মা'আরিফুল হাদীস

معارف الحديث

সলাত অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস ৩৫১ টি

হাদীস নং: ১
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সালাত অধ্যায়
الله اكبر -আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ

«سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ ‌وَبِحَمْدِكَ، ‌وَتَبَارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُّكَ، وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ»
"হে আল্লাহ্! তোমারই জন্য যাবতীয় পবিত্রতা ও প্রশংসা, তোমার নাম বরকতময়। তুমি মহান মর্যাদার অধিকারী। তুমি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।"

‌رَبِّ ‌اجْعَلْنِي ‌مُقِيمَ الصَّلاةِ وَمِنْ ذُرِّيَّتِي رَبَّنا وَتَقَبَّلْ دُعاءِ . رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسابُ
"হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সালাত কায়েমকারী বানাও এবং আমার বংশধরদের মধ্য হতেও। হে আমার প্রতিপালক! আমার প্রার্থনা কবুল কর। হে আমাদের প্রতিপালক! যে দিন হিসাব হবে সেদিন আমাকে, আমার পিতামাতাকে এবং মু'মিনদের ক্ষমা করে দিও।" (সূরা ইব্রাহীম: ৪০-৪১) আমীন হে দয়ালুদের শ্রেষ্ঠ দয়ালু।

সালাতের মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব এবং বৈশিষ্ট্য
নবী-রাসূলগণ আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলী মাহাত্ম্য ও অনুগ্রহসমূহ, পবিত্রতা ও একত্ববাদ সম্পর্কে যা বলেছেন তা মেনে চলা এবং ঈমান আনার প্রথম সহজাত দাবি এই যে, মানুষ যেন নিজকে তাঁর জন্য উৎসর্গ করে, ইবাদত, ভালবাসা ও বিনয় নম্রতা প্রকাশ করে, তাঁর রহমত ও সন্তুষ্টি অর্জনের প্রাণপণ চেষ্টা করে এবং তাঁকে স্মরণের মধ্য দিয়ে নিজ অন্তর আত্মাকে জ্যোতির্ময় করে তোলে। এটাই সালাতের প্রকৃত বিষয়বস্তু। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, এলক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে সালাত শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। আর এজন্য প্রত্যেক নবী-রাসূলের শিক্ষা এবং শরী'আতে আনার পর প্রথম করণীয়রূপে সালাতকে নির্ধারিত করা হয়েছে। তাই সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ আনীত শরী'আতেও সালাতের শর্তাবলী, রুকনসমূহ, সুন্নাতসমূহ, নিয়মকানুন এবং সালাত ভঙ্গের ও মাকরূহ হওয়ার বিষয় সবিস্তার বিবরণ গুরুত্ব সহকারে বর্ণিত হয়েছে। একে এমন গুরুত্ব দেয়া হয়েছে যা অন্য কোন ইবাদতকে দেওয়া হয়নি। হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ্ (র) হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগার সালাতের বিবরণের শুরুতে বলেছেন-
"জেনে রেখ, মর্যাদা, দলীল-প্রমাণ ও আল্লাহ্ ভীরু মানুষের মধ্যে প্রসিদ্ধির দিক থেকে সালাত বিশিষ্ট ও সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। আর এরই মাঝে নিহিত রয়েছে মানুষের আত্মিক পরিশুদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে সর্বাধিক উপকারিতা। এজন্যই শরী'আতে সালাতের নির্দিষ্ট সময়, শর্ত, রুকন, নিয়ম-কানুন আদব ইত্যাদি বিষয়ে সবিস্তার বিবরণ রয়েছে। অপরাপর ইবাদতের ক্ষেত্রে এসব বিষয়ে এত গুরুত্বারোপ করা হয়নি। সালাতের বিশেষ অবস্থানিক বৈশিষ্ট্য ও স্বাতন্ত্রে কারণে একে দীলের বিশেষ প্রতীকরূপে গণ্য করা।"
উক্ত গ্রন্থের অন্য একস্থানে সালাতের মৌলিক দিকের হাকীকত বর্ণনা করে বলা হয়েছে" সালাতের মূল বিষয় তিনটি। যথা-
(ক) আল্লাহ্ তা'আলার অপার মাহাত্ম্য ও অশেষ ক্ষমতার বিষয় অনুধাবন করে অন্তরে পরম বিনয় ও ভীতি পোষণ করা।

(খ) আল্লাহর মাহাত্মের সামনে সেই বিনয় ও ভীতি বিশুদ্ধ ও প্রাঞ্জল ভাষায় মুখে প্রকাশ করা।
(গ) সেই ভীতি ও বিনয় মুতাবিক সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঞ্চালন করে আমাদের মাহাত্ম্য ও নিজের ক্ষুদ্রতার সাক্ষ্য দেওয়া।"

তিনি আরো বলেন সালাতের হাকীকত তিনটি বস্তুর সাথে সংশ্লিষ্ট। যথাঃ-
(ক) আল্লাহ্ মাহাত্ম্য ও বড়ত্বের কথা নিজ চিন্তায় স্থান দেয়া।
(খ) এমন কতিপয় দু'আ ও যিকর আযকার করা, যার মাধ্যমে বান্দার বন্দেগী একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্য নিবেদিত হওয়া এবং নিজ মন মানসিকতা একাগ্রতার সাথে আল্লাহ্ অভিমুখী করে তোলা বুঝায়। তাছাড়া নিজ চাওয়া-পাওয়ার ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া।
(গ) সালাতের কতিপয় মর্যাদাপূর্ণ কাজ যেমন রুকূ ও সিজদা ইত্যাদি ইবাদতে পূর্ণতার এবং আল্লাহ্ অভিমুখী করে তুলতে অনুপ্রাণিত করে।"

এরপরে হযরত শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ্ (র) সালাতের আরো কতিপয় বৈশিষ্ট্যও প্রভাব বিস্তারকারী দিক তুলে ধরেছেন।
(ক) সালাত ঈমানদারের জন্য মি'রাজ। আখিরাতে মু'মিন ব্যক্তি আল্লাহর যে দীদার লাভ করবে তার যোগ্যতা সৃষ্টির ব্যাপারে সালাতের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
(খ) সালাত আল্লাহর ভালবাসা ও রহমত প্রাপ্তির মাধ্যম।
(গ) কোন মানুষের মধ্যে যখন সালাতের হাকীকত অর্জিত হয় এবং সালাত তার আত্মায় প্রভাব বিস্তার করে তখন বান্দা আল্লাহর জ্যোতির মধ্যেই প্রকারান্তরে ডুব দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করে। যেমন ময়লা বিযুক্ত বস্তু নদীতে নিমজ্জিত করার ফলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে যায় অথবা মরিচা বিযুক্ত লোহা যেমন হাপ দ্বারা পরিষ্কার করা হয়।
(ঘ) অন্তরের একাগ্রতা এবং বিশুদ্ধ নিয়্যাতের সাথে সালাত আদায় জড়তা, কুচিন্তা এবং প্রবৃত্তির প্ররোচনা দূরকরণের অনুপম পদ্ধতি অব্যর্থ ঔষধ।
(ঙ) হযরত মুহাম্মদ ﷺ সালাতকে মুসলিম উম্মাতের সাধারণ ইবাদত ঘোষণা করায় তা কুফর, শিরক, ফিসক ও ভ্রষ্টতার জাল থেকে নিষ্কৃতি পাবার একটি অনন্য উপায় সাব্যস্ত হয়েছে এবং তা মুসলমানের জন্য এমন একটি স্বাতন্ত্র্য রূপ পরিগ্রহ করেছে যা দ্বারা কাফির এবং মুসলমানের মধ্যে পৃথক পরিচিত তুলে ধরা যায়।
(চ) মানুষের স্বভাবকে বুদ্ধিবৃত্তির অনুগামী করার প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সালাত বিশেষ মাধ্যমরূপে বিবেচিত।
হযরত শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ্ (র) সালাতের যে সব বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন তা মূলত রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর বিভিন্ন বাণী থেকে নেয়া এবং তিনি সবগুলোর বরাতও দিয়েছেন। এসব হাদীস পরে আসবে বিধায় এখানে উল্লেখ করিনি।

সালাতের গুরুত্ব, মাহাত্ম্য ও বৈশিষ্ট সম্পর্কে হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ্ (র) সূত্রে উপরে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে তা আমি (গ্রন্থকার) যথেষ্ট মনে করছি। সুধী পাঠক হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ্ (র)-এর বাণী নিজ মননে ধারণ করে সালাত সম্পর্কীয় রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর হাদীস পাঠ করুন।

সালাত বর্জন ঈমানের পরিপন্থী এবং কুফরী কাজ
১. হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: বান্দা ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্যকারী বস্তু হল সালাত বর্জন। (মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ جَابِرٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « بَيْنَ الْعَبْدِ وَبَيْنَ الْكُفْرِ تَرْكُ الصَّلَاةِ » (رواه مسلم)
হাদীস নং: ২
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সালাত বর্জন ঈমানের পরিপন্থী এবং কুফরী কাজ
২. হযরত বুরায়দা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: আমাদের ও ইসলাম কবুলকারী সাধারণ লোকদের মধ্যে যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে তা হল সালাত (অর্থাৎ প্রত্যেক নও মুসলিমের নিকট থেকে ইসলামের প্রতীক সালাতের প্রতিশ্রুতি নেয়া হয়)। সুতরাং যে ব্যক্তি সালাত বর্জন করবে সে যেন ইসলামের পথ বর্জন করে কাফিরের পথ অবলম্বন করল। (আহমাদ, তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনে মাজাহ)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ بُرَيْدَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « الْعَهْدُ الَّذِي بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمُ الصَّلَاةُ ، فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ » (رواه احمد والترمذى والنسائى وابن ماجه)
হাদীস নং: ৩
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সালাত বর্জন ঈমানের পরিপন্থী এবং কুফরী কাজ
৩. হযরত আবু দারদা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পরম বন্ধু (রাসূলুল্লাহ ﷺ) আমাকে এই মর্মে উপদেশ দিয়েছেন যে, তুমি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না যদিও তোমাকে কেটে টুকরো টুকরো করা হয় বা অগ্নিদগ্ধ করা হয়। স্বেচ্ছায় কখনো ফরয সালাত বর্জন করবে না। সুতরাং যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় তা বর্জন করবে তার থেকে নিরাপত্তা দূর হয়ে যাবে যা আল্লাহর ওরফ থেকে অনুগত মু'মিন বান্দাদের জন্য রয়েছে। মদ পান করবে না। কারণ তা হল, সকল অনিষ্টের মূল। (ইবনে মাজাহ)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ ، قَالَ : أَوْصَانِي خَلِيلِي أَنْ : « لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ شَيْئًا ، وَإِنْ قُطِّعْتَ وَحُرِّقْتَ ، وَلَا تَتْرُكْ صَلَاةً مَكْتُوبَةً مُتَعَمِّدًا ، فَمَنْ تَرَكَهَا مُتَعَمِّدًا ، فَقَدْ بَرِئَتْ مِنْهُ الذِّمَّةُ ، وَلَا تَشْرَبِ الْخَمْرَ ، فَإِنَّهَا مِفْتَاحُ كُلِّ شَرٍّ » (رواه ابن ماجه)
হাদীস নং: ৪
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সালাত বর্জন ঈমানের পরিপন্থী এবং কুফরী কাজ
৪. হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর ইবনুল আ'স (রা) সূত্রে নবী কারীম ﷺ থেকে বর্ণিত। একদা তিনি সালাত প্রসেঙ্গ বলেন: যে ব্যক্তি তা সংরক্ষণ করবে কিয়ামতের দিন তার জন্য তা জ্যোতি (কিয়ামতের অন্ধকারে সে আলো পাবে, আল্লাহর আনুগত্যের) প্রমাণ ও নাজাতের কারণ হবে।
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তা সংরক্ষণ করবে না বরং গাফলতি করল তা তার জন্য কিয়ামতের দিন জ্যোতি, প্রমাণ কিংবা মুক্তির কারণ হবে না। সুতরাং কারূন, ফিরাউন, হামান ও (মক্কার কাফিরদের অন্যতম নেতা) উবাই ইবনে খালফের সাথে তার কিয়ামত হবে। (আহমাদ, দারিমী এবং বায়হাকীর শু'আবুল ঈমান)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو بْنِ الْعَاصِ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ : ذَكَرَ اَمْرَ الصَّلَاةَ يَوْمًا فَقَالَ : " مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا؟ كَانَتْ لَهُ نُورًا ، وَبُرْهَانًا ، وَنَجَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، وَمَنْ لَمْ يُحَافِظْ عَلَيْهَا لَمْ يَكُنْ لَهُ نُورٌ ، وَلَا بُرْهَانٌ ، وَلَا نَجَاةٌ ، وَكَانَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ قَارُونَ ، وَفِرْعَوْنَ ، وَهَامَانَ ، وَأُبَيِّ بْنِ خَلَفٍ " (رواه احمد والدارمى والبيهقى فى شعب الايمان)
হাদীস নং: ৫
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয হওয়া এবং তা আদায়কারীকে ক্ষমা করার অঙ্গীকার
৫. হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: আল্লাহ্ তা'আলা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি উত্তমরূপে উযূ করে যথাসময়ে সালাত আদায় করবে এবং যথার্থরূপে রুকূ ও সিজদা করবে এবং বিনয় ও নিষ্ঠার সঙ্গে তা আদায় করবে তার জন্য আল্লাহ্ নিকট এ মর্মে প্রতিশ্রুতি রয়েছে যে, তিনি তাকে ক্ষমা করে দিবেন। আর যে তা করবে না (সালাতে গাফিলতি করে) তার জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমার কোন প্রতিশ্রুতি নেই। ইচ্ছা করলে তিনি তাকে ক্ষমা করবেন, নতুবা ইচ্ছা করলে শাস্তিও দিতে পারেন। (আহমাদ ও আবূ দাউদ)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ عُبَادَةُ بْنُ الصَّامِتِ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « خَمْسُ صَلَوَاتٍ افْتَرَضَهُنَّ اللَّهُ تَعَالَى مَنْ أَحْسَنَ وُضُوءَهُنَّ وَصَلَّاهُنَّ لِوَقْتِهِنَّ وَأَتَمَّ رُكُوعَهُنَّ وَخُشُوعَهُنَّ كَانَ لَهُ عَلَى اللَّهِ عَهْدٌ أَنْ يَغْفِرَ لَهُ ، وَمَنْ لَمْ يَفْعَلْ فَلَيْسَ لَهُ عَلَى اللَّهِ عَهْدٌ ، إِنْ شَاءَ غَفَرَ لَهُ وَإِنْ شَاءَ عَذَّبَهُ » (رواه احمد وابوداؤد)
হাদীস নং: ৬
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সালাত পাপ মোচন এবং পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম
৬. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: যদি তোমাদের কারো দরজার পাশে একটি নদী থাকে এবং তাতে কেউ দৈনিক পাঁচবার গোসল করে, তার দেহে ময়লা থাকতে পারে কি? সাহাবীগণ বললেন, কোন ময়লাই থাকতে পারে না। তিনি বললেন: এই হল পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের উপমা। এর মাধ্যমে আল্লাহ্ (সালাত আদায়কারীর) পাপসমূহ মোচন করে দেন। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَنَّ نَهْرًا بِبَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ مِنْهُ كُلَّ يَوْمٍ خَمْسَ مَرَّاتٍ ، هَلْ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ؟ » قَالُوا : لَا يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ ، قَالَ : « فَذَلِكَ مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ ، يَمْحُو اللهُ بِهِنَّ الْخَطَايَا » (رواه البخارى ومسلم)
হাদীস নং: ৭
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সালাত বর্জন ঈমানের পরিপন্থী এবং কুফরী কাজ
৭. হযরত আবু যার (রা) থেকে বর্ণিত। নবী কারীম ﷺ একদা শীতের মওসূমে বের হন আর তখন গাছের পাতা ঝরে পড়ছিল। এসময় তিনি একটি গাছের দু'টি শাখা হাতে ধরেন। (বর্ণনাকারী) বলেন, তখন তিনি বললেনঃ হে আবু যার! আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি উপস্থিত। তিনি বললেনঃ মুসলিম বান্দা যখন একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশে সালাত আদায় করে তখন তার পাপসমূহ বিমোচিত হয়, যে ভাবে এই গাছের পাতা ঝরে পড়ছে। (আহমাদ)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أَبِي ذَرٍّ ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ زَمَنَ الشِّتَاءِ وَالْوَرَقُ يَتَهَافَتُ ، فَأَخَذَ بِغُصْنَيْنِ مِنْ شَجَرَةٍ ، قَالَ : فَجَعَلَ ذَلِكَ الْوَرَقُ يَتَهَافَتُ ، قَالَ : فَقَالَ : « يَا أَبَا ذَرٍّ » قُلْتُ : لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ. قَالَ : « إِنَّ الْعَبْدَ الْمُسْلِمَ لَيُصَلِّي الصَّلَاةَ يُرِيدُ بِهَا وَجْهَ اللَّهِ ، فَتَهَافَتُ عَنْهُ ذُنُوبُهُ كَمَا يَتَهَافَتُ هَذَا الْوَرَقُ عَنْ هَذِهِ الشَّجَرَةِ » (رواه احمد)
হাদীস নং: ৮
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সালাত পাপ মোচন এবং পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম
৮. হযরত উসমান (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: যে কোন মুসলিম ব্যক্তি ফরয সালাতের সময় হওয়ার পর উত্তমরূপে উযূ করে পূর্ণ বিণয় ও একাগ্রতা সহকারে ভালোভাবে রুকু সিজদাসহ সালাত আদায় করবে, কবীরাগুনাহ না করার শর্তে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে। আর সালাতের এ বরকত সুফল সব সময়ের জন্য অব্যাহত থাকবে। (মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ عُثْمَانَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « يَقُولُ مَا مِنَ امْرِئٍ مُسْلِمٍ تَحْضُرُهُ صَلَاةٌ مَكْتُوبَةٌ فَيُحْسِنُ وُضُوءَهَا وَخُشُوعَهَا وَرُكُوعَهَا ، إِلَّا كَانَتْ كَفَّارَةً لِمَا قَبْلَهَا مِنَ الذُّنُوبِ مَا لَمْ يُؤْتِ كَبِيرَةً وَذَلِكَ الدَّهْرَ كُلَّهُ » (رواه مسلم)
হাদীস নং: ৯
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সালাতের বিনিময়ে জান্নাত ও মাগফিরাতের অঙ্গীকার
৯. হযরত উকবা ইবনে আমির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: কোন মুসলিম ব্যক্তি যখন উত্তমরূপে উযূ করে তারপর অন্তর ও চেহারা আল্লাহ্ অভিমুখী করে দুই রাক'আত সালাত আদায় করে, তবে তার জন্য জান্নাত অবধারিত। (মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَتَوَضَّأُ فَيُحْسِنُ وُضُوءَهُ ، ثُمَّ يَقُومُ فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ مُقْبِلًا عَلَيْهِمَا بِقَلْبِهِ وَوَجْهِهِ ، إِلَّا وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ » (رواه مسلم)
হাদীস নং: ১০
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সালাতের বিনিময়ে জান্নাত ও মাগফিরাতের অঙ্গীকার
১০. হযরত যায়িদ ইবনে খালিদ জুহানী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: যে ব্যক্তি নির্ভুলভাবে দুই রাক'আত সালাত আদায় করবে আল্লাহ তার পূর্ববর্তী পাশারাশি (সগীরা গুনাহসমূহ) ক্ষমা করে দিবেন। (আহমাদ)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ زَيْدِ بْنِ خَالِدٍ الْجُهَنِيِّ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " مَنْ صَلَّى سَجْدَتَيْنِ ، لَا يَسْهُو فِيهِمَا ، غَفَرَ اللهُ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ " (رواه احمد)
হাদীস নং: ১১
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ হতভাগ্যদের জন্য আফসোস
রাসূলুল্লাহ ﷺ কর্তৃক সালাতের প্রতি এত অনুপ্রেরণা ও ভয় প্রদর্শনমূলক অসংখ্য বাণী প্রদানের পরও যারা সালাত সম্পর্কে উদাসীন ও বেপরোয়া তারা প্রকারান্তরে আল্লাহর রহমত ও অনুগহ থেকে বঞ্চিত এবং তারা তাদের আখিরাতকে ধ্বংস করে দেয়। যেমন আল্লাহর বাণী: وَمَا ظَلَمَهُمُ اللَّهُ وَلَكِنْ كَانُوا أَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ "আল্লাহ্ তাদের প্রতি কোন যুলুম করেন নি বরং তারাই নিজেদের প্রতি যুলুম করে।" (৩, সূরা আলে ইমরান: ১১৭)

সালাত সর্বাধিক প্রিয় আমল
১১. হযরত ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: কোন্ কাজ আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয়, সে বিষয় আমি নবী কারীম ﷺ এর কাছে জানতে চাইলাম। তিনি বললেন: যথাসময়ে সালাত আদায় করা। আমি বললাম, এরপর কোনটি? তিনি বললেন, পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা। আমি বললাম এরপর কোনটি? তিনি বললেন: আল্লাহর পথে জিহাদ করা। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ بْنِ مَسْعُودٍ ، قَالَ : سَأَلْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : أَيُّ الْعَمَلِ أَفْضَلُ؟ قَالَ : « الصَّلَاةُ لِوَقْتِهَا » قَالَ : قُلْتُ ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ : « بِرُّ الْوَالِدَيْنِ » قَالَ : قُلْتُ : ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ : « الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللهِ » (رواه البخارى ومسلم)
হাদীস নং: ১২
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সালাতের সময়সমূহ
সালাতের যে মহান উদ্দেশ্য ও উপকারিতা রয়েছে এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ তাতে যে স্বাদ অনুভব করেন তার অনিবার্য দাবি হচ্ছে, দিন রাতে সারাক্ষণ না হলেও কমপক্ষে দিন রাতের বেশিরভাগ সময় সালাতে অতিবাহিত করা একান্ত অপরিহার্য। কিন্তু আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর বান্দাদের উপর এতদ্ব্যতীত আরো অনেক দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। আর তাই তিনি মানুষের উপর দিন রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করে দিয়েছেন। তবে তিনি সালাতের সময় নির্ধারণের ব্যাপারে এমন ব্যবস্থা করেছেন যাতে সালাতের উদ্দেশ্য সফল হয় এবং বান্দার অপরাপর দায়িত্ব পালনেও ব্যাঘাত না ঘটে।
আল্লাহ্ তা'আলা ফজরের সালাত সুবহে সাদিকের পর নিদ্রাভঙ্গ শেষে এজন্য ফরয করেছেন যাতে ইবাদতের মধ্যে দিয়ে বান্দার কাজের সূচনা হয়। তারপর দুপুরের পর সূর্য ঢলে পড়া পর্যন্ত ফরয কোন সালাত নেই, যাতে মানুষ তার নিজ নিজ দায়িত্ব এ দীর্ঘ সময়ে আঞ্জাম দিতে পারে। এই দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর যুহরের সালাত ফরয করা হয়েছে। এ সালাত আদায়ের জন্য এমন দীর্ঘ সময় দেওয়া হয়েছে যাতে প্রথম সময়ে কিংবা শেষ সময়ে সালাত আদায় করা যায় এবং এ দীর্ঘ সময়েও যেন কারো অসচেতনা দেখা না যায়। বিকেলের লক্ষণ শুরু হওয়ার সময় আসরের সালাত ফরয করা হয়েছে যাতে এই নির্দিষ্ট সময়ে অধিকাংশ লোক নিজ নিজ কর্তব্য কর্ম সম্পাদনের পর আনন্দ স্ফূর্তি করে কাটায় তখন আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ সালাতে মশগুল হয়ে যায়। এরপর দিনের অবসানের পর মাগরিবের সালাত ফরয করা হয়েছে যাতে আল্লাহর তাসবীহ্-তাহলীলের মধ্য দিয়ে রাতের সূচনা হয়। তারপর নিদ্রা যাবার পূর্বে ইশার সালাত ফরয করা হয়েছে যাতে দিনের সূচনা যেমন সালাত দ্বারা হয়েছে ঠিক সেরূপ নিদ্রার পূর্বে মুহূর্তেও যেন সালাতের মধ্য দিয়ে পরিসমাপ্তি ঘটে। আর এর দ্বারা আল্লাহ্ ও তাঁর বান্দার মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপিত হয়। আমাদের সুবিধার্থে এসব সালাতের মধ্যে ব্যাপক সময় দান করা হয়েছে যাতে আমাদের সামর্থ্যানুযায়ী আমরা প্রথম, মধ্য কিংবা শেষ ওয়াক্তে সালাত আদায় করতে পারি।
এই বিশ্লেষণের উপর যদি কোন লোক গভীরভাবে চিন্তা করে তাহলে তার সামনে এ বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে উঠবে যে, যুহর থেকে ইশা পর্যন্ত সালাতসমূহের মধ্যে যে ব্যবধান রয়েছে তা অল্প সময়ের হলেও একজন সত্যনিষ্ঠ মু'মিনের কাছে সালাত যে অমূল্য সম্পদ এবং যে স্বাদের বস্তু তার পক্ষে যুহর, আসর, মাগরিব ও ইশার সালাতের ব্যাপারে যত্নবান হওয়াই সাধারণ অবস্থার দাবি এবং এর দ্বারা যেন আল্লাহ্ এবং তাঁরই বান্দার মধ্যে যোগসূত্র স্থাপিত হয়ে যায়। ফজর থেকে যুহরের মধ্যে দীর্ঘ সময়ের ব্যবধান এজন্য রাখা হয়েছে। যাতে মানুষ এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে তার অপরাপর কর্তব্য কর্ম আঞ্জাম দিতে পারে। তবে যারা ভাগ্যবান তারা এই দীর্ঘ সময়ের ফাঁকে চাশতের সালাত আদায় করে থাকে। একইভাবে আল্লাহ্ তা'আলা ইশার সালাত থেকে শুরু করে ফজর পর্যন্ত কোন সালাত ফরয করেন নি যাতে মানুষের সহজাত দাবি অনুযায়ী আরাম করতে পারে। এ সময়ের মধ্যে সুদীর্ঘ ব্যবধান রাখা হয়েছে। তবে এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে অনুপ্রাণিত করা হয়েছে যেন আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ গভীর রাতে উঠে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করে। রাসূলুল্লাহ ﷺ এ সালাতের অনেক ফযীলত বর্ণনা করেছেন। মুকীম-মুসাফির সর্বাবস্থায় নিজেও তা পালন করতেন। চাশত ও তাহাজ্জুদের সালাত সম্পর্কিত ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ﷺ অনুপ্রেরণামূলক যে বাণী প্রদান করেছেন সে বিষয় যথাস্থানে আলোচনা করা হবে। নিম্নোক্ত আলোচনা কেবল পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সাথে সংশ্লিষ্ট। এ পর্যায়ের রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিম্নোক্ত বাণীসমূহ পাঠ করা যেতে পারে।
১২. হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর ইবনুল আ'স (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি সালাতের সময় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়ে বলেন, সূর্যের উপরের অংশ উদিত না হওয়া পর্যন্ত ফজরের সালাতের সময় রয়েছে। সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ার পর থেকে আসরের সালাতের সময় না হওয়া পর্যন্ত যুহরে সালাতের সময় রয়েছে। সূর্যের আলোকরশ্মি হলুদ বর্ণ ধারণ না করা পর্যন্ত এবং তার নিম্নাংশ অস্তমিত না হওয়া পর্যন্ত আসরের সালাতের সময় অবশিষ্ট থাকে। মাগরিবের সালাতের সময় সূর্যাস্ত থেকে শাফাক অদৃশ্য না হওয়া পর্যন্ত এবং ইশার সালাতের সময় অর্ধরাত পর্যন্ত অবশিষ্ট (বুখারী ও শব্দমালা মুসলিমের).
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ ، أَنَّهُ قَالَ : سُئِلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ وَقْتِ الصَّلَوَاتِ ، فَقَالَ « وَقْتُ صَلَاةِ الْفَجْرِ مَا لَمْ يَطْلُعْ قَرْنُ الشَّمْسِ الْأَوَّلُ ، وَوَقْتُ صَلَاةِ الظُّهْرِ إِذَا زَالَتِ الشَّمْسِ عَنْ بَطْنِ السَّمَاءِ ، مَا لَمْ تَحْضُرِ الْعَصْرُ ، وَوَقْتُ صَلَاةِ الْعَصْرِ مَا لَمْ تَصْفَرَّ الشَّمْسُ ، وَيَسْقُطْ قَرْنُهَا الْأَوَّلُ ، وَوَقْتُ صَلَاةِ الْمَغْرِبِ إِذَا غَابَتِ الشَّمْسُ ، مَا لَمْ يَسْقُطِ الشَّفَقُ ، وَوَقْتُ صَلَاةِ الْعِشَاءِ إِلَى نِصْفِ اللَّيْلِ » (رواه البخارى ومسلم واللفظ لمسلم)
হাদীস নং: ১৩
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সালাতের সময়সমূহ
১৩. হযরত বুরায়দা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে সালাতের সময় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। সে মতে তিনি তাকে বললেন: তুমি আমাদের সাথে (আজ ও কাল এই) দুই দিন সালাত আদায় কর। (প্রথম দিন) সূর্য ঢলে পড়তেই তিনি বিলাল (রা) কে আযান দিতে বললেন। তিনি আযান দিলেন। এরপর তিনি তাকে যুহরের ইকামত দিতে বললেন এবং যুহরের সালাত আদায় করা হল। আসরের ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে তিনি বিলাল (রা) কে নির্দেশ দিলে তিনি যথারীতি আসরের আযান ইকামত দেন। উল্লেখ্য, তখন সূর্য উপরে অবস্থিত শুভ্র ও স্বচ্ছ ছিল। তারপর সূর্য ডুবে যাওয়ার সাথে সাথে তিনি তাকে মাগরিবের ইকামত দিতে নির্দেশ দিলে তিনি ইকামত দেন। তারপর তিনি শাফাক অদৃশ্য হওয়া মাত্র তাকে নির্দেশ দিলে তিনি ইশার ইকামত দেন। তারপর রাত শেষে সুবহে সাদিক হওয়ার সাথে সাথে তিনি তাকে নির্দেশ দিলে তিনি ফজরের ইকামত দেন ও সালাত আদায় করেন।
তারপর দ্বিতীয় দিন এলে তিনি তাপ ঠাণ্ডা হওয়ার পরপর যুহরের আযান দানের জন্য বিলালকে নির্দেশ দেন। তিনি তাপ ঠাণ্ডা হওয়ার অপেক্ষা করেন এবং তাপ যথেষ্ট ঠাণ্ডা হওয়ার পর যুহরের (শেষ ওয়াক্ত) সালাত আদায় করেন। তারপর আসরের সালাত আদায় করেন। তবে সূর্য তখনো উপরে ছিল। কিন্তু প্রথম দিনের অপেক্ষা অধিক বিলম্বে। তারপর মাগরিবের সালাত আদায় করেন, তবে তখন 'শাফাক' অদৃষ্ট হয় নি। এরপর রাতের এক তৃতীয়াংশের পর ইশার সালাত আদায় করেন। তারপর সুবহে সাদিকের আলো ছড়িয়ে পড়ার পর ফজরের সালাত আদায় করেন। তারপর তিনি বললেন, সালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে প্রশ্নকারী লোকটি কোথায়? লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি উপস্থিত আছি। তিনি বললেন: এই দুইদিন যা দেখলে তা-ই হচ্ছে তোমাদের সালাতের সময়। (মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ بُرَيْدَةَ قَالَ إِنَّ رَجُلًا سَأَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ وَقْتِ الصَّلَاةِ ، فَقَالَ لَهُ : « صَلِّ مَعَنَا هَذَيْنِ - يَعْنِي الْيَوْمَيْنِ - فَلَمَّا زَالَتِ الشَّمْسُ أَمَرَ بِلَالًا فَأَذَّنَ ، ثُمَّ أَمَرَهُ ، فَأَقَامَ الظُّهْرَ ، ثُمَّ أَمَرَهُ ، فَأَقَامَ الْعَصْرَ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ بَيْضَاءُ نَقِيَّةٌ ، ثُمَّ أَمَرَهُ فَأَقَامَ الْمَغْرِبَ حِينَ غَابَتِ الشَّمْسُ ، ثُمَّ أَمَرَهُ فَأَقَامَ الْعِشَاءَ حِينَ غَابَ الشَّفَقُ ، ثُمَّ أَمَرَهُ فَأَقَامَ الْفَجْرَ حِينَ طَلَعَ الْفَجْرَ ، فَلَمَّا أَنْ كَانَ الْيَوْمُ الثَّانِي أَمَرَهُ فَأَبْرَدَ بِالظُّهْرِ ، فَأَبْرَدَ بِهَا ، فَأَنْعَمَ أَنْ يُبْرِدَ بِهَا ، وَصَلَّى الْعَصْرَ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ أَخَّرَهَا فَوْقَ الَّذِي كَانَ ، وَصَلَّى الْمَغْرِبَ قَبْلَ أَنْ يَغِيبَ الشَّفَقُ ، وَصَلَّى الْعِشَاءَ بَعْدَمَا ذَهَبَ ثُلُثُ اللَّيْلِ ، وَصَلَّى الْفَجْرَ فَأَسْفَرَ بِهَا » ، ثُمَّ قَالَ : « أَيْنَ السَّائِلُ عَنْ وَقْتِ الصَّلَاةِ؟ » فَقَالَ الرَّجُلُ : أَنَا ، يَا رَسُولَ اللهِ ، قَالَ : « وَقْتُ صَلَاتِكُمْ بَيْنَ مَا رَأَيْتُمْ » (رواه مسلم)
হাদীস নং: ১৪
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সালাতের সময়সমূহ
১৪. সায়্যার ইবনে সালামা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ও আমার পিতা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাহাবী আবূ বারযা আসলামী (রা)-এর নিকট গেলাম। রাসূলুল্লাহ ﷺ কিভাবে (কোন সময়) ফরয সালাত আদায় করতেন সে বিষয়ে আমার পিতা তাঁর নিকট জানতে চাইলেন। তিনি বললেন: যুহরের সালাত যাকে তোমরা প্রথম সালাত (যুহর) বল, সূর্য ঢলে পড়ার পর তিনি তা আদায় করতেন। আসরের সালাত তিনি এমন সময় পড়তেন যে সালাতের পর আমাদের কেউ মদীনার শেষ প্রান্তে তার বাড়ীতে ফিরে যেত অথচ সূর্য তখনো পরিষ্কার থাকত। বর্ণনাকারী বলেন, মাগরিবের সালাত সম্পর্কে তিনি কি বলেছেন তা আমি ভুলে গেছি। বর্ণনকারী সাহাবী বলেন, ইশার সালাত যাকে তোমরা 'আতামা' বল তা তিনি দেরী করে আদায় করতে পসন্দ করতেন এবং এ সালাত আদায়ের পূর্বে নিদ্রা যাওয়া কিংবা পরে কথা বলা অপসন্দ করতেন। ফজরের সালাত তিনি এমন সময় শেষ করতেন যখন কেউ তার কাছে বসা ব্যক্তিকে চিনতে পারত এবং ফজরের সালাতে ষাট থেকে একশ' আয়াত পাঠ করতেন। (বুখারী)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ سَيَّارِ بْنِ سَلاَمَةَ ، قَالَ : دَخَلْتُ أَنَا وَأَبِي عَلَى أَبِي بَرْزَةَ الأَسْلَمِيِّ ، فَقَالَ لَهُ أَبِي : كَيْفَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي المَكْتُوبَةَ؟ فَقَالَ : « كَانَ يُصَلِّي الهَجِيرَ ، الَّتِي تَدْعُونَهَا الأُولَى ، حِينَ تَدْحَضُ الشَّمْسُ ، وَيُصَلِّي العَصْرَ ، ثُمَّ يَرْجِعُ أَحَدُنَا إِلَى رَحْلِهِ فِي أَقْصَى المَدِينَةِ ، وَالشَّمْسُ حَيَّةٌ - وَنَسِيتُ مَا قَالَ فِي المَغْرِبِ - وَكَانَ يَسْتَحِبُّ أَنْ يُؤَخِّرَ العِشَاءَ ، الَّتِي تَدْعُونَهَا العَتَمَةَ ، وَكَانَ يَكْرَهُ النَّوْمَ قَبْلَهَا ، وَالحَدِيثَ بَعْدَهَا ، وَكَانَ يَنْفَتِلُ مِنْ صَلاَةِ الغَدَاةِ حِينَ يَعْرِفُ الرَّجُلُ جَلِيسَهُ ، وَيَقْرَأُ بِالسِّتِّينَ إِلَى المِائَةِ » (رواه البخارى)
হাদীস নং: ১৫
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সালাতের সময়সমূহ
১৫. মুহাম্মদ ইবনে আমর ইবনুল হাসান ইবনে আলী (রা) বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা জাবির ইবনে আবদুল্লাহ্ (রা)-এর নিকট নবী কারীম ﷺ-এর সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি পাঁচ ওয়াক্তের সালাত কখন আদায় করতেন। তিনি বললেন: নবী কারীম ﷺ যুহরের সালাত সূর্য ঢলে পড়লে আদায় করতেন আর সূর্য দীপ্তিমান থাকার সময় (শীত গ্রীষ্মে কোন পার্থক্য হত না) আসরের সালাত আদায় করতেন। সূর্য অস্তমিত হওয়ার পরই মাগরিবের সালাত এবং লোক বেশি হলে তাড়াতাড়ি আর কম হলে বিলম্বে ইশার সালাত আদায় করতেন। ফজরের সালাত অন্ধকারেই আদায় করে নিতেন। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ ، قَالَ : سَأَلْنَا جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ عَنْ صَلاَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَقَالَ : « كَانَ يُصَلِّي الظُّهْرَ بِالهَاجِرَةِ ، وَالعَصْرَ وَالشَّمْسُ [ص : 118] حَيَّةٌ ، وَالمَغْرِبَ إِذَا وَجَبَتْ ، وَالعِشَاءَ إِذَا كَثُرَ النَّاسُ عَجَّلَ ، وَإِذَا قَلُّوا أَخَّرَ ، وَالصُّبْحَ بِغَلَسٍ » (رواه البخارى ومسلم)
হাদীস নং: ১৬
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সালাতের সময়সমূহ
১৬. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ গ্রীষ্ম ঋতুতে ঠাণ্ডার সময় এবং শীত মওসুমে তাড়াতাড়ি ওয়াক্ত শুরু হতেই সালাত আদায় করতেন। (নাসায়ী)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أَنَسٍ قَالَ : « كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا كَانَ الْحَرُّ أَبْرَدَ بِالصَّلَاةِ ، وَإِذَا كَانَ الْبَرْدُ عَجَّلَ » (رواه النسائى)
tahqiq

তাহকীক:

হাদীস নং: ১৭
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সালাতের সময়সমূহ
১৭. হযরত আবূ সাঈদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: সূর্যের তাপ প্রখর হলে তোমরা যুহরের সালাতকে বিলম্বে (প্রখরতা-প্রশমিত হওয়ার পর) আদায় করবে। কেননা তাপের তীব্রতা জাহান্নামের স্ফীত শিখা থেকে উদ্ভূত। (বুখারী)।
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « أَبْرِدُوا بِالظُّهْرِ ، فَإِنَّ شِدَّةَ الحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ » (رواه البخارى)
হাদীস নং: ১৮
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সালাতের সময়সমূহ
১৮. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন আসরের সালাত আদায় করতেন তখন সূর্য ঊর্ধ্বাকাশে দ্বীপ্তিমান থাকত। তারপর কেউ উপকণ্ঠের (মদীনার উঁচু অঞ্চল) দিকে গেলে সূর্য তখনো ঊর্ধ্বাকাশেই থাকত। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أَنَسٍ قَالَ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ « يُصَلِّي الْعَصْرَ ، ثُمَّ يَذْهَبُ الذَّاهِبُ إِلَى الْعَوَالِي فَيَأْتِي العَوَالِيَ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ » (رواه البخارى ومسلم)
হাদীস নং: ১৯
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সালাতের সময়সমূহ
১৯. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: বসে বসে কেউ কেউ সূর্যের আলো হলদে বর্ণ ধারণ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করে, এমনকি সূর্য শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝামাঝি এলে সে দাঁড়িয়ে চারটি ঠোকর দেয়। এতে সে আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। আর এটাই হল মুনাফিকের সালাত। (মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
وَعَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « تِلْكَ صَلَاةُ الْمُنَافِقِ ، يَجْلِسُ يَرْقُبُ الشَّمْسَ حَتَّى إِذَا كَانَتْ بَيْنَ قَرْنَيِ الشَّيْطَانِ ، قَامَ فَنَقَرَهَا أَرْبَعًا ، لَا يَذْكُرُ اللهَ فِيهَا إِلَّا قَلِيلًا » (رواه مسلم)
হাদীস নং: ২০
সলাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মাগরিবের সময় প্রসঙ্গে
২০. হযরত আবু আইউব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: আমার উম্মাত সর্বদা কল্যাণের উপর থাকবে, অথবা তিনি বলেছেন, সৃষ্ট প্রকৃতির উপর থাকবে, যতক্ষণ তারা নক্ষত্ররাজি ঘনভাবে দৃষ্টিগোচর হওয়া পর্যন্ত বিলম্ব না করে মাগরিবের সালাত আদায় করবে। (আবু দাউদ)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أَبِىْ أَيُّوب قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « لَا يَزَالُ أُمَّتِي بِخَيْرٍ » - أَوْ قَالَ : عَلَى الْفِطْرَةِ - مَا لَمْ يُؤَخِّرُوا الْمَغْرِبَ إِلَى أَنْ تَشْتَبِكَ النُّجُومُ ". (رواه ابوداؤد)