রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৫৪১
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায়: ৫৯ নিজ হাতে পরিশ্রম করে খাওয়া এবং অন্যের কাছে প্রার্থনা করা বা দান গ্রহণের জন্য নিজেকে সম্মুখবর্তী করা হতে সংযত রাখার প্রতি উৎসাহদান
হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালামের পেশা
হাদীছ নং: ৫৪১

হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যাকারিয়া আলাইহিস-সালাম কাঠমিস্ত্রী ছিলেন। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ২৩৭৯; মুসনাদে আহমাদ: ৭৯৪৭; সুনানে ইবন মাজাহ: ২১৫১; সহীহ ইবন হিব্বান: ৫১৪১; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ৯৮১)
مقدمة الامام النووي
59 - باب الحث عَلَى الأكل من عمل يده والتعفف به عن السؤال والتعرض للإعطاء
541 - وعنه: أنَّ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «كَانَ زَكرِيّا - عليه السلام - نَجَّارًا». رواه مسلم. (1)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম বনী ইসরাঈলের একজন মহান নবী। তিনি হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের মা হযরত মারয়াম আলাইহাস সালামের খালু ছিলেন। হযরত মারয়াম আলাইহাস সালাম তাঁর তত্ত্বাবধানেই প্রতিপালিত হন। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। একবার তিনি হযরত মারয়াম আলাইহাস সালামের কক্ষে অমৌসুমী ফল দেখতে পান। এ ফল কোথা থেকে এসেছে জানতে চাইলে হযরত মারয়াম আলাইহাস সালাম উত্তর দিয়েছিলেন, এসব আল্লাহ তা'আলার নিকট থেকে আসে। তখন হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম অশীতিপর বৃদ্ধ। ৯০ বা ৯২ বছর বয়স। অনেকে ১২০ বছরও বলেছেন। বাবা হওয়ার বয়স নেই। কিন্তু অমৌসুমী ফল দেখে তাঁর মনে ভাবনা জাগল যে, আল্লাহ তা'আলা চাইলে আমাকেও অমৌসুমী ফলস্বরূপ এ বৃদ্ধবয়সে সন্তানের পিতা করতে পারেন। অমনি তিনি আল্লাহ তা'আলার কাছে দু'আয় রত হন। তাঁর দু'আ কবুল হয়। তিনি এক পুত্রসন্তানের বাবা হন। সে পুত্রের নাম ইয়াহইয়া। পরবর্তীকালে পিতার মতো তিনিও নবী হয়েছিলেন। পিতা-পুত্র উভয়ে তৎকালীন বাদশা হীরোদাসের সৈন্যদের হাতে শাহাদাত বরণ করেন।

আলোচ্য হাদীছ দ্বারা আমরা জানতে পারছি, একজন মহান নবী হওয়া সত্ত্বেও তিনি কাঠমিস্ত্রীর পেশা বেছে নিয়েছিলেন। এর মাধ্যমে যা উপার্জন হতো তা দ্বারাই জীবন নির্বাহ করতেন। বোঝা গেল মানুষ যত উচ্চমর্যাদার অধিকারীই হোক না কেন, খেটে খাওয়া তার সে মর্যাদার পরিপন্থী নয়। বলাবাহুল্য নবুওয়াতের চেয়ে উঁচু কোনও মর্যাদা নেই। তো নবুওয়াতের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও যখন হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম নিজ হাতে পরিশ্রম করাকে জীবন নির্বাহের উপায়রূপে গ্রহণ করেছিলেন, তখন অন্য কারও জন্যই পরিশ্রম করে খাওয়া অমর্যাদাকর বিষয় হতে পারে না।

এর দ্বারা আরও জানা গেল কাঠমিস্ত্রীর কাজ যদি কারও ভালো জানা থাকে, তবে এটাকেও সে উপার্জনের মাধ্যম বানাতে পারে। প্রচলিত সমাজ একে যত তুচ্ছই মনে করুক, তাতে কিছু আসে-যায় না। একে তো এটা একটি বৈধ উপার্জনমাধ্যম, তদুপরি একজন নবীর পেশা। এ অবস্থায় এটা লজ্জাকর কিছু তো নয়ই, বরং একজন নবীর পেশা হিসেবে এর রয়েছে বাড়তি মাহাত্ম্য।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. নিজ হাতে পরিশ্রম করে খাওয়া বরকতপূর্ণ ও গৌরবময় কাজ।

খ. সুতার বা কাঠমিস্ত্রীকে ছোট নজরে দেখতে নেই।

গ. পূর্ববর্তী নবীগণের জীবনও আমাদের জন্য অনুসরণীয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)