মা'আরিফুল হাদীস
সলাত অধ্যায়
হাদীস নং: ১০৫
সলাত অধ্যায়
সালাত কীরূপে আদায় করবে?
১০৫. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল আর তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ মসজিদের এক প্রান্তে বসা ছিলেন। লোকটি সালাত আদায় করল। তারপর এসে তাঁকে সালাম দিল। তিনি তার সালামের জবাব দিয়ে বললেন: তুমি চলে যাও এবং সালাত আদায় করে এসো, কেননা তুমি (সঠিকভাবে) সালাত আদায় করনি। লোকটি চলে গেল এবং সালাত আদায় করল। এরপর এসে তাঁকে সালাম দিল। তিনি তাঁর সালামের জবাব দিয়ে বললেন: তুমি যাও এবং পুনর্বার সালাত আদায় করে এসো, কেননা তুমি তো সঠিকভাবে সালাত আদায় করনি। তৃতীয়বার অথবা এর পরের বার লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কিভাবে সালাত আদায় করব সে বিষয়ে আমাকে অবহিত করুন (কেননা আমি যেভাবে জানি, যেভাবেও কয়েকবার আদায় করেছি)। তিনি বললেন: তুমি সালাতে দাঁড়াবার প্রাক্কালে উত্তমভাবে উযূ করে নিবে। এরপর কিবলামুখী হয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলে সালাত শুরু করবে। এরপর কুরআন থেকে যতটুকু তোমার পক্ষে সহজ ততটুকু পাঠ করবে (কোন কোন বর্ণনায় আছে সূরা ফাতিহা পাঠ করবে এবং এর সাথে যা ইচ্ছা পাঠ করবে) তারপর রুকু করবে এবং ধীরস্থিরভাবে রুকূ আদায় করবে। এরপর রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর সিজদা করবে যাতে সিজদার প্রশান্তি আসে। এরপর সিজদা থেকে উঠে স্থিরভাবে বসবে এবং পুনরায় সিজদায় গিয়ে স্থিরভাবে সিজদা করবে। অন্য বর্ণনায় আছে, তারপর রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। এরপর পুরা সালাত এভাবে (রুকু, সিজদা, কাওমা, জালসাসহ সব রকম ধীরস্থিরভাবে) আদায় করবে। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ : أَنَّ رَجُلًا دَخَلَ المَسْجِدَ ، وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسٌ فِي نَاحِيَةِ المَسْجِدِ ، فَصَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ ، فَقَالَ : « وَعَلَيْكَ السَّلاَمُ ، ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ » فَرَجَعَ فَصَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ ، فَقَالَ : « وَعَلَيْكَ السَّلاَمُ ، ارْجِعْ فَصَلِّ ، فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ » فَقَالَ فِي الثَّالِثَةِ ، أَوْ فِي الَّتِي بَعْدَهَا : عَلِّمْنِي يَا رَسُولَ اللَّهِ ، فَقَالَ : « إِذَا قُمْتَ إِلَى الصَّلاَةِ فَأَسْبِغِ الوُضُوءَ ، ثُمَّ اسْتَقْبِلِ القِبْلَةَ فَكَبِّرْ ، ثُمَّ اقْرَأْ بِمَا تَيَسَّرَ مَعَكَ مِنَ القُرْآنِ ، ثُمَّ ارْكَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ رَاكِعًا ، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَسْتَوِيَ قَائِمًا ، ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا ، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا ، ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا ، ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا ، « وَفِىْ رِوَايَةٍ ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَسْتَوِيَ قَائِمًا » ثُمَّ افْعَلْ ذَلِكَ فِي صَلاَتِكَ كُلِّهَا » . (رواه البخارى ومسلم)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এই হাদীসে যে ঘটনা বর্ণিত হয়েছে সেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি হচ্ছেন প্রখ্যাত সাহাবী হযরত রিফয়া ইবনে রাফি (রা) এর ভাই খাল্লাদ ইবনে রাফি (রা)।
সুনানে নাসায়ীর বিবরণ থেকে জানা যায় যে, তিনি মসজিদে এসে দুই রাক'আত সালাত আদায় করেছিলেন। কোন কোন ভাষ্যকার লিখেন, সম্ভবত এই দুই রাক'আত তাহিয়্যাতুল মাসজিদের সালাত ছিল। কিন্তু তিনি এত তাড়াতাড়ি সালাত আদায় করেন যে, রুকু ও সিজদা যেরূপ ধীরস্থিরভাবে আদায় করা উচিত ছিল তিনি ঠিক সেভাবে আদায় করেন নি। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: "তুমি যথাযথভাবে সালাত আদায় করনি।" কাজেই তিনি পুনর্বার সালাত আদায়ের নির্দেশ দেন।
তিনি প্রথমবারেই পরিষ্কার করে একথা বলেন নি যে. "তোমার সালাতে এই ভুল হয়েছে এবং তুমি এভাবে সালাত আদায় কর।" বরং তিনি তৃতীয় কিংবা চতুর্থবারে জিজ্ঞাসার জবাবে তার ভুল সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন, প্রত্যেক জ্ঞানবানই জানে যে, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দানের এই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ পদ্ধতি। কাউকে যদি রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রদর্শিত এই পন্থায় কোন বিষয় শিক্ষা দেওয়া হয়, তবে পুরা জীবনেও সে তা ভুলবে না এবং অপরাপর লোকের মধ্যেও এর ব্যাপক চর্চা হবে। আলোচ্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাত সংক্রান্ত যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেন নি। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, রুকু, দাঁড়ানো ও সিজদা অবস্থায় কী পাঠ করতে হবে সে বিষয়ে তিনি দিক নির্দেশনা দেন নি, এমনকি শেষ বৈঠক, তাশহহুদ ও সালামের বিষয়েও তিনি উল্লেখ করেন নি। এ বিষয়ে তিনি হয়ত ঐ ব্যক্তির জানা থাকায় পুনর্ব্যক্ত করেন নি। তবে বিশেষত তার যে ভুল পরিলক্ষিত হয়েছিল তা ছিল মূলত রুকু, সিজদা ও ধীরস্থিরভাবে সালাত আদায়ের বিষয়ে। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ তার ত্রুটি চিহ্নিত করে সংশোধনের নির্দেশ দেন।
হাদীসের শেষ অংশ নিয়ে বর্ণনাকারীদের মধ্যে খানিকটা দ্বিমত পরিলক্ষিত হয়। কোন কোন বর্ণনাকারী বলেন, দ্বিতীয় সিজদা থেকে তাকে উঠার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন: "তুমি উঠ এবং ধীরস্থিরভাবে বসো।" অন্যান্য বর্ণনায় আছে, তারপর তুমি উঠ এবং সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যাও।" এ দু'টি বর্ণনাই ইমাম বুখারী (র) স্বীয় গ্রন্থে স্থান দিয়েছেন। প্রথম তৃতীয় রাক'আতে দুই সিজদার পর দাঁড়ানোর পূর্বে কিছুক্ষণ বসার জালসায়ে ইস্তিরাহাত বা আরামের বৈঠকের পক্ষে যে সব আলিম পোষণ করেন তাঁরা প্রথম রিওয়ায়াতকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং অপরাপর বিশেষজ্ঞগণ দ্বিতীয় বর্ণনাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।
তবে এই হাদীসের বিশেষ দিক নির্দেশনা হচ্ছে এই যে, পূর্ণ সালাত ধীরস্থিরভাবে আদায় করা উচিত। কেউ যদি এমন তাড়াহুড়া করে সালাত আদায় করে যে, সালাতে তার রুকনসমূহ পুরোপুরি আদায় না হয় উদাহরণস্বরূপ রুকু-সিজদায় শুধু উঠা-বসা এবং যতক্ষণ বিরতি প্রয়োজন তা না হয়, তবে এ ধরনের সালাত অগ্রহণযোগ্য এবং তা পুনর্বার আদায় করা ওয়াজিব।
সুনানে নাসায়ীর বিবরণ থেকে জানা যায় যে, তিনি মসজিদে এসে দুই রাক'আত সালাত আদায় করেছিলেন। কোন কোন ভাষ্যকার লিখেন, সম্ভবত এই দুই রাক'আত তাহিয়্যাতুল মাসজিদের সালাত ছিল। কিন্তু তিনি এত তাড়াতাড়ি সালাত আদায় করেন যে, রুকু ও সিজদা যেরূপ ধীরস্থিরভাবে আদায় করা উচিত ছিল তিনি ঠিক সেভাবে আদায় করেন নি। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: "তুমি যথাযথভাবে সালাত আদায় করনি।" কাজেই তিনি পুনর্বার সালাত আদায়ের নির্দেশ দেন।
তিনি প্রথমবারেই পরিষ্কার করে একথা বলেন নি যে. "তোমার সালাতে এই ভুল হয়েছে এবং তুমি এভাবে সালাত আদায় কর।" বরং তিনি তৃতীয় কিংবা চতুর্থবারে জিজ্ঞাসার জবাবে তার ভুল সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন, প্রত্যেক জ্ঞানবানই জানে যে, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দানের এই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ পদ্ধতি। কাউকে যদি রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রদর্শিত এই পন্থায় কোন বিষয় শিক্ষা দেওয়া হয়, তবে পুরা জীবনেও সে তা ভুলবে না এবং অপরাপর লোকের মধ্যেও এর ব্যাপক চর্চা হবে। আলোচ্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাত সংক্রান্ত যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেন নি। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, রুকু, দাঁড়ানো ও সিজদা অবস্থায় কী পাঠ করতে হবে সে বিষয়ে তিনি দিক নির্দেশনা দেন নি, এমনকি শেষ বৈঠক, তাশহহুদ ও সালামের বিষয়েও তিনি উল্লেখ করেন নি। এ বিষয়ে তিনি হয়ত ঐ ব্যক্তির জানা থাকায় পুনর্ব্যক্ত করেন নি। তবে বিশেষত তার যে ভুল পরিলক্ষিত হয়েছিল তা ছিল মূলত রুকু, সিজদা ও ধীরস্থিরভাবে সালাত আদায়ের বিষয়ে। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ তার ত্রুটি চিহ্নিত করে সংশোধনের নির্দেশ দেন।
হাদীসের শেষ অংশ নিয়ে বর্ণনাকারীদের মধ্যে খানিকটা দ্বিমত পরিলক্ষিত হয়। কোন কোন বর্ণনাকারী বলেন, দ্বিতীয় সিজদা থেকে তাকে উঠার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন: "তুমি উঠ এবং ধীরস্থিরভাবে বসো।" অন্যান্য বর্ণনায় আছে, তারপর তুমি উঠ এবং সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যাও।" এ দু'টি বর্ণনাই ইমাম বুখারী (র) স্বীয় গ্রন্থে স্থান দিয়েছেন। প্রথম তৃতীয় রাক'আতে দুই সিজদার পর দাঁড়ানোর পূর্বে কিছুক্ষণ বসার জালসায়ে ইস্তিরাহাত বা আরামের বৈঠকের পক্ষে যে সব আলিম পোষণ করেন তাঁরা প্রথম রিওয়ায়াতকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং অপরাপর বিশেষজ্ঞগণ দ্বিতীয় বর্ণনাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।
তবে এই হাদীসের বিশেষ দিক নির্দেশনা হচ্ছে এই যে, পূর্ণ সালাত ধীরস্থিরভাবে আদায় করা উচিত। কেউ যদি এমন তাড়াহুড়া করে সালাত আদায় করে যে, সালাতে তার রুকনসমূহ পুরোপুরি আদায় না হয় উদাহরণস্বরূপ রুকু-সিজদায় শুধু উঠা-বসা এবং যতক্ষণ বিরতি প্রয়োজন তা না হয়, তবে এ ধরনের সালাত অগ্রহণযোগ্য এবং তা পুনর্বার আদায় করা ওয়াজিব।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)