রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ৫৩৩
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায় : ৫৭ অল্পেতুষ্টি, অন্যের কাছে চাওয়া বা আশা করা হতে নিজেকে রক্ষা করা, জীবনযাত্রায় মধ্যপন্থা ও মিতব্যয়ের প্রতি উৎসাহদান এবং অপ্রয়োজনে মানুষের কাছে চাওয়ার নিন্দা
অভাব-অনটনের কথা মানুষের কাছে প্রকাশ না করে আল্লাহ তা'আলার কাছে প্রার্থনা করার প্রতি উৎসাহদান
হাদীছ নং: ৫৩৩
হযরত ইবন মাস'উদ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাভ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যাকে অনাহার স্পর্শ করে, তারপর সে তা মানুষের সামনে প্রকাশ করে, তার অনাহার ঘুচবে না। আর যে ব্যক্তি তা আল্লাহ তা'আলার কাছে পেশ করে, আল্লাহ তা'আলা শীঘ্র হোক বা বিলম্বে, তাকে অবশ্যই রিযিক দান করবেন।-আবু দাউদ ও তিরমিযী
(সুনানে আবু দাউদ: ১৬৪৫; জামে তিরমিযী: ২৩২৬; মুসনাদে আহমাদ: ৩৮৬৯; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা: ৭৮৬৯; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ৪১১০)
হাদীছ নং: ৫৩৩
হযরত ইবন মাস'উদ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাভ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যাকে অনাহার স্পর্শ করে, তারপর সে তা মানুষের সামনে প্রকাশ করে, তার অনাহার ঘুচবে না। আর যে ব্যক্তি তা আল্লাহ তা'আলার কাছে পেশ করে, আল্লাহ তা'আলা শীঘ্র হোক বা বিলম্বে, তাকে অবশ্যই রিযিক দান করবেন।-আবু দাউদ ও তিরমিযী
(সুনানে আবু দাউদ: ১৬৪৫; জামে তিরমিযী: ২৩২৬; মুসনাদে আহমাদ: ৩৮৬৯; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা: ৭৮৬৯; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ৪১১০)
مقدمة الامام النووي
57 - باب القناعة والعَفاف والاقتصاد في المعيشة والإنفاق وذم السؤال من غير ضرورة
533 - وعن ابن مسعود - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «مَنْ أصَابَتْهُ فَاقَةٌ فَأنْزَلَهَا بالنَّاسِ لَمْ تُسَدَّ فَاقَتُهُ، وَمَنْ أَنْزَلَهَا باللهِ، فَيُوشِكُ اللهُ لَهُ بِرِزْقٍ عَاجِلٍ أَوْ آجِلٍ». رواه أَبُو داود والترمذي، (1) وقال: «حديث حسن».
«يُوشِكُ» بكسر الشين: أيْ يُسْرعُ.
«يُوشِكُ» بكسر الشين: أيْ يُسْرعُ.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
কারও যদি দারিদ্র্য ও অভাব-অনটন দেখা দেয়, তখন তার কী করণীয়, এ হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তা শিক্ষা দিয়েছেন। মানুষ অভাব-অনটনে পড়লে অন্যের কাছে আশাবাদী হয়। তার কষ্টের কথা অন্যের কাছে বলে বেড়ায় এবং তা দূর করার জন্য তাদের সাহায্য চায়। কিন্তু এতে তার বিশেষ ফায়দা হয় না। এটা একটা বাস্তব সত্য। এ সত্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
مَنْ أَصَابَتْهُ فَاقَةٌ فَأَنْزَلَهَا بِالنَّاسِ لَمْ تُسَدَّ فَاقَتُهُ (যাকে অনাহার স্পর্শ করে, তারপর সে তা মানুষের সামনে প্রকাশ করে, তার অনাহার ঘুচবে না)। অর্থাৎ মানুষের কাছে প্রকাশ করার দ্বারা কারও অভাব-অনটন ও অনাহারের কষ্ট দূর হতে পারে না। উল্টো এ কারণে আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও ক্রোধ অনিবার্য হয়ে যায়। ফলে তার অভাব-অনটন স্থায়ী হয়ে যায়। কেননা তার উচিত ছিল আল্লাহ তা'আলার শরণাপন্ন হওয়া। তিনিই সর্বশক্তিমান। সকলের জীবিকা তাঁরই হাতে। সকল মাখলুক তাঁরই মুখাপেক্ষী। তাই যে-কোনও প্রয়োজনে মানুষের উচিত তাঁরই দিকে রুজু' হওয়া। কাজেই তাঁর পরিবর্তে কেউ যদি নিজ কষ্ট লাঘবের জন্য নিজেরই মতো অক্ষম কোনও মাখলুকের শরণাপন্ন হয়, তবে সে তো ভুল দরজায় করাঘাত করল। আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া মাখলুক কিছুই করার ক্ষমতা রাখে না। কাজেই যার দরজায় সে করাঘাত করেছে, সে তার জন্য কিছুই করতে পারবে না। অপরদিকে যেই মহা মালিক কিছু করার ক্ষমতা রাখেন, তাঁর কাছে না চাওয়ার কারণে তিনি তার প্রতি নাখোশ হয়ে যাবেন। আল্লাহ তা'আলা এমনই সত্তা, যাঁর কাছে না চাইলে তিনি নাখোশ হন। আর মাখলুক এমন যে, তাদের কাছে চাইলে তারা নাখোশ হয়। এক হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَنْ لَمْ يَسْأَلِ اللَّهَ يَغْضَبْ عَلَيْهِ
যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে চায় না, আল্লাহ তার প্রতি নাখোশ হন।(জামে' তিরমিযী: ৩৩৭৩; বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ: ৬৫৮ )
এক ব্যক্তি তার প্রয়োজন পূরণের জন্য রাজা-বাদশার কাছে আসা-যাওয়া করত। ওয়াহাব ইবন মুনাব্বিহ রহ. তাকে লক্ষ্য করে বললেন, ছিঃ! তোমার জন্য যে দরজা বন্ধ করে রাখে, যে তোমার কাছে তার ধন-সম্পদের কথা গোপন রাখে, তুমি তার কাছে ধরনা দিচ্ছ, অথচ যিনি তোমার জন্য দিবারাত্র দরজা খোলা রাখেন এবং তোমার সামনে তাঁর ঐশ্বর্য প্রকাশ করেন, তাঁর থেকে দূরে থাকছ!
মানুষ তো নিজে নিজেরও কষ্ট লাঘব করা ও কল্যাণ সাধন করার ক্ষমতা রাখে না। সে অন্যের কী উপকার করবে বা অন্যের কী কষ্ট দূর করবে? তাই নিজ দুঃখ-কষ্টের কথা কখনও অন্য মানুষের কাছে প্রকাশ করা উচিত নয়। তা প্রকাশ করতে হবে কেবলই সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা'আলার কাছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
وَمَنْ أَنْزَلَهَا بِاللهِ ، فَيُوْشِكُ اللَّهُ لَهُ بِرِزْقٍ عَاجِلٍ أَوْ آجِلٍ (আর যে ব্যক্তি তা আল্লাহ তা'আলার কাছে পেশ করে, আল্লাহ তা'আলা শীঘ্র হোক বা বিলম্বে, তাকে অবশ্যই রিযিক দান করবেন)। কেননা আল্লাহ তা'আলার কাছে চাইলে আল্লাহ তা'আলা খুশি হন। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
سَلُوا اللَّهَ مِنْ فَضْلِهِ، فَإِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يُحِبُّ أَنْ يُسْأَلَ
তোমরা আল্লাহ তা'আলার কাছে তাঁর অনুগ্রহ চাও। কেননা আল্লাহ তা'আলা তাঁর কাছে চাওয়া পসন্দ করেন।( জামে' তিরমিযী: ৩৫৭১; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ১০৮৮; শু'আবুল ঈমান : ১০৮৬)
কুরআন মাজীদেও আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
وَاسْأَلُوا اللَّهَ مِنْ فَضْلِهِ
তোমরা আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ চাও।(সূরা নিসা (৪), আয়াত ৩২)
সুতরাং যে-কোনও প্রয়োজনে আমাদেরকে ধরনা ধরতে হবে আল্লাহ তা'আলারই কাছে। বিপদ-আপদ হোক বা অভাব-অনটন, অসুখ-বিসুখ হোক বা দুর্যোগ-দুর্বিপাক, সর্বাবস্থায় তাঁরই দরজায় করাঘাত করতে হবে। তাঁর দরজার ফকীর কখনও খালিহাতে ফেরে না। তিনি অকল্পনীয়ভাবে বান্দার প্রয়োজন সমাধা করেন। ইরশাদ হয়েছে-
وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا (2) وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ
যে-কেউ আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তার জন্য সংকট থেকে উত্তরণের কোনও পথ তৈরি করে দেবেন। এবং তাকে এমন স্থান থেকে রিযিক দান করবেন, যা তার ধারণার বাইরে।(সূরা তালাক (৬৫), আয়াত ২-৩)
একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অমুক গোত্র আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে আমার পুত্র ও আমার উট লুট করে নিয়ে গেছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মুহাম্মাদের পরিবারে এত এতটি ঘর-সংসার আছে। অথচ তাদের এক মুদ পরিমাণ খাবারও নেই। সুতরাং যাও, আল্লাহর কাছে চাও। লোকটি তার বাড়িতে ফিরে গেলে স্ত্রী জিজ্ঞেস করল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে কী বলেছেন? সে তাকে তিনি যা বলেছেন তা জানাল। সে বলল, তিনি বড় সুন্দর উত্তর তোমাকে দিয়েছেন। ক্ষণিক পরেই আল্লাহ তা'আলা তার পুত্রকে ও তার উটটি আরও সুস্থ-সবলরূপে তার কাছে ফিরিয়ে দিলেন। সে এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ কথা জানাল। তিনি মিম্বরে চড়ে আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা করলেন এবং মানুষকে আল্লাহ তা'আলার কাছে চাইতে বললেন ও এজন্য উৎসাহ দিলেন। তারপর উপরের আয়াত পড়ে শোনালেন।(হাকিম, আল-মুসতাদরাক : ১৯৯৩; বায়হাকী, দালাইলুন নুবুউওয়াহ, ৬ খণ্ড, ১০৬ পৃষ্ঠা।)
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. আমরা সাহায্য পাওয়ার আশায় কখনও মানুষের কাছে নিজেদের অভাব-অনটনের কথা প্রকাশ করব না।
খ. যে-কোনও প্রয়োজন সমাধার জন্য আমাদেরকে আল্লাহ তা'আলার কাছেই দু'আ করতে হবে।
গ. আল্লাহ তা'আলার কাছে প্রয়োজন সমাধার জন্য দু'আ করলে সে দু'আ কখনও ব্যর্থ যায় না। কোনও না কোনওভাবে তার সুফল পাওয়া যাবেই।
مَنْ أَصَابَتْهُ فَاقَةٌ فَأَنْزَلَهَا بِالنَّاسِ لَمْ تُسَدَّ فَاقَتُهُ (যাকে অনাহার স্পর্শ করে, তারপর সে তা মানুষের সামনে প্রকাশ করে, তার অনাহার ঘুচবে না)। অর্থাৎ মানুষের কাছে প্রকাশ করার দ্বারা কারও অভাব-অনটন ও অনাহারের কষ্ট দূর হতে পারে না। উল্টো এ কারণে আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও ক্রোধ অনিবার্য হয়ে যায়। ফলে তার অভাব-অনটন স্থায়ী হয়ে যায়। কেননা তার উচিত ছিল আল্লাহ তা'আলার শরণাপন্ন হওয়া। তিনিই সর্বশক্তিমান। সকলের জীবিকা তাঁরই হাতে। সকল মাখলুক তাঁরই মুখাপেক্ষী। তাই যে-কোনও প্রয়োজনে মানুষের উচিত তাঁরই দিকে রুজু' হওয়া। কাজেই তাঁর পরিবর্তে কেউ যদি নিজ কষ্ট লাঘবের জন্য নিজেরই মতো অক্ষম কোনও মাখলুকের শরণাপন্ন হয়, তবে সে তো ভুল দরজায় করাঘাত করল। আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া মাখলুক কিছুই করার ক্ষমতা রাখে না। কাজেই যার দরজায় সে করাঘাত করেছে, সে তার জন্য কিছুই করতে পারবে না। অপরদিকে যেই মহা মালিক কিছু করার ক্ষমতা রাখেন, তাঁর কাছে না চাওয়ার কারণে তিনি তার প্রতি নাখোশ হয়ে যাবেন। আল্লাহ তা'আলা এমনই সত্তা, যাঁর কাছে না চাইলে তিনি নাখোশ হন। আর মাখলুক এমন যে, তাদের কাছে চাইলে তারা নাখোশ হয়। এক হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَنْ لَمْ يَسْأَلِ اللَّهَ يَغْضَبْ عَلَيْهِ
যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে চায় না, আল্লাহ তার প্রতি নাখোশ হন।(জামে' তিরমিযী: ৩৩৭৩; বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ: ৬৫৮ )
এক ব্যক্তি তার প্রয়োজন পূরণের জন্য রাজা-বাদশার কাছে আসা-যাওয়া করত। ওয়াহাব ইবন মুনাব্বিহ রহ. তাকে লক্ষ্য করে বললেন, ছিঃ! তোমার জন্য যে দরজা বন্ধ করে রাখে, যে তোমার কাছে তার ধন-সম্পদের কথা গোপন রাখে, তুমি তার কাছে ধরনা দিচ্ছ, অথচ যিনি তোমার জন্য দিবারাত্র দরজা খোলা রাখেন এবং তোমার সামনে তাঁর ঐশ্বর্য প্রকাশ করেন, তাঁর থেকে দূরে থাকছ!
মানুষ তো নিজে নিজেরও কষ্ট লাঘব করা ও কল্যাণ সাধন করার ক্ষমতা রাখে না। সে অন্যের কী উপকার করবে বা অন্যের কী কষ্ট দূর করবে? তাই নিজ দুঃখ-কষ্টের কথা কখনও অন্য মানুষের কাছে প্রকাশ করা উচিত নয়। তা প্রকাশ করতে হবে কেবলই সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা'আলার কাছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
وَمَنْ أَنْزَلَهَا بِاللهِ ، فَيُوْشِكُ اللَّهُ لَهُ بِرِزْقٍ عَاجِلٍ أَوْ آجِلٍ (আর যে ব্যক্তি তা আল্লাহ তা'আলার কাছে পেশ করে, আল্লাহ তা'আলা শীঘ্র হোক বা বিলম্বে, তাকে অবশ্যই রিযিক দান করবেন)। কেননা আল্লাহ তা'আলার কাছে চাইলে আল্লাহ তা'আলা খুশি হন। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
سَلُوا اللَّهَ مِنْ فَضْلِهِ، فَإِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يُحِبُّ أَنْ يُسْأَلَ
তোমরা আল্লাহ তা'আলার কাছে তাঁর অনুগ্রহ চাও। কেননা আল্লাহ তা'আলা তাঁর কাছে চাওয়া পসন্দ করেন।( জামে' তিরমিযী: ৩৫৭১; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ১০৮৮; শু'আবুল ঈমান : ১০৮৬)
কুরআন মাজীদেও আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
وَاسْأَلُوا اللَّهَ مِنْ فَضْلِهِ
তোমরা আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ চাও।(সূরা নিসা (৪), আয়াত ৩২)
সুতরাং যে-কোনও প্রয়োজনে আমাদেরকে ধরনা ধরতে হবে আল্লাহ তা'আলারই কাছে। বিপদ-আপদ হোক বা অভাব-অনটন, অসুখ-বিসুখ হোক বা দুর্যোগ-দুর্বিপাক, সর্বাবস্থায় তাঁরই দরজায় করাঘাত করতে হবে। তাঁর দরজার ফকীর কখনও খালিহাতে ফেরে না। তিনি অকল্পনীয়ভাবে বান্দার প্রয়োজন সমাধা করেন। ইরশাদ হয়েছে-
وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا (2) وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ
যে-কেউ আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তার জন্য সংকট থেকে উত্তরণের কোনও পথ তৈরি করে দেবেন। এবং তাকে এমন স্থান থেকে রিযিক দান করবেন, যা তার ধারণার বাইরে।(সূরা তালাক (৬৫), আয়াত ২-৩)
একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অমুক গোত্র আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে আমার পুত্র ও আমার উট লুট করে নিয়ে গেছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মুহাম্মাদের পরিবারে এত এতটি ঘর-সংসার আছে। অথচ তাদের এক মুদ পরিমাণ খাবারও নেই। সুতরাং যাও, আল্লাহর কাছে চাও। লোকটি তার বাড়িতে ফিরে গেলে স্ত্রী জিজ্ঞেস করল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে কী বলেছেন? সে তাকে তিনি যা বলেছেন তা জানাল। সে বলল, তিনি বড় সুন্দর উত্তর তোমাকে দিয়েছেন। ক্ষণিক পরেই আল্লাহ তা'আলা তার পুত্রকে ও তার উটটি আরও সুস্থ-সবলরূপে তার কাছে ফিরিয়ে দিলেন। সে এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ কথা জানাল। তিনি মিম্বরে চড়ে আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা করলেন এবং মানুষকে আল্লাহ তা'আলার কাছে চাইতে বললেন ও এজন্য উৎসাহ দিলেন। তারপর উপরের আয়াত পড়ে শোনালেন।(হাকিম, আল-মুসতাদরাক : ১৯৯৩; বায়হাকী, দালাইলুন নুবুউওয়াহ, ৬ খণ্ড, ১০৬ পৃষ্ঠা।)
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. আমরা সাহায্য পাওয়ার আশায় কখনও মানুষের কাছে নিজেদের অভাব-অনটনের কথা প্রকাশ করব না।
খ. যে-কোনও প্রয়োজন সমাধার জন্য আমাদেরকে আল্লাহ তা'আলার কাছেই দু'আ করতে হবে।
গ. আল্লাহ তা'আলার কাছে প্রয়োজন সমাধার জন্য দু'আ করলে সে দু'আ কখনও ব্যর্থ যায় না। কোনও না কোনওভাবে তার সুফল পাওয়া যাবেই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)