রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ৫৫০
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায় : ৬০ উদারতা ও দানশীলতা প্রসঙ্গ এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে কল্যাণকর খাতসমূহে অর্থব্যয় করার ফযীলত
দান-খয়রাত ও বিবিধ রকম সৎকর্ম
হাদীছ নং: ৫৫০
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, চল্লিশটি এমন কাজ আছে, যার সর্বোচ্চ হল দুধপানের জন্য বকরি দান। কোনও আমলকারী সেগুলোর যে-কোনও একটি যদি ছাওয়াবের আশায় করে এবং তাতে যে প্রতিদানের ওয়াদা আছে তাতে বিশ্বাস রাখে, তবে আল্লাহ তার বিনিময়ে তাকে অবশ্যই জান্নাতে দাখিল করবেন। -বুখারী
(সহীহ বুখারী: ২৬৩১; সুনানে আবূ দাউদ: ১৬৮৩; বায়হাকী : ৭৭৯৯)
হাদীছ নং: ৫৫০
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, চল্লিশটি এমন কাজ আছে, যার সর্বোচ্চ হল দুধপানের জন্য বকরি দান। কোনও আমলকারী সেগুলোর যে-কোনও একটি যদি ছাওয়াবের আশায় করে এবং তাতে যে প্রতিদানের ওয়াদা আছে তাতে বিশ্বাস রাখে, তবে আল্লাহ তার বিনিময়ে তাকে অবশ্যই জান্নাতে দাখিল করবেন। -বুখারী
(সহীহ বুখারী: ২৬৩১; সুনানে আবূ দাউদ: ১৬৮৩; বায়হাকী : ৭৭৯৯)
مقدمة الامام النووي
60 - باب الكرم والجود والإنفاق في وجوه الخير ثقةً بالله تعالى
550 - وعنه، قَالَ: قَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «أرْبَعُونَ خَصْلَةً: أعْلاهَا مَنِيحةُ العَنْزِ، مَا مِنْ عَامِلٍ يَعْمَلُ بخَصْلَةٍ مِنْهَا؛ رَجَاءَ ثَوَابهَا وَتَصْدِيقَ مَوْعُودِهَا، إِلاَّ أدْخَلَهُ الله تَعَالَى بِهَا الجَنَّةَ». رواه البخاري. (1) وقد سبق بيان هَذَا الحديث في باب بَيَانِ كَثْرَةِ طُرُقِ الخَيْرِ.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে চল্লিশটি আমল সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, ছাওয়াব ও প্রতিশ্রুত প্রতিদানের আশায় তা করলে আল্লাহ তা'আলা তার বিনিময়ে অবশ্যই জান্নাত দান করবেন। তার মধ্যে সর্বপ্রথম হচ্ছে বকরির ‘মানীহা’ (مَنِيحَةٌ)।
মানীহা বলা হয় কাউকে দুধপানের জন্য কোনও পশু সাময়িকভাবে দান করা। অর্থাৎ দুধপান শেষে সে পশুটি ফিরিয়ে দেবে। তা বকরি, গাভী, উটনী ইত্যাদি যে-কোনও পশুই হতে পারে। এ হাদীছে সর্বনিম্ন স্তর হিসেবে বকরির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর দ্বারা বোঝা যায় গাভী ও উটনী দেওয়ার ছাওয়াব আরও বেশি।
চল্লিশটি আমলের মধ্যে সর্বোচ্চ বলা হয়েছে বকরি দান করাকে। কেননা বকরির দুধ পান করার দ্বারা ক্ষুধা নিবারণ হয়। মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে খাদ্যের চাহিদাই সবচে' বড়। তাই মানুষের খাদ্যচাহিদা পূরণ করা সবচে' বড় উপকার। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা'আলা মানুষের প্রতি তাঁর নি'আমতসমূহের কথা স্মরণ করাতে গিয়ে খাদ্যের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন এবং অন্যকে খাওয়ানোর কাজকে একটি বড় সৎকর্মরূপে দেখিয়েছেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বহু হাদীছে খাদ্যদানে উৎসাহিত করেছেন। কোনও কোনও হাদীছে খানা খাওয়ানোকে একটি শ্রেষ্ঠতম আমলরূপে উল্লেখ করা হয়েছে। মানীহা দ্বারা যেহেতু মানুষের খাদ্যচাহিদা পূরণে সহযোগিতা করা হয়, তাই এ হাদীছে একেও চল্লিশটি নেক কাজের মধ্যে সর্বোচ্চ স্থান দেওয়া হয়েছে।
অবশিষ্ট কাজগুলো কী? এ হাদীছে তার উল্লেখ নেই। উল্লেখ সম্ভবত এ কারণে করা হয়নি যে, লোকে হয়তো মনে করে বসবে এ চল্লিশটি কাজ করাই যথেষ্ট। তখন তারা এর বাইরে আর কোনও নেক আমল করবে না। অথচ নেক আমল কেবল চল্লিশটিই নয়; তার বাইরে অনেক আছে। চল্লিশটির কথা জানিয়ে দেওয়া হলে অবশিষ্টগুলো হয়তো উপেক্ষিত হতো এবং তাতে আল্লাহ ও বান্দার কোনও কোনও হক অনাদায় থেকে যেত। আর তাতে করে সেসব কাজের ছাওয়াব থেকে তো বঞ্চিত থাকা হতোই, তার পাশাপাশি হক অনাদায়ের গুনাহও হয়ে যেত। কাজেই সবগুলোর ফিরিস্তি না দেওয়া আমাদের জন্য কল্যাণকরই হয়েছে।
এ হাদীছে অবশিষ্ট ঊনচল্লিশটির উল্লেখ না থাকার কারণে সেগুলো যে আমাদের সম্পূর্ণ অজ্ঞাত থেকে গেল এমনও নয়। কেননা বিভিন্ন হাদীছে বহু সৎকর্মের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, কোনও কারিগরকে তার কাজে সাহায্য করা, অদক্ষ লোকের কাজে সহযোগিতা করা, মুসলিম ব্যক্তির দোষ গোপন করা, শোকাগ্রস্ত লোককে সান্ত্বনা দেওয়া, পথ হারানো লোকের পথ দেখিয়ে দেওয়া, উত্তম কথা বলা, গাছ লাগানো, সুপারিশ করা, রোগীর খোঁজখবর নেওয়া, মুসাফাহা করা, আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসা, আল্লাহর জন্য কারও প্রতি ক্রুদ্ধ হওয়া, মুসলিম ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করা, অন্যের কল্যাণ কামনা করা, কাউকে সুপরামর্শ দেওয়া, অন্যকে নেক কাজের পথ দেখানো, পিপাসার্তকে পানি পান করানো, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়া ইত্যাদি। হিসাব করতে থাকলে সংখ্যা চল্লিশের অনেক বেশি হবে এবং সাধারণত আমরা সেগুলো জানিও। এ হাদীছে যে চল্লিশটির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে তাও সেগুলোর মধ্যেই থাকবে বৈ কি। কাজেই এ হাদীছে তার উল্লেখ না থাকলেও আমাদের কোনও ক্ষতি নেই। উদ্দেশ্য তো আমল করা। বিভিন্ন হাদীছে যেসব নেক কাজের কথা বলা হয়েছে তার উপর আমল করতে থাকলে এ চল্লিশটির উপর আমল হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে আমলের তাওফীক দিন।
যাহোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চল্লিশটি আমলের প্রত্যেকটি সম্পর্কে ইরশাদ করেন- مَا مِنْ عَامِلٍ يَعْمَلُ بِخَصْلَةٍ مِنْهَا رَجَاءَ ثَوَابِهَا (কোনও আমলকারী তার যে-কোনও একটি যদি ছাওয়াবের আশায় করে)। বোঝা গেল আমল করতে হবে ছাওয়াব পাওয়ার আশায়। ছাওয়াব পাওয়ার আশা না থাকলে কেবল আমল দ্বারা ছাওয়াব পাওয়া যাবে না। এর দ্বারা ইখলাস ও সহীহ নিয়তের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ যে-কোনও নেক আমল করতে হবে কেবলই আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টিলাভ ও তাঁর পক্ষ হতে পুরস্কার পাওয়ার আশায়, দুনিয়াবী কোনও মাকসাদে নয়।
এ বাক্যটি ইঙ্গিত করে, আমলের বিনিময়ে ছাওয়াব দেওয়াটা আল্লাহ তা'আলার দয়া ও অনুগ্রহ। এটা বান্দার প্রাপ্য নয় যে, দিতেই হবে। তিনি না দিলেও সে এখতিয়ার তাঁর আছে। কেন দিলেন না, সে প্রশ্ন করার অধিকার কারও নেই। মানুষ ও মানুষের আমল সবই আল্লাহর মালিকানাধীন। তিনি নিজ মালিকানায় যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। তাতে কারও প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই।
وَتَصْدِيقَ مَوْعُوْدِهَا (এবং তাতে যে প্রতিদানের ওয়াদা আছে তাতে বিশ্বাস রাখে)। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে যে আমলের জন্য যে প্রতিদানের ওয়াদা আছে, তাতে এ বিশ্বাস রাখা যে, তাঁর সে ওয়াদা সত্য এবং তিনি নিজ ওয়াদা অনুযায়ী আমলকারীকে নিজ অনুগ্রহে সে প্রতিদান অবশ্যই দেবেন। কেননা তিনি ওয়াদা ভঙ্গ করেন না।
إِلَّا أَدْخَلَهُ اللَّهُ بِهَا الْجَنَّةَ (তবে আল্লাহ তা'আলা তার বিনিময়ে তাকে অবশ্যই জান্নাতে দাখিল করবেন)। এটা আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে ওয়াদা যে, যে ব্যক্তি যথাযথ শর্ত পূরণ করে সে চল্লিশটি আমলের যে-কোনও একটি করবে, তিনি তাকে অবশ্যই জান্নাতবাসী করবেন।
প্রশ্ন হয়, তবে কি জান্নাত লাভের জন্য কেবল একটি আমলই যথেষ্ট, আর কিছুই করতে হবে না?
উত্তর হল, না, হাদীছে কেবল এতটুকু বলা হয়েছে যে, এর যে-কোনও একটি আমল করলে জান্নাত লাভ হবে। এ কথা বলা হয়নি যে, তা দ্বারা শুরুতেই জান্নাত পাওয়া যাবে। বস্তুত যে-কোনও আমল কবুল হওয়ার জন্য ঈমান শর্ত। কাজেই জান্নাত পেতে ঈমান লাগবেই। তারপর হাশরের ময়দানে বান্দার সৎকর্ম-পাপকর্মের ওজন করা হবে। তাতে সৎকর্ম বেশি ভারী হলে শুরুতেই জান্নাত লাভ হবে। কিন্তু ভারী যদি হয় অসৎকর্ম, তবে আল্লাহ তা'আলা ক্ষমা করলে ভিন্ন কথা, অন্যথায় প্রথমে পাপের জন্য শাস্তি ভোগ করতে হবে। শাস্তিভোগের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর জান্নাত লাভ হবে। তো আলোচ্য হাদীছে বর্ণিত আমলসমূহ যদি করা হয় আর ঈমানের বদৌলতে তা কবুলও হয়, তবে জান্নাতলাভে তো তার ভূমিকা অবশ্যই থাকবে। কেননা দাঁড়িপাল্লার নেকীর দিক ওজনদার হওয়ায় এ আমলেরও তো কিছু না কিছু ভূমিকা থাকবে। হয়তো এ আমল না হলে ওজন কিছুটা কম হতো, ফলে শাস্তির মেয়াদ কিছুটা বাড়ত। এ আমলের কারণে সে মেয়াদ বাড়তে পারেনি, ফলে তুলনামূলক কিছুটা আগে জান্নাত লাভ হয়েছে। তো সাব্যস্ত হল হাদীছে বর্ণিত আমলসমূহের প্রতিটি আমল দ্বারাই জান্নাত লাভ হয়। অর্থাৎ যে-কোনও সময় জান্নাতে প্রবেশে এর কিছু না কিছু ভূমিকা থাকেই।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা জানা গেল নেক আমল আছে নানারকম। সুতরাং বিশেষ কিছু আমল করে সন্তুষ্ট হয়ে যাওয়া ঠিক নয়।
খ. নেক আমল যেহেতু বহু রকম, তাই ছোট-বড় সব আমলেই যত্নবান থাকা উচিত। ছোট মনে করে কোনও আমলকে অবহেলা করতে নেই। কে জানে কোনটি আল্লাহর কাছে কবুল হয়ে যায়।
গ. কাউকে দুধপানের জন্য কোনও পশু সাময়িকভাবে দেওয়াও অনেক বড় নেক কাজ।
ঘ. সাময়িকভাবে পশু দান করাও যখন অনেক বড় নেক কাজ, তখন স্থায়ীভাবে দেওয়া যে আরও বড় নেক কাজ হবে তা বলাই বাহুল্য।
ঙ. যে-কোনও সৎকর্মের ছাওয়াব পাওয়া যায় কেবল তখনই, যখন উদ্দেশ্য থাকে পার্থিব কোনও স্বার্থ হাসিল নয়; বরং কেবলই আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি ও ছাওয়াব অর্জন করা।
চ. আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে যে ছাওয়াব ও প্রতিদানের ওয়াদা করা হয়েছে, তাতে বিশ্বাস রাখা জরুরি।
মানীহা বলা হয় কাউকে দুধপানের জন্য কোনও পশু সাময়িকভাবে দান করা। অর্থাৎ দুধপান শেষে সে পশুটি ফিরিয়ে দেবে। তা বকরি, গাভী, উটনী ইত্যাদি যে-কোনও পশুই হতে পারে। এ হাদীছে সর্বনিম্ন স্তর হিসেবে বকরির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর দ্বারা বোঝা যায় গাভী ও উটনী দেওয়ার ছাওয়াব আরও বেশি।
চল্লিশটি আমলের মধ্যে সর্বোচ্চ বলা হয়েছে বকরি দান করাকে। কেননা বকরির দুধ পান করার দ্বারা ক্ষুধা নিবারণ হয়। মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে খাদ্যের চাহিদাই সবচে' বড়। তাই মানুষের খাদ্যচাহিদা পূরণ করা সবচে' বড় উপকার। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা'আলা মানুষের প্রতি তাঁর নি'আমতসমূহের কথা স্মরণ করাতে গিয়ে খাদ্যের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন এবং অন্যকে খাওয়ানোর কাজকে একটি বড় সৎকর্মরূপে দেখিয়েছেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বহু হাদীছে খাদ্যদানে উৎসাহিত করেছেন। কোনও কোনও হাদীছে খানা খাওয়ানোকে একটি শ্রেষ্ঠতম আমলরূপে উল্লেখ করা হয়েছে। মানীহা দ্বারা যেহেতু মানুষের খাদ্যচাহিদা পূরণে সহযোগিতা করা হয়, তাই এ হাদীছে একেও চল্লিশটি নেক কাজের মধ্যে সর্বোচ্চ স্থান দেওয়া হয়েছে।
অবশিষ্ট কাজগুলো কী? এ হাদীছে তার উল্লেখ নেই। উল্লেখ সম্ভবত এ কারণে করা হয়নি যে, লোকে হয়তো মনে করে বসবে এ চল্লিশটি কাজ করাই যথেষ্ট। তখন তারা এর বাইরে আর কোনও নেক আমল করবে না। অথচ নেক আমল কেবল চল্লিশটিই নয়; তার বাইরে অনেক আছে। চল্লিশটির কথা জানিয়ে দেওয়া হলে অবশিষ্টগুলো হয়তো উপেক্ষিত হতো এবং তাতে আল্লাহ ও বান্দার কোনও কোনও হক অনাদায় থেকে যেত। আর তাতে করে সেসব কাজের ছাওয়াব থেকে তো বঞ্চিত থাকা হতোই, তার পাশাপাশি হক অনাদায়ের গুনাহও হয়ে যেত। কাজেই সবগুলোর ফিরিস্তি না দেওয়া আমাদের জন্য কল্যাণকরই হয়েছে।
এ হাদীছে অবশিষ্ট ঊনচল্লিশটির উল্লেখ না থাকার কারণে সেগুলো যে আমাদের সম্পূর্ণ অজ্ঞাত থেকে গেল এমনও নয়। কেননা বিভিন্ন হাদীছে বহু সৎকর্মের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, কোনও কারিগরকে তার কাজে সাহায্য করা, অদক্ষ লোকের কাজে সহযোগিতা করা, মুসলিম ব্যক্তির দোষ গোপন করা, শোকাগ্রস্ত লোককে সান্ত্বনা দেওয়া, পথ হারানো লোকের পথ দেখিয়ে দেওয়া, উত্তম কথা বলা, গাছ লাগানো, সুপারিশ করা, রোগীর খোঁজখবর নেওয়া, মুসাফাহা করা, আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসা, আল্লাহর জন্য কারও প্রতি ক্রুদ্ধ হওয়া, মুসলিম ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করা, অন্যের কল্যাণ কামনা করা, কাউকে সুপরামর্শ দেওয়া, অন্যকে নেক কাজের পথ দেখানো, পিপাসার্তকে পানি পান করানো, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়া ইত্যাদি। হিসাব করতে থাকলে সংখ্যা চল্লিশের অনেক বেশি হবে এবং সাধারণত আমরা সেগুলো জানিও। এ হাদীছে যে চল্লিশটির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে তাও সেগুলোর মধ্যেই থাকবে বৈ কি। কাজেই এ হাদীছে তার উল্লেখ না থাকলেও আমাদের কোনও ক্ষতি নেই। উদ্দেশ্য তো আমল করা। বিভিন্ন হাদীছে যেসব নেক কাজের কথা বলা হয়েছে তার উপর আমল করতে থাকলে এ চল্লিশটির উপর আমল হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে আমলের তাওফীক দিন।
যাহোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চল্লিশটি আমলের প্রত্যেকটি সম্পর্কে ইরশাদ করেন- مَا مِنْ عَامِلٍ يَعْمَلُ بِخَصْلَةٍ مِنْهَا رَجَاءَ ثَوَابِهَا (কোনও আমলকারী তার যে-কোনও একটি যদি ছাওয়াবের আশায় করে)। বোঝা গেল আমল করতে হবে ছাওয়াব পাওয়ার আশায়। ছাওয়াব পাওয়ার আশা না থাকলে কেবল আমল দ্বারা ছাওয়াব পাওয়া যাবে না। এর দ্বারা ইখলাস ও সহীহ নিয়তের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ যে-কোনও নেক আমল করতে হবে কেবলই আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টিলাভ ও তাঁর পক্ষ হতে পুরস্কার পাওয়ার আশায়, দুনিয়াবী কোনও মাকসাদে নয়।
এ বাক্যটি ইঙ্গিত করে, আমলের বিনিময়ে ছাওয়াব দেওয়াটা আল্লাহ তা'আলার দয়া ও অনুগ্রহ। এটা বান্দার প্রাপ্য নয় যে, দিতেই হবে। তিনি না দিলেও সে এখতিয়ার তাঁর আছে। কেন দিলেন না, সে প্রশ্ন করার অধিকার কারও নেই। মানুষ ও মানুষের আমল সবই আল্লাহর মালিকানাধীন। তিনি নিজ মালিকানায় যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। তাতে কারও প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই।
وَتَصْدِيقَ مَوْعُوْدِهَا (এবং তাতে যে প্রতিদানের ওয়াদা আছে তাতে বিশ্বাস রাখে)। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে যে আমলের জন্য যে প্রতিদানের ওয়াদা আছে, তাতে এ বিশ্বাস রাখা যে, তাঁর সে ওয়াদা সত্য এবং তিনি নিজ ওয়াদা অনুযায়ী আমলকারীকে নিজ অনুগ্রহে সে প্রতিদান অবশ্যই দেবেন। কেননা তিনি ওয়াদা ভঙ্গ করেন না।
إِلَّا أَدْخَلَهُ اللَّهُ بِهَا الْجَنَّةَ (তবে আল্লাহ তা'আলা তার বিনিময়ে তাকে অবশ্যই জান্নাতে দাখিল করবেন)। এটা আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে ওয়াদা যে, যে ব্যক্তি যথাযথ শর্ত পূরণ করে সে চল্লিশটি আমলের যে-কোনও একটি করবে, তিনি তাকে অবশ্যই জান্নাতবাসী করবেন।
প্রশ্ন হয়, তবে কি জান্নাত লাভের জন্য কেবল একটি আমলই যথেষ্ট, আর কিছুই করতে হবে না?
উত্তর হল, না, হাদীছে কেবল এতটুকু বলা হয়েছে যে, এর যে-কোনও একটি আমল করলে জান্নাত লাভ হবে। এ কথা বলা হয়নি যে, তা দ্বারা শুরুতেই জান্নাত পাওয়া যাবে। বস্তুত যে-কোনও আমল কবুল হওয়ার জন্য ঈমান শর্ত। কাজেই জান্নাত পেতে ঈমান লাগবেই। তারপর হাশরের ময়দানে বান্দার সৎকর্ম-পাপকর্মের ওজন করা হবে। তাতে সৎকর্ম বেশি ভারী হলে শুরুতেই জান্নাত লাভ হবে। কিন্তু ভারী যদি হয় অসৎকর্ম, তবে আল্লাহ তা'আলা ক্ষমা করলে ভিন্ন কথা, অন্যথায় প্রথমে পাপের জন্য শাস্তি ভোগ করতে হবে। শাস্তিভোগের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর জান্নাত লাভ হবে। তো আলোচ্য হাদীছে বর্ণিত আমলসমূহ যদি করা হয় আর ঈমানের বদৌলতে তা কবুলও হয়, তবে জান্নাতলাভে তো তার ভূমিকা অবশ্যই থাকবে। কেননা দাঁড়িপাল্লার নেকীর দিক ওজনদার হওয়ায় এ আমলেরও তো কিছু না কিছু ভূমিকা থাকবে। হয়তো এ আমল না হলে ওজন কিছুটা কম হতো, ফলে শাস্তির মেয়াদ কিছুটা বাড়ত। এ আমলের কারণে সে মেয়াদ বাড়তে পারেনি, ফলে তুলনামূলক কিছুটা আগে জান্নাত লাভ হয়েছে। তো সাব্যস্ত হল হাদীছে বর্ণিত আমলসমূহের প্রতিটি আমল দ্বারাই জান্নাত লাভ হয়। অর্থাৎ যে-কোনও সময় জান্নাতে প্রবেশে এর কিছু না কিছু ভূমিকা থাকেই।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা জানা গেল নেক আমল আছে নানারকম। সুতরাং বিশেষ কিছু আমল করে সন্তুষ্ট হয়ে যাওয়া ঠিক নয়।
খ. নেক আমল যেহেতু বহু রকম, তাই ছোট-বড় সব আমলেই যত্নবান থাকা উচিত। ছোট মনে করে কোনও আমলকে অবহেলা করতে নেই। কে জানে কোনটি আল্লাহর কাছে কবুল হয়ে যায়।
গ. কাউকে দুধপানের জন্য কোনও পশু সাময়িকভাবে দেওয়াও অনেক বড় নেক কাজ।
ঘ. সাময়িকভাবে পশু দান করাও যখন অনেক বড় নেক কাজ, তখন স্থায়ীভাবে দেওয়া যে আরও বড় নেক কাজ হবে তা বলাই বাহুল্য।
ঙ. যে-কোনও সৎকর্মের ছাওয়াব পাওয়া যায় কেবল তখনই, যখন উদ্দেশ্য থাকে পার্থিব কোনও স্বার্থ হাসিল নয়; বরং কেবলই আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি ও ছাওয়াব অর্জন করা।
চ. আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে যে ছাওয়াব ও প্রতিদানের ওয়াদা করা হয়েছে, তাতে বিশ্বাস রাখা জরুরি।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)