মা'আরিফুল হাদীস
معارف الحديث
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ৭০ টি
হাদীস নং: ২১
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ উযূ থাকা অবস্থায় পুনঃ উযূ করা
২১. হযরত ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: যে ব্যক্তি উযু থাকা অবস্থায় পুনঃ উযূ করবে তাকে দশটি নেকী দান করা হবে। (তিরমিযী)
کتاب الطہارت
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَنْ تَوَضَّأَ عَلَى طُهْرٍ كُتِبَ لَهُ عَشْرُ حَسَنَاتٍ. (رواه الترمذى)
তাহকীক:
হাদীস নং: ২২
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অসম্পূর্ণ উযূর অশুভ প্রভাব
২২. শুবায়ব ইবনে আবু রাওহ্ (র) সূত্রে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জনৈক সাহাবা থেকে বর্ণিত যে, একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ ফজরের সালাত আদায় করেন। তারপর তিনি তাতে সূরা রূম পাঠ করেন। কিন্তু কিরা'আতে বিভ্রাট হয়ে যায়। সালাত আদায় শেষে তিনি মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে বললেন: লোকদের কী হলো তারা আমাদের সাথে সালাত আদায় করছে অথচ উত্তমরূপে উযূ করেনি। ঐসকল লোকই আমাদের কিরা'আতে বিভ্রাট সৃষ্টি করে। (নাসায়ী)
کتاب الطہارت
عَنْ شَبِيبٍ أَبِي رَوْحٍ ، عَنْ رَجُلٍ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى صَلَاةَ الصُّبْحِ ، فَقَرَأَ الرُّومَ فَالْتَبَسَ عَلَيْهِ ، فَلَمَّا صَلَّى قَالَ : « مَا بَالُ أَقْوَامٍ يُصَلُّونَ مَعَنَا لَا يُحْسِنُونَ الطُّهُورَ ، فَإِنَّمَا يَلْبِسُ عَلَيْنَا الْقُرْآنَ أُولَئِكَ » (رواه النسائى)
তাহকীক:
হাদীস নং: ২৩
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মিসওয়াকের গুরুত্ব ও ফযীলত
পবিত্রতা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ﷺ যে সব বিষয়ের উপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন তন্মধ্যে মিস্ওয়াক অন্যতম। এক হাদীসে তিনি এমনও বলেছেন: সকল সালাতের পূর্বে মিস্ওয়াক করা যদি আমি আমার উম্মাতের উপর কষ্টকর মনে না কারতাম, তাহলে প্রত্যেক সালাতের পূর্বে মিস্ওয়াক করা অপরিহার্য ঘোষণা করতাম। চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে মিস্ওয়াক করায় যে অনেক রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় তা বর্তমানে অল্প-বিস্তার সকলেই জানেন। কিন্তু ধর্মীয় দিক থেকে এর প্রকৃত গুরুত্ব হচ্ছে এই যে, মিস্ওয়াক আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার সর্বাধিক কার্যকর মাধ্যম। এ সংক্ষিপ্ত ভূমিকার পর মিস্ওয়াকের প্রতি অনুপ্রেরণা ও গুরুত্বারোপ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কতিপয় হাদীস পাঠ করে নেয়া যেতে পারে।
পবিত্রতা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ﷺ যে সব বিষয়ের উপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন তন্মধ্যে মিস্ওয়াক অন্যতম। এক হাদীসে তিনি এমনও বলেছেন: সকল সালাতের পূর্বে মিস্ওয়াক করা যদি আমি আমার উম্মাতের উপর কষ্টকর মনে না কারতাম, তাহলে প্রত্যেক সালাতের পূর্বে মিস্ওয়াক করা অপরিহার্য ঘোষণা করতাম। চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে মিস্ওয়াক করায় যে অনেক রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় তা বর্তমানে অল্প-বিস্তার সকলেই জানেন। কিন্তু ধর্মীয় দিক থেকে এর প্রকৃত গুরুত্ব হচ্ছে এই যে, মিস্ওয়াক আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার সর্বাধিক কার্যকর মাধ্যম। এ সংক্ষিপ্ত ভূমিকার পর মিস্ওয়াকের প্রতি অনুপ্রেরণা ও গুরুত্বারোপ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কতিপয় হাদীস পাঠ করে নেয়া যেতে পারে।
২৩. হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: মিস্ওয়াক হল মুখ পরিষ্কারকারী এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যম। (শাফিঈ, আহমাদ, দারিমী, নাসায়ী; বুখারী সনদহীন সূত্রে)
کتاب الطہارت
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " السِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ ، مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ " (رواه الشافعى واحمد والدارمى والنسائى وروى البخارى فى صحيحه بلا اسناد)
তাহকীক:
হাদীস নং: ২৪
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মিসওয়াকের গুরুত্ব ও ফযীলত
২৪. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে নবী কারীম ﷺ সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেছেন: আমি যদি আমার উম্মাতকে কষ্টে নিক্ষেপ করব মনে না করতাম, তাহলে তাদের উপর প্রত্যেক সালাতের সময় মিস্ওয়াক করার নির্দেশ দিতাম। (বুখারী ও মুসলিম, তবে শব্দমালা মুসলিমের)
کتاب الطہارت
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : « لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي أَوْ عَلَى النَّاسِ لَأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ عِنْدَ كُلِّ صَلاَةٍ »
তাহকীক:
হাদীস নং: ২৫
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মিসওয়াকের গুরুত্ব ও ফযীলত
২৫. হযরত আবূ উমামা (রা) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: জিব্রাঈল যখনই আমার নিকট আসতেন তখনই আমাকে মিস্ওয়াক করতে বলতেন। এতে আমি শংকিত হয়ে পড়েছিলাম যে, আমি আমার মুখের সম্মুখভাগ (মাড়ি) না ক্ষয় করে ফেলি (মুসনাদে আহমাদ)।
کتاب الطہارت
عَنْ أَبِي أُمَامَةَ ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " مَا جَاءَنِي جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَطُّ إِلَّا أَمَرَنِي بِالسِّوَاكِ ، لَقَدْ خَشِيتُ أَنْ أُحْفِيَ مُقَدَّمَ فِيَّ " (رواه احمد)
তাহকীক:
হাদীস নং: ২৬
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মিস্ওয়াক করার বিশেষ সময় ও স্থান
২৬. হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: নবী কারীম ﷺ রাতে বা দিনে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হলে উযূ করার পূর্বেই মিস্ওয়াক করে নিতেন। (আহমাদ ও আবু দাউদ)
کتاب الطہارت
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : « كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ لَا يَرْقُدُ مِنْ لَيْلٍ وَلَا نَهَارٍ ، فَيَسْتَيْقِظُ إِلَّا يَتَسَوَّكُ قَبْلَ أَنْ يَتَوَضَّأَ » (رواه احمد وابوداؤد)
তাহকীক:
হাদীস নং: ২৭
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মিস্ওয়াক করার বিশেষ সময় ও স্থান
২৭. হযরত হুযায়ফা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ ﷺ রাতে তাহাজ্জুদ সালাতের জন্য উঠলে প্রথমেই মিস্ওয়াক দ্বারা নিজ মুখ পরিষ্কার করে নিতেন। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الطہارت
عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِذَا قَامَ لِلتَّهَجُّدِ مِنَ اللَّيْلِ يَشُوصُ فَاهُ بِالسِّوَاكِ. (رواه البخارى ومسلم)
তাহকীক:
হাদীস নং: ২৮
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মিস্ওয়াক করার বিশেষ সময় ও স্থান
২৮. হযরত শুরাইহ্ ইবনে হানী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি একবার আয়েশা (রা) এর কাছে জানতে চাইলাম যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ ঘরে প্রবেশ করে সর্বপ্রথম কী কাজ করেন? তিনি বললেন: মিসওয়াক করেন। (মুসলিম)
کتاب الطہارت
عَنْ شُرَيْحِ بْنِ هَانِى عَنِ قَالَ : سَأَلْتُ عَائِشَةَ بِأَيِّ شَيْءٍ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَبْدَأُ إِذَا دَخَلَ بَيْتَهُ؟ قَالَتْ : « بِالسِّوَاكِ. (رواه مسلم)
তাহকীক:
হাদীস নং: ২৯
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মিস্ওয়াক করা আম্বিয়ায়ে কিরামের সুন্নাত ও প্রকৃতির দাবি
২৯. হযরত আবূ আইউব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: চারটি কাজ আম্বিয়া কিরামের সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। যথাঃ-১. লজ্জাশীলতা, ২. সুগন্ধি ব্যবহার করা, ৩. মিস্ওয়াক করা এবং ৪. বিয়ে করা। (তিরমিযী)
کتاب الطہارت
عَنْ أَبِي أَيُّوبَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : أَرْبَعٌ مِنْ سُنَنِ الْمُرْسَلِينَ : الحَيَاءُ ، وَالتَّعَطُّرُ ، وَالسِّوَاكُ ، وَالنِّكَاحُ. (رواه الترمذى)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৩০
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মিস্ওয়াক করা আম্বিয়ায়ে কিরামের সুন্নাত ও প্রকৃতির দাবি
৩০. হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: দশটি কাজ ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত। তা হল গোফ ছাঁটা, দাড়ি লম্বা করা, মিস্ওয়াক করা, নাকে পানি দিয়ে পরিষ্কার করা, নখ কাটা, নাক-কানের ছিদ্র এবং আঙ্গুলের গিরাসমূহ ধোয়া, বগলের পশম উপড়ে ফেলা, নাভির নিচের পশমকাটা এবং পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা। হাদীস বর্ণনাকারী বলেছেন: দশমটি আমি ভুলে গেছি। তবে সম্ভবত সেটি হবে কুলি করা। (মুসলিম)
کتاب الطہارت
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " عَشْرٌ مِنَ الْفِطْرَةِ : قَصُّ الشَّارِبِ ، وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ ، وَالسِّوَاكُ ، وَاسْتِنْشَاقُ الْمَاءِ ، وَقَصُّ الْأَظْفَارِ ، وَغَسْلُ الْبَرَاجِمِ ، وَنَتْفُ الْإِبِطِ ، وَحَلْقُ الْعَانَةِ ، وَانْتِقَاصُ الْمَاءِ " قَالَ زَكَرِيَّا : قَالَ مُصْعَبٌ : وَنَسِيتُ الْعَاشِرَةَ إِلَّا أَنْ تَكُونَ الْمَضْمَضَةَ. (رواه مسلم)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৩১
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সালাতের গুরুত্ব বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মিস্ওয়াকের প্রভাব
৩১. হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: যে সালাতের জন্য মিস্ওয়াক করা হয় তার মর্যাদা মিস্ওয়াকহীন সালাতের চেয়ে সত্তরগুণ বেশী। (বায়হাকীর শু'আবুল ইমান)
کتاب الطہارت
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " تَفْضُلُ الصَّلَاةُ الَّتِي يُسْتَاكُ لَهَا عَلَى الصَّلَاةِ الَّتِي لَا يُسْتَاكُ لَهَا سَبْعِينَ ضِعْفًا " (رواه البيهقى فى شعب الايمان)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৩২
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সালাতের জন্য উযূর নির্দেশ
রাসূলুল্লাহ ﷺ তাহারাত সম্পর্কে স্বীয় উম্মাতকে যেদিক নির্দেশনা দিয়েছেন তার মধ্যে এমনও কতিপয় বিষয় রয়েছে যা নির্দিষ্ট আহকামের মর্যাদা রাখে। যেমন, ইস্তিঞ্জার আহ্কাম, দেহ ও পোশাক-পরিচ্ছদ পবিত্র রাখার আহ্কাম, পানি পবিত্র কিংবা অপবিত্র হওয়ার বিস্তারিত আহকাম ইত্যাদি কতিপয় বিষয় এমনও রয়েছে যা সালাতের শর্তের মর্যাদা রাখে। সালাতের জন্য উযূর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছেঃ
إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ
"যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নেবে এবং তোমাদের মাথা মাসেহ করবে এবং পা গ্রন্থি পর্যন্ত ধুয়ে নেবে।" (৫, সূরা মায়িদা: ৬)
এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, সালাত যেহেতু মহান আল্লাহর দরবারে উপস্থিতি, সম্বোধন ও মুনাজাতের একটি বিশেষ পদ্ধতি তাই এর শর্ত হচ্ছে উযূ অবস্থায় সম্পাদন করা। পক্ষান্তরে কেউ উযূবিহীন হলে এবং সালাত আদায়ের ইচ্ছা করলে সে যেন সালাত শুরুর পূর্বেই উযূ করে নেয়। কারণ মহান আল্লাহর দরবারে এ বিশেষ উপস্থিতির জন্য উযূর বিকল্প নেই। উযূবিহীন সালাত কোন অবস্থায়ই গ্রহণযোগ্য নয়। এ পর্যায়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর কতিপয় হাদীস পাঠ করা যাক।
রাসূলুল্লাহ ﷺ তাহারাত সম্পর্কে স্বীয় উম্মাতকে যেদিক নির্দেশনা দিয়েছেন তার মধ্যে এমনও কতিপয় বিষয় রয়েছে যা নির্দিষ্ট আহকামের মর্যাদা রাখে। যেমন, ইস্তিঞ্জার আহ্কাম, দেহ ও পোশাক-পরিচ্ছদ পবিত্র রাখার আহ্কাম, পানি পবিত্র কিংবা অপবিত্র হওয়ার বিস্তারিত আহকাম ইত্যাদি কতিপয় বিষয় এমনও রয়েছে যা সালাতের শর্তের মর্যাদা রাখে। সালাতের জন্য উযূর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছেঃ
إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ
"যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নেবে এবং তোমাদের মাথা মাসেহ করবে এবং পা গ্রন্থি পর্যন্ত ধুয়ে নেবে।" (৫, সূরা মায়িদা: ৬)
এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, সালাত যেহেতু মহান আল্লাহর দরবারে উপস্থিতি, সম্বোধন ও মুনাজাতের একটি বিশেষ পদ্ধতি তাই এর শর্ত হচ্ছে উযূ অবস্থায় সম্পাদন করা। পক্ষান্তরে কেউ উযূবিহীন হলে এবং সালাত আদায়ের ইচ্ছা করলে সে যেন সালাত শুরুর পূর্বেই উযূ করে নেয়। কারণ মহান আল্লাহর দরবারে এ বিশেষ উপস্থিতির জন্য উযূর বিকল্প নেই। উযূবিহীন সালাত কোন অবস্থায়ই গ্রহণযোগ্য নয়। এ পর্যায়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর কতিপয় হাদীস পাঠ করা যাক।
৩২. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: পবিত্রতা ব্যতীত কারো সালাত কবুল হয় না, যতক্ষণে সে উযূ না করে। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الطہارت
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « لَا تُقْبَلُ صَلَاةُ مَنْ أَحْدَثَ حَتَّى يَتَوَضَّأَ » (رواه البخارى ومسلم)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৩
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সালাতের জন্য উযূর নির্দেশ
৩৩. হযরত ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: পবিত্রতা ব্যতীত সালাত কবুল হয়না এবং হারাম উপায়ে অর্জিত মালের সাদাকাও কবুল হয়না। (মুসলিম)
کتاب الطہارت
عَنِ ابْنَ عُمَرَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « لَا تُقْبَلُ صَلَاةٌ بِغَيْرِ طُهُورٍ وَلَا صَدَقَةٌ مِنْ غُلُولٍ » . (رواه مسلم)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৪
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সালাতের জন্য উযূর নির্দেশ
৩৪. হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: তাহারাত হল সালাতের চাবি। তাকবীর হল তার (সালাতের মধ্যে কথাবার্তা, খাওয়া দাওয়া প্রভৃতি যাবতীয় হালাল কাজ) হারামকারী এবং সালাম হল তার (সালাতের বাইরের যাবতীয় হালাল কাজ) হালালকারী। (আবূ দাউদ, তিরমিযী, দারিমী এবং ইবনে মাজাহ্, আলী (রা) ছাড়াও আবু সাঈদ (রা) সূত্রে)
کتاب الطہارت
عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « مِفْتَاحُ الصَّلَاةِ الطُّهُورُ ، وَتَحْرِيمُهَا التَّكْبِيرُ ، وَتَحْلِيلُهَا التَّسْلِيمُ » (رواه ابوداؤد والترمذى والدارمى ورواه ابن ماجه عنه وعن ابى سعيد)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৫
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সালাতের জন্য উযূর নির্দেশ
৩৫. হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: জান্নাতের চাবি হল সালাত আর সালাতের চাবি হল উযূ। (আহমাদ)
کتاب الطہارت
عَنْ جَابِرِ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « مِفْتَاحُ الْجَنَّةِ الصَّلَاةُ ، وَمِفْتَاحُ الصَّلَاةِ الطُّهُورُ » (رواه احمد)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৬
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ উযূর নিয়ম
৩৬. হযরত উসমান (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি একবার এরূপ উযূ করেন, "তিনবার তাঁর দুই হাতের উপর পানি ঢালেন এরপর কুলি করেন এবং নাকে পানি দেন ও বের করে দিয়ে নাক পরিষ্কার করেন। তারপর সম্পূর্ণ মুখমণ্ডল তিনবার ধৌত করেন। প্রথমে তিনবার ডানহাত এবং পরে তিনবার বাম হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করেন। তারপর মাথা মাসেহ করেন। এরপর তিনবার ডান পা এবং পরে তিনবার বাম পা ধৌত করেন। এরপর তিনি বলেন, আমি যেরূপ উযূ করলাম এরূপ আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে উযূ করতে দেখেছি। তারপর তিনি (রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: যে ব্যক্তি আমার ন্যায় এরূপ উযূ করে ভিন্ন চিন্তা বাদ দিয়ে পূর্ণ মনোযোগসহ দু'রাক'আত সালাত আদায় করবে তার পূর্বেকৃত গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (বুখারী ও মুসলিম, তবে শব্দমালা বুখারীর)
کتاب الطہارت
عَنْ عُثْمَانَ أَنَّهُ تَوَضَّأَ فَأَفْرَغَ عَلَى يَدَيْهِ ثَلاَثًا ، ثُمَّ تَمَضْمَضَ وَاسْتَنْثَرَ ، ثُمَّ غَسَلَ وَجْهَهُ ثَلاَثًا ، ثُمَّ غَسَلَ يَدَهُ اليُمْنَى إِلَى المَرْفِقِ ثَلاَثًا ، ثُمَّ غَسَلَ يَدَهُ اليُسْرَى إِلَى المَرْفِقِ ثَلاَثًا ، ثُمَّ مَسَحَ بِرَأْسِهِ ، ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَهُ اليُمْنَى ثَلاَثًا ، ثُمَّ اليُسْرَى ثَلاَثًا ، ثُمَّ قَالَ : رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَوَضَّأَ نَحْوَ وَضُوئِي هَذَا ثُمَّ قَالَ : « مَنْ تَوَضَّأَ وُضُوئِي هَذَا ، ثُمَّ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ لاَ يُحَدِّثُ نَفْسَهُ فِيهِمَا بِشَيْءٍ ، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ » (رواه البخارى ومسلم واللفظ للبخارى)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৭
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ উযূর নিয়ম
৩৭. আবূ হাইয়া (র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন: আমি হযরত আলী (রা)-কে উযূ করতে দেখেছি। তিনি উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুইলেন এবং ভাল করে পরিষ্কার করলেন, তিনবার কুলি করলেন, তিনবার নাকে পানি দিয়ে তা পরিষ্কার করেন। তিনবার মুখমণ্ডল ধুইলেন, তিনবার করে উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধুইলেন, একবার মাথা মাসেহ করলেন, এবং উভয় পা গিরা পর্যন্ত ধুইলেন। এরপর তিনি দাঁড়ালেন এবং উযূর অবশিষ্ট পানি তুলে নিয়ে তা দাঁড়ান অবস্থায় পান করলেন। তারপর তিনি বললেন: রাসূলুল্লাহ ﷺ এর উযূ কিরূপ ছিল তা তোমাদের দেখানোর জন্যই আমি এরূপ করা পসন্দ করলাম। (তিরমিযী ও নাসায়ী)
کتاب الطہارت
عَنْ أَبِي حَيَّةَ ، قَالَ : رَأَيْتُ عَلِيًّا تَوَضَّأَ ، فَغَسَلَ كَفَّيْهِ حَتَّى أَنْقَاهُمَا ، ثُمَّ مَضْمَضَ ثَلاَثًا ، وَاسْتَنْشَقَ ثَلاَثًا ، وَغَسَلَ وَجْهَهُ ثَلاَثًا ، وَذِرَاعَيْهِ ثَلاَثًا ، وَمَسَحَ بِرَأْسِهِ مَرَّةً ، ثُمَّ غَسَلَ قَدَمَيْهِ إِلَى الْكَعْبَيْنِ ، ثُمَّ قَامَ فَأَخَذَ فَضْلَ طَهُورِهِ فَشَرِبَهُ وَهُوَ قَائِمٌ ، ثُمَّ قَالَ : أَحْبَبْتُ أَنْ أُرِيَكُمْ كَيْفَ كَانَ طُهُورُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. (رواه الترمذى والنسائى)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৮
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ উযূর নিয়ম
৩৮. হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ একদিন উযূর প্রতিটি অঙ্গ একবার করে ধৌত করেছেন অধিকবার ধৌত করেন নি। (বুখারী)
کتاب الطہارت
عَنِ عَبْدِاللهِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، قَالَ : « تَوَضَّأَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَرَّةً مَرَّةً لم يزد على هذا » (رواه البخارى)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৯
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ উযূর নিয়ম
৩৯. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যায়িদ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ একবার উযূর সময় প্রতিটি অঙ্গ দু'বার করে ধৌত করেছেন। (বুখারী)
کتاب الطہارت
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ زَيْدٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ « تَوَضَّأَ مَرَّتَيْنِ مَرَّتَيْنِ » (رواه البخارى)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৪০
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ উযূর নিয়ম
৪০. আমর ইবনে শু'আয়ব (র) থেকে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা ও তাঁর দাদা সূত্রে বর্ণিত, তিনি (আমাদের দাদা) বলেছেন: এক বেদুঈন ব্যক্তি নবী কারীম ﷺ -এর নিকট উযূ সম্পর্কে জানতে চাইল। তিনি তাকে তিনবার করে (প্রত্যেক অঙ্গ ধুয়ে) দেখালেন। তারপর বললেন: এভাবেই উযূ করতে হয়। কাজেই যে ব্যক্তি এর অতিরিক্ত করবে সে মন্দকাজ করল, সীমালংঘন করল এবং যুলুম করল। (নাসায়ী ও ইবনে মাজাহ)
کتاب الطہارت
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ ، عَنْ أَبِيهِ ، عَنْ جَدِّهِ ، قَالَ جَاءَ أَعْرَابِيٌّ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْئَلُ عَنِ الْوُضُوءِ ، فَأَرَاهُ ثَلَاثًا ثَلَاثًا ، ثُمَّ قَالَ : « هَذَا الْوُضُوءُ ، فَمَنْ زَادَ عَلَى هَذَا فَقَدْ أَسَاءَ ، أَوْ تَعَدَّى ، أَوْ ظَلَمَ » (رواه النسائى وابن ماجه)
তাহকীক: