রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
رياض الصالحين من كلام سيد المرسلين
ভূমিকা অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ৬৭৯ টি
হাদীস নং: ৫৮১
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায়: ৬৬ পুরুষদের জন্য কবর যিয়ারত মুস্তাহাব হওয়া প্রসঙ্গ এবং কবর যিয়ারতের দু‘আ
কবর যিয়ারতের দু'আ ও আদব
হাদীছ নং: ৫৮১
হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে রাতই তাঁর পালায় পড়ত, সে রাতের শেষদিকে তিনি বাকী'তে চলে যেতেন। সেখানে গিয়ে বলতেন-
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ، وَأَتَاكُمْ مَا تُوْعَدُوْنَ غَدًا مُؤَجَّلُوْنَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَا حِقُوْنَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِأَهْلِ بَقِيعِ الْغَرْقَدِ
‘হে মুমিন সম্প্রদায়ের নিবাসের বাসিন্দাগণ! তোমাদের প্রতি সালাম। তোমাদেরকে আগামী দিনের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছিল তা তোমাদের কাছে এসে গেছে এ অবস্থায় যে, তোমাদেরকে অবকাশ দেওয়া হয়েছিল। ইনশাআল্লাহ আমরা তোমাদের সঙ্গে মিলিত হব।’ হে আল্লাহ! ‘বাকী' আল-গারকাদ’-এর বাসিন্দাদের ক্ষমা করে দাও। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ৯৭৪; সুনানে ইবন মাজাহ ১৫৪৭; মুসনাদে আবু ইয়া'লা: ৪৭৫৮। মুসনাদে ইসহাক ইবন রাহুয়াহ: ১৭৫৬; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ৩৮০৮; সহীহ ইবন হিব্বান: ৩১৭২)
হাদীছ নং: ৫৮১
হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে রাতই তাঁর পালায় পড়ত, সে রাতের শেষদিকে তিনি বাকী'তে চলে যেতেন। সেখানে গিয়ে বলতেন-
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ، وَأَتَاكُمْ مَا تُوْعَدُوْنَ غَدًا مُؤَجَّلُوْنَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَا حِقُوْنَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِأَهْلِ بَقِيعِ الْغَرْقَدِ
‘হে মুমিন সম্প্রদায়ের নিবাসের বাসিন্দাগণ! তোমাদের প্রতি সালাম। তোমাদেরকে আগামী দিনের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছিল তা তোমাদের কাছে এসে গেছে এ অবস্থায় যে, তোমাদেরকে অবকাশ দেওয়া হয়েছিল। ইনশাআল্লাহ আমরা তোমাদের সঙ্গে মিলিত হব।’ হে আল্লাহ! ‘বাকী' আল-গারকাদ’-এর বাসিন্দাদের ক্ষমা করে দাও। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ৯৭৪; সুনানে ইবন মাজাহ ১৫৪৭; মুসনাদে আবু ইয়া'লা: ৪৭৫৮। মুসনাদে ইসহাক ইবন রাহুয়াহ: ১৭৫৬; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ৩৮০৮; সহীহ ইবন হিব্বান: ৩১৭২)
مقدمة الامام النووي
66 - باب استحباب زيارة القبور للرجال وما يقوله الزائر
581 - وعن عائشة رضي الله عنها، قالت: كَانَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - كلَّما كَانَ لَيْلَتُهَا مِنْ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - يَخْرُجُ مِنْ آخِرِ اللَّيْلِ إِلَى البَقِيعِ، فَيقولُ: «السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ، وَأَتَاكُمْ مَا تُوعَدُونَ، غَدًا مُؤَجَّلُونَ، وَإنَّا إنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لاَحِقُونَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لأهْلِ بَقِيعِ الغَرْقَدِ (1)». رواه مسلم. (2)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৮২
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায়: ৬৬ পুরুষদের জন্য কবর যিয়ারত মুস্তাহাব হওয়া প্রসঙ্গ এবং কবর যিয়ারতের দু‘আ
কবর যিয়ারতের দু'আ ও আদব
হাদীছ নং: ৫৮২
হযরত বুরায়দা রাযি. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে শিক্ষা দিতেন, তারা যখন কবরস্থানে যাবে তখন যেন বলে-
السَّلامُ عليكم أهْلَ الدِّيارِ من المؤمنينَ والمُسلمينَ، وإنَّا إنْ شاءَ الله لَلاحِقونَ، أسأَلُ الله لنا ولكم العافِيةَ
‘হে মুমিন ও মুসলিম বাসিন্দাগণ! তোমাদের প্রতি সালাম। ইনশাআল্লাহ আমরাও তোমাদের সঙ্গে মিলিত হব। আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের ও তোমাদের জন্য নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।’ -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ৯৭৫)
হাদীছ নং: ৫৮২
হযরত বুরায়দা রাযি. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে শিক্ষা দিতেন, তারা যখন কবরস্থানে যাবে তখন যেন বলে-
السَّلامُ عليكم أهْلَ الدِّيارِ من المؤمنينَ والمُسلمينَ، وإنَّا إنْ شاءَ الله لَلاحِقونَ، أسأَلُ الله لنا ولكم العافِيةَ
‘হে মুমিন ও মুসলিম বাসিন্দাগণ! তোমাদের প্রতি সালাম। ইনশাআল্লাহ আমরাও তোমাদের সঙ্গে মিলিত হব। আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের ও তোমাদের জন্য নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।’ -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ৯৭৫)
مقدمة الامام النووي
66 - باب استحباب زيارة القبور للرجال وما يقوله الزائر
582 - وعن بريدة - رضي الله عنه - قَالَ: كَانَ النبيُّ - صلى الله عليه وسلم - يُعَلِّمُهُمْ إِذَا خَرَجُوا إِلَى المَقَابِرِ أَنْ يَقُولَ قَائِلُهُمْ: «السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أهلَ الدِّيَارِ مِنَ المُؤْمِنينَ وَالمُسلمينَ، وَإنَّا إنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ للاَحِقونَ، أَسْأَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمُ العَافِيَةَ». رواه مسلم. (1)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৮৩
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায়: ৬৬ পুরুষদের জন্য কবর যিয়ারত মুস্তাহাব হওয়া প্রসঙ্গ এবং কবর যিয়ারতের দু‘আ
কবর যিয়ারতের দু'আ ও আদব
হাদীছ নং: ৫৮৩
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনার কয়েকটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি তাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন-
اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ القُبُورِ، يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ، أَنْتُمْ سَلَفُنَا، وَنَحْنُ بِالأَثَرِ
‘হে কবরবাসীগণ! তোমাদের প্রতি সালাম। আল্লাহ ক্ষমা করুন আমাদেরকে এবং তোমাদেরকেও। তোমরা আমাদের অগ্রবর্তী দল, আমরা তোমাদের অনুগামী।’ -তিরমিযী
ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এটি একটি হাসান হাদীছ।
(জামে' তিরমিযী: ১০৫৩; তাবারানী, আদ-দা'ওয়াতুল কাবীর ৬৪২)
হাদীছ নং: ৫৮৩
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনার কয়েকটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি তাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন-
اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ القُبُورِ، يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ، أَنْتُمْ سَلَفُنَا، وَنَحْنُ بِالأَثَرِ
‘হে কবরবাসীগণ! তোমাদের প্রতি সালাম। আল্লাহ ক্ষমা করুন আমাদেরকে এবং তোমাদেরকেও। তোমরা আমাদের অগ্রবর্তী দল, আমরা তোমাদের অনুগামী।’ -তিরমিযী
ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এটি একটি হাসান হাদীছ।
(জামে' তিরমিযী: ১০৫৩; তাবারানী, আদ-দা'ওয়াতুল কাবীর ৬৪২)
مقدمة الامام النووي
66 - باب استحباب زيارة القبور للرجال وما يقوله الزائر
583 - وعن ابن عباسٍ رضي الله عنهما، قَالَ: مرَّ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - بِقُبورٍ بالمدِينَةِ فَأقْبَلَ عَلَيْهِمْ بِوَجْهِهِ، فَقَالَ: «السَّلامُ عَلَيْكُمْ يَا أهْلَ القُبُورِ، يَغْفِرُ اللهُ لَنَا وَلَكُمْ، أنْتُمْ سَلَفُنَا وَنَحنُ بالأثَرِ». رواه الترمذي، (1) وقال: «حديث حسن».
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৮৪
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ কোনও কষ্ট ও বিপদে মৃত্যু কামনা করা পসন্দনীয় নয়। তবে দীনরক্ষায় বিপদের আশঙ্কা থাকলে তা কামনা করাতে দোষ নেই।
অনেকে কষ্ট-ক্লেশ ও বিপদ-আপদে ধৈর্য হারিয়ে ফেলে। তখন মনে করে মরণেই বুঝি মুক্তি। ফলে মৃত্যু কামনা করে বসে। এটা ধৈর্যহীনতা তো বটেই, অপরিণামদর্শিতাও বৈ কি। কেননা মৃত্যু হলেই যে বিপদ শেষ হয়ে গেল এর কী নিশ্চয়তা আছে? মৃত্যুর পর আরও কঠিন পরিস্থিতিও এসে যেতে পারে। কবর সকলের জন্য কুসুমাস্তীর্ণ নয়। তা কারও জন্য জান্নাতের বাগান, কারও জন্য জাহান্নামের গর্ত। কে জানে কার কবর কেমন হবে? তাই মৃত্যু কামনা না করে বরং দরকার নিজ কবরকে নিরাপদ করে তোলার চেষ্টা করা। সে চেষ্টা বেঁচে থাকার দ্বারাই করা সম্ভব।
কবর ও আখিরাতের মুক্তি ও নিরাপত্তা লাভ হয় ছাওয়াব অর্জন দ্বারা, গুনাহ থেকে মাগফিরাত লাভ করার দ্বারা। যে ব্যক্তি দুঃখ-কষ্টে মৃত্যু কামনা করে, তার জেনে রাখা উচিত দুঃখ-কষ্টে ধৈর্যধারণ করা একদিকে গুনাহ থেকে মাগফিরাত লাভ হয়, অন্যদিকে ছাওয়াব অর্জিত হয়। এ দৃষ্টিতে দুঃখ-কষ্ট তো নি'আমত। এ নি'আমতের মধ্যে থাকা অবস্থায় মৃত্যু কামনা না করে সবর করাই প্রকৃত বুদ্ধিমত্তা। এ অবস্থায় সবর হল ভাগ্যকে দোষারোপ না করে আল্লাহর দিকে রুজু' হওয়া এবং কষ্ট লাঘবের জন্য তাঁর কাছে দু'আ করা।
দুঃখ-কষ্টে পাপমোচন হওয়ার কথা বহু হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। যেমন এক হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَا يُصِيبُ الْمُسْلِمَ مِنْ نَصَبٍ وَلاَ وَصَبٍ وَلاَ هَمٍّ وَلاَ حُزْنٍ وَلاَ أَذًى وَلاَ غَمٍّ حَتَّى الشَّوْكَةِ يُشَاكُهَا، إِلاَّ كَفَّرَ اللَّهُ بِهَا مِنْ خَطَايَاهُ
‘মুসলিম ব্যক্তির যে-কোনও ক্লান্তি, রোগ, দুশ্চিন্তা, দুঃখ, কষ্ট ও পেরেশানি দেখা দেয়, এমনকি তার যদি কোনও কাঁটাও বিদ্ধ হয়, তার বিনিময়ে আল্লাহ তা'আলা তার পাপ মোচন করে থাকেন।(সহীহ বুখারী: ৫৬৪২; সহীহ মুসলিম: ২৫৭৩, জামে' তিরমিযী: ৯৬৬)
যে ব্যক্তি স্বস্তির অবস্থায় থাকে, তার তো মৃত্যুকামনার প্রশ্নই আসে না। কেননা স্বস্তির অবস্থা এক বিশাল নি'আমত। এ অবস্থায় নির্বিঘ্নে ইবাদত-বন্দেগী করা যায়। নানারকম সৎকর্ম করা সম্ভব হয়। এ অবস্থায় যত বেশি বেঁচে থাকা যায় ততোই লাভ। প্রতিটি মুহূর্ত তার পক্ষে কল্যাণকর হয়। তার ছাওয়াব ও আল্লাহর নৈকট্য বৃদ্ধি পেতে থাকে। বেঁচে থাকাটা তাওবা-ইস্তিগফার করার সুযোগ। তাওবার একটা শর্ত অন্যের মেরে দেওয়া হক ও পাওনা মিটিয়ে ফেলা। এর জন্য সময়ের দরকার। কাজেই বেঁচে থাকা দরকার তাওবা-ইস্তিগফারের জন্যও। কাজেই মৃত্যু কামনা করা কোনও অবস্থায়ই ভালো নয়। বলা হয়, মৃত্যু কেবল তিন ব্যক্তিই কামনা করে। এক তো ওই ব্যক্তি, যে মৃত্যু-পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞ। দ্বিতীয় ওই ব্যক্তি, যে বালা-মসিবতে ধৈর্য ধরতে পারে না, ফলে সে তাকদীর থেকে পালাতে চায়। আর তৃতীয় ওই ব্যক্তি, যার কাছে আল্লাহ তা'আলার সাক্ষাৎ সর্বাপেক্ষা বেশি প্রিয়।
হাঁ, মৃত্যুকামনা যদি দীন ও ঈমান হেফাজতের লক্ষ্যে হয় বা আল্লাহর সাক্ষাৎলাভের অধীর আগ্রহে এবং তাঁর সান্নিধ্যের আস্বাদ উপভোগের উদ্দেশ্যে হয়, তা জায়েয আছে। সাহাবায়ে কেরামের অনেকে এরকম মৃত্যুকামনা করেছেন। তবে সে ক্ষেত্রেও 'হে আল্লাহ! আমাকে মৃত্যু দাও’ বা ‘হে আল্লাহ! আমাকে আর বাঁচিয়ে রেখো না’ এরূপ সাধারণভাবে মৃত্যুকামনা ঠিক নয়। বরং হাদীছে যেভাবে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, সেভাবেই শর্তযুক্তভাবে দু'আ করা উচিত। অর্থাৎ বলবে-
اللَّهُمَّ أَحْيِنِي مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِي ، وَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لِيْ
‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে জীবিত রেখো, যাবৎ জীবিত থাকা আমার পক্ষে কল্যাণকর হয় এবং আমাকে মৃত্যু দিয়ো, যখন মৃত্যু আমার পক্ষে কল্যাণকর হয়'।
বেঁচে থাকা কল্যাণকর হয় তখন, যখন বেঁচে থাকা হয় দীন ও ঈমানের সঙ্গে। এরূপ বেঁচে থাকা অবশ্যই কাম্য। আর মৃত্যু কল্যাণকর হয় তখন, যখন বেঁচে থাকলে ঈমান ও আমল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ অবস্থায় ঈমানের সঙ্গে মৃত্যুই কল্যাণকর। যখন দেশে ঈমান-আমল রক্ষার পরিবেশ না থাকে, চারদিকে বদদীনী পরিবেশ ছড়িয়ে পড়ে, বহুমুখী ফিতনা বেঈমানীর দিকে ডাকে, ফলে ঈমান-আমল রক্ষা কঠিন হয়ে যায়, স্বাভাবিকভাবেই তখন বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয় হয়ে যায়। এক হাদীছে আছে-
وَإِذَا كَانَ أُمَرَاؤُكُمْ شِرَارَكُمْ وَأَغْنِيَاؤُكُمْ بُخَلاَءَكُمْ وَأُمُورُكُمْ إِلَى نِسَائِكُمْ فَبَطْنُ الأَرْضِ خَيْرٌ لَكُمْ مِنْ ظَهْرِهَا
‘যখন তোমাদের নেতৃবর্গ হয় নিকৃষ্ট লোক, তোমাদের ধনীরা হয় কৃপণ এবং তোমাদের কর্তৃত্ব থাকে নারীদের হাতে, তখন তোমাদের জন্য ভূপৃষ্ঠ অপেক্ষা ভূগর্ভই শ্রেয়।(জামে' তিরমিযী: ২২৬৬)
সারকথা, বিশেষ পরিস্থিতি দেখা না দিলে মৃত্যু কামনা করা উচিত নয়। কিন্তু অনেকে ধৈর্যহারা হয়ে তা কামনা করে বসে। ফলে প্রভৃত ক্ষতির শিকার হয়। মুমিন-মুসলিমগণ যাতে সে ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারে, তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক করেছেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দান করেছেন। এ অধ্যায়ের হাদীছসমূহ সে সম্পর্কেই।
অনেকে কষ্ট-ক্লেশ ও বিপদ-আপদে ধৈর্য হারিয়ে ফেলে। তখন মনে করে মরণেই বুঝি মুক্তি। ফলে মৃত্যু কামনা করে বসে। এটা ধৈর্যহীনতা তো বটেই, অপরিণামদর্শিতাও বৈ কি। কেননা মৃত্যু হলেই যে বিপদ শেষ হয়ে গেল এর কী নিশ্চয়তা আছে? মৃত্যুর পর আরও কঠিন পরিস্থিতিও এসে যেতে পারে। কবর সকলের জন্য কুসুমাস্তীর্ণ নয়। তা কারও জন্য জান্নাতের বাগান, কারও জন্য জাহান্নামের গর্ত। কে জানে কার কবর কেমন হবে? তাই মৃত্যু কামনা না করে বরং দরকার নিজ কবরকে নিরাপদ করে তোলার চেষ্টা করা। সে চেষ্টা বেঁচে থাকার দ্বারাই করা সম্ভব।
কবর ও আখিরাতের মুক্তি ও নিরাপত্তা লাভ হয় ছাওয়াব অর্জন দ্বারা, গুনাহ থেকে মাগফিরাত লাভ করার দ্বারা। যে ব্যক্তি দুঃখ-কষ্টে মৃত্যু কামনা করে, তার জেনে রাখা উচিত দুঃখ-কষ্টে ধৈর্যধারণ করা একদিকে গুনাহ থেকে মাগফিরাত লাভ হয়, অন্যদিকে ছাওয়াব অর্জিত হয়। এ দৃষ্টিতে দুঃখ-কষ্ট তো নি'আমত। এ নি'আমতের মধ্যে থাকা অবস্থায় মৃত্যু কামনা না করে সবর করাই প্রকৃত বুদ্ধিমত্তা। এ অবস্থায় সবর হল ভাগ্যকে দোষারোপ না করে আল্লাহর দিকে রুজু' হওয়া এবং কষ্ট লাঘবের জন্য তাঁর কাছে দু'আ করা।
দুঃখ-কষ্টে পাপমোচন হওয়ার কথা বহু হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। যেমন এক হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَا يُصِيبُ الْمُسْلِمَ مِنْ نَصَبٍ وَلاَ وَصَبٍ وَلاَ هَمٍّ وَلاَ حُزْنٍ وَلاَ أَذًى وَلاَ غَمٍّ حَتَّى الشَّوْكَةِ يُشَاكُهَا، إِلاَّ كَفَّرَ اللَّهُ بِهَا مِنْ خَطَايَاهُ
‘মুসলিম ব্যক্তির যে-কোনও ক্লান্তি, রোগ, দুশ্চিন্তা, দুঃখ, কষ্ট ও পেরেশানি দেখা দেয়, এমনকি তার যদি কোনও কাঁটাও বিদ্ধ হয়, তার বিনিময়ে আল্লাহ তা'আলা তার পাপ মোচন করে থাকেন।(সহীহ বুখারী: ৫৬৪২; সহীহ মুসলিম: ২৫৭৩, জামে' তিরমিযী: ৯৬৬)
যে ব্যক্তি স্বস্তির অবস্থায় থাকে, তার তো মৃত্যুকামনার প্রশ্নই আসে না। কেননা স্বস্তির অবস্থা এক বিশাল নি'আমত। এ অবস্থায় নির্বিঘ্নে ইবাদত-বন্দেগী করা যায়। নানারকম সৎকর্ম করা সম্ভব হয়। এ অবস্থায় যত বেশি বেঁচে থাকা যায় ততোই লাভ। প্রতিটি মুহূর্ত তার পক্ষে কল্যাণকর হয়। তার ছাওয়াব ও আল্লাহর নৈকট্য বৃদ্ধি পেতে থাকে। বেঁচে থাকাটা তাওবা-ইস্তিগফার করার সুযোগ। তাওবার একটা শর্ত অন্যের মেরে দেওয়া হক ও পাওনা মিটিয়ে ফেলা। এর জন্য সময়ের দরকার। কাজেই বেঁচে থাকা দরকার তাওবা-ইস্তিগফারের জন্যও। কাজেই মৃত্যু কামনা করা কোনও অবস্থায়ই ভালো নয়। বলা হয়, মৃত্যু কেবল তিন ব্যক্তিই কামনা করে। এক তো ওই ব্যক্তি, যে মৃত্যু-পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞ। দ্বিতীয় ওই ব্যক্তি, যে বালা-মসিবতে ধৈর্য ধরতে পারে না, ফলে সে তাকদীর থেকে পালাতে চায়। আর তৃতীয় ওই ব্যক্তি, যার কাছে আল্লাহ তা'আলার সাক্ষাৎ সর্বাপেক্ষা বেশি প্রিয়।
হাঁ, মৃত্যুকামনা যদি দীন ও ঈমান হেফাজতের লক্ষ্যে হয় বা আল্লাহর সাক্ষাৎলাভের অধীর আগ্রহে এবং তাঁর সান্নিধ্যের আস্বাদ উপভোগের উদ্দেশ্যে হয়, তা জায়েয আছে। সাহাবায়ে কেরামের অনেকে এরকম মৃত্যুকামনা করেছেন। তবে সে ক্ষেত্রেও 'হে আল্লাহ! আমাকে মৃত্যু দাও’ বা ‘হে আল্লাহ! আমাকে আর বাঁচিয়ে রেখো না’ এরূপ সাধারণভাবে মৃত্যুকামনা ঠিক নয়। বরং হাদীছে যেভাবে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, সেভাবেই শর্তযুক্তভাবে দু'আ করা উচিত। অর্থাৎ বলবে-
اللَّهُمَّ أَحْيِنِي مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِي ، وَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لِيْ
‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে জীবিত রেখো, যাবৎ জীবিত থাকা আমার পক্ষে কল্যাণকর হয় এবং আমাকে মৃত্যু দিয়ো, যখন মৃত্যু আমার পক্ষে কল্যাণকর হয়'।
বেঁচে থাকা কল্যাণকর হয় তখন, যখন বেঁচে থাকা হয় দীন ও ঈমানের সঙ্গে। এরূপ বেঁচে থাকা অবশ্যই কাম্য। আর মৃত্যু কল্যাণকর হয় তখন, যখন বেঁচে থাকলে ঈমান ও আমল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ অবস্থায় ঈমানের সঙ্গে মৃত্যুই কল্যাণকর। যখন দেশে ঈমান-আমল রক্ষার পরিবেশ না থাকে, চারদিকে বদদীনী পরিবেশ ছড়িয়ে পড়ে, বহুমুখী ফিতনা বেঈমানীর দিকে ডাকে, ফলে ঈমান-আমল রক্ষা কঠিন হয়ে যায়, স্বাভাবিকভাবেই তখন বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয় হয়ে যায়। এক হাদীছে আছে-
وَإِذَا كَانَ أُمَرَاؤُكُمْ شِرَارَكُمْ وَأَغْنِيَاؤُكُمْ بُخَلاَءَكُمْ وَأُمُورُكُمْ إِلَى نِسَائِكُمْ فَبَطْنُ الأَرْضِ خَيْرٌ لَكُمْ مِنْ ظَهْرِهَا
‘যখন তোমাদের নেতৃবর্গ হয় নিকৃষ্ট লোক, তোমাদের ধনীরা হয় কৃপণ এবং তোমাদের কর্তৃত্ব থাকে নারীদের হাতে, তখন তোমাদের জন্য ভূপৃষ্ঠ অপেক্ষা ভূগর্ভই শ্রেয়।(জামে' তিরমিযী: ২২৬৬)
সারকথা, বিশেষ পরিস্থিতি দেখা না দিলে মৃত্যু কামনা করা উচিত নয়। কিন্তু অনেকে ধৈর্যহারা হয়ে তা কামনা করে বসে। ফলে প্রভৃত ক্ষতির শিকার হয়। মুমিন-মুসলিমগণ যাতে সে ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারে, তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক করেছেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দান করেছেন। এ অধ্যায়ের হাদীছসমূহ সে সম্পর্কেই।
মুমিন ব্যক্তির পক্ষে আয়ুর কল্যাণকরতা
হাদীছ নং: ৫৮৪
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ মৃত্যু কামনা করবে না। সে যদি সৎকর্মশীল হয়, তবে (বেঁচে থাকলে) আশা করা যায় আরও বেশি সৎকর্ম করতে পারবে। আর যদি অসৎকর্মশীল হয়, তবে তাওবা করবে ও নিজেকে সংশোধন করে ফেলবে।-বুখারী ও মুসলিম। এটা বুখারীর ভাষা।
(সহীহ বুখারী: ৭২৩৫; সহীহ মুসলিম: ২৬৮২; সুনানে নাসাঈ ১৮২১; সুনানে ইবন মাজাহ: ৪২৬৫; মুসনাদে আহমাদ: ৭২৩৫)
মুসলিম শরীফের এক বর্ণনায় আছে, হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ মৃত্যু কামনা করবে না এবং তার জন্য দু'আও করবে না তা আসার আগে। কেননা মৃত্যু হলে আমল বন্ধ হয়ে যায়। আর মুমিন ব্যক্তির আয়ু তার কেবল কল্যাণই বৃদ্ধি করে।
(সহীহ মুসলিম: ২৬৮২; মুসনাদে আহমাদ: ৮১৮৯)
হাদীছ নং: ৫৮৪
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ মৃত্যু কামনা করবে না। সে যদি সৎকর্মশীল হয়, তবে (বেঁচে থাকলে) আশা করা যায় আরও বেশি সৎকর্ম করতে পারবে। আর যদি অসৎকর্মশীল হয়, তবে তাওবা করবে ও নিজেকে সংশোধন করে ফেলবে।-বুখারী ও মুসলিম। এটা বুখারীর ভাষা।
(সহীহ বুখারী: ৭২৩৫; সহীহ মুসলিম: ২৬৮২; সুনানে নাসাঈ ১৮২১; সুনানে ইবন মাজাহ: ৪২৬৫; মুসনাদে আহমাদ: ৭২৩৫)
মুসলিম শরীফের এক বর্ণনায় আছে, হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ মৃত্যু কামনা করবে না এবং তার জন্য দু'আও করবে না তা আসার আগে। কেননা মৃত্যু হলে আমল বন্ধ হয়ে যায়। আর মুমিন ব্যক্তির আয়ু তার কেবল কল্যাণই বৃদ্ধি করে।
(সহীহ মুসলিম: ২৬৮২; মুসনাদে আহমাদ: ৮১৮৯)
مقدمة الامام النووي
67 - بابُ كراهة تمنّي الموت بسبب ضُرّ نزل بِهِ وَلاَ بأس بِهِ لخوف الفتنة في الدين
584 - عن أَبي هريرة - رضي الله عنه: أنَّ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «لا يَتَمَنَّ (1) أحَدُكُمُ المَوْتَ، إمَّا مُحْسِنًا فَلَعَلَّهُ يَزْدَادُ، وَإمَّا مُسِيئًا فَلَعَلَّهُ يَسْتَعْتِبُ». متفقٌ عَلَيْهِ، (2) وهذا لفظ البخاري. [ص:197]
وفي رواية لمسلم عن أَبي هريرة - رضي الله عنه - عن رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «لاَ يَتَمَنَّ أَحَدُكُمُ المَوْتَ، وَلاَ يَدْعُ بِهِ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأتِيَهُ؛ إنَّهُ إِذَا مَاتَ انْقَطَعَ عَمَلُهُ، وَإنَّهُ لاَ يَزِيدُ المُؤْمِنَ عُمُرُهُ إِلاَّ خَيْرًا».
وفي رواية لمسلم عن أَبي هريرة - رضي الله عنه - عن رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «لاَ يَتَمَنَّ أَحَدُكُمُ المَوْتَ، وَلاَ يَدْعُ بِهِ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأتِيَهُ؛ إنَّهُ إِذَا مَاتَ انْقَطَعَ عَمَلُهُ، وَإنَّهُ لاَ يَزِيدُ المُؤْمِنَ عُمُرُهُ إِلاَّ خَيْرًا».
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৮৫
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায়: ৬৭ কোনও কষ্ট ও বিপদে মৃত্যু কামনা করা পসন্দনীয় নয়। তবে দীনরক্ষায় বিপদের আশঙ্কা থাকলে তা কামনা করাতে দোষ নেই।
কোনও বালা-মসিবতে মৃত্যু কামনা করা উচিত নয়
হাদীছ নং: ৫৮৫
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ যেন কোনও কষ্টে পড়ে মৃত্যু কামনা না করে। একান্ত যদি করতেই চায় তবে যেন বলে, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে জীবিত রেখো, যাবৎ জীবিত থাকা আমার পক্ষে কল্যাণকর হয় এবং আমাকে মৃত্যু দিয়ো, যখন মৃত্যু আমার পক্ষে কল্যাণকর হয়। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৫৬৭১; সহীহ মুসলিম: ২৬৮০; জামে তিরমিযী: ৯৭১)
হাদীছ নং: ৫৮৫
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ যেন কোনও কষ্টে পড়ে মৃত্যু কামনা না করে। একান্ত যদি করতেই চায় তবে যেন বলে, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে জীবিত রেখো, যাবৎ জীবিত থাকা আমার পক্ষে কল্যাণকর হয় এবং আমাকে মৃত্যু দিয়ো, যখন মৃত্যু আমার পক্ষে কল্যাণকর হয়। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৫৬৭১; সহীহ মুসলিম: ২৬৮০; জামে তিরমিযী: ৯৭১)
مقدمة الامام النووي
67 - بابُ كراهة تمنّي الموت بسبب ضُرّ نزل بِهِ وَلاَ بأس بِهِ لخوف الفتنة في الدين
585 - وعن أنسٍ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «لاَ يَتَمَنَّيَنَّ أحَدُكُمُ المَوْتَ لِضُرٍّ أصَابَهُ، فَإنْ كَانَ لاَ بُدَّ فَاعِلًا، فَلْيَقُلْ: اللَّهُمَّ أَحْيِني مَا كَانَتِ الحَيَاةُ خَيْرًا لي، وَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَت الوَفَاةُ خَيرًا لي». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৮৬
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায়: ৬৭ কোনও কষ্ট ও বিপদে মৃত্যু কামনা করা পসন্দনীয় নয়। তবে দীনরক্ষায় বিপদের আশঙ্কা থাকলে তা কামনা করাতে দোষ নেই।
আর্থিক প্রাচুর্যের কারণে হযরত খাব্বাব রাযি.-এর ভয়
হাদীছ নং: ৫৮৬
হযরত কায়স ইবন আবূ হাযিম রহ. বলেন, আমরা হযরত খাব্বাব ইবনুল আরাত রাযি.-এর অসুস্থতাকালে তাঁকে দেখতে গেলাম। তখন তিনি শরীরের সাতটি স্থান দাগিয়েছেন। তিনি আমাদের বললেন, আমাদের সঙ্গীদের মধ্যে যারা গত হয়েছেন, তারা চলে গেছেন এ অবস্থায় যে, দুনিয়া তাদের কিছুই ক্ষতি করতে পারেনি। আর (তাদের পরে) আমরা এমনসব বস্তু অর্জন করেছি, মাটি ছাড়া যা রাখার কোনও স্থান দেখি না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি-না আমাদেরকে মৃত্যু কামনা করতে নিষেধ করতেন, তবে আমি অবশ্যই তা কামনা করতাম।
কায়স বলেন, পরে আমরা তাঁর কাছে আরেকবার আসি। তখন তিনি তাঁর একটি প্রাচীর নির্মাণ করছিলেন। তিনি বললেন, মুসলিম ব্যক্তি যা-কিছুই খরচ করে, তাতেই তাকে ছাওয়াব দেওয়া হয়, তবে এ মাটিতে সে যা-কিছু রাখে (অর্থাৎ খরচ করে) তা ছাড়া।-বুখারী ও মুসলিম। এটা বুখারীর ভাষা।
(সহীহ বুখারী: ৫৬৭২; সহীহ মুসলিম: ২৬৮১; জামে তিরমিযী: ২৪৮৩; বুখারী, আল আদাবুল মুফরাদ: ৪৫৪; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২৯৮৫৫; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৩৬৩৫; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৪০৮৫; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ১০২৩১)
হাদীছ নং: ৫৮৬
হযরত কায়স ইবন আবূ হাযিম রহ. বলেন, আমরা হযরত খাব্বাব ইবনুল আরাত রাযি.-এর অসুস্থতাকালে তাঁকে দেখতে গেলাম। তখন তিনি শরীরের সাতটি স্থান দাগিয়েছেন। তিনি আমাদের বললেন, আমাদের সঙ্গীদের মধ্যে যারা গত হয়েছেন, তারা চলে গেছেন এ অবস্থায় যে, দুনিয়া তাদের কিছুই ক্ষতি করতে পারেনি। আর (তাদের পরে) আমরা এমনসব বস্তু অর্জন করেছি, মাটি ছাড়া যা রাখার কোনও স্থান দেখি না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি-না আমাদেরকে মৃত্যু কামনা করতে নিষেধ করতেন, তবে আমি অবশ্যই তা কামনা করতাম।
কায়স বলেন, পরে আমরা তাঁর কাছে আরেকবার আসি। তখন তিনি তাঁর একটি প্রাচীর নির্মাণ করছিলেন। তিনি বললেন, মুসলিম ব্যক্তি যা-কিছুই খরচ করে, তাতেই তাকে ছাওয়াব দেওয়া হয়, তবে এ মাটিতে সে যা-কিছু রাখে (অর্থাৎ খরচ করে) তা ছাড়া।-বুখারী ও মুসলিম। এটা বুখারীর ভাষা।
(সহীহ বুখারী: ৫৬৭২; সহীহ মুসলিম: ২৬৮১; জামে তিরমিযী: ২৪৮৩; বুখারী, আল আদাবুল মুফরাদ: ৪৫৪; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২৯৮৫৫; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৩৬৩৫; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৪০৮৫; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ১০২৩১)
مقدمة الامام النووي
67 - بابُ كراهة تمنّي الموت بسبب ضُرّ نزل بِهِ وَلاَ بأس بِهِ لخوف الفتنة في الدين
586 - وعن قيسِ بن أَبي حازم، قَالَ: دَخَلْنَا عَلَى خَبَّاب بن الأرَتِّ - رضي الله عنه - نَعُودُهُ وَقَدِ اكْتَوَى سَبْعَ كَيَّاتٍ، فَقَالَ: إنَّ أَصْحَابَنَا الَّذِينَ سَلَفُوا مَضَوْا، وَلَمْ تَنْقُصْهُمُ الدُّنْيَا، وَإنَّا أَصَبْنَا مَا لاَ نَجِدُ لَهُ مَوْضِعًا إِلاَّ التُّرَابَ وَلولا أنَّ النبي - صلى الله عليه وسلم - نَهَانَا أَنْ نَدْعُوَ بِالمَوْتِ لَدَعَوْتُ بِهِ. ثُمَّ أتَيْنَاهُ مَرَّةً أُخْرَى وَهُوَ يَبْنِي حَائِطًا لَهُ، فَقَالَ: إنَّ المُسْلِمَ لَيُؤْجَرُ فِي كُلِّ شَيْءٍ يُنْفِقُهُ إِلاَّ فِي شَيْءٍ يَجْعَلُهُ في هَذَا التُّرَابِ. متفقٌ عَلَيْهِ، وهذا لفظ رواية البخاري. (1)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৮৭
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পরহেযগারী অবলম্বন ও সন্দেহযুক্ত বিষয়াবলি পরিহার
الْوَرَعُ এর অর্থ পরিহার করা, ক্ষতিকর বিষয় থেকে বেঁচে থাকা। الشُّبُهَاتُ শব্দটি شبهة এর বহুবচন। এর অর্থ সন্দেহযুক্ত বিষয়। অর্থাৎ এমন বিষয়, যা হালাল না হারাম, বৈধ না অবৈধ তা স্পষ্ট নয়। এরূপ বিষয় পরিহার করাকে الْوَرَعُ বলা হয়। শব্দটি 'তাকওয়া'-এর সমার্থবোধক। তাকওয়ার বিভিন্ন স্তর আছে। এর সাধারণ স্তর হল হারাম ও নাজায়েয বিষয়াবলি থেকে বেঁচে থাকা। মধ্যম স্তর হল সন্দেহযুক্ত বিষয় থেকে বেঁচে থাকা। সাধারণত এ স্তরের তাকওয়াকে اَلْوَرَعُ বলা হয়। তাকওয়া ও الْوَرَعُ এর সর্বোচ্চ স্তর হল এমনসব বিষয় পরিহার করা, যা দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট করে।
উলামায়ে কেরাম বিভিন্নভাবে اَلْوَرَعُ এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ইয়াহইয়া ইবন মু‘আয রাযী রহ. বলেন, ওয়ারা‘ (اَلْوَرَعْ) হল কোনওরূপ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ছাড়া জ্ঞানের সীমারেখায় থেমে যাওয়া। এটা দু'প্রকার- প্রকাশ্য ওয়ারা‘ ও গুপ্ত ওয়ারা‘। প্রকাশ্য ওয়ারা‘ হল যাবতীয় নড়াচড়া কেবল আল্লাহরই জন্য হওয়া। আর গুপ্ত ওয়ারা‘ হল অন্তরে আল্লাহ ছাড়া অন্যকিছুর স্থান না দেওয়া।
ইয়ূনুস ইবন উবায়দ রহ. বলেন, যে-কোনও সন্দেহযুক্ত বিষয় থেকে দূরে থাকা এবং প্রতিটি পলকে নিজের হিসাব নেওয়াকে ওয়ারা‘ বলা হয়।
সুফয়ান ছাওরী রহ. বলেন, ওয়ারা‘র চেয়ে সহজ জিনিস দেখিনি। তোমার মনে যা নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয় তা ছেড়ে দাও। ব্যস এটাই ওয়ারা‘।
হাসান বসরী রহ. তাঁর এক গোলামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, দীনের নিয়ন্ত্রক বস্তু কী? গোলাম বলল, ওয়ারা‘। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এর আপদ কী? সে বলল, লোভ। হাসান বসরী রহ. তার এ কথায় মুগ্ধ হয়ে গেলেন।
ব্যক্তিজীবন গঠনে ওয়ারা‘র বিরাট ভূমিকা রয়েছে। এর দ্বারা মানুষের দীন ও ঈমানের হেফাজত হয়। বাঁচা যায় সর্বপ্রকার গুনাহ থেকে। যার মধ্যে এ গুণ আছে, তার দ্বারা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি সৎকর্ম হয়ে থাকে। এমনকি এর দ্বারা মানুষের ইজ্জত-সম্মানও রক্ষা পায়। ওয়ারা‘র অধিকারী ব্যক্তি কখনও এমন কোনও কাজ করবে না, যা দ্বারা আত্মসম্মান নষ্ট হয়। সে কেবল মুমিন-মুসলিমের কাছেই নয়; বরং সমস্ত মানুষ এমনকি দুই কাঁধের ফিরিশতাসহ অন্য সকল ফিরিশতা ও কুলমাখলুকের কাছে আত্মসম্মান রক্ষায় যত্নবান থাকবে। সে প্রতিটি কাজ করবে আল্লাহ তা'আলাকে হাজির- নাজির জেনে। এরূপ ব্যক্তির পক্ষে কি আদৌ গুনাহ করা সম্ভব? সে তো বেশি বেশি নেককাজই করবে। তার সমগ্র জীবন নিবেদিত থাকবে আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টায়।
ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বাক্যের মধ্যে ওয়ারা‘র যাবতীয় বিষয় নিয়ে এসেছেন। তিনি ইরশাদ করেন-
مِنْ حُسْنِ إِسْلَامِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لَا يَعْنِيْهِ
ব্যক্তির ইসলামের একটি সৌন্দর্য হল যা-কিছু অনর্থক তা ছেড়ে দেওয়া।(জামে' তিরমিযী: ২৩১৭; সুনানে ইবন মাজাহ : ৩৯৭৬)
সুতরাং অনর্থক কথা, অনর্থক দেখা, অনর্থক শোনা, অনর্থক ধরা, অনর্থক চলা, অনর্থক চিন্তা করা, এমনিভাবে প্রকাশ্য ও গুপ্ত অনর্থক যা-কিছু আছে তা সবই পরিহার করতে হবে। এটাই পূর্ণাঙ্গ ওয়ারা‘। এর দ্বারা একজন মুসলিমের ইসলাম সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়। এর দ্বারা ব্যক্তি একজন সুন্দর ও সত্যিকারের মুসলিম হয়।
সারকথা, ইসলামে ওয়ারা‘ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষা। আমাদের প্রত্যেকেরই এ গুণ অর্জনের চেষ্টা করা উচিত। কুরআন মাজীদের বহু আয়াত এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিপুল হাদীছে এর প্রতি উৎসাহদান করা হয়েছে। ইমাম নাওয়াবী রহ. এ অধ্যায়ে তার কয়েকটি উদ্ধৃত করেছেন। আমরা সেগুলোর বঙ্গানুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করছি। আল্লাহ তা'আলাই তাওফীকদাতা।
‘পরহেযগারী অবলম্বন…’ সম্পর্কিত কিছু আয়াত
এক নং আয়াত
وَتَحْسَبُونَهُ هَيِّنًا وَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ عَظِيمٌ (15)
অর্থ: আর তোমরা এ ব্যাপারটাকে মামুলি মনে করছিলে, অথচ আল্লাহর কাছে এটা ছিল গুরুতর।(সূরা নূর (২৪), আয়াত ১৫)
ব্যাখ্যা
এটি সূরা নূরের ১৫ নং আয়াতের একটি অংশ। পূর্ণ আয়াতটি এরকম-
إِذْ تَلَقَّوْنَهُ بِأَلْسِنَتِكُمْ وَتَقُولُونَ بِأَفْوَاهِكُمْ مَا لَيْسَ لَكُمْ بِهِ عِلْمٌ وَتَحْسَبُونَهُ هَيِّنًا وَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ عَظِيمٌ (15)
‘যখন তোমরা নিজ রসনা দ্বারা তা একে অন্যের থেকে প্রচার করছিলে এবং নিজ মুখে এমন কথা বলছিলে, যে সম্পর্কে তোমাদের কিছু জানা নেই আর তোমরা এ ব্যাপারটাকে মামুলি মনে করছিলে, অথচ আল্লাহর কাছে এটা ছিল গুরুতর।’
এ আয়াত এবং এর আগের ও পরের কয়েকটি আয়াতের সম্পর্ক ‘ইফক’-এর ঘটনার সঙ্গে। ‘ইফক’-এর অর্থ অপবাদ দেওয়া, বিশেষত কোনও চরিত্রবতী নারীর চরিত্র সম্পর্কে নোংরা অপবাদ দেওয়া। একদল মুনাফিক উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাযি. সম্পর্কে এরূপ অপবাদ দিয়েছিল। সে অপবাদের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই সূরা নূরের সংশ্লিষ্ট আয়াতসমূহ নাযিল হয়। তা দ্বারা স্পষ্ট করে দেওয়া হয় যে, মুনাফিকদের রটনা সম্পূর্ণই মিথ্যা এবং আম্মাজান আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. সর্বোচ্চ স্তরের একজন পূতঃপবিত্র চরিত্রের মহিয়সী নারী। নিচে ঘটনাটির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া গেল।
‘ইফক’-এর ঘটনা
মদীনা মুনাউওয়ারায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শুভাগমনের পর ইসলামের ক্রমবিস্তারে যে গতি সঞ্চার হয়, তা দেখে কুফরী শক্তি ক্ষোভে-আক্রোশে দাঁত কিড়মিড় করছিল। কাফেরদের মধ্যে একদল ছিল মুনাফিক, যারা মুখে মুখে ইসলাম গ্রহণ করেছিল, কিন্তু তাদের অন্তর ছিল মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি বিদ্বেষে ভরা। তাদের সার্বক্ষণিক চেষ্টা ছিল কীভাবে মুসলিমদের বদনাম করা যায় এবং কী উপায়ে তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা যায়। খোদ মদীনা মুনাউওয়ারার ভেতরই তাদের একটি বড়সড় দল বাস করত।
হিজরী ৬ষ্ঠ সনে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনুল মুস্তালিকের বিরুদ্ধে একটি অভিযান চালান। সে অভিযানে মুনাফিকদের একটি দলও অংশগ্রহণ করেছিল। উন্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. এ যুদ্ধে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলেন। যুদ্ধে বনুল মুস্তালিক পরাজিত হয়। তারপর নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধবন্দী ও গনীমতের মালামাল নিয়ে মদীনায় ফিরে আসেন।
ফেরার পথে এক জায়গায় বিশ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রাবিরতি দেওয়া হয়েছিল। সেখানে হযরত আয়েশা রাযি. প্রয়োজন সারার জন্য খানিকটা দূরে গিয়েছিলেন। ফিরে আসার পর দেখেন গলার হারটি সঙ্গে নেই। তিনি সেটির খোঁজাখুঁজিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এদিকে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সে কথা জানা ছিল না। তিনি যথাসময়ে সৈন্যদেরকে রওয়ানা হওয়ার হুকুম দিলেন। সবাই প্রস্তুত হয়ে রওয়ানা হয়ে পড়লেন। ওদিকে হযরত আয়েশা রাযি. হার খোঁজায় ব্যস্ত। তিনি ফিরে এসে দেখেন কাফেলা চলে গেছে। আল্লাহ তা'আলা তাঁকে প্রখর বুদ্ধিমত্তা ও অসাধারণ সংযমশক্তি দিয়েছিলেন। তিনি অস্থির হয়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি না করে সেখানেই বসে থাকলেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন টের পাবেন তিনি কাফেলায় নেই, তখন হয় নিজেই তাঁর খোঁজে এখানে আসবেন অথবা অন্য কাউকে পাঠাবেন।
যে-কোনও সফর থেকে ফেরার সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে কাফেলার পেছনে রেখে আসতেন। সেই ব্যক্তির কাজ ছিল কাফেলা চলে যাওয়ার পর কেউ কোনওকিছু ফেলে গেল কি না তার খোঁজ নেওয়া। এ কাফেলায় এ কাজের জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল বিশিষ্ট সাহাবী হযরত সাফওয়ান ইবন মুআত্তাল রাযি.-কে। তিনি খোঁজ নিতে গিয়ে যখন হযরত আয়েশা রাযি. যেখানে ছিলেন সেখানে পৌঁছলেন, তখন চমকে উঠলেন। বুঝতে দেরি হল না কী ভয়ানক দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। কালবিলম্ব না করে নিজের উটটি হযরত উম্মুল মুমিনীনের সামনে পেশ করলেন। তারপর নিজে খানিকটা দূরে সরে দাঁড়ালেন। উম্মুল মুমিনীন রাযি. দ্রুত তাতে সওয়ার হলেন। সাফওয়ান রাযি. সেটির লাগাম ধরে মদীনা মুনাউওয়ারায় নিয়ে আসলেন।
মুনাফিকরা তো সর্বদাই সুযোগের সন্ধানে থাকত। তাদের সর্দার আবদুল্লাহ ইবন উবাঈ এ ঘটনা জানতে পেরে তাদের দুরভিসন্ধি পূরণের একটি মোক্ষম সুযোগ পেয়ে গেল। সে সম্পূর্ণ অপবাদমূলক উক্ত ঘটনার প্রচারে লেগে গেল। সে ছিল বড়ই নীচ মানসিকতার লোক। আমাদের প্রাণের চেয়েও প্রিয় এ মায়ের প্রতি এমনই ন্যাক্কারজনক অপবাদ দিল, যা কোনও আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন মুসলিমের পক্ষে কিছুতেই উচ্চারণ করা সম্ভব নয়। আবদুল্লাহ ইবন উবাঈ এ অপবাদকে এতটাই প্রসিদ্ধ করে তুলল যে, জনাকয়েক সরলমতি মুসলিমও তার প্রচারণার ফাঁদে পড়ে গেল। মুনাফিক শ্রেণি বেশ মাথামুণ্ডুহীন বিষয় নিয়ে মেতে রইল। পরিবেশ বিষাক্ত করে তুলল। আম্মাজান আয়েশা সিদ্দীকা রাযি.-এর কিন্তু এসবের কিছুই জানা ছিল না। তিনি জানতে পারেন অনেক দিন পর। জানার পর শোক ও দুঃখে তাঁর কী যে অবস্থা হয়েছিল, অন্য কারও পক্ষে তা কতটুকু অনুভব করা সম্ভব? দিনের পর দিন কান্নার মধ্যেই কাটছিল। চোখে কোনও ঘুম ছিল না। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার পিতা-মাতা মনে করছিলেন কান্নার কারণে আমার কলিজা বুঝি ফেটে যাবে। এভাবে একমাস পার হয়ে গেল। আম্মাজান রাযি.-এর শরীর একদম ভেঙে পড়ল। উঠে দাঁড়ানোর শক্তিটুকু ছিল না। এর ভেতর নানারকম ঘটনা ঘটল। হাদীছ ও সীরাত গ্রন্থসমূহে তা বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে।
পরিশেষে একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত সিদ্দীকা রাযি. -এর শিয়রে এসে বসলেন। কিছু কথাবার্তা হল। এরই ভেতর ওহী নাযিলের ভাব তাঁর মধ্যে লক্ষ করা গেল। মুহূর্তের মধ্যে আচ্ছন্নতার ভাব কেটে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারায় আনন্দের উদ্ভাস ফুটে উঠল। তিনি সর্বপ্রথম যে কথা উচ্চারণ করলেন তা ছিল- সুসংবাদ নাও হে আয়েশা! আল্লাহ তা'আলা তোমার পবিত্রতা প্রকাশ করেছেন। এ সময় সূরা নূরের ১১ থেকে ২৬ নং পর্যন্ত মোট ১৬টি আয়াত নাযিল হয়। এর দ্বারা একদিকে হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি.-এর চারিত্রিক নির্মলতার পক্ষে ঐশী সনদ দিয়ে দেওয়া হয়, অন্যদিকে যারা চক্রান্তটির রুই-কাতলা ছিল তাদেরকে দেওয়া হয় কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারী বার্তা।
হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, আমার বিশ্বাস ছিল আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই আমার পবিত্রতা ঘোষণা করবেন, যেহেতু আরোপিত অপবাদ থেকে আমি ছিলাম সম্পূর্ণ মুক্ত ও পবিত্র। কিন্তু আমার সম্পর্কে যে ওহী নাযিল হবে, যা কিনা মানুষ তিলাওয়াত করবে, এরকম ধারণা আমার ছিল না। কেননা আমার দৃষ্টিতে সে তুলনায় আমার অবস্থা তো অতি নগণ্য। আমার আশা ছিল কেবল এতটুকুই যে, আল্লাহ তা'আলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কোনও স্বপ্ন দেখাবেন এবং তার মাধ্যমে আমার পবিত্রতা প্রকাশ করে দেবেন।
এক হাদীছে আছে, আল্লাহ তা'আলা যার মঙ্গল কামনা করেন, তাকে বিপদ-আপদে আক্রান্ত করেন। আল্লাহ তা'আলা আমাদের এ মহিয়সী মা হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি.-এর মঙ্গল চেয়েছিলেন। তাই তাঁকে ‘ইফক’-এর মতো এক কঠিন পরীক্ষার মধ্যে ফেলেছিলেন। একজন চরিত্রবতী নারীর পক্ষে এরচে' বড় কোনও বিপদ হতে পারে না। সে বিপদে তিনি সবর করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি পরীক্ষায় পুরোপুরি উত্তীর্ণ হয়েছেন। এর সুফলও পেয়েছেন অভাবনীয়। আল্লাহ তা'আলা তাঁর চরিত্রের পক্ষে ওহীর সনদ দিয়ে দিয়েছেন। কিয়ামত পর্যন্ত মানুষ কুরআন মাজীদে তাঁর সে চারিত্রিক সার্টিফিকেট পাঠ করতে থাকবে। আর জগতের সর্বত্র ধ্বনিত হতে থাকবে তাঁর চারিত্রিক পবিত্রতার মহিমা। এ তো তাঁর পার্থিব পুরস্কার। আর আখিরাতে এর জন্য তিনি যে অকল্পনীয় পুরস্কার পাবেন সে তো রয়েছেই।
‘ইফক’-এর ঘটনা সম্পর্কিত কয়েকটি আয়াতে আল্লাহ তা'আলা ওইসকল সরলপ্রাণ মুসলিমদের তিরস্কার করেছেন, যারা মুনাফিকদের প্রচারণার ফাঁদে পড়ে গিয়েছিলেন। আল্লাহ তা'আলা তাদের লক্ষ্য করে বলেন-
إِذْ تَلَقَّوْنَهُ بِأَلْسِنَتِكُمْ (যখন তোমরা নিজ রসনা দ্বারা তা একে অন্যের থেকে প্রচার করছিলে)। অর্থাৎ তোমরা একে অন্যকে অপবাদের সে বিষয়টি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছিলে এবং তা অন্যের কাছে পৌঁছাচ্ছিলে। তাদের কারও সঙ্গে যখন কারও সাক্ষাৎ হতো তখন বলত, আমার কাছে এই এই খবর পৌছেছে বা আমি এই এই শুনেছি। তুমি কি তা শুনেছ? তুমি এ বিষয়ে কী জান? এর বাস্তবতা কতটুকু?
وَتَقُولُونَ بِأَفْوَاهِكُمْ مَا لَيْسَ لَكُمْ بِهِ عِلْمٌ (এবং নিজ মুখে এমন কথা বলছিলে, যে সম্পর্কে তোমাদের কিছু জানা নেই)। অর্থাৎ তোমরা তোমাদের মুখে এমন বিষয়ে কথা বলছিলে, যার বাস্তব কোনও অস্তিত্ব ছিল না। তোমরা পরস্পর যা নিয়ে কথা বলছিলে, সে সম্পর্কে তোমাদের কোনও জ্ঞান ছিল না, তা থাকতেও পারে না। কেননা কোনও বিষয়ে জ্ঞানলাভের জন্য তার বাস্তব অস্তিত্ব তো থাকতে হবে! মুনাফিকরা যা রটনা করছিল, তার তো কোনও বাস্তব অস্তিত্ব ছিল না। তার পুরোটাই ছিল নির্জলা অপবাদ, সম্পূর্ণ মিথ্যা।
উল্লেখ্য, খাঁটি মুমিনদের মধ্যে অতি অল্পসংখ্যকই মুনাফিকদের প্রচারণার ফাঁদে পড়ে গিয়েছিলেন। বেশিরভাগ সাহাবীই তাদের কথায় বিশ্বাস করেননি। একবার হযরত আবু আইয়ূব আনসারী রাযি. ঘরে আসলে তাঁর স্ত্রী বলেছিলেন, আপনি কি শুনেছেন লোকে আয়েশা সম্পর্কে কি কি সব কথা বলে? তিনি উত্তর দিলেন, ওরা সব মিথ্যুক। হে আইয়ুবের মা! তুমি কি এরূপ কাজ করতে পারবে? উত্তরে বললেন, কখনওই নয়। হযরত আবু আইয়ূব রাযি. বললেন, আয়েশা তো তোমার চেয়ে বেশি পবিত্র ও উত্তম (তাঁর পক্ষে এটা কী করে করা সম্ভব?)।
وَتَحْسَبُونَهُ هَيِّنًا (আর তোমরা এ ব্যাপারটাকে মামুলি মনে করছিলে)। এর দু'টি অর্থ হতে পারে। এক অর্থ এই যে, তোমরা অপবাদের ঘটনাটিকে তুচ্ছ বিষয় মনে করছিলে। দ্বিতীয় অর্থ এই যে, তোমরা অপবাদের প্রচারণাকে তুচ্ছ কাজ মনে করছিলে। তার পরিণতি কত মন্দ ও কত ভয়াবহ হতে পারে, সে সম্পর্কে তোমাদের ধারণা ছিল না, যে কারণে তোমরা অবলীলায় পরস্পর তা বলাবলি করছিলে। তোমাদের উচিত ছিল তাতে একদম কান না দেওয়া। এমনকি উচিত ছিল তার প্রতিবাদ করা। যেমন পরে এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
وَلَوْلَا إِذْ سَمِعْتُمُوهُ قُلْتُمْ مَا يَكُونُ لَنَا أَنْ نَتَكَلَّمَ بِهَذَا سُبْحَانَكَ هَذَا بُهْتَانٌ عَظِيمٌ (16)
‘তোমরা যখন এ কথা শুনেছিলে তখনই কেন বলে দিলে না- এ কথা মুখে আনার কোনও অধিকার আমাদের নেই; হে আল্লাহ! তুমি পবিত্র। এটা তো মারাত্মক অপবাদ।(সূরা নূর (২৪), আয়াত ১৬)
وَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ عَظِيمٌ (অথচ আল্লাহর কাছে এটা ছিল গুরুতর)। অর্থাৎ অন্যের নামে অপবাদ দেওয়া বা অপবাদের ঘটনা প্রচার করে বেড়ানো আল্লাহ তা'আলার কাছে গুরুতর অপরাধ এবং কঠিন শাস্তির কারণ। কোনও চরিত্রবতী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করা যে কী কঠিন পাপ, সে সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন হাদীছে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। এক হাদীছে তিনি ইরশাদ করেন-
«اجْتَنِبُوا السَّبْعَ المُوبِقَاتِ» ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا هُنَّ؟ قَالَ: «الشِّرْكُ بِاللَّهِ، وَالسِّحْرُ، وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّبَا، وَأَكْلُ مَالِ اليَتِيمِ، وَالتَّوَلِّي يَوْمَ الزَّحْفِ، وَقَذْفُ المُحْصَنَاتِ المُؤْمِنَاتِ الغَافِلاَتِ»
‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক বিষয় থেকে বেঁচে থেকো। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সেগুলো কী? তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা; জাদুটোনা করা; আল্লাহ যাকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন তাকে হত্যা করা, তবে ন্যায়ানুগভাবে হলে ভিন্ন কথা; সুদ খাওয়া; এতিমের মাল গ্রাস করা, যুদ্ধের দিনে পলায়ন করা এবং চরিত্রবতী সরলা মুমিন নারীর চরিত্রে অপবাদ দেওয়া।(সহীহ বুখারী: ২৭৬৬; সহীহ মুসলিম: ৭৯; সুনানে নাসাঈ ৩৬৭১; সহীহ ইবন হিব্বান : ৫৫৬১; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ৮৯৪; শু'আবুল ঈমান: ২৮০; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৪৫)
অপর এক হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إِنَّ قَذْفَ الْمُحْصَنَةِ يَهْدِمُ عَمَلَ مِائَةِ سَنَةٍ
‘চরিত্রবতী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ একশ বছরের আমল ধ্বংস করে দেয়।(হাকিম, আল-মুস্তাদরাক: ৮৭১২; মুসনাদুল বাযযার: ১০৬; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর: ৩০২৩
هو ضعيف مرفوعا، قال البزار: هذا الحديث لا نعلم أحدا أسنده إلا ليث (هو ابن أبي سليم)، ولا عن ليث إلا موسى بن أعين، وقد رواه جماعة عن أبي إسحاق عن صلة، عن حذيفة موقوفا اهـ (المحرر)
সাধারণ কোনও মুমিন চরিত্রবতী নারীর প্রতি কলঙ্ক আরোপ যদি এত বড় কঠিন পাপ হয়, তবে চিন্তা করা যায় এরূপ কলঙ্ক আরোপ যদি করা হয় আল্লাহ তা'আলার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একজন স্ত্রীর প্রতি, আবার নিজেদের মধ্যে তার প্রচারণাও চালানো হয়, তবে তার ভয়াবহতা কত কঠিন হয়? কেননা তা দ্বারা কেবল নবীপত্নিরই সম্মানহানি হয় না; স্বয়ং নবীরও অসম্মান হয়। এখানে তো রয়েছেন সকল নবী-রাসূলের সেরা হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আর তাঁর এ স্ত্রীও হলেন সেই মহিয়সী নারী, যাঁর সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেছেন-
فضلَ عائشةَ على النِّساءِ ، كفضل الثَّريدِ على سائرِ الطَّعامِ
‘সমস্ত নারীর উপর আয়েশার শ্রেষ্ঠত্ব সমস্ত খাদ্যের উপর ছারীদের শ্রেষ্ঠত্বের মতো।(সহীহ বুখারী: ৩৪১১; সহীহ মুসলিম: ২৪৩১; জামে তিরমিযী: ৩৮৮৭; সুনানে ইবন মাজাহ : ৩২৮০; সুনানে নাসাঈ ৩৯৪৭; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা ৩২২৮১; সুনানে দারিমী: ২১১৩)
হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কতটা প্রিয় ছিলেন তা এর দ্বারা অনুমান করা যায় যে, একদিন তিনি তাঁর সামনে আদরের কন্যা হযরত ফাতিমা রাযি.-কে লক্ষ্য করে বলেছিলেন-
أَي بُنَيَّةُ أَلَسْت تُحِبّينَ مَا أُحِبُّ ؟ فَقَالَتْ : بَلَى ، قَالَ : فَأَحِبِّي هَذِهِ
‘প্রিয় কন্যা! আমি যাকে ভালোবাসি, তুমি কি তাকে ভালোবাস না? তিনি বললেন, অবশ্যই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে তুমি একে ভালোবেসো।(সহীহ বুখারী: ২৫৮১; সহীহ মুসলিম: ২৪৪২; সুনানে নাসাঈ: ৩৯৪৪)
আয়াতটির শিক্ষা
ক. নির্দোষ ব্যক্তির উপর ব্যভিচারের অপবাদ দেওয়া কঠিন পাপ।
খ. কেউ কারও উপর ব্যভিচারের অপবাদ দিলে তাতে কর্ণপাত করতে নেই।
দুই নং আয়াত
إِنَّ رَبَّكَ لَبِالْمِرْصَادِ
অর্থ: নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক সকলের উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন।(সূরা ফাজর (৮৯), আয়াত ১৪)
ব্যাখ্যা
الْمِرْصَاد অর্থ ঘাঁটি, চৌকি, যেখানে প্রহরী বা সৈন্য ঘাপটি মেরে থাকে। এ হিসেবে আয়াতটির অর্থ হয়- তোমার প্রতিপালক ঘাঁটিতে আছেন। এর দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য তিনি বান্দার প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখেন। বান্দার কর্তব্য আল্লাহ তা'আলার ইবাদত- আনুগত্য করা। বান্দা সে কর্তব্য পালন করছে কি না, তিনি সেদিকে লক্ষ রাখেন। তাঁর জ্ঞান সর্বব্যাপী। কোনওকিছুই তাঁর অগোচরে থাকে না। ঘাঁটিতে অবস্থানকারী প্রহরীকে যেমন কেউ ফাঁকি দিয়ে যেতে পারে না, তেমনি আল্লাহ তা'আলার দৃষ্টিকেও কেউ ফাঁকি দিতে পারে না। সুতরাং তিনি মানুষকে তাদের কর্ম অনুযায়ী পরিপূর্ণ প্রতিদান দেবেন। কিন্তু মানুষ বড় গাফেল। দুনিয়ার ভোগ-আসক্তিতেই মত্ত। আখিরাত সম্পর্কে একদম চিন্তা করছে না। এ মত্ততা পরিহার করে তাদের সতর্ক ও সচেতন হয়ে যাওয়া উচিত। আর সে সচেতনতার দাবি তারা সবরকম পাপকর্ম ছেড়ে দেবে। পাপকর্ম তো করবেই না, এমনকি যেসব কাজ সন্দেহপূর্ণ, জায়েযও হতে পারে নাজায়েযও হতে পারে, তা করলে গুনাহ হওয়ারও আশঙ্কা আছে, তা থেকেও বেঁচে থাকবে। এরূপ কাজ থেকে বেঁচে থাকাকে পরহেযগারী বলে। আল্লাহ তা'আলার ভয় যার মধ্যে পুরোপুরি আছে, সে দুনিয়ায় যতদিন বেঁচে থাকবে, পরহেযগার হয়েই থাকবে। এটাই এ আয়াতের বার্তা।
আয়াতটির শিক্ষা
আমরা সর্বক্ষণ আল্লাহ তা'আলার সতর্কদৃষ্টির মধ্যে রয়েছি। সুতরাং কোনও অবস্থায়ই আমরা তাঁর অবাধ্যতা করব না। এমনকি যে কাজে অবাধ্যতা বা পাপের আশঙ্কা থাকে, তাও পরিহার করে চলব। আল্লাহ তা'আলা তাওফীক দিন।
الْوَرَعُ এর অর্থ পরিহার করা, ক্ষতিকর বিষয় থেকে বেঁচে থাকা। الشُّبُهَاتُ শব্দটি شبهة এর বহুবচন। এর অর্থ সন্দেহযুক্ত বিষয়। অর্থাৎ এমন বিষয়, যা হালাল না হারাম, বৈধ না অবৈধ তা স্পষ্ট নয়। এরূপ বিষয় পরিহার করাকে الْوَرَعُ বলা হয়। শব্দটি 'তাকওয়া'-এর সমার্থবোধক। তাকওয়ার বিভিন্ন স্তর আছে। এর সাধারণ স্তর হল হারাম ও নাজায়েয বিষয়াবলি থেকে বেঁচে থাকা। মধ্যম স্তর হল সন্দেহযুক্ত বিষয় থেকে বেঁচে থাকা। সাধারণত এ স্তরের তাকওয়াকে اَلْوَرَعُ বলা হয়। তাকওয়া ও الْوَرَعُ এর সর্বোচ্চ স্তর হল এমনসব বিষয় পরিহার করা, যা দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট করে।
উলামায়ে কেরাম বিভিন্নভাবে اَلْوَرَعُ এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ইয়াহইয়া ইবন মু‘আয রাযী রহ. বলেন, ওয়ারা‘ (اَلْوَرَعْ) হল কোনওরূপ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ছাড়া জ্ঞানের সীমারেখায় থেমে যাওয়া। এটা দু'প্রকার- প্রকাশ্য ওয়ারা‘ ও গুপ্ত ওয়ারা‘। প্রকাশ্য ওয়ারা‘ হল যাবতীয় নড়াচড়া কেবল আল্লাহরই জন্য হওয়া। আর গুপ্ত ওয়ারা‘ হল অন্তরে আল্লাহ ছাড়া অন্যকিছুর স্থান না দেওয়া।
ইয়ূনুস ইবন উবায়দ রহ. বলেন, যে-কোনও সন্দেহযুক্ত বিষয় থেকে দূরে থাকা এবং প্রতিটি পলকে নিজের হিসাব নেওয়াকে ওয়ারা‘ বলা হয়।
সুফয়ান ছাওরী রহ. বলেন, ওয়ারা‘র চেয়ে সহজ জিনিস দেখিনি। তোমার মনে যা নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয় তা ছেড়ে দাও। ব্যস এটাই ওয়ারা‘।
হাসান বসরী রহ. তাঁর এক গোলামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, দীনের নিয়ন্ত্রক বস্তু কী? গোলাম বলল, ওয়ারা‘। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এর আপদ কী? সে বলল, লোভ। হাসান বসরী রহ. তার এ কথায় মুগ্ধ হয়ে গেলেন।
ব্যক্তিজীবন গঠনে ওয়ারা‘র বিরাট ভূমিকা রয়েছে। এর দ্বারা মানুষের দীন ও ঈমানের হেফাজত হয়। বাঁচা যায় সর্বপ্রকার গুনাহ থেকে। যার মধ্যে এ গুণ আছে, তার দ্বারা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি সৎকর্ম হয়ে থাকে। এমনকি এর দ্বারা মানুষের ইজ্জত-সম্মানও রক্ষা পায়। ওয়ারা‘র অধিকারী ব্যক্তি কখনও এমন কোনও কাজ করবে না, যা দ্বারা আত্মসম্মান নষ্ট হয়। সে কেবল মুমিন-মুসলিমের কাছেই নয়; বরং সমস্ত মানুষ এমনকি দুই কাঁধের ফিরিশতাসহ অন্য সকল ফিরিশতা ও কুলমাখলুকের কাছে আত্মসম্মান রক্ষায় যত্নবান থাকবে। সে প্রতিটি কাজ করবে আল্লাহ তা'আলাকে হাজির- নাজির জেনে। এরূপ ব্যক্তির পক্ষে কি আদৌ গুনাহ করা সম্ভব? সে তো বেশি বেশি নেককাজই করবে। তার সমগ্র জীবন নিবেদিত থাকবে আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টায়।
ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বাক্যের মধ্যে ওয়ারা‘র যাবতীয় বিষয় নিয়ে এসেছেন। তিনি ইরশাদ করেন-
مِنْ حُسْنِ إِسْلَامِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لَا يَعْنِيْهِ
ব্যক্তির ইসলামের একটি সৌন্দর্য হল যা-কিছু অনর্থক তা ছেড়ে দেওয়া।(জামে' তিরমিযী: ২৩১৭; সুনানে ইবন মাজাহ : ৩৯৭৬)
সুতরাং অনর্থক কথা, অনর্থক দেখা, অনর্থক শোনা, অনর্থক ধরা, অনর্থক চলা, অনর্থক চিন্তা করা, এমনিভাবে প্রকাশ্য ও গুপ্ত অনর্থক যা-কিছু আছে তা সবই পরিহার করতে হবে। এটাই পূর্ণাঙ্গ ওয়ারা‘। এর দ্বারা একজন মুসলিমের ইসলাম সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়। এর দ্বারা ব্যক্তি একজন সুন্দর ও সত্যিকারের মুসলিম হয়।
সারকথা, ইসলামে ওয়ারা‘ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষা। আমাদের প্রত্যেকেরই এ গুণ অর্জনের চেষ্টা করা উচিত। কুরআন মাজীদের বহু আয়াত এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিপুল হাদীছে এর প্রতি উৎসাহদান করা হয়েছে। ইমাম নাওয়াবী রহ. এ অধ্যায়ে তার কয়েকটি উদ্ধৃত করেছেন। আমরা সেগুলোর বঙ্গানুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করছি। আল্লাহ তা'আলাই তাওফীকদাতা।
‘পরহেযগারী অবলম্বন…’ সম্পর্কিত কিছু আয়াত
এক নং আয়াত
وَتَحْسَبُونَهُ هَيِّنًا وَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ عَظِيمٌ (15)
অর্থ: আর তোমরা এ ব্যাপারটাকে মামুলি মনে করছিলে, অথচ আল্লাহর কাছে এটা ছিল গুরুতর।(সূরা নূর (২৪), আয়াত ১৫)
ব্যাখ্যা
এটি সূরা নূরের ১৫ নং আয়াতের একটি অংশ। পূর্ণ আয়াতটি এরকম-
إِذْ تَلَقَّوْنَهُ بِأَلْسِنَتِكُمْ وَتَقُولُونَ بِأَفْوَاهِكُمْ مَا لَيْسَ لَكُمْ بِهِ عِلْمٌ وَتَحْسَبُونَهُ هَيِّنًا وَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ عَظِيمٌ (15)
‘যখন তোমরা নিজ রসনা দ্বারা তা একে অন্যের থেকে প্রচার করছিলে এবং নিজ মুখে এমন কথা বলছিলে, যে সম্পর্কে তোমাদের কিছু জানা নেই আর তোমরা এ ব্যাপারটাকে মামুলি মনে করছিলে, অথচ আল্লাহর কাছে এটা ছিল গুরুতর।’
এ আয়াত এবং এর আগের ও পরের কয়েকটি আয়াতের সম্পর্ক ‘ইফক’-এর ঘটনার সঙ্গে। ‘ইফক’-এর অর্থ অপবাদ দেওয়া, বিশেষত কোনও চরিত্রবতী নারীর চরিত্র সম্পর্কে নোংরা অপবাদ দেওয়া। একদল মুনাফিক উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাযি. সম্পর্কে এরূপ অপবাদ দিয়েছিল। সে অপবাদের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই সূরা নূরের সংশ্লিষ্ট আয়াতসমূহ নাযিল হয়। তা দ্বারা স্পষ্ট করে দেওয়া হয় যে, মুনাফিকদের রটনা সম্পূর্ণই মিথ্যা এবং আম্মাজান আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. সর্বোচ্চ স্তরের একজন পূতঃপবিত্র চরিত্রের মহিয়সী নারী। নিচে ঘটনাটির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া গেল।
‘ইফক’-এর ঘটনা
মদীনা মুনাউওয়ারায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শুভাগমনের পর ইসলামের ক্রমবিস্তারে যে গতি সঞ্চার হয়, তা দেখে কুফরী শক্তি ক্ষোভে-আক্রোশে দাঁত কিড়মিড় করছিল। কাফেরদের মধ্যে একদল ছিল মুনাফিক, যারা মুখে মুখে ইসলাম গ্রহণ করেছিল, কিন্তু তাদের অন্তর ছিল মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি বিদ্বেষে ভরা। তাদের সার্বক্ষণিক চেষ্টা ছিল কীভাবে মুসলিমদের বদনাম করা যায় এবং কী উপায়ে তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা যায়। খোদ মদীনা মুনাউওয়ারার ভেতরই তাদের একটি বড়সড় দল বাস করত।
হিজরী ৬ষ্ঠ সনে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনুল মুস্তালিকের বিরুদ্ধে একটি অভিযান চালান। সে অভিযানে মুনাফিকদের একটি দলও অংশগ্রহণ করেছিল। উন্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. এ যুদ্ধে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলেন। যুদ্ধে বনুল মুস্তালিক পরাজিত হয়। তারপর নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধবন্দী ও গনীমতের মালামাল নিয়ে মদীনায় ফিরে আসেন।
ফেরার পথে এক জায়গায় বিশ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রাবিরতি দেওয়া হয়েছিল। সেখানে হযরত আয়েশা রাযি. প্রয়োজন সারার জন্য খানিকটা দূরে গিয়েছিলেন। ফিরে আসার পর দেখেন গলার হারটি সঙ্গে নেই। তিনি সেটির খোঁজাখুঁজিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এদিকে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সে কথা জানা ছিল না। তিনি যথাসময়ে সৈন্যদেরকে রওয়ানা হওয়ার হুকুম দিলেন। সবাই প্রস্তুত হয়ে রওয়ানা হয়ে পড়লেন। ওদিকে হযরত আয়েশা রাযি. হার খোঁজায় ব্যস্ত। তিনি ফিরে এসে দেখেন কাফেলা চলে গেছে। আল্লাহ তা'আলা তাঁকে প্রখর বুদ্ধিমত্তা ও অসাধারণ সংযমশক্তি দিয়েছিলেন। তিনি অস্থির হয়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি না করে সেখানেই বসে থাকলেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন টের পাবেন তিনি কাফেলায় নেই, তখন হয় নিজেই তাঁর খোঁজে এখানে আসবেন অথবা অন্য কাউকে পাঠাবেন।
যে-কোনও সফর থেকে ফেরার সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে কাফেলার পেছনে রেখে আসতেন। সেই ব্যক্তির কাজ ছিল কাফেলা চলে যাওয়ার পর কেউ কোনওকিছু ফেলে গেল কি না তার খোঁজ নেওয়া। এ কাফেলায় এ কাজের জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল বিশিষ্ট সাহাবী হযরত সাফওয়ান ইবন মুআত্তাল রাযি.-কে। তিনি খোঁজ নিতে গিয়ে যখন হযরত আয়েশা রাযি. যেখানে ছিলেন সেখানে পৌঁছলেন, তখন চমকে উঠলেন। বুঝতে দেরি হল না কী ভয়ানক দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। কালবিলম্ব না করে নিজের উটটি হযরত উম্মুল মুমিনীনের সামনে পেশ করলেন। তারপর নিজে খানিকটা দূরে সরে দাঁড়ালেন। উম্মুল মুমিনীন রাযি. দ্রুত তাতে সওয়ার হলেন। সাফওয়ান রাযি. সেটির লাগাম ধরে মদীনা মুনাউওয়ারায় নিয়ে আসলেন।
মুনাফিকরা তো সর্বদাই সুযোগের সন্ধানে থাকত। তাদের সর্দার আবদুল্লাহ ইবন উবাঈ এ ঘটনা জানতে পেরে তাদের দুরভিসন্ধি পূরণের একটি মোক্ষম সুযোগ পেয়ে গেল। সে সম্পূর্ণ অপবাদমূলক উক্ত ঘটনার প্রচারে লেগে গেল। সে ছিল বড়ই নীচ মানসিকতার লোক। আমাদের প্রাণের চেয়েও প্রিয় এ মায়ের প্রতি এমনই ন্যাক্কারজনক অপবাদ দিল, যা কোনও আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন মুসলিমের পক্ষে কিছুতেই উচ্চারণ করা সম্ভব নয়। আবদুল্লাহ ইবন উবাঈ এ অপবাদকে এতটাই প্রসিদ্ধ করে তুলল যে, জনাকয়েক সরলমতি মুসলিমও তার প্রচারণার ফাঁদে পড়ে গেল। মুনাফিক শ্রেণি বেশ মাথামুণ্ডুহীন বিষয় নিয়ে মেতে রইল। পরিবেশ বিষাক্ত করে তুলল। আম্মাজান আয়েশা সিদ্দীকা রাযি.-এর কিন্তু এসবের কিছুই জানা ছিল না। তিনি জানতে পারেন অনেক দিন পর। জানার পর শোক ও দুঃখে তাঁর কী যে অবস্থা হয়েছিল, অন্য কারও পক্ষে তা কতটুকু অনুভব করা সম্ভব? দিনের পর দিন কান্নার মধ্যেই কাটছিল। চোখে কোনও ঘুম ছিল না। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার পিতা-মাতা মনে করছিলেন কান্নার কারণে আমার কলিজা বুঝি ফেটে যাবে। এভাবে একমাস পার হয়ে গেল। আম্মাজান রাযি.-এর শরীর একদম ভেঙে পড়ল। উঠে দাঁড়ানোর শক্তিটুকু ছিল না। এর ভেতর নানারকম ঘটনা ঘটল। হাদীছ ও সীরাত গ্রন্থসমূহে তা বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে।
পরিশেষে একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত সিদ্দীকা রাযি. -এর শিয়রে এসে বসলেন। কিছু কথাবার্তা হল। এরই ভেতর ওহী নাযিলের ভাব তাঁর মধ্যে লক্ষ করা গেল। মুহূর্তের মধ্যে আচ্ছন্নতার ভাব কেটে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারায় আনন্দের উদ্ভাস ফুটে উঠল। তিনি সর্বপ্রথম যে কথা উচ্চারণ করলেন তা ছিল- সুসংবাদ নাও হে আয়েশা! আল্লাহ তা'আলা তোমার পবিত্রতা প্রকাশ করেছেন। এ সময় সূরা নূরের ১১ থেকে ২৬ নং পর্যন্ত মোট ১৬টি আয়াত নাযিল হয়। এর দ্বারা একদিকে হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি.-এর চারিত্রিক নির্মলতার পক্ষে ঐশী সনদ দিয়ে দেওয়া হয়, অন্যদিকে যারা চক্রান্তটির রুই-কাতলা ছিল তাদেরকে দেওয়া হয় কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারী বার্তা।
হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, আমার বিশ্বাস ছিল আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই আমার পবিত্রতা ঘোষণা করবেন, যেহেতু আরোপিত অপবাদ থেকে আমি ছিলাম সম্পূর্ণ মুক্ত ও পবিত্র। কিন্তু আমার সম্পর্কে যে ওহী নাযিল হবে, যা কিনা মানুষ তিলাওয়াত করবে, এরকম ধারণা আমার ছিল না। কেননা আমার দৃষ্টিতে সে তুলনায় আমার অবস্থা তো অতি নগণ্য। আমার আশা ছিল কেবল এতটুকুই যে, আল্লাহ তা'আলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কোনও স্বপ্ন দেখাবেন এবং তার মাধ্যমে আমার পবিত্রতা প্রকাশ করে দেবেন।
এক হাদীছে আছে, আল্লাহ তা'আলা যার মঙ্গল কামনা করেন, তাকে বিপদ-আপদে আক্রান্ত করেন। আল্লাহ তা'আলা আমাদের এ মহিয়সী মা হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি.-এর মঙ্গল চেয়েছিলেন। তাই তাঁকে ‘ইফক’-এর মতো এক কঠিন পরীক্ষার মধ্যে ফেলেছিলেন। একজন চরিত্রবতী নারীর পক্ষে এরচে' বড় কোনও বিপদ হতে পারে না। সে বিপদে তিনি সবর করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি পরীক্ষায় পুরোপুরি উত্তীর্ণ হয়েছেন। এর সুফলও পেয়েছেন অভাবনীয়। আল্লাহ তা'আলা তাঁর চরিত্রের পক্ষে ওহীর সনদ দিয়ে দিয়েছেন। কিয়ামত পর্যন্ত মানুষ কুরআন মাজীদে তাঁর সে চারিত্রিক সার্টিফিকেট পাঠ করতে থাকবে। আর জগতের সর্বত্র ধ্বনিত হতে থাকবে তাঁর চারিত্রিক পবিত্রতার মহিমা। এ তো তাঁর পার্থিব পুরস্কার। আর আখিরাতে এর জন্য তিনি যে অকল্পনীয় পুরস্কার পাবেন সে তো রয়েছেই।
‘ইফক’-এর ঘটনা সম্পর্কিত কয়েকটি আয়াতে আল্লাহ তা'আলা ওইসকল সরলপ্রাণ মুসলিমদের তিরস্কার করেছেন, যারা মুনাফিকদের প্রচারণার ফাঁদে পড়ে গিয়েছিলেন। আল্লাহ তা'আলা তাদের লক্ষ্য করে বলেন-
إِذْ تَلَقَّوْنَهُ بِأَلْسِنَتِكُمْ (যখন তোমরা নিজ রসনা দ্বারা তা একে অন্যের থেকে প্রচার করছিলে)। অর্থাৎ তোমরা একে অন্যকে অপবাদের সে বিষয়টি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছিলে এবং তা অন্যের কাছে পৌঁছাচ্ছিলে। তাদের কারও সঙ্গে যখন কারও সাক্ষাৎ হতো তখন বলত, আমার কাছে এই এই খবর পৌছেছে বা আমি এই এই শুনেছি। তুমি কি তা শুনেছ? তুমি এ বিষয়ে কী জান? এর বাস্তবতা কতটুকু?
وَتَقُولُونَ بِأَفْوَاهِكُمْ مَا لَيْسَ لَكُمْ بِهِ عِلْمٌ (এবং নিজ মুখে এমন কথা বলছিলে, যে সম্পর্কে তোমাদের কিছু জানা নেই)। অর্থাৎ তোমরা তোমাদের মুখে এমন বিষয়ে কথা বলছিলে, যার বাস্তব কোনও অস্তিত্ব ছিল না। তোমরা পরস্পর যা নিয়ে কথা বলছিলে, সে সম্পর্কে তোমাদের কোনও জ্ঞান ছিল না, তা থাকতেও পারে না। কেননা কোনও বিষয়ে জ্ঞানলাভের জন্য তার বাস্তব অস্তিত্ব তো থাকতে হবে! মুনাফিকরা যা রটনা করছিল, তার তো কোনও বাস্তব অস্তিত্ব ছিল না। তার পুরোটাই ছিল নির্জলা অপবাদ, সম্পূর্ণ মিথ্যা।
উল্লেখ্য, খাঁটি মুমিনদের মধ্যে অতি অল্পসংখ্যকই মুনাফিকদের প্রচারণার ফাঁদে পড়ে গিয়েছিলেন। বেশিরভাগ সাহাবীই তাদের কথায় বিশ্বাস করেননি। একবার হযরত আবু আইয়ূব আনসারী রাযি. ঘরে আসলে তাঁর স্ত্রী বলেছিলেন, আপনি কি শুনেছেন লোকে আয়েশা সম্পর্কে কি কি সব কথা বলে? তিনি উত্তর দিলেন, ওরা সব মিথ্যুক। হে আইয়ুবের মা! তুমি কি এরূপ কাজ করতে পারবে? উত্তরে বললেন, কখনওই নয়। হযরত আবু আইয়ূব রাযি. বললেন, আয়েশা তো তোমার চেয়ে বেশি পবিত্র ও উত্তম (তাঁর পক্ষে এটা কী করে করা সম্ভব?)।
وَتَحْسَبُونَهُ هَيِّنًا (আর তোমরা এ ব্যাপারটাকে মামুলি মনে করছিলে)। এর দু'টি অর্থ হতে পারে। এক অর্থ এই যে, তোমরা অপবাদের ঘটনাটিকে তুচ্ছ বিষয় মনে করছিলে। দ্বিতীয় অর্থ এই যে, তোমরা অপবাদের প্রচারণাকে তুচ্ছ কাজ মনে করছিলে। তার পরিণতি কত মন্দ ও কত ভয়াবহ হতে পারে, সে সম্পর্কে তোমাদের ধারণা ছিল না, যে কারণে তোমরা অবলীলায় পরস্পর তা বলাবলি করছিলে। তোমাদের উচিত ছিল তাতে একদম কান না দেওয়া। এমনকি উচিত ছিল তার প্রতিবাদ করা। যেমন পরে এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
وَلَوْلَا إِذْ سَمِعْتُمُوهُ قُلْتُمْ مَا يَكُونُ لَنَا أَنْ نَتَكَلَّمَ بِهَذَا سُبْحَانَكَ هَذَا بُهْتَانٌ عَظِيمٌ (16)
‘তোমরা যখন এ কথা শুনেছিলে তখনই কেন বলে দিলে না- এ কথা মুখে আনার কোনও অধিকার আমাদের নেই; হে আল্লাহ! তুমি পবিত্র। এটা তো মারাত্মক অপবাদ।(সূরা নূর (২৪), আয়াত ১৬)
وَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ عَظِيمٌ (অথচ আল্লাহর কাছে এটা ছিল গুরুতর)। অর্থাৎ অন্যের নামে অপবাদ দেওয়া বা অপবাদের ঘটনা প্রচার করে বেড়ানো আল্লাহ তা'আলার কাছে গুরুতর অপরাধ এবং কঠিন শাস্তির কারণ। কোনও চরিত্রবতী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করা যে কী কঠিন পাপ, সে সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন হাদীছে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। এক হাদীছে তিনি ইরশাদ করেন-
«اجْتَنِبُوا السَّبْعَ المُوبِقَاتِ» ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا هُنَّ؟ قَالَ: «الشِّرْكُ بِاللَّهِ، وَالسِّحْرُ، وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّبَا، وَأَكْلُ مَالِ اليَتِيمِ، وَالتَّوَلِّي يَوْمَ الزَّحْفِ، وَقَذْفُ المُحْصَنَاتِ المُؤْمِنَاتِ الغَافِلاَتِ»
‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক বিষয় থেকে বেঁচে থেকো। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সেগুলো কী? তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা; জাদুটোনা করা; আল্লাহ যাকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন তাকে হত্যা করা, তবে ন্যায়ানুগভাবে হলে ভিন্ন কথা; সুদ খাওয়া; এতিমের মাল গ্রাস করা, যুদ্ধের দিনে পলায়ন করা এবং চরিত্রবতী সরলা মুমিন নারীর চরিত্রে অপবাদ দেওয়া।(সহীহ বুখারী: ২৭৬৬; সহীহ মুসলিম: ৭৯; সুনানে নাসাঈ ৩৬৭১; সহীহ ইবন হিব্বান : ৫৫৬১; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ৮৯৪; শু'আবুল ঈমান: ২৮০; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৪৫)
অপর এক হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إِنَّ قَذْفَ الْمُحْصَنَةِ يَهْدِمُ عَمَلَ مِائَةِ سَنَةٍ
‘চরিত্রবতী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ একশ বছরের আমল ধ্বংস করে দেয়।(হাকিম, আল-মুস্তাদরাক: ৮৭১২; মুসনাদুল বাযযার: ১০৬; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর: ৩০২৩
هو ضعيف مرفوعا، قال البزار: هذا الحديث لا نعلم أحدا أسنده إلا ليث (هو ابن أبي سليم)، ولا عن ليث إلا موسى بن أعين، وقد رواه جماعة عن أبي إسحاق عن صلة، عن حذيفة موقوفا اهـ (المحرر)
সাধারণ কোনও মুমিন চরিত্রবতী নারীর প্রতি কলঙ্ক আরোপ যদি এত বড় কঠিন পাপ হয়, তবে চিন্তা করা যায় এরূপ কলঙ্ক আরোপ যদি করা হয় আল্লাহ তা'আলার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একজন স্ত্রীর প্রতি, আবার নিজেদের মধ্যে তার প্রচারণাও চালানো হয়, তবে তার ভয়াবহতা কত কঠিন হয়? কেননা তা দ্বারা কেবল নবীপত্নিরই সম্মানহানি হয় না; স্বয়ং নবীরও অসম্মান হয়। এখানে তো রয়েছেন সকল নবী-রাসূলের সেরা হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আর তাঁর এ স্ত্রীও হলেন সেই মহিয়সী নারী, যাঁর সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেছেন-
فضلَ عائشةَ على النِّساءِ ، كفضل الثَّريدِ على سائرِ الطَّعامِ
‘সমস্ত নারীর উপর আয়েশার শ্রেষ্ঠত্ব সমস্ত খাদ্যের উপর ছারীদের শ্রেষ্ঠত্বের মতো।(সহীহ বুখারী: ৩৪১১; সহীহ মুসলিম: ২৪৩১; জামে তিরমিযী: ৩৮৮৭; সুনানে ইবন মাজাহ : ৩২৮০; সুনানে নাসাঈ ৩৯৪৭; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা ৩২২৮১; সুনানে দারিমী: ২১১৩)
হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কতটা প্রিয় ছিলেন তা এর দ্বারা অনুমান করা যায় যে, একদিন তিনি তাঁর সামনে আদরের কন্যা হযরত ফাতিমা রাযি.-কে লক্ষ্য করে বলেছিলেন-
أَي بُنَيَّةُ أَلَسْت تُحِبّينَ مَا أُحِبُّ ؟ فَقَالَتْ : بَلَى ، قَالَ : فَأَحِبِّي هَذِهِ
‘প্রিয় কন্যা! আমি যাকে ভালোবাসি, তুমি কি তাকে ভালোবাস না? তিনি বললেন, অবশ্যই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে তুমি একে ভালোবেসো।(সহীহ বুখারী: ২৫৮১; সহীহ মুসলিম: ২৪৪২; সুনানে নাসাঈ: ৩৯৪৪)
আয়াতটির শিক্ষা
ক. নির্দোষ ব্যক্তির উপর ব্যভিচারের অপবাদ দেওয়া কঠিন পাপ।
খ. কেউ কারও উপর ব্যভিচারের অপবাদ দিলে তাতে কর্ণপাত করতে নেই।
দুই নং আয়াত
إِنَّ رَبَّكَ لَبِالْمِرْصَادِ
অর্থ: নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক সকলের উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন।(সূরা ফাজর (৮৯), আয়াত ১৪)
ব্যাখ্যা
الْمِرْصَاد অর্থ ঘাঁটি, চৌকি, যেখানে প্রহরী বা সৈন্য ঘাপটি মেরে থাকে। এ হিসেবে আয়াতটির অর্থ হয়- তোমার প্রতিপালক ঘাঁটিতে আছেন। এর দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য তিনি বান্দার প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখেন। বান্দার কর্তব্য আল্লাহ তা'আলার ইবাদত- আনুগত্য করা। বান্দা সে কর্তব্য পালন করছে কি না, তিনি সেদিকে লক্ষ রাখেন। তাঁর জ্ঞান সর্বব্যাপী। কোনওকিছুই তাঁর অগোচরে থাকে না। ঘাঁটিতে অবস্থানকারী প্রহরীকে যেমন কেউ ফাঁকি দিয়ে যেতে পারে না, তেমনি আল্লাহ তা'আলার দৃষ্টিকেও কেউ ফাঁকি দিতে পারে না। সুতরাং তিনি মানুষকে তাদের কর্ম অনুযায়ী পরিপূর্ণ প্রতিদান দেবেন। কিন্তু মানুষ বড় গাফেল। দুনিয়ার ভোগ-আসক্তিতেই মত্ত। আখিরাত সম্পর্কে একদম চিন্তা করছে না। এ মত্ততা পরিহার করে তাদের সতর্ক ও সচেতন হয়ে যাওয়া উচিত। আর সে সচেতনতার দাবি তারা সবরকম পাপকর্ম ছেড়ে দেবে। পাপকর্ম তো করবেই না, এমনকি যেসব কাজ সন্দেহপূর্ণ, জায়েযও হতে পারে নাজায়েযও হতে পারে, তা করলে গুনাহ হওয়ারও আশঙ্কা আছে, তা থেকেও বেঁচে থাকবে। এরূপ কাজ থেকে বেঁচে থাকাকে পরহেযগারী বলে। আল্লাহ তা'আলার ভয় যার মধ্যে পুরোপুরি আছে, সে দুনিয়ায় যতদিন বেঁচে থাকবে, পরহেযগার হয়েই থাকবে। এটাই এ আয়াতের বার্তা।
আয়াতটির শিক্ষা
আমরা সর্বক্ষণ আল্লাহ তা'আলার সতর্কদৃষ্টির মধ্যে রয়েছি। সুতরাং কোনও অবস্থায়ই আমরা তাঁর অবাধ্যতা করব না। এমনকি যে কাজে অবাধ্যতা বা পাপের আশঙ্কা থাকে, তাও পরিহার করে চলব। আল্লাহ তা'আলা তাওফীক দিন।
সন্দেহযুক্ত বিষয় পরিহার ও কলবের ইসলাহ করার গুরুত্ব
হাদীছ নং: ৫৮৭
হযরত নু‘মান ইবন বাশীর রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট। উভয়ের মধ্যে আছে কিছু সন্দেহযুক্ত বিষয়। বহু মানুষ তা জানে না। সুতরাং যে ব্যক্তি সন্দেহযুক্ত বিষয় পরিহার করল, সে তার দীন ও সম্মান রক্ষা করল। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি সন্দেহযুক্ত বিষয়ে লিপ্ত হল, সে হারামে লিপ্ত হয়ে গেল ঠিক ওই রাখালের মতো, যে হিমা (সরকারি সংরক্ষিত ভূমি)-এর আশেপাশে পশু চড়ায়। তার অসতর্কতাবশত হিমায় ঢুকে পড়ার আশু সম্ভাবনা রয়েছে। শোনো হে! প্রত্যেক বাদশারই হিমা (সংরক্ষিত ভূমি) থাকে। শোনো হে! আল্লাহর হিমা হল হারাম ও নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ। শোনো হে! শরীরের ভেতর একটি মাংসপিণ্ড আছে। সেটি ঠিক থাকলে সমস্ত শরীর ঠিক থাকে। আর সেটি নষ্ট হয়ে গেলে সমস্ত শরীর নষ্ট হয়ে যায়। শোনো হে! তা হল কলব (হৃৎপিণ্ড)। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৫২; সহীহ মুসলিম: ১৫৯৯; সুনানে ইবন মাজাহ ৩৯৮৫; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২২০৩; সুনানে দারিমী: ২৫৭৩; জামে তিরমিযী: ১২০৫; সহীহ ইবন হিব্বান: ৫৫৬৯)
হাদীছ নং: ৫৮৭
হযরত নু‘মান ইবন বাশীর রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট। উভয়ের মধ্যে আছে কিছু সন্দেহযুক্ত বিষয়। বহু মানুষ তা জানে না। সুতরাং যে ব্যক্তি সন্দেহযুক্ত বিষয় পরিহার করল, সে তার দীন ও সম্মান রক্ষা করল। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি সন্দেহযুক্ত বিষয়ে লিপ্ত হল, সে হারামে লিপ্ত হয়ে গেল ঠিক ওই রাখালের মতো, যে হিমা (সরকারি সংরক্ষিত ভূমি)-এর আশেপাশে পশু চড়ায়। তার অসতর্কতাবশত হিমায় ঢুকে পড়ার আশু সম্ভাবনা রয়েছে। শোনো হে! প্রত্যেক বাদশারই হিমা (সংরক্ষিত ভূমি) থাকে। শোনো হে! আল্লাহর হিমা হল হারাম ও নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ। শোনো হে! শরীরের ভেতর একটি মাংসপিণ্ড আছে। সেটি ঠিক থাকলে সমস্ত শরীর ঠিক থাকে। আর সেটি নষ্ট হয়ে গেলে সমস্ত শরীর নষ্ট হয়ে যায়। শোনো হে! তা হল কলব (হৃৎপিণ্ড)। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৫২; সহীহ মুসলিম: ১৫৯৯; সুনানে ইবন মাজাহ ৩৯৮৫; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২২০৩; সুনানে দারিমী: ২৫৭৩; জামে তিরমিযী: ১২০৫; সহীহ ইবন হিব্বান: ৫৫৬৯)
مقدمة الامام النووي
68 - باب الورع وترك الشبهات
قَالَ اللهُ تَعَالَى: {وَتَحْسَبُونَهُ هَيِّنًا وَهُوَ عِنْدَ اللهِ عَظِيمٌ} [النور: 15]، وقال تَعَالَى: {إنَّ رَبَّكَ لَبِالْمِرْصَادِ} [الفجر: 14].
قَالَ اللهُ تَعَالَى: {وَتَحْسَبُونَهُ هَيِّنًا وَهُوَ عِنْدَ اللهِ عَظِيمٌ} [النور: 15]، وقال تَعَالَى: {إنَّ رَبَّكَ لَبِالْمِرْصَادِ} [الفجر: 14].
587 - وعن النعمان بن بشيرٍ رضي الله عنهما، قَالَ: سَمِعْتُ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - يقول: «إنَّ الحَلاَلَ بَيِّنٌ، وَإنَّ الحَرامَ بَيِّنٌ، وَبَيْنَهُمَا مُشْتَبَهَاتٌ لاَ يَعْلَمُهُنَّ كَثيرٌ مِنَ النَّاسِ، فَمَنِ اتَّقَى الشُّبُهَاتِ، اسْتَبْرَأَ لِدِينهِ وَعِرْضِهِ، وَمَنْ وَقَعَ فِي الشُّبُهَاتِ وَقَعَ في الحَرَامِ، كَالرَّاعِي يَرْعَى حَوْلَ الحِمَى يُوشِكُ أَنْ يَرْتَعَ فِيهِ، ألاَ وَإنَّ لكُلّ مَلِكٍ حِمَىً، ألاَ وَإنَّ حِمَى اللهِ مَحَارِمُهُ، ألاَ وَإنَّ فِي الجَسَدِ مُضْغَةً إِذَا صَلَحَت صَلَحَ الْجَسَدُ كُلُّهُ، وَإِذَا فَسَدَتْ فَسَدَ الْجَسَدُ كُلُّهُ، ألاَ وَهِيَ القَلْبُ». متفقٌ عَلَيْهِ، (1) وروياه مِنْ طرقٍ بِألفَاظٍ متقاربةٍ.
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৮৮
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায়: ৬৮ পরহেযগারী অবলম্বন ও সন্দেহযুক্ত বিষয়াবলি পরিহার
খাদ্যে পরহেযগারী ও সতর্কতা অবলম্বনের গুরুত্ব
হাদীছ নং: ৫৮৮
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাস্তায় একটি খেজুর পেলেন। তিনি বললেন, আমি যদি এটি সদাকার খেজুর হওয়ার আশঙ্কা না করতাম, তবে এটি খেয়ে ফেলতাম।-বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ২৪৩১; সহীহ মুসলিম: ১০৭১; সুনানে আবু দাউদঃ ১৬৫১; মুসনাদে আহমাদ: ১২১৯০; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা: ৫৭৯৯; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ৫৩৫৮)
হাদীছ নং: ৫৮৮
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাস্তায় একটি খেজুর পেলেন। তিনি বললেন, আমি যদি এটি সদাকার খেজুর হওয়ার আশঙ্কা না করতাম, তবে এটি খেয়ে ফেলতাম।-বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ২৪৩১; সহীহ মুসলিম: ১০৭১; সুনানে আবু দাউদঃ ১৬৫১; মুসনাদে আহমাদ: ১২১৯০; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা: ৫৭৯৯; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ৫৩৫৮)
مقدمة الامام النووي
68 - باب الورع وترك الشبهات
قَالَ اللهُ تَعَالَى: {وَتَحْسَبُونَهُ هَيِّنًا وَهُوَ عِنْدَ اللهِ عَظِيمٌ} [النور: 15]، وقال تَعَالَى: {إنَّ رَبَّكَ لَبِالْمِرْصَادِ} [الفجر: 14].
قَالَ اللهُ تَعَالَى: {وَتَحْسَبُونَهُ هَيِّنًا وَهُوَ عِنْدَ اللهِ عَظِيمٌ} [النور: 15]، وقال تَعَالَى: {إنَّ رَبَّكَ لَبِالْمِرْصَادِ} [الفجر: 14].
588 - وعن أنسٍ - رضي الله عنه: أنَّ النبيَّ - صلى الله عليه وسلم - وَجَدَ تَمْرَةً فِي الطَّرِيقِ، فَقَالَ: «لَوْلاَ أنِّي أخَافُ أَنْ تَكُونَ مِنَ الصَّدَقَة لأَكَلْتُهَا». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৮৯
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায়: ৬৮ পরহেযগারী অবলম্বন ও সন্দেহযুক্ত বিষয়াবলি পরিহার
সচ্চরিত্রের গুরুত্ব ও পাপকর্মের আলামত
হাদীছ নং: ৫৮৯
হযরত নাউওয়াস ইবন সাম‘আন রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, পুণ্য তো উত্তম চরিত্রই। আর পাপ তাই, যে সম্পর্কে তোমার অন্তরে খটকা লাগে এবং তুমি পসন্দ কর না মানুষ তা জেনে ফেলুক।-মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ২৫৫৩: জামে' তিরমিযী: ২৩৮৯; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২৫৩৩৫: সুনানে দারিমী: ২৮৩১; বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ: ২৯৫; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ২১৩৮)
হাদীছ নং: ৫৮৯
হযরত নাউওয়াস ইবন সাম‘আন রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, পুণ্য তো উত্তম চরিত্রই। আর পাপ তাই, যে সম্পর্কে তোমার অন্তরে খটকা লাগে এবং তুমি পসন্দ কর না মানুষ তা জেনে ফেলুক।-মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ২৫৫৩: জামে' তিরমিযী: ২৩৮৯; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২৫৩৩৫: সুনানে দারিমী: ২৮৩১; বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ: ২৯৫; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ২১৩৮)
مقدمة الامام النووي
68 - باب الورع وترك الشبهات
589 - وعن النَّواسِ بن سمعان - رضي الله عنه - عن النبيِّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «البِرُّ: حُسْنُ الخُلُقِ، وَالإِثْمُ: مَا حَاكَ فِي نَفْسِكَ، وَكَرِهْتَ أَنْ يَطَّلِعَ عَلَيْهِ النَّاسُ». رواه مسلم. (1)
«حَاكَ» بِالحاءِ المهملةِ والكافِ: أيْ تَرَدَّدَ فِيهِ.
«حَاكَ» بِالحاءِ المهملةِ والكافِ: أيْ تَرَدَّدَ فِيهِ.
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৯০
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায়: ৬৮ পরহেযগারী অবলম্বন ও সন্দেহযুক্ত বিষয়াবলি পরিহার
পাপ-পুণ্য সম্পর্কে মনের সাক্ষ্য
হাদীছ নং: ৫৯০
হযরত ওয়াবিসা ইবন মা‘বাদ রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলাম। তিনি বললেন, তুমি কি পুণ্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে এসেছ? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেন, তোমার অন্তরকে জিজ্ঞেস করো। পুণ্য তাই, যাতে তোমার মন স্বস্তিবোধ করে এবং তোমার হৃদয় তাতে সন্তুষ্ট থাকে। আর গুনাহ তাই, যে সম্পর্কে অন্তরে খটকা দেখা দেয় ও মনে সন্দেহ থাকে, যদিও লোকে তার সপক্ষে তোমাকে ফাতওয়া দেয় এবং তারা তোমাকে ফাতওয়া দেয়। -দারিমী
(মুসনাদে আহমাদ: ১৭৯৯৯; তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর: ৪০৩; সুনানে দারিমী। ২৫৭৫; মুসনাদে আবু ইয়া'লা: ১৫৮৬; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ২১৩৯)
হাদীছ নং: ৫৯০
হযরত ওয়াবিসা ইবন মা‘বাদ রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলাম। তিনি বললেন, তুমি কি পুণ্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে এসেছ? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেন, তোমার অন্তরকে জিজ্ঞেস করো। পুণ্য তাই, যাতে তোমার মন স্বস্তিবোধ করে এবং তোমার হৃদয় তাতে সন্তুষ্ট থাকে। আর গুনাহ তাই, যে সম্পর্কে অন্তরে খটকা দেখা দেয় ও মনে সন্দেহ থাকে, যদিও লোকে তার সপক্ষে তোমাকে ফাতওয়া দেয় এবং তারা তোমাকে ফাতওয়া দেয়। -দারিমী
(মুসনাদে আহমাদ: ১৭৯৯৯; তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর: ৪০৩; সুনানে দারিমী। ২৫৭৫; মুসনাদে আবু ইয়া'লা: ১৫৮৬; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ২১৩৯)
مقدمة الامام النووي
68 - باب الورع وترك الشبهات
590 - وعن وَابِصَةَ بن مَعبدٍ - رضي الله عنه - قَالَ: أتَيْتُ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - فَقَالَ: «جئتَ تَسْألُ عَنِ البِرِّ؟» قُلْتُ: نَعَمْ، فَقَالَ: «اسْتَفْتِ قَلْبَكَ، البرُّ: مَا اطْمَأنَّت إِلَيْهِ النَّفسُ، وَاطْمأنَّ إِلَيْهِ القَلْبُ، وَالإثْمُ: مَا حَاكَ في النَّفْسِ، وَتَرَدَّدَ فِي الصَّدْرِ، وَإنْ أفْتَاكَ النَّاسُ وَأفْتُوكَ» حديث حسن، رواه أحمد والدَّارمِيُّ في مُسْنَدَيْهِمَا. (1)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৯১
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায়: ৬৮ পরহেযগারী অবলম্বন ও সন্দেহযুক্ত বিষয়াবলি পরিহার
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দুধভাইবোনের সম্পর্ক থাকার সন্দেহ দেখা দিলে
হাদীছ নং: ৫৯১
হযরত উকবা ইবনুল হারিছ রাযি. থেকে বর্ণিত যে, তিনি আবু ইহাব ইবন আযীযের এক কন্যাকে বিবাহ করেন। তারপর জনৈকা মহিলা তাঁর কাছে এসে বলল, আমি উকবাকে এবং সে যাকে বিবাহ করেছে তাকে দুধ পান করিয়েছি। উকবা তাকে বললেন, আমি জানি না যে, আপনি আমাকে দুধ পান করিয়েছেন এবং আপনি আমাকে তা জানানওনি। তারপর তিনি সওয়ার হয়ে মদীনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট চলে গেলেন এবং তাঁকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কীভাবে (তুমি তাকে রাখবে), অথচ বলা হয়েছে (সে তোমার দুধবোন)? সুতরাং উকবা তাকে পরিত্যাগ করলেন এবং সে অন্য এক স্বামীর বিবাহে আবদ্ধ হলো। -বুখারী
(সহীহ বুখারী: ৮৮; সহীহ ইবন হিব্বান: ৪২১৮; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ৪৫৭৩; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ২২৮৬; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ১৫৪৩৫; সুনানে দারিমী: ২৩০১)
হাদীছ নং: ৫৯১
হযরত উকবা ইবনুল হারিছ রাযি. থেকে বর্ণিত যে, তিনি আবু ইহাব ইবন আযীযের এক কন্যাকে বিবাহ করেন। তারপর জনৈকা মহিলা তাঁর কাছে এসে বলল, আমি উকবাকে এবং সে যাকে বিবাহ করেছে তাকে দুধ পান করিয়েছি। উকবা তাকে বললেন, আমি জানি না যে, আপনি আমাকে দুধ পান করিয়েছেন এবং আপনি আমাকে তা জানানওনি। তারপর তিনি সওয়ার হয়ে মদীনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট চলে গেলেন এবং তাঁকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কীভাবে (তুমি তাকে রাখবে), অথচ বলা হয়েছে (সে তোমার দুধবোন)? সুতরাং উকবা তাকে পরিত্যাগ করলেন এবং সে অন্য এক স্বামীর বিবাহে আবদ্ধ হলো। -বুখারী
(সহীহ বুখারী: ৮৮; সহীহ ইবন হিব্বান: ৪২১৮; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ৪৫৭৩; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ২২৮৬; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ১৫৪৩৫; সুনানে দারিমী: ২৩০১)
مقدمة الامام النووي
68 - باب الورع وترك الشبهات
591 - وعن أَبي سِرْوَعَةَ - بكسر السين المهملة وفتحها - عُقبَةَ بنِ الحارِثِ - رضي الله عنه: أنَّهُ تَزَوَّجَ ابنَةً لأبي إهَابِ بن عزيزٍ، فَأتَتْهُ امْرَأةٌ، فَقَالَتْ: إنّي قَدْ أرضَعْتُ عُقْبَةَ وَالَّتِي قَدْ تَزَوَّجَ بِهَا. فَقَالَ لَهَا عُقْبَةُ: مَا أَعْلَمُ أنَّك أرضَعْتِنِي وَلاَ أخْبَرْتِني، فَرَكِبَ إِلَى رسول الله - صلى الله عليه وسلم - ِ بِالمَدِينَةِ، فَسَأَلَهُ: فَقَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «كَيْفَ وَقَد قِيلَ؟» فَفَارَقَهَا عُقْبَةُ وَنَكَحَتْ زَوْجًا غَيْرَهُ. رواه البخاري. (1)
«إهَابٌ» بكسر الهمزة وَ «عَزيزٌ» بفتح العين وبزاي مكررة.
«إهَابٌ» بكسر الهمزة وَ «عَزيزٌ» بفتح العين وبزاي مكررة.
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৯২
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায়: ৬৮ পরহেযগারী অবলম্বন ও সন্দেহযুক্ত বিষয়াবলি পরিহার
সন্দেহযুক্ত বিষয় পরিহার করার গুরুত্ব
হাদীছ নং: ৫৯২
হযরত হাসান ইবন আলী রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে (তাঁর এই বাণী) স্মরণ রেখেছি যে, যা তোমার মনে খটকা সৃষ্টি করে তা বর্জন করে যা খটকা সৃষ্টি করে না তা অবলম্বন কর। -তিরমিযী
(জামে‘ তিরমিযী: ২৫২০: সুনানে নাসাঈ: ৫৭১১)
ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এটি একটি হাসান সহীহ হাদীছ।
হাদীছ নং: ৫৯২
হযরত হাসান ইবন আলী রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে (তাঁর এই বাণী) স্মরণ রেখেছি যে, যা তোমার মনে খটকা সৃষ্টি করে তা বর্জন করে যা খটকা সৃষ্টি করে না তা অবলম্বন কর। -তিরমিযী
(জামে‘ তিরমিযী: ২৫২০: সুনানে নাসাঈ: ৫৭১১)
ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এটি একটি হাসান সহীহ হাদীছ।
مقدمة الامام النووي
68 - باب الورع وترك الشبهات
592 - وعن الحسن بن علي رضي الله عنهما، قَالَ: حَفِظتُ من رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «دَعْ مَا يَريبُكَ إِلَى مَا لاَ يَرِيبُكَ». رواه الترمذي، (1) وقال: «حديث حسن صحيح».
معناه: اتْرُكْ مَا تَشُكُّ فِيهِ، وَخُذْ مَا لاَ تَشُكُّ فِيهِ.
معناه: اتْرُكْ مَا تَشُكُّ فِيهِ، وَخُذْ مَا لاَ تَشُكُّ فِيهِ.
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৯৩
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায়: ৬৮ পরহেযগারী অবলম্বন ও সন্দেহযুক্ত বিষয়াবলি পরিহার
হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি.-এর তাকওয়ার উচ্চতা
হাদীছ নং: ৫৯৩
হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, আবূ বকর সিদ্দীক রাযি.-এর একজন গোলাম ছিল। সে তাঁকে নিজ উপার্জন থেকে নির্ধারিত পরিমাণ প্রদান করত। তিনি তার প্রদত্ত সে উপার্জন থেকে খেতেন। একদিন সে একটা জিনিস নিয়ে আসল। তিনি তা থেকে খেলেন। গোলাম বলল, আপনি জানেন এটা কী? আবু বকর রাযি. বললেন, কী এটা? সে বলল, আমি জাহিলী যুগে এক ব্যক্তির ভাগ্যগণনা করেছিলাম। আমি ভাগ্যগণনা ভালো জানতাম না। আমি কেবল তাকে ধোঁকাই দিয়েছিলাম। সে ইদানীং আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার বিনিময়ে এই জিনিসটি আমাকে দিয়েছে, যা থেকে আপনি খেলেন। ফলে আবু বকর রাযি. মুখে হাত ঢুকিয়ে দিলেন এবং পেটে যা-কিছু ছিল তা সব বমি করে দিলেন। -বুখারী
(সহীহ বুখারী: ৩৮৪২; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১১৫২৭; শু'আবুল ঈমান: ৫৩৮৭)
হাদীছ নং: ৫৯৩
হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, আবূ বকর সিদ্দীক রাযি.-এর একজন গোলাম ছিল। সে তাঁকে নিজ উপার্জন থেকে নির্ধারিত পরিমাণ প্রদান করত। তিনি তার প্রদত্ত সে উপার্জন থেকে খেতেন। একদিন সে একটা জিনিস নিয়ে আসল। তিনি তা থেকে খেলেন। গোলাম বলল, আপনি জানেন এটা কী? আবু বকর রাযি. বললেন, কী এটা? সে বলল, আমি জাহিলী যুগে এক ব্যক্তির ভাগ্যগণনা করেছিলাম। আমি ভাগ্যগণনা ভালো জানতাম না। আমি কেবল তাকে ধোঁকাই দিয়েছিলাম। সে ইদানীং আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার বিনিময়ে এই জিনিসটি আমাকে দিয়েছে, যা থেকে আপনি খেলেন। ফলে আবু বকর রাযি. মুখে হাত ঢুকিয়ে দিলেন এবং পেটে যা-কিছু ছিল তা সব বমি করে দিলেন। -বুখারী
(সহীহ বুখারী: ৩৮৪২; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১১৫২৭; শু'আবুল ঈমান: ৫৩৮৭)
مقدمة الامام النووي
68 - باب الورع وترك الشبهات
593 - وعن عائشة رضي الله عنها، قالت: كَانَ لأبي بَكر الصديق - رضي الله عنه - غُلاَمٌ يُخْرِجُ لَهُ الخَرَاجَ، وَكَانَ أَبُو بَكْرٍ يَأكُلُ مِنْ خَرَاجِهِ، فَجَاءَ يَوْمًا بِشَيءٍ، فَأكَلَ مِنْهُ أَبُو بَكْرٍ، فَقَالَ لَهُ الغُلامُ: تَدْرِي مَا هَذَا؟ فَقَالَ أَبُو بكر: وَمَا هُوَ؟ قَالَ: كُنْتُ تَكَهَّنْتُ (1) لإنْسَانٍ [ص:199] في الجَاهِلِيَّةِ وَمَا أُحْسِنُ الكَهَانَةَ، إِلاَّ أَنّي خَدَعْتُهُ، فَلَقِيَنِي، فَأعْطَانِي لِذلِكَ، هَذَا الَّذِي أَكَلْتَ مِنْهُ، فَأدْخَلَ أَبُو بَكْرٍ يَدَهُ فَقَاءَ كُلَّ شَيْءٍ فِي بَطْنِهِ. رواه البخاري. (2)
«الخَرَاجُ»: شَيْءٌ يَجْعَلُهُ السَّيِّدُ عَلَى عَبْدِهِ يُؤدِّيهِ كُلَّ يَومٍ، وَبَاقِي كَسْبِهِ يَكُونُ لِلْعَبْدِ.
«الخَرَاجُ»: شَيْءٌ يَجْعَلُهُ السَّيِّدُ عَلَى عَبْدِهِ يُؤدِّيهِ كُلَّ يَومٍ، وَبَاقِي كَسْبِهِ يَكُونُ لِلْعَبْدِ.
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৯৪
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায়: ৬৮ পরহেযগারী অবলম্বন ও সন্দেহযুক্ত বিষয়াবলি পরিহার
হযরত উমর রাযি.-এর সূক্ষ্ম তাকওয়াদৃষ্টির উদাহরণ
হাদীছ নং: ৫৯৪
নাফে‘ বর্ণনা করেন, উমর ইবনুল খাত্তাব রাযি. প্রথমদিকের হিজরতকারীদের জন্য ভাতা নির্ধারণ করেছিলেন চার হাজার দিরহাম। কিন্তু তিনি নিজ পুত্রের জন্য তিন হাজার পাঁচশত দিরহাম নির্ধারণ করেন। তাঁকে বলা হল, সেও তো মুহাজিরদের একজন। তার ভাতা কম করলেন কেন? তিনি বললেন, তাকে তো তার পিতা হিজরতকালে সঙ্গে নিয়ে এসেছিল। তিনি বোঝাচ্ছিলেন, যারা নিজে নিজে হিজরত করেছে, সে তাদের মতো নয়। -বুখারী
(সহীহ বুখারী: ৩৯১২: বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১২৯৯৩)
হাদীছ নং: ৫৯৪
নাফে‘ বর্ণনা করেন, উমর ইবনুল খাত্তাব রাযি. প্রথমদিকের হিজরতকারীদের জন্য ভাতা নির্ধারণ করেছিলেন চার হাজার দিরহাম। কিন্তু তিনি নিজ পুত্রের জন্য তিন হাজার পাঁচশত দিরহাম নির্ধারণ করেন। তাঁকে বলা হল, সেও তো মুহাজিরদের একজন। তার ভাতা কম করলেন কেন? তিনি বললেন, তাকে তো তার পিতা হিজরতকালে সঙ্গে নিয়ে এসেছিল। তিনি বোঝাচ্ছিলেন, যারা নিজে নিজে হিজরত করেছে, সে তাদের মতো নয়। -বুখারী
(সহীহ বুখারী: ৩৯১২: বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১২৯৯৩)
مقدمة الامام النووي
68 - باب الورع وترك الشبهات
594 - وعن نافِع: أن عُمَرَ بن الخَطّاب - رضي الله عنه - كَانَ فَرَضَ لِلمُهَاجِرينَ الأَوَّلِينَ أَرْبَعَةَ الآفٍ وَفَرَضَ لابْنِهِ ثَلاَثَة آلافٍ وَخَمْسَمئَةٍ، فَقيلَ لَهُ: هُوَ مِنَ المُهَاجِرينَ فَلِمَ نَقَصْتَهُ؟ فَقَالَ: إنَّمَا هَاجَرَ بِهِ أبُوهُ. يقول: لَيْسَ هُوَ كَمَنْ هَاجَرَ بِنَفْسِهِ. رواه البخاري. (1)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৯৫
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায়: ৬৮ পরহেযগারী অবলম্বন ও সন্দেহযুক্ত বিষয়াবলি পরিহার
উচ্চস্তরের মুত্তাকী হওয়ার উপায়
হাদীছ নং: ৫৯৫
হযরত আতিয়্যাহ ইবন উরওয়াহ আস-সা‘দী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, বান্দা ততক্ষণ পর্যন্ত মুত্তাকীদের স্তরে পৌঁছাতে পারে না, যতক্ষণ না সে দূষণীয় জিনিস থেকে বাঁচার জন্য নির্দোষ জিনিস ছেড়ে দেয়। -তিরমিযী
(জামে তিরমিযী: ২৪৫১; সুনানে ইবন মাজাহঃ ৪২১৫; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৪৪৬; হাকিম, আল-মুস্তাদরাক: ৭৮৯৯; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা ১০৮২০; শু'আবুল ঈমান: ৫৩৬১)
ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এটি একটি হাসান হাদীছ।
হাদীছ নং: ৫৯৫
হযরত আতিয়্যাহ ইবন উরওয়াহ আস-সা‘দী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, বান্দা ততক্ষণ পর্যন্ত মুত্তাকীদের স্তরে পৌঁছাতে পারে না, যতক্ষণ না সে দূষণীয় জিনিস থেকে বাঁচার জন্য নির্দোষ জিনিস ছেড়ে দেয়। -তিরমিযী
(জামে তিরমিযী: ২৪৫১; সুনানে ইবন মাজাহঃ ৪২১৫; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৪৪৬; হাকিম, আল-মুস্তাদরাক: ৭৮৯৯; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা ১০৮২০; শু'আবুল ঈমান: ৫৩৬১)
ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এটি একটি হাসান হাদীছ।
مقدمة الامام النووي
68 - باب الورع وترك الشبهات
595 - وعن عَطِيَّةَ بن عُروة السَّعْدِيِّ الصحابيِّ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «لاَ يَبْلُغُ الْعَبدُ أَنْ يَكُونَ مِنَ المُتَّقِينَ حَتَّى يَدَعَ مَا لاَ بَأسَ بِهِ، حَذَرًا مِمَّا بِهِ بَأسٌ» رواه الترمذي، (1) وقال: «حديث حسن».
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৯৬
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ যখন মানুষের মধ্যে ব্যাপক অবক্ষয় দেখা দেয়, যমানা খারাপ হয়ে যায় অথবা আপন দীনের ক্ষেত্রে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়া বা হারাম ও সন্দেহপূর্ণ বিষয়ে কিংবা এরূপ অন্য কিছুতে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়, তখন নিঃসঙ্গতা অবলম্বন মুস্তাহাব হওয়া প্রসঙ্গ
العزلة এর অর্থ বিচ্ছিন্নতা ও নিঃসঙ্গতা। মানুষকে আল্লাহ তা'আলা সামাজিক জীবরূপে সৃষ্টি করেছেন। স্বাভাবিকভাবে তাকে সকলের সঙ্গে মিলেমিশে বাস করতে হয়। সে অন্যের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করতে পারে না। ইসলাম এক স্বভাবধর্ম। ইসলামের যাবতীয় বিধানে মানুষের এই স্বাভাবিক অবস্থার প্রতি লক্ষ রাখা হয়েছে। তার মৌলিক প্রতিটি বিধানই সমাজঘনিষ্ঠ। সে তার অনুসারীদের সমাজের একজন হয়ে থাকতে উৎসাহ দেয় এবং সকলের ভেতরে থেকেই দীনী দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে রত থাকতে বলে। তবে যদি কখনও এমন কোনও ব্যতিক্রম অবস্থা দেখা দেয়, যখন মিলেমিশে থাকার দ্বারা তার আসল কাজ ইবাদত-বন্দেগী চালিয়ে যাওয়া বাধাগ্রস্ত হয়, তখন তাকে নিঃসঙ্গ জীবনযাপনেরও অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে এটা জরুরিও সাব্যস্ত করা হয়েছে।
সাধারণ অবস্থায় মানুষের সঙ্গে মেলামেশা ছেড়ে দিয়ে নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করা যাবে কি না, সে সম্পর্কে উলামায়ে কেরাম বিভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। কারও মতে নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করাই উত্তম। কেননা তাতে করে যেসব গুনাহ অন্যের দেখাদেখি হয়ে যায়, তা থেকে বাঁচা যায়। তাছাড়া এর দ্বারা নিজ অনিষ্ট থেকেও অন্যের হেফাজত হয়। অবশ্য এ ক্ষেত্রে শর্ত হল ইবাদত-বন্দেগী ও দীনের জরুরি বিষয়ে নিজের জানা থাকতে হবে।
কারও মতে মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে থাকা উত্তম। কেননা এর মধ্যে বহুবিধ ফায়দা রয়েছে। যেমন জুমু'আ ও জামাতে হাজির হতে পারা, মুসলিমদের দল বড় করে দেখানোয় ভূমিকা রাখা, দুস্থ ও বিপন্নের সাহায্য করতে পারা, রোগীর সেবা করতে পারা, জানাযায় শরীক হতে পারা, সালামের রেওয়াজদানে ভূমিকা রাখা, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ এবং তাকওয়া ও নেকীর কাজে পারস্পরিক সহযোগিতা করার সুযোগ পাওয়া ইত্যাদি।
ইমাম নাওয়াবী রহ. বলেন, মিলেমিশে থাকার ক্ষেত্রে যার প্রবল ধারণা থাকে যে, সে কোনও গুনাহে লিপ্ত হবে না, তার পক্ষে মিলেমিশে থাকাই উত্তম। আর যার কাছে এটা স্পষ্ট না থাকে, তার জন্য আলাদা থাকাই শ্রেয়।
কারও মতে ব্যক্তিভেদে বিষয়টা বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। আবার কারও মতে অবস্থাভেদে এর বিধান বিভিন্ন রকম হয়। যার সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করার ক্ষমতা আছে, তার পক্ষে সকলের সঙ্গে মিলে থাকাই জরুরি। যার সে ক্ষমতা নেই, আবার সকলের মধ্যে থাকার কারণে নিজ আমল নষ্ট হওয়ারও আশঙ্কা নেই, তার পক্ষে সকলের সঙ্গে মিলে থাকা জরুরি না হলেও থাকার অবকাশ আছে। পক্ষান্তরে যার নিজ আমল নষ্ট হওয়ার ভয় আছে, তার জন্য আলাদা থাকাই জরুরি। তবে এ কথা প্রযোজ্য সেই ক্ষেত্রে, যখন ফিতনা-ফাসাদ ব্যাপক না হয়। সুতরাং যদি ব্যাপক ফিতনা দেখা দেয়, তবে নিঃসঙ্গ জীবন বেছে নেওয়া জরুরি। কেননা সেরূপ ক্ষেত্রে অন্যদের প্রভাবে নিজেরও অন্যায়-অসৎকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া এরূপ ক্ষেত্রে অন্যায়-অনাচারকারীদের উপর আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে যে ব্যাপক আযাব আসে, নিরপরাধ ব্যক্তিগণও তার থাবায় পড়ে যায়। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَاتَّقُوا فِتْنَةً لَا تُصِيبَنَّ الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْكُمْ خَاصَّةً وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ (25)
‘এবং সেই বিপর্যয়কে ভয় করো, যা বিশেষভাবে তোমাদের মধ্যে যারা জুলুম করে কেবল তাদেরকেই আক্রান্ত করবে না। জেনে রেখো, আল্লাহর আযাব সুকঠিন।(সূরা আনফাল (৮), আয়াত ২৫)
সে ভয়ের একটা দিক তো হল জালেমদের মধ্যে থাকলে আযাবের মধ্যে পড়ে যাওয়া। তাই তা থেকে বাঁচার লক্ষ্যে তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোনও নিরাপদ স্থানে গিয়ে বাস করা। এর আরেকটা দিক হল যে কারণে আযাব আসে, সে কারণ থেকে আত্মরক্ষা করা। কারণটি হল জালেমদের অবারিতভাবে জুলুম করতে থাকা এবং কারও পক্ষ থেকে তাতে কোনও বাধা না আসা। যারা জালেমকে জুলুম করতে দেখা সত্ত্বেও মুখ বন্ধ করে রাখে, তাকে জুলুম করতে বাধাও দেয় না ও নিষেধও করে না, প্রকারান্তরে তারাও জুলুমবাজির অংশীদার। তাই ব্যাপক আযাবের মধ্যে তারাও পড়ে যায়। এর থেকে মুক্তির উপায় হল জুলুম করতে বাধা দেওয়া এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধের দায়িত্ব পালন করে যাওয়া।
কিন্তু পরিস্থিতি যদি নাগালের বাইরে চলে যায় এবং অবস্থা এমন কঠিন হয়ে দাঁড়ায় যে, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করা হয়তো সম্ভবই নয় কিংবা সম্ভব হলেও তা কোনও কাজে আসে না, উল্টো নিজের ঈমান ও আমলই ঝুঁকিতে পড়ে যায়, তখন নিজ ঈমান ও আমল রক্ষার জন্য যা করা জরুরি তাই করতে হবে। যদি লোকালয় ছেড়ে নির্জন স্থানে যাওয়া ছাড়া উপায় না থাকে, তবে তাই গ্রহণ করে নিতে হবে। আসহাবে কাহফ সেটাই করেছিলেন। আল্লাহ তা'আলাই তাদেরকে পাহাড়ের গুহায় চলে যাওয়ার হুকুম দিয়েছিলেন। ইরশাদ হয়েছে-
وَإِذِ اعْتَزَلْتُمُوهُمْ وَمَا يَعْبُدُونَ إِلَّا اللَّهَ فَأْوُوا إِلَى الْكَهْفِ يَنْشُرْ لَكُمْ رَبُّكُمْ مِنْ رَحْمَتِهِ وَيُهَيِّئْ لَكُمْ مِنْ أَمْرِكُمْ مِرْفَقًا (16)
‘(সাথী বন্ধুরা!) তোমরা যখন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে তাদের থেকে এবং তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদত করে তাদের থেকেও, তখন চলো, ওই গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করো। তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য নিজ রহমত বিস্তার করে দেবেন এবং তোমাদের বিষয়টা যাতে সহজ হয় সেই ব্যবস্থা করে দেবেন।(সূরা কাহফ (১৮), আয়াত ১৬)
এর দ্বারা বোঝা গেল ক্ষেত্রবিশেষে নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করাও জরুরি হয়ে পড়ে। তা জরুরি হয়ে পড়ে বলেই ইসলাম তার অনুমতি দিয়েছে। কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াত এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিভিন্ন হাদীছে তার প্রমাণ মেলে। এ অধ্যায়ের আয়াত ও হাদীছসমূহ সে সম্পর্কেই।
‘যখন মানুষের মধ্যে ব্যাপক অবক্ষয়…’ সম্পর্কিত একটি আয়াত
فَفِرُّوا إِلَى اللَّهِ إِنِّي لَكُمْ مِنْهُ نَذِيرٌ مُبِينٌ (50)
অর্থ: সুতরাং ধাবিত হও আল্লাহর দিকে। নিশ্চয়ই আমি তাঁর পক্ষ হতে তোমাদের কাছে এক সুস্পষ্ট সতর্ককারী (হয়ে এসেছি)।(সূরা যারিয়াত (৫১), আয়াত ৫০)
ব্যাখ্যা
فِرُّوا আদেশসূচক ক্রিয়াটির উৎপত্তি اَلْفَرَارُ থেকে। এর অর্থ পলায়ন করা; এক স্থান থেকে অন্য স্থানে, এক বস্তু থেকে অন্য বস্তুতে ও এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির কাছে পালানো। এর উদ্দেশ্য হয় ক্ষতি থেকে বাঁচা। দুনিয়ায় মানুষ যা-কিছুকেই নিজ জান- মাল ও ইজ্জতের জন্য ক্ষতিকর মনে করে, তা থেকে আত্মরক্ষার জন্য কোনও নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। দুনিয়ার ক্ষতি অপেক্ষা আখিরাতের ক্ষতি অনেক বড়। সে ক্ষতি থেকে নিজেকে বাঁচানো আরও বেশি জরুরি। আখিরাতের ক্ষতি হয় আল্লাহ তা'আলার অবাধ্যতা দ্বারা। সুতরাং যা-কিছু দ্বারা আল্লাহর অবাধ্যতা হয়, তা থেকে নিজেকে রক্ষা করে তাঁর বাধ্যতামূলক কাজে মশগুল হওয়া অতীব জরুরি। এ আয়াতে আল্লাহর দিকে পালানো ও তাঁর দিকে ধাবিত হওয়া দ্বারা এটাই বোঝানো উদ্দেশ্য।
আল্লাহ তা'আলার দিকে পালানোর জন্য প্রথম কাজ হল আল্লাহ তা'আলাকে চেনা এবং আল্লাহ তা'আলা সম্পর্কে নিজ অজ্ঞতা দূর করা। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার দিকে পালাতে চায়, তার প্রথম কর্তব্য আল্লাহ তা'আলা সম্পর্কে নিজ আকীদা-বিশ্বাস দুরস্ত করা। তিনি নিজ গুণাবলি সম্পর্কে আমাদেরকে যতটুকু অবহিত করেছেন তা যথাযথভাবে বুঝে নেওয়া। তাঁর জগৎপরিচালনা ও বিশ্বব্যবস্থা সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান লাভ করা। কুরআন ও হাদীছ দ্বারা আমাদেরকে এসব বিষয় অবগত করা হয়েছে। সুতরাং যাদের পক্ষে সরাসরি কুরআন ও হাদীছ পাঠ করে এসব জানা সম্ভব, তারা তো সরাসরি আর যাদের পক্ষে তা সম্ভব নয় তারা উলামায়ে কেরামের মাধ্যমে এসব বিষয় জেনে নেবে। এসব বিষয়ে জানার দাবি হল আল্লাহ তা'আলার আনুগত্যের সঙ্গে জীবনযাপন করা। সে লক্ষ্যে প্রত্যেকের কর্তব্য আল্লাহপ্রদত্ত বিধানাবলি সম্পর্কে অবগত হওয়া, যাকে শরী'আত বলা হয়ে থাকে। আকীদা-বিশ্বাস ও শরী'আতের ইলম জানার দ্বারা জ্ঞানগতভাবে আল্লাহ তা'আলার দিকে পলায়ন করা হয়। এটা হল অজ্ঞতা থেকে জ্ঞানের দিকে পলায়ন। পরবর্তী কর্তব্য আল্লাহ তা'আলার আনুগত্যের দিকে পলায়ন। অর্থাৎ পাপকর্ম ছেড়ে সৎকর্মে মশগুল হয়ে যাওয়া। এটা সম্ভব হয় শরী'আতের অনুসরণ দ্বারা। যদি শরী'আত মোতাবেক জীবনযাপন করা হয় এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে শরী'আতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হয়, তবে আল্লাহর দিকে পলায়ন পরিপূর্ণতা লাভ করে। এ আয়াত আমাদেরকে সে নির্দেশই দান করছে।
সুতরাং আল্লাহ সম্পর্কে যারা উদাসীন, যারা পাপকর্মে ডুবে আছে, এ আয়াত তাদের ডেকে বলছে- তোমরা সতর্ক হও। তোমরা শত্রু দ্বারা ঘেরাও হয়ে আছ। তোমরা নফসের ধোঁকায় পড়ে রয়েছ। তোমরা শয়তানের ফাঁদে আটকা পড়ে গেছ। শয়তান তোমাদের চিরশত্রু। সে তোমাদেরকে জাহান্নামে নিয়ে যেতে চায়। তোমাদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচতে হবে। জাহান্নাম থেকে বাঁচতে চাইলে শয়তান থেকে আত্মরক্ষা করতে হবে। তার থেকে আত্মরক্ষার একমাত্র উপায় সেই সত্তার আশ্রয়প্রার্থী হওয়া, যিনি সর্বজ্ঞানী, সর্বশক্তিমান, অমর, অক্ষয় ও জীবন্ত। সকল দাসত্ব ছিঁড়ে সব ভরসা ছেড়ে সেই মহামহিয়ানের দিকে ফিরে এসো। তোমরা তাওবা করো। তাঁর অভিমুখী হও। এ এক মহান পলায়ন। এ পলায়ন অবলম্বন করতে পারলে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতে সত্যিকারের সফলতা লাভ করতে পারবে।
পক্ষান্তরে যদি নফস ও শয়তানের ধোঁকায় পড়ে পাপাচারের মধ্যে নিমজ্জিত থাকা হয়, তবে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জীবনই ধ্বংস হবে। দুনিয়ার কষ্ট না হয় মৃত্যুতে শেষ, কিন্তু আখিরাতের কষ্টের তো কোনও শেষ নেই, সীমা নেই। সেখানে আল্লাহ তা'আলা পাপী বান্দাকে কঠিনভাবে ধরবেন। সে ধরা থেকে নিস্তারলাভের কোনও উপায় সেখানে থাকবে না। তাই এ আয়াতে সেই কঠিন পরিণতি সম্পর্কে সতর্কও করে দেওয়া হয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন মাজীদের আয়াত ও নিজ বাণী দ্বারা উম্মতকে বারবার সে সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তিনি ছিলেন এক সুস্পষ্ট সতর্ককারী। প্রত্যেকের কর্তব্য তাঁর সে সতর্কবাণী গ্রহণ করে আত্মসংশোধনে মনোনিবেশ করা এবং কালক্ষেপণ না করে এখনই আল্লাহ তা'আলার অনুগত বান্দারূপে জীবনযাপন শুরু করে দেওয়া। আল্লাহ তা'আলা বলেন-
وَأَنِيبُوا إِلَى رَبِّكُمْ وَأَسْلِمُوا لَهُ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَكُمُ الْعَذَابُ ثُمَّ لَا تُنْصَرُونَ (54) وَاتَّبِعُوا أَحْسَنَ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ مِنْ رَبِّكُمْ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَكُمُ الْعَذَابُ بَغْتَةً وَأَنْتُمْ لَا تَشْعُرُونَ (55)
‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অভিমুখী হয়ে যাও এবং তাঁর সমীপে আনুগত্য প্রকাশ করো তোমাদের নিকট শাস্তি আসার আগে, যার পর আর তোমাদেরকে সাহায্য করা হবে না। এবং তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে তোমাদের উপর উত্তম যা-কিছু অবতীর্ণ করা হয়েছে তার অনুসরণ করো তোমাদের কাছে অতর্কিতভাবে শাস্তি আসার আগে, অথচ তোমরা তা জানতেও পারবে না।(সূরা যুমার (৩৯), আয়াত ৫৪-৫৫)
আল্লাহর দিকে পলায়ন তথা সবকিছু থেকে বিমুখ হয়ে এক আল্লাহর অভিমুখী হওয়ার উপায় দু'টি। এক তো হল সকলের মধ্যে থেকেও নিঃসঙ্গ হয়ে থাকা। অর্থাৎ সকলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকবে বাহ্যিক ও শারীরিক। অন্তর সকল থেকে ছিন্ন হয়ে এক আল্লাহতে মগ্ন থাকবে। অন্তর যদি আল্লাহভিন্ন অন্যতে মগ্ন হয়ে যায়, তবে পাপকর্মে লিপ্ত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে। তাই মানুষের সঙ্গে যতই মেলামেশা করা হোক না কেন, নিজ হৃদয়মনকে কিছুতেই তাদের স্রোতে ভেসে যেতে দেওয়া যাবে না। হৃদয়মন সম্পূর্ণ আল্লাহর অভিমুখী করে রাখতে হবে। মনে থাকবে কেবলই আল্লাহপ্রেম ও আল্লাহভীতি।
যাদের পক্ষে সকলের ভেতরে থেকে নিঃসঙ্গ থাকা সম্ভব হয় না, শারীরিক মেলামেশা করতে গেলে হৃদয়মনও তাদের সঙ্গে একাকার হয়ে যায়, পরিণামে অন্যের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে পাপাচারে লিপ্ত হয়ে পড়ার প্রবল আশঙ্কা থেকে যায়, তাদের জন্য শারীরিক ও সামাজিকভাবেও নিঃসঙ্গ থাকাই বেশি নিরাপদ। এ আয়াত যে আল্লাহ তা'আলার দিকে পলায়ন করার হুকুম দিয়েছে, তা দ্বারা এ উভয়রকম নিঃসঙ্গতার প্রতি ইঙ্গিত পাওয়া যায়। অর্থাৎ পাপকর্ম থেকে বাঁচার জন্য যার যেরকম নিঃসঙ্গতা অবলম্বনের প্রয়োজন, তার সেরকম নিঃসঙ্গতা অবলম্বন করা বাঞ্ছনীয়। বলা হচ্ছে, আল্লাহ তা'আলার আনুগত্য করার প্রয়োজনে তোমরা নিঃসঙ্গ জীবন অবলম্বন করো, তা শারীরিক ও আত্মিক উভয়রকম নিঃসঙ্গতা হোক কিংবা কেবলই আত্মিক নিঃসঙ্গতা।
আয়াতটির শিক্ষা
ক. দুনিয়া ও দুনিয়ার যাবতীয় বস্তুর আকর্ষণ মানুষের আল্লাহপ্রাপ্তির পথে বাধা। তাই প্রকৃত আল্লাহপ্রেমিকের জন্য তা শত্রুস্বরূপ।
খ. শয়তান ও অন্যান্য দীনী শত্রু থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় আল্লাহর শরণাপন্ন হওয়া।
গ. পাপকর্ম থেকে বাঁচার লক্ষ্যে যদি সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে নিঃসঙ্গ জীবনযাপনের প্রয়োজন পড়ে, তবে সে জীবনই বেছে নেওয়া উচিত।
ঘ. যে-কোনও বিপদ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় আল্লাহর আশ্রয়প্রার্থী হওয়া।
ঙ. সকল প্রয়োজনে আল্লাহর অভিমুখী হওয়াই একজন বান্দার শান।
العزلة এর অর্থ বিচ্ছিন্নতা ও নিঃসঙ্গতা। মানুষকে আল্লাহ তা'আলা সামাজিক জীবরূপে সৃষ্টি করেছেন। স্বাভাবিকভাবে তাকে সকলের সঙ্গে মিলেমিশে বাস করতে হয়। সে অন্যের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করতে পারে না। ইসলাম এক স্বভাবধর্ম। ইসলামের যাবতীয় বিধানে মানুষের এই স্বাভাবিক অবস্থার প্রতি লক্ষ রাখা হয়েছে। তার মৌলিক প্রতিটি বিধানই সমাজঘনিষ্ঠ। সে তার অনুসারীদের সমাজের একজন হয়ে থাকতে উৎসাহ দেয় এবং সকলের ভেতরে থেকেই দীনী দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে রত থাকতে বলে। তবে যদি কখনও এমন কোনও ব্যতিক্রম অবস্থা দেখা দেয়, যখন মিলেমিশে থাকার দ্বারা তার আসল কাজ ইবাদত-বন্দেগী চালিয়ে যাওয়া বাধাগ্রস্ত হয়, তখন তাকে নিঃসঙ্গ জীবনযাপনেরও অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে এটা জরুরিও সাব্যস্ত করা হয়েছে।
সাধারণ অবস্থায় মানুষের সঙ্গে মেলামেশা ছেড়ে দিয়ে নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করা যাবে কি না, সে সম্পর্কে উলামায়ে কেরাম বিভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। কারও মতে নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করাই উত্তম। কেননা তাতে করে যেসব গুনাহ অন্যের দেখাদেখি হয়ে যায়, তা থেকে বাঁচা যায়। তাছাড়া এর দ্বারা নিজ অনিষ্ট থেকেও অন্যের হেফাজত হয়। অবশ্য এ ক্ষেত্রে শর্ত হল ইবাদত-বন্দেগী ও দীনের জরুরি বিষয়ে নিজের জানা থাকতে হবে।
কারও মতে মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে থাকা উত্তম। কেননা এর মধ্যে বহুবিধ ফায়দা রয়েছে। যেমন জুমু'আ ও জামাতে হাজির হতে পারা, মুসলিমদের দল বড় করে দেখানোয় ভূমিকা রাখা, দুস্থ ও বিপন্নের সাহায্য করতে পারা, রোগীর সেবা করতে পারা, জানাযায় শরীক হতে পারা, সালামের রেওয়াজদানে ভূমিকা রাখা, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ এবং তাকওয়া ও নেকীর কাজে পারস্পরিক সহযোগিতা করার সুযোগ পাওয়া ইত্যাদি।
ইমাম নাওয়াবী রহ. বলেন, মিলেমিশে থাকার ক্ষেত্রে যার প্রবল ধারণা থাকে যে, সে কোনও গুনাহে লিপ্ত হবে না, তার পক্ষে মিলেমিশে থাকাই উত্তম। আর যার কাছে এটা স্পষ্ট না থাকে, তার জন্য আলাদা থাকাই শ্রেয়।
কারও মতে ব্যক্তিভেদে বিষয়টা বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। আবার কারও মতে অবস্থাভেদে এর বিধান বিভিন্ন রকম হয়। যার সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করার ক্ষমতা আছে, তার পক্ষে সকলের সঙ্গে মিলে থাকাই জরুরি। যার সে ক্ষমতা নেই, আবার সকলের মধ্যে থাকার কারণে নিজ আমল নষ্ট হওয়ারও আশঙ্কা নেই, তার পক্ষে সকলের সঙ্গে মিলে থাকা জরুরি না হলেও থাকার অবকাশ আছে। পক্ষান্তরে যার নিজ আমল নষ্ট হওয়ার ভয় আছে, তার জন্য আলাদা থাকাই জরুরি। তবে এ কথা প্রযোজ্য সেই ক্ষেত্রে, যখন ফিতনা-ফাসাদ ব্যাপক না হয়। সুতরাং যদি ব্যাপক ফিতনা দেখা দেয়, তবে নিঃসঙ্গ জীবন বেছে নেওয়া জরুরি। কেননা সেরূপ ক্ষেত্রে অন্যদের প্রভাবে নিজেরও অন্যায়-অসৎকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া এরূপ ক্ষেত্রে অন্যায়-অনাচারকারীদের উপর আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে যে ব্যাপক আযাব আসে, নিরপরাধ ব্যক্তিগণও তার থাবায় পড়ে যায়। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَاتَّقُوا فِتْنَةً لَا تُصِيبَنَّ الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْكُمْ خَاصَّةً وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ (25)
‘এবং সেই বিপর্যয়কে ভয় করো, যা বিশেষভাবে তোমাদের মধ্যে যারা জুলুম করে কেবল তাদেরকেই আক্রান্ত করবে না। জেনে রেখো, আল্লাহর আযাব সুকঠিন।(সূরা আনফাল (৮), আয়াত ২৫)
সে ভয়ের একটা দিক তো হল জালেমদের মধ্যে থাকলে আযাবের মধ্যে পড়ে যাওয়া। তাই তা থেকে বাঁচার লক্ষ্যে তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোনও নিরাপদ স্থানে গিয়ে বাস করা। এর আরেকটা দিক হল যে কারণে আযাব আসে, সে কারণ থেকে আত্মরক্ষা করা। কারণটি হল জালেমদের অবারিতভাবে জুলুম করতে থাকা এবং কারও পক্ষ থেকে তাতে কোনও বাধা না আসা। যারা জালেমকে জুলুম করতে দেখা সত্ত্বেও মুখ বন্ধ করে রাখে, তাকে জুলুম করতে বাধাও দেয় না ও নিষেধও করে না, প্রকারান্তরে তারাও জুলুমবাজির অংশীদার। তাই ব্যাপক আযাবের মধ্যে তারাও পড়ে যায়। এর থেকে মুক্তির উপায় হল জুলুম করতে বাধা দেওয়া এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধের দায়িত্ব পালন করে যাওয়া।
কিন্তু পরিস্থিতি যদি নাগালের বাইরে চলে যায় এবং অবস্থা এমন কঠিন হয়ে দাঁড়ায় যে, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করা হয়তো সম্ভবই নয় কিংবা সম্ভব হলেও তা কোনও কাজে আসে না, উল্টো নিজের ঈমান ও আমলই ঝুঁকিতে পড়ে যায়, তখন নিজ ঈমান ও আমল রক্ষার জন্য যা করা জরুরি তাই করতে হবে। যদি লোকালয় ছেড়ে নির্জন স্থানে যাওয়া ছাড়া উপায় না থাকে, তবে তাই গ্রহণ করে নিতে হবে। আসহাবে কাহফ সেটাই করেছিলেন। আল্লাহ তা'আলাই তাদেরকে পাহাড়ের গুহায় চলে যাওয়ার হুকুম দিয়েছিলেন। ইরশাদ হয়েছে-
وَإِذِ اعْتَزَلْتُمُوهُمْ وَمَا يَعْبُدُونَ إِلَّا اللَّهَ فَأْوُوا إِلَى الْكَهْفِ يَنْشُرْ لَكُمْ رَبُّكُمْ مِنْ رَحْمَتِهِ وَيُهَيِّئْ لَكُمْ مِنْ أَمْرِكُمْ مِرْفَقًا (16)
‘(সাথী বন্ধুরা!) তোমরা যখন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে তাদের থেকে এবং তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদত করে তাদের থেকেও, তখন চলো, ওই গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করো। তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য নিজ রহমত বিস্তার করে দেবেন এবং তোমাদের বিষয়টা যাতে সহজ হয় সেই ব্যবস্থা করে দেবেন।(সূরা কাহফ (১৮), আয়াত ১৬)
এর দ্বারা বোঝা গেল ক্ষেত্রবিশেষে নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করাও জরুরি হয়ে পড়ে। তা জরুরি হয়ে পড়ে বলেই ইসলাম তার অনুমতি দিয়েছে। কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াত এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিভিন্ন হাদীছে তার প্রমাণ মেলে। এ অধ্যায়ের আয়াত ও হাদীছসমূহ সে সম্পর্কেই।
‘যখন মানুষের মধ্যে ব্যাপক অবক্ষয়…’ সম্পর্কিত একটি আয়াত
فَفِرُّوا إِلَى اللَّهِ إِنِّي لَكُمْ مِنْهُ نَذِيرٌ مُبِينٌ (50)
অর্থ: সুতরাং ধাবিত হও আল্লাহর দিকে। নিশ্চয়ই আমি তাঁর পক্ষ হতে তোমাদের কাছে এক সুস্পষ্ট সতর্ককারী (হয়ে এসেছি)।(সূরা যারিয়াত (৫১), আয়াত ৫০)
ব্যাখ্যা
فِرُّوا আদেশসূচক ক্রিয়াটির উৎপত্তি اَلْفَرَارُ থেকে। এর অর্থ পলায়ন করা; এক স্থান থেকে অন্য স্থানে, এক বস্তু থেকে অন্য বস্তুতে ও এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির কাছে পালানো। এর উদ্দেশ্য হয় ক্ষতি থেকে বাঁচা। দুনিয়ায় মানুষ যা-কিছুকেই নিজ জান- মাল ও ইজ্জতের জন্য ক্ষতিকর মনে করে, তা থেকে আত্মরক্ষার জন্য কোনও নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। দুনিয়ার ক্ষতি অপেক্ষা আখিরাতের ক্ষতি অনেক বড়। সে ক্ষতি থেকে নিজেকে বাঁচানো আরও বেশি জরুরি। আখিরাতের ক্ষতি হয় আল্লাহ তা'আলার অবাধ্যতা দ্বারা। সুতরাং যা-কিছু দ্বারা আল্লাহর অবাধ্যতা হয়, তা থেকে নিজেকে রক্ষা করে তাঁর বাধ্যতামূলক কাজে মশগুল হওয়া অতীব জরুরি। এ আয়াতে আল্লাহর দিকে পালানো ও তাঁর দিকে ধাবিত হওয়া দ্বারা এটাই বোঝানো উদ্দেশ্য।
আল্লাহ তা'আলার দিকে পালানোর জন্য প্রথম কাজ হল আল্লাহ তা'আলাকে চেনা এবং আল্লাহ তা'আলা সম্পর্কে নিজ অজ্ঞতা দূর করা। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার দিকে পালাতে চায়, তার প্রথম কর্তব্য আল্লাহ তা'আলা সম্পর্কে নিজ আকীদা-বিশ্বাস দুরস্ত করা। তিনি নিজ গুণাবলি সম্পর্কে আমাদেরকে যতটুকু অবহিত করেছেন তা যথাযথভাবে বুঝে নেওয়া। তাঁর জগৎপরিচালনা ও বিশ্বব্যবস্থা সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান লাভ করা। কুরআন ও হাদীছ দ্বারা আমাদেরকে এসব বিষয় অবগত করা হয়েছে। সুতরাং যাদের পক্ষে সরাসরি কুরআন ও হাদীছ পাঠ করে এসব জানা সম্ভব, তারা তো সরাসরি আর যাদের পক্ষে তা সম্ভব নয় তারা উলামায়ে কেরামের মাধ্যমে এসব বিষয় জেনে নেবে। এসব বিষয়ে জানার দাবি হল আল্লাহ তা'আলার আনুগত্যের সঙ্গে জীবনযাপন করা। সে লক্ষ্যে প্রত্যেকের কর্তব্য আল্লাহপ্রদত্ত বিধানাবলি সম্পর্কে অবগত হওয়া, যাকে শরী'আত বলা হয়ে থাকে। আকীদা-বিশ্বাস ও শরী'আতের ইলম জানার দ্বারা জ্ঞানগতভাবে আল্লাহ তা'আলার দিকে পলায়ন করা হয়। এটা হল অজ্ঞতা থেকে জ্ঞানের দিকে পলায়ন। পরবর্তী কর্তব্য আল্লাহ তা'আলার আনুগত্যের দিকে পলায়ন। অর্থাৎ পাপকর্ম ছেড়ে সৎকর্মে মশগুল হয়ে যাওয়া। এটা সম্ভব হয় শরী'আতের অনুসরণ দ্বারা। যদি শরী'আত মোতাবেক জীবনযাপন করা হয় এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে শরী'আতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হয়, তবে আল্লাহর দিকে পলায়ন পরিপূর্ণতা লাভ করে। এ আয়াত আমাদেরকে সে নির্দেশই দান করছে।
সুতরাং আল্লাহ সম্পর্কে যারা উদাসীন, যারা পাপকর্মে ডুবে আছে, এ আয়াত তাদের ডেকে বলছে- তোমরা সতর্ক হও। তোমরা শত্রু দ্বারা ঘেরাও হয়ে আছ। তোমরা নফসের ধোঁকায় পড়ে রয়েছ। তোমরা শয়তানের ফাঁদে আটকা পড়ে গেছ। শয়তান তোমাদের চিরশত্রু। সে তোমাদেরকে জাহান্নামে নিয়ে যেতে চায়। তোমাদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচতে হবে। জাহান্নাম থেকে বাঁচতে চাইলে শয়তান থেকে আত্মরক্ষা করতে হবে। তার থেকে আত্মরক্ষার একমাত্র উপায় সেই সত্তার আশ্রয়প্রার্থী হওয়া, যিনি সর্বজ্ঞানী, সর্বশক্তিমান, অমর, অক্ষয় ও জীবন্ত। সকল দাসত্ব ছিঁড়ে সব ভরসা ছেড়ে সেই মহামহিয়ানের দিকে ফিরে এসো। তোমরা তাওবা করো। তাঁর অভিমুখী হও। এ এক মহান পলায়ন। এ পলায়ন অবলম্বন করতে পারলে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতে সত্যিকারের সফলতা লাভ করতে পারবে।
পক্ষান্তরে যদি নফস ও শয়তানের ধোঁকায় পড়ে পাপাচারের মধ্যে নিমজ্জিত থাকা হয়, তবে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জীবনই ধ্বংস হবে। দুনিয়ার কষ্ট না হয় মৃত্যুতে শেষ, কিন্তু আখিরাতের কষ্টের তো কোনও শেষ নেই, সীমা নেই। সেখানে আল্লাহ তা'আলা পাপী বান্দাকে কঠিনভাবে ধরবেন। সে ধরা থেকে নিস্তারলাভের কোনও উপায় সেখানে থাকবে না। তাই এ আয়াতে সেই কঠিন পরিণতি সম্পর্কে সতর্কও করে দেওয়া হয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন মাজীদের আয়াত ও নিজ বাণী দ্বারা উম্মতকে বারবার সে সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তিনি ছিলেন এক সুস্পষ্ট সতর্ককারী। প্রত্যেকের কর্তব্য তাঁর সে সতর্কবাণী গ্রহণ করে আত্মসংশোধনে মনোনিবেশ করা এবং কালক্ষেপণ না করে এখনই আল্লাহ তা'আলার অনুগত বান্দারূপে জীবনযাপন শুরু করে দেওয়া। আল্লাহ তা'আলা বলেন-
وَأَنِيبُوا إِلَى رَبِّكُمْ وَأَسْلِمُوا لَهُ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَكُمُ الْعَذَابُ ثُمَّ لَا تُنْصَرُونَ (54) وَاتَّبِعُوا أَحْسَنَ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ مِنْ رَبِّكُمْ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَكُمُ الْعَذَابُ بَغْتَةً وَأَنْتُمْ لَا تَشْعُرُونَ (55)
‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অভিমুখী হয়ে যাও এবং তাঁর সমীপে আনুগত্য প্রকাশ করো তোমাদের নিকট শাস্তি আসার আগে, যার পর আর তোমাদেরকে সাহায্য করা হবে না। এবং তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে তোমাদের উপর উত্তম যা-কিছু অবতীর্ণ করা হয়েছে তার অনুসরণ করো তোমাদের কাছে অতর্কিতভাবে শাস্তি আসার আগে, অথচ তোমরা তা জানতেও পারবে না।(সূরা যুমার (৩৯), আয়াত ৫৪-৫৫)
আল্লাহর দিকে পলায়ন তথা সবকিছু থেকে বিমুখ হয়ে এক আল্লাহর অভিমুখী হওয়ার উপায় দু'টি। এক তো হল সকলের মধ্যে থেকেও নিঃসঙ্গ হয়ে থাকা। অর্থাৎ সকলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকবে বাহ্যিক ও শারীরিক। অন্তর সকল থেকে ছিন্ন হয়ে এক আল্লাহতে মগ্ন থাকবে। অন্তর যদি আল্লাহভিন্ন অন্যতে মগ্ন হয়ে যায়, তবে পাপকর্মে লিপ্ত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে। তাই মানুষের সঙ্গে যতই মেলামেশা করা হোক না কেন, নিজ হৃদয়মনকে কিছুতেই তাদের স্রোতে ভেসে যেতে দেওয়া যাবে না। হৃদয়মন সম্পূর্ণ আল্লাহর অভিমুখী করে রাখতে হবে। মনে থাকবে কেবলই আল্লাহপ্রেম ও আল্লাহভীতি।
যাদের পক্ষে সকলের ভেতরে থেকে নিঃসঙ্গ থাকা সম্ভব হয় না, শারীরিক মেলামেশা করতে গেলে হৃদয়মনও তাদের সঙ্গে একাকার হয়ে যায়, পরিণামে অন্যের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে পাপাচারে লিপ্ত হয়ে পড়ার প্রবল আশঙ্কা থেকে যায়, তাদের জন্য শারীরিক ও সামাজিকভাবেও নিঃসঙ্গ থাকাই বেশি নিরাপদ। এ আয়াত যে আল্লাহ তা'আলার দিকে পলায়ন করার হুকুম দিয়েছে, তা দ্বারা এ উভয়রকম নিঃসঙ্গতার প্রতি ইঙ্গিত পাওয়া যায়। অর্থাৎ পাপকর্ম থেকে বাঁচার জন্য যার যেরকম নিঃসঙ্গতা অবলম্বনের প্রয়োজন, তার সেরকম নিঃসঙ্গতা অবলম্বন করা বাঞ্ছনীয়। বলা হচ্ছে, আল্লাহ তা'আলার আনুগত্য করার প্রয়োজনে তোমরা নিঃসঙ্গ জীবন অবলম্বন করো, তা শারীরিক ও আত্মিক উভয়রকম নিঃসঙ্গতা হোক কিংবা কেবলই আত্মিক নিঃসঙ্গতা।
আয়াতটির শিক্ষা
ক. দুনিয়া ও দুনিয়ার যাবতীয় বস্তুর আকর্ষণ মানুষের আল্লাহপ্রাপ্তির পথে বাধা। তাই প্রকৃত আল্লাহপ্রেমিকের জন্য তা শত্রুস্বরূপ।
খ. শয়তান ও অন্যান্য দীনী শত্রু থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় আল্লাহর শরণাপন্ন হওয়া।
গ. পাপকর্ম থেকে বাঁচার লক্ষ্যে যদি সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে নিঃসঙ্গ জীবনযাপনের প্রয়োজন পড়ে, তবে সে জীবনই বেছে নেওয়া উচিত।
ঘ. যে-কোনও বিপদ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় আল্লাহর আশ্রয়প্রার্থী হওয়া।
ঙ. সকল প্রয়োজনে আল্লাহর অভিমুখী হওয়াই একজন বান্দার শান।
আল্লাহ যে বান্দাকে ভালোবাসেন
হাদীছ নং: ৫৯৬
হযরত সা‘দ ইবন আবী ওয়াক্কাস রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা‘আলা মুত্তাকী (আত্মিক) ঐশ্বর্যবান প্রচারবিমুখ বান্দাকে ভালোবাসেন। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ২৯৬৫; মুসনাদে আহমাদ: ১৪৪২; মুসনাদে আবূ ইয়া'লা: ৭৩৭; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ৬০৫০; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান: ৯৮৮৫; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৪২২৯)
হাদীছ নং: ৫৯৬
হযরত সা‘দ ইবন আবী ওয়াক্কাস রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা‘আলা মুত্তাকী (আত্মিক) ঐশ্বর্যবান প্রচারবিমুখ বান্দাকে ভালোবাসেন। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ২৯৬৫; মুসনাদে আহমাদ: ১৪৪২; মুসনাদে আবূ ইয়া'লা: ৭৩৭; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ৬০৫০; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান: ৯৮৮৫; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৪২২৯)
مقدمة الامام النووي
69 - باب استحباب العزلة عند فساد الناس والزمان أَو الخوف من فتنة في الدين ووقوع في حرام وشبهات ونحوها
قَالَ الله تَعَالَى: {فَفِرُّوا إِلَى اللهِ إنِّي لَكُمْ مِنْهُ نَذِيرٌ مبِينٌ} [الذاريات: 50].
قَالَ الله تَعَالَى: {فَفِرُّوا إِلَى اللهِ إنِّي لَكُمْ مِنْهُ نَذِيرٌ مبِينٌ} [الذاريات: 50].
596 - وعن سعد بن أَبي وقاص - رضي الله عنه - قَالَ: سَمِعْتُ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - يقول: «إنَّ الله يُحِبُّ الْعَبْدَ التَّقِيَّ الغَنِيَّ الْخَفِيَّ». رواه مسلم. (1)
والمُرَادُ بـ «الغَنِيّ» غَنِيُّ النَّفْسِ، كَمَا سَبَقَ في الحديث الصحيح.
والمُرَادُ بـ «الغَنِيّ» غَنِيُّ النَّفْسِ، كَمَا سَبَقَ في الحديث الصحيح.
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৯৭
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৬৯ যখন মানুষের মধ্যে ব্যাপক অবক্ষয় দেখা দেয়, যমানা খারাপ হয়ে যায় অথবা আপন দীনের ক্ষেত্রে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়া বা হারাম ও সন্দেহপূর্ণ বিষয়ে কিংবা এরূপ অন্য কিছুতে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়, তখন নিঃসঙ্গতা অবলম্বন মুস্তাহাব হওয়া প্রসঙ্গ
আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি কে
হাদীছ নং: ৫৯৭
হযরত আবু সা‘ঈদ খুদরী রাযি. বলেন, এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মানুষের মধ্যে কে উত্তম? তিনি বললেন, ওই মুমিন, যে নিজ জান-মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে। লোকটি বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তারপর কোনও গিরিসংকটে নির্জনবাসী ওই ব্যক্তি, যে আপন প্রতিপালকের ইবাদতে রত থাকে।
অপর এক বর্ণনায় আছে, যে আল্লাহকে ভয় করে এবং মানুষকে নিজ অনিষ্ট থেকে মুক্ত রাখে। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ২৭৮৬, ৬৪৯৪; সহীহ মুসলিম: ১৮৮৮; সুনানে দারিমী: ২৪৪০; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ১৯৩৩১; মুসনাদে আহমাদ: ২১১৬; সুনানে নাসাঈ: ৬৫৬৯; সহীহ ইবন হিব্বান: ৬০৪)
হাদীছ নং: ৫৯৭
হযরত আবু সা‘ঈদ খুদরী রাযি. বলেন, এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মানুষের মধ্যে কে উত্তম? তিনি বললেন, ওই মুমিন, যে নিজ জান-মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে। লোকটি বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তারপর কোনও গিরিসংকটে নির্জনবাসী ওই ব্যক্তি, যে আপন প্রতিপালকের ইবাদতে রত থাকে।
অপর এক বর্ণনায় আছে, যে আল্লাহকে ভয় করে এবং মানুষকে নিজ অনিষ্ট থেকে মুক্ত রাখে। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ২৭৮৬, ৬৪৯৪; সহীহ মুসলিম: ১৮৮৮; সুনানে দারিমী: ২৪৪০; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ১৯৩৩১; মুসনাদে আহমাদ: ২১১৬; সুনানে নাসাঈ: ৬৫৬৯; সহীহ ইবন হিব্বান: ৬০৪)
مقدمة الامام النووي
69 - باب استحباب العزلة عند فساد الناس والزمان أَو الخوف من فتنة في الدين ووقوع في حرام وشبهات ونحوها
597 - وعن أَبي سعيد الخدري - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَجُلٌ: أيُّ النَّاسِ أفْضَلُ يَا رسولَ الله؟ قَالَ: «مُؤْمِنٌ مُجَاهِدٌ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ في سَبيلِ اللهِ» قَالَ: ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ: «ثُمَّ رَجُلٌ مُعْتَزِلٌ فِي شِعْبٍ مِنَ الشِّعَابِ يَعْبُدُ رَبَّهُ».
وفي رواية: «يَتَّقِي اللهَ، وَيَدَعُ النَّاسَ مِنْ شَرِّهِ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
وفي رواية: «يَتَّقِي اللهَ، وَيَدَعُ النَّاسَ مِنْ شَرِّهِ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৯৮
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৬৯ যখন মানুষের মধ্যে ব্যাপক অবক্ষয় দেখা দেয়, যমানা খারাপ হয়ে যায় অথবা আপন দীনের ক্ষেত্রে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়া বা হারাম ও সন্দেহপূর্ণ বিষয়ে কিংবা এরূপ অন্য কিছুতে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়, তখন নিঃসঙ্গতা অবলম্বন মুস্তাহাব হওয়া প্রসঙ্গ
ফিতনার স্থান থেকে দীন ও ঈমান নিয়ে পলায়ন করা
হাদীছ নং: ৫৯৮
হযরত আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, অচিরেই মুসলিম ব্যক্তির উৎকৃষ্ট সম্পদ হবে ছাগলের পাল, যা নিয়ে সে চলে যাবে পাহাড়ের চূড়ায় বা বৃষ্টিপাতের এলাকায়, সে ফিতনা থেকে আপন দীন নিয়ে পালাবে। -বুখারী
(সহীহ বুখারী : ১৯; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা ৩৭১১৬; মুসনাদুল হুমায়দী : ৭৫০; মুআত্তা মালিক: ১৬; সুনানে আবু দাউদ: ৪২৬৭; সুনানে নাসাঈ ৫০৩৬; সুনানে ইবন মাজাহ : ৩৯৭৯; মুসনাদে আবু ইয়া'লা: ৯৮৩; সহীহ ইবন হিব্বান: ৫৯৫৫; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৪২২৮)
হাদীছ নং: ৫৯৮
হযরত আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, অচিরেই মুসলিম ব্যক্তির উৎকৃষ্ট সম্পদ হবে ছাগলের পাল, যা নিয়ে সে চলে যাবে পাহাড়ের চূড়ায় বা বৃষ্টিপাতের এলাকায়, সে ফিতনা থেকে আপন দীন নিয়ে পালাবে। -বুখারী
(সহীহ বুখারী : ১৯; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা ৩৭১১৬; মুসনাদুল হুমায়দী : ৭৫০; মুআত্তা মালিক: ১৬; সুনানে আবু দাউদ: ৪২৬৭; সুনানে নাসাঈ ৫০৩৬; সুনানে ইবন মাজাহ : ৩৯৭৯; মুসনাদে আবু ইয়া'লা: ৯৮৩; সহীহ ইবন হিব্বান: ৫৯৫৫; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৪২২৮)
مقدمة الامام النووي
69 - باب استحباب العزلة عند فساد الناس والزمان أَو الخوف من فتنة في الدين ووقوع في حرام وشبهات ونحوها
598 - وعنه، قَالَ: قَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «يُوشِكُ أَنْ يَكُونَ خَيْرَ مَالِ المُسْلِمِ غَنَمٌ يَتَّبعُ بِهَا شَعَفَ الجِبَالِ، وَمَواقعَ الْقَطْر يَفِرُّ بِدِينِهِ مِنَ الفِتَنِ». رواه البخاري. (1)
و «شَعَفُ الجِبَالِ»: أعْلاَهَا.
و «شَعَفُ الجِبَالِ»: أعْلاَهَا.
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৯৯
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৬৯ যখন মানুষের মধ্যে ব্যাপক অবক্ষয় দেখা দেয়, যমানা খারাপ হয়ে যায় অথবা আপন দীনের ক্ষেত্রে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়া বা হারাম ও সন্দেহপূর্ণ বিষয়ে কিংবা এরূপ অন্য কিছুতে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়, তখন নিঃসঙ্গতা অবলম্বন মুস্তাহাব হওয়া প্রসঙ্গ
নবীগণের ছাগল চরানো
হাদীছ নং: ৫৯৯
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ এমন কোনও নবী পাঠাননি, যিনি ছাগল চরাননি। সাহাবীগণ বললেন, আপনিও? তিনি বললেন, হাঁ, আমি মক্কাবাসীদের ছাগল চরাতাম কয়েক কীরাতের বিনিময়ে। বুখারী
(সহীহ বুখারী: ২২৬২; সুনানে ইবন মাজাহ: ২১৪৯; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ২১৮৬; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১১৬৪১)
হাদীছ নং: ৫৯৯
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ এমন কোনও নবী পাঠাননি, যিনি ছাগল চরাননি। সাহাবীগণ বললেন, আপনিও? তিনি বললেন, হাঁ, আমি মক্কাবাসীদের ছাগল চরাতাম কয়েক কীরাতের বিনিময়ে। বুখারী
(সহীহ বুখারী: ২২৬২; সুনানে ইবন মাজাহ: ২১৪৯; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ২১৮৬; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১১৬৪১)
مقدمة الامام النووي
69 - باب استحباب العزلة عند فساد الناس والزمان أَو الخوف من فتنة في الدين ووقوع في حرام وشبهات ونحوها
599 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه - عن النبي - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مَا بَعَثَ اللهُ نَبِيًّا إِلاَّ رَعَى الْغَنَمَ» فَقَالَ أصْحَابُهُ: وأنْتَ؟ قَالَ: «نَعَمْ، كُنْتُ أرْعَاهَا عَلَى قَرَارِيطَ (1) لأَهْلِ مَكَّةَ». رواه البخاري. (2)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৬০০
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৬৯ যখন মানুষের মধ্যে ব্যাপক অবক্ষয় দেখা দেয়, যমানা খারাপ হয়ে যায় অথবা আপন দীনের ক্ষেত্রে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়া বা হারাম ও সন্দেহপূর্ণ বিষয়ে কিংবা এরূপ অন্য কিছুতে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়, তখন নিঃসঙ্গতা অবলম্বন মুস্তাহাব হওয়া প্রসঙ্গ
জীবন ও জীবিকায় যারা শ্রেষ্ঠ
হাদীছ নং: ৬০০
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মানুষের মধ্যে সর্বোত্তম জীবিকার অধিকারী হল আল্লাহর পথে ঘোড়ার লাগামধারী সেই ব্যক্তি, যে তার পিঠে চড়ে ধাবিত হয়। যখনই কোনও চিৎকার বা ভীতিকর আওয়াজ শোনে, সেদিকে ছুটে যায় যথাস্থানে শাহাদাত বা মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষায়। অথবা সেই ব্যক্তি, যে কিছুসংখ্যক ছাগল নিয়ে কোনও এক পাহাড়চূড়ায় বা কোনও এক উপত্যকায় চলে যায়। সেখানে নামায কায়েম করে ও যাকাত দেয় এবং নিজ প্রতিপালকের ইবাদতে রত থাকে, যাবৎ না মৃত্যু আসে। মানুষের কোনওকিছুর সঙ্গে তার সম্পর্ক থাকে না, তবে যতটুকু পারে তাদের ভালো করে। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম : ১৮৮৯; সুনানে ইবন মাজাহ ৩৯৭৭; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা : ১৮৪৯৭; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা: ৮৭৭৯; মুসনাদে আহমাদ: ৯৭২৩)
হাদীছ নং: ৬০০
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মানুষের মধ্যে সর্বোত্তম জীবিকার অধিকারী হল আল্লাহর পথে ঘোড়ার লাগামধারী সেই ব্যক্তি, যে তার পিঠে চড়ে ধাবিত হয়। যখনই কোনও চিৎকার বা ভীতিকর আওয়াজ শোনে, সেদিকে ছুটে যায় যথাস্থানে শাহাদাত বা মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষায়। অথবা সেই ব্যক্তি, যে কিছুসংখ্যক ছাগল নিয়ে কোনও এক পাহাড়চূড়ায় বা কোনও এক উপত্যকায় চলে যায়। সেখানে নামায কায়েম করে ও যাকাত দেয় এবং নিজ প্রতিপালকের ইবাদতে রত থাকে, যাবৎ না মৃত্যু আসে। মানুষের কোনওকিছুর সঙ্গে তার সম্পর্ক থাকে না, তবে যতটুকু পারে তাদের ভালো করে। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম : ১৮৮৯; সুনানে ইবন মাজাহ ৩৯৭৭; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা : ১৮৪৯৭; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা: ৮৭৭৯; মুসনাদে আহমাদ: ৯৭২৩)
مقدمة الامام النووي
69 - باب استحباب العزلة عند فساد الناس والزمان أَو الخوف من فتنة في الدين ووقوع في حرام وشبهات ونحوها
600 - وعنه، عن رسول الله - صلى الله عليه وسلم - أنَّه قَالَ: «مِنْ خَيْرِ مَعَاشِ النَّاسِ لهم رَجُلٌ مُمْسِكٌ عِنَانَ فَرَسِهِ في سَبيلِ الله، يَطيرُ عَلَى مَتْنِهِ كُلَّمَا سَمِعَ هَيْعَةً أَوْ فَزعَةً، طَارَ عَلَيْهِ يَبْتَغِي القَتْلَ، أَوْ المَوْتَ مَظَانَّه، أَوْ رَجُلٌ فِي غُنَيمَةٍ في رَأسِ شَعَفَةٍ مِنْ هذِهِ الشَّعَفِ، أَوْ بَطنِ وَادٍ مِنْ هذِهِ الأَوْدِيَةِ، يُقِيمُ الصَّلاَةَ، وَيُؤتِي الزَّكَاةَ، وَيَعْبُدُ رَبَّهُ حَتَّى يأتِيَهُ اليَقِينُ، لَيْسَ مِنَ النَّاسِ إِلاَّ فِي خَيْرٍ». رواه مسلم. (1)
«يَطِيرُ»: أيْ يُسْرعُ. وَ «مَتْنُهُ»: ظَهْرُهُ. وَ «الهَيْعَةُ»: الصوتُ للحربِ. وَ «الفَزعَةُ»: نحوه. وَ «مَظَانُّ الشَيْءِ»: المواضعُ الَّتي يُظَنُّ وجودُهُ فِيهَا. وَ «الغُنَيْمَة» بضم الغين: تصغير الغنم. وَ «الشَّعَفَةُ» بفتح الشين والعين: هي أعلى الجَبَل.
«يَطِيرُ»: أيْ يُسْرعُ. وَ «مَتْنُهُ»: ظَهْرُهُ. وَ «الهَيْعَةُ»: الصوتُ للحربِ. وَ «الفَزعَةُ»: نحوه. وَ «مَظَانُّ الشَيْءِ»: المواضعُ الَّتي يُظَنُّ وجودُهُ فِيهَا. وَ «الغُنَيْمَة» بضم الغين: تصغير الغنم. وَ «الشَّعَفَةُ» بفتح الشين والعين: هي أعلى الجَبَل.
তাহকীক: