ ছাড়া সবই অবশিষ্ট আছে।-তিরমিযী
(জামে' তিরমিযী : ২৪৭০; মুসনাদে আহমাদ : ২৪২৪০; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ১৬৩৭)
مقدمة الامام النووي
60 - باب الكرم والجود والإنفاق في وجوه الخير ثقةً بالله تعالى
557 - وعن عائشة رضي الله عنها: أنَّهُمْ ذَبَحُوا شَاةً، فَقَالَ النبيُّ - صلى الله عليه وسلم: «مَا بَقِيَ مِنْهَا؟» قالت: مَا بَقِيَ مِنْهَا إِلاَّ كَتِفُها. قَالَ: «بَقِيَ كُلُّهَا غَيْرُ كَتِفِهَا». رواه الترمذي، (1) وقال: «حديث صحيح».
ومعناه: تَصَدَّقُوا بِهَا إِلاَّ كَتِفَها. فَقَالَ: بَقِيَتْ لَنَا في الآخِرَةِ إِلاَّ كَتِفَهَا.
ومعناه: تَصَدَّقُوا بِهَا إِلاَّ كَتِفَها. فَقَالَ: بَقِيَتْ لَنَا في الآخِرَةِ إِلاَّ كَتِفَهَا.
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৫৮
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৬০ উদারতা ও দানশীলতা প্রসঙ্গ এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে কল্যাণকর খাতসমূহে অর্থব্যয় করার ফযীলত
সম্পদ জমা না করে নেককাজে খরচ করার প্রতি উৎসাহদান
হাদীছ নং: ৫৫৮
হযরত আসমা বিনতে আবু বকর রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, থলির মুখ বন্ধ করে রেখো না, তাহলে তোমার প্রতি (আল্লাহর দান) বন্ধ করে রাখা হবে।
অপর এক বর্ণনায় আছে, তুমি খরচ করো বা দান করো বা ছড়িয়ে দাও। হিসাব করো না, তাহলে তোমার প্রতিও আল্লাহ হিসাব করে দেবেন। উদ্বৃত্ত সম্পদ আটকে রেখো না, তাহলে আল্লাহও তোমার থেকে আটকে রাখবেন। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী : ১৪৩৩; সহীহ মুসলিম : ১০২৯; জামে তিরমিযী: ১৯৬০; নাসাঈ, আস্ সুনানুল কুবরা : ৯১৪৮; মুসনাদে আহমাদ: ২৬৯২২; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর : ২৪৮)
হাদীছ নং: ৫৫৮
হযরত আসমা বিনতে আবু বকর রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, থলির মুখ বন্ধ করে রেখো না, তাহলে তোমার প্রতি (আল্লাহর দান) বন্ধ করে রাখা হবে।
অপর এক বর্ণনায় আছে, তুমি খরচ করো বা দান করো বা ছড়িয়ে দাও। হিসাব করো না, তাহলে তোমার প্রতিও আল্লাহ হিসাব করে দেবেন। উদ্বৃত্ত সম্পদ আটকে রেখো না, তাহলে আল্লাহও তোমার থেকে আটকে রাখবেন। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী : ১৪৩৩; সহীহ মুসলিম : ১০২৯; জামে তিরমিযী: ১৯৬০; নাসাঈ, আস্ সুনানুল কুবরা : ৯১৪৮; মুসনাদে আহমাদ: ২৬৯২২; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর : ২৪৮)
مقدمة الامام النووي
60 - باب الكرم والجود والإنفاق في وجوه الخير ثقةً بالله تعالى
558 - وعن أسماء بنت أَبي بكرٍ الصديق رضي الله عنهما، قالت: قَالَ لي رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «لاَ تُوكِي فَيُوكى عَلَيْكِ (1)».
وفي رواية: «أنفقي أَوِ انْفَحِي، أَوْ انْضَحِي، وَلاَ تُحصي فَيُحْصِي اللهُ عَلَيْكِ، وَلاَ تُوعي فَيُوعي اللهُ عَلَيْكِ». متفقٌ عَلَيْهِ. (2)
وَ «انْفَحِي» بالحاء المهملة، وَهُوَ بمعنى «أنفقي» وكذلك «انْضحي».
وفي رواية: «أنفقي أَوِ انْفَحِي، أَوْ انْضَحِي، وَلاَ تُحصي فَيُحْصِي اللهُ عَلَيْكِ، وَلاَ تُوعي فَيُوعي اللهُ عَلَيْكِ». متفقٌ عَلَيْهِ. (2)
وَ «انْفَحِي» بالحاء المهملة، وَهُوَ بمعنى «أنفقي» وكذلك «انْضحي».
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৫৯
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৬০ উদারতা ও দানশীলতা প্রসঙ্গ এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে কল্যাণকর খাতসমূহে অর্থব্যয় করার ফযীলত
দানশীলতা ও কৃপণতার উপমা
হাদীছ নং: ৫৫৯
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইছি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, বখিল ও খরচকারীর দৃষ্টান্ত ওই দুই ব্যক্তির মতো, যাদের পরিধানে বুক থেকে গলা পর্যন্ত লোহার দু'টি বর্ম আছে। খরচকারী ব্যক্তির অবস্থা হল এমন যে, সে যখনই খরচ করতে চায়, তখন বর্মটি তার চামড়ার উপর প্রসারিত হয়ে যায় বা পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এমনকি তার আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত ঢেকে ফেলে আর তার পায়ের ছাপ মুছে ফেলে। পক্ষান্তরে বখিল ব্যক্তির অবস্থা হল এই যে, যখনই সে কোনওকিছু খরচ করতে চায়, অমনি সেটির প্রতিটি আংটা আপন আপন স্থানে এঁটে যায়। সে তা প্রশস্ত করতে চায়, কিন্তু প্রশস্ত হয় না। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ১৪৪৩; সহীহ মুসলিম: ১০২১; সুনানে নাসাঈ : ২৫৪৭; মুসনাদে আহমাদ: ৯০৫৭; সহীহ ইবন হিব্বান: ৩৩৩২; শু'আবুল ঈমান: ১০৩৩৩; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ১৬৫৯)
হাদীছ নং: ৫৫৯
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইছি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, বখিল ও খরচকারীর দৃষ্টান্ত ওই দুই ব্যক্তির মতো, যাদের পরিধানে বুক থেকে গলা পর্যন্ত লোহার দু'টি বর্ম আছে। খরচকারী ব্যক্তির অবস্থা হল এমন যে, সে যখনই খরচ করতে চায়, তখন বর্মটি তার চামড়ার উপর প্রসারিত হয়ে যায় বা পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এমনকি তার আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত ঢেকে ফেলে আর তার পায়ের ছাপ মুছে ফেলে। পক্ষান্তরে বখিল ব্যক্তির অবস্থা হল এই যে, যখনই সে কোনওকিছু খরচ করতে চায়, অমনি সেটির প্রতিটি আংটা আপন আপন স্থানে এঁটে যায়। সে তা প্রশস্ত করতে চায়, কিন্তু প্রশস্ত হয় না। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ১৪৪৩; সহীহ মুসলিম: ১০২১; সুনানে নাসাঈ : ২৫৪৭; মুসনাদে আহমাদ: ৯০৫৭; সহীহ ইবন হিব্বান: ৩৩৩২; শু'আবুল ঈমান: ১০৩৩৩; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ১৬৫৯)
مقدمة الامام النووي
60 - باب الكرم والجود والإنفاق في وجوه الخير ثقةً بالله تعالى
559 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه: أنَّه سمع رسول الله - صلى الله عليه وسلم - يَقولُ: «مَثَل البَخِيل وَالمُنْفِقِ، كَمَثَلِ رَجُلَيْنِ عَلَيْهِمَا جُنَّتَانِ (1) مِنْ حَديدٍ مِنْ ثُدِيِّهِمَا إِلَى تَرَاقِيهِمَا، فَأَمَّا المُنْفِقُ فَلاَ يُنْفِقُ إِلاَّ سَبَغَتْ - أَوْ وَفَرَتْ - عَلَى جِلْدِهِ حَتَّى تُخْفِيَ بَنَانَهُ، وَتَعْفُو أثرَهُ، وأمَّا البَخِيلُ، فَلاَ يُريدُ أَنْ يُنْفِقَ شَيْئًا إِلاَّ لَزِقَتْ كُلُّ حَلْقَةٍ مَكَانَهَا، فَهُوَ يُوسِّعُهَا فَلاَ تَتَّسِعُ». متفقٌ عَلَيْهِ. (2)
وَ «الجُنَّةُ»: الدِّرْعُ؛ وَمَعنَاهُ أنَّ المُنْفِقَ كُلَّمَا أَنْفَقَ سَبَغَتْ، وَطَالَتْ حَتَّى تَجُرَّ وَرَاءهُ، وَتُخْفِيَ رِجْلَيْهِ وَأثَرَ مَشْيِهِ وَخطُوَاتِهِ.
وَ «الجُنَّةُ»: الدِّرْعُ؛ وَمَعنَاهُ أنَّ المُنْفِقَ كُلَّمَا أَنْفَقَ سَبَغَتْ، وَطَالَتْ حَتَّى تَجُرَّ وَرَاءهُ، وَتُخْفِيَ رِجْلَيْهِ وَأثَرَ مَشْيِهِ وَخطُوَاتِهِ.
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৬০
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৬০ উদারতা ও দানশীলতা প্রসঙ্গ এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে কল্যাণকর খাতসমূহে অর্থব্যয় করার ফযীলত
বান্দার দান-খয়রাতে আল্লাহ তা‘আলা যেভাবে প্রবৃদ্ধি ঘটান
হাদীছ নং: ৫৬০
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ দান করে, আর বাস্তবিকপক্ষে আল্লাহ হালাল ছাড়া তো গ্রহণ করেন না, আল্লাহ তা'আলা নিজ ডান হাতে তা গ্রহণ করেন, তারপর দাতার পক্ষে তা প্রতিপালন করেন, যেমন তোমাদের কেউ তার ঘোড়ার বাচ্চা লালন-পালন করতে থাকে। অবশেষে তা পাহাড়ের মতো হয়ে যায়। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী : ১৪১০; সহীহ মুসলিম: ১০১৪; সুনানে নাসাঈ : ২৫২৩; জামে তিরমিযী : ৬৬১; মুসনাদে আহমাদ: ৮৩৮১; শু'আবুল ঈমান: ৩০৭৫; সুনানে ইবন মাজাহ : ১৮৪২)
হাদীছ নং: ৫৬০
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ দান করে, আর বাস্তবিকপক্ষে আল্লাহ হালাল ছাড়া তো গ্রহণ করেন না, আল্লাহ তা'আলা নিজ ডান হাতে তা গ্রহণ করেন, তারপর দাতার পক্ষে তা প্রতিপালন করেন, যেমন তোমাদের কেউ তার ঘোড়ার বাচ্চা লালন-পালন করতে থাকে। অবশেষে তা পাহাড়ের মতো হয়ে যায়। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী : ১৪১০; সহীহ মুসলিম: ১০১৪; সুনানে নাসাঈ : ২৫২৩; জামে তিরমিযী : ৬৬১; মুসনাদে আহমাদ: ৮৩৮১; শু'আবুল ঈমান: ৩০৭৫; সুনানে ইবন মাজাহ : ১৮৪২)
مقدمة الامام النووي
60 - باب الكرم والجود والإنفاق في وجوه الخير ثقةً بالله تعالى
560 - وعنه، قَالَ: قَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «مَنْ تَصَدَّقَ بعَدلِ تَمْرَةٍ مِنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ، وَلاَ يَقْبَلُ اللهُ إِلاَّ الطَّيبَ، فَإنَّ اللهَ يَقْبَلُهَا بِيَمِينِهِ، ثُمَّ يُرَبِّيهَا لِصَاحِبِهَا كَمَا يُرَبِّي أحَدُكُمْ فَلُوَّهُ حَتَّى تَكُونَ مِثْلَ الجَبَلِ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
«الفَلُوُّ» بفتح الفاء وضم اللام وتشديد الواو، ويقال أيضًا: بكسر الفاء وإسكان اللام وتخفيف الواو: وَهُوَ المُهْرُ.
«الفَلُوُّ» بفتح الفاء وضم اللام وتشديد الواو، ويقال أيضًا: بكسر الفاء وإسكان اللام وتخفيف الواو: وَهُوَ المُهْرُ.
তাহকীক: