কুরআন রাষ্ট্রে কায়েম না হলে এর কোনো মূল্য নেই! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–১৪
কুরআন রাষ্ট্রে কায়েম না হলে এর কোনো মূল্য নেই! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–১৪
পবিত্র কুরআন সন্মানিত হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে কুরআন আল্লাহ-র কালাম। কুরআন নিজেই স্বয়ংসম্পূর্ণ। আল্লাহ-র কালাম মূল্যবান হতে অন্য কোনো বিষয়ের সম্পৃক্ততা লাগে না। অতএব শর্তহীনভাবে কুরআন নিজেই সম্মানিত ও মহামূল্যবান।
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
প্রথমে একথা জেনে রাখা উচিত যে, হেযবুত তওহীদের কাছে রাষ্ট্রে ইসলাম কায়েমই হলো ইসলামের মূল উদ্দেশ্য। সেই রাষ্ট্রে যদি কুরআন কায়েম না হয়, তাহলে এর কোনো দাম নেই। এজন্য তারা লিখেছে,
তওহীদের উপর ভিত্তি করা দীনুল হকের সংবিধান "কোর'আনকে" মানব জীবনের সর্বস্তরে, সর্ব অঙ্গনে কার্য্যকর না কোরতে পারলে তা অর্থহীন। –এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ২৩
ইসলাম কী বলে?
মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্রে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা করাও ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল বটে, কিন্তু ‘শুধুমাত্র এই হুকুমত প্রতিষ্ঠার জন্যই ইসলাম বা কুরআনের আগমন হয়েছে’ বিষয়টি আদৌ এমন নয়, বরং পবিত্র কুরআন সর্বাবস্থায় হিদায়াহ। মহান রব্ব বলেন,
شهرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡه الۡقُرۡاٰنُ هُدًی لِّلنَّاسِ وَ بَیِّنٰتٍ مِّنَ الْهُدٰی وَالۡفُرۡقَانِ
রমাযান মাস- যে মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য (আদ্যোপান্ত) হিদায়াত এবং এমন সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী সম্বলিত, যা সঠিক পথ দেখায় এবং (সত্য ও মিথ্যার মধ্যে) চূড়ান্ত ফায়সালা করে দেয়। –সুরা বাকারা : ১৮৫
إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرٌ لِّلْعَالَمِينَ
এটা তো নিখিল বিশ্বের সকলের জন্য এক উপদেশ-বার্তা। -সুরা ইউসুফ : ১০৪
তাছাড়া পবিত্র কুরআন রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত করা ছাড়াও আরও অনেক বিষয় রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত ও শিক্ষা দেওয়ার আদেশও করা হয়েছে। মহান রব্ব বলেন,
هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولًا مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ
তিনিই উম্মীদের মধ্যে তাদেরই একজনকে রাসুল করে পাঠিয়েছেন, যে তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবে এবং তাদেরকে কিতাব ও হেকমতের শিক্ষা দেবে, যদিও তারা এর আগে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে নিপতিত ছিল। –সুরা জুমআহ : ২
উক্ত আয়াতে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দায়িত্ব কী কী তা বলা হয়েছে। কিন্তু এ আয়াতে বলা হয়নি যে, কুরআন প্রতিষ্ঠা করা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দায়িত্ব। অবশ্য জাযিরাতুল আরবে ইসলাম বিজয়ী করা তাঁর দায়িত্ব ছিলো এবং তিনি তা করেও গেছেন। কিন্তু কুরআন প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলে এর কোনো মূল্য নেই এমন কোনো কথা কোথাও বলা হয়নি। সুতরাং 'কুরআন প্রতিষ্ঠিত না হলে তা অর্থহীন' হেযবুত তওহীদের এ মন্তব্য সরাসরি কুরআনের ব্যাপারে অবমাননা ও অপব্যাখ্যা শামিল। হাদিস শরিফে এসেছে, হযরত ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ قَالَ فِي الْقُرْآنِ بِغَيْرِ عِلْمٍ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ
যে ব্যক্তি সঠিক ইলম ব্যতিত কুরআন প্রসঙ্গে কোন কথা বলে, সে যেন জাহান্নামকে নিজের জন্য বাসস্থান বানিয়ে নিলো। –জামে তিরমিযি, হাদিস নং : ২৯৫০