মা'আরিফুল হাদীস

معارف الحديث

আখলাক অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস ১৬২ টি

হাদীস নং: ২৪১
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ যয়নবের বাচ্চার জন্য নবী করীম ﷺ কাঁদলেন
২৪১. হযরত উসামা ইবন যায়দ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী ﷺ-এর সাহেবযাদী যয়নব (রা) রাসূলুল্লাহর নিকট সংবাদ পাঠালেন: আমার বাচ্চার প্রাণ বের হওয়ার সময় আপনি আমাদের কাছে আসুন। নবী ﷺ তাকে সালাম পাঠালেন এবং বাণী পাঠালেনঃ আল্লাহ যা গ্রহণ করেন তা তাঁর, তিনি যা দান করেন তাও তাঁর এবং তাঁর নিকট প্রত্যেক জিনিসের সুনির্দিষ্ট সময় রয়েছে। সবর কর এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির চিন্তা কর। কিন্তু যয়নব নবী ﷺ-কে তাঁর কাছে আসার জন্য শপথ করে সংবাদ পাঠালেন। অতঃপর নবী ﷺ উঠে রওনা করলেন। তাঁর সাথে সা'দ ইবন উবাদা (রা), মু'আয ইবন জাবাল (রা), উবাই ইবন কা'আব (রা), যায়দ ইবন সাবিত (রা) এবং আরো কিছু লোক ছিলেন। নবী ﷺ-এর কোলে বাচ্চাকে দেয়া হল এবং তার শ্বাসের আওয়াজ হচ্ছিল। নবী ﷺ-এর চোখ মুবারক থেকে পানি ঝরতে লাগল। সা'দ ইবন উবাদা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এটা কি? নবী ﷺ বললেন: এটা রহমত যা তিনি তাঁর বান্দার আত্মায় ঢেলে দিয়েছেন। আল্লাহ তাঁর রহমশীল বান্দাদেরকে রহম করবেন। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الاخلاق
عَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ ، قَالَ : أَرْسَلَتْ ابْنَةُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْهِ إِنَّ ابْنًا لِي قُبِضَ ، فَأْتِنَا ، فَأَرْسَلَ يُقْرِئُ السَّلاَمَ ، وَيَقُولُ : « إِنَّ لِلَّهِ مَا أَخَذَ ، وَلَهُ مَا أَعْطَى ، وَكُلٌّ عِنْدَهُ بِأَجَلٍ مُسَمًّى ، فَلْتَصْبِرْ ، وَلْتَحْتَسِبْ » ، فَأَرْسَلَتْ إِلَيْهِ تُقْسِمُ عَلَيْهِ لَيَأْتِيَنَّهَا ، فَقَامَ وَمَعَهُ سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ ، وَمَعَاذُ بْنُ جَبَلٍ ، وَأُبَيُّ بْنُ كَعْبٍ ، وَزَيْدُ بْنُ ثَابِتٍ وَرِجَالٌ ، فَرُفِعَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّبِيُّ وَنَفْسُهُ تَتَقَعْقَعُ فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ ، فَقَالَ سَعْدٌ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، مَا هَذَا؟ فَقَالَ : « هَذِهِ رَحْمَةٌ جَعَلَهَا اللَّهُ فِي قُلُوبِ عِبَادِهِ ، فَإِنَّمَا يَرْحَمُ اللَّهُ مِنْ عِبَادِهِ الرُّحَمَاءَ » (رواه البخارى ومسلم)
হাদীস নং: ২৪২
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মু'আয (রা)-এর প্রতি রাসূল ﷺ-এর চিঠি
২৪২: হযরত মু'আয ইবন জাবাল (রা) থেকে বর্ণিত, তাঁর এক ছেলের মৃত্যু হয়। নবী ﷺ তাঁকে সমবেদনা প্রকাশ করে চিঠি লিখলেন: বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম, আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ ﷺ-এর নিকট থেকে মু'আয ইবন জাবালের প্রতি। সালামুন আলাইকা। আমি তোমার কাছে প্রশংসা করছি সেই আল্লাহর, যিনি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই। অতঃপর দু'আ করি আল্লাহ তোমাকে মহান প্রতিদান ও পরিপূর্ণ সবর দান করুন এবং তোমাকে ও আমাদেরকে (নিয়ামতের) শুকরিয়া আদায় করার তওফিক দিন। আমাদের নফস, আমাদের সম্পদ এবং আমাদের পরিবার-পরিজন আল্লাহর আনন্দদায়ক দান এবং গচ্ছিত আমানত। আল্লাহ তোমাকে তা তৃপ্তি ও আনন্দের সাথে উপভোগ করতে দিয়েছেন এবং বিরাট প্রতিদানের বিনিময়ে তা তোমার কাছ থেকে উঠিয়ে নিয়েছেন। যদি তুমি তাঁকে সন্তুষ্ট করার জন্য সবর কর তাহলে তোমার জন্য নিয়ামত, রহমত এবং হিদায়াত রয়েছে। তাই সবর কর এবং তোমার শোক যেন তোমার প্রতিদান বরবাদ করে তোমাকে অনুতপ্ত না করে। মনে রেখ, শোক মৃতকে ফিরিয়ে আনতে পারে না এবং ব্যথা-বেদনাকেও দূর করতে পারে না আর যা মানুষের উপর নাযিল হয়, তা ভাগ্যলিপিতে রয়েছে। ওয়াসসালাম। (তাবারানী)
کتاب الاخلاق
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ مَاتَ ابْنٌ لَهُ فَكَتَبَ إِلَيْهِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ التَّعْزِيَهِ فَكَتَبَ إِلَيْهِ : « بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ مِنْ مُحَمَّدٍ رَسُولِ اللَّهِ إِلَى مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ ، سَلَامٌ عَلَيْكَ ، فَإِنِّي أَحْمَدُ إِلَيْكَ اللَّهَ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ ، أَمَّا بَعْدُ فَأَعْظَمَ اللَّهُ لَكَ الْأَجْرَ ، وَأَلْهَمَكَ الصَّبْرَ ، وَرَزَقَنَا وَإِيَّاكَ الشُّكْرَ ، فَإِنَّ أَنْفُسَنَا وَأَمْوَالَنَا وَأَهْلَنَا مِنْ مَوَاهِبِ اللَّهِ الْهَنِيَّةِ وَعَوَارِيهِ الْمُسْتَوْدَعَةِ ، مَتَّعَكَ اللهُ بِهِ فِي غِبْطَةٍ وَسُرُورٍ ، وَقَبَضَهُ مِنْكَ بِأَجْرٍ كَبِيرٍ ، الصَّلَاةُ وَالرَّحْمَةُ وَالْهُدَى إِنِ احْتَسَبْتَهُ فَاصْبِرْ ، وَلَا يُحْبِطْ جَزَعُكَ أَجْرَكَ فَتَنْدَمَ ، وَاعْلَمْ أَنَّ الْجَزَعَ لَا يَرُدُّ مَيِّتًا وَلَا يَدْفَعُ حُزْنًا ، وَمَا هُوَ نَازِلٌ فَكَأَنْ قَدْ وَالسَّلَامُ » (رواه الطبرانى فى الكبير والاوسط)
হাদীস নং: ২৪৩
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহর হিলম ও ইলম থেকে কিঞ্চিত দান
২৪৩. হযরত উম্মে দারদা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবূ দারদা (রা)-কে বলতে শুনেছি, তিনি নবী ﷺ-কে বলতে শুনেছেন: আল্লাহ তাবারাক ওয়া তা'আলা ঈসা (আ)-কে বলেছেন: হে ঈসা! আমি তোমার পর এমন এক উম্মত প্রেরণ করব যারা তেমন হিলম ও আকলের অধিকারী হবে না। অথচ যখন তারা তাদের পসন্দনীয় জিনিস লাভ করবে, তখন আল্লাহর শোকর আদায় করবে এবং যখন অপসন্দনীয় ও অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ তাদের উপর পতিত হবে, তখন তারা সবর করবে এবং আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করবে। ঈসা (আ) বললেনঃ হে রব্ব! তাদের হিলম ও আকল থাকবে না, তাহলে তারা কি করে এরূপ হবে? আল্লাহ বললেনঃ আমি তাদেরকে আমার হিলম (নম্রতা ও সবর) এবং ইলম (বিদ্যা-বুদ্ধি, প্রজ্ঞা) থেকে কিঞ্চিত দান করব। (বায়হাকী: শুয়াবুল ঈমান)
کتاب الاخلاق
عَنْ أُمِّ الدَّرْدَاءِ ، قَالَتْ : سَمِعْتُ أَبَا الدَّرْدَاءِ ، يَقُولُ : سَمِعْتُ أَبَا الْقَاسِمِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : " إِنَّ اللهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى ، قَالَ : يَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ إِنِّي بَاعِثٌ بَعْدَكَ أُمَّةً إِنْ أَصَابَهُمْ مَا يُحِبُّونَ حَمِدُوا وَشَكَرُوا ، وَإِنْ أَصَابَهُمْ مَا يَكْرَهُونَ احْتَسَبُوا وَصَبَرُوا ، وَلَا حِلْمَ وَلَا عَقْلَ . ، فَقَالَ : يَا رَبِّ كَيْفَ يَكُونُ هَذَا لَهُمْ وَلَا حُلْمٍ وَلَا عَقْلَ؟ ، قَالَ : أُعْطِيهِمْ مِنْ حِلْمِي وَعِلْمِي " (رواه البيهقى فى شعب الايمان)
হাদীস নং: ২৪৪
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতা ও ভাগ্যলিপিতে সন্তুষ্টি

নবী-রাসূলদের মাধ্যমে যেসব বাস্তব সত্য আমরা জানতে পেরেছি, এগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্য ও বাস্তবতা এও যে, এ অস্তিত্ব জগতে যা কিছু হয় এবং যে যা পায় ও পায় না, এ সব কিছুই সরাসরি আল্লাহর নির্দেশ ও তাঁর সিদ্ধান্তে হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে বাহ্যিক উপায়-উপকরণের ভূমিকা কেবল এতটুকুই যে, এগুলো হচ্ছে আমাদের কাছে ঐসব জিনিস পৌঁছার আল্লাহরই নির্ধারিত শুধু মাধ্যম ও পথ। যেমন, বাসা-বাড়ীতে যে পাইপ দিয়ে পানি আসে, এটা কেবল পানি সরবরাহের রাস্তা, পানি সরবরাহে এর নিজের কোন দখল ও ভূমিকা নেই। অনুরূপভাবে এ অস্তিত্ব জগতে কার্য পরিচালনা উপায়-উপকরণের হাতে নয়; বরং কর্ম পরিচালক ও ফলোৎপাদক কেবল মহান আল্লাহর সত্তা ও তাঁর নির্দেশ।
এ বাস্তবতার উপর অন্তরে বিশ্বাস স্থাপন করে নিজের সকল উদ্দেশ্য ও সকল কাজে কেবল আল্লাহর মহান সত্তার উপর আস্থা স্থাপন ও ভরসা করা, তাঁরই প্রতি ধ্যান রাখা, তাঁরই অনুগ্রহের উপর দৃষ্টি রাখা, তাঁরই কাছে আশা পোষণ করা, তাঁকেই ভয় করা এবং তাঁরই কাছে দু'আ করা-এ কর্মপদ্ধতিরই নাম দ্বীনের পরিভাষায় "তাওয়াক্কুল" ও আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা।

তাওয়াক্কুলের প্রকৃত স্বরূপ এটিই। বাহ্যিক উপায়-উপকরণ বর্জন করে দেওয়া তাওয়াক্কুলের জন্য জরুরী নয়। সকল নবী-রাসূলের বিশেষ করে সাইয়্যেদুল আম্বিয়া মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর, তাঁর সাহাবীদের এবং প্রত্যেক যুগের খোদাপ্রেমিক ওলীদের তাওয়াক্কুল এটাই ছিল। এসব পুণ্যবান ব্যক্তিরা এ অস্তিত্ব জগতের উপায়-উপকরণের ধারাকে আল্লাহ্ তা'আলার হুকুম ও নির্দেশের অধীনে এবং তাঁরই হেকমতের দাবী মনে করে সাধারণ অবস্থায় এগুলো ব্যবহার ও প্রয়োগ করতেন, কিন্তু অন্তরের আস্থা এবং ভরসা কেবল আল্লাহর হুকুমের উপরই থাকত। তাঁরা উপায়-উপকরণকে পানির পাইপ লাইনের মত কেবল একটি মাধ্যম ও রাস্তাই মনে করতেন। এ জন্য তাঁরা এসব আসবাব-উপকরণ ব্যবহারের সময়ও আল্লাহ্ তা'আলার সন্তুষ্টি ও তাঁর বিধানের প্রতি পূর্ণ লক্ষ্য রাখতেন। তাছাড়া এ বিশ্বাসও রাখতেন যে, আল্লাহ্ তা'আলার কুদরত ও শক্তি এ আসবাব-উপকরণের অধীন নয়; বরং তিনি ইচ্ছা করলে এগুলো ছাড়াই সবকিছু করতে পারেন। আর তাঁরা কখনো কখনো আল্লাহ্ তা'আলার এ কুদরত প্রত্যক্ষও করতেন এবং এর অভিজ্ঞতাও লাভ করতেন।

সারকথা, উপায় উপকরণ বর্জন করা তাওয়াক্কুলের হাকীকতের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং এর জন্য শর্তও নয়। হ্যাঁ, আল্লাহর কোন বিশ্বাসী বান্দা যদি অন্তরের অবস্থার কাছে পরাভূত হয়ে উপায়-উপকরণ বর্জন করে দেয়, তাহলে এটা আপত্তিকর বিষয়ও নয়; বরং তাদের বেলায় এটা গুণ ও পরাকাষ্ঠাই হবে। অনুরূপভাবে আসবাব উপকরণ থেকে অন্তরের সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য এবং এগুলোর স্থলে আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও আস্থা সৃষ্টি করার জন্য অথবা অন্যদেরকে এটা প্রত্যক্ষ করানোর জন্য কেউ যদি আসবাব-উপকরণ বর্জনের নীতি গ্রহণ করে, তাহলে এটাও সম্পূর্ণ সঠিক হবে। কিন্তু তাওয়াক্কুলের প্রকৃত স্বরূপ কেবল তাই, যা উপরে বলা হয়েছে এবং কুরআন-হাদীসে এরই প্রতি উৎসাহ প্রদান ও এরই প্রতি আহ্বান করা হয়েছে, আর এরই ধারকদের প্রশংসা করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এ তাওয়াক্কুল ঈমান ও তওহীদের পূর্ণতার অনিবার্য ফল। যার তাওয়াক্কুল নসীব হয়নি, নিঃসন্দেহে তার ঈমান ও তওহীদ পরিপূর্ণ নয়।
তারপর তওয়াক্কুলেরও উপরের স্তর হচ্ছে "রেজা বিল কাযা" বা ভাগ্যলিপির উপর সন্তুষ্টি। এর মর্ম এই যে, বান্দার উপর ভাল অথবা মন্দ যে কোন অবস্থাই আসুক, সে একথা বিশ্বাস করে তা অন্তর দিয়ে মেনে নেবে এবং এতে সন্তুষ্ট থাকবে যে, আমার মালিকই আমাকে এ অবস্থায় রেখেছেন। সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের দিনগুলোর মত কষ্ট ও বিপদের মুহূর্তেও তার অন্তরের প্রতিধ্বনি এই হওয়া চাইঃ "বন্ধুর পক্ষ থেকে যাই আসে সেটাই ভাল।"
এ ভূমিকামূলক কয়েকটি লাইনের পর এবার তাওয়াক্কুল ও ভাগ্যলিখনে সন্তুষ্টি প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কয়েকটি হাদীস পাঠ করুন:

যে মন্ত্র-তন্ত্র ও কুলক্ষণের আশ্রয় নেয়নি, সে বেহেশতী
২৪৪. হযরত আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: আমার উম্মতের সত্তর হাজার ব্যক্তি যারা মন্ত্র-তন্ত্র এবং কুলক্ষণের আশ্রয় গ্রহণ করেনি এবং তাদের রব্বের উপর তাওয়াকুল করেছে, তারা বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الاخلاق
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « يَدْخُلُ الجَنَّةَ مِنْ أُمَّتِي سَبْعُونَ أَلْفًا بِغَيْرِ حِسَابٍ ، هُمُ الَّذِينَ لاَ يَسْتَرْقُونَ ، وَلاَ يَتَطَيَّرُونَ ، وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ » (رواه البخارى ومسلم)
হাদীস নং: ২৪৫
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ তাওয়াক্কুল: তাওয়াক্কুলের হক পূরণের ফল
২৪৫. হযরত উমর ইবন খাত্তাব (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যেভাবে তাওয়াক্কুল করার হক রয়েছে, যদি তোমরা সেভাবে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করতে, তাহলে তিনি তোমাদেরকে সেরূপ রিযক দিতেন, যেরূপ পাখিকে দেন। তারা সকালবেলা খালিপেটে বের হয় এবং সন্ধ্যাবেলা ভরপেটে ফিরে আসে। (তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ)
کتاب الاخلاق
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ ، قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : « لَوْ أَنَّكُمْ تَتَوَكَّلُوْنَ عَلَى اللَّهِ حَقَّ تَوَكُّلِهِ ، لَرَزَقَكُمْ كَمَا يَرْزُقُ الطَّيْرَ ، تَغْدُو خِمَاصًا ، وَتَرُوحُ بِطَانًا » (رواه الترمذى وابن ماجه)
হাদীস নং: ২৪৬
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ তাওয়াক্কুলকারীর জন্য আল্লাহ যথেষ্ট
২৪৬. হযরত আমর ইবন আস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: প্রত্যেক উপত্যকার শাখা আদম সন্তানের অন্তরে রয়েছে। যে প্রত্যেক শাখা অনুসরণ করে, সে কোন উপত্যকায় ধ্বংস হয়, তার চিন্তা আল্লাহ করেন না। যে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে, আল্লাহ তার পথের জন্য যথেষ্ট। (ইবনে মাজাহ)
کتاب الاخلاق
عَنْ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « إِنَّ لِقَلْبِ ابْنِ آدَمَ بِكُلِّ وَادٍ شُعْبَةً ، فَمَنِ اتَّبَعَ قَلْبُهُ الشُّعَبَ كُلَّهَا ، لَمْ يُبَالِ اللَّهُ بِأَيِّ وَادٍ أَهْلَكَهُ ، وَمَنْ تَوَكَّلَ عَلَى اللَّهِ كَفَاهُ الشَّعَبَ » (رواه ابن ماجه)
হাদীস নং: ২৪৭
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহর ইচ্ছা পূরণে কেউ বাধা দিতে পারে না
২৪৭. হযরত আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদিন রাসূলুল্লাহ্ ﷺ-এর পেছনে ছিলাম। তিনি বললেন: হে যুবক! আল্লাহকে স্মরণ কর, তিনি তোমাকে স্মরণ করবেন। আল্লাহকে স্মরণ কর, তাঁকে তোমার সামনে পাবে। যখন তুমি সওয়াল কর তা তুমি আল্লাহর কাছে কর। যখন তুমি কোন সাহায্য চাও তা আল্লাহর কাছে চাও এবং জেনে রেখ, যদি তোমাকে কোন কল্যাণ দান করার জন্য তামাম মানুষ সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করে, তা হলেও আল্লাহ তোমার ভাগ্যে যা লিখেছেন তাছাড়া তারা তোমাকে কিছুই দিতে পারবে না। যদি তারা সম্মিলিতভাবে তোমার অমঙ্গল করতে চায়, তা হলেও আল্লাহ যা লিখেছেন তাছাড়া তারা কোন ক্ষতি করতে পারবে না। কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে এবং ভাগ্যলিপির কালি শুকিয়ে গেছে। (মুসনাদে আহমদ ও তিরমিযী)
کتاب الاخلاق
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، قَالَ : كُنْتُ خَلْفَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا ، فَقَالَ : يَا غُلاَمُ احْفَظِ اللَّهَ يَحْفَظْكَ ، احْفَظِ اللَّهَ تَجِدْهُ تُجَاهَكَ ، إِذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللَّهَ ، وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ ، وَاعْلَمْ أَنَّ الأُمَّةَ لَوْ اجْتَمَعَتْ عَلَى أَنْ يَنْفَعُوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَنْفَعُوكَ إِلاَّ بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ لَكَ ، وَلَوْ اجْتَمَعُوا عَلَى أَنْ يَضُرُّوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَضُرُّوكَ إِلاَّ بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ عَلَيْكَ ، رُفِعَتِ الأَقْلاَمُ وَجَفَّتْ الصُّحُفُ . (رواه احمد والترمذى)
হাদীস নং: ২৪৮
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ রিযক ভোগ করার পূর্বে মৃত্যু হবে না
২৪৮. হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: আমি তোমাদেরকে যে হুকুম করেছি, তাছাড়া অন্য কোন জিনিস তোমাদেরকে জান্নাতের নিকটবর্তী এবং দোযখ থেকে দূরবর্তী করবে না এবং আমি তোমাদেরকে যে নিষেধ করেছি, তাছাড়া অন্য কোন জিনিস তোমাদেরকে জান্নাতের নিকটবর্তী এবং দোযখ থেকে দূরবর্তী করবে না। রূহুল আমীন (অন্য বর্ণনায় রূহুল কুদ্‌স-উভয় ক্ষেত্রে অর্থ জিবরাঈল) আমার অন্তরে এ কথা ঢেলে দিয়েছেন যে, রিযক পরিপূর্ণ না করা পর্যন্ত কোন প্রাণীর মৃত্যু হবে না। সাবধান! আল্লাহকে ভয় কর। রিযক অনুসন্ধানের ব্যাপারে সুন্দর পন্থা অবলম্বন কর। রিযক হাসিলের বিলম্বতা তোমাদেরকে যেন আল্লাহর অবাধ্যতার মাধ্যমে (নাজায়েয তরীকায়) রিযক হাসিল করতে উদ্বুদ্ধ না করে। কারণ, আল্লাহর নিয়ামত তাঁর আনুগত্য ছাড়া হাসিল করা যায় না। (বাগাবীঃ শরহুস সুন্নাহ ও বায়হাকী: শুয়াবুল ঈমান)
کتاب الاخلاق
عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " لَيْسَ مِنْ شَيْءٍ يُقَرِّبُكُمْ اِلَى الْجَنَّةِ , وَيُبَاعِدُكُمْ مِنَ النَّارِ إِلَّا قَدْ أَمَرْتُكُمْ بِهِ , وَلَيْسَ شَيْءٌ يُقَرِّبُكُمْ مِنَ النَّارِ , وَيُبَاعِدُكُمْ مِنَ الْجَنَّةِ إِلَّا قَدْ نَهَيْتُكُمْ عَنْهُ , وَأَنَّ الرُّوحَ الْأَمِينَ (وَإِنَّ رُوحَ الْقُدُسِ) نَفَثَ فِي رُوعِيَ أَنَّ نَفْسًا لَنْ تَمُوتَ حَتَّى تَسْتَكْمِلَ رِزْقَهَا , اَلَا فَاتَّقُوا اللهَ وَأَجْمِلُوا فِي الطَّلَبِ , وَلَا يَحْمِلَنَّكُمُ اسْتِبْطَاءُ الرِّزْقِ أَنْ تَطْلُبُوهُ بِمَعَاصِي اللهِ , فَإِنَّهُ لَا يُدْرَكُ مَا عِنْدَ اللهِ إِلَّا بِطَاعَتِهِ " (رواه البغوى فى شرح السنة والبيهقى فى شعب الايمان)
হাদীস নং: ২৪৯
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ একটি বিস্ময়কর ঘটনা
২৪৯. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি তার পরিবারের নিকট গেল। যখন সে তাদের অভাব-অনটনে দেখল, বের হয়ে জঙ্গলের দিকে চলে গেল। তার স্ত্রী তা দেখে চাক্কীর নিকট দাঁড়াল, চাক্কীকে কাজে লাগানোর জন্য প্রস্তুত করল, তন্দুরের মধ্যে আগুন ধরাল এবং দু'আ করল: আল্লাহুম্মারযুকনা-হে আল্লাহ আমাদেরকে রিযক দিন। অতঃপর সে দেখল চাক্কী আটায় ভয়ে গেছে। তন্দুরের কাছে গিয়ে দেখল তন্দুর রুটিতে ভরে গেছে। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তার স্বামী ফিরে আসল এবং বলল, আমার যাওয়ার পর কি তুমি কিছু পেয়েছ? তার স্ত্রী বলল, হ্যাঁ। আমাদের রব্বের পক্ষ থেকে। লোকটি তা দেখার জন্য উঠে দাঁড়াল। (কোন ব্যক্তি) নবী করীম ﷺ-এর নিকট তা বর্ণনা করল। নবী করীম ﷺ বললেন: মনে রাখ, যদি সে তা না উঠাত, তাহলে চাক্কী কিয়ামত পর্যন্ত চালু থাকত। (আহমদ)
کتاب الاخلاق
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : دَخَلَ رَجُلٌ عَلَى أَهْلِهِ ، فَلَمَّا رَأَى مَا بِهِمْ مِنَ الْحَاجَةِ ، خَرَجَ إِلَى الْبَرِيَّةِ ، فَلَمَّا رَأَتِ امْرَأَتُهُ قَامَتْ إِلَى الرَّحَى ، فَوَضَعَتْهَا ، وَإِلَى التَّنُّورِ فَسَجَرَتْهُ ، ثُمَّ قَالَتْ : اللَّهُمَّ ارْزُقْنَا فَنَظَرَتْ فَإِذَا الْجَفْنَةُ قَدِ امْتَلَأَتْ . قَالَ : وَذَهَبَتْ إِلَى التَّنُّورِ فَوَجَدَتْهُ مُمْتَلِئًا . قَالَ : فَرَجَعَ الزَّوْجُ ، قَالَ : أَصَبْتُمْ بَعْدِي شَيْئًا؟ قَالَتِ امْرَأَتُهُ : نَعَمْ مِنْ رَبِّنَا . وَقَامَ إِلَى الرَّحَى . فَذَكَرَ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ : « أَمَا أَنَّهُ لَوْ لَمْ يَرْفَعْهَا ، لَمْ تَزَلْ تَدُورُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ » (رواه احمد)
হাদীস নং: ২৫০
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ আদম সন্তানের সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য
২৫০. হযরত সা'দ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: আল্লাহ তাঁর বান্দার জন্য যা ফায়সালা করেন তার উপর সন্তুষ্ট থাকা আদম সন্তানের সৌভাগ্য এবং আল্লাহর কাছে ইস্তেখারা বা কল্যাণকর কাজের পরামর্শ চাওয়ার দু'আ না করা ও আল্লাহর ফয়সালার উপর বিরক্ত হওয়া আদম সন্তানের জন্য দুর্ভাগ্য। (মুসনাদে আহমদ ও তিরমিযী)
کتاب الاخلاق
عَنْ سَعْدٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مِنْ سَعَادَةِ ابْنِ آدَمَ رِضَاهُ بِمَا قَضَى اللَّهُ لَهُ ، وَمِنْ شَقَاوَةِ ابْنِ آدَمَ تَرْكُهُ اسْتِخَارَةَ اللهِ ، وَمِنْ شَقَاوَةِ ابْنِ آدَمَ سَخَطُهُ بِمَا قَضَى اللَّهُ لَهُ . (رواه احمد والترمذى)
হাদীস নং: ২৫১
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ইখলাস ও একনিষ্ঠতা এবং নাম-যশ কামনা
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মাধ্যমে এ মানবজগত উত্তম চরিত্র ও গুণাবলীর যে শিক্ষা পেয়েছে, এ অধমের দৃষ্টিতে এর পূর্ণতা, ইখলাস ও একনিষ্ঠতার শিক্ষা দ্বারা সাধিত হয়। অর্থাৎ, ইখলাস ও একনিষ্ঠতা হচ্ছে নৈতিকতা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তকারী শেষ পাঠ ও আধ্যাত্মিক ও চারিত্রিক উন্নতির শেষ সোপান।

এ ইখলাস ও একনিষ্ঠতার মর্ম এই যে, প্রত্যেক সৎকর্ম অথবা কারো সাথে উত্তম আচরণ কেবল এ জন্য এবং এ নিয়্যতে করা যে, এতে আমার পরওয়ারদেগার খুশী হবেন, আমার উপর দয়া করবেন এবং আমি তাঁর অসন্তুষ্টি ও ক্রোধ থেকে বাঁচতে পারব। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলে দিয়েছেন যে, ইখলাসই প্রত্যেক সৎকর্মের আত্মা ও প্রাণ। যদি কোন অতি উত্তম কাজও ইখলাসশূন্য হয় এবং এর উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন না হয়; বরং যশ, সুখ্যাতি অথবা এ ধরনের কোন মনোবৃত্তি এর পেছনে কার্যকর থাকে, তাহলে আল্লাহ্ তা'আলার কাছে এর কোনই মূল্য নেই এবং এর উপর কোন সওয়াবও পাওয়া যাবে না।

কথাটি অন্য শব্দমালায় এভাবেও বলা যেতে পারে যে, আল্লাহ্ তা'আলার সন্তুষ্টি এবং আখেরাতের প্রতিদান- যা সৎকর্ম ও উত্তম চরিত্রের আসল পুরস্কার ও ফল এবং যা মানুষের প্রকৃত উদ্দেশ্য ও কামনা হওয়া চাই- সেটা কেবল কর্ম ও চরিত্রের ভিত্তিতেই লাভ করা যায় না; বরং সেটা কেবল তখন লাভ করা যায়, যখন ঐ কর্ম ও চরিত্র দ্বারা আল্লাহ্ তা'আলার সন্তুষ্টি অর্জন এবং আখেরাতের প্রতিদান লাভের ইচ্ছা এবং নিয়্যতও করা হয়, আর এটাই যখন এ কাজে উদ্বুদ্ধকারী হয়। আর আসলেও এমনটাই হওয়া চাই। কেননা, আমাদের নিজেদের ব্যাপারেও এটাই আমাদের নীতি।

মনে করুন, কোন ব্যক্তি আপনার খুব সেবা ও খেদমত করে, আপনাকে সর্বদিক দিয়ে শান্তি দিতে এবং খুশী রাখতে চেষ্টা করে। কিন্তু কোন সূত্রে আপনি যদি জানতে পারেন যে, আপনার প্রতি তার কোন আন্তরিকতা নেই; বরং তার এ আচরণ ও ব্যবহার তার কোন ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য অথবা সে আপনার কোন বন্ধু অথবা ঘনিষ্ঠজন থেকে নিজের কোন কাজ আদায় করে নিতে চায় এবং কেবল এ উদ্দেশ্যেই আপনাকে দেখানোর জন্য শুধু এ আচরণ করে, তাহলে আপনার অন্তরে তার এবং তার এ আচরণের কোন মূল্য থাকবে না।

আল্লাহ্ তা'আলার ব্যাপারটাও ঠিক তদ্রূপ। পার্থক্য শুধু এই যে, আমরা অন্যদের অন্তরের অবস্থা জানি না, আর আল্লাহ্ তা'আলা সকলের অন্তরের অবস্থা এবং তাদের নিয়্যত ও উদ্দেশ্য জানেন। অতএব, তাঁর যেসব বান্দার অবস্থা এই যে, তারা তাঁর সন্তুষ্টি ও রহমত কামনায় পুণ্যকাজ করে, আল্লাহ্ তাদের আমল কবুল করে তাদের প্রতি খুশী হন এবং তাদের উপর রহমত নাযিল করেন। আর আখেরাত- যা প্রকৃত প্রতিদান জগত- সেখানেই তাঁর সন্তুষ্টি ও অনুগ্রহের পূর্ণ প্রকাশ ঘটবে। পক্ষান্তরে যেসব লোক দুনিয়ার মানুষের বাহবা কুড়ানোর জন্য অথবা নাম-যশ ও প্রসিদ্ধি লাভের জন্য সৎকর্মের মহড়া দেখায়, তাদের এসব উদ্দেশ্য দুনিয়াতে যদি সফলও হয়ে যায়, তবুও তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও রহমত থেকে বঞ্চিতই থাকবে। তাদের এ বঞ্চিত হওয়ার ব্যাপারটির পূর্ণ প্রকাশও আখেরাতেই ঘটবে।

এ অধ্যায়ের মূল ভিত্তি তো রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রসিদ্ধ ঐ হাদীস, যেখানে বলা হয়েছেঃ সকল কাজের মূল্যায়ন নিয়‍্যতের ভিত্তিতেই করা হয়। হাদীসটি মাআরিফুল হাদীসের একেবারে শুরুতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এবং সেখানেই এর ব্যাখ্যা বিস্তারিতভাবে করা হয়েছে। তাই এখানে এর পুনরুল্লেখের প্রয়োজন নেই। এখানে ঐ হাদীসটি ব্যতীত এ সংক্রান্ত অন্য কয়েকটি হাদীস আনা হচ্ছে এবং এ হাদীসগুলোর মাধ্যমেই দ্বিতীয় খণ্ডের পরিসমাপ্তি ঘটবে।

আল্লাহ অন্তর ও আমল দেখেন
২৫১. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: আল্লাহ তোমাদের আকৃতি ও সম্পদের দিকে নযর করেন না, বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমলের দিকে নযর করেন। (মুসলিম)
کتاب الاخلاق
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « إِنَّ اللهَ لَا يَنْظُرُ إِلَى صُوَرِكُمْ وَأَمْوَالِكُمْ ، وَلَكِنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ وَأَعْمَالِكُمْ »
হাদীস নং: ২৫২
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ বেমিসাল কুরবানীর প্রতিদান
২৫২. হযরত আবদুল্লাহ্ ইবন উমর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী ﷺ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: তিন ব্যক্তি রাস্তা চলছিল। বৃষ্টি তাদেরকে পেল। তারা পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করল। পাহাড় থেকে একটা পাথর এসে তাদের গুহার মুখে পড়ল এবং তাদেরকে ঢেকে ফেলল। তারা পরস্পর বলতে লাগল; খালেস আল্লাহর জন্য যেসব আমল করেছ, তার দিকে নজর কর এবং তার উল্লেখ করে আল্লাহর কাছে দু'আ কর, সম্ভবত আল্লাহ তা দূর করে দিবেন। তাদের একজন বলল, হে আল্লাহ! আমার বৃদ্ধ পিতামাতা এবং কয়েকজন সন্তান ছিল। আমি তাদের জন্য ছাগল চরাতাম। যখন তাদের কাছে ফিরে আসতাম তখন দুধ দোহাতাম এবং ছেলেমেয়েদেরকে দুধপান করানোর পূর্বে পিতামাতাকে দুধপান করতে দিতাম। একদিন চারণ ভূমির গাছ আমাকে দূরে নিয়ে গিয়েছিল (অর্থাৎ ছাগল চরাতে চরাতে দূরে চলে গিয়েছিলাম)। সন্ধ্যার সময় ফিরে এসে তাদেরকে নিদ্রিত পেলাম। যেরূপ দুধ দোহাতাম সেরূপ দুধ দোহালাম, দুধ নিয়ে এলাম এবং তাদের মাথার কাছে দাঁড়িয়ে থাকলাম। আমি তাদেরকে জাগাতে অপসন্দ করলাম এবং তাদের আগে আমার ছেলেমেয়েদেরকে দুধপান করতে দিতেও অপসন্দ করলাম। ফজর পর্যন্ত তারা আমার পায়ের কাছে চিৎকার করছিল এবং আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম। হে আল্লাহ! যদি তুমি জান যে, এ কাজ তোমার সন্তুষ্টির জন্য করেছি, তাহলে আমাদের জন্য পাথরকে একটু সরিয়ে দাও যাতে আমরা আসমান দেখতে পারি। আল্লাহ তা একটু সরিয়ে দিলেন এবং তারা আসমান দেখতে লাগল।

দ্বিতীয় ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ! আমার এক চাচাত বোন ছিল। একজন পুরুষ একজন মেয়েকে যতটুকু ভালবাসে, আমি তাকে ততটুকু ভালবাসতাম। আমি তার সাথে আমার ইচ্ছা পূরণ করতে চাইলাম। সে বলল, তাকে একশত দিনার না দেয়া পর্যন্ত সে রাযী হবে না। আমি একশত দিনার যোগাড় করলাম এবং তা নিয়ে তার সাথে দেখা করলাম। যখন আমি তার উভয় পায়ের মাঝখানে বসলাম, সে বলল, হে আল্লাহর বান্দা! আল্লাহকে ভয় কর এবং মোহরকৃত জিনিসকে উন্মুক্ত করো না। আমি তার কাছ থেকে উঠে দাঁড়ালাম। হে আল্লাহ! যদি তুমি জান যে, আমি তা তোমার সন্তুষ্টির জন্য করেছি, তাহলে তা আমাদের কাছ থেকে সরিয়ে দাও এবং আমাদের জন্য রাস্তা করে দাও। আল্লাহ তাদের জন্য পাথর আরো একটু সরিয়ে দিলেন।

শেষ ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ! আমি এক ফরক (ওজন বিশেষ) চাউলের বিনিময়ে একজন মজদুর নিয়োগ করেছিলাম। কাজ শেষ করার পর সে বলল, আমার হক আমাকে দাও। আমি তাকে তার হক দিতে লাগলাম। কিন্তু সে তা ছেড়ে চলে গেল এবং তা নিতে পসন্দ করল না। সে ফিরে না আসা পর্যন্ত তার চাউলের অর্থের দ্বারা কৃষিকাজ শুরু করলাম এবং তার অর্থের দ্বারা গরু এবং চারণকারীর ব্যবস্থা করলাম। অতঃপর সে আমার কাছে এল এবং বলল, আল্লাহকে ভয় কর, আমার উপর যুলম করো না এবং আমার হক আমাকে দাও। আমি তাকে গরু ও তার চারনকারীর কাছে যেতে বললাম। সে বলল, আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার সাথে ঠাট্টা করো না। আমি বললাম, আমি তোমার সাথে ঠাট্টা করছি না, তুমি এ গরু ও চারণকারী নিয়ে যাও। সে তা গ্রহণ করল এবং চলে গেল। যদি তুমি জান যে, আমি তা তোমার সন্তুষ্টির জন্য করেছি, তাহলে তুমি পাথরের বাকীটুকুও সারিয়ে দাও। আল্লাহ তাদের উপর থেকে পাথর সরিয়ে দিলেন এবং তাদের জন্য রাস্তা করে দিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الاخلاق
عَنْ بْنِ عُمَرَ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " بَيْنَمَا ثَلاَثَةُ نَفَرٍ يَتَمَاشَوْنَ ، أَخَذَهُمُ المَطَرُ ، فَمَالُوْا إِلَى غَارٍ فِي الْجَبَلِ ، فَانْحَطَّتْ عَلَى فَمِ غَارِهِمْ صَخْرَةٌ مِنَ الْجَبَلِ ، فَاطْبَقَتْ عَلَيْهِمْ ، فَقَالَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ : انْظُرُوا أَعْمَالًا عَمِلْتُمُوهَا لِلَّهِ صَالِحَةً ، فَادْعُوا اللَّهَ بِهَا لَعَلَّهُ يُفَرِّجُهَا ، فَقَالَ أَحَدُهُمْ : اللَّهُمَّ إِنَّهُ كَانَ لِي وَالِدَانِ شَيْخَانِ كَبِيرَانِ ، وَلِي صِبْيَةٌ صِغَارٌ ، كُنْتُ أَرْعَى عَلَيْهِمْ ، فَإِذَا رُحْتُ عَلَيْهِمْ فَحَلَبْتُ ، بَدَأْتُ بِوَالِدَيَّ أَسْقِيهِمَا قَبْلَ وُلْدِىْ ، وَاَنَّهُ قَدْ نَآئ بِىَ الشَّجَرُ فَمَا اَتَيْتُ حَتَّى أَمْسَيْتُ ، فَوَجَدْتُهُمَا قَدْ نَامَا ، فَحَلَبْتُ كَمَا كُنْتُ أَحْلُبُ ، فَجِئْتُ بِالْحِلَابِ فَقُمْتُ عِنْدَ رُءُوسِهِمَا أَكْرَهُ أَنْ أُوقِظَهُمَا ، وَأَكْرَهُ أَنْ اَبْدَأَ بِالصَّبِيَّةِ قَبْلَهُمَا ، وَالصِّبْيَةُ يَتَضَاغَوْنَ عِنْدَ قَدَمَيَّ فَلَمْ يَزَلْ ذَلِكَ دَأْبِي وَدَأْبَهُمْ حَتَّى طَلَعَ الفَجْرُ ، فَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنِّي فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَافْرُجْ لَنَا فُرْجَةً نَرَى مِنْهَا السَّمَاءَ . فَفَرَجَ اللَّهُ لَهُمْ حَتَّى يَرَوْنَ السَّمَاءَ . قَالَ الثَّانِي : اللَّهُمَّ إِنَّهُ كَانَتْ لِي بِنْتُ عَمٍّ أُحِبُّهَا كَأَشَدِّ مَا يُحِبُّ الرِّجَالُ النِّسَاءَ ، فَطَلَبْتُ إِلَيْهَا نَفْسَهَا ، فَأَبَتْ حَتَّى آتِيَهَا بِمِائَةِ دِينَارٍ ، فَسَعَيْتُ حَتَّى جَمَعْتُ مِائَةَ دِينَارٍ فَلَقِيتُهَا بِهَا ، فَلَمَّا قَعَدْتُ بَيْنَ رِجْلَيْهَا قَالَتْ : يَا عَبْدَ اللَّهِ اتَّقِ اللَّهَ ، وَلاَ تَفْتَحِ الخَاتَمَ ، فَقُمْتُ عَنْهَا ، اللَّهُمَّ فَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنِّي فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَاَخْرِجْ لَنَا مِنْهَا . فَفَرَّجَ لَهُمْ فُرْجَةً . وَقَالَ الآخَرُ : اللَّهُمَّ إِنِّي كُنْتُ اسْتَأْجَرْتُ أَجِيرًا بِفَرَقِ أَرُزٍّ ، فَلَمَّا قَضَى عَمَلَهُ قَالَ : أَعْطِنِي حَقِّي ، فَعَرَضْتُ عَلَيْهِ حَقَّهُ فَتَرَكَهُ وَرَغِبَ عَنْهُ ، فَلَمْ أَزَلْ أَزْرَعُهُ حَتَّى جَمَعْتُ مِنْهُ بَقَرًا وَرَاعِيَهَا ، فَجَاءَنِي فَقَالَ : اتَّقِ اللَّهَ وَلاَ تَظْلِمْنِي وَأَعْطِنِي حَقِّي ، فَقُلْتُ : اذْهَبْ إِلَى البَقَرِ وَرَاعِيهَا ، فَقَالَ : اتَّقِ اللَّهَ وَلاَ تَهْزَأْ بِي ، فَقُلْتُ : إِنِّي لاَ أَهْزَأُ بِكَ ، فَخُذْ ذَلِكَ البَقَرَ وَرَاعِيَهَا ، فَأَخَذَهُ فَانْطَلَقَ بِهَا ، فَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنِّي فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ ، فَاَفْرِجْ مَا بَقِيَ . فَفَرَّجَ اللَّهُ عَنْهُمْ " (رواه البخارى ومسلم)
হাদীস নং: ২৫৩
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ রিয়া: রিয়া এক ধরনের শিরক
২৫৩. হযরত শাদ্দাদ ইবন আউস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছেন: যে দেখানোর জন্য নামায পড়ল, সে শিরক করল, যে দেখানোর জন্য রোযা রাখল, সে শিরক করল এবং যে দেখানোর জন্য দান-খয়রাত করল, সে শিরক করল। (আহমদ)
کتاب الاخلاق
عَنْ شَدَّادِ ابْنِ اَوْسٍ : قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ " مَنْ صَلَّى يُرَائِي فَقَدْ أَشْرَكَ ، وَمَنْ صَامَ يُرَائِي فَقَدْ أَشْرَكَ ، وَمَنْ تَصَدَّقَ يُرَائِي فَقَدْ أَشْرَكَ " (رواه احمد)
হাদীস নং: ২৫৪
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ রিয়া দাজ্জালের চেয়েও অধিক ক্ষতিকর
২৫৪. হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন নবী ﷺ আমাদের নিকট আসলেন। আমরা মসীহ দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তিনি বললেন: আমার দৃষ্টিতে তোমাদের জন্য মসীহ দাজ্জাল থেকে যা বেশি ভয়ের, তা কি আমি তোমাদেরকে বলব না? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, অবশ্যই (বলুন)। তিনি বললেনঃ গোপন শিরক। (আর তা হলো) যে নামাযের জন্য দাঁড়ায় এবং অন্য লোক তা দেখার কারণে নামায লম্বা করে। (ইবনে মাজাহ)
کتاب الاخلاق
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ ، قَالَ : خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ نَتَذَاكَرُ الْمَسِيحَ الدَّجَّالَ ، فَقَالَ : « أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِمَا هُوَ أَخْوَفُ عَلَيْكُمْ عِنْدِي مِنَ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ؟ » فَقُلْنَا : بَلَى ، فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ « قَالَ الشِّرْكُ الْخَفِيُّ ، أَنْ يَقُومَ الرَّجُلُ يُصَلِّي ، فَيَزِيْدُ صَلَاتَهُ ، لِمَا يَرَى مِنْ نَظَرِ رَجُلٍ » (رواه ابن ماجة)
হাদীস নং: ২৫৫
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ রিয়া দাজ্জালের চেয়েও অধিক ক্ষতিকর
২৫৫. হযরত মাহমূদ ইবনে লবীদ (রা) থেকে বর্ণিত, নবী করীম ﷺ বলেছেন: আমি তোমাদের বেলায় যে জিনিসটার সবচেয়ে বেশী আশংকা করি। সেটা হচ্ছে ছোট শির্ক। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! ছোট শিকের অর্থ কি? তিনি উত্তর দিলেন, সেটা হচ্ছে রিয়া। (অর্থাৎ, কোন নেক কাজ মানুষকে দেখানোর জন্য করা।) মুসনাদে আহমাদ
کتاب الاخلاق
عَنْ مَحْمُودِ بْنِ لَبِيدٍ ، أَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : « إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمُ الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ » قَالُوا : وَمَا الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ : " الرِّيَاءُ . (رواه احمد)
হাদীস নং: ২৫৬
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ যে কাজে শিরকের সামান্য মিশ্রণও থাকবে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না
২৫৬. হযরত আবু হুরায়রা (রা) বলেন, আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেছেন: আল্লাহ বলেন, শরীকদের শিরকের ব্যাপারে আমি সবচেয়ে বেশি বেনিয়ায। যে সৎকর্ম করে এবং তাতে আমার সাথে অন্যকে শরীক করে, আমি তাকে ও তার শরীককে ত্যাগ করি।
অন্য রিওয়ায়াতে বলা হয়েছে, যে যার জন্য আমল করেছে তা তার জন্য এবং আমি তার সাথে সম্পর্কমুক্ত। (মুসলিম)
کتاب الاخلاق
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " قَالَ اللهُ تَعَالَى : أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ ، مَنْ عَمِلَ عَمَلًا أَشْرَكَ فِيهِ مَعِي غَيْرِي ، تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ " وَفِىْ رِوَايَةٍ فَاَنَا مِنْهُ بَرِئٌ هُوَ لِلَّذِىْ عَمِلَهُ . (رواه مسلم)
হাদীস নং: ২৫৭
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ যে কাজে শিরকের সামান্য মিশ্রণও থাকবে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না
২৫৭. হযরত আবু সাঈদ ইবনে আবূ ফাযালা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: আল্লাহ্ তা'আলা যখন কেয়ামতের দিন সকল মানুষকে একত্রিত করবেন, তখন একজন ঘোষণাকারী এ ঘোষণা দেবে, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কোন আমল করতে গিয়ে অন্য কাউকেও অংশীদার বানিয়ে নিয়েছিল, সে যেন এর প্রতিদান গায়রুল্লাহ্ অর্থাৎ, ঐ ব্যক্তির নিকট থেকেই চেয়ে নেয়। কেননা, আল্লাহ্ তা'আলা শির্ক থেকে সকল অংশীদারের চেয়ে বেশী অমুখাপেক্ষী। -মুসনাদে আহমাদ
کتاب الاخلاق
عَنْ أَبِي سَعِيْدِ بْنِ أَبِي فَضَالَةَ ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : إِذَا جَمَعَ اللَّهُ النَّاسَ يَوْمَ القِيَامَةِ لِيَوْمٍ لاَ رَيْبَ فِيهِ ، نَادَى مُنَادٍ : مَنْ كَانَ أَشْرَكَ فِي عَمَلٍ عَمِلَهُ لِلَّهِ أَحَدًا فَلْيَطْلُبْ ثَوَابَهُ مِنْ عِنْدِ غَيْرِ اللهِ فَإِنَّ اللَّهَ أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ . (رواه احمد)
হাদীস নং: ২৫৮
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহ রিয়া প্রকাশ করে দিবেন
২৫৮. হযরত জুনদুব (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেনঃ যে অন্যকে শোনানোর জন্য কিছু করে, আল্লাহ তা অন্যকে শোনাবেন এবং যে অন্যকে দেখানোর জন্য কিছু করে, আল্লাহ তা অন্যকে দেখাবেন। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الاخلاق
عَنِ جُنْدُبٍ قَالَ : قَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ « مَنْ سَمَّعَ سَمَّعَ اللَّهُ بِهِ ، وَمَنْ يُرَائِي يُرَائِي اللَّهُ بِهِ » (رواه البخارى ومسلم)
হাদীস নং: ২৫৯
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ধর্ম ব্যবসায়ীরা সাবধান
২৫৯. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: আখেরী যামানায় কিছু লোক বের হবে যারা দীনের আবরণে দুনিয়া শিকার করবে। মানুষকে নম্রতা দেখানোর জন্য তারা মেষের চামড়ার লেবাসে আবৃত থাকবে, তাদের জিহ্বা চিনির চেয়ে বেশি মিষ্ট হবে, কিন্তু তাদের অন্তঃকরণ হবে নেকড়ে বাঘের মত। আল্লাহ বলেন, (অবকাশ দান করার কারণে) তারা কি প্রবঞ্চিত হচ্ছে, না তারা (মুকাবিলা করার জন্য) আমার বিরুদ্ধে সাহসিকতা দেখাচ্ছে? আমি শপথ করছি, আমি তাদের বিরুদ্ধে তাদের মধ্য থেকে এমন ফিতনা সৃষ্টি করব যা তাদের জ্ঞানী ও ধৈর্যশীলদেরকেও বিচলিত করবে। (তিরমিযী)
کتاب الاخلاق
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " يَخْرُجُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ رِجَالٌ يَخْتِلُونَ الدُّنْيَا بِالدِّينِ يَلْبَسُونَ لِلنَّاسِ جُلُودَ الضَّأْنِ مِنَ اللِّينِ ، أَلْسِنَتُهُمْ أَحْلَى مِنَ السُّكَّرِ ، وَقُلُوبُهُمْ قُلُوبُ الذِّئَابِ ، يَقُولُ اللَّهُ : أَبِي يَغْتَرُّونَ ، أَمْ عَلَيَّ يَجْتَرِئُونَ؟ فَبِي حَلَفْتُ لَأَبْعَثَنَّ عَلَى أُولَئِكَ مِنْهُمْ فِتْنَةً تَدَعُ الحَلِيمَ فِيْهِمْ حَيْرَانَ " (رواه الترمذى)
হাদীস নং: ২৬০
আখলাক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ লোক দেখানো ইবাদত ও কুরআন অধ্যয়নের ফল
২৬০. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: তোমরা দুঃখের কূপ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা কর। সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল। দুঃখের কূপ কি? বললেন: এটা জাহান্নামের এক উপত্যকা যা থেকে জাহান্নাম প্রত্যেক দিন চারশতবার আশ্রয় প্রার্থনা করে। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল। কারা তাতে প্রবেশ করবে? তিনি বললেন: যারা লোক দেখানোর জন্য ইবাদত করে বা কুরআন অধ্যয়ন করে। (তিরমিযী)
کتاب الاخلاق
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « تَعَوَّذُوا بِاللَّهِ مِنْ جُبِّ الْحُزْنِ » قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، وَمَا جُبُّ الْحُزْنِ؟ قَالَ : « وَادٍ فِي جَهَنَّمَ ، يُتَعَوَّذُ مِنْهُ جَهَنَّمُ كُلَّ يَوْمٍ أَرْبَعَمِائَةِ مَرَّةٍ » ، قِيْلَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَنْ يَدْخُلُهَا؟ قَالَ « الْقُرَّاءُ الْمُرَاؤُنَ بِأَعْمَالِهِمْ . (رواه الترمذى)