মা'আরিফুল হাদীস

সলাত অধ্যায়

হাদীস নং:
সলাত অধ্যায়
সালাত অধ্যায়
الله اكبر -আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ

«سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ ‌وَبِحَمْدِكَ، ‌وَتَبَارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُّكَ، وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ»
"হে আল্লাহ্! তোমারই জন্য যাবতীয় পবিত্রতা ও প্রশংসা, তোমার নাম বরকতময়। তুমি মহান মর্যাদার অধিকারী। তুমি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।"

‌رَبِّ ‌اجْعَلْنِي ‌مُقِيمَ الصَّلاةِ وَمِنْ ذُرِّيَّتِي رَبَّنا وَتَقَبَّلْ دُعاءِ . رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسابُ
"হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সালাত কায়েমকারী বানাও এবং আমার বংশধরদের মধ্য হতেও। হে আমার প্রতিপালক! আমার প্রার্থনা কবুল কর। হে আমাদের প্রতিপালক! যে দিন হিসাব হবে সেদিন আমাকে, আমার পিতামাতাকে এবং মু'মিনদের ক্ষমা করে দিও।" (সূরা ইব্রাহীম: ৪০-৪১) আমীন হে দয়ালুদের শ্রেষ্ঠ দয়ালু।

সালাতের মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব এবং বৈশিষ্ট্য
নবী-রাসূলগণ আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলী মাহাত্ম্য ও অনুগ্রহসমূহ, পবিত্রতা ও একত্ববাদ সম্পর্কে যা বলেছেন তা মেনে চলা এবং ঈমান আনার প্রথম সহজাত দাবি এই যে, মানুষ যেন নিজকে তাঁর জন্য উৎসর্গ করে, ইবাদত, ভালবাসা ও বিনয় নম্রতা প্রকাশ করে, তাঁর রহমত ও সন্তুষ্টি অর্জনের প্রাণপণ চেষ্টা করে এবং তাঁকে স্মরণের মধ্য দিয়ে নিজ অন্তর আত্মাকে জ্যোতির্ময় করে তোলে। এটাই সালাতের প্রকৃত বিষয়বস্তু। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, এলক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে সালাত শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। আর এজন্য প্রত্যেক নবী-রাসূলের শিক্ষা এবং শরী'আতে আনার পর প্রথম করণীয়রূপে সালাতকে নির্ধারিত করা হয়েছে। তাই সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ আনীত শরী'আতেও সালাতের শর্তাবলী, রুকনসমূহ, সুন্নাতসমূহ, নিয়মকানুন এবং সালাত ভঙ্গের ও মাকরূহ হওয়ার বিষয় সবিস্তার বিবরণ গুরুত্ব সহকারে বর্ণিত হয়েছে। একে এমন গুরুত্ব দেয়া হয়েছে যা অন্য কোন ইবাদতকে দেওয়া হয়নি। হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ্ (র) হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগার সালাতের বিবরণের শুরুতে বলেছেন-
"জেনে রেখ, মর্যাদা, দলীল-প্রমাণ ও আল্লাহ্ ভীরু মানুষের মধ্যে প্রসিদ্ধির দিক থেকে সালাত বিশিষ্ট ও সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। আর এরই মাঝে নিহিত রয়েছে মানুষের আত্মিক পরিশুদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে সর্বাধিক উপকারিতা। এজন্যই শরী'আতে সালাতের নির্দিষ্ট সময়, শর্ত, রুকন, নিয়ম-কানুন আদব ইত্যাদি বিষয়ে সবিস্তার বিবরণ রয়েছে। অপরাপর ইবাদতের ক্ষেত্রে এসব বিষয়ে এত গুরুত্বারোপ করা হয়নি। সালাতের বিশেষ অবস্থানিক বৈশিষ্ট্য ও স্বাতন্ত্রে কারণে একে দীলের বিশেষ প্রতীকরূপে গণ্য করা।"
উক্ত গ্রন্থের অন্য একস্থানে সালাতের মৌলিক দিকের হাকীকত বর্ণনা করে বলা হয়েছে" সালাতের মূল বিষয় তিনটি। যথা-
(ক) আল্লাহ্ তা'আলার অপার মাহাত্ম্য ও অশেষ ক্ষমতার বিষয় অনুধাবন করে অন্তরে পরম বিনয় ও ভীতি পোষণ করা।

(খ) আল্লাহর মাহাত্মের সামনে সেই বিনয় ও ভীতি বিশুদ্ধ ও প্রাঞ্জল ভাষায় মুখে প্রকাশ করা।
(গ) সেই ভীতি ও বিনয় মুতাবিক সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঞ্চালন করে আমাদের মাহাত্ম্য ও নিজের ক্ষুদ্রতার সাক্ষ্য দেওয়া।"

তিনি আরো বলেন সালাতের হাকীকত তিনটি বস্তুর সাথে সংশ্লিষ্ট। যথাঃ-
(ক) আল্লাহ্ মাহাত্ম্য ও বড়ত্বের কথা নিজ চিন্তায় স্থান দেয়া।
(খ) এমন কতিপয় দু'আ ও যিকর আযকার করা, যার মাধ্যমে বান্দার বন্দেগী একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্য নিবেদিত হওয়া এবং নিজ মন মানসিকতা একাগ্রতার সাথে আল্লাহ্ অভিমুখী করে তোলা বুঝায়। তাছাড়া নিজ চাওয়া-পাওয়ার ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া।
(গ) সালাতের কতিপয় মর্যাদাপূর্ণ কাজ যেমন রুকূ ও সিজদা ইত্যাদি ইবাদতে পূর্ণতার এবং আল্লাহ্ অভিমুখী করে তুলতে অনুপ্রাণিত করে।"

এরপরে হযরত শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ্ (র) সালাতের আরো কতিপয় বৈশিষ্ট্যও প্রভাব বিস্তারকারী দিক তুলে ধরেছেন।
(ক) সালাত ঈমানদারের জন্য মি'রাজ। আখিরাতে মু'মিন ব্যক্তি আল্লাহর যে দীদার লাভ করবে তার যোগ্যতা সৃষ্টির ব্যাপারে সালাতের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
(খ) সালাত আল্লাহর ভালবাসা ও রহমত প্রাপ্তির মাধ্যম।
(গ) কোন মানুষের মধ্যে যখন সালাতের হাকীকত অর্জিত হয় এবং সালাত তার আত্মায় প্রভাব বিস্তার করে তখন বান্দা আল্লাহর জ্যোতির মধ্যেই প্রকারান্তরে ডুব দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করে। যেমন ময়লা বিযুক্ত বস্তু নদীতে নিমজ্জিত করার ফলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে যায় অথবা মরিচা বিযুক্ত লোহা যেমন হাপ দ্বারা পরিষ্কার করা হয়।
(ঘ) অন্তরের একাগ্রতা এবং বিশুদ্ধ নিয়্যাতের সাথে সালাত আদায় জড়তা, কুচিন্তা এবং প্রবৃত্তির প্ররোচনা দূরকরণের অনুপম পদ্ধতি অব্যর্থ ঔষধ।
(ঙ) হযরত মুহাম্মদ ﷺ সালাতকে মুসলিম উম্মাতের সাধারণ ইবাদত ঘোষণা করায় তা কুফর, শিরক, ফিসক ও ভ্রষ্টতার জাল থেকে নিষ্কৃতি পাবার একটি অনন্য উপায় সাব্যস্ত হয়েছে এবং তা মুসলমানের জন্য এমন একটি স্বাতন্ত্র্য রূপ পরিগ্রহ করেছে যা দ্বারা কাফির এবং মুসলমানের মধ্যে পৃথক পরিচিত তুলে ধরা যায়।
(চ) মানুষের স্বভাবকে বুদ্ধিবৃত্তির অনুগামী করার প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সালাত বিশেষ মাধ্যমরূপে বিবেচিত।
হযরত শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ্ (র) সালাতের যে সব বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন তা মূলত রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর বিভিন্ন বাণী থেকে নেয়া এবং তিনি সবগুলোর বরাতও দিয়েছেন। এসব হাদীস পরে আসবে বিধায় এখানে উল্লেখ করিনি।

সালাতের গুরুত্ব, মাহাত্ম্য ও বৈশিষ্ট সম্পর্কে হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ্ (র) সূত্রে উপরে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে তা আমি (গ্রন্থকার) যথেষ্ট মনে করছি। সুধী পাঠক হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ্ (র)-এর বাণী নিজ মননে ধারণ করে সালাত সম্পর্কীয় রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর হাদীস পাঠ করুন।

সালাত বর্জন ঈমানের পরিপন্থী এবং কুফরী কাজ
১. হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: বান্দা ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্যকারী বস্তু হল সালাত বর্জন। (মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ جَابِرٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « بَيْنَ الْعَبْدِ وَبَيْنَ الْكُفْرِ تَرْكُ الصَّلَاةِ » (رواه مسلم)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

সালাত দীনের এমন এক প্রতীক এবং ঈমানের এমন অনিবার্য দাবি যে, সালাত বর্জনের ফলে বান্দা যেন কুফরীর সীমায় পৌঁছে যায়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান