রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

رياض الصالحين من كلام سيد المرسلين

ভূমিকা অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস ৬৭৯ টি

হাদীস নং: ৬৬১
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায়: ৭৯ ন্যায়পরায়ণ শাসক
জান্নাতের অধিকারী তিন শ্রেণির লোকের পরিচয়
হাদীছ নং: ৬৬১

হযরত ইয়ায ইবন হিমার রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, জান্নাতবাসী হবে তিন শ্রেণির লোক- তাওফীকপ্রাপ্ত ন্যায়পরায়ণ শাসক, প্রত্যেক আত্মীয় এবং মুসলিমের জন্য নরম মনের দয়ালু ব্যক্তি এবং পরিবার-পরিজনওয়ালা এমন চরিত্রবান ব্যক্তি, যে অন্যের কাছে চাওয়া হতে নিজ সম্মান রক্ষা করে। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ২৮৬৫; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৭৪৫৩; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৯৯২; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ২০১৬১; মুসনাদুল বাযযার : ৩৪৯১)
مقدمة الامام النووي
79 - باب الوالي العادل
661 - وعن عِياضِ بن حِمارٍ - رضي الله عنه - قَالَ: سَمِعْتُ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - يقول: «أهلُ الجَنَّةِ ثَلاَثَةٌ: ذُو سُلطانٍ مُقْسِطٌ مُوَفَّقٌ، وَرَجُلٌ رَحيمٌ رَقِيقُ القَلْبِ لكُلِّ ذي قُرْبَى ومُسْلِمٍ، وعَفِيفٌ مُتَعَفِّفٌ ذو عِيالٍ». رواه مسلم. (1)
হাদীস নং: ৬৬২
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহর অবাধ্যতা হয় না এমন কাজে শাসকের আনুগত্য করার আবশ্যিকতা এবং আল্লাহর অবাধ্যতা হয় এমন কাজে আনুগত্য করার নিষিদ্ধতা

ইসলামে ঐক্য ও সম্প্রীতি রক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খলীফা ও আমীর ঐক্যের প্রতীক। তার প্রতি আনুগত্য রক্ষা করার দ্বারা উম্মতের ঐক্য প্রতিষ্ঠিত থাকে। তাই ইসলাম আমীরের আনুগত্যের প্রতি জোর তাগিদ করেছে। প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আমীরের আনুগত্য করা অবশ্যকর্তব্য। আমীরের যে আদেশ শরী'আতবিরোধী না হয়, তা অবশ্যই পালন করতে হবে।
আমীর যদি খলীফা বা খলীফার প্রতিনিধি হয়, সে ক্ষেত্রে যেমন তার আনুগত্য করা জরুরি, তেমনি যে আমীর নিজ ক্ষমতাবলে জনগণের উপর চেপে বসেছে, উম্মতের ঐক্য রক্ষার স্বার্থে তার আনুগত্য করাও একান্ত কর্তব্য। এরূপ শাসক যদি আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত অনুযায়ী দেশ শাসন না করে, তবে সে ফাসেক ও গুনাহগার বটে, কিন্তু তা সত্ত্বেও তার আনুগত্য করা ওয়াজিব, যতক্ষণ না তার দ্বারা সুস্পষ্ট কুফর প্রকাশ পায়। বিভিন্ন হাদীছ দ্বারা বোঝা যায়, এরূপ ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা জায়েয নয়। সে একজন ফাসেক শাসক হলেও তার যে আদেশ শরী'আতবিরোধী না হয়, সে আদেশ পালন করা জরুরি। হাঁ, নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী হিকমত ও কল্যাণকামিতার সঙ্গে তাকে সৎকাজের আদেশ করা ও অসৎকাজে নিষেধ করার দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং দু'আ করতে হবে আল্লাহ তা'আলা যেন তাকে আত্মসংশোধনের তাওফীক দেন।
এতে কোনও সন্দেহ নেই যে, ধর্মনিরপেক্ষতা একটি কুফরী মতবাদ। এ নীতিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করা কুফরী কর্ম। তবে ফুকাহায়ে কেরাম কুরআন-সুন্নাহর দৃষ্টিকোণ থেকে স্পষ্ট করেছেন যে, কোনও কাজ কুফরী হওয়া এক কথা, আর সে কাজের কর্তাকে কাফের সাব্যস্ত করা আরেক কথা। যে-কোনও কাজ কুফরী হলেই তার কর্তাকে কাফের বলে ফাতওয়া দেওয়া যায় না। কাউকে কাফের ফাতওয়া দেওয়ার জন্য অনেকগুলো শর্ত আছে। ফুকাহায়ে কেরাম ফিকহী গ্রন্থাবলিতে তা সুস্পষ্টরূপে উল্লেখ করেছেন। এমনিভাবে তারা এমন কিছু বাধা বা প্রতিবন্ধকতার কথাও উল্লেখ করেছেন, যেগুলোর কোনও একটি পাওয়া গেলে কাউকে কাফের বলে ফাতওয়া দেওয়া যায় না। অর্থাৎ এক ব্যক্তির মধ্যে কাফের ফাতওয়া দেওয়ার কোনও কারণ হয়তো লক্ষ করা যাচ্ছে। অন্যদিক থেকে যেসকল বাধার কারণে কাউকে কাফের বলা যায় না, তার কোনও একটিও তার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় কুফরী ফাতওয়া দেওয়ার কারণ বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও তাকে কাফের বলা যাবে না।
এরূপ প্রতিবন্ধকতাসমূহের মধ্যে একটি হচ্ছে জাহালাত বা অজ্ঞতা। হাদীছে এক পিতা সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে, সে তার পুত্রদেরকে অসিয়ত করেছিল তারা যেন তার মৃত্যুর পর তাকে পুড়ে ছাই করে জলে-স্থলে ছড়িয়ে দেয়। এর কারণ হিসেবে সে বলেছিল যে, সে একজন মস্ত পাপী। আল্লাহ তা'আলা তাকে ধরতে পারলে কঠিন শাস্তি দেবেন। তাই তাঁর ধরা থেকে বাঁচার জন্যই এ ব্যবস্থা। নিঃসন্দেহে এটি তার একটি কুফরী ধারণা। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাকে কাফের সাব্যস্ত করা হয়নি। বরং সে আল্লাহ তা'আলাকে ভয় করেছিল বলে আল্লাহ তা'আলা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। এর কারণ এই যে, সে ওইরকম ধারণা করেছিল নিতান্তই জাহালাতের কারণে। সুতরাং জাহালাত বা অজ্ঞতা একটি প্রতিবন্ধকতা, যদ্দরুন কাউকে কাফের সাব্যস্ত করা যায় না, যদিও কাফের সাব্যস্ত করার কোনও কারণ তার মধ্যে পাওয়া যায়।
কাজেই কাউকে কাফের সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে এ মূলনীতিটি অবশ্যই সামনে রাখা দরকার। অন্যথায় এমন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে যে, শরী'আত বিশেষ ওজরের কারণে যাকে কাফের সাব্যস্ত করে না, আমরা তাকে স্থূল চিন্তার বশবর্তীতে কাফের ফাতওয়া দিয়ে দিলাম। অথচ কোনও অমুসলিমকে মুসলিম বলাটা যেমন গুরুতর অপরাধ, কোনও মুসলিম ব্যক্তিকে অমুসলিম বলে ঘোষণা করা তারচে' লঘু অপরাধ নয়।
সকল বিচার ও বিবেচনায় যার কুফর নিশ্চিত হয়ে যায়, সেরকম ব্যক্তি কিছুতেই মুসলিম জনগোষ্ঠীর আমীর ও শাসক হওয়ার উপযুক্ততা রাখে না। এরূপ ব্যক্তি যদি ক্ষমতায় থাকে, তবে তার আনুগত্য করা জরুরি নয়; বরং তাকে ক্ষমতাচ্যুত করাই জরুরি। উম্মতের কর্তব্য সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তাকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে কোনও যোগ্য ও আল্লাহভীরু ব্যক্তিকে শাসকরূপে মনোনীত করা। হাঁ, এ প্রচেষ্টা অবশ্যই সম্মিলিত হওয়া দরকার। বিচ্ছিন্নভাবে নয়। এরূপ চেষ্টা বিচ্ছিন্নভাবে হলে তা অধিকতর বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। কাফের শাসককে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য এটাও বিবেচনায় রাখা জরুরি যে, তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার শক্তি আসলে আছে কি না এবং ক্ষমতাচ্যুত করার প্রচেষ্টা আরও বড় অনিষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াবে কি না। আরও বড় অনিষ্ট এভাবে হতে পারে যে, উৎখাতচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর সেই শাসক অধিকতর জেদী হয়ে উঠবে। তখন সে কেবল আন্দোলনকারীদেরকেই দমন করবে না; নির্বিচারে সকল ইসলামপন্থীর উপর দমন-নিপীড়ন চালাবে। ঘটাবে ব্যাপক রক্তপাত। তার সৈন্য-সমর্থকদের হাতে। দীনদার নারীগণও নির্যাতনের শিকার হবে। হয়তো এমন সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনাও গ্রহণ করবে, যদ্দরুন নতুন প্রজন্ম পুরোপুরি দীনবিমুখ; বরং দীনবিদ্বেষীরূপে গড়ে উঠবে। আর এভাবে দেশব্যাপী ইসলামের অস্তিত্বই হুমকির মধ্যে পড়ে যাবে। এমনও আশঙ্কা থাকে যে, সেই শাসককে হয়তো উৎখাত করা যাবে, কিন্তু তার স্থানে এমন কেউ গদিতে চাপবে যে, মিল্লাত ও জাতির জন্য আরও বেশি বিপজ্জনক হবে।
বনূ উমায়্যা ও আব্বাসিয়া আমলে জালেম শাসকদের উৎখাত করার জন্য একাধিকবার চেষ্টা চালানো হয়েছে। অনেক বড় বড় আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু তার সবগুলোই ব্যর্থ হয়েছে। সে ব্যর্থতার পরিণতি হয়েছে ভয়াবহ। কেবল আন্দোলনকারী উলামাই নয়: সাধারণ জনগণকেও জান-মাল ও ইজ্জত-সম্ভ্রম দিয়ে সে আন্দোলনের মাশুল গুনতে হয়েছে। সেসব আন্দোলনের পরিণতি পর্যালোচনা করে পরবর্তীকালের উলামায়ে কেরাম। এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, এ জাতীয় আন্দোলন কিছুতেই বাঞ্ছনীয় নয়।
এ কথা সত্য যে, বেদীন ও বেঈমান শাসকদের অধীনতা স্বীকার কিছুতেই কাম্য হতে পারে না। তাই তাদেরকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা অবশ্যই করা চাই। তবে সে চেষ্টার বেলায় আপন শক্তি-সামর্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় রাখাও জরুরি। সেইসঙ্গে সে প্রচেষ্টার ফলাফল কী দাঁড়াতে পারে তাও ভেবে দেখতে হবে। হঠকারিতা কিছুতেই কাম্য নয়। হঠকারিতা কখনও সুফল বয়ে আনে না। যতদিন না প্রয়োজনীয় শক্তি অর্জিত হবে এবং এই আস্থাও জন্মাবে যে, ক্ষমতার পরিবর্তন অবশ্যই সুফল বয়ে আনবে, ততোদিন অদূরদর্শী ব্যবস্থাগ্রহণ হতে বিরত থেকে বর্তমান শাসকের আনুগত্য করে যাওয়াই বাঞ্ছনীয়। কেননা মূলনীতি এটাই যে, দুই অনিষ্টের উভয়টি যদি একত্রে পরিত্যাগ করা সম্ভব না হয়, তবে তুলনামূলক যেটি বেশি অনিষ্টকর সেটি পরিত্যাগ করে কম অনিষ্টকরটি মেনে নেওয়া হবে।
সুতরাং যতদিন পর্যন্ত জালেম ও কাফের শাসককে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব না হয়, ততদিন জায়েয ক্ষেত্রসমূহে তাদের আনুগত্য করে যেতে হবে। এটাই মিল্লাত ও জাতির জন্য নিরাপদ। নাজায়েয ক্ষেত্রসমূহে কী করণীয়, তা পরিবেশ-পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। তবে সর্বাবস্থায় নিজ ঈমান-আমলের হেফাজত করা জরুরি। বলাবাহুল্য, এরূপ শাসকদের অধীনতা থেকে মুক্তিলাভের লক্ষ্যে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মক্কী জীবনের মতো পূর্ণাঙ্গ দাওয়াতী প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
যাহোক আমীর ও শাসকের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ইসলাম এর প্রতি বিশেষ তাগিদ করেছে। কুরআন ও হাদীছে এ সম্পর্কে রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা। সে সম্পর্কেই রিয়াযুস সালেহীনের বর্তমান পরিচ্ছেদ।


‘আল্লাহর অবাধ্যতা হয় না এমন কাজে শাসকের আনুগত্য করার আবশ্যিকতা…’ সম্পর্কিত একটি আয়াত

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ
অর্থ : হে মুমিনগণ! তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর, তাঁর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা এখতিয়ারধারী তাদেরও।( সূরা নিসা (৪), আয়াত ৫৯)

ব্যাখ্যা
এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা প্রথমত তাঁর আনুগত্য করার হুকুম দিয়েছেন। তারপর তাঁর রাসূলের আনুগত্য করার হুকুম দিয়েছেন। তৃতীয় পর্যায়ে হুকুম দিয়েছেন শাসকের আনুগত্য করার। লক্ষণীয়, আল্লাহ তা'আলার আনুগত্য করার হুকুম দেওয়ার জন্য যেমন স্বতন্ত্রভাবে أَطِيعُوا (আনুগত্য করো) আজ্ঞাসূচক ক্রিয়া ব্যবহার করা হয়েছে, তেমনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার হুকুম দেওয়ার জন্যও স্বতন্ত্রভাবে أَطِيعُوا (আনুগত্য করো) আজ্ঞাসূচক ক্রিয়া ব্যবহার করা হয়েছে। তারপর তৃতীয় পর্যায়ে শাসকের আনুগত্য করার জন্য যে হুকুম দেওয়া হয়েছে, তাতে আলাদাভাবে اَطِيْعُوا (আনুগত্য করো) আজ্ঞাসূচক ক্রিয়া ব্যবহার করা হয়নি। বরং এ হুকুমকে রাসূলের আনুগত্য করার হুকুমের অধীন করে দেওয়া হয়েছে। এর দ্বারা বোঝা যায় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করা নিঃশর্তভাবে জরুরি। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা যাই হুকুম করেন তা প্রশ্নাতীতভাবে আমাদেরকে মানতে হবে। তেমনি তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও যে হুকুম করেন, তাও বিনাবাক্যে মানা জরুরি। কিন্তু শাসক যে হুকুম করেন, তা নিঃশর্তভাবে পালন করা জরুরি নয়। বরং তা মানতে হবে তখনই, যখন তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশের অধীনে বা তার অনুকূল হয়। যদি তার বিরোধী হয়, তবে তা কিছুতেই মানা যাবে না।
আল্লাহ তা'আলার আদেশ-নিষেধ আমরা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে পেয়েছি। তার প্রায় সবটাই কুরআন মাজীদে বর্ণিত হয়েছে। সেসব আদেশ-নিষেধ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কথা ও কাজের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন। সে ব্যাখ্যা হাদীছ ও সুন্নাহ নামে পরিচিত। কিছু কিছু আদেশ-নিষেধ হাদীছেও আছে। কুরআন সরাসরি ওহী। হাদীছ পরোক্ষ ওহী। কুরআন বোঝার জন্য হাদীছের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। কুরআন ও হাদীছ উভয়টাই আমাদের জন্য অনুসরণীয়। উভয়ের অনুসরণ দ্বারাই আল্লাহ তা'আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করা সম্ভব হয়।
এ আয়াত বলছে, আল্লাহর আনুগত্যের পাশাপাশি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করাও জরুরি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ আনুগত্য প্রকৃতপক্ষে আল্লাহরই আনুগত্য। আল্লাহ তা'আলা অন্যত্র বলেন-
مَنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ
‘যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করে, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল।(সূরা নিসা (৪), আয়াত ৮০)
বলাবাহুল্য, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করা কেবল তাঁর সুন্নাহর আনুগত্যের মাধ্যমেই সম্ভব। যে ব্যক্তি সুন্নাহ প্রত্যাখ্যান করবে, তার দ্বারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য নয়; বরং তাঁর অবাধ্যতাই হবে। আর এ আয়াতের ভাষ্যমতে যেহেতু রাসূলের আনুগত্য আল্লাহরই আনুগত্য, সেহেতু এটাও অনিবার্য হয়ে যায় যে, যে ব্যক্তি রাসূলের অবাধ্যতা করবে, তা আল্লাহরই অবাধ্যতা বলে গণ্য হবে। সুতরাং সুন্নাহকে প্রত্যাখ্যান করার দ্বারা কেবল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরই অবাধ্যতা হবে না, আল্লাহ তা'আলারও অবাধ্যতা হয়ে যাবে।
আয়াতটিতে দ্বিতীয় পর্যায়ে বলা হয়েছে- وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ 'এবং তোমাদের মধ্যে যারা এখতিয়ারধারী তাদেরও (আনুগত্য করো)'। اُولِي অর্থ ওয়ালা, ধারক, অধিকারী। الأمر এর অর্থ অবস্থা, বিষয়, আদেশ, কর্তৃত্ব। কাজেই اُولِي اَلْاَمْرِ অর্থ কর্তৃত্ববান, এখতিয়ারধারী, যাদের উপর কোনও বিষয়ের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব অর্পিত। সুনির্দিষ্টভাবে এর দ্বারা কাদেরকে বোঝানো হয়েছে, সে বিষয়ে দু'রকম মত পাওয়া যায়। অনেকের মতে এর দ্বারা শাসক শ্রেণি অর্থাৎ যাদের হাতে রাষ্টপরিচালনার দায়িত্ব ন্যাস্ত, তাদেরকে বোঝানো হয়েছে। আবার অনেকের মতে এর দ্বারা বোঝানো হয়েছে উলামা, ফুকাহা ও দীনের যারা পথপ্রদর্শক তাদেরকে।
প্রকৃতপক্ষে উভয় মতের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। মানুষ যাদের আদেশ-নিষেধ মেনে চলে, তাদের সকলেই এর অন্তর্ভুক্ত। তাদের শীর্ষে রয়েছেন নবী-রাসূলগণ। সাধারণ-বিশেষ সমস্ত মানুষের প্রকাশ্য ও গুপ্ত তথা বৈষয়িক ও আধ্যাত্মিক সকল বিষয়ে তাঁদের আদেশ প্রযোজ্য হয়। সকল মানুষের কর্তব্য তাঁদের সে আদেশ মেনে চলা। দ্বিতীয় হচ্ছে শাসক শ্রেণি। তাদের আদেশ কার্যকর হয় সাধারণ-বিশেষ সমস্ত মানুষের কেবল প্রকাশ্য বিষয়ে, গুপ্ত তথা আধ্যাত্মিক বিষয়ে নয়। তৃতীয় হচ্ছে তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওয়ারিছ। তাঁর ওয়ারিছ বা প্রতিনি হিসেবে তাদের কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক নির্দেশনা মেনে চলাও সকলের জরুরি। ব্যাপক অর্থে যারা ওয়াজ-নসীহত করা কিংবা যারা সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিয়ে করার দায়িত্ব পালন করেন, তারাও এর অন্তর্ভুক্ত। এরা সকলেই أولى الأمر বা এখতিয়ার ও কর্তৃত্বধারী। তবে নবী-রাসূলের কর্তৃত্ব অন্যসব মাখলুকের উপরে। তাঁদের আনুগত করা সকলের জন্য নিঃশর্তভাবে জরুরি। তাঁদের পরে শাসকশ্রেণির অবস্থান। তাদে কর্তৃত্ব অন্যদের তুলনায় বেশি শক্তিশালী। কেননা তাদের আদেশ যদি কুরআন-সুন্নাহর বিরোধী না হয়, তবে তা মানা সকলের জন্য বাধ্যতামূলক। কারও জন্য তা অমান করার অবকাশ নেই। অমান্য করলে সে আইনের আওতায় চলে যাবে ও শাস্তির সম্মুখীন হবে। অপরদিকে উলামা-ফুকাহা ও দীনী পথপ্রদর্শকদের কর্তৃত্ব সেরকম বাধ্যতামূলক নয়। অর্থাৎ কেউ তা অমান্য করলে এসকল কর্তৃত্ববানদের পক্ষ থেকে তাদের শাস্তিপ্রায় হওয়ার অবকাশ নেই, যদিও শর'ঈ বিধান অমান্য করলে আখিরাতে শাস্তির ব্যবস্থ রয়েছে এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে দুনিয়ায়ও ইসলামী আদালতের শাস্তিদানেদ এখতিয়ার আছে।
আয়াতটি এখতিয়ারধারী বা কর্তৃত্ববানদের আনুগত্য করার হুকুম দিয়েছে। কাজেই উলামা-মাশায়েখ, মুফতী ও ফকীহগণও যেহেতু এর অন্তর্ভুক্ত, তাই দুনিয়ার আদালতে বিচারের সম্মুখীন হতে হোক বা নাই হোক, আখিরাতের আদালত এড়ানো যেহেতু কারও পক্ষে সম্ভব নয়, অতএব সেদিনের নাজাত ও মুক্তির আশায় সকলেরই কর্তব্য তাদের দীনী নির্দেশনা মেনে চলা, তাদের নসীহতের উপর আমল করা ও জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাদের পরামর্শ গ্রহণ করা।
ক্ষমতাসীন ও শাসকবর্গের আনুগত্য করাও এ আয়াতের নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত। বলা হয়েছে- এবং তোমাদের মধ্যে যারা এখতিয়ারধারী তাদেরও (আনুগত্য করো)। কাজেই শাসক যদি মুসলিম হয় এবং তার আদেশ মুসলিম জনসাধারণের কল্যাণার্থে হয়, তবে তার আনুগত্য করা অবশ্যকর্তব্য। এটা যেহেতু কুরআনের হুকুম, তাই মুসলিম শাসকের বৈধ আদেশ অর্থাৎ যে আদেশ শরী'আতবিরোধী নয় তা অমান্য করা কুরআনের হুকুম অমান্য করারই নামান্তর হবে। সেই হিসেবে সে শাসকের আদেশ মান্য করার দীনী বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। তার আদেশ অমান্য করা যেমন সরকারের আইনের বরখেলাফ, তেমনি তা শরী'আতেরও বরখেলাফ বটে। কাজেই মুসলিম সরকারের বৈধ আইন অমান্য করা শরী'আতের দৃষ্টিতেও জায়েয নয়। এ বিষয়ে সকলের সচেতনতা জরুরি।

আয়াতটির শিক্ষা
ক. আল্লাহ তা'আলার আনুগত্য তথা কুরআন মাজীদের প্রতিটি আদেশ-নিষেধ মেনে চলা ফরয ও অবশ্যকর্তব্য।
খ. রাসূলের আনুগত্য করাও আল্লাহর হুকুম। কাজেই তাঁর সুন্নাহ মেনে চলাও প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্যকর্তব্য।
গ. সরকারের বৈধ হুকুম অমান্য করা যাবে না। তা অমান্য করার দ্বারা কুরআনের আদেশ অমান্য করা হয়।
ঘ. উলামা-মাশায়েখ ও দীনের পথপ্রদর্শকগণ কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক যে নির্দেশনা দিয়ে থাকেন, প্রকৃতপক্ষে তা যেহেতু কুরআন-সুন্নাহরই নির্দেশনা, তাই তা মেনে চলা সকলের জন্য জরুরি।
পাপকর্মের হুকুমে শাসকের আনুগত্য না করা অন্য সকল ক্ষেত্রে আনুগত্য করা
হাদীছ নং: ৬৬২

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির (শাসকের আদেশ) শ্রবণ ও আনুগত্য করা অবশ্যকর্তব্য, সে যা পসন্দ করে তাতেও এবং যা অপসন্দ করে তাতেও, যতক্ষণ না পাপকর্মের আদেশ করা হয়। যখন কোনও পাপকর্মের আদেশ করা হবে, তখন কোনও শ্রবণ ও আনুগত্য নেই। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৭১৪৪; সহীহ মুসলিম: ১৮৩৯; জামে' তিরমিযী: ১৭০৭; সুনানে আবু দাউদ: ২৬২৬; সুনানে ইবন মাজাহ ২৪৬৪; সুনানে নাসাঈ ৬২০৬; মুসনাদে আহমাদ: ৪৬৬৮: বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা ৫৩৩৪; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ১২৯৭; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা: ৩৩৭০৭)
مقدمة الامام النووي
80 - باب وجوب طاعة ولاة الأمر في غير معصية وتحريم طاعتهم في المعصية
قَالَ الله تَعَالَى: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الأَمْرِ مِنْكُمْ} [النساء: 59].
662 - وعن ابن عمر رضي الله عنهما، عن النبيِّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «عَلَى المَرْءِ الْمُسْلِمِ السَّمْعُ والطَّاعَةُ فِيمَا أَحَبَّ وكَرِهَ، إِلاَّ أَنْ يُؤْمَرَ بِمَعْصِيةٍ، فَإذَا أُمِرَ بِمَعْصِيةٍ فَلاَ سَمْعَ وَلاَ طَاعَةَ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
হাদীস নং: ৬৬৩
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৮০ আল্লাহর অবাধ্যতা হয় না এমন কাজে শাসকের আনুগত্য করার আবশ্যিকতা এবং আল্লাহর অবাধ্যতা হয় এমন কাজে আনুগত্য করার নিষিদ্ধতা
সামর্থ্য অনুযায়ী আমীর ও শাসকের আনুগত্য করার বাধ্যবাধকতা
হাদীছ নং: ৬৬৩

হযরত ইবনে উমর রাযি. বলেন, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইয়ি ওয়াসাল্লামের নিকট শ্রবণ করা ও আনুগত্য করার উপর বায়আত গ্রহণ করতাম, তখন তিনি আমাদের বলতেন, তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৭২০২; সহীহ মুসলিম: ১৮৬৭; মুসনাদে আবু দাউদ তয়ালিসী: ১৯৯২ মুসনাদুল হুমায়দী: ৬৫৪; মুসনাদে আহমাদ: ৫৫৩১; সুনানে ইবন মাজাহ: ২৮৬৮; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৪৫৪৮; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ৫৩০২; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ২৪৫৪)
مقدمة الامام النووي
80 - باب وجوب طاعة ولاة الأمر في غير معصية وتحريم طاعتهم في المعصية
663 - وعنه، قَالَ: كُنَّا إِذَا بَايَعْنَا رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - عَلَى السَّمعِ والطَّاعَةِ، يَقُولُ لَنَا: «فِيمَا اسْتَطَعْتُمْ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
হাদীস নং: ৬৬৪
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৮০ আল্লাহর অবাধ্যতা হয় না এমন কাজে শাসকের আনুগত্য করার আবশ্যিকতা এবং আল্লাহর অবাধ্যতা হয় এমন কাজে আনুগত্য করার নিষিদ্ধতা
বিচ্ছিন্নতা অবলম্বন ও বিদ্রোহ করার অবৈধতা
হাদীছ নং: ৬৬৪

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আনুগত্য থেকে হাত সরিয়ে নেয়, সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সঙ্গে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, তার পক্ষে কোনও প্রমাণ থাকবে না। যে ব্যক্তি এরূপ অবস্থায় মারা যাবে যে, তার ঘাড়ে কোনও বায়'আত (আনুগত্যের শপথ) নেই, সে মারা যাবে জাহিলিয়াতের মৃত্যুতে। -মুসলিম
মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছে, যে ব্যক্তি জামাআত থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় মারা যাবে, সে মারা যাবে জাহিলিয়াতের মৃত্যুতে।
(সহীহ মুসলিম : ১৮৫১; মুসনাদে আবু দাউদ তয়ালিসী: ২০২৫; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা : ১৬৬১২; মুসনাদু ইবনিল জা‘দ: ২২৬৬; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ২৪৯০)
مقدمة الامام النووي
80 - باب وجوب طاعة ولاة الأمر في غير معصية وتحريم طاعتهم في المعصية
664 - وعنه، قَالَ: سَمِعْتُ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - يقول: «مَنْ خَلَعَ يَدًا مِنْ طَاعَةٍ لَقِيَ اللهَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ حُجَّةَ لَهُ، وَمَنْ مَاتَ وَلَيْسَ في عُنُقِهِ بَيْعَةٌ، مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً». رواه مسلم. (1)
وفي رواية لَهُ: «وَمَنْ مَاتَ وَهُوَ مُفَارِقٌ لِلجَمَاعَةِ، فَإنَّهُ يَمُوتُ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً».
«المِيتَةُ» بكسر الميم.
হাদীস নং: ৬৬৫
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৮০ আল্লাহর অবাধ্যতা হয় না এমন কাজে শাসকের আনুগত্য করার আবশ্যিকতা এবং আল্লাহর অবাধ্যতা হয় এমন কাজে আনুগত্য করার নিষিদ্ধতা
আমীর হাবশী গোলাম হলেও
হাদীছ নং: ৬৬৫

হযরত আনাস রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা শ্রবণ করো ও আনুগত্য করো, যদিও তোমাদের শাসক নিয়োগ করা হয় এমন হাবশী গোলামকে, যার মাথা একটা কিশমিশের মতো। -বুখারী
(সহীহ বুখারী : ৭১৪২; সুনানে ইবন মাজাহ : ২৮৫৯; মুসনাদুল বাযযার: ৭৩৭৪; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা : ১৬৬০৬; শু'আবুল ঈমান: ৬৯৬৫; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ২৪৫৩)
مقدمة الامام النووي
80 - باب وجوب طاعة ولاة الأمر في غير معصية وتحريم طاعتهم في المعصية
665 - وعن أنسٍ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «اسْمَعُوا وأطِيعُوا، وَإنِ استُعْمِلَ عَلَيْكُمْ عَبْدٌ حَبَشيٌّ، كأنَّ رأْسَهُ زَبيبةٌ». رواه البخاري. (1)
হাদীস নং: ৬৬৬
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৮০ আল্লাহর অবাধ্যতা হয় না এমন কাজে শাসকের আনুগত্য করার আবশ্যিকতা এবং আল্লাহর অবাধ্যতা হয় এমন কাজে আনুগত্য করার নিষিদ্ধতা
সর্বাবস্থায় শাসকের আনুগত্য করার বাধ্য-বাধকতা
হাদীছ নং: ৬৬৬

হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইছি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমার কর্তব্য শাসকের আদেশ শোনা ও মানা তোমার সংকটে-সচ্ছলতায়, তোমার সন্তষ্টিকালে ও অসন্তুষ্টিকালে এবং তোমার উপর অন্যরে প্রাধান্য দেওয়ার অবস্থায়ও। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ১৮৩৬; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা: ৩৭২৫৮; মুসনাদুল বাযযার: ৩৭৩৫; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৪৫৬২; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর : ১৯৬)
مقدمة الامام النووي
80 - باب وجوب طاعة ولاة الأمر في غير معصية وتحريم طاعتهم في المعصية
666 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «عَلَيْكَ السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ في عُسْرِكَ وَيُسْرِكَ، وَمَنْشَطِكَ وَمَكْرَهِكَ، وَأثَرَةٍ عَلَيْكَ». رواه مسلم. (1)
হাদীস নং: ৬৬৭
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৮০ আল্লাহর অবাধ্যতা হয় না এমন কাজে শাসকের আনুগত্য করার আবশ্যিকতা এবং আল্লাহর অবাধ্যতা হয় এমন কাজে আনুগত্য করার নিষিদ্ধতা
শাসকের আনুগত্য করার গুরুত্ব ও ফিতনা-ফাসাদকালে মানুষের করণীয়
হাদীছ নং: ৬৬৭

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রাযি. বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। তখন আমরা এক স্থানে যাত্রাবিরতি দিলাম। আমাদের কেউ তার তাঁবু ঠিক করছিল, কেউ তিরন্দাযী করছিল এবং কেউ তার পশুর যত্ন নিচ্ছিল। হঠাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘোষক ঘোষণা করল, নামায উপস্থিত। আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট সমবেত হলাম। তিনি বললেন, আমার পূর্বে যে-কেউ নবী হয়ে এসেছিলেন, তাঁর অবশ্যকর্তব্য ছিল আপন উম্মতকে নিজ জ্ঞান অনুযায়ী কল্যাণের পথ দেখানো এবং তাদেরকে আপন জ্ঞান অনুযায়ী অনিষ্ট সম্পর্কে সতর্ক করা। তোমরা এই যে উম্মত, এর নিরাপত্তা রাখা হয়েছে শুরুভাগে, এর শেষদিকে আঘাত হানবে বালা-মসিবত এবং এমনসব বিষয়, যাতে তোমরা আপত্তি জানাবে। আর আসবে এমনসব ফিতনা, যার কতক কতককে হালকা করে দেবে। এবং আসবে এমন ফিতনা, যখন মুমিন ব্যক্তি বলবে, এটা আমাকে ধ্বংস করে দেবে। তারপর সে ফিতনা দূর হয়ে যাবে। এবং ফিতনা, যখন মুমিন ব্যক্তি বলবে, তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত রাখা হোক এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হোক, তার মৃত্যু কেন এমন অবস্থায় আসে, যখন সে আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাস রাখে। আর সে যেন মানুষের সঙ্গে এমন ব্যবহার করে, যেমন ব্যবহার তার সঙ্গে করা হোক বলে সে কামনা করে। যে ব্যক্তি কোনও ইমামের আনুগত্য করার শপথ করেছে, তারপর সে তার হাতে হাত রেখেছে এবং অন্তরের ভালোবাসা প্রদান করেছে, সে যেন নিজ সাধ্যমতো তার আনুগত্য করে। যদি অন্য কেউ এসে তার সঙ্গে বিবাদ করে, তবে তোমরা সে অপর ব্যক্তির গর্দান উড়িয়ে দেবে। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম : ১৮৪৪; সুনানে নাসাঈ : ৪১৯১; মুসনাদে আহমাদ: ৬৫০৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা : ৩৭১০৯; সুনানে ইবন মাজাহ : ৩৯৫৬; সহীহ ইবনে হিব্বান : ৫৯৬১)
مقدمة الامام النووي
80 - باب وجوب طاعة ولاة الأمر في غير معصية وتحريم طاعتهم في المعصية
667 - وعن عبدِ اللهِ بن عمرو رضي الله عنهما، قَالَ: كنا مَعَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - في سَفَرٍ، فَنَزَلْنَا مَنْزِلًا، فَمِنَّا مَنْ يُصْلِحُ خِبَاءهُ، وَمِنّا مَنْ يَنْتَضِلُ، وَمِنَّا مَنْ هُوَ فِي جَشَرِهِ، إذْ نَادَى مُنَادِي رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم: الصَّلاةَ جَامِعَةً (1). فَاجْتَمَعْنَا إِلَى رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - فَقَالَ: «إنَّهُ لَمْ يَكُنْ نَبيٌّ قَبْلِي إِلاَّ كَانَ حَقًّا عَلَيْهِ أَنْ يَدُلَّ أُمَّتَهُ عَلَى خَيْرِ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ، وَيُنْذِرَهُم شَرَّ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ. وَإنَّ أُمَّتَكُمْ هذِهِ جُعِلَ عَافِيَتُهَا في أوَّلِهَا، وَسَيُصيبُ آخِرَهَا بَلاَءٌ وَأمُورٌ تُنْكِرُونَهَا، وَتَجِيءُ فِتنَةٌ يُرَقِّقُ بَعْضُهَا بَعْضًا، وَتَجِيءُ الفتنَةُ فَيقُولُ المُؤْمِنُ: هذه مُهلكتي، ثُمَّ تنكشفُ، وتجيء الفتنةُ فيقولُ المؤمنُ: هذِهِ هذِهِ. فَمَنْ أحَبَّ أَنْ يُزَحْزَحَ عَنِ النَّارِ، ويُدْخَلَ الجَنَّةَ، فَلْتَأتِهِ منيَّتُهُ وَهُوَ يُؤْمِنَ باللهِ واليَوْمِ الآخِرِ، وَلْيَأتِ إِلَى النَّاسِ الَّذِي يُحِبُّ أَنْ يُؤتَى إِلَيْهِ. وَمَنْ بَايَعَ إمَامًا فَأعْطَاهُ صَفْقَةَ يَدِهِ، وَثَمَرَةَ قَلْبِهِ، فَلْيُطِعْهُ إن استَطَاعَ، فإنْ جَاءَ آخَرُ يُنَازِعُهُ فَاضْرِبُوا عُنْقَ الآخَرِ». رواه مسلم. (2)
قَوْله: «يَنْتَضِلُ» أيْ: يُسَابِقُ بالرَّمْي بالنَّبل والنُّشَّاب. وَ «الجَشَرُ»: بفتح الجيم والشين المعجمة وبالراء، وهي: الدَّوابُّ الَّتي تَرْعَى وَتَبِيتُ مَكَانَهَا. وَقَوْلُه: «يُرَقِّقُ بَعْضُهَا بَعْضًا» أيْ: يُصَيِّرُ بَعْضُهَا بَعْضًا رقيقًا: أيْ خَفِيفًا لِعِظَمِ مَا بَعْدَهُ، فالثَّانِي يُرَقّقُ الأَوَّلَ. وقيل مَعنَاهُ يُشَوِّقُ بَعْضُهَا إِلَى بَعْضٍ بتحسينهَا وَتَسويلِهَا، وقيل: يُشبِهُ بَعْضُها بَعضًا.
হাদীস নং: ৬৬৮
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৮০ আল্লাহর অবাধ্যতা হয় না এমন কাজে শাসকের আনুগত্য করার আবশ্যিকতা এবং আল্লাহর অবাধ্যতা হয় এমন কাজে আনুগত্য করার নিষিদ্ধতা
শাসক জনগণের অধিকার আদায় না করলে জনগণ কি শাসকের আনুগত্য করা ছেড়ে দেবে
হাদীছ নং: ৬৬৮

হযরত আবূ হুনায়দা ওয়াইল ইবন হুজর রাযি. বলেন, সালামা ইবন ইয়াযীদ আল-জু‘ফী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, ইয়া নাবিয়্যাল্লাহ! বলুন তো, আমাদের উপর যদি এমন শাসকেরা চেপে বসে, যারা আমাদের কাছে তাদের অধিকার চাইবে অথচ তারা আমাদেরকে আমাদের অধিকার প্রদান করবে না, সে ক্ষেত্রে আপনি আমাদের কী আদেশ করেন? তিনি তাকে উপেক্ষা করলেন। তারপর সে তাঁকে ফের এ কথা জিজ্ঞেস করল।সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা শুনবে ও মানবে। কারণ তাদের পাপভার তাদের উপর এবং তোমাদের পাপভার তোমাদের উপর। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ১৮৪৬; জামে তিরমিযী: ২১৯৯; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা: ৩৭২৬১; মুসানাদে আবু দাউদ তয়ালিসী: ১১১২; তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত: ৬৭০৭: বায়হাকী আস সুনানুর কুবরা: ১৬৬২৪; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ২৪৬২)
مقدمة الامام النووي
80 - باب وجوب طاعة ولاة الأمر في غير معصية وتحريم طاعتهم في المعصية
668 - وعن أَبي هُنَيْدَةَ وَائِلِ بن حُجرٍ - رضي الله عنه - قَالَ: سَألَ سَلَمَةُ بن يَزيدَ الجُعفِيُّ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - فَقَالَ: يَا نَبِيَّ الله، أرأيتَ إنْ قامَت عَلَيْنَا أُمَرَاءُ يَسألُونَا حَقَّهُم، وَيمْنَعُونَا حَقَّنَا، فَمَا تَأْمُرُنَا؟ فَأَعْرَضَ عنه، ثُمَّ سَألَهُ، فَقَالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «اسْمَعْوا وَأَطِيعُوا، فإنَّمَا عَلَيْهِمْ مَا حُمِّلُوا، وَعَلَيْكُمْ مَا حملْتُمْ». رواه مسلم. (1)
হাদীস নং: ৬৬৯
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৮০ আল্লাহর অবাধ্যতা হয় না এমন কাজে শাসকের আনুগত্য করার আবশ্যিকতা এবং আল্লাহর অবাধ্যতা হয় এমন কাজে আনুগত্য করার নিষিদ্ধতা
অধিকারবঞ্চিতের কর্তব্য জালেম শাসকের আনুগত্য করা ও নিজ অধিকার আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা
হাদীছ নং: ৬৬৯

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আমার পর দেখা দেবে একের উপর অন্যকে প্রাধান্যদান (পক্ষপাত) এবং এমনসব বিষয়, যা তোমাদের কাছে আপত্তিকর বোধ হবে। তারা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের মধ্যে কেউ এরকম পরিস্থিতি পেলে তাকে কী হুকুম দেন? তিনি বললেন, তোমাদের কাছে তাদের যে প্রাপ্য আছে তা আদায় করবে আর তোমাদের যা প্রাপ্য তা আল্লাহর কাছে চাবে। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী : ৩৬০৩; সহীহ মুসলিম: ১৮৪৩; মুসনাদে আহমাদ: ৪১২৬; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা : ৩৭২৬৫; মুসানাদুল বাযযার: ১৭৬৮; মুসনাদে আবু ইয়া'লা মাওসিলী : ৫১৫৬)
مقدمة الامام النووي
80 - باب وجوب طاعة ولاة الأمر في غير معصية وتحريم طاعتهم في المعصية
669 - وعن عبد الله بن مسعود - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «إنَّهَا سَتَكُونُ بَعْدِي أثَرَةٌ (1) وَأُمُورٌ تُنْكِرُونَهَا!» قالوا: يَا رسول الله، كَيْفَ تَأمُرُ مَنْ أدْرَكَ مِنَّا ذَلِكَ؟ قَالَ: «تُؤَدُّونَ الحَقَّ الَّذِي عَلَيْكُمْ، وَتَسْأَلُونَ اللهَ الَّذِي لَكُمْ». متفقٌ عَلَيْهِ. (2)
হাদীস নং: ৬৭০
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৮০ আল্লাহর অবাধ্যতা হয় না এমন কাজে শাসকের আনুগত্য করার আবশ্যিকতা এবং আল্লাহর অবাধ্যতা হয় এমন কাজে আনুগত্য করার নিষিদ্ধতা
আল্লাহ তা'আলা ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অনুগত থাকার জন্য আমীর ও শাসকের আনুগত্য করার অপরিহার্যতা
হাদীছ নং: ৬৭০

হযরত আবু হুরায়রা রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যে ব্যক্তি আমার অবাধ্যতা করল, সে আল্লাহর অবাধ্যতা করল। যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য করল, সে আমার আনুগত্য করল। আর যে ব্যক্তি আমীরের অবাধ্যতা করল, সে আমারই অবাধ্যতা করল। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ২৯৫৭; সহীহ মুসলিম: ১৮৩৫; মুসনাদে আহমাদ: ৮১২০; মুসনাদুল বাযযার : ৯১২১; তাবারানী, মুসনাদুশ শামিয়্যীন: ৩২৫৫; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান : ৬৯৬৪)
مقدمة الامام النووي
80 - باب وجوب طاعة ولاة الأمر في غير معصية وتحريم طاعتهم في المعصية
670 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «مَنْ أطَاعَنِي فَقَدْ أطَاعَ اللهَ، وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ عَصَى اللهَ، وَمَنْ يُطِعِ الأَمِيرَ فَقَدْ أطَاعَنِي، وَمَنْ يَعصِ الأميرَ فَقَدْ عَصَانِي». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
হাদীস নং: ৬৭১
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৮০ আল্লাহর অবাধ্যতা হয় না এমন কাজে শাসকের আনুগত্য করার আবশ্যিকতা এবং আল্লাহর অবাধ্যতা হয় এমন কাজে আনুগত্য করার নিষিদ্ধতা
শাসকের জুলুম-নিপীড়নে ধৈর্যধারণের নির্দেশ
হাদীছ নং: ৬৭১

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি তার আমীরের মধ্যে কোনও জিনিস অপসন্দ করে, সে যেন ধৈর্যধারণ করে। কেননা যে ব্যক্তি ক্ষমতাসীন থেকে এক বিঘত পরিমাণও বের হয়ে যায়, সে মারা যায় জাহিলিয়াতের মৃত্যুতে। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৭০৫৩; সহীহ মুসলিম: ১৮৪৯)
مقدمة الامام النووي
80 - باب وجوب طاعة ولاة الأمر في غير معصية وتحريم طاعتهم في المعصية
671 - وعن ابن عباسٍ رضي الله عنهما: أن رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مَنْ كَره مِنْ أمِيرِهِ شَيْئًا فَلْيَصْبِرْ، فَإنَّهُ مَنْ خَرَجَ مِنَ السُّلطَانِ شِبْرًا مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
হাদীস নং: ৬৭২
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৮০ আল্লাহর অবাধ্যতা হয় না এমন কাজে শাসকের আনুগত্য করার আবশ্যিকতা এবং আল্লাহর অবাধ্যতা হয় এমন কাজে আনুগত্য করার নিষিদ্ধতা
শাসককে লাঞ্ছনা করার পরিণতি
হাদীছ নং: ৬৭২

হযরত আবূ বাকরা রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি ক্ষমতাসীনকে অপদস্থ করবে, আল্লাহ তা'আলা তাকে অপদস্থ করবেন। -তিরমিযী
(জামে' তিরমিযী: ২২২৪; মুসনাদে আবূ দাউদ তয়ালিসী: ৯২৮; মুসনাদুল বাযযার: ৩৬৭০; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা ১৬৬৫৯; শু'আবুল ঈমান: ৬৯৮৮; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ২৪৬২)

ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এটি একটি হাসান হাদীছ।
مقدمة الامام النووي
80 - باب وجوب طاعة ولاة الأمر في غير معصية وتحريم طاعتهم في المعصية
672 - وعن أَبي بكرة - رضي الله عنه - قَالَ: سَمِعْتُ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - يقول: «مَنْ أهانَ السُّلطَانَ أَهَانَهُ الله». رواه الترمذي، (1) وقال: «حديث حسن».
وفي الباب أحاديث كثيرة في الصحيح. وَقَدْ سبق بعضها في أبواب.
হাদীস নং: ৬৭৩
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ নেতৃত্ব প্রার্থনায় নিষেধাজ্ঞা, নেতৃত্ব যদি কারও জন্য অবধারিত না হয়ে যায় বা তার জন্য তা গ্রহণের প্রয়োজন দেখা না দেয়, তবে তা গ্রহণ থেকে বিরত থাকা প্রসঙ্গ

নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব এক গুরুদায়িত্ব ও কঠিন আমানত। এ আমানত রক্ষা করা সকলের পক্ষে সম্ভব হয় না। এর জন্য যে বিচক্ষণতা, সতর্কতা ও সাহসিকতার প্রয়োজন, তা সকলের থাকে না। তা থাকে না বিধায় নেতৃত্ব গ্রহণকারীদের অধিকাংশেই যথাযথভাবে এ দায়িত্ব পালন করতে পারে না। ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় নানারকম ত্রুটি হয়ে যায় আর তাতে করে জনগণের নানা অধিকার খর্ব হয়, তাদের হক নষ্ট হয়। ব্যক্তিগতভাবে একজন দ্বারা আরেকজনের হক নষ্ট হওয়াও অনেক কঠিন ব্যাপার। সেখানে নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বশীল ব্যক্তির দ্বারা যদি অন্যের হক নষ্ট হয়, তবে তা যে কত কঠিন ও কত গুরুতর, তা বলারই অপেক্ষা রাখে না। কেননা সে হক নষ্ট হওয়ার আওতায় পড়ে যায় বহু মানুষ। যার দ্বারা বহু লোকের অধিকার খর্ব হয়, আখিরাতে তার দুর্ভোগের কোনও সীমা থাকবে না। যে নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব এহেন পরিণতি ডেকে আনে, তা কতইনা ভয়ংকর! নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
لا خَيْرَ فِي الْإِمَارَةِ لِرَجُلٍ مُؤْمِنٍ
‘মুমিন ব্যক্তির জন্য নেতৃত্বের ভেতর কোনও কল্যাণ নেই।(বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা ২০২১৭; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৫২৮৫; আবূ নু‘আয়ম,মা‘রিফাতুস সাহাবা:২২৭৬)

কেবল কি আখিরাতের ক্ষতি? নেতৃত্ব পার্থিব জীবনের জন্যও এক মহামসিবত। এর পেছনে যে পড়ে, তার জান-মাল, ইজ্জত-আব্রু সবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাহ্যত এটা লোভনীয় ও আকর্ষণীয়। তাই অপরিণামদর্শী মানুষ বিপুল উদ্যমে এ পথে পা বাড়ায়। এর ভেতর যে বিপত্তি লুকানো থাকে, তা টের পায় পরে। যখন সেই বাস্তবতার মুখোমুখি হয়, তখন আফসোসের সীমা থাকে না। তাই তো নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীছে ইরশাদ করেন-
إِنَّكُمْ سَتَحْرِصُوْنَ عَلَى الْإِمَارَةِ، وَسَتَكُونُ نَدَامَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ، فَنِعْمَ الْمُرْضِعَةُ وَبِئْسَتِ الْفَاطِمَةُ

‘অচিরেই তোমরা নেতৃত্বের প্রতি লালায়িত হবে। অথচ কিয়ামতের দিন তা হবে অনুতাপের কারণ। এটা এক চমৎকার স্তন্যদায়ী এবং অতি নিকৃষ্ট স্তন্যনিবারক।(সহীহ বুখারী: ৭১৪৮; সুনানে নাসাঈ: ৫৩৮৫; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৪৪৮২)
অর্থাৎ নেতৃত্ব ও ক্ষমতার সঙ্গে অর্থ, প্রতিপত্তি, আনন্দ, ভোগ-বিলাস ইত্যাদি সবই আছে। নেতৃত্ব লাভকারী এসব পায় ও চমৎকৃত হয়। কিন্তু তা কতদিন? একদিন না একদিন ক্ষমতা হারাতেই হয়। তখন এসব তো হারায়ই, সেইসঙ্গে হারায় মান-সম্মান। দিতে হয় দুর্নীতির খেসারত। সম্মুখীন হতে হয় জেল-জরিমানার। অনেক সময় প্রাণও যায়। সুতরাং নেতৃত্ব ও ক্ষমতা এমনই এক জননী, যে শুরুতে বড় মায়ায় দুধ পান করায়, কিন্তু পরিণামে যখন দুধ ছাড়ায় তখন সে বড় নিষ্ঠুর। প্রকৃত ভালো তো সেটাই, যার শেষটাও ভালো। শেষটা যার এমন মন্দ, তা কি আদৌ ভালো?
সুতরাং এহেন বিপজ্জনক নেতৃত্ব থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকাই শ্রেয়। আখিরাতের বিচারে যার ঈমান আছে, তার কিছুতেই নেতৃত্বের অভিলাষী হওয়া উচিত নয়। তবে হাঁ, যদি কখনও এমন পরিস্থিতি হয়, যখন কারও দৃষ্টিতে নেতৃত্বের জন্য তার চেয়ে উপযুক্ত কোনও লোক পাওয়া যাচ্ছে না এবং বিচক্ষণ ও বিবেচক ব্যক্তিবর্গ তাকেই এর জন্য উপযুক্ত মনে করছে, তখনকার কথা আলাদা। এরূপ ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই নেতৃত্বের জন্য সে নির্ধারিত হয়ে যায়। এ অবস্থায় তার জন্য নেতৃত্ব গ্রহণ করার অবকাশ আছে; বরং গ্রহণ করাই জরুরি। কেননা এটা সময়ের প্রয়োজন। এরূপ প্রয়োজন দেখা দিলে নেতৃত্ব চেয়ে নেওয়ারও অবকাশ থাকে।
বর্তমান অধ্যায়টি এ সম্পর্কেই। ইমাম নববী রহ. এ বিষয়ে একটি আয়াত ও কয়েকটি হাদীছ উল্লেখ করেছেন। আমরা তার তরজমা ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করছি।


‘নেতৃত্ব প্রার্থনায় নিষেধাজ্ঞা…’ সম্পর্কিত একটি আয়াত

এক নং আয়াত
تِلْكَ الدَّارُ الْآخِرَةُ نَجْعَلُهَا لِلَّذِينَ لَا يُرِيدُونَ عُلُوًّا فِي الْأَرْضِ وَلَا فَسَادًا وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ (83)
অর্থ: ওই পরকালীন নিবাস তো আমি সেই সকল লোকের জন্যই নির্ধারণ করব, যারা পৃথিবীতে বড়ত্ব দেখাতে ও ফাসাদ সৃষ্টি করতে চায় না। শেষ পরিণাম তো মুত্তাকীদেরই অনুকূলে থাকবে।(সূরা কাসাস (২৮), আয়াত ৮৩)

ব্যাখ্যা
ইমাম নববী রহ. এ আয়াতটি এনেছেন নেতৃত্ব ও ক্ষমতা চাওয়া প্রসঙ্গে। নেতৃত্ব চাওয়াটা উপরে ওঠার অভিলাষ। এটা অহমিকার প্রকাশ। শুরুতে অহমিকা না থাকলেও পরে তা সৃষ্টি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে যথেষ্ট। নিতান্ত প্রয়োজন না হলে মানুষ নেতৃত্ব কেন চাইবে? দেশের ও দশের নেতা হতে চাওয়াটা মূলত কিসের ইঙ্গিত বহন করে? নিজেকে অন্যদের তুলনায় বেশি যোগ্য ও উপযুক্ত মনে করা হয় বলেই তো এটা চাওয়া হয়। এটা অহংকারের লক্ষণ। নিতান্ত প্রয়োজন ও বাস্তবসম্মত না হলে এরূপ দাবি-দাওয়া করা বা চাওয়া কিছুতেই সমীচীন নয়। মানুষের প্রকৃত চাওয়ার বিষয় তো জান্নাত। পার্থিব উচ্চাভিলাষ জান্নাত পাওয়ার পক্ষে অন্তরায়। এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন-
تِلْكَ الدَّارُ الْآخِرَةُ نَجْعَلُهَا لِلَّذِينَ لَا يُرِيدُونَ عُلُوًّا فِي الْأَرْضِ وَلَا فَسَادًا (ওই পরকালীন নিবাস তো আমি সেই সকল লোকের জন্যই নির্ধারণ করব, যারা পৃথিবীতে বড়ত্ব দেখাতে ও ফাসাদ সৃষ্টি করতে চায় না)। عُلُوّ এর অর্থ উপর, উচ্চতা। কেউ যখন কোনও দিক থেকে কারও উপরে চলে যায়, তখন তার অন্তরে অহমিকা জন্মায়। তো আয়াতে বলা হচ্ছে, আল্লাহ তা'আলা জান্নাত দান করবেন ওইসব লোকের জন্য, যারা উচ্চাভিলাষী নয়, যারা পৃথিবীতে অন্যের উপরে উঠতে চায় না, অন্যের উপর বড়ত্ব জাহির করে না ও অহমিকা দেখায় না। ক্ষমতা ও উচ্চপদ চাওয়াটা এক রকম বড়ত্ব জাহির করাই বটে। কারও কারও ক্ষেত্রে শুরুতে এ অবস্থা থাকে না বটে, কিন্তু ক্ষমতা পাওয়ার পর বিনয়ভাব বজায় রাখা খুব সহজ কথা নয়। ক্ষমতার অহমিকা অনেককেই পেয়ে বসে। যারা সূক্ষ্ম অনুভূতিসম্পন্ন, তারা ছোট ছোট ক্ষমতার মধ্যেও সে অহমিকা অনুভব করে।
এ প্রসঙ্গে হযরত মিকদাদ রাযি.-এর একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়। একবার নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে কোনও এক কাজের আমীর বানিয়ে পাঠিয়েছিলেন। ফিরে আসার পর তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আমীর’ পদটি কেমন পেলে হে মিকদাদ? তিনি উত্তর দেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার মনে হচ্ছিল সমস্ত লোক আমার চাকর-বাকর। সুতরাং আল্লাহর কসম! যতদিন জীবিত থাকি, কোনও কাজে আমীর হব না।(ইবন আসাকির, তারীখু দিমাশক, ৬০ খণ্ড, ১৬৯ পৃষ্ঠা; আল-মিযযী, তাহযীবুল কামাল, ২২ খণ্ড, ৩৭০ পৃষ্ঠা; যাহাবী, সিয়ারু আ'লামিন নুবালা, ৩ খণ্ড, ২৩৯ পৃষ্ঠা; মুনাবী, ফায়যুল কাদীর, হাদীছ নং ২৬৬৬; আবু নু'আয়ম, হিল্লিয়াতুল আওলিয়া, ১ খণ্ড, ১৭৪ পৃষ্ঠা)
فَسَاد অর্থ অশান্তি, বিপর্যয়, বিশৃঙ্খলা। যে-কোনও পাপকর্ম অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। তাই শব্দটি দ্বারা পাপকর্মও বোঝানো হয়ে থাকে। ক্ষমতার দাবিদার হওয়া বা ক্ষমতা চাওয়াটা ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টির এক কারণ। এ অভিলাষ যার অন্তরে থাকে, সে যে-কোনও উপায়ে তা পূরণ করতে চায়। তা রক্তপাতের মাধ্যমে হলেও। কোনও কারণে ক্ষমতা না পেলে সে ক্ষমতাপ্রাপ্তকে শান্তিতে থাকতে দেয় না। তার বিরুদ্ধে নানা অপতৎপরতা চালায়। ফলে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে যায়। এ আয়াতে জান্নাতলাভের উপায় বলা হয়েছে ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি থেকে বিরত থাকা। সুতরাং এর দাবি হল জান্নাতপ্রার্থী ব্যক্তি ক্ষমতার অভিলাষী হবে না। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ তো নয়ই, ছোটখাটো রাষ্ট্রীয় পদ থেকেও সে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখবে।
আয়াতটির শেষে বলা হয়েছে- وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ (শেষ পরিণাম তো মুত্তাকীদেরই অনুকূলে থাকবে)। শেষ পরিণাম মানে শুভ পরিণাম। অর্থাৎ জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাতলাভ। এ সৌভাগ্য কেবল তাদেরই হবে, যারা তাকওয়ার অধিকারী। অর্থাৎ যারা আল্লাহ তা'আলার যাবতীয় আদেশ পালন করে এবং তিনি যা-কিছু নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকে। ক্ষমতা প্রার্থনা না করাও এর অন্তর্ভুক্ত। মুত্তাকী ব্যক্তি কখনও ক্ষমতা প্রার্থনা করে না। ক্ষমতার মোহ তাকওয়ার পরিপন্থী। ক্ষমতাসীন ব্যক্তির জন্য সবরকম লোভ-লালসা পূরণের সুযোগ অবারিত হয়ে যায়। কাজেই প্রবল নীতি-নৈতিকতা এবং দৃঢ় চারিত্রিক ক্ষমতার অধিকারী না হলে ক্ষমতাসীন ব্যক্তির পক্ষে তাকওয়া-পরহেযগারীর উপর চলা সম্ভব হয় না। অথচ এ আয়াতের বার্তা মোতাবেক শুভ পরিণাম অর্থাৎ জাহান্নাম হতে মুক্ত থেকে জান্নাত লাভ করা তাকওয়া-পরহেযগারী দ্বারাই সম্ভব। সুতরাং শুভ পরিণাম ও জান্নাতলাভের আশাবাদী ব্যক্তিদের জন্য যে-কোনও স্তরের রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে দূরে থাকাটাই নিরাপদ। এ অবস্থায় তার দাবি করা বা তা চাওয়াটা কীভাবে সমীচীন হতে পারে?

আয়াতটির শিক্ষা
ক. জান্নাত মুত্তাকীদের স্থায়ী বাসস্থান।
খ. অহংকার ও অহমিকা জান্নাতলাভের পক্ষে বাধা।
গ. জান্নাতের আশাবাদী ব্যক্তিকে অবশ্যই অশান্তিমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে।
ঘ. আল্লাহভীরু লোকদের কিছুতেই রাষ্ট্রক্ষমতার অভিলাষী হওয়া উচিত নয়। এমনকি রাষ্ট্রীয় কোনও পদও কামনা করা বাঞ্ছনীয় নয়।
চেয়ে নেতৃত্বগ্রহণ ও না চেয়ে পাওয়ার মধ্যে পার্থক্য
হাদীছ নং: ৬৭৩

হযরত আবূ সা‘ঈদ আব্দুর রহমান ইবন সামুরা রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন, হে আব্দুর রহমান ইবন সামুরা! তুমি নেতৃত্ব চেয়ো না। কেননা বিনা চাওয়ায় তোমাকে তা দেওয়া হলে তাতে তুমি সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। আর যদি চাওয়ার কারণে তোমাকে তা দেওয়া হয়, তবে তোমাকে তাতে (বিনা সাহায্যে) ছেড়ে দেওয়া হবে। তুমি যখন কোনও বিষয়ে শপথ করবে, তারপর তার বিপরীত কাজকে তারচে' উত্তম দেখতে পাবে, তখন যা উত্তম তাই করবে আর তোমার শপথের কাফফারা আদায় করবে। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৭১৪৬; সহীহ মুসলিম: ১৬৫২; সুনানে আবূ দাউদ: ২৯২৯; জামে তিরমিযী: ১৬০৯; সুনানে নাসাঈ : ৫৩৮৪; মুসনাদে আহমাদ: ২০৬১৮; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৪৩৪৮; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ৫৯; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১৯৮৪১; সুনানে দারিমী: ২৩৯১)
مقدمة الامام النووي
81 - باب النهي عن سؤال الإمارة واختيار ترك الولايات إذا لَمْ يتعين عليه أَوْ تَدْعُ حاجة إِلَيْهِ
قَالَ الله تَعَالَى: {تِلْكَ الدَّارُ الآخِرَةُ نَجْعَلُهَا لِلَّذِينَ لا يُريدُونَ عُلوًّا في الأَرْضِ وَلاَ فَسَادًا وَالعَاقِبَةُ للمُتَّقِينَ} [القصص: 83].
673 - وعن أَبي سعيدٍ عبدِ الرحمانِ بن سَمُرَة - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ لي رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «يَا عَبْدَ الرَّحْمن بن سَمُرَةَ، لاَ تَسْأَلِ الإمَارَةَ؛ فَإِنَّكَ إِنْ أُعْطِيتَهَا عَنْ غَيْرِ مَسْألَةٍ أُعِنْتَ عَلَيْهَا، وَإنْ أُعْطِيتَهَا عَنْ مَسْألَةٍ وُكِلْتَ إِلَيْهَا، وَإِذَا حَلَفْتَ عَلَى يَمِينٍ، فَرَأيْتَ غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا، فَأْتِ الَّذِي هُوَ خَيْرٌ وَكَفِّرْ عَنْ يَمِينكَ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
হাদীস নং: ৬৭৪
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৮১ নেতৃত্ব প্রার্থনায় নিষেধাজ্ঞা, নেতৃত্ব যদি কারও জন্য অবধারিত না হয়ে যায় বা তার জন্য তা গ্রহণের প্রয়োজন দেখা না দেয়, তবে তা গ্রহণ থেকে বিরত থাকা প্রসঙ্গ
হযরত আবু যার রাযি.-কে আমীর ও মুতাওয়াল্লী হতে নিষেধ করা
হাদীছ নং: ৬৭৪

হযরত আবু যার রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, হে আবু যার! আমি তোমাকে দুর্বল দেখতে পাচ্ছি। আমি তোমার জন্য তাই পসন্দ করি, যা আমার নিজের জন্য পসন্দ করি। তুমি কিছুতেই দু'জনের উপরও নেতৃত্ব দিয়ো না এবং এতিমের মালের তত্ত্বাবধায়ক হয়ো না। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম : ১৮২৬; সুনানে নাসাঈ ৩৬৬৭; সুনানে আবু দাউদ: ৮২৬৮; মুসনাদে আহমাদ: ২১৫৬৩; সহীহ ইবনে হিব্বান ৫৫৬৪; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৭০১৭; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ৫৩৪৬; শু'আবুল ঈমান : ৭০৫২)
مقدمة الامام النووي
81 - باب النهي عن سؤال الإمارة واختيار ترك الولايات إذا لَمْ يتعين عليه أَوْ تَدْعُ حاجة إِلَيْهِ
674 - وعن أَبي ذرٍّ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «يَا أَبَا ذَرٍّ، إنِّي أَرَاكَ ضَعِيفًا، وَإنِّي أُحِبُّ لَكَ مَا أُحِبُّ لِنَفْسِي. لاَ تَأَمَّرَنَّ عَلَى اثْنَيْنِ، وَلاَ تَوَلَّيَنَّ مَالَ يَتِيمٍ». رواه مسلم (1).
হাদীস নং: ৬৭৫
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৮১ নেতৃত্ব প্রার্থনায় নিষেধাজ্ঞা, নেতৃত্ব যদি কারও জন্য অবধারিত না হয়ে যায় বা তার জন্য তা গ্রহণের প্রয়োজন দেখা না দেয়, তবে তা গ্রহণ থেকে বিরত থাকা প্রসঙ্গ
নেতৃত্বের গুরুদায়িত্ব এবং তা পালন করা ও না করার ফলাফল
হাদীছ নং: ৬৭৫

হযরত আবূ যার্র রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমাকে কোনও কর্মকর্তা বানাবেন না? এ কথা বলতেই তিনি তাঁর হাত দিয়ে আমার কাঁধে চাপড় মেরে বললেন, হে আবু যার্র! তুমি দুর্বল। আর এটা এক আমানত। নিশ্চয়ই এটা কিয়ামতের দিন লাঞ্ছনা ও অনুতাপের কারণ হবে। অবশ্য যে ব্যক্তি এটা ন্যায়সঙ্গতভাবে গ্রহণ করবে এবং এতে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে, তার কথা ভিন্ন। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ১৮২৫; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ৫৭; মুসনাদে আবু দাউদ তয়ালিসী:৪৮৭; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৩২৫৪০; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৭০১৯; বায়হাকী,আস সুনানুল কুবরা: ২০২১২; শু'আবুল ঈমান: ৭০৫২
مقدمة الامام النووي
81 - باب النهي عن سؤال الإمارة واختيار ترك الولايات إذا لَمْ يتعين عليه أَوْ تَدْعُ حاجة إِلَيْهِ
675 - وعنه، قَالَ: قُلْتُ: يَا رسول الله، ألا تَسْتَعْمِلُني؟ فَضَرَبَ بِيَدِهِ عَلَى مَنْكِبي، ثُمَّ قَالَ: «يَا أَبَا ذَرٍّ، إنَّكَ ضَعِيفٌ، وَإِنَّها أَمَانَةٌ، وَإنَّهَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ خِزْيٌ وَنَدَامَةٌ، إِلاَّ مَنْ أَخَذَهَا بِحَقِّهَا، وَأَدَّى الَّذِي عَلَيْهِ فِيهَا». رواه مسلم. (1)
হাদীস নং: ৬৭৬
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৮১ নেতৃত্ব প্রার্থনায় নিষেধাজ্ঞা, নেতৃত্ব যদি কারও জন্য অবধারিত না হয়ে যায় বা তার জন্য তা গ্রহণের প্রয়োজন দেখা না দেয়, তবে তা গ্রহণ থেকে বিরত থাকা প্রসঙ্গ
নেতৃত্বের লালসা এবং কিয়ামতের দিন এর পরিণাম
হাদীছ নং: ৬৭৬

হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, অচিরেই তোমরা নেতৃত্বের প্রতি লালায়িত হবে। অথচ কিয়ামতের দিন তা হবে অনুতাপের কারণ। -বুখারী
(সহীহ বুখারী: ৭১৪৮; সুনানে নাসাঈ: ৫৩৮৫; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৪৪৮২)
مقدمة الامام النووي
81 - باب النهي عن سؤال الإمارة واختيار ترك الولايات إذا لَمْ يتعين عليه أَوْ تَدْعُ حاجة إِلَيْهِ
676 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه: أنَّ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «إنَّكُمْ سَتَحْرِصُونَ عَلَى الإمَارَةِ، وَسَتَكونُ نَدَامَةً يَوْمَ القِيَامَةِ». رواه البخاري. (1)
হাদীস নং: ৬৭৭
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ শাসক, বিচারক প্রমুখ কর্তৃত্বশীলকে সৎ সহযোগী গ্রহণে উৎসাহদান এবং তাদেরকে মন্দ সহচর ও তাদের মতামত গ্রহণ সম্পর্কে সতর্কীকরণ

রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনায় মন্ত্রীবর্গই মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। জনগণের সার্বিক অবস্থা ও দেশের খুঁটিনাটি সম্পর্কে রাষ্ট্রপ্রধানের তুলনায় তাদেরই অবগতি থাকে বেশি। কাজেই রাষ্ট্র পরিচালনায় রাষ্ট্রপ্রধানকে তারাই ভালো সহযোগিতা করতে পারে। বরং তাদের সহযোগিতা ছাড়া সুচারুরূপে রাষ্ট্র পরিচালনা ও জনগণের নেতৃত্বদান সম্ভবই নয়। তাই আবহমানকাল থেকেই রাষ্ট্রনায়কগণ রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে মন্ত্রী নিয়োগ করে আসছে এবং তাদের উপর নির্ভরশীল থেকেছে। হযরত মূসা আলাইহিস সালামের মতো শীর্ষস্থানীয় নবী পর্যন্ত আল্লাহ তা'আলার কাছে তাঁর ভাই হারুনকে তাঁর মন্ত্রী বানিয়ে দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَاجْعَلْ لِي وَزِيرًا مِنْ أَهْلِي (29) هَارُونَ أَخِي (30) اشْدُدْ بِهِ أَزْرِي (31) وَأَشْرِكْهُ فِي أَمْرِي (32) كَيْ نُسَبِّحَكَ كَثِيرًا (33) وَنَذْكُرَكَ كَثِيرًا (34)
‘আমার স্বজনদের মধ্য হতে একজনকে আমার সহযোগী বানিয়ে দিন। আমার ভাই হারুনকে। তার মাধ্যমে আমার শক্তি দৃঢ় করুন। এবং তাকে আমার কাজে শরীক বানিয়ে দিন। যাতে আমরা বেশি পরিমাণে আপনার তাসবীহ করতে পারি। এবং বেশি পরিমাণে আপনার যিকির করতে পারি।(সূরা তোয়াহা (২০), আয়াত ২৯-৩৪)
এর দ্বারা বোঝা যায় মন্ত্রী দ্বারা রাষ্ট্রপ্রধানের হাত শক্তিশালী হয় এবং তার পক্ষে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করা সহজ হয়। এর দ্বারা আরও বোঝা যায়, মন্ত্রীত্বের জন্য সুযোগ্য লোক নির্বাচন করা চাই। অর্থাৎ এমন লোক, যার মধ্যে আল্লাহভীতি আছে, দীনের বুঝ ও দীনের ইলম আছে এবং সেইসঙ্গে রাষ্ট্রীয় দায়-দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান-বুদ্ধি ও বিচক্ষণতাও রয়েছে। সরকারের সহযোগী ও মন্ত্রীকে অবশ্যই সত্যনিষ্ঠ ও নীতিবান হতে হবে। তাকে হতে হবে উত্তম চরিত্রের অধিকারী ও জনগণের অবস্থাদি সম্পর্কে ওয়াকিফহাল। এমনিভাবে মন্ত্রীবর্গের যারা সচিব ও সহযোগী, তাদেরও বিচক্ষণ ও বিশ্বস্ত হওয়া একান্ত জরুরি। এমন উপযুক্ত মন্ত্রীপরিষদ থাকলে রাষ্ট্রপ্রধানের দীন-দুনিয়া উভয়েরই হেফাজত হয়। অন্যথায় হয়তো দুনিয়া রক্ষা পায়, কিন্তু তার দীনদারি বরবাদ হয়ে যায়। অথবা উভয় ক্ষেত্রেই তার সর্বনাশ ঘটে।
বস্তুত একজন রাষ্ট্রনায়কের যোগ্যতার প্রথম প্রকাশই ঘটে উপযুক্ত মন্ত্রীপরিষদ গঠনের দ্বারা। কেমনসব লোককে মন্ত্রী ও সহযোগীরূপে বেছে নিয়েছে, তা দ্বারাই বিচার করা যায় সে কোন প্রকৃতির লোক এবং তার বুদ্ধি-বিবেচনা, চিন্তা-ভাবনা কেমন। তাই বলা হয়, মন্ত্রীবর্গ হল রাজা-বাদশার ভূষণ।
নবী-রাসূলগণ তো বটেই, খুলাফায়ে রাশিদীনের ইতিহাসেও দেখা যায় তাঁদের কীর্তিময় দেশ পরিচালনায় তাঁদের সহযোগী ও মন্ত্রীবর্গ অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাঁদের পরেও যুগে যুগে যারা শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়করূপে ইতিহাস রচনা করেছেন, তাদের গৌরবগাঁথায় তাদের সুযোগ্য মন্ত্রীবর্গকেও সমানভাবে স্মরণ করতে হয়। অপরদিকে ইতিহাসে যারা কুখ্যাত হয়ে আছে, সেরকম শাসকবর্গের পাশেও দেখতে পাওয়া যায় এমন এমন মন্ত্রী-সহযোগীদের, কুমন্ত্রণা দেওয়ায় যারা ছিল সিদ্ধহস্ত। তাদের কারসাজিতেই শাসকবর্গ ক্ষমতা হারিয়েছে, দেশ অধঃপাতে গেছে।
ওয়াহব ইবন মুনাব্বিহ বর্ণনা করেছেন, হযরত মূসা আলাইহিস সালাম ফিরআউনকে বলেছিলেন, ঈমান আনুন। তাতে আখিরাতে জান্নাত পাবেন, দুনিয়ায় আপনার রাজত্বও বহাল থাকবে। ফিরআউন তার মন্ত্রী হামানের সঙ্গে পরামর্শ করল। হামান বলল, এতদিন আপনার পূজা করা হত। এখন তো আপনি নিজেই পূজারী হয়ে যাবেন। কথাটি ফিরআউনের মনে ধরল। তার অহমিকায় আঘাত লাগল। এর পরিণাম যা হল, সকলেরই জানা।
উমায়্য বংশীয় একজনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তোমাদের ক্ষমতা হারানোর কারণ কী? সে বলেছিল, কারণ চারটি। (এক) আমাদের মন্ত্রীগণ আমাদের কাছে ওইসকল বিষয় গোপন রেখেছিল, যা প্রকাশ করা তাদের কর্তব্য ছিল। (দুই) আমাদের করবিভাগের লোকেরা মানুষের উপর জুলুম করেছিল। ফলে তারা ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যায় আর এতে করে আমাদের অর্থভাণ্ডার শূন্য হয়ে যায়। (তিন) শেষপর্যন্ত আমাদের সৈন্যগণ বেতন-ভাতা পাচ্ছিল না। ফলে তারা আমাদের আনুগত্য ছেড়ে দেয়। (চার) মানুষ আমাদের কাছে ন্যায়-ইনসাফ পাওয়ার আশা ছেড়ে দেয়। ফলে তারা অন্যদের মধ্যে স্বস্তি খোঁজে।
সারকথা, ক্ষমতার গুরুভার যথাযথভাবে আঞ্জাম দেওয়া এবং এ দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করার জন্য রাষ্ট্রপ্রধানকে অবশ্যই সুযোগ্য মন্ত্রী ও বিশ্বস্ত সহযোগী বেছে নিতে হবে। সর্বদা স্বার্থান্বেষী ও সুযোগসন্ধানী দুর্বৃত্তদের সম্পর্কে সাবধান থাকতে হবে, যাতে তারা কাছে ভিড়তে না পারে। কেননা এ শ্রেণির লোকই কুমন্ত্রণা দিয়ে সরকারকে বিপথগামী করে এবং দেশের সর্বনাশ ঘটানোর প্রয়াস পায়। কুরআন ও হাদীছেও বিভিন্নভাবে এর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। বর্তমান এ অধ্যায়টি সে সম্পর্কেই।


‘শাসক, বিচারক প্রমুখ কর্তৃত্বশীলকে সৎ সহযোগী গ্রহণে উৎসাহদান…’ সম্পর্কিত একটি আয়াত

এক নং আয়াত
الْأَخِلَّاءُ يَوْمَئِذٍ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ إِلَّا الْمُتَّقِينَ (67)
অর্থ: সেদিন বন্ধুবর্গ একে অন্যের শত্রু হয়ে যাবে, কেবল মুত্তাকীগণ ছাড়া।(সূরা যুখরুফ (৪৩), আয়াত ৬৭)

ব্যাখ্যা
বন্ধুত্ব দু'রকম। এক বন্ধুত্ব এমন, যা কেবল আল্লাহ তা'আলার জন্যই হয়ে থাকে। তা গড়ে ওঠে দীন ও দীনী কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে। যারা দীনের তা'লীম, তাবলীগ ও প্রতিষ্ঠার জন্য মেহনত করে, তাদের পরস্পরের মধ্যে এসব কাজের সূত্রে যে বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক স্থাপিত হয়, আল্লাহ তা'আলার কাছে তা পসন্দনীয়। আনসার বা মুহাজিরদের মধ্যকার বন্ধুত্ব এ জাতীয় সম্পর্কের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বলাবাহুল্য, এ জাতীয় বন্ধুত্ব মুত্তাকী-পরহেযগারদের মধ্যেই হয়ে থাকে।
আরেক বন্ধুত্ব দীনবিরোধী কার্যক্রম বা এমনসব কাজকর্মকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে, যা মানুষকে পাপের পথে ধাবিত করে ও নানারকম পাপকর্মে লিপ্ত হওয়ার কারণ হয়ে যায়। যারা দীনের বিরোধিতা করে, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এক হওয়ায় তারা একে অন্যকে বন্ধু মনে করে। বলাবাহুল্য, এ শ্রেণির লোক তো স্পষ্টতই বেঈমান। এমন অনেক লোকও আছে, যারা বেঈমান নয় বটে, কিন্তু এমন এমন কাজের সঙ্গে জড়িত হয়ে যায়, যদ্দরুন ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় বিভিন্ন পাপকর্ম হয়েই যায়। সেসব কাজকে কেন্দ্র করে তারাও পরস্পরে বন্ধু হয়ে যায়। যেমন কোনও রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক সংগঠন, নাইটক্লাব কিংবা এরকম অন্য কোনও দল বা সমিতির সদস্যবর্গ। একই কাজে জড়িত থাকায় ও একইসঙ্গে চলাফেরা করায় তাদের মধ্যেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে যায়। এ বন্ধুত্ব মুমিন ব্যক্তির জন্য মোটেই নিরাপদ নয়। বন্ধুত্ব রক্ষার খাতিরে অনেক সময়ই দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হয়। সিদ্ধান্ত যেহেতু দীনী দৃষ্টিকোণ থেকে স্থির করা হয় না, তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা দীনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয় না। বরং অনেক সিদ্ধান্ত সুস্পষ্টভাবে দীনের বিরুদ্ধেই যায়। অন্ততপক্ষে সিদ্ধান্তের বিষয়টি পাপকর্ম তো হয়ই। তথাকথিত সাংস্কৃতিক সংগঠন, ক্রীড়াচক্র, নাইটক্লাব ইত্যাদির সদস্যগণ সম্মিলিতভাবে যেসব কাজকর্ম করে থাকে, সেগুলোর চরিত্র আসলে কেমন? বন্ধুত্ব রক্ষার সুবাদে যারা এসব সমিতির সদস্যপদ ধরে রাখে, প্রতিনিয়ত তারা কোন পথে চলছে? বন্ধুত্ব তাদেরকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? নিশ্চয়ই কোনও মুত্তাকী-পরহেযগার ব্যক্তি কারও সঙ্গে এ জাতীয় বন্ধুত্ব করবে না। তাহলে যারা পরস্পরের মধ্যে এ জাতীয় বন্ধুত্ব রক্ষা করে চলছে, তাদের দীনী অবস্থান ঠিক কোনখানে? তাদেরকে অবশ্যই এ বিষয়টি ভাবতে হবে। ভাবতে হবে এ কারণে যে, ইহজীবন বড়ই ক্ষণস্থায়ী। ক্ষণস্থায়ী এর বন্ধুত্বও। মৃত্যুতে অবশ্যই এ বন্ধুত্বের পরিসমাপ্তি ঘটবে। তারপর কবরজীবন দিয়ে যে পরকালের সূচনা ঘটবে, সেখানে এ বন্ধুত্বের পরিণাম কী দাঁড়াবে? কবরের শাস্তি ও হাশর ময়দানের বিভীষিকা যখন সামনে এসে যাবে, তখন এ বন্ধুত্বের হাকীকত উন্মোচিত হয়ে যাবে। তখন এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে এই বলে দোষারোপ করবে যে, তার কারণেই আজ আমার এই পরিণতি। তার সঙ্গে বন্ধুত্বের সুবাদে আমি হাজারও পাপকর্ম করেছি। সেই আমাকে নানারকম পাপকর্মের পথ দেখিয়েছে, উৎসাহ যুগিয়েছে। তাকে আমি বন্ধু মনে করেছিলাম। প্রকৃতপক্ষে সে আমার চরম শত্রু। এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন-
الْأَخِلَّاءُ يَوْمَئِذٍ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ (সেদিন বন্ধুবর্গ একে অন্যের শত্রু হয়ে যাবে)। যেহেতু তারা একে অন্যের শত্রু হয়ে যাবে, তাই একে অন্যের দুর্ভোগও কামনা করবে। সেদিন তারা একে অন্যকে লা'নত করবে। কুরআন মাজীদের এক আয়াতে ইরশাদ-
وَقَالَ إِنَّمَا اتَّخَذْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَوْثَانًا مَوَدَّةَ بَيْنِكُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ثُمَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكْفُرُ بَعْضُكُمْ بِبَعْضٍ وَيَلْعَنُ بَعْضُكُمْ بَعْضًا وَمَأْوَاكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُمْ مِنْ نَاصِرِينَ
‘তোমরা তো আল্লাহকে ছেড়ে মূর্তিগুলোকেই (প্রভু) মেনেছ, পার্থিব জীবনে তোমাদের পারস্পরিক বন্ধুত্ব রক্ষার লক্ষ্যে। পরিশেষে কিয়ামতের দিন তোমরা একে অন্যকে অস্বীকার করবে এবং একে অন্যকে লানত করবে। তোমাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম এবং তোমাদের কোনওরকম সাহায্যকারী লাভ হবে না।(সূরা আনকাবূত (২৯), আয়াত ২৫)
যে বন্ধুত্বের কারণে মানুষ পাপের পথে অগ্রসর হয়, কিয়ামতের দিন সেজন্য কী রকম আক্ষেপ হবে, সে সম্পর্কে এক আয়াতে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
وَيَوْمَ يَعَضُّ الظَّالِمُ عَلَى يَدَيْهِ يَقُولُ يَالَيْتَنِي اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُولِ سَبِيلًا (27) يَاوَيْلَتَا لَيْتَنِي لَمْ أَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِيلًا (28) لَقَدْ أَضَلَّنِي عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ إِذْ جَاءَنِي
‘এবং যেদিন জালেম ব্যক্তি (মনস্তাপে) নিজের হাত কামড়াবে এবং বলবে, হায়! আমি যদি রাসূলের সাথে পথ ধরতাম! হায় আমাদের দুর্ভোগ! আমি যদি অমুক ব্যক্তিকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম! আমার কাছে তো উপদেশ এসে গিয়েছিল, কিন্তু সে (ওই বন্ধু) আমাকে তা থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল।(সূরা ফুরকান (২৫), আয়াত ২৭-২৯)
তবে যারা মুত্তাকী-পরহেযগার, তাদের মধ্যকার বন্ধুত্ব আখিরাতে আক্ষেপের কারণ হবে না। সেদিন তারা একে অন্যের শত্রুও হবে না। সেদিনও তাদের বন্ধুত্ব অটুট থাকবে। সুতরাং আয়াতের শেষে বলা হয়েছে- إِلَّا الْمُتَّقِيْنَ (কেবল মুত্তাকীগণ ছাড়া)। অর্থাৎ তারা একে অপরের শত্রু হবে না। কেননা তাদের বন্ধুত্ব স্থাপিত হয় তাকওয়া- পরহেযগারীর ভিত্তিতে। অন্তরে আল্লাহভীতি থাকায় তারা সর্বদা অসৎ বন্ধু এড়িয়ে চলে এবং এমন বন্ধু খুঁজে নেয়, যার দ্বারা দীনের পথে চলায় সহযোগিতা লাভ হবে। এককথায় তাদের বন্ধুত্ব হয় কেবলই আল্লাহ তা'আলার জন্য। তাদের বন্ধুত্ব যেহেতু আল্লাহ তা'আলার জন্যই হয়, তাই তাঁর কাছে তারা এ বন্ধুত্বের কারণে পুরস্কৃত হবে। হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَقُوْلَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ : أين المتحابون بجلالي؟ اليوم أظلهم في ظلي يوم لا ظل إلا ظلي
‘আল্লাহ তা'আলা কিয়ামতের দিন বলবেন, কোথায় সেইসকল লোক, যারা আমার গৌরব-মহিমার কারণে একে অন্যকে ভালোবাসত? আজ আমি তাদেরকে আমার ছায়ায় স্থান দেব, যেদিন আমার ছায়া ছাড়া আর কোনও ছায়া নেই।(সহীহ মুসলিম: ২৫৬৬; মুসনাদে আহমাদ: ৭২৩১; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৫৭৪; তবারানী, আল-মুজামুল কাবীর: ৬৪৪; বায়হাকী, আস্সুনানুল কুবরা: ২১০৬৭; শুআবুল ঈমান: ৮৫৭৭)

অপর এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لَوْ أَنَّ عَبْدَيْنِ تَحَابَّا فِي اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَاحِدٌ فِي الْمَشْرِقِ وَآخَرُ فِي الْمَغْرِبِ لَجَمَعَ اللَّهُ بَيْنَهُمَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ. يَقُولُ: هَذَا الَّذِي كُنْتَ تُحِبُّهُ فِيَّ
‘যদি দুই বান্দা আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালোবাসে আর তাদের একজন থাকে দুনিয়ার পূর্ব প্রান্তে, অপরজন পশ্চিম প্রান্তে, তবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা তাদের দু'জনকে একত্র করে দেবেন এবং বলবেন, এই সেই ব্যক্তি, যাকে তুমি আমার জন্য ভালোবাসতে।(বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান : ৮৬০৬)

আয়াতটির শিক্ষা
ক. কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করার সময় খুব সতর্ক থাকতে হবে যাতে সে বন্ধুত্ব পাপের পথে চলার কারণ না হয়।
খ. কোনও দল, সংগঠন বা সমিতির সদস্য হওয়ার দ্বারা যেহেতু অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে এবং সে বন্ধুত্ব বেশিরভাগ অন্যায় ও অবৈধ কাজকর্মে লিপ্ত হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তাই এ ক্ষেত্রেও সাবধানতা অবলম্বন জরুরি।
গ. তাকওয়া ও পরহেযগারীর ভিত্তিতে যে বন্ধুত্ব স্থাপিত হয়, তা দুনিয়া ও আখিরাতের পক্ষে কল্যাণকর।
শাসকশ্রেণির সৎ ও অসৎ সঙ্গী এবং তাদের বেলায় করণীয়
হাদীছ নং: ৬৭৭

হযরত আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাযি. ও হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা'আলা যে-কোনও নবী পাঠিয়েছেন এবং যে-কোনও খলীফা নিযুক্ত করেছেন, তারই দুই সঙ্গী থেকেছে। এক সঙ্গী তাকে ভালো কাজের আদেশ করে ও তার প্রতি উৎসাহদান করে। আরেক সঙ্গী তাকে মন্দ কাজের আদেশ করে ও তাতে উৎসাহ দেয়। নিরাপদ থাকে কেবল সেই, যাকে আল্লাহ নিরাপদ রাখেন। -বুখারী
(সহীহ বুখারী: ৭১৯৮; সুনানে নাসাঈ: ৪২০২; মুসনাদে আবূ ইয়া'লা: ১২২৮; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ২১১৩; সহীহ ইবনে হিব্বান ৬১৯২; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ২০৩১৪)
مقدمة الامام النووي
82 - باب حث السلطان والقاضي وغيرهما من ولاة الأمور عَلَى اتخاذ وزير صالح وتحذيرهم من قرناء السوء والقبول منهم
قَالَ الله تَعَالَى: {الأَخِلاَّءُ يَوْمَئذٍ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ إِلاَّ المُتَّقِينَ} [الزخرف: 67].
677 - وعن أَبي سعيدٍ وأبي هريرة رضي الله عنهما: أنَّ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مَا بَعَثَ اللهُ مِنْ نَبِيٍّ، وَلاَ اسْتَخْلَفَ مِنْ خَليفَةٍ إِلاَّ كَانَتْ لَهُ بِطَانَتَانِ: بِطَانَةٌ تَأمُرُهُ بالمَعْرُوفِ وتَحُضُّهُ عَلَيْهِ، وَبِطَانَةٌ تَأمُرُهُ بالشَّرِّ وَتَحُضُّهُ عَلَيْهِ، وَالمَعْصُومُ مَنْ عَصَمَ اللهُ». رواه البخاري. (1)
হাদীস নং: ৬৭৮
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৮২ শাসক, বিচারক প্রমুখ কর্তৃত্বশীলকে সৎ সহযোগী গ্রহণে উৎসাহদান এবং তাদেরকে মন্দ সহচর ও তাদের মতামত গ্রহণ সম্পর্কে সতর্কীকরণ
ভালো ও মন্দ মন্ত্রীর পরিচয়
হাদীছ নং: ৬৭৮

হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা'আলা যখন কোনও আমীরের (শাসকের) কল্যাণ চান, তখন তার জন্য সত্যনিষ্ঠ মন্ত্রী নিযুক্ত করেন, যে তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় যা সে ভুলে যায় এবং তা স্মরণ থাকলে তাতে তাকে সাহায্য করে। পক্ষান্তরে তিনি যখন আমীরের জন্য অন্য কিছুর ইচ্ছা করেন, তখন তার জন্য মন্দ মন্ত্রী নিযুক্ত করেন, যে তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় না যা সে ভুলে যায় এবং তা তার স্মরণে থাকলে তাতে তাকে সাহায্য করে না।-আবু দাউদ
(সুনানে আবু দাউদ: ২৯৩২; সুনানে নাসাঈ ৪২০৪; সুনানে ইবন মাজাহ : ২৩০৯; মুসনাদুল বাযযার: ২৬১; সহীহ ইবনে হিব্বান ৪৪৯৪; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ২০৩২০; মুসনাদ ইসহাক ইবন রাহুয়াহ ৯৫৬; মুসনাদে আহমাদ: ২৪৪১৪; মুসনাদে আবূ ইয়া'লা: ৪৪৩৯)
مقدمة الامام النووي
82 - باب حث السلطان والقاضي وغيرهما من ولاة الأمور عَلَى اتخاذ وزير صالح وتحذيرهم من قرناء السوء والقبول منهم
678 - وعن عائشة رضي الله عنها، قالت: قَالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «إِذَا أرَادَ اللهُ بِالأَمِيرِ خَيْرًا، جَعَلَ لَهُ وَزِيرَ صدقٍ، إنْ نَسِيَ ذَكَّرَهُ، وَإنْ ذَكَرَ أَعَانَهُ، وَإِذَا أَرَادَ بِهِ غَيْرَ ذَلِكَ جَعَلَ لَهُ وَزِيرَ سُوءٍ، إنْ نَسِيَ لَمْ يُذَكِّرْهُ، وَإنْ ذَكَرَ لَمْ يُعِنْهُ». رواه أَبُو داود (1) بإسنادٍ جيدٍ عَلَى شرط مسلم.
হাদীস নং: ৬৭৯
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৮৩ নেতৃত্ব, বিচারকের পদ প্রভৃতি কর্তৃত্বমূলক পদ যে ব্যক্তি চায় বা তার আকাঙ্ক্ষী হয়ে আকারে-ইঙ্গিতে নিজেকে সেজন্য পেশ করে, তাকে তাতে নিয়োগদান করার প্রতি নিষেধাজ্ঞা
হাদীছ নং: ৬৭৯

হযরত আবূ মূসা আশ'আরী রাযি. বলেন, তিনি বলেন, আমি আমার দুই চাচাতো ভাইসহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হই। তাদের একজন বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ তা'আলা আপনাকে যে ক্ষমতা দান করেছেন, তার কোনও এক বিষয়ে আমাদেরকে দায়িত্ব প্রদান করুন। অপরজনও অনুরূপ বলল। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আমরা এমন কারও উপর এ কাজের দায়িত্ব অর্পণ করি না, যে তা কামনা করে কিংবা এমন কাউকেও নয়, যে এর প্রতি লোভ করে। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৭১৪৯; সহীহ মুসলিম: ১৭৩৩; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ৩২৫৪১; মুসনাদে আবু ইয়া'লা: ৭৩২০; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৪৪৮১; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ২০২৪৮; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ২৪৬৬)
مقدمة الامام النووي
83 - باب النهي عن تولية الإمارة والقضاء وغيرهما من الولايات لمن سألها أَوْ حرص عليها فعرَّض بها
679 - عن أَبي موسى الأشعريِّ - رضي الله عنه - قَالَ: دَخَلْتُ عَلَى النَّبيِّ - صلى الله عليه وسلم - أنَا وَرَجُلانِ مِنْ بَنِي عَمِّي، فَقَالَ أحَدُهُمَا: يَا رسول الله، أمِّرْنَا عَلَى بَعْض مَا ولاَّكَ اللهُ - عز وجل - وقال الآخَرُ مِثلَ ذَلِكَ، فَقَالَ: «إنَّا وَاللهِ لاَ نُوَلِّي هَذَا العَمَلَ أَحَدًا سَألَهُ، أَوْ أحَدًا حَرَصَ عَلَيْهِ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
(1) - كتَاب الأدَب