রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ৫৮৪
ভূমিকা অধ্যায়
কোনও কষ্ট ও বিপদে মৃত্যু কামনা করা পসন্দনীয় নয়। তবে দীনরক্ষায় বিপদের আশঙ্কা থাকলে তা কামনা করাতে দোষ নেই।
অনেকে কষ্ট-ক্লেশ ও বিপদ-আপদে ধৈর্য হারিয়ে ফেলে। তখন মনে করে মরণেই বুঝি মুক্তি। ফলে মৃত্যু কামনা করে বসে। এটা ধৈর্যহীনতা তো বটেই, অপরিণামদর্শিতাও বৈ কি। কেননা মৃত্যু হলেই যে বিপদ শেষ হয়ে গেল এর কী নিশ্চয়তা আছে? মৃত্যুর পর আরও কঠিন পরিস্থিতিও এসে যেতে পারে। কবর সকলের জন্য কুসুমাস্তীর্ণ নয়। তা কারও জন্য জান্নাতের বাগান, কারও জন্য জাহান্নামের গর্ত। কে জানে কার কবর কেমন হবে? তাই মৃত্যু কামনা না করে বরং দরকার নিজ কবরকে নিরাপদ করে তোলার চেষ্টা করা। সে চেষ্টা বেঁচে থাকার দ্বারাই করা সম্ভব।
কবর ও আখিরাতের মুক্তি ও নিরাপত্তা লাভ হয় ছাওয়াব অর্জন দ্বারা, গুনাহ থেকে মাগফিরাত লাভ করার দ্বারা। যে ব্যক্তি দুঃখ-কষ্টে মৃত্যু কামনা করে, তার জেনে রাখা উচিত দুঃখ-কষ্টে ধৈর্যধারণ করা একদিকে গুনাহ থেকে মাগফিরাত লাভ হয়, অন্যদিকে ছাওয়াব অর্জিত হয়। এ দৃষ্টিতে দুঃখ-কষ্ট তো নি'আমত। এ নি'আমতের মধ্যে থাকা অবস্থায় মৃত্যু কামনা না করে সবর করাই প্রকৃত বুদ্ধিমত্তা। এ অবস্থায় সবর হল ভাগ্যকে দোষারোপ না করে আল্লাহর দিকে রুজু' হওয়া এবং কষ্ট লাঘবের জন্য তাঁর কাছে দু'আ করা।
দুঃখ-কষ্টে পাপমোচন হওয়ার কথা বহু হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। যেমন এক হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَا يُصِيبُ الْمُسْلِمَ مِنْ نَصَبٍ وَلاَ وَصَبٍ وَلاَ هَمٍّ وَلاَ حُزْنٍ وَلاَ أَذًى وَلاَ غَمٍّ حَتَّى الشَّوْكَةِ يُشَاكُهَا، إِلاَّ كَفَّرَ اللَّهُ بِهَا مِنْ خَطَايَاهُ
‘মুসলিম ব্যক্তির যে-কোনও ক্লান্তি, রোগ, দুশ্চিন্তা, দুঃখ, কষ্ট ও পেরেশানি দেখা দেয়, এমনকি তার যদি কোনও কাঁটাও বিদ্ধ হয়, তার বিনিময়ে আল্লাহ তা'আলা তার পাপ মোচন করে থাকেন।(সহীহ বুখারী: ৫৬৪২; সহীহ মুসলিম: ২৫৭৩, জামে' তিরমিযী: ৯৬৬)
যে ব্যক্তি স্বস্তির অবস্থায় থাকে, তার তো মৃত্যুকামনার প্রশ্নই আসে না। কেননা স্বস্তির অবস্থা এক বিশাল নি'আমত। এ অবস্থায় নির্বিঘ্নে ইবাদত-বন্দেগী করা যায়। নানারকম সৎকর্ম করা সম্ভব হয়। এ অবস্থায় যত বেশি বেঁচে থাকা যায় ততোই লাভ। প্রতিটি মুহূর্ত তার পক্ষে কল্যাণকর হয়। তার ছাওয়াব ও আল্লাহর নৈকট্য বৃদ্ধি পেতে থাকে। বেঁচে থাকাটা তাওবা-ইস্তিগফার করার সুযোগ। তাওবার একটা শর্ত অন্যের মেরে দেওয়া হক ও পাওনা মিটিয়ে ফেলা। এর জন্য সময়ের দরকার। কাজেই বেঁচে থাকা দরকার তাওবা-ইস্তিগফারের জন্যও। কাজেই মৃত্যু কামনা করা কোনও অবস্থায়ই ভালো নয়। বলা হয়, মৃত্যু কেবল তিন ব্যক্তিই কামনা করে। এক তো ওই ব্যক্তি, যে মৃত্যু-পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞ। দ্বিতীয় ওই ব্যক্তি, যে বালা-মসিবতে ধৈর্য ধরতে পারে না, ফলে সে তাকদীর থেকে পালাতে চায়। আর তৃতীয় ওই ব্যক্তি, যার কাছে আল্লাহ তা'আলার সাক্ষাৎ সর্বাপেক্ষা বেশি প্রিয়।
হাঁ, মৃত্যুকামনা যদি দীন ও ঈমান হেফাজতের লক্ষ্যে হয় বা আল্লাহর সাক্ষাৎলাভের অধীর আগ্রহে এবং তাঁর সান্নিধ্যের আস্বাদ উপভোগের উদ্দেশ্যে হয়, তা জায়েয আছে। সাহাবায়ে কেরামের অনেকে এরকম মৃত্যুকামনা করেছেন। তবে সে ক্ষেত্রেও 'হে আল্লাহ! আমাকে মৃত্যু দাও’ বা ‘হে আল্লাহ! আমাকে আর বাঁচিয়ে রেখো না’ এরূপ সাধারণভাবে মৃত্যুকামনা ঠিক নয়। বরং হাদীছে যেভাবে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, সেভাবেই শর্তযুক্তভাবে দু'আ করা উচিত। অর্থাৎ বলবে-
اللَّهُمَّ أَحْيِنِي مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِي ، وَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لِيْ
‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে জীবিত রেখো, যাবৎ জীবিত থাকা আমার পক্ষে কল্যাণকর হয় এবং আমাকে মৃত্যু দিয়ো, যখন মৃত্যু আমার পক্ষে কল্যাণকর হয়'।
বেঁচে থাকা কল্যাণকর হয় তখন, যখন বেঁচে থাকা হয় দীন ও ঈমানের সঙ্গে। এরূপ বেঁচে থাকা অবশ্যই কাম্য। আর মৃত্যু কল্যাণকর হয় তখন, যখন বেঁচে থাকলে ঈমান ও আমল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ অবস্থায় ঈমানের সঙ্গে মৃত্যুই কল্যাণকর। যখন দেশে ঈমান-আমল রক্ষার পরিবেশ না থাকে, চারদিকে বদদীনী পরিবেশ ছড়িয়ে পড়ে, বহুমুখী ফিতনা বেঈমানীর দিকে ডাকে, ফলে ঈমান-আমল রক্ষা কঠিন হয়ে যায়, স্বাভাবিকভাবেই তখন বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয় হয়ে যায়। এক হাদীছে আছে-
وَإِذَا كَانَ أُمَرَاؤُكُمْ شِرَارَكُمْ وَأَغْنِيَاؤُكُمْ بُخَلاَءَكُمْ وَأُمُورُكُمْ إِلَى نِسَائِكُمْ فَبَطْنُ الأَرْضِ خَيْرٌ لَكُمْ مِنْ ظَهْرِهَا
‘যখন তোমাদের নেতৃবর্গ হয় নিকৃষ্ট লোক, তোমাদের ধনীরা হয় কৃপণ এবং তোমাদের কর্তৃত্ব থাকে নারীদের হাতে, তখন তোমাদের জন্য ভূপৃষ্ঠ অপেক্ষা ভূগর্ভই শ্রেয়।(জামে' তিরমিযী: ২২৬৬)
সারকথা, বিশেষ পরিস্থিতি দেখা না দিলে মৃত্যু কামনা করা উচিত নয়। কিন্তু অনেকে ধৈর্যহারা হয়ে তা কামনা করে বসে। ফলে প্রভৃত ক্ষতির শিকার হয়। মুমিন-মুসলিমগণ যাতে সে ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারে, তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক করেছেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দান করেছেন। এ অধ্যায়ের হাদীছসমূহ সে সম্পর্কেই।
অনেকে কষ্ট-ক্লেশ ও বিপদ-আপদে ধৈর্য হারিয়ে ফেলে। তখন মনে করে মরণেই বুঝি মুক্তি। ফলে মৃত্যু কামনা করে বসে। এটা ধৈর্যহীনতা তো বটেই, অপরিণামদর্শিতাও বৈ কি। কেননা মৃত্যু হলেই যে বিপদ শেষ হয়ে গেল এর কী নিশ্চয়তা আছে? মৃত্যুর পর আরও কঠিন পরিস্থিতিও এসে যেতে পারে। কবর সকলের জন্য কুসুমাস্তীর্ণ নয়। তা কারও জন্য জান্নাতের বাগান, কারও জন্য জাহান্নামের গর্ত। কে জানে কার কবর কেমন হবে? তাই মৃত্যু কামনা না করে বরং দরকার নিজ কবরকে নিরাপদ করে তোলার চেষ্টা করা। সে চেষ্টা বেঁচে থাকার দ্বারাই করা সম্ভব।
কবর ও আখিরাতের মুক্তি ও নিরাপত্তা লাভ হয় ছাওয়াব অর্জন দ্বারা, গুনাহ থেকে মাগফিরাত লাভ করার দ্বারা। যে ব্যক্তি দুঃখ-কষ্টে মৃত্যু কামনা করে, তার জেনে রাখা উচিত দুঃখ-কষ্টে ধৈর্যধারণ করা একদিকে গুনাহ থেকে মাগফিরাত লাভ হয়, অন্যদিকে ছাওয়াব অর্জিত হয়। এ দৃষ্টিতে দুঃখ-কষ্ট তো নি'আমত। এ নি'আমতের মধ্যে থাকা অবস্থায় মৃত্যু কামনা না করে সবর করাই প্রকৃত বুদ্ধিমত্তা। এ অবস্থায় সবর হল ভাগ্যকে দোষারোপ না করে আল্লাহর দিকে রুজু' হওয়া এবং কষ্ট লাঘবের জন্য তাঁর কাছে দু'আ করা।
দুঃখ-কষ্টে পাপমোচন হওয়ার কথা বহু হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। যেমন এক হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَا يُصِيبُ الْمُسْلِمَ مِنْ نَصَبٍ وَلاَ وَصَبٍ وَلاَ هَمٍّ وَلاَ حُزْنٍ وَلاَ أَذًى وَلاَ غَمٍّ حَتَّى الشَّوْكَةِ يُشَاكُهَا، إِلاَّ كَفَّرَ اللَّهُ بِهَا مِنْ خَطَايَاهُ
‘মুসলিম ব্যক্তির যে-কোনও ক্লান্তি, রোগ, দুশ্চিন্তা, দুঃখ, কষ্ট ও পেরেশানি দেখা দেয়, এমনকি তার যদি কোনও কাঁটাও বিদ্ধ হয়, তার বিনিময়ে আল্লাহ তা'আলা তার পাপ মোচন করে থাকেন।(সহীহ বুখারী: ৫৬৪২; সহীহ মুসলিম: ২৫৭৩, জামে' তিরমিযী: ৯৬৬)
যে ব্যক্তি স্বস্তির অবস্থায় থাকে, তার তো মৃত্যুকামনার প্রশ্নই আসে না। কেননা স্বস্তির অবস্থা এক বিশাল নি'আমত। এ অবস্থায় নির্বিঘ্নে ইবাদত-বন্দেগী করা যায়। নানারকম সৎকর্ম করা সম্ভব হয়। এ অবস্থায় যত বেশি বেঁচে থাকা যায় ততোই লাভ। প্রতিটি মুহূর্ত তার পক্ষে কল্যাণকর হয়। তার ছাওয়াব ও আল্লাহর নৈকট্য বৃদ্ধি পেতে থাকে। বেঁচে থাকাটা তাওবা-ইস্তিগফার করার সুযোগ। তাওবার একটা শর্ত অন্যের মেরে দেওয়া হক ও পাওনা মিটিয়ে ফেলা। এর জন্য সময়ের দরকার। কাজেই বেঁচে থাকা দরকার তাওবা-ইস্তিগফারের জন্যও। কাজেই মৃত্যু কামনা করা কোনও অবস্থায়ই ভালো নয়। বলা হয়, মৃত্যু কেবল তিন ব্যক্তিই কামনা করে। এক তো ওই ব্যক্তি, যে মৃত্যু-পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞ। দ্বিতীয় ওই ব্যক্তি, যে বালা-মসিবতে ধৈর্য ধরতে পারে না, ফলে সে তাকদীর থেকে পালাতে চায়। আর তৃতীয় ওই ব্যক্তি, যার কাছে আল্লাহ তা'আলার সাক্ষাৎ সর্বাপেক্ষা বেশি প্রিয়।
হাঁ, মৃত্যুকামনা যদি দীন ও ঈমান হেফাজতের লক্ষ্যে হয় বা আল্লাহর সাক্ষাৎলাভের অধীর আগ্রহে এবং তাঁর সান্নিধ্যের আস্বাদ উপভোগের উদ্দেশ্যে হয়, তা জায়েয আছে। সাহাবায়ে কেরামের অনেকে এরকম মৃত্যুকামনা করেছেন। তবে সে ক্ষেত্রেও 'হে আল্লাহ! আমাকে মৃত্যু দাও’ বা ‘হে আল্লাহ! আমাকে আর বাঁচিয়ে রেখো না’ এরূপ সাধারণভাবে মৃত্যুকামনা ঠিক নয়। বরং হাদীছে যেভাবে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, সেভাবেই শর্তযুক্তভাবে দু'আ করা উচিত। অর্থাৎ বলবে-
اللَّهُمَّ أَحْيِنِي مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِي ، وَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لِيْ
‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে জীবিত রেখো, যাবৎ জীবিত থাকা আমার পক্ষে কল্যাণকর হয় এবং আমাকে মৃত্যু দিয়ো, যখন মৃত্যু আমার পক্ষে কল্যাণকর হয়'।
বেঁচে থাকা কল্যাণকর হয় তখন, যখন বেঁচে থাকা হয় দীন ও ঈমানের সঙ্গে। এরূপ বেঁচে থাকা অবশ্যই কাম্য। আর মৃত্যু কল্যাণকর হয় তখন, যখন বেঁচে থাকলে ঈমান ও আমল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ অবস্থায় ঈমানের সঙ্গে মৃত্যুই কল্যাণকর। যখন দেশে ঈমান-আমল রক্ষার পরিবেশ না থাকে, চারদিকে বদদীনী পরিবেশ ছড়িয়ে পড়ে, বহুমুখী ফিতনা বেঈমানীর দিকে ডাকে, ফলে ঈমান-আমল রক্ষা কঠিন হয়ে যায়, স্বাভাবিকভাবেই তখন বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয় হয়ে যায়। এক হাদীছে আছে-
وَإِذَا كَانَ أُمَرَاؤُكُمْ شِرَارَكُمْ وَأَغْنِيَاؤُكُمْ بُخَلاَءَكُمْ وَأُمُورُكُمْ إِلَى نِسَائِكُمْ فَبَطْنُ الأَرْضِ خَيْرٌ لَكُمْ مِنْ ظَهْرِهَا
‘যখন তোমাদের নেতৃবর্গ হয় নিকৃষ্ট লোক, তোমাদের ধনীরা হয় কৃপণ এবং তোমাদের কর্তৃত্ব থাকে নারীদের হাতে, তখন তোমাদের জন্য ভূপৃষ্ঠ অপেক্ষা ভূগর্ভই শ্রেয়।(জামে' তিরমিযী: ২২৬৬)
সারকথা, বিশেষ পরিস্থিতি দেখা না দিলে মৃত্যু কামনা করা উচিত নয়। কিন্তু অনেকে ধৈর্যহারা হয়ে তা কামনা করে বসে। ফলে প্রভৃত ক্ষতির শিকার হয়। মুমিন-মুসলিমগণ যাতে সে ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারে, তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক করেছেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দান করেছেন। এ অধ্যায়ের হাদীছসমূহ সে সম্পর্কেই।
মুমিন ব্যক্তির পক্ষে আয়ুর কল্যাণকরতা
হাদীছ নং: ৫৮৪
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ মৃত্যু কামনা করবে না। সে যদি সৎকর্মশীল হয়, তবে (বেঁচে থাকলে) আশা করা যায় আরও বেশি সৎকর্ম করতে পারবে। আর যদি অসৎকর্মশীল হয়, তবে তাওবা করবে ও নিজেকে সংশোধন করে ফেলবে।-বুখারী ও মুসলিম। এটা বুখারীর ভাষা।
(সহীহ বুখারী: ৭২৩৫; সহীহ মুসলিম: ২৬৮২; সুনানে নাসাঈ ১৮২১; সুনানে ইবন মাজাহ: ৪২৬৫; মুসনাদে আহমাদ: ৭২৩৫)
মুসলিম শরীফের এক বর্ণনায় আছে, হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ মৃত্যু কামনা করবে না এবং তার জন্য দু'আও করবে না তা আসার আগে। কেননা মৃত্যু হলে আমল বন্ধ হয়ে যায়। আর মুমিন ব্যক্তির আয়ু তার কেবল কল্যাণই বৃদ্ধি করে।
(সহীহ মুসলিম: ২৬৮২; মুসনাদে আহমাদ: ৮১৮৯)
হাদীছ নং: ৫৮৪
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ মৃত্যু কামনা করবে না। সে যদি সৎকর্মশীল হয়, তবে (বেঁচে থাকলে) আশা করা যায় আরও বেশি সৎকর্ম করতে পারবে। আর যদি অসৎকর্মশীল হয়, তবে তাওবা করবে ও নিজেকে সংশোধন করে ফেলবে।-বুখারী ও মুসলিম। এটা বুখারীর ভাষা।
(সহীহ বুখারী: ৭২৩৫; সহীহ মুসলিম: ২৬৮২; সুনানে নাসাঈ ১৮২১; সুনানে ইবন মাজাহ: ৪২৬৫; মুসনাদে আহমাদ: ৭২৩৫)
মুসলিম শরীফের এক বর্ণনায় আছে, হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ মৃত্যু কামনা করবে না এবং তার জন্য দু'আও করবে না তা আসার আগে। কেননা মৃত্যু হলে আমল বন্ধ হয়ে যায়। আর মুমিন ব্যক্তির আয়ু তার কেবল কল্যাণই বৃদ্ধি করে।
(সহীহ মুসলিম: ২৬৮২; মুসনাদে আহমাদ: ৮১৮৯)
مقدمة الامام النووي
67 - بابُ كراهة تمنّي الموت بسبب ضُرّ نزل بِهِ وَلاَ بأس بِهِ لخوف الفتنة في الدين
584 - عن أَبي هريرة - رضي الله عنه: أنَّ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «لا يَتَمَنَّ (1) أحَدُكُمُ المَوْتَ، إمَّا مُحْسِنًا فَلَعَلَّهُ يَزْدَادُ، وَإمَّا مُسِيئًا فَلَعَلَّهُ يَسْتَعْتِبُ». متفقٌ عَلَيْهِ، (2) وهذا لفظ البخاري. [ص:197]
وفي رواية لمسلم عن أَبي هريرة - رضي الله عنه - عن رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «لاَ يَتَمَنَّ أَحَدُكُمُ المَوْتَ، وَلاَ يَدْعُ بِهِ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأتِيَهُ؛ إنَّهُ إِذَا مَاتَ انْقَطَعَ عَمَلُهُ، وَإنَّهُ لاَ يَزِيدُ المُؤْمِنَ عُمُرُهُ إِلاَّ خَيْرًا».
وفي رواية لمسلم عن أَبي هريرة - رضي الله عنه - عن رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «لاَ يَتَمَنَّ أَحَدُكُمُ المَوْتَ، وَلاَ يَدْعُ بِهِ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأتِيَهُ؛ إنَّهُ إِذَا مَاتَ انْقَطَعَ عَمَلُهُ، وَإنَّهُ لاَ يَزِيدُ المُؤْمِنَ عُمُرُهُ إِلاَّ خَيْرًا».
হাদীসের ব্যাখ্যা:
لَا يَتَمَنى أَحَدُكُمُ الْمَوْتَ – এ বাক্যটি সংবাদমূলক। অর্থাৎ মুমিনদের সম্পর্কে সংবাদ দেওয়া হয়েছে যে, তারা কখনও মৃত্যু কামনা করে না ও করবে না। তা করাটা তাদের শান নয়, তাদের স্বভাব নয়। তবে বাক্যটি সংবাদমূলক হলেও এর দ্বারা উদ্দেশ্য নিষেধ করা। অর্থাৎ তোমরা কেউ যেন কখনও কোনও কষ্ট-ক্লেশে পড়ে মৃত্যু কামনা না কর। ভাষা বিশেষজ্ঞদের মতে সংবাদমূলক বাক্য দ্বারা কোনও বিষয়ে নিষেধ করা হলে সে নিষেধাজ্ঞা অধিকতর শক্তিশালী হয়। কেননা তখন তার নিগূঢ় অর্থ হয়- নিষেধ কী করা হবে, তারা তো তা করেই না; করাটা তাদের স্বভাবই নয়। সরাসরি নিষেধ করা হলে বোঝা যায় তারা বুঝি তা করে, তাই নিষেধ করা হচ্ছে।
إِمَّا مُحْسِنًا فَلَعَلَّهُ يَزْدَادُ ‘সে যদি সৎকর্মশীল হয়, তবে (বেঁচে থাকলে) আশা করা যায় আরও বেশি সৎকর্ম করতে পারবে'। অর্থাৎ সে ব্যক্তি যদি আল্লাহর অনুগত হয়, যাবতীয় ফরয ও ওয়াজিব কাজসমূহ যথাযথভাবে আদায় করে, হয়তো বা নফল আমলেও যত্নবান থাকে, তবে তার আয়ু যত লম্বা হবে, আল্লাহর পথে ততো বেশি অগ্রসর হতে থাকবে, তার পরকালীন সঞ্চয় বাড়তে থাকবে এবং উত্তরোত্তর ছাওয়াব ও পুণ্যে তার সমৃদ্ধি ঘটতে থাকবে। মুসলিম শরীফের বর্ণনায় আছে- وَإِنَّهُ لَا يَزِيدُ الْمُؤْمِنَ عُمُرُهُ إِلَّا خَيْرًا (আর মুমিন ব্যক্তির আয়ু তার কেবল কল্যাণই বৃদ্ধি করে)।
অপর এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
خِيَارُكُمْ مَنْ طَالَ عُمْرُهُ وَحَسُنَ عَمَلُهُ
‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ, যার আয়ু দীর্ঘ হয় এবং আমল হয় উত্তম।’(মুসনাদে আহমাদ: ১৩৯০)
মৃত্যু দ্বারা তো সে উন্নতি ও সমৃদ্ধি ব্যহত হয়। কাজেই মুমিন ব্যক্তি তা কীভাবে কামনা করতে পারে? সে তা কামনা তো করবেই না; বরং আয়ুকে একটি শ্রেষ্ঠ নি'আমত গণ্য করবে এবং তা যথাযথ কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে। হাদীছটি ইঙ্গিত করছে, মুমিন ব্যক্তি যে দিনটিই পায়, সেটি তার জন্য সৎকর্ম করার এক সুবর্ণ সুযোগ। কাজেই কোনও একটি দিনকেও সে অবহেলায় নষ্ট করবে না। তার লক্ষ্য থাকবে প্রতিটি দিন যেন ছাওয়াব ও পুণ্যবৃদ্ধির কারণ হয়। বয়স যত বেশি হতে থাকবে, উত্তরোত্তর নেকীর সঞ্চয়ও যেন বাড়তে থাকে।
وَإِمَّا مُسِيْئًا فَلَعَلَّهُ يَسْتَعْتِبُ (আর যদি অসৎকর্মশীল হয়, তবে তাওবা করবে ও নিজেকে সংশোধন করে ফেলবে)। يَسْتَعْتِبُ ক্রিয়াপদটির উৎপত্তি العتبي থেকে, যার অর্থ সন্তুষ্টি। সে হিসেবে يَسْتَعْتِبُ এর মূল অর্থ হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায় তাঁর অভিমুখী হয়ে যাবতীয় গুনাহ থেকে তাওবা করা ও নিজেকে সংশোধন করার দ্বারা। প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য যে দিনটিই পাওয়া যায় সে দিনকে আত্মসংশোধনের মহাসুযোগ গণ্য করা। সে মনে করবে হয়তো এটিই আমার জীবনের শেষ দিন। তাই এ দিন কোনওরকমের গুনাহ করা তো নয়ই; বরং তাওবা করে আত্মসংশোধনের কাজে সচেষ্ট থাকব। এভাবে আগত প্রতিটি দিনকে তাওবা ও ইসলাহের কাজে লাগানোর মধ্যেই দিনটির সার্থকতা।
মুসলিম শরীফের বর্ণনায় আছে- إِنَّهُ إِذَا مَاتَ انْقَطَعَ عَمَلُهُ (কেননা মৃত্যু হলে আমল বন্ধ হয়ে যায়)। নেক আমল বন্ধ হলে আল্লাহ তা'আলার পথে অগ্রগামিতা বন্ধ হয়ে যায় এবং বন্ধ হয়ে যায় আমলনামায় ছাওয়াব লেখাও। সুতরাং এ দিক বিবেচনায় মৃত্যু মুমিন ব্যক্তির পক্ষে এক অপূরণীয় ক্ষতি। এমন ক্ষতিকর জিনিস মুসলিম ব্যক্তি কীভাবে চাইতে পারে?
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. আয়ু মানবজীবনের আসল পুঁজি ও শ্রেষ্ঠ নি'আমত।
খ. কোনও দুঃখ-কষ্টের কারণে আয়ুর সমাপ্তি বা মৃত্যু কামনা করা উচিত নয়।
গ. আগত প্রতিটি দিন পুণ্য অর্জনের সুযোগ। এ সুযোগকে কাজে লাগানোর মধ্যেই সে দিনটি পাওয়ার সার্থকতা।
ঘ. খুব লক্ষ রাখা উচিত যাতে নতুন যে দিনটি আসে সেদিন কোনওরকম গুনাহ না হয়ে যায়।
ঙ. তাওবা করা ও আত্মসংশোধনে মনোনিবেশ করা প্রতিদিনের একটি জরুরি কাজ।
إِمَّا مُحْسِنًا فَلَعَلَّهُ يَزْدَادُ ‘সে যদি সৎকর্মশীল হয়, তবে (বেঁচে থাকলে) আশা করা যায় আরও বেশি সৎকর্ম করতে পারবে'। অর্থাৎ সে ব্যক্তি যদি আল্লাহর অনুগত হয়, যাবতীয় ফরয ও ওয়াজিব কাজসমূহ যথাযথভাবে আদায় করে, হয়তো বা নফল আমলেও যত্নবান থাকে, তবে তার আয়ু যত লম্বা হবে, আল্লাহর পথে ততো বেশি অগ্রসর হতে থাকবে, তার পরকালীন সঞ্চয় বাড়তে থাকবে এবং উত্তরোত্তর ছাওয়াব ও পুণ্যে তার সমৃদ্ধি ঘটতে থাকবে। মুসলিম শরীফের বর্ণনায় আছে- وَإِنَّهُ لَا يَزِيدُ الْمُؤْمِنَ عُمُرُهُ إِلَّا خَيْرًا (আর মুমিন ব্যক্তির আয়ু তার কেবল কল্যাণই বৃদ্ধি করে)।
অপর এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
خِيَارُكُمْ مَنْ طَالَ عُمْرُهُ وَحَسُنَ عَمَلُهُ
‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ, যার আয়ু দীর্ঘ হয় এবং আমল হয় উত্তম।’(মুসনাদে আহমাদ: ১৩৯০)
মৃত্যু দ্বারা তো সে উন্নতি ও সমৃদ্ধি ব্যহত হয়। কাজেই মুমিন ব্যক্তি তা কীভাবে কামনা করতে পারে? সে তা কামনা তো করবেই না; বরং আয়ুকে একটি শ্রেষ্ঠ নি'আমত গণ্য করবে এবং তা যথাযথ কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে। হাদীছটি ইঙ্গিত করছে, মুমিন ব্যক্তি যে দিনটিই পায়, সেটি তার জন্য সৎকর্ম করার এক সুবর্ণ সুযোগ। কাজেই কোনও একটি দিনকেও সে অবহেলায় নষ্ট করবে না। তার লক্ষ্য থাকবে প্রতিটি দিন যেন ছাওয়াব ও পুণ্যবৃদ্ধির কারণ হয়। বয়স যত বেশি হতে থাকবে, উত্তরোত্তর নেকীর সঞ্চয়ও যেন বাড়তে থাকে।
وَإِمَّا مُسِيْئًا فَلَعَلَّهُ يَسْتَعْتِبُ (আর যদি অসৎকর্মশীল হয়, তবে তাওবা করবে ও নিজেকে সংশোধন করে ফেলবে)। يَسْتَعْتِبُ ক্রিয়াপদটির উৎপত্তি العتبي থেকে, যার অর্থ সন্তুষ্টি। সে হিসেবে يَسْتَعْتِبُ এর মূল অর্থ হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায় তাঁর অভিমুখী হয়ে যাবতীয় গুনাহ থেকে তাওবা করা ও নিজেকে সংশোধন করার দ্বারা। প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য যে দিনটিই পাওয়া যায় সে দিনকে আত্মসংশোধনের মহাসুযোগ গণ্য করা। সে মনে করবে হয়তো এটিই আমার জীবনের শেষ দিন। তাই এ দিন কোনওরকমের গুনাহ করা তো নয়ই; বরং তাওবা করে আত্মসংশোধনের কাজে সচেষ্ট থাকব। এভাবে আগত প্রতিটি দিনকে তাওবা ও ইসলাহের কাজে লাগানোর মধ্যেই দিনটির সার্থকতা।
মুসলিম শরীফের বর্ণনায় আছে- إِنَّهُ إِذَا مَاتَ انْقَطَعَ عَمَلُهُ (কেননা মৃত্যু হলে আমল বন্ধ হয়ে যায়)। নেক আমল বন্ধ হলে আল্লাহ তা'আলার পথে অগ্রগামিতা বন্ধ হয়ে যায় এবং বন্ধ হয়ে যায় আমলনামায় ছাওয়াব লেখাও। সুতরাং এ দিক বিবেচনায় মৃত্যু মুমিন ব্যক্তির পক্ষে এক অপূরণীয় ক্ষতি। এমন ক্ষতিকর জিনিস মুসলিম ব্যক্তি কীভাবে চাইতে পারে?
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. আয়ু মানবজীবনের আসল পুঁজি ও শ্রেষ্ঠ নি'আমত।
খ. কোনও দুঃখ-কষ্টের কারণে আয়ুর সমাপ্তি বা মৃত্যু কামনা করা উচিত নয়।
গ. আগত প্রতিটি দিন পুণ্য অর্জনের সুযোগ। এ সুযোগকে কাজে লাগানোর মধ্যেই সে দিনটি পাওয়ার সার্থকতা।
ঘ. খুব লক্ষ রাখা উচিত যাতে নতুন যে দিনটি আসে সেদিন কোনওরকম গুনাহ না হয়ে যায়।
ঙ. তাওবা করা ও আত্মসংশোধনে মনোনিবেশ করা প্রতিদিনের একটি জরুরি কাজ।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)