মা'আরিফুল হাদীস

معارف الحديث

সলাত অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস ৩৫১ টি

হাদীস নং: ১০১
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ইমাম কর্তৃক মুক্তাদীর প্রতি লক্ষ্য রাখা
১০১. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী কারীম ﷺ এর চাইতে সংক্ষিপ্ত অথচ পূর্ণাঙ্গ সালাত আর কোঁন ইমামের পেছনে কখনো আদায় করি নি। আর তা এজন্য যে, তিনি শিশুর কান্না শুনতে পেতেন এবং তার মায়ের অস্থির হয়ে পড়ার (ও তার সালাত নষ্ট হওয়ার) আশংকায় সংক্ষেপ করতেন। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أَنَسِ « مَا صَلَّيْتُ وَرَاءَ إِمَامٍ قَطُّ أَخَفَّ صَلاَةً ، وَلاَ أَتَمَّ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَإِنْ كَانَ لَيَسْمَعُ بُكَاءَ الصَّبِيِّ ، فَيُخَفِّفُ مَخَافَةَ أَنْ تُفْتَنَ أُمُّهُ » (رواه البخارى ومسلم)
হাদীস নং: ১০২
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মুক্তাদীর প্রতি নির্দেশক
১০২. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: তোমরা ইমামের থেকে আগে বেড়ে যেও না (বরং তার অনুগামী হবে) সে তাকবীর বললে তোমরাও তাকবীর বলবে। সে 'ওয়ালাদ্দাল্লীন' বললে তোমরা 'আমীন' বলবে। সে রুকূ করলে তোমরা রুকূ করবে। সে 'সামি আল্লাহু লিমান হামিদা' বললে তোমরা 'আল্লাহুম্মা রাব্বান্না লাকাল হামদ' বলবে। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَة قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " لَا تُبَادِرُوا الْإِمَامَ إِذَا كَبَّرَ فَكَبِّرُوا وَإِذَا قَالَ : وَلَا الضَّالِّينَ فَقُولُوا : آمِينَ ، وَإِذَا رَكَعَ فَارْكَعُوا ، وَإِذَا قَالَ : سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ ، فَقُولُوا : اللهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ "
হাদীস নং: ১০৩
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ইমাম কর্তৃক মুক্তাদীর প্রতি লক্ষ্য রাখা
১০৩. হযরত আলী ও মু'আয ইবনে জাবাল (রা) থেকে বর্ণিত। তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: তোমাদের কেউ সালাত আদায় করতে এসে ইমামকে কোন এক অবস্থায় পেলে, ইমাম যেরূপ করে সেও যেন তদ্রুপ করে। (তাকে রুকু, সিজদা ইত্যাদি অবস্থায় পাবে সেই অবস্থায় তার সাথে সালাতে অংশগ্রহণ করবে)। (তিরমিযী)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ عَلِيٍّ وَعَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ ، قَالاَ : قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِذَا أَتَى أَحَدُكُمُ الصَّلاَةَ وَالإِمَامُ عَلَى حَالٍ فَلْيَصْنَعْ كَمَا يَصْنَعُ الإِمَامُ.
(رواه الترمذى)
tahqiq

তাহকীক:

হাদীস নং: ১০৪
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ইমাম কর্তৃক মুক্তাদীর প্রতি লক্ষ্য রাখা
১০৪. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: তোমরা যদি সালাতে এসে আমাদেরকে সিজদারত পাও, তবে সিজদা করে নিবে কিন্তু তা (রাকা'আত হিসেবে) গণনা করবে না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি (ইমামের সাথে) রুকু পেল সে সালাতের (ঐ রাক'আত) পেল। (আবু দাউদ)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « مَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً مِنَ الصَّلَاةِ ، فَقَدْ أَدْرَكَ الصَّلَاةَ »
(رواه ابوداؤد)
হাদীস নং: ১০৫
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সালাত কীরূপে আদায় করবে?
১০৫. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল আর তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ মসজিদের এক প্রান্তে বসা ছিলেন। লোকটি সালাত আদায় করল। তারপর এসে তাঁকে সালাম দিল। তিনি তার সালামের জবাব দিয়ে বললেন: তুমি চলে যাও এবং সালাত আদায় করে এসো, কেননা তুমি (সঠিকভাবে) সালাত আদায় করনি। লোকটি চলে গেল এবং সালাত আদায় করল। এরপর এসে তাঁকে সালাম দিল। তিনি তাঁর সালামের জবাব দিয়ে বললেন: তুমি যাও এবং পুনর্বার সালাত আদায় করে এসো, কেননা তুমি তো সঠিকভাবে সালাত আদায় করনি। তৃতীয়বার অথবা এর পরের বার লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কিভাবে সালাত আদায় করব সে বিষয়ে আমাকে অবহিত করুন (কেননা আমি যেভাবে জানি, যেভাবেও কয়েকবার আদায় করেছি)। তিনি বললেন: তুমি সালাতে দাঁড়াবার প্রাক্কালে উত্তমভাবে উযূ করে নিবে। এরপর কিবলামুখী হয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলে সালাত শুরু করবে। এরপর কুরআন থেকে যতটুকু তোমার পক্ষে সহজ ততটুকু পাঠ করবে (কোন কোন বর্ণনায় আছে সূরা ফাতিহা পাঠ করবে এবং এর সাথে যা ইচ্ছা পাঠ করবে) তারপর রুকু করবে এবং ধীরস্থিরভাবে রুকূ আদায় করবে। এরপর রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর সিজদা করবে যাতে সিজদার প্রশান্তি আসে। এরপর সিজদা থেকে উঠে স্থিরভাবে বসবে এবং পুনরায় সিজদায় গিয়ে স্থিরভাবে সিজদা করবে। অন্য বর্ণনায় আছে, তারপর রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। এরপর পুরা সালাত এভাবে (রুকু, সিজদা, কাওমা, জালসাসহ সব রকম ধীরস্থিরভাবে) আদায় করবে। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ : أَنَّ رَجُلًا دَخَلَ المَسْجِدَ ، وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسٌ فِي نَاحِيَةِ المَسْجِدِ ، فَصَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ ، فَقَالَ : « وَعَلَيْكَ السَّلاَمُ ، ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ » فَرَجَعَ فَصَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ ، فَقَالَ : « وَعَلَيْكَ السَّلاَمُ ، ارْجِعْ فَصَلِّ ، فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ » فَقَالَ فِي الثَّالِثَةِ ، أَوْ فِي الَّتِي بَعْدَهَا : عَلِّمْنِي يَا رَسُولَ اللَّهِ ، فَقَالَ : « إِذَا قُمْتَ إِلَى الصَّلاَةِ فَأَسْبِغِ الوُضُوءَ ، ثُمَّ اسْتَقْبِلِ القِبْلَةَ فَكَبِّرْ ، ثُمَّ اقْرَأْ بِمَا تَيَسَّرَ مَعَكَ مِنَ القُرْآنِ ، ثُمَّ ارْكَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ رَاكِعًا ، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَسْتَوِيَ قَائِمًا ، ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا ، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا ، ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا ، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا ، « وَفِىْ رِوَايَةٍ ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَسْتَوِيَ قَائِمًا » ثُمَّ افْعَلْ ذَلِكَ فِي صَلاَتِكَ كُلِّهَا » . (رواه البخارى ومسلم)
হাদীস নং: ১০৬
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ রাসূলুল্লাহ কিভাবে সালাত আদায় করতেন?
১০৬. হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকবীর দ্বারা সালাত এবং আল-হামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন (সূরা ফাতিহা) দ্বারা কিরা'আত আরম্ভ করতেন। যখন রুকূ' করতেন তখন তাঁর মাথা মুবারক উঠিয়েও রাখতেন না, ঝুঁকিয়েও রাখতেন না বরং মাঝামাঝি রাখতেন। আর যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন, তখন সোজা হয়ে না দাঁড়িয়ে সিজদায় যেতেন না। তিনি প্রতি দুই রাক'আতে 'আত-তাহিয়্যাতু' (তাশাহুদ) পাঠ করতেন। তখন তিনি বাম পা বিছিয়ে রাখতেন এবং ডান পা খাড়া করে রাখতেন। তিনি শয়তানের মত নিতম্বের উপর বসতে নিষেধ করতেন। পুরুষকে তার (কনুই পর্যন্ত) দুই হাত হিংস্র জন্তুর মত বিছিয়ে রাখতে নিষেধ করেছেন। তিনি সালামের দ্বারা সালাত শেষ করতেন। (মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ « يَسْتَفْتِحُ الصَّلَاةَ بِالتَّكْبِيرِ. وَالْقِرَاءَةِ ، بِالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ، وَكَانَ إِذَا رَكَعَ لَمْ يُشْخِصْ رَأْسَهُ ، وَلَمْ يُصَوِّبْهُ وَلَكِنْ بَيْنَ ذَلِكَ ، وَكَانَ إِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوعِ لَمْ يَسْجُدْ ، حَتَّى يَسْتَوِيَ قَائِمًا ، وَكَانَ إِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ السَّجْدَةِ ، لَمْ يَسْجُدْ حَتَّى يَسْتَوِيَ جَالِسًا ، وَكَانَ يَقُولُ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ التَّحِيَّةَ ، وَكَانَ يَفْرِشُ رِجْلَهُ الْيُسْرَى وَيَنْصِبُ رِجْلَهُ الْيُمْنَى ، وَكَانَ يَنْهَى عَنْ عُقْبَةِ الشَّيْطَانِ. وَيَنْهَى أَنْ يَفْتَرِشَ الرَّجُلُ ذِرَاعَيْهِ افْتِرَاشَ السَّبُعِ ، وَكَانَ يَخْتِمُ الصَّلَاةَ بِالتَّسْلِيمِ » (رواه مسلم)
হাদীস নং: ১০৭
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ রাসূলুল্লাহ কিভাবে সালাত আদায় করতেন?
১০৭. রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর একদল সাহাবীসহ আবূ হুমায়দ সাঈদী (রা) বলেন: আমি আপনাদের চেয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সালাত অধিক স্মরণ রেখেছি। আমি তাঁকে দেখেছি যে, তিনি যখন তাকবীরে তাহরীমা বলতেন তখন দু'হাত দু'কাঁধ বরাবর উঠাতেন। যখন রুকূ' করতেন দু'হাত দ্বারা দু'হাঁটু শক্ত করে ধরতেন এবং পিঠকে কোমর ও ঘাড়ের সোজা রাখতেন। আর যখন মাথা উঠাতেন ঠিক সোজা হয়ে দাঁড়াতেন। যাতে (পিঠের) প্রত্যেকে গ্রন্থি স্ব-স্ব-স্থানে পৌঁছে যায়। তারপর যখন সিজদা করতেন তখন দু'হাত যমীনে না বিছিয়ে ও পেটের সাথে না মিশিয়ে (চেহারার পাশে রেখে কনুই উঁচু করে) এবং দু'পায়ের আঙ্গুলসমূহের অগ্রভাগ কিবলামুখী করে রাখতেন। এরপর দুই রাক'আতের পর নিজের বাম পায়ের উপর বসতেন এবং ডান পা খাড়া করে রাখতেন। এরপর শেষ রাক'আতে বাম পা বাড়িয়ে দিতেন, অপর পা খাড়া রাখতেন এবং নিতম্বের উপর বসতেন। (বুখারী)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أَبِىْ حُمَيْدٍ السَّاعِدِيُّ قَالَ فِىْ نَفَرٍ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَا كُنْتُ أَحْفَظَكُمْ لِصَلاَةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ « رَأَيْتُهُ إِذَا كَبَّرَ جَعَلَ يَدَيْهِ حِذَاءَ مَنْكِبَيْهِ ، وَإِذَا رَكَعَ أَمْكَنَ يَدَيْهِ مِنْ رُكْبَتَيْهِ ، ثُمَّ هَصَرَ ظَهْرَهُ ، فَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ اسْتَوَى حَتَّى يَعُودَ كُلُّ فَقَارٍ مَكَانَهُ ، فَإِذَا سَجَدَ وَضَعَ يَدَيْهِ غَيْرَ مُفْتَرِشٍ وَلاَ قَابِضِهِمَا ، وَاسْتَقْبَلَ بِأَطْرَافِ أَصَابِعِ رِجْلَيْهِ القِبْلَةَ ، فَإِذَا جَلَسَ فِي الرَّكْعَتَيْنِ جَلَسَ عَلَى رِجْلِهِ اليُسْرَى ، وَنَصَبَ اليُمْنَى ، فَإِذَا جَلَسَ فِي الرَّكْعَةِ الآخِرَةِ قَدَّمَ رِجْلَهُ اليُسْرَى ، وَنَصَبَ الأُخْرَى وَقَعَدَ عَلَى مَقْعَدَتِهِ » (رواه البخارى)
হাদীস নং: ১০৮
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ কতিপয় বিশেষ যিকর ও দু'আ

রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাতের বিভিন্ন অংশ যেমন দাঁড়ানো (কিয়াম) রুকূ এবং সিজদা অবস্থায় যে সকল বাক্যযোগে আল্লাহর গুণাগুণ ও পবিত্রতা বর্ণনা করতেন এবং যে সব দু'আ করতেন (যার কিছু সংখ্যক ইনশাআল্লাহ্ পাঠকগণ পরবর্তী হাদীস থেকে জানতে পারবেন) সে সবের কতিপয় বিশেষ যিকর যা পাঠে অন্তরে এক বিশেষ অবস্থার উদ্ভব হয় তা-ই হচ্ছে মূলতঃ সালাতের হাকীকত ও প্রাণ। এ হাদীসগুলো এ দৃষ্টিকোণ থেকে উল্লিখিত অবস্থা অন্তরে সৃষ্টির লক্ষ্যে দু'আ পাঠ করার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এই মহাসম্পদ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর উত্তারাধিকার।
১০৮. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাতের তাকবীরে তাহরীমা বলে কিরা'আত পাঠ করার পূর্বে কিছুক্ষণ নীরব (চুপি চুপি কিছু পড়তেন) থাকতেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতামাতা আপনার জন্য উৎসর্গীত হোন, আপনি তাকবীরে তাহরীমা ও কিরা'আতের মাঝে নীরব থেকে কী পাঠ করেন তা আমাকে অহিত করুন। তিনি বললেন, আমি বলি-

اللَّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَا كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ اللَّهُمَّ نَقِّنِيْ مِنَ الْخَطَايَايَ كَمَا يُنَقِّى الثَّوْبُ الأَبيَضِ مِنَ الدَّنَسِ اللَّهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَايَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرْدِ

"হে আল্লাহ্! আমার ও আমার পাপসমূহের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করে দাও, যেরূপ তুমি ব্যবধান করে দিয়েছ পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ্! তুমি আমাকে আমার পাপসমূহ থেকে পরিষ্কার করে দাও যেরূপ পরিষ্কার করা হয়ে থাকে সাদা কাপড় ময়লা থেকে। হে আল্লাহ্! তুমি আমার পাপসমূহকে ধুয়ে ফেল বরফ, পানি ও শিলা (বৃষ্টির ন্যায় স্বচ্ছ পানি) দ্বারা"। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ ، قَالَ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْكُتُ بَيْنَ التَّكْبِيرِ وَبَيْنَ القِرَاءَةِ إِسْكَاتَةً فَقُلْتُ : بِأَبِي وَأُمِّي يَا رَسُولَ اللَّهِ ، إِسْكَاتُكَ بَيْنَ التَّكْبِيرِ وَالقِرَاءَةِ مَا تَقُولُ؟ قَالَ : " أَقُولُ : اللَّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَايَ ، كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ المَشْرِقِ وَالمَغْرِبِ ، اللَّهُمَّ نَقِّنِي مِنَ الخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ ، اللَّهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَايَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالبَرَدِ " (رواه البخارى ومسلم)
হাদীস নং: ১০৯
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ কতিপয় বিশেষ যিকর ও দু'আ
১০৯. হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন সালাত শুরু করতেন তখন বলতেন- سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ "হে আল্লাহ্! তুমি মহাপবিত্র, তোমার জন্যই প্রশংসা, তোমার নাম বরকতপূর্ণ, তোমার মর্যাদা সর্বোচ্চ এবং তুমি ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই।" (তিরমিযী ও আবূ দাউদ)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلاَةَ قَالَ : سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ ، وَتَبَارَكَ اسْمُكَ ، وَتَعَالَى جَدُّكَ ، وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ. (رواه الترمذى وابوداؤد)
হাদীস নং: ১১০
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ কতিপয় বিশেষ যিকর ও দু'আ
১১০. হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী কারীম ﷺ সালাতে দাঁড়াতেন তখন তাকবীরে তাহরীমা বলতেন। তারঃপর তিনি

‌وَجَّهْتُ ‌وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ، إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ، اللَّهُمَّ أَنْتَ الْمَلِكُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، أَنْتَ رَبِّي وَأَنَا عَبْدُكَ، ظَلَمْتُ نَفْسِي، وَاعْتَرَفْتُ بِذَنْبِي، فَاغْفِرْ لِي ذُنُوبِي جَمِيعًا، إِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ، وَاهْدِنِي لِأَحْسَنِ الْأَخْلَاقِ لَا يَهْدِي لِأَحْسَنِهَا إِلَّا أَنْتَ، وَاصْرِفْ عَنِّي سَيِّئَهَا لَا يَصْرِفُ سَيِّئَهَا إِلَّا أَنْتَ، لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ، وَالْخَيْرُ كُلُّهُ فِي يَدَيْكَ، وَالشَّرُّ لَيْسَ إِلَيْكَ، أَنَا بِكَ وَإِلَيْكَ، تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ،

বলতেন: "আমি এক নিষ্ঠভাবে তাঁর দিকে মুখ করছি যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। নিশ্চয়ই আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। তাঁর কোন অংশীদার নেই। আর এ জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি আত্মসমর্পণ কারীদের অন্তর্গত। হে আল্লাহ্! তুমিই বাদশাহ, তুমি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তুমি আমার প্রতিপালক আর আমি তোমার দাস, আমি আমার নিজের উপর যুলম করেছি এবং আমি আমার অপরাধ স্বীকার করছি। সুতরাং তুমি আমার যাবতীয় অপরাধ ক্ষমা কর। নিশ্চয়ই তুমি ব্যতীত অপর কেউ অপরাধসমূহ ক্ষমা করতে পারে না, তুমি আমাকে উত্তম চরিত্রের উপর পরিচালিত কর। কেননা তুমি ব্যতীত কেউ উত্তম চরিত্রের পথে পরিচালিত করতে পারে না। তুমি পাপ কাজ থেকে আমাকে দূরে রাখ। তমি ব্যতীত কেউ আমাকে তা থেকে দূরে রাখতে পারে না। হে আল্লাহ্! আমি তোমার দরবারে উপস্থিত আছি এবং তোমার নির্দেশ পালনের জন্য প্রস্তুত আছি। সার্বিক কল্যাণ তোমারই হাতে নিবদ্ধ এবং কোন অকল্যাণই তোমার প্রতি বর্তায় না। আমি তোমার সাহায্যেই প্রতিষ্ঠিত আছি এবং তোমার প্রতি প্রত্যাবর্তন করছি। তুমি বরকাতময়, তুমি সুউচ্চ মহান, আমি তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তোমার অভিমুখী হচ্ছি।

যখন তিনি রুকূ' করতেন তখন বলতেনঃ اللَّهُمَّ لَكَ رَكَعْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ، وَلَكَ أَسْلَمْتُ، خَشَعَ لَكَ سَمْعِي وَبَصَرِي وَعِظَامِي وَمُخِّي وَعَصَبِي হে আল্লাহ্! আমি তোমারই জন্য রুকু করছি এবং তোমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করছি এবং তোমারই নিকট আত্মসমর্পণ করছি। তোমার নিকট অবনমিত আমার শ্রবণশক্তি, আমার দৃষ্টিশক্তি, আমার হাড় মজ্জা, আমার অস্থি ও আমার শিরা উপশিরা। এরপর যখন মাথা উঠাতেন তখন বলতেন: اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ، مِلْءَ السَّمَاوَاتِ، وَمِلْءَ الْأَرْضِ، وَمِلْءَ مَا بَيْنَهُمَا، وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ হে আল্লাহ্! আমাদের প্রতিপালক! তোমার এমন প্রশংসা যা দিয়ে আসমান ও যমীনসমূহ এবং এ দু'য়ের মধ্যে যা কিছু আছে সকলেই পরিপূর্ণ। যখন সিজদা করতেন তখন বলতেন: اللَّهُمَّ لَكَ سَجَدْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَلَكَ أَسْلَمْتُ. سَجَدَ وَجْهِي لِلَّذِي خَلَقَهُ وَصَوَّرَهُ وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ، تَبَارَكَ اللهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ "হে আল্লাহ্ আমি তোমারই উদ্দেশ্যে সিজদা করছি এবং তোমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করছি এবং তোমারই নিকট আত্মসমর্পণ করছি। আমার চেহারা তাঁকেই সিজদা করল যিনি তার স্রষ্টা, দান করেছেন উত্তম আকৃতি এবং কান ও চোখ। বরকতময় আল্লাহ্-শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিকর্তা"। এর পর সর্বশেষে তাশাহ্হুদ ও সালামের মাঝে যা পাঠ করতেন তা এই যে, اللَّهُمَّ

اغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ، وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ وَمَا أَسْرَفْتُ وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّي. أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ "হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা কর যা আমি পূর্বে করেছি এবং যা পরে করব এবং যা আমি গোপনে করেছি আর যা আমি প্রকাশ্যে করেছি এবং যা আমি সীমাতিক্রম করেছি আর যা তুমি আমার অপেক্ষা অধিক জ্ঞাত। তুমিই প্রথম, তুমিই শেষ; তুমি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই।" (মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ عَلِيِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : كَانَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَامَ إِلَى الصَّلَاةِ ، كَبَّرَ ثُمَّ قَالَ : « وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا ، وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ ، إِنَّ صَلَاتِي ، وَنُسُكِي ، وَمَحْيَايَ ، وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ، لَا شَرِيكَ لَهُ ، وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ ، اللهُمَّ أَنْتَ الْمَلِكُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ رَبِّي ، وَأَنَا عَبْدُكَ ، ظَلَمْتُ نَفْسِي ، وَاعْتَرَفْتُ بِذَنْبِي ، فَاغْفِرْ لِي ذُنُوبِي جَمِيعًا ، إِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ ، وَاهْدِنِي لِأَحْسَنِ الْأَخْلَاقِ لَا يَهْدِي لِأَحْسَنِهَا إِلَّا أَنْتَ ، وَاصْرِفْ عَنِّي سَيِّئَهَا لَا يَصْرِفُ عَنِّي سَيِّئَهَا إِلَّا أَنْتَ ، لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ كُلُّهُ فِي يَدَيْكَ ، وَالشَّرُّ لَيْسَ إِلَيْكَ ، أَنَا بِكَ وَإِلَيْكَ ، تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ ، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ » ، وَإِذَا رَكَعَ ، قَالَ : « اللهُمَّ لَكَ رَكَعْتُ ، وَبِكَ آمَنْتُ ، وَلَكَ أَسْلَمْتُ ، خَشَعَ لَكَ سَمْعِي ، وَبَصَرِي ، وَمُخِّي ، وَعَظْمِي ، وَعَصَبِي » ، فَإِذَا رَفَعَ ، قَالَ : « اللهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلْءَ السَّمَاوَاتِ ، وَالْأَرْضِ ، وَمَا بَيْنَهُمَا ، وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ » ، وَإِذَا سَجَدَ ، قَالَ : « اللهُمَّ لَكَ سَجَدْتُ ، وَبِكَ آمَنْتُ ، وَلَكَ أَسْلَمْتُ ، سَجَدَ وَجْهِي لِلَّذِي خَلَقَهُ ، وَصَوَّرَهُ ، وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ ، تَبَارَكَ اللهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ » ، ثُمَّ يَكُونُ مِنْ آخِرِ مَا يَقُولُ بَيْنَ التَّشَهُّدِ وَالتَّسْلِيمِ : « اللهُمَّ اغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ ، وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ ، وَمَا أَسْرَفْتُ ، وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّي ، أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ » . (رواه مسلم)
হাদীস নং: ১১১
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সালাতে কিরা'আত পাঠ
কিয়াম, রুকু ও সিজদার ন্যায় কিরা'আত পাঠও সালাতের অপরিহার্য মৌলিক বিষয়। আর তা কিয়াম অবস্থায় পাঠ করা হয়। একথা সর্বজন বিদিত যে, কিরা'আতের বিন্যাস হচ্ছে এরূপ: তাকবীরে তাহরীমা বলার পর হামদ-সানা, আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা এবং নিজ দাসত্ব প্রকাশের কোন বিশেষ পূর্বোল্লিখিত তিন মাসূরা দু'আর কোন একাটি দু'আ করে আল্লাহর সমীপে নিজকে পেশ করতে হবে। এর পর কুরআন মাজীদের সর্বপ্রথম সূরা আল-ফাতিহা পাঠ করতে হবে যাতে আল্লাহর গুণ কীর্তন বর্ণনার পাশাপাশি তাঁর গুণবাচক নাম এবং বিশেষ অর্থবোধক বাক্যমালা স্থান পেয়েছে। এতে সর্ববিধ শিরক অস্বীকার করে তাওহীদের স্বীকৃতি রয়েছে। সিরাতে মুস্তাকীম তথা সরল প্রতিষ্ঠিত পথ প্রাপ্তির লক্ষ্যে বিনয় ও নম্রভাব প্রকাশ করে আবেদন করা হয়েছে। মোটকথা, সালাতে সর্বদা এ সূরা (আল-ফাতিহা) পাঠ করা হয়। এ সূরায় আল্লাহর বিশেষ মাহাত্ম্য ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থান পাওয়ায় এ সূরার পাঠ আবশ্যিক করা হয়েছে। এও বলা হয়েছে যে, এ সূরা ব্যতীত সালাত (পূর্ণাঙ্গ) হয় না। এ সূরা পাঠের পর মুসল্লীকে এমর্মে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সে যেন এ সূরার সাথে অন্য কোন সূরা কিংবা কুরআন মাজীদের কয়েকটি আয়াত পাঠ করে নেয়। কেননা তাতে তার হিদায়াতের কোন না কোন দিক নির্দেশনা অবশ্যই থাকবে। হয়ত বা তাতে আল্লাহর তাওহীদ ও তাঁর গুণাবলীর বর্ণনা স্থান পাবে অথবা আখিরাত, জান্নাত, জাহান্নাম, সৎকাজ ও অসৎকাজের পুরষ্কার ও শাস্তির বিষয় স্থান পাব অথবা বাস্তব জীবনের সাথে সম্পৃক্ত কোন বিষয়ের আলোচনা থাকবে অথবা কোন শিক্ষণীয় বিষয় স্থান পাবে। মোদ্দাকথা, পাঠকের জন্য কোন না কোন নির্দেশনা অবশ্যই থাকবে। এ যেন আল্লাহর পক্ষ থেকে হিদায়ত প্রাপ্তির দু'আর اهدنا الصراط المستقيم তাৎক্ষণিক জবাব যা তার মুখ থেকে বেরুচ্ছে। অনুরূপভাবে দ্বিতীয় রাকা'আতে সূরা ফাতিহা পাঠের পর কোন না কোন সূরা অথবা আয়াত পাঠ করা হবে। সালাত যদি তিন অথবা চার রাক'আত বিশিষ্ট হয় তবে তৃতীয় ও চতুর্থ রাক'আতে অবশ্যই সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে। কিন্তু এর সাথে অন্য কোন সূরা মিলানোর কোন প্রয়োজন নেই এ কেবল ফরয সালাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সুন্নাত বা নফল সালাতের সকল রাক'আতে সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা কিংবা আয়াত পাঠ করা জরুরী।

এ ভূমিকা পাঠের পর নিম্নোক্ত হাদীসসমূহ পাঠ করা যাক, যার মধ্যে কতিপয় হাদীসে সালাতে কিরা'আত সম্পর্কিত বিষয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বাণী স্থান পেয়েছে। এর চাইতে বড় কথা হল, সালাতে কিরা'আত পাঠের বিষয়ে তাঁর আমলের বর্ণনা স্থান পেয়েছে, কোন্ সালাতে তিনি কী পরিমাণ কিরা'আত পাঠ করতেন এবং কোন্ কোন্ সূরা তিনি বেশি বেশি পাঠ করতেন তাও স্থান পেয়েছে।
১১১. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: কিরা'আত ছাড়া সালাত আদায় হয় না। আবূ হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যে সালাতে জোরে কিরা'আত পাঠ করেছেন, তোমাদের জন্য আমরা তা জোরে আদায় করি এবং যে সালাতে চুপিচুপি কিরা'আত পাঠ করেছেন আমরাও তোমাদের জন্য তা চুপিচুপি আদায় করি। (মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : « لَا صَلَاةَ إِلَّا بِقِرَاءَةٍ » قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ : « فَمَا أَعْلَنَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَعْلَنَّاهُ لَكُمْ ، وَمَا أَخْفَاهُ أَخْفَيْنَاهُ لَكُمْ » (رواه مسلم)
হাদীস নং: ১১২
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সালাতে কিরা'আত পাঠ
১১২. হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পাঠ করে না তার সালাত আদায় হয় না। (বুখারী ও মুসলিম)
তবে মুসলিম শরীফের এক বর্ণনায় আছে, যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা এবং তার সাথে কিছু পাঠ করে না তার সালাত আদায় হয় না।
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « لَا صَلَاةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الكِتَابِ » (رواه البخارى ومسلم وفى رواية لمسلم لمن لم يقرء بام القران فصاعدا)
হাদীস নং: ১১৩
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সালাতে সূরা ফাতিহা পাঠের ব্যাপারে ইমামগণের অভিমত

বিশেষজ্ঞ আলিমগণের মধ্যে ইমাম শাফিঈ এবং আরো কতিপয় ইমাম এই হাদীস এবং অনুরূপ হাদীসের আলোকে মনে করেন যে, মুসল্লী একা হোক, কি ইমাম হোক কিংবা মুক্তাদী হোক, জোরে কিরা'আত সম্পন্ন সালাত হোক কি চুপিচুপি আদায়যোগ্য সালাত হোক সর্বাবস্থায় সূরা ফাতিহা পাঠ করা অত্যাবশ্যক।

ইমাম মালিক ও ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (র) এবং আরো কতিপয় আলিম আলোচ্য হাদীস এবং এ বিষয় সম্পর্কিত অন্যান্য হাদীস বিবেচনা করে মত প্রকাশ করেন যে, মুসল্লী যদি মুক্তাদী হয় এবং সালাতের কিরা'আত যদি জোরে পাঠযোগ্য হয়, তবে ইমামের কিরা'আত মুক্তাদীর পক্ষে যথেষ্ট হবে। সুতরাং এমতাবস্থায় মুক্তাদীর কিরা'আত পাঠের প্রয়োজন নেই। অপরাপর অবস্থাসমূহে মুসল্লীর জন্য সূরা ফাতিহা পাঠ করা জরুরী।

ইমাম আযম আবূ হানীফা (র)ও এ অভিমতের প্রবক্তা। তবে তিনি আর একটু অগ্রসর হয়ে বলেন, নিঃশব্দ কিরা'আত সম্বলিত সালাতেও ইমামের কিরা'আত মুক্তাদীর জন্য যথেষ্ট। উল্লিখিত ইমামগণ যে সকল দলীলের ভিত্তিতে উপরিবর্ণিত অভিমত পোষণ করেন, তন্মধ্যে একটি হাদীস ইতোপূর্বে উল্লিখিত হয়েছে।
১১৩. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: ইমাম নিয়োগ করা হয় অনুসরণ করার জন্য। সুতরাং ইমাম তাকবীর বললে তোমরাও তাকবীর বলবে। তবে ইমাম যখন কিরা'আত পাঠ করে তখন তোমরা নীরব থাকবে। (আবূ দাউদ, নাসায়ী ও ইবনে মাজাহ)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " إِنَّمَا جُعِلَ الْإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ ، فَإِذَا كَبَّرَ فَكَبِّرُوا ، وَإِذَا قَرَأَ فَأَنْصِتُوا. (رواه ابوداؤد والترمذى وابن ماجه)
হাদীস নং: ১১৪
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ফজরের সালাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কিরা'আত
১১৪. হযরত জাবির ইবনে সামুরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী কারীম ﷺ ফজরের সালাতে সূরা কাফ কিংবা অনুরূপ সূরা পাঠ করতেন। পরে তাঁর সালাত সংক্ষিপ্ত হতো। (মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ : كَانَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرَأُ فِي الْفَجْرِ بِ ق وَالْقُرْآنِ الْمَجِيدِ وَكَانَ صَلَاتُهُ بَعْدُ تَخْفِيفًا. (رواه مسلم)
হাদীস নং: ১১৫
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ফজরের সালাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কিরা'আত
১১৫. আমর ইবনে হুরায়স (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী কারীম ﷺ কে ফজরের সালাতে সূরা "وَالَّيْلِ إِذَا عَسْعَسَ " আত্ তাকবীর পাঠ করতে শুনেছেন। (মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ عَمْرِو بْنِ حُرَيْثٍ : « أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرَأُ فِي الْفَجْرِ وَاللَّيْلِ إِذَا عَسْعَسَ » (رواه مسلم)
tahqiq

তাহকীক:

হাদীস নং: ১১৬
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ফজরের সালাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কিরা'আত
১১৬. হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে সায়িব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ মক্কায় আমাদের নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করেন এবং (তাতে) সূরা আল-মু'মিনূন পাঠ করেন। যখন মূসা ও হারুন (আ) অথবা ঈসা (আ) এর উল্লেখ সম্পর্কিত আয়াত পর্যন্ত পৌছেন। তখন নবী কারীম ﷺ এর কাশি এলো, ফলে তিনি রুকূতে চলে যান। (মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ السَّائِبِ قَالَ : " صَلَّى لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : الصُّبْحَ بِمَكَّةَ فَاسْتَفْتَحَ سُورَةَ الْمُؤْمِنِينَ حَتَّى جَاءَ ذِكْرُ مُوسَى ، وَهَارُونَ أَوْ ذِكْرُ عِيسَى أَخَذَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَعْلَةٌ فَرَكَعَ. (رواه مسلم)
tahqiq

তাহকীক:

হাদীস নং: ১১৭
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ফজরের সালাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কিরা'আত
১১৭. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ (একবার) ফজরের সালাতের দুই রাক'আতে যথাক্রমে সূরা আল কাফিরূন ও সূরা ইখলাস তিলাওয়াত করেন। (মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : " أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَرَأَ فِي رَكْعَتَيِ الْفَجْرِ : قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ ، وَقُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ " (رواه مسلم)
tahqiq

তাহকীক:

হাদীস নং: ১১৮
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ফজরের সালাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কিরা'আত
১১৮. হযরত মু'আয ইবনে আবদুল্লাহ্ জুহানী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন : জুহাইনা গোত্রের জনৈক লোক তাঁকে জানিয়েছেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে ফজরের উভয় রাক'আতে সূরা যিলযাল পাঠ করতে শুনেছেন। তবে (তিনি আরো বলেন) রাসূলুল্লাহ ﷺ ভুলে এরূপ করেছিলেন না স্বেচ্ছায় এরূপ করেছিলেন তা আমি বলতে পারি না। (আবূ দাউদ)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ مُعَاذِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الْجُهَنِيِّ قَالَ : أَنَّ رَجُلًا ، مِنْ جُهَيْنَةَ أَخْبَرَهُ ، أَنَّهُ سَمِعَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ « قَرَأَ فِي الصُّبْحِ إِذَا زُلْزِلَتِ الْأَرْضُ فِي الرَّكْعَتَيْنِ كِلْتَيْهِمَا » فَلَا أَدْرِي أَنَسِيَ أَمْ قَرَأَ ذَلِكَ عَمْدًا. (رواه ابوداؤد)
হাদীস নং: ১১৯
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ফজরের সালাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কিরা'আত
১১৯. হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ কখনো কখনো ফজরের দুই রাক'আতে সূরা বাকারা قُولُوا آمَنَّا بِاللَّهِ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْنَا الخ এবং সূরা আলে ইমরানে قُلْ يَاأَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا الخ পাঠ করতেন। (মুসলিম)।
کتاب الصلوٰۃ
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، قَالَ : " كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرَأُ فِي رَكْعَتَيِ الْفَجْرِ : {قُولُوا آمَنَّا بِاللهِ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْنَا} ، وَالَّتِي فِي آلِ عِمْرَانَ : {قُلْ يَاَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا إِلَى كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ}. (رواه مسلم)
হাদীস নং: ১২০
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ফজরের সালাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কিরা'আত
১২০. হযরত উকবা ইবনে আমির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি সফরে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর উটের লাগাম ধরে চলছিলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন: হে উকবা! আমি কি তোমাকে দু'টি উত্তম সূরা শিক্ষা দিব না, যা পাঠ করা হয়? তারপর তিনি আমাকে সূরা 'ফালাক' এবং সূরা 'নাস' শেখালেন। কিন্তু এতে আমি তেমন সন্তুষ্ট হয়েছি বলে তিনি মনে করলেন না। এরপর যখন তিনি ফজরের সালাত আদায়ের জন্য আসেন তখন এই দু'টি সূরা দ্বারা আমাদের সালাতের ইমামতি করেন। সালাত শেষে তিনি আমার প্রতি লক্ষ্য করে বললেনঃ হে উকবা! কী দেখলে, কেমন মনে হলো? (আহমাদ, আবু দাউদ ও নাসায়ী)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ : كُنْتُ أَقُودُ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي السَّفَرِ ، فَقَالَ لِىْ « يَا عُقْبَةُ ، أَلَا أُعَلِّمُكَ خَيْرَ سُورَتَيْنِ قُرِئَتَا؟ » فَعَلَّمَنِي قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ ، وَقُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ قَالَ فَلَمْ يَرَنِي سُرِرْتُ بِهِمَا جِدًّا ، فَلَمَّا نَزَلَ لِصَلَاةِ الصُّبْحِ صَلَّى بِهِمَا صَلَاةَ الصُّبْحِ لِلنَّاسِ ، فَلَمَّا فَرَغَ الْتَفَتَ إِلَيَّ فَقَالَ : « يَا عُقْبَةُ ، كَيْفَ رَأَيْتَ؟ » (رواه احمد وابوداؤد والنسائى)