মা'আরিফুল হাদীস
معارف الحديث
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ৭০ টি
হাদীস নং: ৬১
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অপবিত্র ব্যক্তির গোসল পদ্ধতি ও আদব
৬১. হযরত ইয়ালা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ ﷺ এক ব্যক্তিকে (বিবস্ত্র) অবস্থায় উন্মুক্ত স্থানে গোসল করতে দেখে মিম্বারে উঠে দাঁড়ান। প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান বর্ণনা করেন। অতঃপর তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা'আলা সর্বাধিক লজ্জাশীল ও লজ্জানিবারক। তিনি লজ্জাশীলতা ও পর্দা করাকে ভালবাসেন। সুতরাং কেউ গোসল করতে চাইলে যেন পর্দা করে নেয় (লোকের সামনে যেন বিবস্ত্র না হয়)। (আবু দাউদ ও নাসায়ী)
کتاب الطہارت
عَنْ يَعْلَى قَالَ : أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى رَجُلًا يَغْتَسِلُ بِالْبَرَازِ ، فَصَعِدَ الْمِنْبَرَ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ : « إِنَّ اللَّهَ حَيِيٌّ سِتِّيرٌ يُحِبُّ الْحَيَاءَ وَالسَّتْرَ فَإِذَا اغْتَسَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَسْتَتِرْ » (رواه ابوداؤد والنسائى)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৬২
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সুন্নাত অথবা মুস্তাহাব গোসল
শরী'আতে যে যে অবস্থায় গোসল করা ফরয ও ওয়াজিব করা হয়েছে পূর্বেই তা বর্ণিত হয়েছে। এবং সে পর্যায়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর হাদীসও পেশ করা হয়েছে। এছাড়াও রাসূলুল্লাহ ﷺ বিভিন্ন উপলক্ষে গোসলের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তা ফরয কিংবা ওয়াজিব নয় বরং তা সুন্নাত কিংবা মুস্তাহাব। এপর্যায়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কতিপয় হাদীস পাঠ করা যাক।
জুমু'আর দিনের গোসল
শরী'আতে যে যে অবস্থায় গোসল করা ফরয ও ওয়াজিব করা হয়েছে পূর্বেই তা বর্ণিত হয়েছে। এবং সে পর্যায়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর হাদীসও পেশ করা হয়েছে। এছাড়াও রাসূলুল্লাহ ﷺ বিভিন্ন উপলক্ষে গোসলের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তা ফরয কিংবা ওয়াজিব নয় বরং তা সুন্নাত কিংবা মুস্তাহাব। এপর্যায়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কতিপয় হাদীস পাঠ করা যাক।
জুমু'আর দিনের গোসল
৬২. হযরত ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন। তোমাদের কেউ জুমু'আর সালাত আদায় করতে এলে সে যেন গোসল করে নেয়। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الطہارت
عَنِ بْنِ عُمَرَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « إِذَا جَاءَ اَحَدُكُمْ الْجُمُعَةَ ، فَلْيَغْتَسِلْ » . (رواه البخارى ومسلم)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৬৩
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ জুমু'আর দিনের গোসল
৬৩. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: প্রত্যেক মুসলমানের প্রতি সাতদিন অন্তর গোসল করে নেয়া উচিৎ এবং সে যেন তার গোসলের সময় তার মাথা এবং সমগ্র দেহ ভালভাবে ধুয়ে নেয়। (বুখারীও মুসলিম)
کتاب الطہارت
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « حَقٌّ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ أَنْ يَغْتَسِلَ فِي كُلِّ سَبْعَةِ أَيَّامٍ يَوْمًا ، يَغْسِلُ رَأْسَهُ وَجَسَدَهُ » (رواه البخارى ومسلم)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৬৪
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ জুমু'আর দিনের গোসল
৬৪. হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: যে ব্যক্তি জুমু'আর দিন উযু করল সে ভাল কাজই করল। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি গোসল করল, সে গোসলই হলো অধিকতর উত্তম কাজ। (আহমাদ, তিরমিযী, নাসায়ী ও দারিমী)
(জুমু'আর সালাতের জন্য গোসল সংক্রান্ত হাদীস যখন আসবে তখন সেখানে আল্লাহ্ চাহেত কিছু আলোচনা করা যাবে)
(জুমু'আর সালাতের জন্য গোসল সংক্রান্ত হাদীস যখন আসবে তখন সেখানে আল্লাহ্ চাহেত কিছু আলোচনা করা যাবে)
کتاب الطہارت
عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدَبٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَنْ تَوَضَّأَ يَوْمَ الجُمُعَةِ فَبِهَا وَنِعْمَتْ ، وَمَنْ اغْتَسَلَ فَالغُسْلُ أَفْضَلُ. (رواه احمد وابوداؤد والترمذى والنسائى والدارمى)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৬৫
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মৃতের গোসলদাতার গোসল
৬৫. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: যে ব্যক্তি মৃতকে গোসল করায় সে যেন গোসল করে নেয়। ইবনে মাজাহ্, আহমাদ, তিরমিযী ও আবু দাউদে বর্ণিত হাদীসে অতিরিক্ত রয়েছে যে ব্যক্তি মৃতের লাশ বহন করে সে যেন উযূ করে নেয়।
کتاب الطہارت
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " مَنْ غَسَّلَ مَيِّتًا ، فَلْيَغْتَسِلْ ". (رواه ابن ماجه وزاد احمد والترمذى وابوداؤد وَمَنْ حَمَلَهُ ، فَلْيَتَوَضَّأْ)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৬৬
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ঈদের দিন গোসল
৬৬. হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ ﷺ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন গোসল করতেন। (ইবনে মাজাহ)
کتاب الطہارت
عَنِ عَبْدِاللهِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، قَالَ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ « يَغْتَسِلُ يَوْمَ الْفِطْرِ وَيَوْمَ الْأَضْحَى » (رواه ابن ماجه)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৬৭
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ তায়াম্মুম
মানুষ কখনো এমন অবস্থার শিকার হয় যে, তার পক্ষে গোসল কিংবা উযূ করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে, তা রোগজনিত কারণে হোক বা অন্য কোন কারণে হোক। অনুরূপভাবে মানুষ কখনো এমন স্থানে গিয়ে পৌঁছে যেখানে পানি পাওয়া কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়ে। এ সকল অবস্থায় যদি বিনা গোসল কিংবা বিনা উযূতে সালাত আদায়ের অনুমতি দেওয়া হয় তবে তাতে স্বাভাবিক পবিত্রতা অর্জনের বিষয়টি বর্জিত ও উপেক্ষিত হয়ে পড়ে এবং আল্লাহর দরবারে পবিত্রতার সাথে হাযিরী পেশ করার যে অনুভূতি তা মানুষ হারিয়ে ফেলে। এতে মানুষের মনে এ উপস্থিতির গুরুত্ব ও মর্যাদা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এজন্য আল্লাহ্ তা'আলা এহেন পরিস্থিতি মুকাবিলার জন্য গোসল ও উযূর পরিবর্তে তায়াম্মুমকে স্থালাভিষিক্ত করেছেন। সুতরাং গোসল ও উযূ করত অপারগ ব্যক্তির ক্ষেত্রে সালাত ও অন্যান্য ইবাদতের জন্য তায়াম্মুম গ্রহণযোগ্য হওয়ার দাবি রাখে। ফলে নিরূপায় অবস্থায় তায়াম্মুম করতে বাধ্য হওয়ায় তার মন মানসিকতায় পবিত্রতার অনুভূতি বিলুপ্ত হবে না।
তায়াম্মুম করার নিয়ম হল, এই যে, ভূপৃষ্টে তথা, মাটি, পাথর বা বালির উপর হাত মেরে পবিত্রতার নিয়্যাতে মুখমণ্ডল এবং হাত মাসেহ করা। এভাবে মুখমণ্ডল ও কনুই পর্যন্ত হাত মাসেহ করলে তায়াম্মুম আদায় হয়ে যায়। তবে মুখমমণ্ডল ও হাতে মাটি লাগানো জরুরী নয় এবং মাটি দ্বারা মুখমণ্ডল ও হাত যাতে অপরিচ্ছন্ন হয়ে না পড়ে সে দিকে খেয়াল রাখা চাই।
তায়াম্মুমের গুরুত্ব
গোসল ও উযূতে পানি ব্যবহৃত হয়। আল্লাহ্ তা'আলা অপারগ অবস্থায় তায়াম্মুমের বিধান দিয়েছেন। আর এতে মাটি ও পাথর ব্যবহৃত হয়। এর গূঢ় রহস্য উন্মোচন করতে যেয়ে কিছু সংখ্যক প্রাজ্ঞ আলিম বলেন, পুরো ভূখণ্ড দু'অংশে বিভক্ত। এর বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে পানি এবং অপর অংশ জুড়ে রয়েছে মাটি। আর পানি ও মাটির মধ্যে রয়েছে নিবিড় সর্ম্পক। মানব সৃষ্টির সূচনা প্রধানত মাটি এবং পানি থেকেই হয়েছে। বলাবাহুল্য, সমুদ্র ব্যতীত সর্বত্র মানুষ হাতের নাগালে মাটি পাচ্ছে। এ কথাও সত্য যে, হাতে মাটি লাগিয়ে হাত এবং মুখমণ্ডল মাসেহ করার মধ্য দিয়ে আরো অধিক দীনতা-হীনতা প্রকাশ পায়। তাছাড়া মানুষের শেষ ঠিকানা মাটিতেই হবে। সুতরাং বলা যেতে পারে যে, তায়াম্মুম করার ফলে মৃত্যু ও কবরের কথা স্মরণ হয়। তবে এর প্রকৃত রহস্য আল্লাহ্ তা'আলা অধিক জ্ঞাত।
এ পর্যায়ে তায়াম্মুম সম্পর্কীয় কতিপয় হাদীস পাঠ করা যাক। প্রথমতঃ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত ঐ ঘটনার উল্লেখ করা, যার প্রেক্ষিতে তায়াম্মুমের বিধান নাযিল হয়।
মানুষ কখনো এমন অবস্থার শিকার হয় যে, তার পক্ষে গোসল কিংবা উযূ করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে, তা রোগজনিত কারণে হোক বা অন্য কোন কারণে হোক। অনুরূপভাবে মানুষ কখনো এমন স্থানে গিয়ে পৌঁছে যেখানে পানি পাওয়া কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়ে। এ সকল অবস্থায় যদি বিনা গোসল কিংবা বিনা উযূতে সালাত আদায়ের অনুমতি দেওয়া হয় তবে তাতে স্বাভাবিক পবিত্রতা অর্জনের বিষয়টি বর্জিত ও উপেক্ষিত হয়ে পড়ে এবং আল্লাহর দরবারে পবিত্রতার সাথে হাযিরী পেশ করার যে অনুভূতি তা মানুষ হারিয়ে ফেলে। এতে মানুষের মনে এ উপস্থিতির গুরুত্ব ও মর্যাদা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এজন্য আল্লাহ্ তা'আলা এহেন পরিস্থিতি মুকাবিলার জন্য গোসল ও উযূর পরিবর্তে তায়াম্মুমকে স্থালাভিষিক্ত করেছেন। সুতরাং গোসল ও উযূ করত অপারগ ব্যক্তির ক্ষেত্রে সালাত ও অন্যান্য ইবাদতের জন্য তায়াম্মুম গ্রহণযোগ্য হওয়ার দাবি রাখে। ফলে নিরূপায় অবস্থায় তায়াম্মুম করতে বাধ্য হওয়ায় তার মন মানসিকতায় পবিত্রতার অনুভূতি বিলুপ্ত হবে না।
তায়াম্মুম করার নিয়ম হল, এই যে, ভূপৃষ্টে তথা, মাটি, পাথর বা বালির উপর হাত মেরে পবিত্রতার নিয়্যাতে মুখমণ্ডল এবং হাত মাসেহ করা। এভাবে মুখমণ্ডল ও কনুই পর্যন্ত হাত মাসেহ করলে তায়াম্মুম আদায় হয়ে যায়। তবে মুখমমণ্ডল ও হাতে মাটি লাগানো জরুরী নয় এবং মাটি দ্বারা মুখমণ্ডল ও হাত যাতে অপরিচ্ছন্ন হয়ে না পড়ে সে দিকে খেয়াল রাখা চাই।
তায়াম্মুমের গুরুত্ব
গোসল ও উযূতে পানি ব্যবহৃত হয়। আল্লাহ্ তা'আলা অপারগ অবস্থায় তায়াম্মুমের বিধান দিয়েছেন। আর এতে মাটি ও পাথর ব্যবহৃত হয়। এর গূঢ় রহস্য উন্মোচন করতে যেয়ে কিছু সংখ্যক প্রাজ্ঞ আলিম বলেন, পুরো ভূখণ্ড দু'অংশে বিভক্ত। এর বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে পানি এবং অপর অংশ জুড়ে রয়েছে মাটি। আর পানি ও মাটির মধ্যে রয়েছে নিবিড় সর্ম্পক। মানব সৃষ্টির সূচনা প্রধানত মাটি এবং পানি থেকেই হয়েছে। বলাবাহুল্য, সমুদ্র ব্যতীত সর্বত্র মানুষ হাতের নাগালে মাটি পাচ্ছে। এ কথাও সত্য যে, হাতে মাটি লাগিয়ে হাত এবং মুখমণ্ডল মাসেহ করার মধ্য দিয়ে আরো অধিক দীনতা-হীনতা প্রকাশ পায়। তাছাড়া মানুষের শেষ ঠিকানা মাটিতেই হবে। সুতরাং বলা যেতে পারে যে, তায়াম্মুম করার ফলে মৃত্যু ও কবরের কথা স্মরণ হয়। তবে এর প্রকৃত রহস্য আল্লাহ্ তা'আলা অধিক জ্ঞাত।
এ পর্যায়ে তায়াম্মুম সম্পর্কীয় কতিপয় হাদীস পাঠ করা যাক। প্রথমতঃ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত ঐ ঘটনার উল্লেখ করা, যার প্রেক্ষিতে তায়াম্মুমের বিধান নাযিল হয়।
৬৭. হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা এক সফরে (গ্রহণযোগ্য মতে যাতুর রিকা' অভিযান কালে) রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সাথে বের হলাম। আমরা যখন বায়দা অথবা যাতুল জায়শ (মদীনা ও খায়বারের মধ্যবর্তী দু'টি স্থান) নামক স্থানে পৌঁছলাম। তখন আমার (আমার বড় বোন আসমা থেকে ধারকৃত) গলার হার (ছিড়ে পড়ে) হারিয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ ﷺ কে তা জানালে (তিনি) তা তালাশ করতে করতে সেখানে থেমে গেলেন এবং লোকেরাও তাঁর সাথে সাথে থেমে গেল। তাঁদের কাছাকাছি কোথাও পানি ছিলনা। তারপর লোকজন (আমার পিতা) আবূ বকর (রা) এর কাছে এসে বলতে লাগল, আপনি কি লক্ষ্য করেন নি যে, আয়েশা কি করেছেন? তিনি তো (হার হারিয়ে ফেলে) রাসূলুল্লাহ ﷺ কে আটকে দিয়েছেন এবং সেই সাথে সমস্ত লোককে আটকা থাকতে বাধ্য করেছেন। অথচ কাছাকাছি কোথাও পানি নেই আর সেনাদলের সাথেও পানি নেই। তারপর আবূ বকর (রা) আমার কাছে আসলেন। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ তখন আমার উরুর উপর মাথা রেখে আরাম করছিলেন। তিনি এসে বললেন: তুমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং লোকদেরকে আটকে রেখেছ অথচ তাঁরা না পানির কাছাকাছি, আর না তাঁদের কাছে পানি আছে। আয়েশা (রা) বলেন, আবূ বকর (রা) আমাকে ভর্ৎসনা করলেন এবং যা বলার তা বললেন। তিনি তাঁর হাত দিয়ে আমার পাঁজরে আঘাত করেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ ঘুমিয়ে ছিলেন বলে আমি মোটেই নড়াচড়া করি নি পাছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ঘুম ভেঙ্গে যায়। এমনি করে পানি বিহীনভাবে সকাল হলো। তারপর আল্লাহ্ তা'আলা তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল করেন। তখন সকলে তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করলেন। বায়'আতে আকাবার অন্যতম দলপতি উসায়দ ইবনে হুযাইর (রা) বলেন, হে আবূ বকর তনয়া। এটাই আপনার প্রথম বকরত নয় (এর পূর্বেও আপনার মাধ্যমে উম্মত বহু বরকত লাভ করেছে)। আয়েশা (রা) বলেন, এরপর আমি যে উটের উপর ছিলাম সেটিকে চলার জন্য উঠালে উক্ত হারটি তার নিচে পাওয়া গেল। (বুখারী ও মুসলিম, তবে শব্দমালা মুসলিমের।)
کتاب الطہارت
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَعْضِ أَسْفَارِهِ ، حَتَّى إِذَا كُنَّا بِالْبَيْدَاءِ - أَوْ بِذَاتِ الْجَيْشِ انْقَطَعَ عِقْدٌ لِي ، « فَأَقَامَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الْتِمَاسِهِ ، وَأَقَامَ النَّاسُ مَعَهُ ، وَلَيْسُوا عَلَى مَاءٍ ، » ، فَأَتَى النَّاسُ إِلَى أَبِي بَكْرٍ فَقَالُوا : أَلَا تَرَى إِلَى مَا صَنَعَتْ عَائِشَةُ؟ « أَقَامَتْ بِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَبِالنَّاسِ مَعَهُ ، وَلَيْسُوا عَلَى مَاءٍ ، وَلَيْسَ مَعَهُمْ مَاءٌ » ، فَجَاءَ أَبُو بَكْرٍ " وَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاضِعٌ رَأْسَهُ عَلَى فَخِذِي قَدْ نَامَ ، فَقَالَ : حَبَسْتِ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالنَّاسَ وَلَيْسُوا عَلَى مَاءٍ ، وَلَيْسَ مَعَهُمْ مَاءٌ « ، قَالَتْ فَعَاتَبَنِي أَبُو بَكْرٍ ، وَقَالَ مَا شَاءَ اللهُ أَنْ يَقُولَ ، وَجَعَلَ يَطْعُنُ بِيَدِهِ فِي خَاصِرَتِي ، » فَلَا يَمْنَعُنِي مِنَ التَّحَرُّكِ إِلَّا مَكَانُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى فَخِذِي ، فَنَامَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى أَصْبَحَ عَلَى غَيْرِ مَاءٍ ، فَأَنْزَلَ اللهُ آيَةَ التَّيَمُّمِ فَتَيَمَّمُوا " فَقَالَ أُسَيْدُ بْنُ الْحُضَيْرِ : وَهُوَ أَحَدُ النُّقَبَاءِ « مَا هِيَ بِأَوَّلِ بَرَكَتِكُمْ يَا آلَ أَبِي بَكْرٍ » فَقَالَتْ عَائِشَةُ : « فَبَعَثْنَا الْبَعِيرَ الَّذِي كُنْتُ عَلَيْهِ فَوَجَدْنَا الْعِقْدَ تَحْتَهُ » (رواه البخارى ومسلم واللفظ لمسلم)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৬৮
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ তায়াম্মুমের বিধান
৬৮. হযরত আম্মার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন: এক ব্যক্তি উমর (রা) এর নিকট এসে বলল, আমি অপবিত্র হয়েছি কিন্তু পানি পাচ্ছি না (সুতরাং এমতাবস্থায় আমার করণীয় কি?)। তখন (সেখানে উপস্থিত) আম্মার (রা) উমর (রা) কে বললেন: আপনার কি স্মরণ নেই যে, আমি ও আপনি কোন এক সফরে ছিলাম। সে সফরে (আমাদের উভয়ের গোসলের প্রয়োজন হয়) আপনি সালাত আদায় করলেন না। আর আমি মাটিতে গড়াগড়ি দিলাম (কেননা আমার ধারণায় তায়াম্মুমে গোসলের মত সারা দেহসহ করতে হয়) এবং সালাত আদায় করে নিলাম। আমি (সফর থেকে ফিরে এসে) রাসূলুল্লাহ ﷺ কে এ বিষয় অবহিত করলে তিনি জানালেন যে, তোমার জন্য (সারা দেহের পরিবর্তে) এটাই যথেষ্ট ছিল। এই বলে নবী কারীম ﷺ তাঁর দু'হাত যমীনে মেরে তা থেকে ধূলাবালি ঝেড়ে ফেলেন। এরপর উভয় হাত দ্বারা তাঁর চেহারাও দু'হাত মাসেহ্ করেন। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الطہارت
عَنْ عَمَّارٍ قَالَ : جَاءَ رَجُلٌ إِلَى عُمَرَ بْنِ الخَطَّابِ ، فَقَالَ : إِنِّي أَجْنَبْتُ فَلَمْ أُصِبِ المَاءَ ، فَقَالَ عَمَّارٌ لِعُمَرَ بْنِ الخَطَّابِ : أَمَا تَذْكُرُ أَنَّا كُنَّا فِي سَفَرٍ أَنَا وَأَنْتَ ، فَأَمَّا أَنْتَ فَلَمْ تُصَلِّ ، وَأَمَّا أَنَا فَتَمَعَّكْتُ فَصَلَّيْتُ ، فَذَكَرْتُ لِلنَّبِيِّ صلّى الله عليه وسلم ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « إِنَّمَا كَانَ يَكْفِيكَ هَكَذَا » فَضَرَبَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِكَفَّيْهِ الأَرْضَ ، وَنَفَخَ فِيهِمَا ، ثُمَّ مَسَحَ بِهِمَا وَجْهَهُ وَكَفَّيْهِ. (رواه البخارى ومسلم نحوه)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৬৯
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ তায়াম্মুমের বিধান
৬৯. হযরত আবূ যার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: পবিত্র মাটি মুসলমানের জন্য পবিত্রকারী যদিও সে দশ বছর পানি না পায়। যখন পানি পাবে সে যেন তার শরীরে তা (অর্থাৎ উযূ গোসল করে) এটাই তার জন্য উত্তম। (আহমাদ, তিরমিযী ও আবূ দাউদ)
کتاب الطہارت
عَنْ أَبِي ذَرٍّ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : "إِنَّ الصَّعِيدَ الطَّيِّبَ ، وَضُوءُ الْمُسْلِمِ ، وَإِنْ لَمْ يَجِدِ الْمَاءَ عَشْرَ سِنِينَ ، فَإِذَا وَجَدَهُ فَلْيُمِسَّهُ بَشَرَهُ ، فَإِنَّ ذَلِكَ هُوَ خَيْرٌ " (رواه احمد والترمذى وابوداؤد)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৭০
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ তায়াম্মুমের বিধান
৭০. হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা দুই ব্যক্তি সফরে বের হলেন। পথিমধ্যে সালাতের সময় হল, কিন্তু তাঁদের নিকট পানি ছিল না। সুতরাং তাঁরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করে নিলেন। এরপর তাঁরা সালাতের সময়ের মধ্যেই পানি পেলেন। তাঁদের একজন উযূ করে সালাত আদায় করলেন এবং অপরজন পুনঃসালাত আদায় করলেন না। তারপর উভয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট এলেন এবং তাঁর কাছে ঘটনাটি অবহিত করলেন। যে ব্যক্তি পুনঃ সালাত আদায় করেন নি তাঁকে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন: তুমি সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করেছ এবং তোমার সেই সালাতই তোমার জন্য যথেষ্ট (বিধি মতে এরূপ অবস্থায় তায়াম্মুমসহ সালাত আদায় যথেষ্ট ওয়াক্তের মধ্যে পানি পেলেও দ্বিতীয়বার সালাত আদায় করতে হয়না) পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি উযূ করে পুনঃ সালাত আদায় করেছিলেন তিনি তাঁকে বললেন: তোমার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ পুরস্কার (কেননা তোমার দ্বিতীয় বারের সালাত বদল বলে গণ্য হবে) (আবু দাউদ ও দারিমী)।
کتاب الطہارت
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، قَالَ : خَرَجَ رَجُلَانِ فِي سَفَرٍ ، فَحَضَرَتْهُمَا الصَّلَاةُ ، وَلَيْسَ مَعَهُمَا مَاءٌ ، فَتَيَمَّمَا صَعِيدًا طَيِّبًا ، فَصَلَّيَا ، ثُمَّ وَجَدَا الْمَاءَ بَعْدُ فِي الْوَقْتِ ، فَأَعَادَ أَحَدُهُمَا الصَّلَاةَ بِوُضُوءٍ ، وَلَمْ يُعِدِ الْآخَرُ ثُمَّ أَتَيَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرَا ذَلِكَ ، فَقَالَ لِلَّذِي لَمْ يُعِدْ : « أَصَبْتَ السُّنَّةَ وَأَجْزَأتْكَ صَلَاتُكَ » . وَقَالَ لِلَّذِي تَوَضَّأَ وَأَعَادَ « لَكَ الْأَجْرُ مَرَّتَيْنِ » (رواه ابوداؤد والدارمى)
তাহকীক: