মানবতার কাজ না করে যাকাত দিলেও জাহান্নামে যেতে হবে! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৯৩
মানবতার কাজ না করে যাকাত দিলেও জাহান্নামে যেতে হবে! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৯৩
আগেই বলেছি, যাকাত একটি স্বতন্ত্র আমল। নেসাব সমপরিমাণ সম্পদের মালিক হলেই তার ওপর যাকাত ওয়াজিব হয়। যার ওপর যাকাত ওয়াজিব, সে যদি যাকাত আদায় না করে, তাহলে নিঃসন্দেহে তাকে এর জন্য কিয়ামতে জবাব দিতে হবে। আর যাকাত আদায়কারীদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। হেযবুত তওহীদ কী বলে? তাদের দাবী হলো, মানবতার শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই ইসলামের মূল কাজ। এ কাজ না করে নামাজ, রোযা, হজ্ব, যাকাত কোনটাই কবুল হবে না। দেখুন তারা কী বলে- আল্লাহর লা'নতের নির্মম শাস্তি সত্ত্বেও এই জাতি তওবা করে তওহীদে, সিরাতুল মুস্তাকিমে, দ্বীন কায়েমায় ফিরে না এসে, নির্বোধের মত নামাজ রোজা হজ্ব যাকাত হাজার রকমের নফল ইবাদত করে যাচ্ছে আর ভাবছে তাদের জন্য জান্নাতের দরজায় লাল কার্পেট বিছিয়ে রাখা হয়েছে। –ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে, পৃ. ৬০ ইসলাম কী বলে? ইসলামের মূল কাজ শান্তি প্রতিষ্ঠা করা নয়, বরং আল্লাহপাকের দাসত্ব করাই মূল। এই ইবাদতের মধ্যে অন্যতম ইবাদত হলো যাকাত দেওয়া। যারা এই ইবাদত করবে, তাদের জন্য কিয়ামতে জাহান্নাম নয়, জান্নাত দেওয়া হবে। মহান রব্ব বলেন, إِنَّ الَّذِينَ آمَنُواْ وَعَمِلُواْ الصَّالِحَاتِ وَأَقَامُواْ الصَّلاَةَ وَآتَوُاْ الزَّكَاةَ لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ (হ্যবঁ) যারা ঈমান আনে, সৎকর্ম করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে তাদের প্রতিদান। তাদের কোনো ভয় থাকবে না এবং তারা কোনো দুঃখও পাবে না।–সুরা বাকারা : ২৭৭ এছাড়াও হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আবু আইয়ুব রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, أَنَّ رَجُلاً قَالَ لِلنَّبِيِّ ﷺ : أَخْبِرْنِي بِعَمَلٍ يُدْخِلُنِي الجَنَّةَ قَالَ تَعْبُدُ اللهَ وَلاَ تُشْرِكُ بِهِ شَيْئاً وَتُقِيمُ الصَّلاَةَ وَتُؤْتِي الزَّكَاةَ وَتَصِلُ الرَّحِمَ একটি লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বললেন, আমাকে এমন একটি আমল বলুন, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তিনি বললেন, আল্লাহর বন্দেগী করবে, আর তাঁর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার স্থির করবে না। নামাজ কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখবে। –সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ১৩৯৬ অন্য হাদিসেও এসেছে, হযরত আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, أَنَّ أَعْرَابِياً أَتَى النَّبِيَّ ﷺ فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللهِ دُلَّنِي عَلَى عَمَلٍ إِذَا عَمِلْتُهُ دَخَلْتُ الجَنَّةَ قَالَ تَعْبُدُ اللهَ لاَ تُشْرِكُ بِهِ شَيْئاً وَتُقِيمُ الصَّلاَةَ وَتُؤتِي الزَّكَاةَ المَفْرُوضَةَ وَتَصُومُ رَمَضَانَ قَالَ : وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لاَ أَزِيدُ عَلَى هَذَا فَلَمَّا وَلَّى قَالَ النَّبِيُّ ﷺمَنْ سَرَّهُ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى رَجُلٍ مِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ فَلْيَنْظُرْ إِلَى هَذَا এক বেদুঈন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে নিবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসুল, আমাকে এমন এক আমলের কথা বলে দিন, যার উপর আমল করলে আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব। তিনি বললেন, আল্লাহর ইবাদত করবে ও তাঁর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার স্থির করবে না। নামায কায়েম করবে, ফরয যাকাত আদায় করবে ও রমযানের রোযা পালন করবে। সে বলল, সেই মহান সত্তার শপথ! যাঁর হাতে আমার জীবন আছে, আমি এর চেয়ে বেশী করব না। তারপর যখন সে লোকটা পিঠ ফিরে চলতে লাগল, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি জান্নাতবাসীদের কোন লোক দেখতে আগ্রহী, সে যেন এই লোকটিকে দেখে নেয়। –সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ১২৯৭ বুঝা গেলো, ইসলামে ইবাদত করলে সে জান্নাতে যাবে। এই ইবাদতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো যাকাত। যাকে ‘মালি ইবাদত’ বলা হয়। তবে মানুষের প্রতি দয়াদ্র হওয়া বা তাদের কষ্ট দূর করলে সেও কিয়ামতের পেরেসানি থেকে বাঁচবে। কিন্তু এটা না করলে যাকাত দিলেও জাহান্নামে যেতে হবে কথাটা ইসলামের নামে সর্বৈব মিথ্যাচার।
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
কুরআনের তাফসীর পড়া যাবে না! হেযবুত তওহীদ পর্ব–১৭
যদি কেউ বড় শিক্ষিত হয়, তবে তার বক্তব্য বুঝতে হলে নিশ্চয় জ্ঞানী হতে হয়, অথবা জ্ঞানীদের থেকে বুঝে নিতে...
মুফতী রিজওয়ান রফিকী
৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
২০৮৩