রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
رياض الصالحين من كلام سيد المرسلين
ভূমিকা অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ৬৭৯ টি
হাদীস নং: ৫২১
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অল্পেতুষ্টি, অন্যের কাছে চাওয়া বা আশা করা হতে নিজেকে রক্ষা করা, জীবনযাত্রায় মধ্যপন্থা ও মিতব্যয়ের প্রতি উৎসাহদান এবং অপ্রয়োজনে মানুষের কাছে চাওয়ার নিন্দা
এ অধ্যায়ে ইমাম নাওয়াবী রহ. কয়েকটি বিষয়ের হাদীছ উদ্ধৃত করেছেন। বিষয়গুলো হচ্ছে- القناعة (পরিতুষ্টি); العفاف (হারামে লিপ্ত হওয়া ও অন্যের কাছে চাওয়ার লাঞ্ছনা হতে আপন মর্যাদা রক্ষা করা); الاقتصاد (আয়-ব্যয়ে মধ্যমপন্থা অবলম্বন) এবং বিনা জরুরতে অর্থসাহায্য চাওয়ার নিন্দা।
আল্লাহ তা'আলা সারা জাহানের সমস্ত মাখলুকের রিযিকদাতা। অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে জীবিকা দান করেন তিনিই। তবে তিনি ইহজগৎকে আসবাব-উপকরণের সঙ্গে যুক্ত করে দিয়েছেন। এখানে যে-কোনও প্রয়োজন পূরণের জন্য উপায় অবলম্বন করতে হয়। উপায় অবলম্বন ও চেষ্টা করা তাঁরই হুকুম। তবে উপায় অবলম্বন ও চেষ্টার ফলাফল তিনি নিজ হাতেই রেখেছেন। তিনি নিজ হিকমত অনুযায়ী সে ফলাফল দিয়ে থাকেন। কাউকে বেশি দেন, কাউকে কম। যেহেতু প্রকৃত দাতা আল্লাহ তা'আলাই, তাই তিনি যাকে যা দেন তাতে তার সন্তুষ্ট থাকা কর্তব্য। একে কানা‘আত বলে।
আল্লাহ তা'আলাই যেহেতু প্রকৃত জীবিকাদাতা, তাই আয় ও ব্যয় উভয় ক্ষেত্রেই বান্দার কর্তব্য মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা। অর্থাৎ আয়ের ক্ষেত্রে সে হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না, হারাম ও অবৈধ উপার্জনে লিপ্ত হবে না, বৈধ পন্থায় চেষ্টা-পরিশ্রম করবে এবং তাতে মাত্রাও ছাড়াবে না। এমনিভাবে ব্যয়ের ক্ষেত্রেও মধ্যমপন্থা অবলম্বন করবে ও মিতব্যয়ী হবে। কৃপণতাও করবে না এবং অপব্যয়-অপচয়ও করবে না। একে ইকতিসাদ বলে।
অর্থ-সম্পদ কম থাকুক বা বেশি, সর্বাবস্থায় মিতব্যয় কাম্য। অপচয় করা কঠিন গুনাহ। অপচয়ের দ্বারা সম্পদের বরকত নষ্ট হয়। যে ব্যক্তি মিতব্যয়ী, তার অল্প সম্পদেই প্রয়োজন মিটে যায়। কেননা তার উপার্জনে আল্লাহ তা'আলা বরকত দান করেন। অপচয়কারী ব্যক্তি ধনী হলেও তার ধন বিশেষ কাজে আসে না। সে অন্যের উপকার করবে কি, নিজ প্রয়োজন মেটানোর বেলায়ও টানাটানিতে পড়ে যায়।
অপচয় ও অপব্যয় বরকতহীনতার একটি বড় কারণ। এতে কেবল বরকতই নষ্ট হয় না; দারিদ্র্যও ধেয়ে আসে। অনেক বড় ধনী ব্যক্তিও অপচয়ের কারণে নিঃস্ব-ফকীর হয়ে যায়। এমনকি অভাব-অনটনের কষাঘাতে মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করেও বেড়াতে হয়। মানুষের কাছে হাত পাতা নিতান্তই লজ্জার বিষয়। মুসলিম ব্যক্তির পক্ষে এটা চরম অমর্যাদাকর। এ পর্যায়ে যাতে পৌঁছতে না হয়, সেই লক্ষ্যে মিতব্যয়কে আঁকড়ে ধরা একান্ত জরুরি।
কানা‘আত ও মানসিক পরিতুষ্টির অভাব থাকলেও মানুষ অন্যের দ্বারস্থ হয়। মনে সন্তুষ্টি থাকলে পেটের ক্ষুধা সহ্য করা সহজ হয়ে যায়। পক্ষান্তরে পেটের ক্ষুধার সঙ্গে মনের ক্ষুধা যোগ হলে লজ্জা-শরম ঘুচে যায়। তখন মানুষ অন্যের কাছে হাত পাততে এমনকি হারাম পন্থায় উপার্জন করতেও দ্বিধাবোধ করে না।
ইকতিসাদ ও কানা‘আতের গুণ থাকলে ব্যক্তির পক্ষে হারাম থেকে বাঁচা ও অন্যের দ্বারস্থ হওয়া থেকে আত্মরক্ষা সহজ হয়, পরিভাষায় যাকে ‘আফাফ (العفاف) বলে। আমাদের দীনে ‘আফাফ অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কেউ যাতে কোনও অবস্থাতেই হারামে লিপ্ত না হয় এবং কিছুতেই যেন অন্যের কাছে হাত না পাতে, কুরআন ও হাদীছে এর প্রতি বিশেষভাবে তাকিদ করা হয়েছে।
যাহোক ইমাম নাওয়াবী রহ. এ অধ্যায়ে কান‘'আত, ‘আফাফ ও ইকতিসাদের গুরুত্ব এবং অন্যের কাছে অর্থসাহায্য চাওয়ার নিন্দা সম্পর্কে কুরআন মাজীদের কয়েকটি আয়াত এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কয়েকটি হাদীছ উদ্ধৃত করেছেন। আমরা নিচে সেগুলোর বঙ্গানুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করছি। আল্লাহ তা'আলাই তাওফীকদাতা।
‘অল্পেতুষ্টি...এর প্রতি উৎসাহদান এবং অপ্রয়োজনে মানুষের কাছে চাওয়ার নিন্দা’ সম্পর্কিত কিছু আয়াত
এক নং আয়াত
وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا
অর্থ: পৃথিবীতে বিচরণকারী এমন কোনও প্রাণী নেই, যার রিযিক আল্লাহ নিজ দায়িত্বে রাখেননি।(সূরা হূদ (১১), আয়াত ৬
ব্যাখ্যা
دَابَّةٍ এর অর্থ বিচরণকারী। এর দ্বারা সাধারণভাবে সর্বপ্রকার প্রাণী বোঝানো হয়ে থাকে। ক্ষুদ্র পিঁপড়ে থেকে শুরু করে হাতি-তিমির মতো অতিকায় প্রাণী পর্যন্ত প্রতিটি জীবই এর অন্তর্ভুক্ত। আকাশের পাখি, পানির মাছ ও ভূপৃষ্ঠের জীবজন্তু সবকিছুর জন্যই এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। আয়াতটিতে জানানো হয়েছে, জগতে এমন কোনও প্রাণী নেই, যার রিযিক আল্লাহর দায়িত্বে নয়। অর্থাৎ তিনি প্রতিটি জীবের জীবিকা সরবরাহ করে থাকেন।
عَلَى اللهِ -এর দ্বারা ইশারা করা হয়েছে যে, আল্লাহ তা'আলা নিশ্চিতভাবেই প্রতিটি প্রাণীর জীবিকার ব্যবস্থা করে থাকেন। যে প্রাণীর যতদিন আয়ু আছে, ততোদিন তার জীবিকার ব্যবস্থা অবশ্যই করা হয়ে থাকে। কোনও প্রাণী বেঁচে থাকবে অথচ সে জীবিকা পাবে না, এর কোনও সম্ভাবনা নেই। কেউ অনাহারে মারা গেলে তার অর্থ এ নয় যে, আয়ু থাকা সত্ত্বেও সে জীবিকার অভাবে মারা গেছে। বরং এর অর্থ হল, তার আয়ুই ফুরিয়ে গেছে। আর আয়ু ফুরিয়ে গেলে রোগ-ব্যাধি, দুর্ঘটনা ইত্যাদি দ্বারা যেমন মৃত্যু ঘটানো হয়, তেমনি জীবিকা সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার দ্বারাও মৃত্যু ঘটানো হয়ে থাকে। ওই ব্যক্তির ক্ষেত্রে এ পদ্ধতিই গৃহীত হয়েছে।
জীবিকার দায়িত্ব যদিও আল্লাহ তা'আলার উপর, তবুও বান্দার কর্তব্য জীবিকার জন্য কোনও না কোনও উপায় অবলম্বন করা। বান্দা উপায় অবলম্বন না করলেও আল্লাহ তা'আলা তাকে জীবিকা দিতে পারেন। জীবিকা পৌছানোর জন্য তিনি আসবাব- উপকরণের মুখাপেক্ষী নন। কখনও কখনও তিনি আসবাব-উপকরণ ছাড়া জীবিকা দিয়ে তা দেখিয়েও দেন। তবে দুনিয়ায় তাঁর সাধারণ রীতি হল আসবাব-উপকরণের প্রক্রিয়ায় জীবিকা সরবরাহ করা। এর মাধ্যমে তিনি বান্দাকে পরীক্ষা করেন সে জীবিকার জন্য বৈধ উপায় অবলম্বন করে, না অবৈধ উপায়।
জীবিকার বিষয়টি যেহেতু আল্লাহ তা'আলা নিজ দায়িত্বে রেখেছেন, তাই চেষ্টা, মেহনত ও উপায় অবলম্বনের ক্ষেত্রে বান্দার কর্তব্য আল্লাহ তা'আলার উপরই ভরসা রাখা। অর্থাৎ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আল্লাহ তা'আলা চাইলে তার চেষ্টাকে ফলপ্রসূও করতে পারেন, আবার চাইলে নিষ্ফলও করে দিতে পারেন। কীভাবে কোন উপায়ে জীবিকা দেবেন, এটা একান্ত তাঁরই বিষয়। আমার কর্তব্য কেবল তাঁর হুকুম অনুযায়ী চেষ্টা করা, তাই চেষ্টা করছি; ফলাফল আল্লাহর হাতে। সারকথা, মনের সংযোগ আসবাব-উপকরণের সঙ্গে নয়; বরং এসবের স্রষ্টা আল্লাহ তা'আলার সঙ্গেই থাকবে।
এ বিশাল পৃথিবীতে মাখলুক অগণিত। ভূপৃষ্ঠে, ভূগর্ভে, পাহাড়-পর্বতে, গাছ- গাছালিতে, সাগর-নদীতে ছোট-বড় অগণ্য জীব ছড়িয়ে রয়েছে। আল্লাহ তা'আলাই যখন এদের সকলের জীবিকাদাতা, তখন এতেও কোনও সন্দেহ নেই যে, কোনটি কোথায় অবস্থান করছে তাও নিশ্চিতভাবে তিনি জানেন। এর দ্বারা আল্লাহ তা'আলার সর্বব্যাপী জ্ঞান সম্পর্কেও ধারণা লাভ হয়।
এর দ্বারা আরও ধারণা লাভ হয় আল্লাহ তা'আলার রুবুবিয়্যাত ও প্রতিপালকত্বের মহিমা সম্পর্কে। তিনি কোনও মাখলুককে সৃষ্টি করেই ছেড়ে দেননি। যতদিন আয়ু দিয়েছেন ততোদিন যাতে খেয়ে-পরে বাঁচতে পারে, তার ব্যবস্থাও করেছেন। কতইনা মহান ও মহানুভব আমাদের সৃষ্টিকর্তা! তাঁরই সমস্ত প্রশংসা।
আয়াতটির শিক্ষা
ক. আল্লাহ তা'আলাই প্রকৃত রিযিকদাতা- এ বিশ্বাস রাখা অবশ্যকর্তব্য।
খ. আল্লাহ তা'আলাই যখন রিযিকদাতা, তখন রিযিকের ব্যাপারে কেবল তাঁরই উপর ভরসা রাখতে হবে।
গ. আল্লাহ তা'আলাই যখন রিযিকদাতা, তখন রিযিকের সন্ধান করতে হবে তাঁর বিধান অনুসারে।
ঘ. রিযিক যেহেতু আল্লাহ তা'আলাই দেন, সেহেতু তিনি যাকে যা দেন তাতে সন্তুষ্ট থাকা একান্ত কর্তব্য।
ঙ. অভাব-অনটন দেখা দিলে মানুষের কাছে হাত না পেতে কেবল আল্লাহ তা'আলার দিকেই রুজু' করা উচিত।
দুই নং আয়াত
لِلْفُقَرَاءِ الَّذِينَ أُحْصِرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ لَا يَسْتَطِيعُونَ ضَرْبًا فِي الْأَرْضِ يَحْسَبُهُمُ الْجَاهِلُ أَغْنِيَاءَ مِنَ التَّعَفُّفِ تَعْرِفُهُمْ بِسِيمَاهُمْ لَا يَسْأَلُونَ النَّاسَ إِلْحَافًا
অর্থ: (আর্থিক সহযোগিতার জন্য বিশেষভাবে) উপযুক্ত সেই সকল গরীব, যারা নিজেদেরকে আল্লাহর পথে এভাবে আবদ্ধ করে রেখেছে যে, (অর্থের সন্ধানে) তারা ভূমিতে চলাফেরা করতে পারে না। তারা যেহেতু (অতি সংযমী হওয়ার কারণে কারও কাছে) সওয়াল করে না, তাই অনবগত লোকে তাদেরকে বিত্তবান মনে করে। তুমি তাদের চেহারার আলামত দ্বারা তাদেরকে (অর্থাৎ তাদের অভ্যন্তরীণ অবস্থা) চিনতে পারবে। (কিন্তু) তারা মানুষের কাছে না-ছোড় হয়ে সওয়াল করে না।(সূরা বাকারা (২), আয়াত ২৭৩)
ব্যাখ্যা
এটি সূরা বাকারার ২৭৩ নং আয়াত। দান-সদাকা পাওয়ার কারা বেশি হকদার, এ আয়াতে তা বর্ণিত হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, এ আয়াতটি 'আসহাবে সুফফা' সম্পর্কে অবতীর্ণ। আসহাবে সুফফা বলা হয় সেই সকল সাহাবীকে, যারা সর্বদা মসজিদে নববীর চত্বরে পড়ে থাকতেন। তারা দীনী ইলম শেখার জন্য নিজেদের জীবন ওয়াকফ করে দিয়েছিলেন। সর্বদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচর্যে থাকতেন এবং তাঁর নিকট থেকে দীনী ইলম শিখতেন। তাছাড়া কখনও জিহাদের অবকাশ আসলে তাতে অংশগ্রহণ করতেন। জিহাদে অংশগ্রহণ ও দীনী ইলম শেখায় নিয়োজিত থাকার কারণে তারা জীবিকা সংগ্রহের সুযোগ পেতেন না। আল্লাহর পক্ষ থেকে যখন যে জীবিকার ব্যবস্থা হতো, তাতেই সন্তুষ্ট থাকতেন। তারা মানুষের কাছে হাত পাততেন না। দারিদ্র্যের সকল কষ্ট হাসিমুখে বরণ করে নিতেন।
এ আয়াত জানাচ্ছে, অর্থসাহায্য লাভের বেশি উপযুক্ত তারাই, যারা সমগ্র উম্মতের কল্যাণ সাধনের মহতি উদ্দেশ্যে কোথাও আবদ্ধ হয়ে থাকে, বিশেষত যারা ইলমে দীনের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, যারা ইলমের চর্চায় মশগুল থাকার কারণে অর্থ উপার্জনে সময় দেওয়ার সুযোগ পায় না। তাদের ব্যস্ততা গোটা উম্মতের কল্যাণে নিবেদিত। উপার্জনে ব্যস্ত হয়ে পড়লে তাদের পক্ষে যথাযথভাবে ইলমের চর্চা সম্ভব হবে না। ইলমে দীনের যথাযথ চর্চা না হওয়াটা সমগ্র উম্মতের পক্ষেই ক্ষতিকর। সে ক্ষতি থেকে বাঁচার লক্ষ্যে সকলের কর্তব্য ইলমে দীনের চর্চাকারীদের সেবা করাকে নিজেদের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব মনে করা।
আয়াত জানাচ্ছে, নিদারুণ কষ্ট-ক্লেশ সত্ত্বেও যারা কারও সামনে নিজেদে প্রয়োজনের কথা প্রকাশ করে না, তারাই অর্থসাহায্য লাভের বেশি হকদার। প্রশ্ন হচ্ছে যারা অন্যের সামনে নিজেদের অভাব-অনটনের কথা প্রকাশ করে না, তাদেরকে কীভাবে চেনা যাবে? কীভাবে বোঝা যাবে যে, তারা সাহায্য লাভের বেশি উপযুক্ত? আয়াতে বলা হয়েছে, এটা বোঝা যাবে তাদের চেহারা দেখে। অনাহার-অভুক্ত থাকার কারণে তাদের চেহারায় কষ্ট-ক্লেশের ছাপ লক্ষ করা যায়। সচ্ছল ব্যক্তির কর্তব্য চেহারার সেই ছাপ দেখে তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া।
নাছোড় হয়ে যাচনা করার অর্থ অনবরত চাইতে থাকা। বোঝা গেল, কারও কাছে এভাবে সাহায্য চাওয়া পসন্দনীয় নয়। অন্যের কাছে সাহায্য চাওয়া এমনিই ভালো নয়; নাছোড় হয়ে চাওয়াটা অধিকতর মন্দ। এরূপ ব্যক্তিকে সাহায্য করা জায়েয হলেও যারা নাছোড় হয়ে সাহায্য চাওয়া থেকে বিরত থাকে, খুঁজে খুঁজে তাদেরকে দান-খয়রাত করাই উত্তম। আয়াতটি এর প্রতিই উৎসাহ যোগাচ্ছে।
আয়াতটির শিক্ষা
ক. অভাব-অনটনে অন্যের কাছে হাত পাতা পসন্দনীয় নয়।
খ. নিজ অভাবের কথা অন্যের কাছে প্রকাশ করতে নেই।
গ. দীনের কাজে আবদ্ধ থাকার কারণে যদি অর্থকষ্ট দেখা দেয়, তবে খুশিমনে তা মেনে নেওয়া চাই।
ঘ. সচ্ছল ব্যক্তিদের কর্তব্য যারা নিজ অভাব-অনটনের কথা লুকিয়ে রাখে, তাদেরকে খুঁজে খুঁজে অর্থসাহায্য করা।
তিন নং আয়াত
وَالَّذِينَ إِذَا أَنْفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَلِكَ قَوَامًا (67)
অর্থ: এবং যারা ব্যয় করার সময় না করে অপব্যয় এবং না করে কার্পণ্য; বরং তা হয় উভয়ের মাঝখানে ভারসাম্যমান।( সূরা ফুরকান (২৫), আয়াত ৬৭)
ব্যাখ্যা
يُسْرِفُوْا ক্রিয়াপদটির উৎপত্তি إِسْرَاف থেকে। এর অর্থ আল্লাহ তা'আলার অবাধ্যতামূলক ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় করা, তা বেশি হোক বা কম। এর আরেক অর্থ সীমালঙ্ঘন করা, অপব্যয় করা।
يَقْتُرُوا ক্রিয়াপদটির উৎপত্তি قتر থেকে। এর অর্থ কার্পণ্য করা, যে ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় করা জরুরি, সে ক্ষেত্রেও ব্যয় করা হতে বিরত থাকা। আয়াতে বলা হয়েছে, দয়াময় আল্লাহর প্রকৃত বান্দাগণ এমন কোনও ক্ষেত্রে টাকা-পয়সা খরচ করে না, যা দ্বারা আল্লাহ তা'আলার অবাধ্যতা হয় এবং যে সকল ক্ষেত্রে ব্যয় করা জায়েয, তাতেও প্রয়োজনের বেশি ব্যয় করে না বা অপব্যয় করে না। অপব্যয় করা হারাম ও কঠিন গুনাহ। এক আয়াতে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا (26) إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ
‘আর নিজেদের অর্থ-সম্পদ অপ্রয়োজনীয় কাজে উড়াবে না। জেনে রেখো, যারা অপ্রয়োজনীয় কাজে অর্থ উড়ায়, তারা শয়তানের ভাই।’(সূরা বনী ইসরাঈল (১৭), আয়াত ২৬-২৭)
এমনিভাবে দয়াময় আল্লাহ তা'আলার প্রকৃত বান্দাগণ জরুরি ক্ষেত্রে ব্যয় করতে কার্পণ্য করে না। তারা পরিবারবর্গকে অনাহারে রাখে না। তাদের পোশাক-আশাক দেয় এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়ও পূরণ করে। তাছাড়া দীনের দাবি অনুযায়ী যেসব কাজে টাকা-পয়সা খরচ করা কাম্য, তাতে অকুষ্ঠভাবে খরচ করে। মোটকথা তারা অর্থ- সম্পদের অপব্যয় ও অপচয়ও করে না এবং শরী'আতের নির্দেশনা মোতাবেক খরচ করতে কার্পণ্যও করে না। তাদের অবস্থান এর মাঝখানে।
قَوَام অর্থ মাঝখান, ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান। শরী'আত সকল ক্ষেত্রে ভারসাম্য ও মধ্যপন্থা শিক্ষা দেয়। এটা ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। অর্থব্যয়ের ক্ষেত্রেও আমাদেরকে এ শিক্ষাই দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকের কর্তব্য অর্থব্যয়ের সকল ক্ষেত্রে আপন অবস্থা অনুযায়ী মধ্যপন্থা অবলম্বন করা। উপার্জন ও সামর্থ্য অনুযায়ী যে পরিমাণ খরচ দ্বারা নিজের উপর চাপও পড়ে না আবার সামর্থ্য ও প্রয়োজন অনুপাতে তা কমও হয় না, এ নীতিতে খরচ করাই কাম্য।
আয়াতটির শিক্ষা
ক. আল্লাহপ্রদত্ত কোনও নি'আমত অপব্যয় ও অপচয় করা উচিত নয়।
খ. কৃপণতা নিন্দনীয় চরিত্র। এটা বর্জনীয়।
গ. ব্যয়ে মধ্যমপন্থা অবলম্বন দয়াময় আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের বৈশিষ্ট্য।
চার নং আয়াত
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ (56) مَا أُرِيدُ مِنْهُمْ مِنْ رِزْقٍ وَمَا أُرِيدُ أَنْ يُطْعِمُونِ (57)
অর্থ: আমি জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার ইবাদত করবে। আমি তাদের কাছে কোনওরকম রিযিক চাই না এবং এটাও চাই না যে, তারা আমাকে খাবার দিক।( সূরা যারিয়াত (৫১), আয়াত ৫৬-৫৭)
ব্যাখ্যা
ইবাদত (العبادة) অর্থ আনুগত্য করা, চরম বিনয় প্রকাশ করা। এ অর্থে 'উবূদিয়াত (العبودية) বান্দার পক্ষ থেকে চরম আনুগত্য ও বিনয় প্রকাশ কেবল আল্লাহ তা'আলার জন্যই হতে পারে। কেননা তিনিই তার সৃষ্টিকর্তা ও মালিক এবং তিনিই তার প্রতিপালক ও রক্ষাকর্তা। পরিভাষায় ইবাদত বলা হয় আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে শেখানো সুনির্দিষ্ট পন্থায় স্বেচ্ছায় তাঁর প্রতি চরম বিনয় ও আনুগত্য প্রকাশ করাকে।
আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ তা'আলা মানুষ ও জিন জাতিকে তাঁর ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। নিজ ইচ্ছায় কাজ করার ক্ষমতা কেবল এ দুই জাতিকেই দেওয়া হয়েছে। অন্যসব মাখলুক স্বাধীন ইচ্ছায় কাজ করার ক্ষমতা রাখে না। তারা আল্লাহ তা'আলার প্রাকৃতিক বিধানের অধীন। সে বিধান অনুযায়ী চলতে তারা বাধ্য। তারা তার বাইরে যাওয়ার ক্ষমতাই রাখে না। কিন্তু মানুষ ও জিন জাতিকে আল্লাহ তা'আলা স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন। তারা যেন সেই ইচ্ছাশক্তি খাটিয়ে আল্লাহ তা'আলার আনুগত্য করে, সে লক্ষ্যে তিনি তাদেরকে শরী'আতের বিধান দিয়েছেন। সে বিধান অনুসরণ করারই অপর নাম ইবাদত করা। এটা তাদের জন্য পরীক্ষা। যারা এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে অর্থাৎ শরী'আতের বিধান মেনে চলবে, তাদের জন্য আখিরাতে পুরস্কারের ব্যবস্থা আছে। সে পুরস্কারস্বরূপ তারা জান্নাত ও জান্নাতের অফুরন্ত নি'আমত লাভ করবে। আর যারা সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে না অর্থাৎ শরী'আতের বিধান না মেনে নিজেদের মনমতো চলবে বা মানবরচিত বিধানের অনুসরণ করবে, আখিরাতে তাদের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাদেরকে জাহান্নামের ভয়ংকর শাস্তি ভোগ করতে হবে।
আয়াত জানাচ্ছে, আল্লাহ তা'আলা যে ইবাদতের হুকুম করেছেন, তাতে আল্লাহ তা'আলার নিজের কোনও স্বার্থ নেই। আল্লাহ তা'আলা সর্বশক্তিমান। তাঁর কোনওকিছুর অভাব নেই। তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন। তাঁর কোনও জীবিকার দরকার পড়ে না।
জীবিকার দরকার পড়ে বান্দার। আল্লাহ তা'আলাই বান্দার জীবিকা সরবরাহ করে থাকেন। পরের আয়াতেই আল্লাহ তা'আলা বলছেন-
إِنَّ اللَّهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِينُ (58)
‘আল্লাহ নিজেই তো রিযিকদাতা এবং তিনি প্রবল পরাক্রমশালী।'
সুতরাং বান্দাকে যে ইবাদত-বন্দেগীর হুকুম দেওয়া হয়েছে, তা আল্লাহ তা'আলার নিজের কোনও প্রয়োজনে নয়; বরং বান্দারই প্রয়োজনে। অর্থাৎ আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক মনিবের সঙ্গে তার দাসের সম্পর্কের মতো নয়। দাস মনিবের যে হুকুম মানে, তাতে মনিবের উপকার হয়। কিন্তু বান্দা যদি আল্লাহর হুকুম মানে, তাতে আল্লাহর নয়; বরং বান্দার নিজেরই উপকার হয়। তা বান্দার দুনিয়ার জীবনেও কাজে আসে এবং আখিরাতেও তা দ্বারা মুক্তির ব্যবস্থা হয়। সুতরাং প্রত্যেক বান্দার কর্তব্য উভয় জীবনকে সাফল্যমণ্ডিত করে তোলার লক্ষ্যে আল্লাহ তা'আলার ইবাদতে লিপ্ত থাকা ও তাঁর হুকুম অনুযায়ী জীবনযাপন করা। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন।
আয়াতটির শিক্ষা
ক. আল্লাহ তা'আলার ইবাদত-বন্দেগী করাই আমাদের জীবনের আসল কাজ।
খ. পার্থিব প্রয়োজন পূরণের জন্য চেষ্টা-মেহনত করা জরুরি। তবে তাতে অতিরিক্ত ব্যস্ত হয়ে জীবনের আসল কাজে ব্যাঘাত ঘটানো উচিত নয়।
গ. আল্লাহ তা'আলা রিযিকদাতা। তাঁর নিজের কোনও জীবিকার প্রয়োজন হয় না।
এ অধ্যায়ে ইমাম নাওয়াবী রহ. কয়েকটি বিষয়ের হাদীছ উদ্ধৃত করেছেন। বিষয়গুলো হচ্ছে- القناعة (পরিতুষ্টি); العفاف (হারামে লিপ্ত হওয়া ও অন্যের কাছে চাওয়ার লাঞ্ছনা হতে আপন মর্যাদা রক্ষা করা); الاقتصاد (আয়-ব্যয়ে মধ্যমপন্থা অবলম্বন) এবং বিনা জরুরতে অর্থসাহায্য চাওয়ার নিন্দা।
আল্লাহ তা'আলা সারা জাহানের সমস্ত মাখলুকের রিযিকদাতা। অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে জীবিকা দান করেন তিনিই। তবে তিনি ইহজগৎকে আসবাব-উপকরণের সঙ্গে যুক্ত করে দিয়েছেন। এখানে যে-কোনও প্রয়োজন পূরণের জন্য উপায় অবলম্বন করতে হয়। উপায় অবলম্বন ও চেষ্টা করা তাঁরই হুকুম। তবে উপায় অবলম্বন ও চেষ্টার ফলাফল তিনি নিজ হাতেই রেখেছেন। তিনি নিজ হিকমত অনুযায়ী সে ফলাফল দিয়ে থাকেন। কাউকে বেশি দেন, কাউকে কম। যেহেতু প্রকৃত দাতা আল্লাহ তা'আলাই, তাই তিনি যাকে যা দেন তাতে তার সন্তুষ্ট থাকা কর্তব্য। একে কানা‘আত বলে।
আল্লাহ তা'আলাই যেহেতু প্রকৃত জীবিকাদাতা, তাই আয় ও ব্যয় উভয় ক্ষেত্রেই বান্দার কর্তব্য মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা। অর্থাৎ আয়ের ক্ষেত্রে সে হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না, হারাম ও অবৈধ উপার্জনে লিপ্ত হবে না, বৈধ পন্থায় চেষ্টা-পরিশ্রম করবে এবং তাতে মাত্রাও ছাড়াবে না। এমনিভাবে ব্যয়ের ক্ষেত্রেও মধ্যমপন্থা অবলম্বন করবে ও মিতব্যয়ী হবে। কৃপণতাও করবে না এবং অপব্যয়-অপচয়ও করবে না। একে ইকতিসাদ বলে।
অর্থ-সম্পদ কম থাকুক বা বেশি, সর্বাবস্থায় মিতব্যয় কাম্য। অপচয় করা কঠিন গুনাহ। অপচয়ের দ্বারা সম্পদের বরকত নষ্ট হয়। যে ব্যক্তি মিতব্যয়ী, তার অল্প সম্পদেই প্রয়োজন মিটে যায়। কেননা তার উপার্জনে আল্লাহ তা'আলা বরকত দান করেন। অপচয়কারী ব্যক্তি ধনী হলেও তার ধন বিশেষ কাজে আসে না। সে অন্যের উপকার করবে কি, নিজ প্রয়োজন মেটানোর বেলায়ও টানাটানিতে পড়ে যায়।
অপচয় ও অপব্যয় বরকতহীনতার একটি বড় কারণ। এতে কেবল বরকতই নষ্ট হয় না; দারিদ্র্যও ধেয়ে আসে। অনেক বড় ধনী ব্যক্তিও অপচয়ের কারণে নিঃস্ব-ফকীর হয়ে যায়। এমনকি অভাব-অনটনের কষাঘাতে মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করেও বেড়াতে হয়। মানুষের কাছে হাত পাতা নিতান্তই লজ্জার বিষয়। মুসলিম ব্যক্তির পক্ষে এটা চরম অমর্যাদাকর। এ পর্যায়ে যাতে পৌঁছতে না হয়, সেই লক্ষ্যে মিতব্যয়কে আঁকড়ে ধরা একান্ত জরুরি।
কানা‘আত ও মানসিক পরিতুষ্টির অভাব থাকলেও মানুষ অন্যের দ্বারস্থ হয়। মনে সন্তুষ্টি থাকলে পেটের ক্ষুধা সহ্য করা সহজ হয়ে যায়। পক্ষান্তরে পেটের ক্ষুধার সঙ্গে মনের ক্ষুধা যোগ হলে লজ্জা-শরম ঘুচে যায়। তখন মানুষ অন্যের কাছে হাত পাততে এমনকি হারাম পন্থায় উপার্জন করতেও দ্বিধাবোধ করে না।
ইকতিসাদ ও কানা‘আতের গুণ থাকলে ব্যক্তির পক্ষে হারাম থেকে বাঁচা ও অন্যের দ্বারস্থ হওয়া থেকে আত্মরক্ষা সহজ হয়, পরিভাষায় যাকে ‘আফাফ (العفاف) বলে। আমাদের দীনে ‘আফাফ অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কেউ যাতে কোনও অবস্থাতেই হারামে লিপ্ত না হয় এবং কিছুতেই যেন অন্যের কাছে হাত না পাতে, কুরআন ও হাদীছে এর প্রতি বিশেষভাবে তাকিদ করা হয়েছে।
যাহোক ইমাম নাওয়াবী রহ. এ অধ্যায়ে কান‘'আত, ‘আফাফ ও ইকতিসাদের গুরুত্ব এবং অন্যের কাছে অর্থসাহায্য চাওয়ার নিন্দা সম্পর্কে কুরআন মাজীদের কয়েকটি আয়াত এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কয়েকটি হাদীছ উদ্ধৃত করেছেন। আমরা নিচে সেগুলোর বঙ্গানুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করছি। আল্লাহ তা'আলাই তাওফীকদাতা।
‘অল্পেতুষ্টি...এর প্রতি উৎসাহদান এবং অপ্রয়োজনে মানুষের কাছে চাওয়ার নিন্দা’ সম্পর্কিত কিছু আয়াত
এক নং আয়াত
وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا
অর্থ: পৃথিবীতে বিচরণকারী এমন কোনও প্রাণী নেই, যার রিযিক আল্লাহ নিজ দায়িত্বে রাখেননি।(সূরা হূদ (১১), আয়াত ৬
ব্যাখ্যা
دَابَّةٍ এর অর্থ বিচরণকারী। এর দ্বারা সাধারণভাবে সর্বপ্রকার প্রাণী বোঝানো হয়ে থাকে। ক্ষুদ্র পিঁপড়ে থেকে শুরু করে হাতি-তিমির মতো অতিকায় প্রাণী পর্যন্ত প্রতিটি জীবই এর অন্তর্ভুক্ত। আকাশের পাখি, পানির মাছ ও ভূপৃষ্ঠের জীবজন্তু সবকিছুর জন্যই এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। আয়াতটিতে জানানো হয়েছে, জগতে এমন কোনও প্রাণী নেই, যার রিযিক আল্লাহর দায়িত্বে নয়। অর্থাৎ তিনি প্রতিটি জীবের জীবিকা সরবরাহ করে থাকেন।
عَلَى اللهِ -এর দ্বারা ইশারা করা হয়েছে যে, আল্লাহ তা'আলা নিশ্চিতভাবেই প্রতিটি প্রাণীর জীবিকার ব্যবস্থা করে থাকেন। যে প্রাণীর যতদিন আয়ু আছে, ততোদিন তার জীবিকার ব্যবস্থা অবশ্যই করা হয়ে থাকে। কোনও প্রাণী বেঁচে থাকবে অথচ সে জীবিকা পাবে না, এর কোনও সম্ভাবনা নেই। কেউ অনাহারে মারা গেলে তার অর্থ এ নয় যে, আয়ু থাকা সত্ত্বেও সে জীবিকার অভাবে মারা গেছে। বরং এর অর্থ হল, তার আয়ুই ফুরিয়ে গেছে। আর আয়ু ফুরিয়ে গেলে রোগ-ব্যাধি, দুর্ঘটনা ইত্যাদি দ্বারা যেমন মৃত্যু ঘটানো হয়, তেমনি জীবিকা সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার দ্বারাও মৃত্যু ঘটানো হয়ে থাকে। ওই ব্যক্তির ক্ষেত্রে এ পদ্ধতিই গৃহীত হয়েছে।
জীবিকার দায়িত্ব যদিও আল্লাহ তা'আলার উপর, তবুও বান্দার কর্তব্য জীবিকার জন্য কোনও না কোনও উপায় অবলম্বন করা। বান্দা উপায় অবলম্বন না করলেও আল্লাহ তা'আলা তাকে জীবিকা দিতে পারেন। জীবিকা পৌছানোর জন্য তিনি আসবাব- উপকরণের মুখাপেক্ষী নন। কখনও কখনও তিনি আসবাব-উপকরণ ছাড়া জীবিকা দিয়ে তা দেখিয়েও দেন। তবে দুনিয়ায় তাঁর সাধারণ রীতি হল আসবাব-উপকরণের প্রক্রিয়ায় জীবিকা সরবরাহ করা। এর মাধ্যমে তিনি বান্দাকে পরীক্ষা করেন সে জীবিকার জন্য বৈধ উপায় অবলম্বন করে, না অবৈধ উপায়।
জীবিকার বিষয়টি যেহেতু আল্লাহ তা'আলা নিজ দায়িত্বে রেখেছেন, তাই চেষ্টা, মেহনত ও উপায় অবলম্বনের ক্ষেত্রে বান্দার কর্তব্য আল্লাহ তা'আলার উপরই ভরসা রাখা। অর্থাৎ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আল্লাহ তা'আলা চাইলে তার চেষ্টাকে ফলপ্রসূও করতে পারেন, আবার চাইলে নিষ্ফলও করে দিতে পারেন। কীভাবে কোন উপায়ে জীবিকা দেবেন, এটা একান্ত তাঁরই বিষয়। আমার কর্তব্য কেবল তাঁর হুকুম অনুযায়ী চেষ্টা করা, তাই চেষ্টা করছি; ফলাফল আল্লাহর হাতে। সারকথা, মনের সংযোগ আসবাব-উপকরণের সঙ্গে নয়; বরং এসবের স্রষ্টা আল্লাহ তা'আলার সঙ্গেই থাকবে।
এ বিশাল পৃথিবীতে মাখলুক অগণিত। ভূপৃষ্ঠে, ভূগর্ভে, পাহাড়-পর্বতে, গাছ- গাছালিতে, সাগর-নদীতে ছোট-বড় অগণ্য জীব ছড়িয়ে রয়েছে। আল্লাহ তা'আলাই যখন এদের সকলের জীবিকাদাতা, তখন এতেও কোনও সন্দেহ নেই যে, কোনটি কোথায় অবস্থান করছে তাও নিশ্চিতভাবে তিনি জানেন। এর দ্বারা আল্লাহ তা'আলার সর্বব্যাপী জ্ঞান সম্পর্কেও ধারণা লাভ হয়।
এর দ্বারা আরও ধারণা লাভ হয় আল্লাহ তা'আলার রুবুবিয়্যাত ও প্রতিপালকত্বের মহিমা সম্পর্কে। তিনি কোনও মাখলুককে সৃষ্টি করেই ছেড়ে দেননি। যতদিন আয়ু দিয়েছেন ততোদিন যাতে খেয়ে-পরে বাঁচতে পারে, তার ব্যবস্থাও করেছেন। কতইনা মহান ও মহানুভব আমাদের সৃষ্টিকর্তা! তাঁরই সমস্ত প্রশংসা।
আয়াতটির শিক্ষা
ক. আল্লাহ তা'আলাই প্রকৃত রিযিকদাতা- এ বিশ্বাস রাখা অবশ্যকর্তব্য।
খ. আল্লাহ তা'আলাই যখন রিযিকদাতা, তখন রিযিকের ব্যাপারে কেবল তাঁরই উপর ভরসা রাখতে হবে।
গ. আল্লাহ তা'আলাই যখন রিযিকদাতা, তখন রিযিকের সন্ধান করতে হবে তাঁর বিধান অনুসারে।
ঘ. রিযিক যেহেতু আল্লাহ তা'আলাই দেন, সেহেতু তিনি যাকে যা দেন তাতে সন্তুষ্ট থাকা একান্ত কর্তব্য।
ঙ. অভাব-অনটন দেখা দিলে মানুষের কাছে হাত না পেতে কেবল আল্লাহ তা'আলার দিকেই রুজু' করা উচিত।
দুই নং আয়াত
لِلْفُقَرَاءِ الَّذِينَ أُحْصِرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ لَا يَسْتَطِيعُونَ ضَرْبًا فِي الْأَرْضِ يَحْسَبُهُمُ الْجَاهِلُ أَغْنِيَاءَ مِنَ التَّعَفُّفِ تَعْرِفُهُمْ بِسِيمَاهُمْ لَا يَسْأَلُونَ النَّاسَ إِلْحَافًا
অর্থ: (আর্থিক সহযোগিতার জন্য বিশেষভাবে) উপযুক্ত সেই সকল গরীব, যারা নিজেদেরকে আল্লাহর পথে এভাবে আবদ্ধ করে রেখেছে যে, (অর্থের সন্ধানে) তারা ভূমিতে চলাফেরা করতে পারে না। তারা যেহেতু (অতি সংযমী হওয়ার কারণে কারও কাছে) সওয়াল করে না, তাই অনবগত লোকে তাদেরকে বিত্তবান মনে করে। তুমি তাদের চেহারার আলামত দ্বারা তাদেরকে (অর্থাৎ তাদের অভ্যন্তরীণ অবস্থা) চিনতে পারবে। (কিন্তু) তারা মানুষের কাছে না-ছোড় হয়ে সওয়াল করে না।(সূরা বাকারা (২), আয়াত ২৭৩)
ব্যাখ্যা
এটি সূরা বাকারার ২৭৩ নং আয়াত। দান-সদাকা পাওয়ার কারা বেশি হকদার, এ আয়াতে তা বর্ণিত হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, এ আয়াতটি 'আসহাবে সুফফা' সম্পর্কে অবতীর্ণ। আসহাবে সুফফা বলা হয় সেই সকল সাহাবীকে, যারা সর্বদা মসজিদে নববীর চত্বরে পড়ে থাকতেন। তারা দীনী ইলম শেখার জন্য নিজেদের জীবন ওয়াকফ করে দিয়েছিলেন। সর্বদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচর্যে থাকতেন এবং তাঁর নিকট থেকে দীনী ইলম শিখতেন। তাছাড়া কখনও জিহাদের অবকাশ আসলে তাতে অংশগ্রহণ করতেন। জিহাদে অংশগ্রহণ ও দীনী ইলম শেখায় নিয়োজিত থাকার কারণে তারা জীবিকা সংগ্রহের সুযোগ পেতেন না। আল্লাহর পক্ষ থেকে যখন যে জীবিকার ব্যবস্থা হতো, তাতেই সন্তুষ্ট থাকতেন। তারা মানুষের কাছে হাত পাততেন না। দারিদ্র্যের সকল কষ্ট হাসিমুখে বরণ করে নিতেন।
এ আয়াত জানাচ্ছে, অর্থসাহায্য লাভের বেশি উপযুক্ত তারাই, যারা সমগ্র উম্মতের কল্যাণ সাধনের মহতি উদ্দেশ্যে কোথাও আবদ্ধ হয়ে থাকে, বিশেষত যারা ইলমে দীনের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, যারা ইলমের চর্চায় মশগুল থাকার কারণে অর্থ উপার্জনে সময় দেওয়ার সুযোগ পায় না। তাদের ব্যস্ততা গোটা উম্মতের কল্যাণে নিবেদিত। উপার্জনে ব্যস্ত হয়ে পড়লে তাদের পক্ষে যথাযথভাবে ইলমের চর্চা সম্ভব হবে না। ইলমে দীনের যথাযথ চর্চা না হওয়াটা সমগ্র উম্মতের পক্ষেই ক্ষতিকর। সে ক্ষতি থেকে বাঁচার লক্ষ্যে সকলের কর্তব্য ইলমে দীনের চর্চাকারীদের সেবা করাকে নিজেদের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব মনে করা।
আয়াত জানাচ্ছে, নিদারুণ কষ্ট-ক্লেশ সত্ত্বেও যারা কারও সামনে নিজেদে প্রয়োজনের কথা প্রকাশ করে না, তারাই অর্থসাহায্য লাভের বেশি হকদার। প্রশ্ন হচ্ছে যারা অন্যের সামনে নিজেদের অভাব-অনটনের কথা প্রকাশ করে না, তাদেরকে কীভাবে চেনা যাবে? কীভাবে বোঝা যাবে যে, তারা সাহায্য লাভের বেশি উপযুক্ত? আয়াতে বলা হয়েছে, এটা বোঝা যাবে তাদের চেহারা দেখে। অনাহার-অভুক্ত থাকার কারণে তাদের চেহারায় কষ্ট-ক্লেশের ছাপ লক্ষ করা যায়। সচ্ছল ব্যক্তির কর্তব্য চেহারার সেই ছাপ দেখে তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া।
নাছোড় হয়ে যাচনা করার অর্থ অনবরত চাইতে থাকা। বোঝা গেল, কারও কাছে এভাবে সাহায্য চাওয়া পসন্দনীয় নয়। অন্যের কাছে সাহায্য চাওয়া এমনিই ভালো নয়; নাছোড় হয়ে চাওয়াটা অধিকতর মন্দ। এরূপ ব্যক্তিকে সাহায্য করা জায়েয হলেও যারা নাছোড় হয়ে সাহায্য চাওয়া থেকে বিরত থাকে, খুঁজে খুঁজে তাদেরকে দান-খয়রাত করাই উত্তম। আয়াতটি এর প্রতিই উৎসাহ যোগাচ্ছে।
আয়াতটির শিক্ষা
ক. অভাব-অনটনে অন্যের কাছে হাত পাতা পসন্দনীয় নয়।
খ. নিজ অভাবের কথা অন্যের কাছে প্রকাশ করতে নেই।
গ. দীনের কাজে আবদ্ধ থাকার কারণে যদি অর্থকষ্ট দেখা দেয়, তবে খুশিমনে তা মেনে নেওয়া চাই।
ঘ. সচ্ছল ব্যক্তিদের কর্তব্য যারা নিজ অভাব-অনটনের কথা লুকিয়ে রাখে, তাদেরকে খুঁজে খুঁজে অর্থসাহায্য করা।
তিন নং আয়াত
وَالَّذِينَ إِذَا أَنْفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَلِكَ قَوَامًا (67)
অর্থ: এবং যারা ব্যয় করার সময় না করে অপব্যয় এবং না করে কার্পণ্য; বরং তা হয় উভয়ের মাঝখানে ভারসাম্যমান।( সূরা ফুরকান (২৫), আয়াত ৬৭)
ব্যাখ্যা
يُسْرِفُوْا ক্রিয়াপদটির উৎপত্তি إِسْرَاف থেকে। এর অর্থ আল্লাহ তা'আলার অবাধ্যতামূলক ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় করা, তা বেশি হোক বা কম। এর আরেক অর্থ সীমালঙ্ঘন করা, অপব্যয় করা।
يَقْتُرُوا ক্রিয়াপদটির উৎপত্তি قتر থেকে। এর অর্থ কার্পণ্য করা, যে ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় করা জরুরি, সে ক্ষেত্রেও ব্যয় করা হতে বিরত থাকা। আয়াতে বলা হয়েছে, দয়াময় আল্লাহর প্রকৃত বান্দাগণ এমন কোনও ক্ষেত্রে টাকা-পয়সা খরচ করে না, যা দ্বারা আল্লাহ তা'আলার অবাধ্যতা হয় এবং যে সকল ক্ষেত্রে ব্যয় করা জায়েয, তাতেও প্রয়োজনের বেশি ব্যয় করে না বা অপব্যয় করে না। অপব্যয় করা হারাম ও কঠিন গুনাহ। এক আয়াতে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا (26) إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ
‘আর নিজেদের অর্থ-সম্পদ অপ্রয়োজনীয় কাজে উড়াবে না। জেনে রেখো, যারা অপ্রয়োজনীয় কাজে অর্থ উড়ায়, তারা শয়তানের ভাই।’(সূরা বনী ইসরাঈল (১৭), আয়াত ২৬-২৭)
এমনিভাবে দয়াময় আল্লাহ তা'আলার প্রকৃত বান্দাগণ জরুরি ক্ষেত্রে ব্যয় করতে কার্পণ্য করে না। তারা পরিবারবর্গকে অনাহারে রাখে না। তাদের পোশাক-আশাক দেয় এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়ও পূরণ করে। তাছাড়া দীনের দাবি অনুযায়ী যেসব কাজে টাকা-পয়সা খরচ করা কাম্য, তাতে অকুষ্ঠভাবে খরচ করে। মোটকথা তারা অর্থ- সম্পদের অপব্যয় ও অপচয়ও করে না এবং শরী'আতের নির্দেশনা মোতাবেক খরচ করতে কার্পণ্যও করে না। তাদের অবস্থান এর মাঝখানে।
قَوَام অর্থ মাঝখান, ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান। শরী'আত সকল ক্ষেত্রে ভারসাম্য ও মধ্যপন্থা শিক্ষা দেয়। এটা ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। অর্থব্যয়ের ক্ষেত্রেও আমাদেরকে এ শিক্ষাই দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকের কর্তব্য অর্থব্যয়ের সকল ক্ষেত্রে আপন অবস্থা অনুযায়ী মধ্যপন্থা অবলম্বন করা। উপার্জন ও সামর্থ্য অনুযায়ী যে পরিমাণ খরচ দ্বারা নিজের উপর চাপও পড়ে না আবার সামর্থ্য ও প্রয়োজন অনুপাতে তা কমও হয় না, এ নীতিতে খরচ করাই কাম্য।
আয়াতটির শিক্ষা
ক. আল্লাহপ্রদত্ত কোনও নি'আমত অপব্যয় ও অপচয় করা উচিত নয়।
খ. কৃপণতা নিন্দনীয় চরিত্র। এটা বর্জনীয়।
গ. ব্যয়ে মধ্যমপন্থা অবলম্বন দয়াময় আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের বৈশিষ্ট্য।
চার নং আয়াত
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ (56) مَا أُرِيدُ مِنْهُمْ مِنْ رِزْقٍ وَمَا أُرِيدُ أَنْ يُطْعِمُونِ (57)
অর্থ: আমি জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার ইবাদত করবে। আমি তাদের কাছে কোনওরকম রিযিক চাই না এবং এটাও চাই না যে, তারা আমাকে খাবার দিক।( সূরা যারিয়াত (৫১), আয়াত ৫৬-৫৭)
ব্যাখ্যা
ইবাদত (العبادة) অর্থ আনুগত্য করা, চরম বিনয় প্রকাশ করা। এ অর্থে 'উবূদিয়াত (العبودية) বান্দার পক্ষ থেকে চরম আনুগত্য ও বিনয় প্রকাশ কেবল আল্লাহ তা'আলার জন্যই হতে পারে। কেননা তিনিই তার সৃষ্টিকর্তা ও মালিক এবং তিনিই তার প্রতিপালক ও রক্ষাকর্তা। পরিভাষায় ইবাদত বলা হয় আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে শেখানো সুনির্দিষ্ট পন্থায় স্বেচ্ছায় তাঁর প্রতি চরম বিনয় ও আনুগত্য প্রকাশ করাকে।
আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ তা'আলা মানুষ ও জিন জাতিকে তাঁর ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। নিজ ইচ্ছায় কাজ করার ক্ষমতা কেবল এ দুই জাতিকেই দেওয়া হয়েছে। অন্যসব মাখলুক স্বাধীন ইচ্ছায় কাজ করার ক্ষমতা রাখে না। তারা আল্লাহ তা'আলার প্রাকৃতিক বিধানের অধীন। সে বিধান অনুযায়ী চলতে তারা বাধ্য। তারা তার বাইরে যাওয়ার ক্ষমতাই রাখে না। কিন্তু মানুষ ও জিন জাতিকে আল্লাহ তা'আলা স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন। তারা যেন সেই ইচ্ছাশক্তি খাটিয়ে আল্লাহ তা'আলার আনুগত্য করে, সে লক্ষ্যে তিনি তাদেরকে শরী'আতের বিধান দিয়েছেন। সে বিধান অনুসরণ করারই অপর নাম ইবাদত করা। এটা তাদের জন্য পরীক্ষা। যারা এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে অর্থাৎ শরী'আতের বিধান মেনে চলবে, তাদের জন্য আখিরাতে পুরস্কারের ব্যবস্থা আছে। সে পুরস্কারস্বরূপ তারা জান্নাত ও জান্নাতের অফুরন্ত নি'আমত লাভ করবে। আর যারা সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে না অর্থাৎ শরী'আতের বিধান না মেনে নিজেদের মনমতো চলবে বা মানবরচিত বিধানের অনুসরণ করবে, আখিরাতে তাদের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাদেরকে জাহান্নামের ভয়ংকর শাস্তি ভোগ করতে হবে।
আয়াত জানাচ্ছে, আল্লাহ তা'আলা যে ইবাদতের হুকুম করেছেন, তাতে আল্লাহ তা'আলার নিজের কোনও স্বার্থ নেই। আল্লাহ তা'আলা সর্বশক্তিমান। তাঁর কোনওকিছুর অভাব নেই। তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন। তাঁর কোনও জীবিকার দরকার পড়ে না।
জীবিকার দরকার পড়ে বান্দার। আল্লাহ তা'আলাই বান্দার জীবিকা সরবরাহ করে থাকেন। পরের আয়াতেই আল্লাহ তা'আলা বলছেন-
إِنَّ اللَّهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِينُ (58)
‘আল্লাহ নিজেই তো রিযিকদাতা এবং তিনি প্রবল পরাক্রমশালী।'
সুতরাং বান্দাকে যে ইবাদত-বন্দেগীর হুকুম দেওয়া হয়েছে, তা আল্লাহ তা'আলার নিজের কোনও প্রয়োজনে নয়; বরং বান্দারই প্রয়োজনে। অর্থাৎ আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক মনিবের সঙ্গে তার দাসের সম্পর্কের মতো নয়। দাস মনিবের যে হুকুম মানে, তাতে মনিবের উপকার হয়। কিন্তু বান্দা যদি আল্লাহর হুকুম মানে, তাতে আল্লাহর নয়; বরং বান্দার নিজেরই উপকার হয়। তা বান্দার দুনিয়ার জীবনেও কাজে আসে এবং আখিরাতেও তা দ্বারা মুক্তির ব্যবস্থা হয়। সুতরাং প্রত্যেক বান্দার কর্তব্য উভয় জীবনকে সাফল্যমণ্ডিত করে তোলার লক্ষ্যে আল্লাহ তা'আলার ইবাদতে লিপ্ত থাকা ও তাঁর হুকুম অনুযায়ী জীবনযাপন করা। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন।
আয়াতটির শিক্ষা
ক. আল্লাহ তা'আলার ইবাদত-বন্দেগী করাই আমাদের জীবনের আসল কাজ।
খ. পার্থিব প্রয়োজন পূরণের জন্য চেষ্টা-মেহনত করা জরুরি। তবে তাতে অতিরিক্ত ব্যস্ত হয়ে জীবনের আসল কাজে ব্যাঘাত ঘটানো উচিত নয়।
গ. আল্লাহ তা'আলা রিযিকদাতা। তাঁর নিজের কোনও জীবিকার প্রয়োজন হয় না।
প্রকৃত ঐশ্বর্য কাকে বলে
হাদীছ নং: ৫২১
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সম্পদের প্রাচুর্য দ্বারা ঐশ্বর্য হয় না; মনের ঐশ্বর্যই প্রকৃত ঐশ্বর্য। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৬৪৪৬; সহীহ মুসলিম: ১০৫১; জামে' তিরমিযী: ২৩৭৩; মুসনাদে আহমাদ: ৭৩১৬; সুনানে ইবন মাজাহ: ৪১৩৭; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ৪০৪০)
হাদীছ নং: ৫২১
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সম্পদের প্রাচুর্য দ্বারা ঐশ্বর্য হয় না; মনের ঐশ্বর্যই প্রকৃত ঐশ্বর্য। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৬৪৪৬; সহীহ মুসলিম: ১০৫১; জামে' তিরমিযী: ২৩৭৩; মুসনাদে আহমাদ: ৭৩১৬; সুনানে ইবন মাজাহ: ৪১৩৭; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ৪০৪০)
مقدمة الامام النووي
57 - باب القناعة والعَفاف والاقتصاد في المعيشة والإنفاق وذم السؤال من غير ضرورة
قَالَ الله تَعَالَى: {وَمَا مِنْ دَابَّةٍ في الأرْضِ إِلاَّ عَلَى اللهِ رِزْقُهَا} [هود: 6]، وقال تَعَالَى: {لِلْفُقَرَاءِ الَّذِينَ أُحْصِرُوا في سَبِيلِ اللهِ لاَ يَسْتَطِيعُونَ ضَرْبًا فِي الأَرْضِ يَحْسَبُهُمُ الْجَاهِلُ أَغْنِيَاءَ مِنَ التَّعَفُّفِ تَعْرِفُهُمْ بِسِيمَاهُمْ لاَ يَسْأَلُونَ النَّاسَ إلْحَافًا} [البقرة: 273]، وقال تَعَالَى: {وَالَّذِينَ إِذَا أَنْفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَلِكَ قَوَامًا} [الفرقان: 67]، وقال تَعَالَى: {وَمَا خَلَقْتُ الجِنَّ وَالإِنْسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُونِ مَا أُرِيدُ مِنْهُمْ [ص:181] مِنْ رِزْقٍ وَمَا أُرِيدُ أَنْ يُطْعِمُونِ} [الذاريات: 56 - 57].
وَأَمَّا الأحاديث، فتقدم معظمها في البابينِ السابقينِ، ومما لَمْ يتقدم:
قَالَ الله تَعَالَى: {وَمَا مِنْ دَابَّةٍ في الأرْضِ إِلاَّ عَلَى اللهِ رِزْقُهَا} [هود: 6]، وقال تَعَالَى: {لِلْفُقَرَاءِ الَّذِينَ أُحْصِرُوا في سَبِيلِ اللهِ لاَ يَسْتَطِيعُونَ ضَرْبًا فِي الأَرْضِ يَحْسَبُهُمُ الْجَاهِلُ أَغْنِيَاءَ مِنَ التَّعَفُّفِ تَعْرِفُهُمْ بِسِيمَاهُمْ لاَ يَسْأَلُونَ النَّاسَ إلْحَافًا} [البقرة: 273]، وقال تَعَالَى: {وَالَّذِينَ إِذَا أَنْفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَلِكَ قَوَامًا} [الفرقان: 67]، وقال تَعَالَى: {وَمَا خَلَقْتُ الجِنَّ وَالإِنْسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُونِ مَا أُرِيدُ مِنْهُمْ [ص:181] مِنْ رِزْقٍ وَمَا أُرِيدُ أَنْ يُطْعِمُونِ} [الذاريات: 56 - 57].
وَأَمَّا الأحاديث، فتقدم معظمها في البابينِ السابقينِ، ومما لَمْ يتقدم:
521 - عن أَبي هريرة - رضي الله عنه - عن النبي - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «لَيْسَ الغِنَى عَن كَثرَةِ العَرَض، وَلكِنَّ الغِنَى غِنَى النَّفْسِ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
«العَرَضُ» بفتح العين والراءِ: هُوَ المَالُ.
«العَرَضُ» بفتح العين والراءِ: هُوَ المَالُ.
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫২২
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৫৭ অল্পেতুষ্টি, অন্যের কাছে চাওয়া বা আশা করা হতে নিজেকে রক্ষা করা, জীবনযাত্রায় মধ্যপন্থা ও মিতব্যয়ের প্রতি উৎসাহদান এবং অপ্রয়োজনে মানুষের কাছে চাওয়ার নিন্দা
দোজাহানে সফলতা লাভের উপায়
হাদীছ নং: ৫২২
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর্ ইবনুল আস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ওই ব্যক্তি সফল হয়েছে, যে ইসলাম গ্রহণ করেছে, তার কাছে প্রয়োজন পরিমাণ জীবিকা আছে এবং আল্লাহ তা'আলা তাকে যা দিয়েছেন তাতে তাকে সন্তুষ্ট রেখেছেন। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম : ১০৫৪; মুসনাদে আহমাদ: ৬৫৭২; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর : ৪৪; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা: ৭৮৬৮; শু'আবুল ঈমান: ৯৮৬২; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ৪০৪৩)
হাদীছ নং: ৫২২
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর্ ইবনুল আস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ওই ব্যক্তি সফল হয়েছে, যে ইসলাম গ্রহণ করেছে, তার কাছে প্রয়োজন পরিমাণ জীবিকা আছে এবং আল্লাহ তা'আলা তাকে যা দিয়েছেন তাতে তাকে সন্তুষ্ট রেখেছেন। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম : ১০৫৪; মুসনাদে আহমাদ: ৬৫৭২; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর : ৪৪; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা: ৭৮৬৮; শু'আবুল ঈমান: ৯৮৬২; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ৪০৪৩)
مقدمة الامام النووي
57 - باب القناعة والعَفاف والاقتصاد في المعيشة والإنفاق وذم السؤال من غير ضرورة
522 - وعن عبد الله بن عمرو رضي الله عنهما: أنَّ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «قَدْ أفْلَحَ مَنْ أَسْلَمَ، وَرُزِقَ كَفَافًا، وقَنَّعَهُ اللهُ بِمَا آتَاهُ». رواه مسلم. (1)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫২৩
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৫৭ অল্পেতুষ্টি, অন্যের কাছে চাওয়া বা আশা করা হতে নিজেকে রক্ষা করা, জীবনযাত্রায় মধ্যপন্থা ও মিতব্যয়ের প্রতি উৎসাহদান এবং অপ্রয়োজনে মানুষের কাছে চাওয়ার নিন্দা
মানুষের কাছ থেকে অর্থসাহায্য গ্রহণ করা-না করা সম্পর্কে বিশেষ নসীহত
হাদীছ নং: ৫২৩
হযরত হাকীম ইবন হিযাম রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে চাইলাম। তিনি আমাকে দিলেন। তারপর আবার তাঁর কাছে চাইলাম। তিনি আবারও আমাকে দিলেন। তারপর আবার তাঁর কাছে চাইলাম। তিনি আবারও আমাকে দিলেন। তারপর বললেন, হে হাকীম! এ সম্পদ চাকচিক্যময় ও সুমিষ্ট। যে ব্যক্তি এটা গ্রহণ করে মনের ঐশ্বর্যের সঙ্গে, তাকে এতে বরকত দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি এটা গ্রহণ করে মনের আসক্তির সঙ্গে, তাকে এতে বরকত দেওয়া হয় না। সে ওই ব্যক্তির মতো হয়, যে খায় অথচ পরিতৃপ্ত হয় না। উপরের হাত নিচের হাতের চেয়ে উত্তম। হাকীম রাযি. বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন তাঁর কসম, আপনার পর আমি অন্য কারও থেকে কিছু গ্রহণ করব না, যাবৎ না আমি দুনিয়া ত্যাগ করি। পরবর্তীকালে আবূ বকর রাযি. হাকীম রাযি.-কে কিছু দেওয়ার জন্য ডাকতেন, কিন্তু তিনি কোনওকিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করতেন। তারপর উমর রাযি. তাকে কিছু দেওয়ার জন্য ডেকেছেন, কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছেন। শেষে উমর রাযি. বললেন, হে মুসলিম সম্প্রদায়! আমি তোমাদেরকে হাকীম সম্পর্কে সাক্ষী রাখছি যে, ফায় (সরকারি সম্পদ)-এর মধ্যে আল্লাহ তা'আলা তার বণ্টনে যা রেখেছেন, আমি তার সামনে তা পেশ করেছি, কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করছেন। মোটকথা হাকীম রাযি, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর নিজ মৃত্যু পর্যন্ত কারও কাছে কিছু চাননি। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ১৪৭২; সহীহ মুসলিম: ১০৩৫; জামে' তিরমিযী: ২৪৬২; সুনানে নাসাঈ : ২৪০২; সহীহ ইবন হিব্বান: ৩২২০; মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক: ১৬৪০৭; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৩০৭৮; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা: ৭৮৭৩; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ১৬১৯)
হাদীছ নং: ৫২৩
হযরত হাকীম ইবন হিযাম রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে চাইলাম। তিনি আমাকে দিলেন। তারপর আবার তাঁর কাছে চাইলাম। তিনি আবারও আমাকে দিলেন। তারপর আবার তাঁর কাছে চাইলাম। তিনি আবারও আমাকে দিলেন। তারপর বললেন, হে হাকীম! এ সম্পদ চাকচিক্যময় ও সুমিষ্ট। যে ব্যক্তি এটা গ্রহণ করে মনের ঐশ্বর্যের সঙ্গে, তাকে এতে বরকত দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি এটা গ্রহণ করে মনের আসক্তির সঙ্গে, তাকে এতে বরকত দেওয়া হয় না। সে ওই ব্যক্তির মতো হয়, যে খায় অথচ পরিতৃপ্ত হয় না। উপরের হাত নিচের হাতের চেয়ে উত্তম। হাকীম রাযি. বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন তাঁর কসম, আপনার পর আমি অন্য কারও থেকে কিছু গ্রহণ করব না, যাবৎ না আমি দুনিয়া ত্যাগ করি। পরবর্তীকালে আবূ বকর রাযি. হাকীম রাযি.-কে কিছু দেওয়ার জন্য ডাকতেন, কিন্তু তিনি কোনওকিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করতেন। তারপর উমর রাযি. তাকে কিছু দেওয়ার জন্য ডেকেছেন, কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছেন। শেষে উমর রাযি. বললেন, হে মুসলিম সম্প্রদায়! আমি তোমাদেরকে হাকীম সম্পর্কে সাক্ষী রাখছি যে, ফায় (সরকারি সম্পদ)-এর মধ্যে আল্লাহ তা'আলা তার বণ্টনে যা রেখেছেন, আমি তার সামনে তা পেশ করেছি, কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করছেন। মোটকথা হাকীম রাযি, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর নিজ মৃত্যু পর্যন্ত কারও কাছে কিছু চাননি। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ১৪৭২; সহীহ মুসলিম: ১০৩৫; জামে' তিরমিযী: ২৪৬২; সুনানে নাসাঈ : ২৪০২; সহীহ ইবন হিব্বান: ৩২২০; মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক: ১৬৪০৭; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৩০৭৮; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা: ৭৮৭৩; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ১৬১৯)
مقدمة الامام النووي
57 - باب القناعة والعَفاف والاقتصاد في المعيشة والإنفاق وذم السؤال من غير ضرورة
523 - وعن حكيم بن حزام - رضي الله عنه - قَالَ: سألتُ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - فَأعْطَانِي، ثُمَّ سَألْتُهُ فَأَعْطَانِي، ثُمَّ سَألْتُهُ فَأعْطَانِي، ثُمَّ قَالَ: «يَا حَكِيم، إنَّ هَذَا المَالَ خَضِرٌ حُلْوٌ، فَمَنْ أخَذَهُ بِسَخَاوَةِ نَفسٍ بُورِكَ لَهُ فِيهِ، وَمَنْ أخَذَهُ بإشرافِ نَفسٍ لَمْ يُبَارَكْ لَهُ فِيهِ، وَكَانَ كَالَّذِي يَأكُلُ وَلاَ يَشْبَعُ، وَاليَدُ الْعُلْيَا خَيْرٌ مِنَ اليَدِ السُّفْلَى» قَالَ حكيم: فقلتُ: يَا رسول الله، وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالحَقِّ لاَ أرْزَأُ أحَدًا بَعْدَكَ شَيْئًا حَتَّى أُفَارِقَ الدُّنْيَا، فَكَانَ أَبُو بَكْرٍ - رضي الله عنه - يَدْعُو حَكيمًا لِيُعْطِيَه العَطَاء، فَيَأبَى أَنْ يَقْبَلَ مِنْهُ شَيْئًا، ثُمَّ إنَّ عُمَرَ - رضي الله عنه - دَعَاهُ لِيُعْطِيَه فَأَبَى أَنْ يَقْبَلَهُ. فقالَ: يَا مَعْشَرَ المُسْلِمِينَ، أُشْهِدُكُمْ عَلَى حَكيمٍ أنّي أعْرِضُ عَلَيْهِ حَقَّهُ الَّذِي قَسَمَهُ اللهُ لَهُ في هَذَا الفَيء فَيَأبَى أَنْ يَأخُذَهُ. فَلَمْ يَرْزَأْ حَكيمٌ أحَدًا مِنَ النَّاسِ بَعْدَ النبي - صلى الله عليه وسلم - حَتَّى تُوُفِّي. متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
«يَرْزَأُ» بِراءٍ ثُمَّ زايٍ ثُمَّ همزة؛ أيْ: لَمْ يَأخُذْ مِنْ أحَدٍ شَيْئًا، وَأصْلُ الرُّزءِ: النُّقْصَان، أيْ: لَمْ يَنقُص أحَدًا شَيْئًا بالأخذِ مِنْهُ، وَ «إشْرَافُ النَّفْسِ»: تَطَلُّعُهَا وَطَمَعُهَا بالشَّيْء. وَ «سَخَاوَةُ النَّفْسِ»: هِيَ عَدَمُ الإشرَاف إِلَى الشَيء، وَالطَّمَع فِيهِ، وَالمُبَالاَةِ بِهِ وَالشَّرَهِ.
«يَرْزَأُ» بِراءٍ ثُمَّ زايٍ ثُمَّ همزة؛ أيْ: لَمْ يَأخُذْ مِنْ أحَدٍ شَيْئًا، وَأصْلُ الرُّزءِ: النُّقْصَان، أيْ: لَمْ يَنقُص أحَدًا شَيْئًا بالأخذِ مِنْهُ، وَ «إشْرَافُ النَّفْسِ»: تَطَلُّعُهَا وَطَمَعُهَا بالشَّيْء. وَ «سَخَاوَةُ النَّفْسِ»: هِيَ عَدَمُ الإشرَاف إِلَى الشَيء، وَالطَّمَع فِيهِ، وَالمُبَالاَةِ بِهِ وَالشَّرَهِ.
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫২৪
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৫৭ অল্পেতুষ্টি, অন্যের কাছে চাওয়া বা আশা করা হতে নিজেকে রক্ষা করা, জীবনযাত্রায় মধ্যপন্থা ও মিতব্যয়ের প্রতি উৎসাহদান এবং অপ্রয়োজনে মানুষের কাছে চাওয়ার নিন্দা
দীনের পথে সাহাবীগণের কঠিন ত্যাগ-তিতিক্ষা
হাদীছ নং: ৫২৪
আবু বুরদা রহ. থেকে বর্ণিত যে, (তার পিতা) হযরত আবূ মূসা আশ'আরী রাযি. বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে এক যুদ্ধে বের হলাম। আমরা (আশআরী গোত্রের) ছয়জন লোক ছিলাম। আমাদের মধ্যে ছিল একটি উট। আমরা সেটিতে পালাক্রমে চড়তাম। ফলে আমাদের পা ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায়। আমার পা’ও ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেল। আমার পায়ের নখ পড়ে গেল। আমরা আমাদের পায়ে পট্টি বেঁধে নিয়েছিলাম। এ কারণে সে যুদ্ধটির নামকরণ করা হয় যাতুর্-রিকা' (পট্টিওয়ালা) যুদ্ধ, যেহেতু ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যাওয়ার কারণে আমরা পায়ে পট্টি বেঁধে নিয়েছিলাম।
আবূ বুরদা রহ. বলেন, আবু মূসা রাযি. এ হাদীছ বর্ণনা তো করে ফেলেন, কিন্তু পরক্ষণেই তা অপসন্দ করেন এবং বলেন, আমি যদি এটি বর্ণনা না-ই করতাম! আবু বুরদা রহ. বলেন, যেন তিনি নিজের কোনও আমল প্রকাশ করাকে অপসন্দ করেছিলেন। -বুখারী ও মুসলিম
( সহীহ বুখারী: ৪১২৮; সহীহ মুসলিম: ১৮১৬; সহীহ ইবন হিব্বান: ৪৭৩৪; মুসনাদে আবু ইয়া'লা: ৭৩০৪; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ৩৭৯৮)
হাদীছ নং: ৫২৪
আবু বুরদা রহ. থেকে বর্ণিত যে, (তার পিতা) হযরত আবূ মূসা আশ'আরী রাযি. বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে এক যুদ্ধে বের হলাম। আমরা (আশআরী গোত্রের) ছয়জন লোক ছিলাম। আমাদের মধ্যে ছিল একটি উট। আমরা সেটিতে পালাক্রমে চড়তাম। ফলে আমাদের পা ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায়। আমার পা’ও ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেল। আমার পায়ের নখ পড়ে গেল। আমরা আমাদের পায়ে পট্টি বেঁধে নিয়েছিলাম। এ কারণে সে যুদ্ধটির নামকরণ করা হয় যাতুর্-রিকা' (পট্টিওয়ালা) যুদ্ধ, যেহেতু ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যাওয়ার কারণে আমরা পায়ে পট্টি বেঁধে নিয়েছিলাম।
আবূ বুরদা রহ. বলেন, আবু মূসা রাযি. এ হাদীছ বর্ণনা তো করে ফেলেন, কিন্তু পরক্ষণেই তা অপসন্দ করেন এবং বলেন, আমি যদি এটি বর্ণনা না-ই করতাম! আবু বুরদা রহ. বলেন, যেন তিনি নিজের কোনও আমল প্রকাশ করাকে অপসন্দ করেছিলেন। -বুখারী ও মুসলিম
( সহীহ বুখারী: ৪১২৮; সহীহ মুসলিম: ১৮১৬; সহীহ ইবন হিব্বান: ৪৭৩৪; মুসনাদে আবু ইয়া'লা: ৭৩০৪; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ৩৭৯৮)
مقدمة الامام النووي
57 - باب القناعة والعَفاف والاقتصاد في المعيشة والإنفاق وذم السؤال من غير ضرورة
524 - وعن أَبي بردة، عن أَبي موسى الأشعري - رضي الله عنه - قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - في غَزاةٍ وَنَحْنُ سِتَّةُ نَفَرٍ بَيْنَنَا بَعِيرٌ نَعْتَقِبُهُ، فَنقِبَت (1) أقدَامُنَا وَنَقِبَت قَدَمِي، وسَقَطت [ص:182] أظْفَاري، فَكُنَّا نَلُفُّ عَلَى أرْجُلِنا الخِرَقَ، فَسُمِّيَت غَزْوَةَ ذَاتِ الرِّقَاعِ لِمَا كُنَّا نَعْصِبُ عَلَى أرْجُلِنَا مِنَ الخِرَقِ، قَالَ أَبُو بُردَة: فَحَدَّثَ أَبُو مُوسَى بِهَذَا الحَدِيثِ، ثُمَّ كَرِه ذَلِكَ، وقال: مَا كُنْتُ أصْنَعُ بِأنْ أذْكُرَهُ! قَالَ: كأنَّهُ كَرِهَ أَنْ يَكُونَ شَيْئًا مِنْ عَمَلِهِ أفْشَاهُ. متفقٌ عَلَيْهِ. (2)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫২৫
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৫৭ অল্পেতুষ্টি, অন্যের কাছে চাওয়া বা আশা করা হতে নিজেকে রক্ষা করা, জীবনযাত্রায় মধ্যপন্থা ও মিতব্যয়ের প্রতি উৎসাহদান এবং অপ্রয়োজনে মানুষের কাছে চাওয়ার নিন্দা
দুনিয়ার নগদ অর্থবিত্তের উপর পরকালীন পুরস্কারকে প্রাধান্য দেওয়া
হাদীছ নং: ৫২৫
হযরত আমর ইবন তাগলিব রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কিছু মাল অথবা কয়েকজন বন্দী উপস্থিত করা হল। তিনি তা বণ্টন করলেন। তিনি কয়েক ব্যক্তিকে দিলেন এবং কয়েক ব্যক্তিকে দিলেন না। তারপর তাঁর কাছে (সংবাদ) পৌঁছল যে, যাদেরকে তিনি দেননি তারা অসন্তুষ্ট হয়েছে। সুতরাং তিনি আল্লাহ তা'আলার হাম্দ ও ছানা পাঠ করার পর বললেন, শোনো! আল্লাহর কসম, আমি কোনও ব্যক্তিকে দিই এবং কোনও ব্যক্তিকে দিই না। যাকে দিই না সে আমার কাছে ওই ব্যক্তির চেয়ে বেশি প্রিয়, যাকে দিয়ে থাকি। বস্তুত আমি তো এমনসব লোককেই দিই, যাদের অন্তরে অস্থিরতা ও দ্বিধাগ্রস্ততা আছে বলে লক্ষ করি। আর যাদের অন্তরে আল্লাহ তা'আলা ঐশ্বর্য ও কল্যাণ দিয়ে রেখেছেন, সেরকম লোকদেরকে আমি ঐ ঐশ্বর্য ও কল্যাণের উপর ন্যস্ত করি। আমর ইবন তাগলিব রাযি. তাদের একজন। আমর ইবন তাগলিব রাযি. বলেন, আল্লাহর কসম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ কথার বিনিময়ে আমি একপাল লাল উটও গ্রহণ করতে পসন্দ করব না। -বুখারী
(সহীহ বুখারী : ৯২৩; মুসনাদে আহমাদ: ২০৬৭৩; তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত : ৬০১০; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা: ১৩১৮২)
হাদীছ নং: ৫২৫
হযরত আমর ইবন তাগলিব রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কিছু মাল অথবা কয়েকজন বন্দী উপস্থিত করা হল। তিনি তা বণ্টন করলেন। তিনি কয়েক ব্যক্তিকে দিলেন এবং কয়েক ব্যক্তিকে দিলেন না। তারপর তাঁর কাছে (সংবাদ) পৌঁছল যে, যাদেরকে তিনি দেননি তারা অসন্তুষ্ট হয়েছে। সুতরাং তিনি আল্লাহ তা'আলার হাম্দ ও ছানা পাঠ করার পর বললেন, শোনো! আল্লাহর কসম, আমি কোনও ব্যক্তিকে দিই এবং কোনও ব্যক্তিকে দিই না। যাকে দিই না সে আমার কাছে ওই ব্যক্তির চেয়ে বেশি প্রিয়, যাকে দিয়ে থাকি। বস্তুত আমি তো এমনসব লোককেই দিই, যাদের অন্তরে অস্থিরতা ও দ্বিধাগ্রস্ততা আছে বলে লক্ষ করি। আর যাদের অন্তরে আল্লাহ তা'আলা ঐশ্বর্য ও কল্যাণ দিয়ে রেখেছেন, সেরকম লোকদেরকে আমি ঐ ঐশ্বর্য ও কল্যাণের উপর ন্যস্ত করি। আমর ইবন তাগলিব রাযি. তাদের একজন। আমর ইবন তাগলিব রাযি. বলেন, আল্লাহর কসম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ কথার বিনিময়ে আমি একপাল লাল উটও গ্রহণ করতে পসন্দ করব না। -বুখারী
(সহীহ বুখারী : ৯২৩; মুসনাদে আহমাদ: ২০৬৭৩; তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত : ৬০১০; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা: ১৩১৮২)
مقدمة الامام النووي
57 - باب القناعة والعَفاف والاقتصاد في المعيشة والإنفاق وذم السؤال من غير ضرورة
525 - وعن عمرو بن تَغْلِبَ - بفتح التاء المثناة فوق وإسكان الغين المعجمة وكسر اللام - رضي الله عنه: أنَّ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - أُتِي بِمالٍ أَوْ سَبْيٍ فَقَسَّمَهُ، فَأعْطَى رِجَالًا، وَتَرَكَ رِجَالًا، فَبَلغَهُ أنَّ الَّذِينَ تَرَكَ عَتَبُوا، فَحَمِدَ اللهَ، ثُمَّ أثْنَى عَلَيْهِ، ثُمَّ قَالَ: «أمَّا بَعْدُ، فَواللهِ إنِّي لأُعْطِي الرَّجُلَ وَأدَعُ الرَّجُلَ، وَالَّذِي أدَعُ أحَبُّ إلَيَّ مِنَ الَّذِي أُعْطِي، وَلَكِنِّي إنَّمَا أُعْطِي أقْوَامًا لِمَا أرَى في قُلُوبِهِمْ مِنَ الجَزَعِ وَالهَلَعِ، وَأَكِلُ أقْوَامًا إِلَى مَا جَعَلَ اللهُ في قُلُوبِهم مِنَ الغِنَى وَالخَيْرِ، مِنْهُمْ عَمْرُو بنُ تَغْلِبَ» قَالَ عَمْرُو بنُ تَغْلِبَ: فَوَاللهِ مَا أُحِبُّ أنَّ لِي بِكَلِمَةِ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - حُمْرَ النَّعَم. رواه البخاري. (1)
«الهَلَعُ»: هُوَ أشَدُّ الجَزَعِ، وقيل: الضَّجَرُ.
«الهَلَعُ»: هُوَ أشَدُّ الجَزَعِ، وقيل: الضَّجَرُ.
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫২৬
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৫৭ অল্পেতুষ্টি, অন্যের কাছে চাওয়া বা আশা করা হতে নিজেকে রক্ষা করা, জীবনযাত্রায় মধ্যপন্থা ও মিতব্যয়ের প্রতি উৎসাহদান এবং অপ্রয়োজনে মানুষের কাছে চাওয়ার নিন্দা
দুনিয়ার নগদ অর্থবিত্তের উপর পরকালীন পুরস্কারকে প্রাধান্য দেওয়া
হাদীছ নং: ৫২৬
হযরত হাকীম ইবন হিযাম রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, উপরের হাত নিচের হাতের চেয়ে উত্তম। তুমি যাদের লালন-পালন কর, তাদের থেকে খরচ শুরু করো। উৎকৃষ্ট দান সেটাই, যা অভাবমুক্ততা রক্ষার সঙ্গে করা হয়। যে ব্যক্তি সংযমী হতে চায়, আল্লাহ তাকে সংযমী বানান। যে ব্যক্তি (মাখলুক থেকে) মুখাপেক্ষিতামুক্ত থাকতে চায় আল্লাহ তাকে মুখাপেক্ষিতামুক্ত রাখেন। -বুখারী
(সহীহ বুখারী: ১৪২৭; সহীহ মুসলিম: ১০৩৪; সুনানে নাসাঈ ২৫৪৩; মুসনাদে আহমাদ: ১৫৩২৬; তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর: ৩০৮২, বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা : ৭৭৭০)
হাদীছ নং: ৫২৬
হযরত হাকীম ইবন হিযাম রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, উপরের হাত নিচের হাতের চেয়ে উত্তম। তুমি যাদের লালন-পালন কর, তাদের থেকে খরচ শুরু করো। উৎকৃষ্ট দান সেটাই, যা অভাবমুক্ততা রক্ষার সঙ্গে করা হয়। যে ব্যক্তি সংযমী হতে চায়, আল্লাহ তাকে সংযমী বানান। যে ব্যক্তি (মাখলুক থেকে) মুখাপেক্ষিতামুক্ত থাকতে চায় আল্লাহ তাকে মুখাপেক্ষিতামুক্ত রাখেন। -বুখারী
(সহীহ বুখারী: ১৪২৭; সহীহ মুসলিম: ১০৩৪; সুনানে নাসাঈ ২৫৪৩; মুসনাদে আহমাদ: ১৫৩২৬; তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর: ৩০৮২, বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা : ৭৭৭০)
مقدمة الامام النووي
57 - باب القناعة والعَفاف والاقتصاد في المعيشة والإنفاق وذم السؤال من غير ضرورة
526 - وعن حكيم بن حزام - رضي الله عنه: أنَّ النَّبيَّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «اليَدُ العُلْيَا خَيْرٌ مِنَ اليَدِ السُّفْلَى، وَابْدَأْ بِمَنْ تَعُولُ، وَخَيْرُ الصَّدَقَةِ مَا كَانَ عَنْ ظَهْرِ غِنىً، وَمَنْ يَسْتَعْفِفْ يُعِفُّهُ الله، وَمَنْ يَسْتَغْنِ يُغنهِ الله». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
وهذا لفظ البخاري، ولفظ مسلم أخصر.
وهذا لفظ البخاري، ولفظ مسلم أخصر.
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫২৭
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৫৭ অল্পেতুষ্টি, অন্যের কাছে চাওয়া বা আশা করা হতে নিজেকে রক্ষা করা, জীবনযাত্রায় মধ্যপন্থা ও মিতব্যয়ের প্রতি উৎসাহদান এবং অপ্রয়োজনে মানুষের কাছে চাওয়ার নিন্দা
পীড়াপীড়ি করে চাওয়ার ক্ষতি
হাদীছ নং: ৫২৭
হযরত আবূ আব্দুর রহমান মু'আবিয়া ইবন আবূ সুফয়ান রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা (মানুষের কাছে) চাওয়ায় পীড়াপীড়ি করো না। আল্লাহর কসম, তোমাদের মধ্যে যে- কেউ আমার কাছে কিছু চায় এবং তার চাওয়া আমার কাছ থেকে কিছু এ অবস্থায় বের করে নেয় যে, আমি তার প্রতি অসন্তুষ্ট, তবে আমি তাকে যা দিলাম তাতে তার বরকত হবে না। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ১০৩৮; সুনানে নাসাঈ ২৫৯৩; মুসনাদুল হুমায়দী: ৬১৫; মুসনাদে আহমাদ : ১৬১৯৩; সহীহ ইবন হিব্বান: ৩৩৮৯; সুনানে দারিমী: ১৬৮৪; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৮০৮)
হাদীছ নং: ৫২৭
হযরত আবূ আব্দুর রহমান মু'আবিয়া ইবন আবূ সুফয়ান রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা (মানুষের কাছে) চাওয়ায় পীড়াপীড়ি করো না। আল্লাহর কসম, তোমাদের মধ্যে যে- কেউ আমার কাছে কিছু চায় এবং তার চাওয়া আমার কাছ থেকে কিছু এ অবস্থায় বের করে নেয় যে, আমি তার প্রতি অসন্তুষ্ট, তবে আমি তাকে যা দিলাম তাতে তার বরকত হবে না। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ১০৩৮; সুনানে নাসাঈ ২৫৯৩; মুসনাদুল হুমায়দী: ৬১৫; মুসনাদে আহমাদ : ১৬১৯৩; সহীহ ইবন হিব্বান: ৩৩৮৯; সুনানে দারিমী: ১৬৮৪; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৮০৮)
مقدمة الامام النووي
57 - باب القناعة والعَفاف والاقتصاد في المعيشة والإنفاق وذم السؤال من غير ضرورة
527 - وعن أَبي عبد الرحمان معاوية بن أبي سفيان - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «لاَ تُلْحِفُوا في الْمَسْأَلَةِ، فَوَاللهِ لاَ يَسْأَلُنِي أَحَدٌ مِنْكُمْ شَيْئًا، فَتُخْرِجَ لَهُ مَسْأَلَتُهُ مِنِّي شَيْئًا وَأنَا لَهُ كَارهٌ، فَيُبَارَكَ لَهُ فِيمَا أعْطَيْتُهُ». رواه مسلم. (1)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫২৮
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৫৭ অল্পেতুষ্টি, অন্যের কাছে চাওয়া বা আশা করা হতে নিজেকে রক্ষা করা, জীবনযাত্রায় মধ্যপন্থা ও মিতব্যয়ের প্রতি উৎসাহদান এবং অপ্রয়োজনে মানুষের কাছে চাওয়ার নিন্দা
অন্যের কাছে কিছু না চাওয়া সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামের অঙ্গীকার
হাদীছ নং: ৫২৮
হযরত আবূ আব্দুর রহমান আওফ ইবন মালিক আল-আশজা‘ঈ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নয়জন বা আটজন বা সাতজন লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন তিনি বললেন, তোমরা কি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বায়'আত গ্রহণ করবে না? অথচ আমরা মাত্র কিছুকাল আগেই (তাঁর হাতে) বায়'আত গ্রহণ করেছি। আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা তো আপনার নিকট বায়'আত গ্রহণ করেছি। তিনি বললেন, তোমরা কি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বায়'আত গ্রহণ করবে না? সুতরাং আমরা আমাদের হাত বাড়িয়ে দিলাম এবং বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা তো আপনার নিকট বায়'আত গ্রহণ করেছি। এখন আমরা কোন বিষয়ে আপনার নিকট বায়'আত গ্রহণ করব? তিনি বললেন, 'এই বিষয়ে যে, তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সঙ্গে কোনওকিছু শরীক করবে না, পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করবে এবং আল্লাহর আনুগত্য করবে।' আরেকটি কথা নিম্ন আওয়াজে বললেন- ‘এবং মানুষের কাছে কিছু চাবে না।’ সুতরাং পরবর্তীকালে আমি সেই দলের কাউকে কাউকে দেখেছি, তাদের কারও হাত থেকে চাবুক পড়ে গেলেও কাউকে তা তুলে দেওয়ার জন্য বলতেন না। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ১০৪৩; সুনানে আবু দাউদ: ১৬৪২; সুনানে নাসাঈ: ৪৬০; সুনানে ইবন মাজাহঃ ২৮৬৭; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৬৮; শু'আবুল ঈমান: ৩২৪৫; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ১৬২৮)
হাদীছ নং: ৫২৮
হযরত আবূ আব্দুর রহমান আওফ ইবন মালিক আল-আশজা‘ঈ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নয়জন বা আটজন বা সাতজন লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন তিনি বললেন, তোমরা কি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বায়'আত গ্রহণ করবে না? অথচ আমরা মাত্র কিছুকাল আগেই (তাঁর হাতে) বায়'আত গ্রহণ করেছি। আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা তো আপনার নিকট বায়'আত গ্রহণ করেছি। তিনি বললেন, তোমরা কি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বায়'আত গ্রহণ করবে না? সুতরাং আমরা আমাদের হাত বাড়িয়ে দিলাম এবং বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা তো আপনার নিকট বায়'আত গ্রহণ করেছি। এখন আমরা কোন বিষয়ে আপনার নিকট বায়'আত গ্রহণ করব? তিনি বললেন, 'এই বিষয়ে যে, তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সঙ্গে কোনওকিছু শরীক করবে না, পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করবে এবং আল্লাহর আনুগত্য করবে।' আরেকটি কথা নিম্ন আওয়াজে বললেন- ‘এবং মানুষের কাছে কিছু চাবে না।’ সুতরাং পরবর্তীকালে আমি সেই দলের কাউকে কাউকে দেখেছি, তাদের কারও হাত থেকে চাবুক পড়ে গেলেও কাউকে তা তুলে দেওয়ার জন্য বলতেন না। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ১০৪৩; সুনানে আবু দাউদ: ১৬৪২; সুনানে নাসাঈ: ৪৬০; সুনানে ইবন মাজাহঃ ২৮৬৭; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৬৮; শু'আবুল ঈমান: ৩২৪৫; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ১৬২৮)
مقدمة الامام النووي
57 - باب القناعة والعَفاف والاقتصاد في المعيشة والإنفاق وذم السؤال من غير ضرورة
528 - وعن أَبي عبدِ الرحمان عوف بن مالِك الأَشْجَعِيِّ - رضي الله عنه - قَالَ: كُنَّا عِنْدَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - تِسْعَةً أَوْ ثَمَانِيَةً أَوْ سَبْعَةً، فَقَالَ: «ألاَ تُبَايِعُونَ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم» وَكُنَّا حَديثِي عَهْدٍ ببَيْعَةٍ، فَقُلْنَا: قَدْ بَايَعْنَاكَ يَا رسولَ اللهِ، ثمَّ قالَ: «ألا تُبَايِعُونَ رسولَ اللهِ» فَبَسَطْنا أيْدينا، وقلنا: قدْ بايعناكَ فَعَلامَ نُبَايِعُكَ؟ قَالَ: «عَلَى أَنْ تَعْبُدُوا اللهَ وَلاَ تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا، [ص:183] وَالصَّلَوَاتِ الخَمْسِ وَتُطِيعُوا الله» وأَسَرَّ كَلِمَةً خَفِيفَةً «وَلاَ تَسْألُوا النَّاسَ شَيْئًا» فَلَقَدْ رَأيْتُ بَعْضَ أُولئِكَ النَّفَرِ يَسْقُطُ سَوطُ أحَدِهِمْ فَمَا يَسأَلُ أحَدًا يُنَاوِلُهُ إيّاهُ. رواه مسلم. (1)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫২৯
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৫৭ অল্পেতুষ্টি, অন্যের কাছে চাওয়া বা আশা করা হতে নিজেকে রক্ষা করা, জীবনযাত্রায় মধ্যপন্থা ও মিতব্যয়ের প্রতি উৎসাহদান এবং অপ্রয়োজনে মানুষের কাছে চাওয়ার নিন্দা
অন্যের কাছে হাত পাতার হীনতা
হাদীছ নং: ৫২৯
হযরত ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে যে-কারও (মানুষের কাছে) চাওয়া নিয়মিত অভ্যাস হয়ে যায়, সে আল্লাহ তা'আলার সঙ্গে এ অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, তার চেহারায় এক টুকরোও গোশত থাকবে না। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ১৪৭৪; সহীহ মুসলিম: ১০৪০; সুনানে নাসাঈ ২৫৮৫; মুসনাদে আহমাদ: ৪৬৩৮; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ১০৬৬৮; বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা: ৭৮৭০)
হাদীছ নং: ৫২৯
হযরত ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে যে-কারও (মানুষের কাছে) চাওয়া নিয়মিত অভ্যাস হয়ে যায়, সে আল্লাহ তা'আলার সঙ্গে এ অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, তার চেহারায় এক টুকরোও গোশত থাকবে না। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ১৪৭৪; সহীহ মুসলিম: ১০৪০; সুনানে নাসাঈ ২৫৮৫; মুসনাদে আহমাদ: ৪৬৩৮; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ১০৬৬৮; বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা: ৭৮৭০)
مقدمة الامام النووي
57 - باب القناعة والعَفاف والاقتصاد في المعيشة والإنفاق وذم السؤال من غير ضرورة
529 - وعن ابن عمر رضي الله عنهما: أنَّ النَّبيَّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «لاَ تَزَالُ الْمَسْأَلةُ بأَحَدِكُمْ حَتَّى يَلْقَى الله تَعَالَى وَلَيْسَ في وَجْهِهِ مُزْعَةُ لَحْمٍ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
«المُزْعَةُ» بضم الميم وإسكان الزايِ وبالعينِ المهملة: القِطْعَةُ.
«المُزْعَةُ» بضم الميم وإسكان الزايِ وبالعينِ المهملة: القِطْعَةُ.
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৩০
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৫৭ অল্পেতুষ্টি, অন্যের কাছে চাওয়া বা আশা করা হতে নিজেকে রক্ষা করা, জীবনযাত্রায় মধ্যপন্থা ও মিতব্যয়ের প্রতি উৎসাহদান এবং অপ্রয়োজনে মানুষের কাছে চাওয়ার নিন্দা
দান-খয়রাত করতে অভ্যস্ত হওয়ার প্রতি উৎসাহদান
হাদীছ নং: ৫৩০
হযরত ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে উপবিষ্ট ছিলেন। এ অবস্থায় তিনি সদাকা করা ও মানুষের কাছে চাওয়া হতে বিরত থাকা সম্পর্কে বক্তব্য দান করতে গিয়ে বলেন, উপরের হাত নিচের হাতের চেয়ে উত্তম। উপরের হাত হল দানকারী হাত আর নিচের হাত হল যাচনাকারী হাত। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ১৪২৯; সহীহ মুসলিম: ১০৩৩; সুনানে নাসাঈ ২৫৩৩; সুনানে আবু দাউদ: ১৬৪৮; সহীহ ইবন হিব্বান: ৩৩৬৪; শু'আবুল ঈমান: ৩২২৯; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ১৬১৪)
হাদীছ নং: ৫৩০
হযরত ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে উপবিষ্ট ছিলেন। এ অবস্থায় তিনি সদাকা করা ও মানুষের কাছে চাওয়া হতে বিরত থাকা সম্পর্কে বক্তব্য দান করতে গিয়ে বলেন, উপরের হাত নিচের হাতের চেয়ে উত্তম। উপরের হাত হল দানকারী হাত আর নিচের হাত হল যাচনাকারী হাত। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ১৪২৯; সহীহ মুসলিম: ১০৩৩; সুনানে নাসাঈ ২৫৩৩; সুনানে আবু দাউদ: ১৬৪৮; সহীহ ইবন হিব্বান: ৩৩৬৪; শু'আবুল ঈমান: ৩২২৯; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ১৬১৪)
مقدمة الامام النووي
57 - باب القناعة والعَفاف والاقتصاد في المعيشة والإنفاق وذم السؤال من غير ضرورة
530 - وعنه: أنَّ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ وَهُوَ عَلَى المِنْبَرِ، وَذَكَرَ الصَّدَقَةَ وَالتَّعَفُّفَ عَنِ الْمَسْأَلَةِ: «اليَدُ العُلْيَا خَيْرٌ مِنَ اليَدِ السُّفْلَى، وَاليَدُ العُلْيَا هِيَ المُنْفِقَةُ، وَالسُّفْلَى هِيَ السَّائِلَةُ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৩১
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৫৭ অল্পেতুষ্টি, অন্যের কাছে চাওয়া বা আশা করা হতে নিজেকে রক্ষা করা, জীবনযাত্রায় মধ্যপন্থা ও মিতব্যয়ের প্রতি উৎসাহদান এবং অপ্রয়োজনে মানুষের কাছে চাওয়ার নিন্দা
সম্পদ বাড়ানোর লক্ষ্যে অন্যের কাছে সওয়াল করার অবৈধতা
হাদীছ নং: ৫৩১
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সম্পদ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে মানুষের কাছে চেয়ে বেড়ায়, সে প্রকৃতপক্ষে জ্বলন্ত কয়লাই চায়, এবার সে চাইলে সওয়াল কম করুক কিংবা বেশি করুক। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ১০৪১; মুসনাদে আহমাদ: ৭১৬৩; সহীহ ইবন হিব্বান: ৩৩৯৩; সুনানে ইবন মাজাহ : ১৮৩৮; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা ১০৬৭৩; তহাবী, শারহু মা'আনিল আছার : ৩০২৯; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা: ৭৮৭১; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ১৬২৪)
হাদীছ নং: ৫৩১
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সম্পদ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে মানুষের কাছে চেয়ে বেড়ায়, সে প্রকৃতপক্ষে জ্বলন্ত কয়লাই চায়, এবার সে চাইলে সওয়াল কম করুক কিংবা বেশি করুক। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ১০৪১; মুসনাদে আহমাদ: ৭১৬৩; সহীহ ইবন হিব্বান: ৩৩৯৩; সুনানে ইবন মাজাহ : ১৮৩৮; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা ১০৬৭৩; তহাবী, শারহু মা'আনিল আছার : ৩০২৯; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা: ৭৮৭১; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ১৬২৪)
مقدمة الامام النووي
57 - باب القناعة والعَفاف والاقتصاد في المعيشة والإنفاق وذم السؤال من غير ضرورة
531 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «مَنْ سَألَ النَّاسَ تَكَثُّرًا فإنَّمَا يَسْألُ جَمْرًا؛ فَلْيَسْتَقِلَّ أَوْ لِيَسْتَكْثِرْ». رواه مسلم. (1)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৩২
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৫৭ অল্পেতুষ্টি, অন্যের কাছে চাওয়া বা আশা করা হতে নিজেকে রক্ষা করা, জীবনযাত্রায় মধ্যপন্থা ও মিতব্যয়ের প্রতি উৎসাহদান এবং অপ্রয়োজনে মানুষের কাছে চাওয়ার নিন্দা
কখন সওয়াল করা অবৈধ এবং কখন বৈধ
হাদীছ নং: ৫৩২
হযরত সামুরা ইবন জুনদুব রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই অন্যের কাছে চাওয়াটা আঁচড়, যা দ্বারা ব্যক্তি নিজ চেহারা আঁচড়ায়। তবে কোনও লোক যদি ক্ষমতাসীনের কাছে চায় অথবা যা না হলেই নয় এমন বিষয় (কারও কাছে) চায়, তা ব্যতিক্রম। -তিরমিযী
(জামে' তিরমিযী: ৬৮১; সুনানে নাসাঈ ২৬০০; মুসনাদে আহমাদ: ২০১০৬; সহীহ ইবন হিব্বান : ৩৩৮৬; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৬৭৬৯; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ১৬২৫)
হাদীছ নং: ৫৩২
হযরত সামুরা ইবন জুনদুব রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই অন্যের কাছে চাওয়াটা আঁচড়, যা দ্বারা ব্যক্তি নিজ চেহারা আঁচড়ায়। তবে কোনও লোক যদি ক্ষমতাসীনের কাছে চায় অথবা যা না হলেই নয় এমন বিষয় (কারও কাছে) চায়, তা ব্যতিক্রম। -তিরমিযী
(জামে' তিরমিযী: ৬৮১; সুনানে নাসাঈ ২৬০০; মুসনাদে আহমাদ: ২০১০৬; সহীহ ইবন হিব্বান : ৩৩৮৬; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৬৭৬৯; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ১৬২৫)
مقدمة الامام النووي
57 - باب القناعة والعَفاف والاقتصاد في المعيشة والإنفاق وذم السؤال من غير ضرورة
532 - وعن سَمُرَةَ بنِ جُنْدبٍ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «إنَّ المَسْأَلَةَ كَدٌّ يَكُدُّ بِهَا الرَّجُلُ وَجْهَهُ، إِلاَّ أَنْ يَسْأَلَ الرَّجُلُ سُلْطَانًا أَوْ في أمْرٍ لاَ بُدَّ مِنْهُ». رواه الترمذي، (1) وقال: «حديث حسن صحيح».
«الكد»: الْخَدْشُ وَنَحْوُهُ.
«الكد»: الْخَدْشُ وَنَحْوُهُ.
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৩৩
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৫৭ অল্পেতুষ্টি, অন্যের কাছে চাওয়া বা আশা করা হতে নিজেকে রক্ষা করা, জীবনযাত্রায় মধ্যপন্থা ও মিতব্যয়ের প্রতি উৎসাহদান এবং অপ্রয়োজনে মানুষের কাছে চাওয়ার নিন্দা
অভাব-অনটনের কথা মানুষের কাছে প্রকাশ না করে আল্লাহ তা'আলার কাছে প্রার্থনা করার প্রতি উৎসাহদান
হাদীছ নং: ৫৩৩
হযরত ইবন মাস'উদ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাভ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যাকে অনাহার স্পর্শ করে, তারপর সে তা মানুষের সামনে প্রকাশ করে, তার অনাহার ঘুচবে না। আর যে ব্যক্তি তা আল্লাহ তা'আলার কাছে পেশ করে, আল্লাহ তা'আলা শীঘ্র হোক বা বিলম্বে, তাকে অবশ্যই রিযিক দান করবেন।-আবু দাউদ ও তিরমিযী
(সুনানে আবু দাউদ: ১৬৪৫; জামে তিরমিযী: ২৩২৬; মুসনাদে আহমাদ: ৩৮৬৯; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা: ৭৮৬৯; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ৪১১০)
হাদীছ নং: ৫৩৩
হযরত ইবন মাস'উদ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাভ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যাকে অনাহার স্পর্শ করে, তারপর সে তা মানুষের সামনে প্রকাশ করে, তার অনাহার ঘুচবে না। আর যে ব্যক্তি তা আল্লাহ তা'আলার কাছে পেশ করে, আল্লাহ তা'আলা শীঘ্র হোক বা বিলম্বে, তাকে অবশ্যই রিযিক দান করবেন।-আবু দাউদ ও তিরমিযী
(সুনানে আবু দাউদ: ১৬৪৫; জামে তিরমিযী: ২৩২৬; মুসনাদে আহমাদ: ৩৮৬৯; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা: ৭৮৬৯; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ৪১১০)
مقدمة الامام النووي
57 - باب القناعة والعَفاف والاقتصاد في المعيشة والإنفاق وذم السؤال من غير ضرورة
533 - وعن ابن مسعود - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «مَنْ أصَابَتْهُ فَاقَةٌ فَأنْزَلَهَا بالنَّاسِ لَمْ تُسَدَّ فَاقَتُهُ، وَمَنْ أَنْزَلَهَا باللهِ، فَيُوشِكُ اللهُ لَهُ بِرِزْقٍ عَاجِلٍ أَوْ آجِلٍ». رواه أَبُو داود والترمذي، (1) وقال: «حديث حسن».
«يُوشِكُ» بكسر الشين: أيْ يُسْرعُ.
«يُوشِكُ» بكسر الشين: أيْ يُسْرعُ.
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৩৪
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৫৭ অল্পেতুষ্টি, অন্যের কাছে চাওয়া বা আশা করা হতে নিজেকে রক্ষা করা, জীবনযাত্রায় মধ্যপন্থা ও মিতব্যয়ের প্রতি উৎসাহদান এবং অপ্রয়োজনে মানুষের কাছে চাওয়ার নিন্দা
কোনও মাখলুকের কাছে কিছু না চাওয়ার প্রতিদানে জান্নাতের ওয়াদা
হাদীছ নং: ৫৩৪
হযরত ছাওবান রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কে আমার পক্ষে এই দায়িত্ব গ্রহণ করবে যে, সে মানুষের কাছে কিছু চাবে না আর আমি তার জন্য জান্নাতের জামিন হব? আমি বললাম, আমি। (বর্ণনাকারী বলেন,) এরপর থেকে তিনি কারও কাছে কিছু চাইতেন না। -আবু দাউদ
(সুনানে আবু দাউদ : ১৬৪৩; মুসনাদে আহমাদ: ২২৩৭৪; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর : ১৪৪৩ বয়হাকী শু'আবল ঈমান ৩২৪৫)
হাদীছ নং: ৫৩৪
হযরত ছাওবান রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কে আমার পক্ষে এই দায়িত্ব গ্রহণ করবে যে, সে মানুষের কাছে কিছু চাবে না আর আমি তার জন্য জান্নাতের জামিন হব? আমি বললাম, আমি। (বর্ণনাকারী বলেন,) এরপর থেকে তিনি কারও কাছে কিছু চাইতেন না। -আবু দাউদ
(সুনানে আবু দাউদ : ১৬৪৩; মুসনাদে আহমাদ: ২২৩৭৪; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর : ১৪৪৩ বয়হাকী শু'আবল ঈমান ৩২৪৫)
مقدمة الامام النووي
57 - باب القناعة والعَفاف والاقتصاد في المعيشة والإنفاق وذم السؤال من غير ضرورة
534 - وعن ثوبان - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «مَنْ تَكَفَّلَ لِي أَنْ لاَ يَسْأَلَ النَّاسَ شَيْئًا، وَأَتَكَفَّلُ لَهُ بِالْجَنَّةِ؟» فقلتُ: أنَا، فَكَانَ لاَ يَسْأَلُ أحَدًا شَيْئًا. رواه أَبُو داود بإسناد صحيح. (1)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৩৫
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৫৭ অল্পেতুষ্টি, অন্যের কাছে চাওয়া বা আশা করা হতে নিজেকে রক্ষা করা, জীবনযাত্রায় মধ্যপন্থা ও মিতব্যয়ের প্রতি উৎসাহদান এবং অপ্রয়োজনে মানুষের কাছে চাওয়ার নিন্দা
কোন কোন অবস্থায় অন্যের কাছে অর্থসাহায্য চাওয়া যায়
হাদীছ নং: ৫৩৫
হযরত আবু বিশর কাবীসা ইবনুল মুখারিক রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একটি আর্থিক দায় বহন করলাম। তারপর সে ব্যাপারে সাহায্য চাইতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলাম। তিনি বললেন, তুমি এখানে অবস্থান করো, যাবৎ না আমাদের কাছে সদাকার মাল আসে। তা আসলে আমি তোমাকে তা থেকে দিতে আদেশ করব। তারপর বললেন, হে কাবীসা! তিনজনের কোনও একজন ছাড়া অন্য কারও জন্য অর্থসাহায্য চাওয়া বৈধ নয়। ওই ব্যক্তি, যে কোনও আর্থিক ভার বহন করেছে। তার জন্য চাওয়া বৈধ, যাবৎ না সে তা পরিশোধ করতে পারে। তারপর সে ক্ষান্ত হবে। এবং দুর্যোগকবলিত ব্যক্তি, যে দুর্যোগ তার সম্পদ ধ্বংস করে দিয়েছে। তার জন্যও চাওয়া জায়েয, যাবৎ না সে তার জীবনধারণ পরিমাণ সম্পদ পেয়ে যায় অথবা (বলেছেন,) জীবনরক্ষার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু পেয়ে যায়। আর দারিদ্র্যপীড়িত ব্যক্তি, যার সম্পর্কে তার গোত্রের তিনজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি বলবে যে, সত্যিই অমুক ব্যক্তি দারিদ্র্যগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তার জন্যও চাওয়া জায়েয, যাবৎ না সে তার জীবনধারণ পরিমাণ সম্পদ পেয়ে যায় অথবা (বলেছেন,) জীবনরক্ষার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু পেয়ে যায়। হে কাবীসা! এ তিন প্রকার চাওয়া ছাড়া অন্য যে-কোনও চাওয়া হারাম। যে ব্যক্তি সেরকম চাওয়া চায়, সে হারাম খায়। -মুসলিম"
(সহীহ মুসলিম: ১০৪৪; সুনানে আবু দাউদ: ১৬৪০; সুনানে নাসাঈ : ৩৫৮০; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ১০৬৮৫; সহীহ ইবন হিব্বান: ৩৩৯৬; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ৪৯১; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা: ১৩১৯৪; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৯৪৭)
হাদীছ নং: ৫৩৫
হযরত আবু বিশর কাবীসা ইবনুল মুখারিক রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একটি আর্থিক দায় বহন করলাম। তারপর সে ব্যাপারে সাহায্য চাইতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলাম। তিনি বললেন, তুমি এখানে অবস্থান করো, যাবৎ না আমাদের কাছে সদাকার মাল আসে। তা আসলে আমি তোমাকে তা থেকে দিতে আদেশ করব। তারপর বললেন, হে কাবীসা! তিনজনের কোনও একজন ছাড়া অন্য কারও জন্য অর্থসাহায্য চাওয়া বৈধ নয়। ওই ব্যক্তি, যে কোনও আর্থিক ভার বহন করেছে। তার জন্য চাওয়া বৈধ, যাবৎ না সে তা পরিশোধ করতে পারে। তারপর সে ক্ষান্ত হবে। এবং দুর্যোগকবলিত ব্যক্তি, যে দুর্যোগ তার সম্পদ ধ্বংস করে দিয়েছে। তার জন্যও চাওয়া জায়েয, যাবৎ না সে তার জীবনধারণ পরিমাণ সম্পদ পেয়ে যায় অথবা (বলেছেন,) জীবনরক্ষার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু পেয়ে যায়। আর দারিদ্র্যপীড়িত ব্যক্তি, যার সম্পর্কে তার গোত্রের তিনজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি বলবে যে, সত্যিই অমুক ব্যক্তি দারিদ্র্যগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তার জন্যও চাওয়া জায়েয, যাবৎ না সে তার জীবনধারণ পরিমাণ সম্পদ পেয়ে যায় অথবা (বলেছেন,) জীবনরক্ষার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু পেয়ে যায়। হে কাবীসা! এ তিন প্রকার চাওয়া ছাড়া অন্য যে-কোনও চাওয়া হারাম। যে ব্যক্তি সেরকম চাওয়া চায়, সে হারাম খায়। -মুসলিম"
(সহীহ মুসলিম: ১০৪৪; সুনানে আবু দাউদ: ১৬৪০; সুনানে নাসাঈ : ৩৫৮০; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ১০৬৮৫; সহীহ ইবন হিব্বান: ৩৩৯৬; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ৪৯১; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা: ১৩১৯৪; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৯৪৭)
مقدمة الامام النووي
57 - باب القناعة والعَفاف والاقتصاد في المعيشة والإنفاق وذم السؤال من غير ضرورة
535 - وعن أَبي بِشْرٍ قَبيصَةَ بنِ المُخَارِقِ - رضي الله عنه - قَالَ: تَحَمَّلْتُ حَمَالَةً فَأتَيْتُ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - أسْأَلُهُ فِيهَا، فَقَالَ: «أقِمْ حَتَّى تَأتِيَنَا الصَّدَقَةُ فَنَأمُرَ لَكَ بِهَا» ثُمَّ قَالَ: «يَا قَبيصةُ، إنَّ المَسْأَلَةَ لاَ تَحِلُّ إِلاَّ لأَحَدِ ثلاثَةٍ: رَجُلٌ تحمَّلَ حَمَالَةً، فَحَلَّتْ لَهُ المَسْأَلَةُ حَتَّى يُصِيبَها، ثُمَّ يُمْسِكُ، وَرَجُلٌ أصَابَتْهُ جَائِحَةٌ اجْتَاحَتْ مَالَهُ، فَحَلَّتْ لَهُ الْمَسْأَلَةُ حَتَّى يُصِيبَ قوامًا مِنْ عَيش - أَوْ قَالَ: سِدَادًا مِنْ عَيْشٍ - وَرَجُلٌ أصَابَتْهُ فَاقَةٌ، حَتَّى يَقُولَ ثَلاَثَةٌ مِنْ ذَوِي الحِجَى مِنْ قَوْمِه: لَقَدْ أصَابَتْ فُلانًا فَاقَةٌ. فَحلَّتْ لَهُ الْمَسْأَلَةُ حَتَّى يصيب قوامًا من عيش، أَوْ قَالَ: سدادًا من عيشِ، فما سِوَاهُنَّ مِنَ المسألَةِ يَا قَبِيصَةُ سُحْتٌ، يَأكُلُهَا صَاحِبُهَا سُحْتًا». رواه مسلم. (1)
«الحَمَالَةُ» بفتح الحاءِ: أَنْ يَقَعَ قِتَالٌ وَنَحْوُهُ بَيْنَ فَرِيقَيْنِ، فَيُصْلِحُ إنْسَانٌ بَيْنَهُمْ عَلَى مَالٍ يَتَحَمَّلُهُ وَيَلْتَزِمُهُ عَلَى نَفْسِهِ. وَ «الجَائحةُ» الآفَةُ تُصيبُ مَالَ الإنْسَانِ. وَ «القَوَامُ» بكسر القاف وفتحهَا: هُوَ مَا يَقُومُ بِهِ أمْرُ الإنسَان مِنْ مَال ونحوِهِ. وَ «السِّدَادُ» بكسر السين: مَا يَسُدُّ حَاجَةَ الْمَعْوِزِ وَيَكْفِيهِ، وَ «الفَاقَةُ»: الفَقْرُ. وَ «الحِجَى»: العَقْلُ.
«الحَمَالَةُ» بفتح الحاءِ: أَنْ يَقَعَ قِتَالٌ وَنَحْوُهُ بَيْنَ فَرِيقَيْنِ، فَيُصْلِحُ إنْسَانٌ بَيْنَهُمْ عَلَى مَالٍ يَتَحَمَّلُهُ وَيَلْتَزِمُهُ عَلَى نَفْسِهِ. وَ «الجَائحةُ» الآفَةُ تُصيبُ مَالَ الإنْسَانِ. وَ «القَوَامُ» بكسر القاف وفتحهَا: هُوَ مَا يَقُومُ بِهِ أمْرُ الإنسَان مِنْ مَال ونحوِهِ. وَ «السِّدَادُ» بكسر السين: مَا يَسُدُّ حَاجَةَ الْمَعْوِزِ وَيَكْفِيهِ، وَ «الفَاقَةُ»: الفَقْرُ. وَ «الحِجَى»: العَقْلُ.
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৩৬
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৫৭ অল্পেতুষ্টি, অন্যের কাছে চাওয়া বা আশা করা হতে নিজেকে রক্ষা করা, জীবনযাত্রায় মধ্যপন্থা ও মিতব্যয়ের প্রতি উৎসাহদান এবং অপ্রয়োজনে মানুষের কাছে চাওয়ার নিন্দা
অর্থসাহায্যের উপযুক্ত প্রকৃত মিসকীন কে
হাদীছ নং: ৫৩৬
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ওই ব্যক্তি মিসকীন নয়, যে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়ায়, যাকে এক-দুই লোকমা খাদ্য বা এক-দু'টি খেজুর দিয়েই বিদায় করা হয়; বরং প্রকৃত মিসকীন সেই, যার এমন সামর্থ্য নেই, যা তার প্রয়োজন মেটাবে। আবার তার সম্পর্কে জানাও যায় না যে, তাকে কিছু দান-সদাকা করা হবে এবং সে উঠে মানুষের কাছে সওয়ালও করে না। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ১৪৭৯; সহীহ মুসলিম: ১০৩৯; সুনানে নাসাঈ ২৫৭২; সহীহ ইবন হিব্বান : ৩৩৫২; মুসনাদে আহমাদ: ৮১৮৭; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা ১৩১৪৭)
হাদীছ নং: ৫৩৬
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ওই ব্যক্তি মিসকীন নয়, যে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়ায়, যাকে এক-দুই লোকমা খাদ্য বা এক-দু'টি খেজুর দিয়েই বিদায় করা হয়; বরং প্রকৃত মিসকীন সেই, যার এমন সামর্থ্য নেই, যা তার প্রয়োজন মেটাবে। আবার তার সম্পর্কে জানাও যায় না যে, তাকে কিছু দান-সদাকা করা হবে এবং সে উঠে মানুষের কাছে সওয়ালও করে না। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ১৪৭৯; সহীহ মুসলিম: ১০৩৯; সুনানে নাসাঈ ২৫৭২; সহীহ ইবন হিব্বান : ৩৩৫২; মুসনাদে আহমাদ: ৮১৮৭; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা ১৩১৪৭)
مقدمة الامام النووي
57 - باب القناعة والعَفاف والاقتصاد في المعيشة والإنفاق وذم السؤال من غير ضرورة
536 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه: أنَّ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «لَيْسَ المسكينُ الَّذِي يَطُوفُ عَلَى النَّاسِ تَرُدُّهُ اللُّقْمَةُ وَاللُّقْمَتَانِ، وَالتَّمْرَةُ وَالتَّمْرَتَانِ، وَلكِنَّ المِسكينَ الَّذِي لاَ يَجِدُ غِنىً يُغْنِيهِ، وَلاَ يُفْطَنُ لَهُ فَيُتَصَدَّقُ عَلَيْهِ، وَلاَ يَقُومُ فَيَسْألَ النَّاسَ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৩৭
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৫৮ বিনা চাওয়ায় ও বিনা আকাঙ্ক্ষায় কেউ কিছু দিলে তা গ্রহণের বৈধতা
হাদীছ নং: ৫৩৭
হযরত উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কিছু দান করতে চাইলে আমি বলি, এটা আমার চেয়ে যার বেশি প্রয়োজন তাকে দিন। তিনি বললেন, তুমি এটা গ্রহণ করো। এই সম্পদ থেকে কোনওকিছু যদি তোমার কাছে এ অবস্থায় আসে যে, তুমি তার আকাঙ্ক্ষাকারীও নও এবং প্রার্থনাকারীও নও, তবে তা গ্রহণ করো এবং তাকে নিজ সম্পদ বানিয়ে নাও। তারপর চাইলে তুমি তা খাও এবং চাইলে দান করে দাও। আর যা এরূপ নয়, তুমি নিজেকে তার অনুগামী বানিয়ো না। (হযরত উমর রাযি. থেকে এটি বর্ণনা করেছেন তাঁর পুত্র হযরত আব্দুল্লাহ রাযি., এবং তাঁর থেকে তাঁর পুত্র সালিম রহ.।) সালিম রহ. বলেন, সুতরাং (পিতার অনুসরণে) আব্দুল্লাহ (ইবনে উমর) রাযি, কারও কাছে কিছু চাইতেন না আবার (বিনা চাওয়ায়) তাঁকে কিছু দেওয়া হলে তা প্রত্যাখ্যানও করতেন না। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৭১৬৩; সহীহ মুসলিম: ১০৪৫; সুনানে নাসাঈ: ২৬০৭; মুসনাদে আহমাদ : ১০০; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২১৯৭৪; সুনানে দারিমী: ১৬৮৭; শুআবুল ঈমান: ৩২৬৭)
হযরত উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কিছু দান করতে চাইলে আমি বলি, এটা আমার চেয়ে যার বেশি প্রয়োজন তাকে দিন। তিনি বললেন, তুমি এটা গ্রহণ করো। এই সম্পদ থেকে কোনওকিছু যদি তোমার কাছে এ অবস্থায় আসে যে, তুমি তার আকাঙ্ক্ষাকারীও নও এবং প্রার্থনাকারীও নও, তবে তা গ্রহণ করো এবং তাকে নিজ সম্পদ বানিয়ে নাও। তারপর চাইলে তুমি তা খাও এবং চাইলে দান করে দাও। আর যা এরূপ নয়, তুমি নিজেকে তার অনুগামী বানিয়ো না। (হযরত উমর রাযি. থেকে এটি বর্ণনা করেছেন তাঁর পুত্র হযরত আব্দুল্লাহ রাযি., এবং তাঁর থেকে তাঁর পুত্র সালিম রহ.।) সালিম রহ. বলেন, সুতরাং (পিতার অনুসরণে) আব্দুল্লাহ (ইবনে উমর) রাযি, কারও কাছে কিছু চাইতেন না আবার (বিনা চাওয়ায়) তাঁকে কিছু দেওয়া হলে তা প্রত্যাখ্যানও করতেন না। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৭১৬৩; সহীহ মুসলিম: ১০৪৫; সুনানে নাসাঈ: ২৬০৭; মুসনাদে আহমাদ : ১০০; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২১৯৭৪; সুনানে দারিমী: ১৬৮৭; শুআবুল ঈমান: ৩২৬৭)
مقدمة الامام النووي
58 - باب جواز الأخذ من غير مسألة وَلاَ تطلع إليه
537 - عن سالم بن عبد الله بن عمر، عن أبيه عبد الله بن عمر، عن عمر - رضي الله عنهم - قَالَ: كَانَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - يُعْطيني العَطَاءَ، فَأقُولُ: أعطِهِ مَنْ هُوَ أفْقَرُ إِلَيْهِ مِنّي. فَقَالَ: «خُذْهُ، إِذَا جَاءكَ مِنْ هَذَا المَال شَيْءٌ وَأنْتَ غَيْرُ مُشْرِفٍ وَلاَ سَائِلٍ، فَخُذْهُ فَتَمَوَّلْهُ (1)، فَإنْ شِئْتَ كُلْهُ، وَإنْ شِئْتَ تَصَدَّقْ بِهِ، وَمَا لا، فَلاَ تُتبعهُ نَفْسَكَ» قَالَ سَالِمٌ: فَكَانَ عَبدُ الله لاَ يَسألُ أحَدًا شَيْئًا، وَلاَ يَرُدُّ شَيْئًا أُعْطِيَه. متفقٌ عَلَيْهِ. (2)
(مُشرف): بالشين المعجمة: أيْ متطلع إِلَيْهِ.
(مُشرف): بالشين المعجمة: أيْ متطلع إِلَيْهِ.
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৩৮
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ নিজ হাতে পরিশ্রম করে খাওয়া এবং অন্যের কাছে প্রার্থনা করা বা দান গ্রহণের জন্য নিজেকে সম্মুখবর্তী করা হতে সংযত রাখার প্রতি উৎসাহদান
মানুষকে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা'আলার ইবাদত-বন্দেগীর জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে প্রাণে বেঁচে থাকলে এবং সুস্থ-সবল থাকলেই ইবাদত-বন্দেগী করা সম্ভব। তাই বেঁচে থাকা ও সুস্থ থাকার জন্য যা-কিছু প্রয়োজন, সেগুলো করাও শরী'আতের হুকুম। সেগুলো আঞ্জাম দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য যদি হয় ইবাদত-বন্দেগী, তবে পরোক্ষভাবে তাও ইবাদত-বন্দেগীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। এর জন্য দরকার হয় আয়-রোজগার করার। তাই কুরআন-হাদীছে আয়-রোজগার করতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে, এমনকি একে 'ফরয' শব্দেও ব্যক্ত করা হয়েছে।
উপার্জনের লক্ষ্য যেহেতু ইবাদত-বন্দেগী এবং এ কারণে উপার্জনের মধ্যে ইবাদতের মহিমা রয়েছে, তাই উপার্জন করতে হবে হালাল ও বৈধ পন্থায়, তাতে সে পন্থা যত কষ্টসাধ্যই হোক না কেন। যেমন কামার-কুমার, জেলে, সুতার, কৃষক, শ্রমিক প্রভৃতি পেশাজীবীর কাজ। হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম, হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম প্রমুখ নবীগণও কঠিন শ্রমসাধ্য কাজের বিনিময়ে রোজগার করেছেন। উপার্জনের ক্ষেত্রে তাঁরা আমাদের আদর্শ।
ভিক্ষা করে বা অন্যের সাহায্য নিয়েও জীবন নির্বাহ করা যায় বটে, কিন্তু এটা সম্মানজনক নয়। এর দ্বারা মানুষের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়। তাই নিতান্ত ঠেকা না হলে এরূপ করাকে জায়েয রাখা হয়নি। ভিক্ষা করাকে পেশা বানানো তো নয়ই, এমনকি চাওয়ার ভান পর্যন্ত করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং উৎসাহ দেওয়া হয়েছে- অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি যেন নিজ অভাবের কথা গোপন রাখে, অন্যের কাছে তা প্রকাশ না করে।
অনেক সময় মানুষ আয়-রোজগার করতে অপারগ হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে অন্যদের কর্তব্য তাকে সাহায্য করা। সাহায্য করা না হলে এরূপ লোকের জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। তাই ইসলাম এরূপ লোককে খুঁজে খুঁজে সাহায্য করতে উৎসাহ দিয়েছে।
ইমাম নাওয়াবী রহ. এ অধ্যায়ে এসব বিষয় সংক্রান্ত আয়াত ও হাদীছ উল্লেখ করেছেন।
‘নিজ হাতে পরিশ্রম করে খাওয়া…’ সম্পর্কিত একটি আয়াত
فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانْتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِنْ فَضْلِ اللَّهِ
অর্থ: 'অতঃপর নামায শেষ হয়ে গেলে তোমরা যমীনে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো।(সূরা জুমু'আ (৬২), আয়াত ১০)
ব্যাখ্যা
এর আগের আয়াতে জুমু'আর নামাযের আযান হওয়ার পর বেচাকেনা, কাজ- কারবার বন্ধ করে নামাযের জন্য মসজিদে চলে যাওয়ার হুকুম করা হয়েছে। এ আয়াতে জানানো হয়েছে, কাজ-কারবারের নিষিদ্ধতা ছিল সাময়িকভাবে কেবল নামায আদায়ের জন্য। নামায যখন আদায় হয়ে গেল, তখন আর উপার্জনের কাজে লিপ্ত হতে কোনও দোষ নেই। কাজেই নামাযের পর তোমরা আয়-রোজগারের জন্য কর্মক্ষেত্রসমূহে ছড়িয়ে পড়তে পার।
বর্ণিত আছে, ইহুদীদের জন্য তাদের সাপ্তাহিক ইবাদতের দিন শনিবারে আয়- রোজগারে লিপ্ত হওয়া নিষেধ ছিল। এ আয়াত জানাচ্ছে যে, মুসলিম উম্মাহর জন্য তাদের সাপ্তাহিক দিবসে তা নিষিদ্ধ নয়।
فَضْل الله (আল্লাহর অনুগ্রহ)-এর দ্বারা জীবিকা বোঝানো হয়েছে। বোঝা গেল জীবিকার সন্ধান খারাপ কিছু নয়। জীবিকা যেহেতু আল্লাহর অনুগ্রহ, তাই বৈধ পন্থায় এর সন্ধান তাঁর সন্তুষ্টিমূলক কাজ বলেই গণ্য হবে। এক হাদীছে বলা হয়েছে-
طَلَبُ كَسْبِ الْحَلَالِ فَرِيضَةٌ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ.
‘হালাল উপার্জনের সন্ধান অন্যান্য ফরযের পর আরেকটি ফরয।’(বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১১৬৯৫; শু'আবুল ঈমান : ৮৩৬৭)
আয়াতটিতে এর পর আছে- وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ (এবং বেশী বেশী আল্লাহর যিকির করো, যাতে তোমরা সফলতা লাভ করতে পার)। অর্থাৎ আল্লাহর যিকির ও স্মরণ কেবল নামাযের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখো না; বরং নামাযের বাইরেও মুখে ও অন্তরে বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করো।
আয়-রোজগারে আল্লাহকে স্মরণ করার একটা বিশেষ দিক হল শরী'আতের অনুসরণ করা। অর্থাৎ অবৈধ পন্থা পরিহার করে বৈধ পন্থায় বৈধ সম্পদ উপার্জন করা। বস্তুত শরী'আতের অনুসরণ করা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ যিকির। বিখ্যাত তাবি'ঈ সা'ঈদ ইবন জুবায়র রহ. বলেন, আল্লাহর যিকির হচ্ছে তাঁর আনুগত্য করা। যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য করল, সেই আল্লাহর যিকির করল। আর যে ব্যক্তি তাঁর আনুগত্য করে না, সে যিকিরকারী নয়, তাতে সে যত বেশিই তাসবীহ পড়ুক না কেন। তবে মৌখিক যিকিরও গুরুত্ব রাখে। তাই এ বিষয়েও উদাসীন হওয়া ঠিক নয়। মাসনূন দু'আও উল্লেখযোগ্য যিকির। উপার্জনের উদ্দেশ্যে হাটে-বাজারে গেলে তাও পড়া চাই। এক হাদীছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَنْ دَخَلَ السُّوقَ فَقَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ حَيٌّ لَا يَمُوتُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ كَتَبَ اللَّهُ لَهُ أَلْفَ أَلْفَ حَسَنَةٍ وَمَحَا عَنْهُ أَلْفَ أَلْفَ سَيِّئَةٍ وَرَفَعَ لَهُ أَلْفَ أَلْفَ دَرَجَةٍ
‘যে ব্যক্তি বাজারে প্রবেশকালে পাঠ করবে-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ حَيٌّ لَا يَمُوتُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
- আল্লাহ তার জন্য দশ লাখ নেকী লিখবেন, দশ লাখ গুনাহ মাফ করবেন এবং তার মর্যাদা দশ লাখ স্তর উন্নীত করবেন।’(জামে তিরমিযী: ৩৪২৮; আল-আহাদীছুল মুখতারাহ: ১৮৭; সুনানে দারিমী: ২৭৩৪)
বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাজারে প্রবেশকালে নিম্নোল্লিখিত দু'আটি পাঠ করতেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ هذَا السُّوْقِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفُسُوْقِ.
‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে চাই এই বাজারের কল্যাণ এবং তোমার আশ্রয় গ্রহণ করি কুফর ও নাফরমানি থেকে।’(তাবারানী, আল-মু'জামুল আওসাত: ৫৫৮৯; আদ-দু'আ : ৭৯৪
(فيه محمد بن أبان بن صالح الجعفي، قال ابن عدي في الكامل: ومع ضعفه يكتب حديثه. (المحرر)
আয়াতটিতে আল্লাহ তা'আলার বেশি বেশি যিকির করাকে সফলতার উপায় বলা হয়েছে। অর্থাৎ মনে মনে ও মুখে মুখে তাঁর যিকির করার মধ্যেই দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা নিহিত। কেননা অন্তরে ও মুখে আল্লাহর স্মরণ থাকলে পাপকর্ম থেকে বাঁচা ও শরী'আতের অনুসরণ করা সহজ হয়। আর দোজাহানের সফলতা তো এর দ্বারাই অর্জিত হয়। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে প্রকৃত যিকিরকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন।
আয়াতটির শিক্ষা
ক. জুমু'আর নামাযের আযান হয়ে গেলে সব কাজকর্ম ছেড়ে নামাযের প্রস্তুতি নিতে হবে।
খ. পার্থিব কাজকর্ম যেন নামায আদায়ে ব্যাঘাত না ঘটায়, সেদিকে লক্ষ রাখা চাই।
গ. আয়-রোজগারের কাজ নিন্দনীয় নয়; বরং কুরআন-হাদীছ এতে উৎসাহ যোগায়।
ঘ. পার্থিব কাজ সম্পাদনকালে আল্লাহকে স্মরণ রাখা চাই।
ঙ. আল্লাহর যিকির ও স্মরণই প্রকৃত সফলতার চাবিকাঠি।
মানুষকে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা'আলার ইবাদত-বন্দেগীর জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে প্রাণে বেঁচে থাকলে এবং সুস্থ-সবল থাকলেই ইবাদত-বন্দেগী করা সম্ভব। তাই বেঁচে থাকা ও সুস্থ থাকার জন্য যা-কিছু প্রয়োজন, সেগুলো করাও শরী'আতের হুকুম। সেগুলো আঞ্জাম দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য যদি হয় ইবাদত-বন্দেগী, তবে পরোক্ষভাবে তাও ইবাদত-বন্দেগীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। এর জন্য দরকার হয় আয়-রোজগার করার। তাই কুরআন-হাদীছে আয়-রোজগার করতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে, এমনকি একে 'ফরয' শব্দেও ব্যক্ত করা হয়েছে।
উপার্জনের লক্ষ্য যেহেতু ইবাদত-বন্দেগী এবং এ কারণে উপার্জনের মধ্যে ইবাদতের মহিমা রয়েছে, তাই উপার্জন করতে হবে হালাল ও বৈধ পন্থায়, তাতে সে পন্থা যত কষ্টসাধ্যই হোক না কেন। যেমন কামার-কুমার, জেলে, সুতার, কৃষক, শ্রমিক প্রভৃতি পেশাজীবীর কাজ। হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম, হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম প্রমুখ নবীগণও কঠিন শ্রমসাধ্য কাজের বিনিময়ে রোজগার করেছেন। উপার্জনের ক্ষেত্রে তাঁরা আমাদের আদর্শ।
ভিক্ষা করে বা অন্যের সাহায্য নিয়েও জীবন নির্বাহ করা যায় বটে, কিন্তু এটা সম্মানজনক নয়। এর দ্বারা মানুষের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়। তাই নিতান্ত ঠেকা না হলে এরূপ করাকে জায়েয রাখা হয়নি। ভিক্ষা করাকে পেশা বানানো তো নয়ই, এমনকি চাওয়ার ভান পর্যন্ত করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং উৎসাহ দেওয়া হয়েছে- অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি যেন নিজ অভাবের কথা গোপন রাখে, অন্যের কাছে তা প্রকাশ না করে।
অনেক সময় মানুষ আয়-রোজগার করতে অপারগ হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে অন্যদের কর্তব্য তাকে সাহায্য করা। সাহায্য করা না হলে এরূপ লোকের জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। তাই ইসলাম এরূপ লোককে খুঁজে খুঁজে সাহায্য করতে উৎসাহ দিয়েছে।
ইমাম নাওয়াবী রহ. এ অধ্যায়ে এসব বিষয় সংক্রান্ত আয়াত ও হাদীছ উল্লেখ করেছেন।
‘নিজ হাতে পরিশ্রম করে খাওয়া…’ সম্পর্কিত একটি আয়াত
فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانْتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِنْ فَضْلِ اللَّهِ
অর্থ: 'অতঃপর নামায শেষ হয়ে গেলে তোমরা যমীনে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো।(সূরা জুমু'আ (৬২), আয়াত ১০)
ব্যাখ্যা
এর আগের আয়াতে জুমু'আর নামাযের আযান হওয়ার পর বেচাকেনা, কাজ- কারবার বন্ধ করে নামাযের জন্য মসজিদে চলে যাওয়ার হুকুম করা হয়েছে। এ আয়াতে জানানো হয়েছে, কাজ-কারবারের নিষিদ্ধতা ছিল সাময়িকভাবে কেবল নামায আদায়ের জন্য। নামায যখন আদায় হয়ে গেল, তখন আর উপার্জনের কাজে লিপ্ত হতে কোনও দোষ নেই। কাজেই নামাযের পর তোমরা আয়-রোজগারের জন্য কর্মক্ষেত্রসমূহে ছড়িয়ে পড়তে পার।
বর্ণিত আছে, ইহুদীদের জন্য তাদের সাপ্তাহিক ইবাদতের দিন শনিবারে আয়- রোজগারে লিপ্ত হওয়া নিষেধ ছিল। এ আয়াত জানাচ্ছে যে, মুসলিম উম্মাহর জন্য তাদের সাপ্তাহিক দিবসে তা নিষিদ্ধ নয়।
فَضْل الله (আল্লাহর অনুগ্রহ)-এর দ্বারা জীবিকা বোঝানো হয়েছে। বোঝা গেল জীবিকার সন্ধান খারাপ কিছু নয়। জীবিকা যেহেতু আল্লাহর অনুগ্রহ, তাই বৈধ পন্থায় এর সন্ধান তাঁর সন্তুষ্টিমূলক কাজ বলেই গণ্য হবে। এক হাদীছে বলা হয়েছে-
طَلَبُ كَسْبِ الْحَلَالِ فَرِيضَةٌ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ.
‘হালাল উপার্জনের সন্ধান অন্যান্য ফরযের পর আরেকটি ফরয।’(বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১১৬৯৫; শু'আবুল ঈমান : ৮৩৬৭)
আয়াতটিতে এর পর আছে- وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ (এবং বেশী বেশী আল্লাহর যিকির করো, যাতে তোমরা সফলতা লাভ করতে পার)। অর্থাৎ আল্লাহর যিকির ও স্মরণ কেবল নামাযের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখো না; বরং নামাযের বাইরেও মুখে ও অন্তরে বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করো।
আয়-রোজগারে আল্লাহকে স্মরণ করার একটা বিশেষ দিক হল শরী'আতের অনুসরণ করা। অর্থাৎ অবৈধ পন্থা পরিহার করে বৈধ পন্থায় বৈধ সম্পদ উপার্জন করা। বস্তুত শরী'আতের অনুসরণ করা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ যিকির। বিখ্যাত তাবি'ঈ সা'ঈদ ইবন জুবায়র রহ. বলেন, আল্লাহর যিকির হচ্ছে তাঁর আনুগত্য করা। যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য করল, সেই আল্লাহর যিকির করল। আর যে ব্যক্তি তাঁর আনুগত্য করে না, সে যিকিরকারী নয়, তাতে সে যত বেশিই তাসবীহ পড়ুক না কেন। তবে মৌখিক যিকিরও গুরুত্ব রাখে। তাই এ বিষয়েও উদাসীন হওয়া ঠিক নয়। মাসনূন দু'আও উল্লেখযোগ্য যিকির। উপার্জনের উদ্দেশ্যে হাটে-বাজারে গেলে তাও পড়া চাই। এক হাদীছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَنْ دَخَلَ السُّوقَ فَقَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ حَيٌّ لَا يَمُوتُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ كَتَبَ اللَّهُ لَهُ أَلْفَ أَلْفَ حَسَنَةٍ وَمَحَا عَنْهُ أَلْفَ أَلْفَ سَيِّئَةٍ وَرَفَعَ لَهُ أَلْفَ أَلْفَ دَرَجَةٍ
‘যে ব্যক্তি বাজারে প্রবেশকালে পাঠ করবে-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ حَيٌّ لَا يَمُوتُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
- আল্লাহ তার জন্য দশ লাখ নেকী লিখবেন, দশ লাখ গুনাহ মাফ করবেন এবং তার মর্যাদা দশ লাখ স্তর উন্নীত করবেন।’(জামে তিরমিযী: ৩৪২৮; আল-আহাদীছুল মুখতারাহ: ১৮৭; সুনানে দারিমী: ২৭৩৪)
বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাজারে প্রবেশকালে নিম্নোল্লিখিত দু'আটি পাঠ করতেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ هذَا السُّوْقِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفُسُوْقِ.
‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে চাই এই বাজারের কল্যাণ এবং তোমার আশ্রয় গ্রহণ করি কুফর ও নাফরমানি থেকে।’(তাবারানী, আল-মু'জামুল আওসাত: ৫৫৮৯; আদ-দু'আ : ৭৯৪
(فيه محمد بن أبان بن صالح الجعفي، قال ابن عدي في الكامل: ومع ضعفه يكتب حديثه. (المحرر)
আয়াতটিতে আল্লাহ তা'আলার বেশি বেশি যিকির করাকে সফলতার উপায় বলা হয়েছে। অর্থাৎ মনে মনে ও মুখে মুখে তাঁর যিকির করার মধ্যেই দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা নিহিত। কেননা অন্তরে ও মুখে আল্লাহর স্মরণ থাকলে পাপকর্ম থেকে বাঁচা ও শরী'আতের অনুসরণ করা সহজ হয়। আর দোজাহানের সফলতা তো এর দ্বারাই অর্জিত হয়। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে প্রকৃত যিকিরকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন।
আয়াতটির শিক্ষা
ক. জুমু'আর নামাযের আযান হয়ে গেলে সব কাজকর্ম ছেড়ে নামাযের প্রস্তুতি নিতে হবে।
খ. পার্থিব কাজকর্ম যেন নামায আদায়ে ব্যাঘাত না ঘটায়, সেদিকে লক্ষ রাখা চাই।
গ. আয়-রোজগারের কাজ নিন্দনীয় নয়; বরং কুরআন-হাদীছ এতে উৎসাহ যোগায়।
ঘ. পার্থিব কাজ সম্পাদনকালে আল্লাহকে স্মরণ রাখা চাই।
ঙ. আল্লাহর যিকির ও স্মরণই প্রকৃত সফলতার চাবিকাঠি।
খেটে খাওয়াই উত্তম, তা যত কষ্টসাধ্যই হোক
হাদীছ নং: ৫৩৮
হযরত যুবায়র ইবনুল আউওয়াম রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ নিজ রশি নিয়ে পাহাড়ে চলে যাবে, তারপর নিজ পিঠে করে কাঠের বোঝা বয়ে এনে তা বাজারে বিক্রি করবে আর এভাবে আল্লাহ তা'আলা তা দ্বারা তার চেহারাকে (অন্যের মুখাপেক্ষী হওয়ার বেইজ্জতি থেকে) রক্ষা করবেন, এটা তার পক্ষে মানুষের কাছে প্রার্থনা করা অপেক্ষা উত্তম, যারা তাকে দিতেও পারে কিংবা নাও দিতে পারে। -বুখারী
(সহীহ বুখারী: ২০৭৫; সহীহ মুসলিম: ১০৪২; জামে তিরমিযী: ৬৮০; মুসনাদে আহমাদ: ১৪২৯; সুনানে ইবন মাজাহ ১৮৩৬; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা ১০৬৭৭; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ২৫০; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ১১৬৯; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ১৬১৭)
হাদীছ নং: ৫৩৮
হযরত যুবায়র ইবনুল আউওয়াম রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ নিজ রশি নিয়ে পাহাড়ে চলে যাবে, তারপর নিজ পিঠে করে কাঠের বোঝা বয়ে এনে তা বাজারে বিক্রি করবে আর এভাবে আল্লাহ তা'আলা তা দ্বারা তার চেহারাকে (অন্যের মুখাপেক্ষী হওয়ার বেইজ্জতি থেকে) রক্ষা করবেন, এটা তার পক্ষে মানুষের কাছে প্রার্থনা করা অপেক্ষা উত্তম, যারা তাকে দিতেও পারে কিংবা নাও দিতে পারে। -বুখারী
(সহীহ বুখারী: ২০৭৫; সহীহ মুসলিম: ১০৪২; জামে তিরমিযী: ৬৮০; মুসনাদে আহমাদ: ১৪২৯; সুনানে ইবন মাজাহ ১৮৩৬; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা ১০৬৭৭; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ২৫০; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ১১৬৯; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ১৬১৭)
مقدمة الامام النووي
59 - باب الحث عَلَى الأكل من عمل يده والتعفف به عن السؤال والتعرض للإعطاء
قَالَ الله تَعَالَى: {فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلاةُ فَانْتَشِرُوا في الأَرْضِ وَابْتَغُوا مِنْ فَضْلِ الله} [الجمعة: 10].
قَالَ الله تَعَالَى: {فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلاةُ فَانْتَشِرُوا في الأَرْضِ وَابْتَغُوا مِنْ فَضْلِ الله} [الجمعة: 10].
538 - وعن أَبي عبد الله الزبير بن العَوَّام - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «لأَنْ يَأخُذَ أحَدُكُمْ أُحبُلَهُ ثُمَّ يَأتِيَ الجَبَلَ، فَيَأْتِيَ بحُزمَةٍ مِنْ حَطَب عَلَى ظَهْرِهِ فَيَبِيعَهَا، فَيكُفّ اللهُ بِهَا وَجْهَهُ، خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَسْألَ النَّاسَ، أعْطَوْهُ أَوْ مَنَعُوهُ». رواه البخاري. (1)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৩৯
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায়: ৫৯ নিজ হাতে পরিশ্রম করে খাওয়া এবং অন্যের কাছে প্রার্থনা করা বা দান গ্রহণের জন্য নিজেকে সম্মুখবর্তী করা হতে সংযত রাখার প্রতি উৎসাহদান
খেটে খাওয়াই উত্তম, তা যত কষ্টসাধ্যই হোক
হাদীছ নং: ৫৩৯
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কারও নিজ পিঠে করে কাঠের বোঝা বয়ে আনাটা কারও কাছে প্রার্থনা করা অপেক্ষা উত্তম, যে তাকে দিতেও পারে কিংবা নাও দিতে পারে। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ২০৭৪; সহীহ মুসলিম: ১০৪২; সুনানে নাসাঈ ২৫৮৪; মুসনাদে আহমাদ: ৯৮৬৮; মুসনাদে আবূ ইয়া'লা: ৬২৪২; তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত: ৭১৯৩)
হাদীছ নং: ৫৩৯
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কারও নিজ পিঠে করে কাঠের বোঝা বয়ে আনাটা কারও কাছে প্রার্থনা করা অপেক্ষা উত্তম, যে তাকে দিতেও পারে কিংবা নাও দিতে পারে। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ২০৭৪; সহীহ মুসলিম: ১০৪২; সুনানে নাসাঈ ২৫৮৪; মুসনাদে আহমাদ: ৯৮৬৮; মুসনাদে আবূ ইয়া'লা: ৬২৪২; তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত: ৭১৯৩)
مقدمة الامام النووي
59 - باب الحث عَلَى الأكل من عمل يده والتعفف به عن السؤال والتعرض للإعطاء
539 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «لأَنْ يَحْتَطِبَ أحَدُكُمْ حُزْمَةً عَلَى ظَهْرِهِ، خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَسْألَ أحدًا، فَيُعْطِيَهُ أَوْ يَمْنَعَهُ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৪০
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায়: ৫৯ নিজ হাতে পরিশ্রম করে খাওয়া এবং অন্যের কাছে প্রার্থনা করা বা দান গ্রহণের জন্য নিজেকে সম্মুখবর্তী করা হতে সংযত রাখার প্রতি উৎসাহদান
খেটে খাওয়ার মাহাত্ম্য ও হযরত দাউদ আ.-এর জীবনাদর্শ
হাদীছ নং: ৫৪০
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী ইরশাদ করেন, হযরত দাউদ আলাইহিস-সালাম নিজ হাতের উপার্জন ছাড়া খেতেন না। -বুখারী
(সহীহ বুখারী: ২০৭৩; সহীহ ইবন হিব্বান ৬২২৭; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৬৩১; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ১১৭০; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ২০২৭)
হাদীছ নং: ৫৪০
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী ইরশাদ করেন, হযরত দাউদ আলাইহিস-সালাম নিজ হাতের উপার্জন ছাড়া খেতেন না। -বুখারী
(সহীহ বুখারী: ২০৭৩; সহীহ ইবন হিব্বান ৬২২৭; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৬৩১; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ১১৭০; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ২০২৭)
مقدمة الامام النووي
59 - باب الحث عَلَى الأكل من عمل يده والتعفف به عن السؤال والتعرض للإعطاء
540 - وعنه، عن النبيِّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «كَانَ دَاوُدُ - عليه السلام - لاَ يَأكُلُ إِلاَّ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ». رواه البخاري. (1)
তাহকীক: