রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ৫৮৫
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায়: ৬৭ কোনও কষ্ট ও বিপদে মৃত্যু কামনা করা পসন্দনীয় নয়। তবে দীনরক্ষায় বিপদের আশঙ্কা থাকলে তা কামনা করাতে দোষ নেই।
কোনও বালা-মসিবতে মৃত্যু কামনা করা উচিত নয়
হাদীছ নং: ৫৮৫
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ যেন কোনও কষ্টে পড়ে মৃত্যু কামনা না করে। একান্ত যদি করতেই চায় তবে যেন বলে, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে জীবিত রেখো, যাবৎ জীবিত থাকা আমার পক্ষে কল্যাণকর হয় এবং আমাকে মৃত্যু দিয়ো, যখন মৃত্যু আমার পক্ষে কল্যাণকর হয়। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৫৬৭১; সহীহ মুসলিম: ২৬৮০; জামে তিরমিযী: ৯৭১)
হাদীছ নং: ৫৮৫
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ যেন কোনও কষ্টে পড়ে মৃত্যু কামনা না করে। একান্ত যদি করতেই চায় তবে যেন বলে, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে জীবিত রেখো, যাবৎ জীবিত থাকা আমার পক্ষে কল্যাণকর হয় এবং আমাকে মৃত্যু দিয়ো, যখন মৃত্যু আমার পক্ষে কল্যাণকর হয়। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৫৬৭১; সহীহ মুসলিম: ২৬৮০; জামে তিরমিযী: ৯৭১)
مقدمة الامام النووي
67 - بابُ كراهة تمنّي الموت بسبب ضُرّ نزل بِهِ وَلاَ بأس بِهِ لخوف الفتنة في الدين
585 - وعن أنسٍ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «لاَ يَتَمَنَّيَنَّ أحَدُكُمُ المَوْتَ لِضُرٍّ أصَابَهُ، فَإنْ كَانَ لاَ بُدَّ فَاعِلًا، فَلْيَقُلْ: اللَّهُمَّ أَحْيِني مَا كَانَتِ الحَيَاةُ خَيْرًا لي، وَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَت الوَفَاةُ خَيرًا لي». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে কোনও কষ্টের কারণে মৃত্যু কামনা করতে নিষেধ করা হয়েছে। কষ্ট দুনিয়াবী হতে পারে এবং পরকালীনও হতে পারে। দুনিয়াবী কষ্ট বিভিন্ন রকমের। অসুখ-বিসুখের কষ্ট, খাদ্যকষ্ট, মানসিক কষ্ট ইত্যাদি। পরকালীন কষ্ট বলতে এমন কোনও ফিতনাকে বোঝায়, যে কারণে নিজের দীন ও ঈমান রক্ষা কঠিন হয়ে যায়। এখানে মূলত দুনিয়াবী কষ্টের কথা বোঝানো হয়েছে। দুনিয়াবী কষ্টের কারণে মৃত্যু কামনা করা জায়েয নয়। কেননা দুনিয়াবী কষ্টের ভেতর কল্যাণ নিহিত থাকে। দুনিয়ার জীবনটাই তো পরীক্ষার জীবন। এখানে মানুষকে যেমন সুখ-সাচ্ছন্দ্য দ্বারা পরীক্ষা করা হয়, তেমনি পরীক্ষা করা হয় কষ্ট-ক্লেশ দ্বারাও। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَنَبْلُوكُمْ بِالشَّرِّ وَالْخَيْرِ فِتْنَةً
‘আমি পরীক্ষা করার জন্য তোমাদেরকে মন্দ ও ভালোতে লিপ্ত করি।(সূরা আম্বিয়া (২১), আয়াত ৩৫)
সুখ-সাচ্ছন্দ্যে শোকর আদায় করলে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ হয়। তেমনি দুঃখ-কষ্টে সবর করার দ্বারাও আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি পাওয়া যায়। ফলে গুনাহ মাফ হয় ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। এটা আখিরাতের অতিবড় লাভ। তাই দুঃখ-কষ্টে মৃত্যু কামনা করা উচিত নয়। তা করলে সেই লাভ থেকে বঞ্চিত থাকতে হয়।
মু'মিন ব্যক্তি আল্লাহর পথের যাত্রী। প্রতি কদমে সে আল্লাহর নৈকট্যের দিকে অগ্রসর হয়। প্রতিটি নেককাজ দ্বারা তার নৈকট্য বৃদ্ধি পায়। আল্লাহর উত্তরোত্তর নৈকট্যলাভই তার পরম লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যের যাত্রা মৃত্যু দ্বারা ব্যহত হয়। তো যে জিনিস পরম লক্ষ্যকে বাধাগ্রস্ত করে, আল্লাহর পথের পথিক তা কীভাবে চাইতে পারে? কষ্টের কারণে? না, কষ্টের কারণেও চাইতে পারে না। কারণ কোনও কষ্টই তো স্থায়ী নয়। কুরআন মাজীদে ইরশাদ-
إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا
‘নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে স্বস্তিও থাকে।’(সূরা ইনশিরাহ (৯৪), আয়াত ৬)
যখন দুঃখ-কষ্ট কেটে যাবে, সেই সুখের দিনে কত ইবাদত-বন্দেগী করা সম্ভব! দুনিয়া আখিরাতের শস্যক্ষেত্র। স্বস্তির সঙ্গে বেঁচে থাকলে এখানে আখিরাতের কত ফসল বোনা যায়। সম্ভব হয় কত পুণ্যসঞ্চয়। মৃত্যুকামনা দ্বারা আখিরাতের সেই সঞ্চয় লাভের সুযোগ উপেক্ষা করা হয়। তাই হাদীছে মৃত্যুকামনা করতে নিষেধ করা হয়েছে।
মুমিন ব্যক্তির পক্ষে দীর্ঘায়ু সর্বাবস্থায় কল্যাণকর। কেননা আয়ু যত দীর্ঘ হয়, ততই বেশি পুণ্য সঞ্চিত হয়। সে হিসেবে দীর্ঘজীবী মুমিন বেশি পুণ্যবান হয়ে থাকে।
অবশ্য কখনও কখনও এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়ে যায়, যখন মৃত্যু কামনা করা অপরিহার্য হয়ে যায়। হয়তো ভয় হয় এ পরিস্থিতিতে ঈমান ও আমল রক্ষা করা যাবে না। তা নিজের নফস ও কুপ্রবৃত্তির প্রবণতার কারণেও হতে পারে, আবার ফিতনা-ফাসাদের তীব্রতার কারণেও হতে পারে। যদি এরকম কোনও পরিস্থিতি দেখা দেয়, সে ক্ষেত্রে মৃত্যু কামনা কীভাবে করা হবে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি দু'আর মাধ্যমে তা শিক্ষা দিয়েছেন। দু'আটি এরূপ-
اللَّهُمَّ أَحْيِنِي مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِي ، وَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لِي
‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে জীবিত রেখো, যাবৎ জীবিত থাকা আমার পক্ষে কল্যাণকর হয় এবং আমাকে মৃত্যু দিয়ো, যখন মৃত্যু আমার পক্ষে কল্যাণকর হয়'।
অর্থাৎ প্রকৃত অবস্থা হে আল্লাহ তুমিই ভালো জান। কখন আমার পক্ষে বেঁচে থাকা ভালো আর কখন আমার পক্ষে মৃত্যু ভালো, সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান তোমারই আছে। তাই এ বিষয়ে ফয়সালা আমি তোমারই হাতে ন্যস্ত করলাম। তুমি যা ফয়সালা কর, আমি তাতেই খুশি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে আরও একটি দু'আ শিক্ষা দিয়েছেন। তাতেও মৃত্যুকামনার বিষয়টা আছে।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ، وَتَرْكَ الْمُنْكَرَاتِ، وَحُبَّ الْمَسَاكِينِ، وَأَنْ تَغْفِرَ لِي وَتَرْحَمَنِي، وَإِذَا أَرَدْتَ فِتْنَةٌ فِي قَوْمٍ فَتَوَفَّنِي غَيْرَ مَفْتُوْنٍ
‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে চাই সৎকর্ম সম্পাদন, অসৎকর্ম পরিহার, গরীব- মিসকীনদের প্রতি ভালোবাসা। আরও চাই তুমি আমাকে ক্ষমা করবে ও আমার প্রতি দয়া করবে এবং কোনও সম্প্রদায়ের মধ্যে ফিতনার ইচ্ছা করলে ফিতনামুক্তরূপে আমার মৃত্যু দিয়ো।(জামে তিরমিযী: ৩২৩৫; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২৯৫৯৭: বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৯২৬)
উল্লেখ্য, এ হাদীছটি ৪০ ক্রমিক নম্বর হাদীসে গত হয়েছে। এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা সেখানে দ্রষ্টব্য।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. দুনিয়ায় যত কষ্ট-ক্লেশই হোক না কেন, কিছুতেই মৃত্যু কামনা করা উচিত নয়। আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকাই মু'মিনের কর্তব্য।
খ. কষ্ট-ক্লেশ দুর্বিষহ হয়ে উঠলে এ হাদীছে যেভাবে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে সেভাবে দু'আ করতে হবে।
وَنَبْلُوكُمْ بِالشَّرِّ وَالْخَيْرِ فِتْنَةً
‘আমি পরীক্ষা করার জন্য তোমাদেরকে মন্দ ও ভালোতে লিপ্ত করি।(সূরা আম্বিয়া (২১), আয়াত ৩৫)
সুখ-সাচ্ছন্দ্যে শোকর আদায় করলে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ হয়। তেমনি দুঃখ-কষ্টে সবর করার দ্বারাও আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি পাওয়া যায়। ফলে গুনাহ মাফ হয় ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। এটা আখিরাতের অতিবড় লাভ। তাই দুঃখ-কষ্টে মৃত্যু কামনা করা উচিত নয়। তা করলে সেই লাভ থেকে বঞ্চিত থাকতে হয়।
মু'মিন ব্যক্তি আল্লাহর পথের যাত্রী। প্রতি কদমে সে আল্লাহর নৈকট্যের দিকে অগ্রসর হয়। প্রতিটি নেককাজ দ্বারা তার নৈকট্য বৃদ্ধি পায়। আল্লাহর উত্তরোত্তর নৈকট্যলাভই তার পরম লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যের যাত্রা মৃত্যু দ্বারা ব্যহত হয়। তো যে জিনিস পরম লক্ষ্যকে বাধাগ্রস্ত করে, আল্লাহর পথের পথিক তা কীভাবে চাইতে পারে? কষ্টের কারণে? না, কষ্টের কারণেও চাইতে পারে না। কারণ কোনও কষ্টই তো স্থায়ী নয়। কুরআন মাজীদে ইরশাদ-
إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا
‘নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে স্বস্তিও থাকে।’(সূরা ইনশিরাহ (৯৪), আয়াত ৬)
যখন দুঃখ-কষ্ট কেটে যাবে, সেই সুখের দিনে কত ইবাদত-বন্দেগী করা সম্ভব! দুনিয়া আখিরাতের শস্যক্ষেত্র। স্বস্তির সঙ্গে বেঁচে থাকলে এখানে আখিরাতের কত ফসল বোনা যায়। সম্ভব হয় কত পুণ্যসঞ্চয়। মৃত্যুকামনা দ্বারা আখিরাতের সেই সঞ্চয় লাভের সুযোগ উপেক্ষা করা হয়। তাই হাদীছে মৃত্যুকামনা করতে নিষেধ করা হয়েছে।
মুমিন ব্যক্তির পক্ষে দীর্ঘায়ু সর্বাবস্থায় কল্যাণকর। কেননা আয়ু যত দীর্ঘ হয়, ততই বেশি পুণ্য সঞ্চিত হয়। সে হিসেবে দীর্ঘজীবী মুমিন বেশি পুণ্যবান হয়ে থাকে।
অবশ্য কখনও কখনও এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়ে যায়, যখন মৃত্যু কামনা করা অপরিহার্য হয়ে যায়। হয়তো ভয় হয় এ পরিস্থিতিতে ঈমান ও আমল রক্ষা করা যাবে না। তা নিজের নফস ও কুপ্রবৃত্তির প্রবণতার কারণেও হতে পারে, আবার ফিতনা-ফাসাদের তীব্রতার কারণেও হতে পারে। যদি এরকম কোনও পরিস্থিতি দেখা দেয়, সে ক্ষেত্রে মৃত্যু কামনা কীভাবে করা হবে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি দু'আর মাধ্যমে তা শিক্ষা দিয়েছেন। দু'আটি এরূপ-
اللَّهُمَّ أَحْيِنِي مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِي ، وَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لِي
‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে জীবিত রেখো, যাবৎ জীবিত থাকা আমার পক্ষে কল্যাণকর হয় এবং আমাকে মৃত্যু দিয়ো, যখন মৃত্যু আমার পক্ষে কল্যাণকর হয়'।
অর্থাৎ প্রকৃত অবস্থা হে আল্লাহ তুমিই ভালো জান। কখন আমার পক্ষে বেঁচে থাকা ভালো আর কখন আমার পক্ষে মৃত্যু ভালো, সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান তোমারই আছে। তাই এ বিষয়ে ফয়সালা আমি তোমারই হাতে ন্যস্ত করলাম। তুমি যা ফয়সালা কর, আমি তাতেই খুশি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে আরও একটি দু'আ শিক্ষা দিয়েছেন। তাতেও মৃত্যুকামনার বিষয়টা আছে।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ، وَتَرْكَ الْمُنْكَرَاتِ، وَحُبَّ الْمَسَاكِينِ، وَأَنْ تَغْفِرَ لِي وَتَرْحَمَنِي، وَإِذَا أَرَدْتَ فِتْنَةٌ فِي قَوْمٍ فَتَوَفَّنِي غَيْرَ مَفْتُوْنٍ
‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে চাই সৎকর্ম সম্পাদন, অসৎকর্ম পরিহার, গরীব- মিসকীনদের প্রতি ভালোবাসা। আরও চাই তুমি আমাকে ক্ষমা করবে ও আমার প্রতি দয়া করবে এবং কোনও সম্প্রদায়ের মধ্যে ফিতনার ইচ্ছা করলে ফিতনামুক্তরূপে আমার মৃত্যু দিয়ো।(জামে তিরমিযী: ৩২৩৫; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২৯৫৯৭: বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৯২৬)
উল্লেখ্য, এ হাদীছটি ৪০ ক্রমিক নম্বর হাদীসে গত হয়েছে। এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা সেখানে দ্রষ্টব্য।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. দুনিয়ায় যত কষ্ট-ক্লেশই হোক না কেন, কিছুতেই মৃত্যু কামনা করা উচিত নয়। আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকাই মু'মিনের কর্তব্য।
খ. কষ্ট-ক্লেশ দুর্বিষহ হয়ে উঠলে এ হাদীছে যেভাবে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে সেভাবে দু'আ করতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)