রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ৫৪২
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায়: ৫৯ নিজ হাতে পরিশ্রম করে খাওয়া এবং অন্যের কাছে প্রার্থনা করা বা দান গ্রহণের জন্য নিজেকে সম্মুখবর্তী করা হতে সংযত রাখার প্রতি উৎসাহদান
নিজ হাতে পরিশ্রম করা জীবিকা নির্বাহের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম
হাদীছ নং: ৫৪২
হযরত মিকদাম ইবন মা'দীকারিব রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনও ব্যক্তি নিজ হাতে পরিশ্রম করে খাওয়া অপেক্ষা উত্তম খাদ্য কখনও খায়নি। আল্লাহর নবী দাউদ আলাইহিস সালাম নিজ হাতে পরিশ্রম করে খেতেন। -বুখারী
(সহীহ বুখারী : ২০৭২; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ১১৭০; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ২০২৭)
হাদীছ নং: ৫৪২
হযরত মিকদাম ইবন মা'দীকারিব রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনও ব্যক্তি নিজ হাতে পরিশ্রম করে খাওয়া অপেক্ষা উত্তম খাদ্য কখনও খায়নি। আল্লাহর নবী দাউদ আলাইহিস সালাম নিজ হাতে পরিশ্রম করে খেতেন। -বুখারী
(সহীহ বুখারী : ২০৭২; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ১১৭০; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ২০২৭)
مقدمة الامام النووي
59 - باب الحث عَلَى الأكل من عمل يده والتعفف به عن السؤال والتعرض للإعطاء
542 - وعن المقدام بنِ مَعْدِ يكرِبَ - رضي الله عنه - عن النبي - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مَا أكَلَ أَحَدٌ طَعَامًا قَطُّ خَيْرًا مِنْ أَنْ يَأكُلَ مِنْ عَمَلِ يَدِه، وَإنَّ نَبيَّ الله دَاوُدَ - صلى الله عليه وسلم - كَانَ يَأكُلُ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ». رواه البخاري. (1)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে নিজ হাতে রোজগার করে খাওয়াকে সর্বোত্তম খাবার বলা হয়েছে। মানুষ তার অধিকাংশ কাজই যেহেতু হাত দ্বারা করে, তাই এখানে বিশেষভাবে হাতের উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে হাদীছটিতে নিজ চেষ্টায় রোজগার করার কথা বোঝানো উদ্দেশ্য, তাতে মৌলিকভাবে হাতের ব্যবহার থাকুক বা নাই থাকুক। যেমন, পাহারাদারি করা, যা কিনা মূলত চোখের কাজ। এমনিভাবে শিক্ষাদানের মাধ্যমে উপার্জন করা, যাতে মূলত মুখ ও কানের ব্যবহার হয়ে থাকে।
হাদীছটিতে ইশারা করা হয়েছে, নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকা এবং অন্যের সাহায্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে জীবনযাপন করা ভালো নয়। আল্লাহ তা'আলার উপর তাওয়াক্কুল তো করতেই হবে, কিন্তু তার মানে এ নয় যে, উপার্জনের জন্য কোনও মাধ্যম গ্রহণ করা হবে না। বরং মাধ্যম গ্রহণ করে ফলাফল আল্লাহ তা'আলার উপর ছেড়ে দেওয়া এবং তিনি যা দেন তাতে খুশি থাকা- এটাই প্রকৃত তাওয়াক্কুল। আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম ও সাহাবায়ে কেরামসহ আমাদের আদর্শস্থানীয় মহাপুরুষগণ এরকম তাওয়াক্কুলই করতেন। এমনকি যেই সুফি-সাধকগণ দুনিয়াবিমুখরূপে বিশেষভাবে পরিচিত, তাদেরও অধিকাংশ কাজ করে খাওয়াই পসন্দ করতেন। বিশ্বখ্যাত দরবেশ ইবরাহীম ইবন আদহাম রহ. তো ফলের বাগানে চাকরি করে জীবন নির্বাহ করেছেন। তাঁর সম্পর্কে এ ঘটনা প্রসিদ্ধ যে, বাগানের মালিক তাঁর কাছে মিষ্টি আপেল খেতে চাইলে কোন গাছের আপেল মিষ্টি তা নির্ণয় করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন। এ নিয়ে বাগানমালিক তাঁকে তিরস্কার করলে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, জনাব, আমার দায়িত্ব তো বাগানের পরিচর্যা করা, যার বিনিময়ে আপনি আমাকে বেতন দিয়ে থাকেন। কোন গাছের ফল কেমন, তা চেখে দেখার তো কোনও বৈধতা আমার ছিল না।
উল্লেখ্য, হাদীছে খাওয়ার কথা বলা হলেও পান করাও এর অন্তর্ভুক্ত। এমনিভাবে জীবনরক্ষার জন্য আরও যা-কিছু প্রয়োজন তার সবই নিজ চেষ্টায় রোজগারের মাধ্যমে সম্পন্ন করাও এর মধ্যে রয়েছে। সারকথা, জীবনের যাবতীয় জরুরত মেটানোর জন্য মুমিনগণ যেন অন্যের উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজ চেষ্টায় আয়-রোজগার করে, হাদীছটিতে সেই উৎসাহই দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে খাওয়ার কথা বলা হয়েছে এজন্য যে, এটাই মানুষের সর্বাপেক্ষা বেশি জরুরি।
হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম ছিলেন বনী ইসরাঈলের একজন নবী। তিনি হযরত ইয়া'কুব আলাইহিস সালামের পুত্র ইয়াহুদার বংশে জন্মগ্রহণ করেন। এ বংশে বহু নবীর জন্ম হয়েছে। তাঁর আগে এ বংশে কেউ রাজত্ব লাভ করেনি। রাজত্বের অধিকারী হতো হযরত ইয়া'কূব আলাইহিস সালামের অপর পুত্র ইফরাঈমের বংশ। এভাবে নবুওয়াত ও রাজত্ব বনী ইসরাঈলের দুই শাখায় ভাগ হয়ে গিয়েছিল। সর্বপ্রথম হযরত দাউদ আলাইহিস সালামের মধ্যেই রাজত্ব ও নবুওয়াত উভয় মর্যাদার সম্মিলন ঘটে। কুরআন মাজীদে তাঁকে 'খলীফা' উপাধিতেও ভূষিত করা হয়েছে।
তিনি বনী ইসরাঈলের বাদশা হয়েছিলেন খৃষ্টপূর্ব আনুমানিক ১০০০ সনের দিকে। তখন ফিলিস্তীনের অধিকাংশ এলাকা আমালিকা বংশের দখলে ছিল। তাদের দখল থেকে ফিলিস্তীনকে মুক্ত করার জন্য আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে তালুতকে বনী ইসরাঈলের বাদশা বানিয়ে দেওয়া হয়। তিনি তার বাহিনী নিয়ে আমালিকা বংশের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম তখন এক নওজোয়ান। তিনিও তালুতের নেতৃত্বে এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। উভয়পক্ষে ঘোরতর যুদ্ধ হয়। শেষপর্যন্ত আমালিকা বংশের পরাজয় ঘটে। তাদের রাজা নিহত হয়। তার নাম ছিল জালুত। তাকে হত্যা করেছিলেন হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম। তালুতের মৃত্যুর পর হযরত দাউদ আলাইহিস সালামই ফিলিস্তীনের রাজত্ব লাভ করেন। তিনি খৃষ্টপূর্ব আনুমানিক ৯৬৩ সনে ইন্তিকাল করেন। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় ১০০ বছর। তিনি ৪০ বছর ফিলিস্তীন শাসন করেন।
তাঁর একটি মু'জিযা ও অলৌকিকত্ব ছিল লোহা নরম হয়ে যাওয়া। তাঁর হাতের স্পর্শমাত্র শক্ত লোহা মোমের মতো নরম হয়ে যেত। তিনি তা দ্বারা বর্ম ও বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরি করতেন। কুরআন মাজীদে তাঁর সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে-
وَاذْكُرْ عَبْدَنَا دَاوُودَ ذَا الْأَيْدِ إِنَّهُ أَوَّابٌ (17) إِنَّا سَخَّرْنَا الْجِبَالَ مَعَهُ يُسَبِّحْنَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِشْرَاقِ (18) وَالطَّيْرَ مَحْشُورَةً كُلٌّ لَهُ أَوَّابٌ (19) وَشَدَدْنَا مُلْكَهُ وَآتَيْنَاهُ الْحِكْمَةَ وَفَصْلَ الْخِطَابِ (20)
এবং স্মরণ করো আমার বান্দা দাউদ (আলাইহিস সালাম)-কে, যে ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। নিশ্চয়ই সে ছিল অত্যন্ত আল্লাহ-অভিমুখী। আমি পর্বতমালাকে নিয়োজিত করেছিলাম, যাতে তারা তার সঙ্গে সন্ধ্যাবেলা ও সূর্যোদয়কালে তাসবীহ পাঠ করে। এবং পাখিদেরকেও, যাদেরকে একত্র করে নেওয়া হতো। তারা তার সঙ্গে মিলে আল্লাহর (অভিমুখী হয়ে) যিকিরে লিপ্ত থাকত। আমি তার রাজত্বকে করেছিলাম সুদৃঢ় এবং তাকে দান করেছিলাম জ্ঞানবত্তা ও মীমাংসাকর বাগ্মিতা।(সূরা সোয়াদ (৩৮), আয়াত ১৭-২০)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-
وَأَلَنَّا لَهُ الْحَدِيدَ (10) أَنِ اعْمَلْ سَابِغَاتٍ وَقَدِّرْ فِي السَّرْدِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا
আর আমি তার জন্য লোহাকে নরম করে দিয়েছিলাম। যাতে তুমি পূর্ণ মাপের বর্ম তৈরি কর এবং কড়াসমূহ জোড়ার ক্ষেত্রে পরিমাপ রক্ষা কর। আর তোমরা সকলে সৎকর্ম করো।(সূরা সাবা' (৩৪), আয়াত ১০-১১)
আলোচ্য হাদীছ বলছে যে, হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম নিজ হাতে পরিশ্রম করে কামাই-রোজগার করতেন এবং তা দ্বারা জীবন নির্বাহ করতেন। অর্থাৎ একজন শক্তিশালী ও বড় বাদশা হওয়া সত্ত্বেও তিনি রাজকোষ থেকে কিছু গ্রহণ করতেন না। জীবন নির্বাহের জন্য নিজ রোজগারের উপর নির্ভর করতেন। কীভাবে রোজগার করতেন, তা এ আয়াত দ্বারা জানা যাচ্ছে। অর্থাৎ তিনি লোহা দ্বারা আসবাবপত্র তৈরি করে তার বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করতেন।
বর্তমানে যারা লোহার বা কামার, অর্থাৎ যারা লৌহকর্মকে পেশা বানিয়ে তা দ্বারা জীবন নির্বাহ করে, তাদের জন্য হযরত দাউদ আলাইহিস সালামের জীবনে আদর্শ রয়েছে। তাদের পেশা কেবল বৈধই নয়; বরং একজন মহান নবীর কাজও বটে। তাই এরূপ পেশাদারদের অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখা উচিত নয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. জীবনধারণের প্রয়োজনসমূহ মেটানোর জন্য অন্যের গলগ্রহ না হয়ে সরাসরি নিজেই আয়-রোজগার করা বাঞ্ছনীয়।
খ. জীবনধারণের জন্য উপার্জনের কোনও মাধ্যম গ্রহণ করা তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী নয়; বরং এটা মুসলিম মহাপুরুষদের আদর্শ।
গ. পূর্ববর্তী নবীগণও আমাদের জন্য অনুসরণীয়।
ঘ. কোনও বৈধ পেশাকে তুচ্ছ মনে করা উচিত নয়।
হাদীছটিতে ইশারা করা হয়েছে, নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকা এবং অন্যের সাহায্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে জীবনযাপন করা ভালো নয়। আল্লাহ তা'আলার উপর তাওয়াক্কুল তো করতেই হবে, কিন্তু তার মানে এ নয় যে, উপার্জনের জন্য কোনও মাধ্যম গ্রহণ করা হবে না। বরং মাধ্যম গ্রহণ করে ফলাফল আল্লাহ তা'আলার উপর ছেড়ে দেওয়া এবং তিনি যা দেন তাতে খুশি থাকা- এটাই প্রকৃত তাওয়াক্কুল। আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম ও সাহাবায়ে কেরামসহ আমাদের আদর্শস্থানীয় মহাপুরুষগণ এরকম তাওয়াক্কুলই করতেন। এমনকি যেই সুফি-সাধকগণ দুনিয়াবিমুখরূপে বিশেষভাবে পরিচিত, তাদেরও অধিকাংশ কাজ করে খাওয়াই পসন্দ করতেন। বিশ্বখ্যাত দরবেশ ইবরাহীম ইবন আদহাম রহ. তো ফলের বাগানে চাকরি করে জীবন নির্বাহ করেছেন। তাঁর সম্পর্কে এ ঘটনা প্রসিদ্ধ যে, বাগানের মালিক তাঁর কাছে মিষ্টি আপেল খেতে চাইলে কোন গাছের আপেল মিষ্টি তা নির্ণয় করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন। এ নিয়ে বাগানমালিক তাঁকে তিরস্কার করলে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, জনাব, আমার দায়িত্ব তো বাগানের পরিচর্যা করা, যার বিনিময়ে আপনি আমাকে বেতন দিয়ে থাকেন। কোন গাছের ফল কেমন, তা চেখে দেখার তো কোনও বৈধতা আমার ছিল না।
উল্লেখ্য, হাদীছে খাওয়ার কথা বলা হলেও পান করাও এর অন্তর্ভুক্ত। এমনিভাবে জীবনরক্ষার জন্য আরও যা-কিছু প্রয়োজন তার সবই নিজ চেষ্টায় রোজগারের মাধ্যমে সম্পন্ন করাও এর মধ্যে রয়েছে। সারকথা, জীবনের যাবতীয় জরুরত মেটানোর জন্য মুমিনগণ যেন অন্যের উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজ চেষ্টায় আয়-রোজগার করে, হাদীছটিতে সেই উৎসাহই দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে খাওয়ার কথা বলা হয়েছে এজন্য যে, এটাই মানুষের সর্বাপেক্ষা বেশি জরুরি।
হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম ছিলেন বনী ইসরাঈলের একজন নবী। তিনি হযরত ইয়া'কুব আলাইহিস সালামের পুত্র ইয়াহুদার বংশে জন্মগ্রহণ করেন। এ বংশে বহু নবীর জন্ম হয়েছে। তাঁর আগে এ বংশে কেউ রাজত্ব লাভ করেনি। রাজত্বের অধিকারী হতো হযরত ইয়া'কূব আলাইহিস সালামের অপর পুত্র ইফরাঈমের বংশ। এভাবে নবুওয়াত ও রাজত্ব বনী ইসরাঈলের দুই শাখায় ভাগ হয়ে গিয়েছিল। সর্বপ্রথম হযরত দাউদ আলাইহিস সালামের মধ্যেই রাজত্ব ও নবুওয়াত উভয় মর্যাদার সম্মিলন ঘটে। কুরআন মাজীদে তাঁকে 'খলীফা' উপাধিতেও ভূষিত করা হয়েছে।
তিনি বনী ইসরাঈলের বাদশা হয়েছিলেন খৃষ্টপূর্ব আনুমানিক ১০০০ সনের দিকে। তখন ফিলিস্তীনের অধিকাংশ এলাকা আমালিকা বংশের দখলে ছিল। তাদের দখল থেকে ফিলিস্তীনকে মুক্ত করার জন্য আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে তালুতকে বনী ইসরাঈলের বাদশা বানিয়ে দেওয়া হয়। তিনি তার বাহিনী নিয়ে আমালিকা বংশের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম তখন এক নওজোয়ান। তিনিও তালুতের নেতৃত্বে এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। উভয়পক্ষে ঘোরতর যুদ্ধ হয়। শেষপর্যন্ত আমালিকা বংশের পরাজয় ঘটে। তাদের রাজা নিহত হয়। তার নাম ছিল জালুত। তাকে হত্যা করেছিলেন হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম। তালুতের মৃত্যুর পর হযরত দাউদ আলাইহিস সালামই ফিলিস্তীনের রাজত্ব লাভ করেন। তিনি খৃষ্টপূর্ব আনুমানিক ৯৬৩ সনে ইন্তিকাল করেন। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় ১০০ বছর। তিনি ৪০ বছর ফিলিস্তীন শাসন করেন।
তাঁর একটি মু'জিযা ও অলৌকিকত্ব ছিল লোহা নরম হয়ে যাওয়া। তাঁর হাতের স্পর্শমাত্র শক্ত লোহা মোমের মতো নরম হয়ে যেত। তিনি তা দ্বারা বর্ম ও বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরি করতেন। কুরআন মাজীদে তাঁর সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে-
وَاذْكُرْ عَبْدَنَا دَاوُودَ ذَا الْأَيْدِ إِنَّهُ أَوَّابٌ (17) إِنَّا سَخَّرْنَا الْجِبَالَ مَعَهُ يُسَبِّحْنَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِشْرَاقِ (18) وَالطَّيْرَ مَحْشُورَةً كُلٌّ لَهُ أَوَّابٌ (19) وَشَدَدْنَا مُلْكَهُ وَآتَيْنَاهُ الْحِكْمَةَ وَفَصْلَ الْخِطَابِ (20)
এবং স্মরণ করো আমার বান্দা দাউদ (আলাইহিস সালাম)-কে, যে ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। নিশ্চয়ই সে ছিল অত্যন্ত আল্লাহ-অভিমুখী। আমি পর্বতমালাকে নিয়োজিত করেছিলাম, যাতে তারা তার সঙ্গে সন্ধ্যাবেলা ও সূর্যোদয়কালে তাসবীহ পাঠ করে। এবং পাখিদেরকেও, যাদেরকে একত্র করে নেওয়া হতো। তারা তার সঙ্গে মিলে আল্লাহর (অভিমুখী হয়ে) যিকিরে লিপ্ত থাকত। আমি তার রাজত্বকে করেছিলাম সুদৃঢ় এবং তাকে দান করেছিলাম জ্ঞানবত্তা ও মীমাংসাকর বাগ্মিতা।(সূরা সোয়াদ (৩৮), আয়াত ১৭-২০)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-
وَأَلَنَّا لَهُ الْحَدِيدَ (10) أَنِ اعْمَلْ سَابِغَاتٍ وَقَدِّرْ فِي السَّرْدِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا
আর আমি তার জন্য লোহাকে নরম করে দিয়েছিলাম। যাতে তুমি পূর্ণ মাপের বর্ম তৈরি কর এবং কড়াসমূহ জোড়ার ক্ষেত্রে পরিমাপ রক্ষা কর। আর তোমরা সকলে সৎকর্ম করো।(সূরা সাবা' (৩৪), আয়াত ১০-১১)
আলোচ্য হাদীছ বলছে যে, হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম নিজ হাতে পরিশ্রম করে কামাই-রোজগার করতেন এবং তা দ্বারা জীবন নির্বাহ করতেন। অর্থাৎ একজন শক্তিশালী ও বড় বাদশা হওয়া সত্ত্বেও তিনি রাজকোষ থেকে কিছু গ্রহণ করতেন না। জীবন নির্বাহের জন্য নিজ রোজগারের উপর নির্ভর করতেন। কীভাবে রোজগার করতেন, তা এ আয়াত দ্বারা জানা যাচ্ছে। অর্থাৎ তিনি লোহা দ্বারা আসবাবপত্র তৈরি করে তার বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করতেন।
বর্তমানে যারা লোহার বা কামার, অর্থাৎ যারা লৌহকর্মকে পেশা বানিয়ে তা দ্বারা জীবন নির্বাহ করে, তাদের জন্য হযরত দাউদ আলাইহিস সালামের জীবনে আদর্শ রয়েছে। তাদের পেশা কেবল বৈধই নয়; বরং একজন মহান নবীর কাজও বটে। তাই এরূপ পেশাদারদের অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখা উচিত নয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. জীবনধারণের প্রয়োজনসমূহ মেটানোর জন্য অন্যের গলগ্রহ না হয়ে সরাসরি নিজেই আয়-রোজগার করা বাঞ্ছনীয়।
খ. জীবনধারণের জন্য উপার্জনের কোনও মাধ্যম গ্রহণ করা তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী নয়; বরং এটা মুসলিম মহাপুরুষদের আদর্শ।
গ. পূর্ববর্তী নবীগণও আমাদের জন্য অনুসরণীয়।
ঘ. কোনও বৈধ পেশাকে তুচ্ছ মনে করা উচিত নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)